ফাগুন প্রেম পর্বঃ ১০

0
487

#__ফাগুন_প্রেম__
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ১০
💛
-“তুই কারো যোগ্য হয়ে উঠতে পারলি না। আর যার যোগ্য ছিলি সে তোকে গ্রহণ করলো না। তাই তোকে অন্য কারো ভাগে দিতে পারলাম না রে।”
খুব জোরে বক্স ও নথ মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিলো। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার আপন গতিতে। আজ ইভান কেন জানি তার চোখের জলকে থামাতে পারছে না। ইভান আর এক মুহুর্তের জন্যও সেখানে দাঁড়ালো না। হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। পরিবেশটা যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। কারো মুখে কোন একটা শব্দও নেই। মাঝে মাঝে কয়েকটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। পাখিদের তো আর এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারা দিব্যি তাদের মনের মতো করে গান গেয়েই যাচ্ছে।
বর্ণালী ইভানের যাওয়ার পথে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।
-“যে যাওয়ার সেতো চলেই গেছে এখন আর ওদিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
নীরবতা ভেঙে রুমু কথাটি বলে বর্ণালীর সামনে এসে দাঁড়ালো। ও চোখ তুলে একবার রুমুর দিকে আরেকবার ঈশার দিকে তাকালো। চোখে জল টলমল করছে।
-“তোর চোখে জল কেন বর্ণ?”
-“ক….কই? চ….চোখে কি….কিছু প….পড়েছে হয়তো।”
-“আচ্ছা? তোর কাছ থেকে আমি এটা কখনোই আশা করিনি। আজ তোকে কেমন যেনো অচেনা লাগছে রে। এতো বছরেও মনে হচ্ছে আমি তোকে ঠিক চিনতে পারলাম না। তুই সেই আগের বর্ণ না। যে কিনা মানুষকে পালটে একটা কটু কথা বলে না সে আজ একটা মানুষের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।”
-“রুমু তুই আমায় ভুল বুঝতেছিস। তুই তো সব জানিস। যে বুকে কষ্ট জমে পাহাড় হয়ে গেছে সে বুকে আমি আর নতুন কোন কষ্ট বয়ে বেড়াতে পারবো নারে।”
-“আচ্ছা? কষ্ট তুই নিজে কিনেছিলে কেউ তোকে যেচে দেয় নি বর্ণ। ধ্যাৎ আমি কার সাথে কি বলি? তুই তো একটা মরা গাছ যার গোড়ায় হাজার বছর পানি ঢাললেও জীবিত হবেনা।”
বর্ণালী রুমুর এমন কথার কোন জবাব দিতে পারবে না কেননা ও যাই বলছে সব সত্যি বলছে। ও তো নিজেই কষ্টগুলোকে দাওয়াত করে এনেছিলো। কাকেই বা দোষ দেবে?
রুমু ঈশার ফোন নাম্বার নিয়ে বললো,
-“বান্ধবী হিসেবে একটা ভালো পরামর্শ দিতে চাচ্ছি। জীবন নিজের হাতে নষ্ট করা যায় আবার সুন্দর করে সাজানোও যায়। সাজাবি না নষ্ট করবি এখন এটা সম্পূর্ণ তোর হাতে। কেউ ভরসার হাত বাড়িয়ে দিলে সেই হাত ধরে এগিয়ে যেতে হয়। সব ভরসায় ছলনা থাকেনা। আর ইভানকে দেখে এটুকু ভরসা আমার প্রথম দিনেই হয়েছে। বাকিটা তোর উপর আমার কথা একটাবার ভেবে দেখিস।”
বর্ণালী এখনো নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ঈশাও নিশ্চুপ। ওদের কোন কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা বেচারি।
বর্ণালীর কি এমন কষ্ট যার জন্য ও প্রেমের পথে এগুতে চায় না? আমাকে এই সত্যি জানতে হবে।
-“শুন ঈশা আমি গেলাম। আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই রুমু সামনের দিকে হাটা ধরলো। কি ভেবে যেনো আবারো ফিরে এসে বর্ণালীর ব্যাগ নিয়ে কিছু একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চুপচাপ চলে গেলো। বর্ণালীর চোখের জলের মাত্রা যেনো আরো বেড়ে গেলো। এই কান্নার কোন শব্দ কেউ শুনতে পাচ্ছে না। শুধু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে হাজারো অশ্রুজল। বর্ণালীর চোখ, মুখ ও কান লাল হয়ে গেছে। ঈশা এসে বর্ণালীর দু’হাত ধরলো।
-“কি হয়েছে বর্ণালী? এমন কি হয়েছে যা তোর মনকে বেঁধে রেখেছে? এমন কি হয়েছে যার জন্য তুই ইভানের হাত ধরতে পারছিস না?”
বর্ণালী ঈশার দিকে তাকিয়ে এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলো। ঈশাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে মেয়েটা। ঈশার ফোনে টুং করে আওয়াজ হতেই ও ফোন বের করে দেখলো একটা আননউন নাম্বার থেকে মেসেজ৷
-“বর্ণালী হয়তো এখন অনেক কাঁদছে। মেয়েটা কাউকে কিছু বলেনা নিজেই সব সহ্য করে। নিজেকেই কষ্ট দেয়। তুই প্লিজ ওর একটু খেয়াল রাখিস। ওকে খেয়াল করে বাসায় পৌঁছে দিস। *রুমু*”
ঈশা মোবাইল রেখে বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ আর বর্ণালী ইশার কাঁধ ভিজিয়ে দিচ্ছে চোখের জলে। ঈশা কিছুই বললো না। মেয়েটা একটু কেঁদে নিক। কেঁদে নিজেকে শান্ত করুক।
খানিক সময় পরে বর্ণালী ইশাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
-“আ…..আই এম স…..সস…সরি ঈ….ঈশা।”
কথা বলতে পারছে না কথার মাঝে মাঝে নাক টেনে হেচকি তুলছে। হেচকি তোলার সাথে সাথে বর্ণালীর পুরো শরীর নড়ে উঠছে। ঈশা ব্যাগ থেকে দিকে একটা পানির বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“নে পানি খা।”
বর্ণালী গটগট করে অর্ধেক বোতল পানি খেয়া নিলো। তারপর কিছুটা শান্ত হলো।
-“আমাকে সরি কেন?”
-“আসলে তোর ড্রেস খারাপ করে দিয়েছি কেঁদে।”
-“ড্রেস একটা খারাপ হলে আরেকটা আসবে। কোন সমস্যা নেই। চল এখন বাড়ি যাই। আর তোর তো ক্ষুধাও পেয়েছে।”
বর্ণালী শুধু মাথা নাড়লো।
`
এখানে তেমন একটা অটো রিকশা পাওয়া যায় না। পা রিকশা করেই যেতে হয়। পা রিকশাটা কুইং-কুং আওয়াজ করে চলছে। শব্দটা শুনতে খারাপ লাগছে না। বর্ণালী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্যটা মাথার উপর থেকে খানিকটা ঢলে পড়েছে। ঘড়িতে না তাকিয়েই আন্দাজ করা যাচ্ছে যে দুপুর ২টা বাজছে হয়তো বা তার কম।
ঈশা ইভানকে কল দিতেই আছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছেনা। না জানি এই ছেলে উলটাপালটা কিছু করে বসে। খুব টেনশন হচ্ছে ওর। একবার ভাবলো মাকে কল দেবে কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো যদি ও বাসায় না যায় তাহলে তো মা আরো টেনশন করবে তাই আর দিলো না। বাসায় গিয়েই দেখা যাবে। এসব চিন্তাই যখন ও বিভোর ছিলো তখনি বর্ণালী বললো,
-“নামিয়ে দেন।”
রিকশাওয়ালা থেমে যায়। ঈশাও নামে বর্ণালীর সাথে। চাচা আপনি একটু দাঁড়ান আমি আসছি। ঈশা বর্ণালীর দিকে এগিয়ে এসে বলালো,
-“চল আজকে তোর বাড়ি যাবো। নিবি তো নাকি নিবি না?”
-“পাগল হয়েছিস? নিবো না কেন? চল। আচ্ছা দাঁড়া রিকশাটা ছেড়ে দেই। তুই কিছুক্ষণ বসে একেবারে বিকেলে যাবি।”
-“কিন্তু দেরি হয়ে যাবে রে। মা টেনশন করবে আরেকদিন আসবো নে।”
-“আরে আন্টিকে ফোন করে বলে দে ফ্রেন্ডের বাসায় আছিস দেড়ি হবে।”
ঈশা আর কথা বাড়ালো না। বর্ণালী রিকশা ভাড়া দেয়ার আগেই ঈশা ভাড়া দিয়ে দেয়। বর্ণালী যেনো ঈশার মাঝে রুমুর ঝলক দেখতে পাচ্ছে। রুমুটা আজ অনেক রাগ করেছে। ওর রাগ যে কিভাবে ভাঙাবে সে টেনশনে এখন আর শান্তি লাগবে না। ঈশা খেয়াল করলো সামনেই একটা ছেলে রিকশা থেকে নামছে ছেলেটা বেশ স্মার্ট। কাঁধে ল্যাপটপ ব্যাগ ঝুলানো। কিন্তু অবাক করা বিষয় ও এক দৃষ্টিতে বর্ণালীর দিকেই তাকিয়ে আছে। রিকশা ভাড়া দেয়ার জন্য মানি ব্যাগ বের করছিলো। তখন বর্ণালীর দিকে দৃষ্টি থাকায় কখন যে টাকা নিচে পড়ে যায় সেদিকে খেয়ালই নেই। রিকশাওয়ালা না বললে টেরই পেতো না। ছেলেটা এভাবে কেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে? বর্ণালীর সেদিকে চোখ পড়তেই কেমন হচকচিয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে ঈশার হাত ধরে ভেতরে চলে আসে। ঈশা বিষয়টা খুব ভালো ভাবেই খেয়াল করেছে। এই ছেলের সাথে কি বর্ণালীর কিছু আছে নাকি? কিন্তু বর্ণালীকে দেখে তো মনে হলো না যে কিছু আছে। মনে হলো যেনো ও ভয় পেয়েছে।
`
সাহারা ইসলাম সেই কখন থেকে ছেলেমেয়ের অপেক্ষা করছেন। স্বামী তো কাজের চাপে দুপুরের খাবার বাসায় খেতে পারেন না এই ছেলেমেয়েগুলাও তার মতো হয়েছে। তাদের যেনো ব্যাস্ততা আরো অনেক বেশি। ভাবতে ভাবতেই ইভানের বাইকের হর্ণ শোনা যায়। দারোয়ান দৌড়ে গেট খুলে দিলো। কোনমতে বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে ঘরের ভেতর ঢুকে ইভান। ওমনি ধপ করে বাইক পড়ে যায়। দারোয়ান অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। দেখেই মনে হচ্ছে ইভান অনেক রেগে আছে। তাইতো বাইকটাও ঠিকমতো স্ট্যান্ড তুলে পার্ক করে নি। ইভান ফ্রিজ থেকে আইস আর এক বোতল পানি নিয়ে উপরে যেতে লাগে। সাহারা ইসলাম খেয়াল করেন ইভানের হাত কাটা। ভয় পেয়ে কেঁদে দেন উনি। দৌড়ে এসে ইভানকে ধরলেন।
-“ইভু তোর হাত কাটলো কিভাবে? কি হয়েছে বাবু তোর? তুই ঠিক আছিস?”
-“মা কিছুই হয়নি। আমি ঠিক আছি। আমি উপরে যাচ্ছি আমাকে প্লিজ কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে।”
-“কিন্তু বাবু তোর হাত থেকে যে……”
ইভান আর এক মুহুর্তও আর সেখানে দাঁড়ালো না। মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই হনহনিয়ে উপরে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই ঠাস করে রুম লক করে নিলো। সোফায় বসে পড়লো। রেগে লাল হয়ে আছে ইভান। অতিরিক্ত রাগে শরীর কাঁপছে ওর। সামনের টেবিলে রাখা ফুলের টব এক ঝটকায় ফ্লোরে ফেলে আ..আ..আহ বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো।
`
বর্ণালী ঈশাকে তার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ঈশাকে দেখে ওর মা অনেক খুশি হলেন।
-“তোমার বাসা কোথায় মা?”
-“এইতো আন্টি এখান থেকে প্রায় ২০মিনিটের রাস্তা হবে। আমরা এখানে নতুন এসেছি।”
-“ওহ বাসা ভাড়া নিয়েছো নাকি?”
-“না আন্টি আমাদের এখানে বাসা আছে।”
-“ওহ বাবা-মা কি করেন তোমার?”
-“আব্বু বিজনেস করেন। এখানে আব্বুর নতুন একটা কোম্পানি খুলছেন তাই আমাদের এখানে আসা। আর আম্মু আগে টিচার ছিলেন এখন আমাদের ঘরের মিনিস্টার।”
বলেই একগাল হেসে দিলো ঈশা সাথে সাথে শারমিন বেগমও হেসে দিলেন।
-“তোমার ভাই-বোন কয়জন?”
-“এক ভাই আছে আর এই আমি আপনার সামনে বসে আছি।”
-“মা ইন্টারভিউ শেষ হলে ওকে আমি আমার রুমে নিয়ে যেতাম।”
বর্ণালী কথাটা বলেই মায়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরে।
-“যাহ কি সব পাগলামি কথাবার্তা বলিস? কিসের ইন্টারভিউ আমি তো এমনিতেই ওর কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিছু মনে করো না মা।
-“আরে না আন্টি এতে মনে করার কি আছে? আপনি না জিজ্ঞেস করলেও আমি বলতাম। হিহিহি।”
-“ভারী মিষ্টি মেয়েগো তুমি। আচ্ছা যাও বর্ণের সাথে যাও।”
বর্ণালী ঈশাকে ওর রুমে নিয়ে যায়। বর্ণালীর রুমটা অনেক সুন্দর। খুব বেশি জিনিস নেই তবুও দেখতে ভালো লাগছে।
-“তুই বস আমি আসছি।”
-“হুম আচ্ছা যা। আমি এই ফাঁকে মাকে কল কর নেই।”
ঈশা মাকে ফোন করে যাচ্ছে একি মাও রিসিভ করছে না কেন। খুব ভেবে ল্যান্ডলাইনে কল দেয়।
-“আসসালামুয়ালাইকুম রানু হেয়ার। হুজ ইস্পিকিং?”
-“ওয়ালায়কুমআসসালাম রানীসাহেবা ইট’স মি।”
-“ওহ বুমনি হো কন আপনে কই আসেন নাই কেন এহনো?”
-“আচ্ছা সে বলছি আগে বল মা কোথায় কখন থেকে কল দিচ্ছি আর ইভান কোথায়?”
-“আম্মাজান তো অনেক্ষণ ধইরা ছোটভাইকে ডাইকা যাইতাছেন। সেই যে আইসা দরজা লাগাইসেন আর খুলতেছেন না। বার বার কইতাছেন যে উনারে নাকি ডিস্টাব না করনের লাইগা।”
-“আচ্ছা মাকে একটু ডেকে দাও।”
-“হু হোল্ড জান ডাইকা দিতাছি।”
ঈশা এই সময়েও কাঁদবে না হাসবে বুঝতেছে না। একে তো রানুর এমন ইংলিশ, আর শুদ্ধ+বেশুদ্ধ বাংলা ভাষা শুনে হাসি আসছে আবার ভাইয়ের কথা শুনে কান্না। রানুকে ও কতবার করে বলেছে এইরকম ভাষায় কথা না বলতে তবুও বলে।
-“হ্যালো কিরে ঈশু তুই কই? দেখ না ইভু সেই কখন থেকে দরজা খুলছে না।”
-“মা তুমি চিন্তা করো নাতো। ওর যখন ইচ্ছে খুলবে। আর হ্যাঁ তুমি খেয়ে নিও। আমি আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসায় আছি। আসতে দেরি হবে।”
-“এখানে আসতে না আসতেই কোন ফেন্ডের বাসায় চলে গেলি?”
-“আছে মা আমার অনেক প্রিয় একটা ফ্রেন্ড অনেক মায়াবী। একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো ওকে। একবার দেখলে না তুমি বলবে প্রতিদিন যেনো নিয়ে যাই ওকে। বর্ণ অনেক সুন্দর আর অনেক বেশি ভালো আম্মু।”
-“তাই নাকি এখনি দেখার ইচ্ছে করছে তো।”
-“হাহাহা দেখবে মা খুব শিঘ্রী। আর আল্লাহর হুকুম হলে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় নিয়ে নিবো ওকে।”
-“নিয়ে নিবি মানে?”
-“না মানে নিয়ে আসবো আরকি।”
-“আচ্ছা সন্ধ্যার আগে চল আসিস।”
-“ওকে মা রাখছি।”
`
বর্ণালী রান্নাঘরে মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
-“মা কি রান্না করেছো?”
-“তুই মেহমান নিয়ে আসবি আগে বলবি না? এখন কি দিয়ে মেয়েটাকে খাওয়াই বল তো। ভালো কিছু রান্না করতাম আগে বললে। বড়লোকের মেয়ে আমাদের এসব খাবে নাকি?”
বর্ণালীর মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। আগে বললেও ভালো কিছু আসতো না সেটা সে ভালো করেই জানে। মা সে টাকাই কোথায় পাবে যে ভালো কিছু রান্না করবে। কিন্তু এখন করবেটা কি?
-“কি রান্না করেছো?”
-“এইতো ডাল, আলু ভাজি, আর ভর্তা।”
-“ফ্রিজে কিছু নেই?”
কথাটা বলেই মায়ের জবাবের অপেক্ষা না করে ফ্রিজ খুলতে গেলো বর্ণালী। ভাগ্যটা ভালোই সেদিন পুকুরে মাছ মারানো হয়েছিলো ৪টুকরো মাছ মা হিসেব করে রেখেছিলেন। বর্ণালী তা বের করে এনে ফ্রাই করে নিলো। মা এই ফাঁকে গাছ থেকে শিম এনে শুটকি দিয়ে রান্না বসিয়ে দিলেন। বর্ণালী এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত আর একটা প্লেটে কিছু চানাচুর নিয়ে গেলো ঈশার জন্য।
-“কি রে তুই তো ঘেমে একাকার হয়ে গেছিস। যা ফ্রেশ হয়ে নে।”
-“হ্যাঁ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুই শরবত খা।”
বর্ণালী একটা কালো রঙের থ্রী পিচ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ঈশা বিছানায় বসে একটু একটু চানাচুর খাচ্ছে আর রুমটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে।
-“কিরে স্বরবর্ণ না ব্যঞ্জনবর্ণ পানির ট্যাপ বন্ধ করবি? আমার ওয়াশরুমে পানি আসছে না।”
কথাটা বলেই সজিব বর্ণের রুমে ঢুকে। থ্রী কোয়াটার টাউজার পড়ে খালি গায়ে কাঁধের এক পাশে টাওয়েল ঝুলিয়ে রেখেছে। পায়ে একজোরা স্যান্ডেল। চুলগুলো কেমন এলোমেলো। ঈশা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। ওর বুকটা কেমন কেঁপে উঠে। বুকের ধুকপুক আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ও। ফর্সা বুকের মাঝে ছোট ছোট লোমগুলো কেমন অন্যরকম একটা সুন্দর লাগছে। এর আগে ও কখনো কোন ছেলেকে খালি গায়ে দেখে নি। ইভানকে যতদিনই দেখতো খালি গায় একশটা কথা শুনিয়ে নিজেই ওকে টি শার্ট পড়িয়ে দিতো। কিন্তু আজ সজিবকে খালি গায় দেখে ওর এমন কেন হচ্ছে। হাতের চানাচুরগুলো শক্ত করে চেপে ধরে আছে। সেগুলো গুড়ো হয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সজিবের থেকে চোখ সরাতে পারছেনা। নির্লজ্জের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
সজিব অনেক অবাক হয় ঈশাকে ওর বাড়িতে দেখে। এই মেয়ে এখানে কিভাবে? কিন্তু পরক্ষনেই কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। এভাবে খালি গায় একটা বাইরের মেয়ের সামনে পড়তে হলো ওকে? কিন্তু সিচুয়েশানটা নরমাল রাখার চেষ্টায় ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আপনি এখানে?”
এতোক্ষনে ওর ঘোর কাটে। চট করে সজিবের বুক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
ওর হার্টবিট খুব দ্রুত বিট করছে। নিচের দিকে তাকিয়ে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দেয়। কিছু চানাচুরের গুড়ো ওর গালে আর কানের কাছে লেগে যায়। সজিব ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কাছে এই মুহুর্তে ঈশাকে একটা ছোট বাচ্চার মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে ওগুলো মুছে দিতে কিন্তু সে তা কখনোই করবে না। সবজি না চাইতেও একটু হেসে দিলো। ঈশা এই হাসির মানে জানেনা। ও আবারো সজিবের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাসিটাও অনেক সুন্দর ছেলেটার। এর মাঝেই বর্ণালী ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। বর্ণালীকে দেখে সজিব ঈশার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
-“কিরে স্বরবর্ণ বিয়ের গোসল করছিলি নাকি?”
-“ভাইয়া প্লিজ আবার এভাবে ডাকবেনা। আর আমি গোসল করতে আজকে না প্রতিদিনই সময় লাগে।”
-“হ্যাঁ প্রতিদিনই তো বিয়ের গোসল করিস তাও তোর বিয়ে হচ্ছেনা।”
-“ভাইয়া…..”
সজিব একপলক ঈশার দিকে তাকিয়ে রুম ছেড়ে চলে যায়। বর্ণালী ঈশার দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো ও দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
-“না মানে কই কোথাও না তো।”
-“চানাচুর তুই খেয়েছিস নাকি তোর গাল, চুল, আর কান খেয়েছে?”
-“মানে?”
বর্ণালী একটুখানি এগিয়ে রুমুর গাল, কান আর চুলে লেগে থাকা চানাচুরের গুড়োগুলো মুছে দেয়। তারপর মৃদু হেসে চুল থেকে টাওয়েল খুলে বেলকনিতে গিয়ে মেলে দেয়। আয়নার সামনে এসে চুলগুলো ঠিক করে হাতে, গলায়, পায়ে অল্প লোশন মেখে ঈশার দিকে ফিরে তাকায়। ঈশা ওকে হা হয়ে দেখছে। এই মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর তাই তো তার ভাই ওকে এভাবে ভালোবাসে। এই মুহুর্তে ইভান বর্ণালীকে দেখলে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যেতো। হয়তো কোন কবিতার কয়েকটা লাইন ও লিখে ফেলতো বর্ণালীকে উদ্দেশ্য করে।
💛
#______চলবে……….
গত পর্ব – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=120552972948395&id=103632171307142
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here