#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_১১ (সমাপ্তি)
DI YA
তারপর রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে আমরা একটা শপিংমলে চলে আসি।ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই আমার চোখ পরে একজনন মানুষের উপর।আরে ও এখানে কি করছে ? আর ওর সাথে কে এটা ? আসলে আমার সামনে ছিল লিজা। আজকে আবার তার সাথে ভিন্ন একটা ছেলে।আমি ওর দিকপ এগিয়ে ওর সাথে কথা বলতে যাব তার আগে রিয়ু পাখি আমাকে টেনে অন্য এক শপে নিয়ে গেল।সেখানে নাকি ওর একটা ড্রেস ভাল লাগছে। তারপর সেখানে গিয়ে দেখলাম ওর একটা ব্লু কালার বারবি গাউন পছন্দ করছে। আমি ওকপ সেই ড্রেসটা কিনে দিলাম। তারপর আমরা বেরিয়ে আসলাম।আসার সময় আমি লিজাকে আর ওই ছেলেকে অনেক খুঁজেছিলাম কিন্তু পাইনি।
সময় চলতে থাকে। দেখতে দেখতে আবারো আরো ৬ টা মাস পার হয়ে গেলো। এর মধ্যে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটা হচ্ছে আমার আর মিস্টার রিয়ানের বিয়ে ঠিক হয়েছে। হুম আগামী মাসের ১৭ তারিখ আমাদের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। ভেবেছিলাম আর কাউকে জড়াবো না নিজের এই অভিশপ্ত জীবনে সাথে। কিন্তু নিয়তিতে হয়তো অন্য কিছুই লেখা ছিল।তাই তো এত চেষ্টা করে ও পারিনি নিজেকে সামলাতে।এ কিছু মাসে উনি পাগলামি যেন আরো বাড়িয়ে দেয়।উনার পাগলামিতে আমি আরো দূর্বল হয়ে পরি উনার উপর।তারপর একপ্রকার নিজের অজান্তেই মনের কথা স্বীকার করে ফেলি তার কাছে।দেখা যাক না এই বার হয়তো ঠিক মানুষটাই আমার পাশে আছে। আগের বারের মতো সে আমাকে ধোঁকা দিয়ে ভেঙে দিবেনা।
মানুষ চিন্তা করে একটা আর হয় একটা। আবারো একটা ঝড় এসে আমার জীবনটাকে ভেঙেচুরে গুড়ো করে দিয়ে গেল।
~~~~~~~~~
আঁখি জোড়া বন্ধ করে এতক্ষণ অতীতে ডুবে ছিলাম আমি।আদনান ডাক দিতেই আমি বাস্তবে ফিরে আসি।আঁখি জোড়া খুলতেই টপটপ করে এক নাগাড়ে কিছু ফোটা জল চোখে থেকে গড়িয়ে পরলো। কেউ একজন হয়তো সত্যিই বলেছিল। মানুষ বাস্তবতার থেকে কল্পনাতেই বেশি সুখি।কত কিছু ভেবেছিলাম। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম দুজনে মিলে।কিন্তু এক নিমেষেই সব স্বপ্ন ভেঙে গেলো আমাদের। আলাদা হয়ে গেলাম দুজনে।সে চলে গেলো আমাকে একা রেখে।আর আমি পরে রইলাম তাকে দেওয়া কথাগুলো সাথে নিয়ে। আদনানের ডাকে আবারো কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসলাম,
প্রাপ্তি বের হও আমরা এসে পরেছি তো – আদনান
ওর কথা শুনে আমি গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম সবকিছু কতটা বদলে গেছে। চারিদিকের রাস্তাঘাট বাড়িঘর সবকিছুতেই অনেকটা বদল এসেছে। আজ কত বছর পর পা রাখলাম সেই চিনা পরিচিত বাসাটাতে।তারপর সোজা আহমেদ বাড়ির দরজায় গিয়ে কলিংবেল চাপলাম।সাথে সাথে একজন মেইড দরজা খুলে দিলো,
কেমন আছেন ম্যাম সাহেব – রহিমা চাচি
ভাল চাচি। আপনারা কেমন আছেেন ? – আমি
আমরা ও ভাল আছি – আহসান চাচা
রিয়ানা আম্মু তুমি কেমন আছো ? – রহিমা চাচি
ভাল আছি আন্টি – রিয়ানা
তোমরা ভিতরে এসো বসো। আমি সবকিছু তৈরি করে রেখেছি তোমাদের জন্য। যাতে তোমাদের কোনো সমস্যা না হয় – রহিমা চাচি
না চাচি আমরা এখানে থাকবো না বেশিক্ষণ। ঘন্টা খানেক এখানে থেকে আমরা ওই বাসায় চলে যাবো।- আদনান
আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা বসো আমি তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসি – রহিমা চাচি
আদনান আহসান চাচার সাথে কথা বলতে লাগলো। আমি আর রিয়ানা উঠে পুরো বাসা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।প্রথমে আমরা গেলাম লিমা আন্টির ঘরে। এ ঘরে আসলেই আমার শুধু মনে পরে মানুষটার আদরগুলো। নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো আমাকে।কত আদর করলো। আর আজকে মানুষটিই নেই।তারপর আমরা আসলাম রিয়ানার ঘরে।রিয়ু পাখি বলতে লাগলো,
মনে আছে মাম্মা প্রথম যেদিন তুমি আমার রুমে আসছিলা আমি অসুস্থ শুনে।সারারাত সেদিন জেগে জেগে আমার যত্ন করেছিলে।কত খুনসুটি করেছিলাম আমরা।কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ঘরে আমার। আমার দাদুমনি আর পাপার সাথে কত সময় কাটিয়েছি আমি এখানে। – রিয়ানা
আমি কিছুই বললাম না। তারপর আমি বেরিয়ে রিয়ানের ঘরে চলে আসলাম।আমার পিছু পিছু সেখানে রিয়ু ও আসলো।এখন আর আমি পারছিলাম না নিজেকে সামলাতে।নতুন করে আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল উনি।কত স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আমাকে।এত পরিকল্পনা ছিল আমাদের এটা করবো সেটা করবো।কিন্তু কিছুই তো হলোনা। মানুষ টা আমাকে একা রেখে চলে গেলেন।একবারো ভাবলেন না যে মেয়েটিকে উনি নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিলেন সেই মেয়েটির কি হবে উনাকে ছাড়া। মেয়েটি যে বেঁচে থেকে ও ভিতরে পুরো মরে যাবে উনাকে ছাড়া। কেন চলে গেলেন উনি।হঠাৎই আমি কান্না করতে শুরু করলাম আর জোরে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলাম,
কেন চলে গেলেন আপনি মিস্টার রিয়ান। যাবারই যখন ছিলেন তাহলে এসেছিলেন কেন মরিচীকা হয়ে আমার জীবনে হারাতে হারাতে আমি আজ ক্লান্ত। কেন আল্লাহ আপনার বদলি আমাকে নিয়ে গেলো না।তাতে ও তো বরং শান্তি পেতাম।কিন্তু এখন তো প্রতি মূহুর্তে আমি ধুঁকে ধুঁকে মরছি রিয়ান।ফিরে আসুন রিয়ান ফিরে আসুন – আমি
আমার কান্না দেখে রিয়ানা ও একইভাবে কান্না করতে শুরু করলো।বয়সটা ওর ১৫ পেরিয়েছে এ বছর।না এ আর আগের রিয়ানা নেই।এই রিয়ানা আর আগের রিয়ানার মধ্যে আকাশ জমিনের পার্থক্য।এ রিয়ানা হচ্ছে চুপচাপ, রাগী আর গম্ভীর রিয়ানা।এই একটা মানুষের চলে যাওয়া এতগুলো মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে।
রিয়ানাকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আহমেদ বাড়ির কবর স্থামে আসলাম।পাশাপাশি দুটো কবর একটাতে লিখা লিমা আহমেদ অন্য টায় লিখা রিয়ান আহমেদ। কান্না করছি হ্যা আজকে অনেকদিন পর আমি মন খুলে কান্না করছি। পেয়ে ও আমি হারিয়ে ফেলেছি মানুষটাকে। এই যন্ত্রণার পরিমাণ যে সহ্যের বাইরে আমার।।
আদনান কোনোমতে আমাদের সামলিয়ে আমাকে আর রিয়ানাকে বাবাইয়ের বাসায় নিয়ে আসলো।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েছি কিছুক্ষণ আগে। সময় এখন গৌধুলি বেলা।বেলকনিতে দাড়িয়ে ভাবছি সেদিনের কথা। সবকিছু ঠিক মতোই চলছিলো। আমাদের হলুদ সন্ধ্যা ও বেশ আনন্দের মাঝেই কেটে যায়।কিন্তু বিপত্তি ঘটে বিয়ের দিন।বরপক্ষ চলে আসে কিন্তু সেদিন বরের গাড়ি আর আসেনা।সময় চলতে থাকে এভাবে দুই ঘন্টা সময় পেরিয়ে যায়।হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। তারপর তিনি বলেন রিয়ানের নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে। সে ******* এই হসপিটালে ভর্তি।অবস্থা বেশি ভালো না। আমরা যেন জলদি সেখানে পৌছাই। সে কথা শুনে এক মূহুর্ত ও দেড়ি না করে বেরিয়ে যাই হসপিটালের উদ্দেশ্য। আদনান ছিল আমার সাথে। দৌড়ে কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেরিয়ে সামনে গাড়িতে বসে থাকা আদনানের দেখা পাই।তাকে এড্রেস টা বলে বলি জলদি সেখানে নিয়ে যেতে।কিছু একটা ঘটেছে বুঝতে পেরে সে ও আমাকে সেখানে নিয়ে যায়।আরো অনেকে এসেছিল সেদিন আমাদের পিছনে। কিন্তু। হসপিটালে পৌছাতেই দেখি রিয়ানকে।সেদিনের থেকে ভয়াবহ অবস্থা তার। সে আমাকে দেখে মুখে থেকে অক্সিজেন মাক্সটা খুলে বলে উঠে,
দেখো প্রাপ্তি আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই ।আমার মৃত্যুর রহস্যটা খুঁজে বের কর।তাহলে সব জানতে পারবে। আর রিয়ু পাখি আর আম্মুকে দেখে রেখো।পারলে ক্ষমা করে দিও কথা দিয়ে ও পাশে থাকতে পারলাম না। ভেবে নিও আল্লাহ চাইনি আমাদের মিল।আমাদের গল্পটা তাহলে অসমাপ্তই থেকে যাক।- রিয়ান
তারপর আদনানের হাতের উপর আমার হাতটা দিয়ে বলতে লাগলো,
এই পাগলিটাকে দেখে রেখো আদনান।আমি জানি তুমি ওকে যথেষ্ট ভালোবাসো। সাথে আমার মেয়েটার ও খেয়াল রেখো। আর প্রাপ্তি তুমিও আদনানকে বিয়ে করে নিও। নিজেকে আর একা করে রেখো না।রিয়ুর সাথে সবসময় থেকো।মেয়েটা যে বড় একা।কেউ নেই ওর।আজকে আমিও চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো -রিয়ান
ব্যস শেষ চারিদিক নীরব।কথা শেষ করেই শেষ নিশ্বাসটা ত্যাগ করে রিয়ান।ছেলে হারানোর কথা শুনে রিয়ানের মা ও হার্ট অ্যাটাক করে সাথে সাথে মারা যান।
রিয়ানের কথা রেখেছি। আদনানকে বিয়ে করেছি৷ রিয়ুকে মা বাবার ভালোবাসা দিচ্ছি।সবসময় আগলে রাখছি।কিন্তু দিনশেষে আমি যে বড় একা।
একাই একাই বলতে লাগলাম,
আপনাকে ভালোবেসেছিলাম মিস্টার রিয়ান।এখনো বাসি।সবসময়ই ভালোবেসে যাবো। শুধু অভিযোগ একটাই থাকবে কেন গল্পটা অসমাপ্ত থেকে গেলো আমাদের।এর সমাপ্তিটা আসলে কোথায়? – আমি
সমাপ্তি🥰,
( এই পর্বটা লিখতে গিয়ে আমি নিজেই কান্না করে দিয়েছি।কিছু কিছু প্রেমকাহিনী অসমাপ্তই থেকে যায়। হয়তো গল্পটা এভাবেই সুন্দর। এর সিজন ২ লিখবো।বাকি রহস্য নাহয় ওই সিজনের জন্য জমা থাক।)