প্রাপ্তির হাসি পর্ব-৫

0
7559

#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_০৫
DI YA

গাড়িতে বসার পর দেখি এড্রেসটা পাঠিয়ে দিয়েছে আন্টি। আমি জলদি গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম।গার্ডদের পরিচয় দিতেই তারা ভিতরে ঢোকার পারমিশন দেয়।বাসার ভিতরে যেতেই দেখি আন্টি বসে আছে ড্রইং রুমে। আমি আন্টিকে বলি,

আন্টি রিয়ু পাখি কই ? – আমি

তুমি এসেছো মা।চলো আমার সাথে – বলে আন্টি আমাকে রিয়ানার রুমে নিয়ে যায়

আমাকে দেখেই রিয়ানা বলতে থাকে,

ভাল আন্টি তুমি এসেছো – বলতে বলতে রিয়ানা জ্ঞান হারায়

আমি রিয়য়ানার কাছে গিয়ে কপালে হাত রাখতেই দেখি ওর পুরো শরীর জ্বরে পুরে যাচ্ছে। তাই আন্টিকে বলি

আন্টি আমার মনে হয় ওর মাথাটা একটু ধুইয়ে দিলে হয়তো জ্বরটা নামতো – আমি

ঠিক আছে মা। ওয়াশরুমে এদিকে চলো – লিমা আহমেদ

তারপর আমি আর আন্টি মিলে রিয়ানার মাথায় কিছু সময় পানি ঢাললাম। তারপর শরীরটা হালকা ঠান্ডা হতেই ভালো করে তোয়াল দিয়ে ওর মাথাটা মুছিয়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে দিলাম। তারপর আন্টিকে বললাম একটা ছোট কাপড় আর এক বোল পানি নিয়ে আসতে।ওকে জল পট্টি দেওয়া লাগবে।সাথে ঔষধ টা ও নিয়ে আসতে।আন্টি আসার পর ওকে ঔষধটা খাইয়ে দিয়ে। আমি ওর মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলাম।বারোটার দিকে আন্টিকে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলাম।কারণ বয়স্ক মানুষ। উনার এভাবে রাত জাগা ঠিক হবে না।তারপর বাবার ফোনে একটা মেসেজ দিলাম যে আমি জরুরি কাজে বাসার বাইরে আছি।আর রূমা আপুকে কল করে বললাম আমি কিছুদিন হসপিটালে আসতে পারবো না।এমন করতে করতে রাত তিনটার দিকে রিয়ানার জ্বর পুরোপুরি ভাবে চলে যায়।আর ওকে জড়িয়ে ধরে ওর পাচে আমিও শুয়ে পরি।

ভাল আন্টি ও ভাল আন্টি।সকাল হয়ে গেছে জলদি উঠো – রিয়ানা

রিয়ানার ডাকে সকাল সকাল আমার ঘুম ভেঙে যায়।মেয়েটা কত হাসিখুশি দেখাচ্ছে। এখন ওকে দেখলে কেউ বলতেই পারবেনা ওর নাকি কালকে সারারাত এত জ্বরে বেহাল অবস্থা হয়েছিল।

এখন কেমন লাগছে পাখি ? – আমি

ভাল লাগছে।- রিয়ানা

তুমি তো আমাকে বলেছিলে এরকম খাবার নিয়ে অবহেলা করবে না।ঠিক মত ঔষধ কাবে। আর একেবারে গুড গার্ল হয়ে যাবে তাহলে – আমি

আসলে আমার না তোমার কথা প্রচুর মনে পরছিল।ওইদিন চলে গেলা। তারপর তো তুমি আমার সাথে আর দেখাও করলে না – রিয়ানা

সরি গো পাখি।আসলে তোমার ভাল আন্টি একটু ব্যস্ত ছিল তো তাই আসতে পারেনি।তুমি কি রাগ করেছো ভাল আন্টির উপর? – আমি

না। কিন্তু তুমি আমাকে একটা কথা দাও – রিয়ানা

কি কথা পাখি ? – আমি

যে এখন থেকে তুমি রোজ আমার সাথে দেখা করবা ? – রিয়ানা

ওকে পাখি।ঠিক আছে – আমি

থ্যাংক ইউ ভাল আন্টি – রিয়ান

ওয়েলকাম বাবু। এখন চলো উঠে ফ্রেশ হয়ে তোমার নাস্তা করতে হবে।তারপর আবার ঔষধ ও খেতে হবে – আমি

তুমি কি আজকেও আমাকে খাইয়ে দিবা ভাল আন্টি ? – রিয়ানা

ঠিক আছে মা – আমি

তারপর রিয়ানাকে ফ্রেশ করিয়ে নিচে পাঠিয়ে দিলাম।তার একটু পর আমিও ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।গিয়ে দেখছি টেবিলের চারপাশে ছয়জন মেইড দাড়িয়ে সাথে আন্টি রিয়ানাকে খাওয়ানোর চেনা করছে।কিন্তু ও কিছুতেই খাচ্ছে না।

কি হয়েছে পাখি ? – আমি

আমি এসব খাবনা ভাল আন্টি।রোজ রোজ আমার এসব শাক সবজি দিয়ে ভরা স্যান্ডইজ আর দুধ খেতে ভাল লাগেনা – রিয়ানা

কিন্তু রিয়ানা আম্মু স্যারের আদেশ তোমাকে রোজ এরকম হেলদি ব্রেকফাস্ট করতে হবে।স্যার যদি জানে তুমি এসব খাওনি তাহলে স্যার প্রচুর রাগ করবে – একজন মেইড বললো

আন্টি আমি কি রিয়ানার জন্য কিছু বানাতে পারি ? যদি আপনি পারমিশন দেন তো – আমি

এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় মা? – তারপর আন্টি একজন মেইডকে বললো আমাকে রান্না ঘর দেখিয়ে দিতে।

তখন রিয়ানা বায়না ধরলো সে ও যাবে আমার সাথে। রান্না করা দেখতে।তাই ওকে ও সাথে নিয়ে রান্না করতে গেলাম। কিছু সময়ের মধ্যেই দুটো পরোটা আর একটা ডিম ভেজে ফেললাম।সাথে একটু কমলা লেবুর জুস বানিয়ে নিয়ে আসলাম টেবিলে। তারপর একটু একটু করে পরোটার সাথে ডিম দিয়ে ওকে খাওয়াতে লাগলাম। ওর খাওয়া শেষ হতেই ওকে রুমে পাঠিয়ে দিলাম।বললাম যেয়ে একটু কার্টুন দেখো।আমি খেয়ে এসে ঔষধ খাইয়ে দিচ্ছি।আমার কথা শুনে ও বাধ্য মেয়ের মত রুমে চলে গেল।তারপর আমিও খেতে লাগলাম।আন্টি আমার পাশের চেয়ারে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগলো,

তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব আমি বুঝতে পারছিনা মা।আসলে বাসায় আমি একা। রিয়ান ও নেই।আর রিয়ানা বারবার তোমার কথা আর রিয়ানের কথা বলছিলো।তাই হসপিটালে কল দিয়ে সেখান থেকে তোমার নাম্বার নিয়ে তোমাকে কল দেই।জানো এমনি দেন মেয়েটাকে খাওয়াতে গেলে খেতে চায়না।আর যদিও খায় একটু খেয়েই উঠে যায়।আর আজকে নাকি এত জলদি এতকিছু খেয়ে ফেললো। সত্যি তুমি অসাধারণ মা।দোয়া করি সবসময় সুখি থাকো – আন্টি

আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি একটা কথা বলি আন্টি ? – আমি

হুম মা বলো – আন্টি

আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি চার পাঁচ দিন এখানে থাকতে চাই রিয়ুর জন্য। মেয়েটার মায়ায় আমি পুরো জড়িয়ে গিয়েছি আন্টি।এখন ওকে রেখে কোথাও গেলে ও আমার মন এখানেই পরে থাকবে।তাই আপনি যদি পারমিশন দিতেন – আমি

আমি ও তোমাকে এটা বলতে চেয়েছিলাম মা।কিন্তু কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিলাম না।আজকে রিয়ান ও আসবে। তুমি তাহলে বাসায় গিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে আসো।কারণ তোমারো তো গোছগাছের ব্যাপার আছে।আবার তোমার বাসার সবাই ও তো টেনশন করবে – লিমা আহমেদ

জি আন্টি। আমার খাওয়া শেষ। আমি উঠি এখন।আবার ওর ঔষধের টাইম হয়ে যাবে।আচ্ছা আন্টি আরেকটা পারমিশন লাগবে – আমি

কি মা বলো ? – লিমা আহমেদ হেসে বললো

এই কয়েকদিন আমি ওকে আমার রুটিনমাফিক খাবার দেই।মানে মিস্টার রিয়ানের আদেশের বাইরে? – আমি

হুম।তুমি যা ভাল বুঝো তাই কর – আন্টি

~~~~~~~

অফিসে থেকে আসার সময় নিজের স্ত্রীকে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে রিক্সায় বসে থাকতে দেখে রিশাদ তাদের পিছু নেয়।এক পর্যায়ে তারা একটা আবাসিক হোটেলের ভিতরে চলে যায়।সেখানে একজন ওয়েটারকে রিশাদ কিছু টাকা দিয়ে বলে ওরা রুমে কি করছে তার কিছু ছবি যেন সে তুলে এনে রিশাদকে দেয়।টাকা পেয়ে ওয়েটার ও রিশাদের কথা মতই কাজ করে।তারপর ওয়েটার লিজা আর সেই ছেলের গোপন মূহুর্তের কিছু ছবি তুলে এনে রিশাদকে দেয়।সেসব দেখে রিশাদের পুরো পৃথিবীই থমকে যায়।যার জন্য সে প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিলো। সে লিজাই তাকে ঠকালো। রিশাদ বুঝতে পারছে প্রাপ্তির থেকে জিতে গিয়েও আজ সে নিয়তির কাছে খুব বাজে ভাবে হেরে গিয়েছে। না তাকে এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।এভাবে এসব চলতে দেওয়া যাবেনা। জলদিই কিছু একটা করতে হবে।

______

অন্য দিকে,

কলিংবেল বাজিয়ে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে রিয়ান।এ নিয়ে দুইবার সে বেল বাজালো কিন্তু কেউ দরজা খুলেনি।আবারো বিরক্তি নিয়ে বেল বাজাতে যাবে তখনি দরজা খোলার শব্দে রিয়ান সামনে তাকালো।নিজের সামনে প্রাপ্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিয়ান একা একাই বলতে লাগলো,

উফ মিস ধানি লংকা আপনি দেখি আমার স্বপ্নর পাশাপাশি কল্পনায় ও আসতে শুরু করেছেন। এখন কল্পনায় আপনি আমার বাসার দরজা খুলে দিলেন।ইশশ এটা যদি সত্যি হতো যে এই মূহুর্তে সত্যিই আপনি আমার সামনে থাকতেন – রিয়ান

চলবে 🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here