#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_০৪
DI YA
বাসার কলিং বেল বেজে উঠার শব্দে গিয়ে দরজা খুলতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।আমার সামনে রিশাদ দাঁড়িয়ে আছে।তার এখানে আসার কারণ আমি বুঝতে পারছি না। হঠাৎ তার এভাবে আমার বাসায় আসার ব্যাপারটা আমাকে প্রচুর ভাবাচ্ছে। আমি রিশাদকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,
আপনি এখানে কি করছেন ? কি চাই আপনার আমার কাছে? – আমি
মিস প্রাপ্তি আগে আমাকে বাসায় তো ঢুকতে দেন।তারপর নাহয় বাকি কথা হবে।- রিশাদ
আসেন ভিতরে এসে বসেন। – আমি
রিশাদকে ড্রইংরুমে নিয়ে এসে বসিয়ে দিলাম।একজনকে মেইডকে উদ্দেশ্য করে বললাম উনার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসো। আমার কথা শুনে রিশাদ বললো,
বা আমার পছন্দ দেখি পাঁচ বছর পর এখনো মনে আছে – রিশাদের কথায় আমি তাচ্ছিল্যতার আভাস পাচ্ছিলাম
কি আর করবো মিস্টার রিশাদ। মানুষের মত বদলে যেতে আমি পারিনা।আমি যে শুধু এগিয়ে যেতে পারি – আমি
অপমান করছো ? – রিশাদ
যদি আপনি মনে করেন অপমান করছি। তাহলে তাই- আমি
আমার কথা শুনে রিশাদ হা হা করে পাগলের মত হাসতে লাগলো। যেনো আমি কোনো মজার কৌতুক বলেছি।
হাসির কারণ টা কি জানতে পারি মিস্টার রিশাদ ? – আমি
তুমি কি ভেবেছো আমি জানিনা আমাকে আর লিজাকে এক সাথে দেখে তোমার হিংসা হয়।তোমার ভিতরে জ্বলে। তুমি আমাদের দেখতে পারোনা। তাই তো এই ভুল তথ্য দিয়েছিলে ওইদিন রির্পোটের ব্যাপারে – রিশাদ
রিশাদের কথা শুনে আমি ও হা হা করে হাসতে লাগলাম। তারপর অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললাম,
মিস্টার রিশাদ আপনি হচ্ছেন একটা থার্ড ক্লাস জিনিস।আর ওইসব থার্ড ক্লাস ফালতু জিনিসে আমি কখনো নজর দেইনা। বুঝলেন। আর হিংসা করতে তো কারণ লাগে।আমি কি দেখে আপনাদের হিংসা করব।আপনার থেকে কম কিছু তো আমার নেই বরং অনেক বেশিই আছে।তাহলে হিংসার কারণ কি ? – আমি
রিশাদ নিশ্চুপ।
জানেন তো আমার লিজা মেয়েটির জন্য প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। আপনার জন্য সে সারাজীবন মা ডাক টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লিজার উচিত আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করা।ঠিক আপনি যেমন সবকিছু করেছিলেন আমার সাথে – আমি
এসব মিথ্যা। তুমি আমাদের সংসারের অশান্তির জন্য এসব মিথ্যা বলছো।তুমি আমাদের আলাদা করতে চাও তাই তো এসব ভুলভাল মিথ্যা কথা বলছো।আমার আর লিজার পাসপোর্ট তো আগেই ছিল।ভিসার জন্য এপ্লাই করেছি। আমরা বিদেশে গিয়ে সব নামি-দামি ডাক্তার দেখাবো।তারপর এসে সেসব রিপোর্ট তোমার মুখে ছুড়ে মারবো আমি -রিশাদ
অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে মিস্টার রিশাদ। আপনি এই কাজ কখনোই করতে পারবেন না।কারণ আসল সত্যি এটাই যে আপনি কখনো বাবা হতে পারবেন না – আমি
চ্যালেন্জ্ঞ দিচ্ছো তুমি আমাকে ? – রিশাদ
ধরে নাও তাই – আমি
ওকে চ্যালেন্জ্ঞ একসেপ্ট মিসেস প্রাপ্তি। ওহ সরি সরি মিস প্রাপ্তি। আপনি তো আবার একজন ডিভোর্সি – বলে হাসতে হাসতে রিশাদ বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।
বারান্দায় বসে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।আজকে অনেক দিন পর আবার পুরনো ক্ষত গুলো তাজা হয়ে গিয়েছে। বার বার শুধু রিশাদের বলা ডিভোর্সি কথাটা আমার কানে বাজছে।হ্যা সত্যিই তো আমি একজন ডিভোর্সি। আচ্ছা ডিভোর্স হয়েছে তখন নাহয় সবাই আমাকে দোষারোপ করেছিল যে আমি মা হতে পারবো না।কিন্তু এখন। সেদিন রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা ছিল সেই সত্যি। যে কমতি রিশাদের রয়েছে আমার বা লিজার কোনো কমতিই নেই।আজ ও আমার মনে পরে যেদিন আমার উপর শশুড়বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ অপবাদ দিয়েছিল যে আমি কখনো মা হতে পারবোনা। তাই রিশাদ আমাকে ডিভোর্স দিবে।একবার যাচাই করে দেখতে চাইনি দোষ কি সত্যি এই পরের বাড়ির মেয়েটার নাকি নিজেদের ছেলে।না নিজেদের ছেলের তো কখনোই দোষ হতে পারেনা।আসলে অন্যের বাড়ির মেয়েগুলোই হচ্ছে অপূর্ণ। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের ভিতরটা অনেকটা তিক্ত মনে হচ্ছিল।
ফোনে কল আসায় চেক করে দেখি বাবাই কল দিয়েছে। হ্যা এই একটি মানুষই তো যে আমাকে ভালোবাসে।আগলে রাখে।আমার বেঁচে থাকার যদি কোনো কারণ থেকে থাকে তা হচ্ছে আমার বাবাই।আজকে এই মানুষ টা না থাকলে হয়তো আমিই থাকতাম না এই দুনিয়ায়।এই মানুষটিই তো ওইদিন আমায় বাঁচিয়েছিল।এসব ভাবনার মাঝেই কলটা কেটে যায়।তাই আমি আবার কল ব্যাক করি।সাথে সাথে বাবাই কল রিসিভ করে,
কি ব্যাপার মামনি তুমি কই আর এখন কি ব্যস্ত আছো নাকি ? – বাবাই।
না বাবাই আমি ব্যস্ত নেই।তুমি বলো কেমন আছো তুমি ? শরীর আবার খারাপ হয়নি তো তোমার? দেশে কবে আসছো৷? ওখানের অফিসের কাজ কবে শেষ হবে ? – আমি
থামো মামনি।এত প্রশ্ন একসাথে করলে আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিব বলো দেখি ? – বাবাই
একটা একটা করে সবগুলোর উত্তর দাও – আমি
আমি ভাল আছি। তুমি কেমন আছো ? আর আজকে সব কাজই প্রায় শেষ করে এসেছি। কালকে সকালে জাস্ট অল্প একটু কাজ বাকি আছে।আর আমি কালকেই বিডিতে ব্যাক করছি – বাবাই
আমিও ভালই আছি। সত্যি বাবাই তুমি কালকে আসবা? – আমি
হুম মামনি – বাবাই
আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি তাহলে আমাকে কালকে ফ্লাইট ল্যান্ডের টাইম বলে দিও। আমি তোমাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে আসবো – আমি
ঠিক আছে মামনি।ঘুমাও এখন গুড নাইট – বাবাই
গুড নাইট বাবাই – আমি
তারপর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।শুয়ে থাকতে থাকতে কখন জানি ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর ফোন হাতে নিয়ে দেখি বাবাইয়ের মেসেজ।বাবাইয়ের প্ল্যান সন্ধ্যা ছয়টায় ল্যান্ড করবে।আমি রূমা আপুকে ফোন করে সেই অনুযায়ী সব রোগীর লিস্ট করতে বললাম।উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।তারপর তৈরি হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলাম।আমার মতে ঢাকার শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যাই হচ্ছে এই ট্রাফিক জ্যাম।একবার লেগে গেলে আর ছুটতেই চায়না।গাড়ি জানালাটা খুলে পাশে তাকালাম।পাশের দৃশ্য দেখে আমি পুরো চমকে উঠলাম। একটা রিকশায় লিজা আর একটা ছেলে বসে আছে।লিজা সেই ছেলের হাতের উপর মাথা রেখে হেসে খেলে নানারকম মজা করছে।আমি বুঝতে পারছি এদের মধ্যকার সম্পর্ক টা।আমি আবার গাড়ির জানালাটা বন্ধ করে দিলাম।কি লাভ আবার অতীত ঘেঁটে। ওদের জীবনে যা ইচ্ছে ওরা করুক।আমি আর দ্বিতীয় বার জড়াতে চাইনা ওদের সাথে। এরমধ্যে সামনের গাড়ি গুলো চলতে শুরু করলো।আমি ও এসে পরলাম হসপিটালে।
~~~~
হসপিটালের কাজ শেষ করে এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছালাম।আসার ১৫ মিনিটের মাথায় বাবাই বেরিয়ে আসলো।তারপর আমি আর বাবা একসাথে একটু ঘুরে বাইরে ডিনার করে একেবারে নয়টার দিকে বাসায় আসলাম।তারপর ফ্রেশ হয়ে আমি শুয়ে শুয়ে মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে একটু ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম।তখনি আমার ফোনে একটা কল আসে। কিছুক্ষণ কথা বলে আমি বলে উঠি,
আপনি আমাকে এড্রেস টা মেসেজ করে পাঠিয়ে দেন।আমি এখনি আসছি – বলে কোনো রকম ড্রেসটা পাল্টে গাড়ির চাবি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।
গাড়িতে বসার পর দেখি এড্রেসটা পাঠিয়ে দিয়েছে আন্টি। আমি জলদি গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম।গার্ডদের পরিচয় দিতেই তারা ভিতরে ঢোকার পারমিশন দেয়।বাসার ভিতরে যেতেই দেখি আন্টি বসে আছে ড্রইং রুমে। আমি আন্টিকে বলি,
আন্টি রিয়ু পাখি কই ? – আমি
তুমি এসেছো মা।চলো আমার সাথে – বলে আন্টি আমাকে রিয়ানার রুমে নিয়ে যায়
আমাকে দেখেই রিয়ানা বলতে থাকে,
ভাল আন্টি তুমি এসেছো – বলতে বলতে রিয়ানা জ্ঞান হারায়
চলবে 🥰🥰
সরি রিচেক করতে পারিনি।ভুল ক্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন