প্রেমাসক্তি’ পর্ব – ২৩

0
5163

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 23

তন্ময় রা বাসায় পৌঁছাতেই দেখলো সবাই গম্ভীর হয়ে ডয়িং রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন।
রবিন আর তন্ময় একবার একে অপরকে দেখে নিলো।
দুজনেই ভ্রু কুঁচকে রইলো , এটা স্বাভাবিক বিষয় ই কারন সকালের কান্ডে নিশ্চয়ই সবাই কিছু টা হলে ও জেনে গেছে।
পরিস্থিতি কে হাতের বাইরে চলে যেতে দেওয়া যাবে নাহহ।

তরিকুল আবরার সোফার কোনে বসে আছেন।
তিনি তন্ময়দের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার আগের মতো করেই বসে রইলেন।
তন্ময় কে দেখে ইথিনা নিচে নেমে আসলো।
বাসায় ফিরে নিজের রুমেই নিজেকে বন্ধ করে রেখেছিলো।
গাড়ির আওয়াজ শুনে ব্যলকনি দিয়ে দেখেছিলো তন্ময় আর রবিন এসেছে।
ইথিনার মুখ টা শুকনো দেখাচ্ছে, অনেকটা কেঁদেছে বোঝাই যাচ্ছে।

তন্ময় অপরাধীর ভঙ্গিতে ইথিনার দিকে তাকাতেই ইথিনার চোখের কোনে পানি চলে আসলো।
ইথিনা চোখের পানি আড়াল করে , অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

রবিন তন্ময়ের কাঁধে হাত রেখে বলল
– তন্ময় ফ্রেস হয়ে আসি , তারপর সমস্ত কথা হবে।

রবিনের কথায় সায় দিয়ে তন্ময় উপরে যেতে নিলেই তরিকুল আবরার গলা ঝেরে বললেন
– রবিন তন্ময় তোরা কোথায় ছিলি?

রবিন ছোট্ট করে উত্তর দিলো
– আঙ্কেল আগে ফ্রেস হয়ে আসি তারপর না হয় বলবো সব।

রবিনের বাবা গর্জে উঠে বললেন
– কোনো ফ্রেস হওয়া লাগবে নাহহ।
আগে বল তোরা কোথায় গিয়েছিলি ?

রবিন কিছু বলতে গেলেই
তন্ময় হাত ধরে বাঁধা দেয়।
তন্ময় দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে বলল
– আমরা একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

মিসেস আবরার ভ্রু কুঁচকে বললেন
– কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি ?
আর কি এমন দরকার যার জন্য ওদের ফেলেই তোমরা চলে গেছো ?

রবিন – আন্টি আমাদের আর্জেন্ট ছিলো আর তাই ওদের ফেলেই যেতে হয়েছে।
তার জন্য আমরা সরি ,

তরিকুল আবরার সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললেন
– আচ্ছা সে সব কথা বাদ দাও , তোমরা কি জানো ইথি কেন কাঁদছিলো,
তা ও রাস্তার ধার ধরে ?
কি এমন হয়েছিলো, যার জন্য ইথিনার মতো শক্ত মেয়ে কাঁদলো।

তন্ময় – আব্বু ইথি কে জিঙেস করো ওও ঠিক কোন কারনে কান্না করেছিলো।
ইথি তুমি বলো নি ?

সেলিম রহমান গম্ভীর কন্ঠে ইথিনা কে বললেন
– ইথি কেন তুমি কাঁদছিলে ?
তুমি তো বলেছো তন্ময় আসলেই বলবে।
এখন বলো কেন ঐ রকম পাগলামি করছিলে ?

ইথিনা মাথা নিচু করে আছে।
বার বার হাত কচলাচ্ছে , তার কি বলা উচিত সে বিষয়ে দ্বিধা বোধ করছে সে।

ইথিনা মাথা নিচু করে বলল
– আব্বু বাদ দাও , ওরা এসেছে আগে ফ্রেস হয়ে আসুক।

তন্ময় নিজেকে প্রস্তুত করছে সকল পরিস্থিতির জন্য।
রবিন এর ভাব ভঙ্গি আশংকা জনক , নীলিমার কথা উঠলে তো তার মামার বাড়ির কথা ও চলে আসবে।
সবাই বিষয় টাকে কি করে নিবে , সেটা ভাবতেই তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

রবিনের মা কিচেন থেকে ফলের জুসের দুটো গ্লাস নিয়ে এসে দুজন কে এগিয়ে দিলো।
দুজন কেই বেশ এলোমেলো লাগছে।

আলতাফ মাহমুদ ক্ষীন কন্ঠে বললেন
– ইথির কান্না টা স্বাভাবিক নয় , তন্ময় ই যে এর মূল কারন তা খুব ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
কিন্তু তোমরা কেউ ই মুখ খুলছো নাহহ।

তন্ময় আর রবিন যেন আস্বামী , তারা দুজন এমন ভাবে দাড়িয়ে আছে যেন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।

তরিকুল আবরার মনে মনে এক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন।
হালকা কেশে সবার মনোযোগ নিয়ে নিলেন ।
সেলিম রহমান এর দিকে উদ্দেশ্যে করে বললেন
– সেলিম আমি চাইছি , তন্ময় আর ইথিনার বিয়ে টা বি ডি তেই দিবো।
তোর কি মতামত ?

সেলিম রহমান হাস্যউজ্জল মুখ নিয়ে বললেন
– এটা তো খুব ভালো কথা , শুভ কাজ ফেলে রাখা উচিত নয়।

সবাই সম্মতি জানালো , ইথিনার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে নাহহ।

তন্ময় আর রবিন একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

তরিকুল আবরার হাসি মুখে বললেন
– তাহলে সামনের মাসেই ডেট ফাইনাল করা যাক ?

তন্ময় শুকনো ঢোক গিলে বলল
– আব্বু আমার কিছু বলার আছে।

তন্ময়ের কথা তে সবাই এক যোগে তন্ময়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
তন্ময় দীর্ঘশ্বাস টেনে ভাবলো যা হবার হবে এখনি সব কিছু বলতে হবে, না হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।

তন্ময় হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলল
– আব্বু আমি একজন কে ভালোবাসি।

তন্ময়ের কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেল। যেন তন্ময় কোনো বোম ফাটিয়ে দিয়েছে।
সবার মাথাতে কথা টা ঢুকলো কি নাহহ সন্দেহ।

তরিকুল আবরার কর্কশ কন্ঠে বললেন
– তোমার কথার মানে কি তন্ময়?
তোমার সাথে ইথিনার বিয়ে ঠিক আর তুমি কিহহহ নাহহ এখন, এই সব বলছো।

রবিন মৃদু স্বরে বলল
– আঙ্কেল উত্তেজিত হইয়ো না প্লিজ।
ওর কথা টা আগে শোনো,,,
তার পর না হয় আলোচনা হবে

রবিন কে থামিয়ে দিয়ে মিসেস মাহমুদ বললেন
– এই কথার মানেই হয় না তন্ময়।
যদি অন্য কাউ কে পছন্দ করে থাকিস তাহলে আগে কেন বলিস নি ?

ইথিনার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
তার কোনো মতামত নেই, কারন তার মতামত গ্রহণযোগ্যতা পাবে নাহ।
তন্ময়ের কথায় স্পষ্ট তন্ময়ের অতীত মনে পরে গেছে।
ইথিনা কে জড়িয়ে আজে সিনথি, সিনথির মাথায় আসছে নাহহহ তন্ময় কি করে এতো বড় অন্যায় করতে পারে ?
সবাই জানে তন্ময় কতো টা নম্র ভদ্র।

তন্ময়: আব্বু আমার পুরো কথা টা একবার শুনো প্লিজ।

মিসেস রহমান কাঁদতে কাঁদতে বললেন
– কি কথা শুনবে ? তন্ময় এটা কি ধরনের অসভ্যতা।
আমার মেয়ে টা কাঁদছে, তুই তো জানিস ও তোকে কতোটা ভালোবাসে।
তারপর ও তুই কি করে এমনটা বলতে পারিস।
আর ভালোই যখন বাসিস তাহলে আগে কেন বলিস নি ?

তন্ময় ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
– আন্টি আমার কথা টা তো শুনো একবার।

তরিকুল আবরার তন্ময় কে ধমক দিয়ে বললেন
– তোমার কোনো কথা শোনা হবে নাহহ।
জীবন টা কোনো খেলা নয় , একটা মেয়ের জীবন তুমি নষ্ট করতে পারো নাহহ।

তন্ময় বাবার দিকে ছলছলে নয়নে তাকালো এই প্রথম তার বাবা তাকে ধমক দিলেন।
তন্ময় মাথা নিচু করে সব টা শুনে নিলো।
কিন্তু এখন শোনার মতো সময় নেই তন্ময় চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
– আব্বু,,

তন্ময় কে আর কিছু বলতে না দিয়ে তরিকুল আবরার বললেন
– রবিন তোর বন্ধু কে বলে দে , এটাই আমার লাস্ট সিদ্ধান্ত।
এর কোনো নড়চড় হবে নাহহ , আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাই নাহহ।
সামনে মাসে নয় এই মাসে ইনফেক্ট এই সপ্তাহেই ইথিনার আর ওর বিয়ে হবে।

এই টুকু বলেই তিনি গটগট করে উপরে উঠে গেলেন।
তন্ময় ছলছল নয়নে রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল
– রবিন, আই কান্ট ইয়ার,

রবিন মাথা নিচু করে আছে।
সে নিজেই খুব অসহায় বোধ করছে।
নীলিমার কথা ভাবতেই ওর কান্না পাচ্ছে।
একে একে সবাই উপরে চলে গেল।
রবিন একটা ফ্লাওয়ার ওয়াচে লাত্তি মেরে বলল
– শালার কপাল টাই খারাপ , কেউ পুরো কথা শুনতেই চায় নাহহহ।
এরা বলে গেল ঠিক ই একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারে নাহহ কিন্তু এটা ভাবছে নাহহহ অন্য আরেকটা মেয়ের জীবন ও নষ্ট হচ্ছে।

তন্ময় হাতের মুষ্টি শক্ত করে বন্ধ করে নিলো।
তার ইচ্ছে হচ্ছে সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে।
পরিস্থিতি তাকে আবার অসহায় করে দিলো।

*
নীলিমা একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে।
আরিয়ান কিংবা রবিন কেউ ই ফোন ধরছে নাহহ।
নীলিমার কান্না পাচ্ছে, আরিয়ান কে কাছে পেয়ে ও সে এতো দূরে , ফোন টা অব্দি ধরছে নাহহহ।

নীলিমার শরীর টা ও খারাপ লাগছে।
কেমন যেন গা গুলিয়ে আসছে ,,
বিয়ার আর ড্রাগ এর জন্য ও মন টা কেমন করছে।
নীলিমা বাইরে বের হতে যেয়ে ও বের হলো নাহহ।
নাহহ তাকে পাগলামি করলে চলবে নাহহ।
ড্রাগ কিংবা বিয়ার কোনো টাই নেওয়া যাবে নাহহ।
কিন্তু নীলিমার কষ্ট হচ্ছে খুব , রবিন বার বার করে বলেছে।
নীহু এটা থেকে বের হওয়ার প্রথম উপায় হলো মাইন্ড ।
অথার্ৎ নিজের মানসিকতা কে ঠিক রাখতে হবে।
তারপর মেডিসিন,, নীলিমা বেডের উপর বসে পড়লো।
ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে চলে যেত , নীলিমা বেডশিট খিচে ধরে রইলো।
ঘুমের ঔষধ ও খাওয়া যাবে নাহহহ , কারন ঘুমের ঔষধ ও এক প্রকার ড্রাগ। এই দিকে আরিয়ান কিংবা রবিন ও ফোন ধরছে না , নীলিমার কেমন যেন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।

নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে কিচেন এ গিয়ে কড়া করে কফি বানিয়ে নিলো।

কফি কাপে চুমুক দিতেই যেন শরীর টা শান্ত হলো।
নীলিমা ব্যালকনিতে গিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিতেই আরিয়ানের কল এলো।
নীলিমার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো লম্বা হাসি।
কফি কাপ টেবিলে রেখে ফোন রিসিপ করলো।

আমি দুঃখিত ছোট করে দেওয়ার জন্য । কিছু সমস্যার জন্য কাল গল্প দেই নি।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here