ফাগুন প্রেম পর্বঃ ১২

0
509

#__ফাগুন_প্রেম__
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ১২
.
ইভানের চোখ কপালে উঠে যায়৷
এখনই কেন ওর ড্রেস চেঞ্জ করতে হচ্ছে?
বর্ণালী চুলগুলো খোঁপা বেঁধে বুকের ওড়না টা বিছানায় রেখে ড্রেস খুলতে যাচ্ছে। ড্রেসের দু’পাশে ধরে উপরে তুলতেই ইভান দরজায় নক করে। আওয়াজ করে ডাকতেও পারছেনা। ড্রেস খানিকটা উপরে তুলে নিয়েছে বর্ণালী। কোমড়ের এক পাশ দেখা যাচ্ছে। ঠিক যেনো দুধে আলতা গায়ের রঙ। চোখ ধাধানো ধবধবে ফর্সা কোমড়। মুখ আর হাতের চেয়ে ওর কোমড় বেশি ফর্সা চাঁদের থেকেও সুন্দর। ইভান যেনো কিছুক্ষনের জন্য অন্য কোন ভুবনে হারিয়ে গিয়েছিলো। খালি গলায় ঢোক গিলে কিছুসময় চোখ বন্ধ করে রাখে। আবার খুলে অন্য দিকে তাকায়। বর্ণালী দরজায় নক শুনতে পেরে কিছুক্ষণ থমকে গিয়েছিলো। পরে ভাবলো হয়তো ওর মনের ভুল। তাই আবারো ড্রেস খুলতে লাগলো। ইভান এবার একটু জোরেই নক করলো দরজায়। বর্ণালী ড্রেস ঠিক করে ওড়না গায় দিয়ে সামনের রুমের দরজা খুলে দেখলো কে নক করলো। কিন্তু না কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছেনা।
-“মা আমার রুমের দরজায় কি তুমি ধাক্কাচ্ছিলে?”
-“কই নাতো।”
-“ভাইয়া বা বাবা?”
-“তোর ভাই তো টিউশনি থেকে এখনো আসে নি। আর তোর বাবা তো ঘুমাচ্ছেন।”
রান্নাঘর থেকেই শারমিন বেগম চেচিয়ে কথাগুলো বললেন। বর্ণালী কিছু না বুঝতে পেরে আসলেই ওর মনের ভুল মনে করে দরজা ভেতর থেকে লক করে নিলো। ইভান নিজের মাথা নিজেই চাপড়াচ্ছে। এই মেয়েটা এতো বোকা কেন? একবার তো এদিকেও দেখতে পারে কিন্তু তা না। ইভান ফোন বের করে বর্ণালীর মোবাইলে কল দেয়। বর্ণালী মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ইভানের নাম্বার। মোবাইল হাতে রেখে চুপ করে বিছানায় বসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে বর্ণালী। এই কল কি ও ধরবে নাকি ধরবে না একরকম দ্বিধায় পড়ে গেলো। মোবাইলে রিং বেজেই যাচ্ছে। দিনের কথা মনে হতেই বর্ণালীর চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। মোবাইল হাতে নিয়ে ঝাকাচ্ছে আর নিশ্চুপ চোখের জল ফেলছে। ইভান এটা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা।
বর্ণালী আমার কল দেখে কাঁদছে কেন?
কি ভাবছে ও? ওর মনের মাঝে আমাকে নিয়ে কি চলছে? কেন করছে এমন ও? নিশ্চই কোন কারণ আছে। এটা আমাকে জানতেই হবে। আমি বর্ণালীর চোখের জলের কারণ হতে চাই না। আমি ওর ঠোঁটের কোণের হাসির কারণ হতে চাই।
ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে যায়। বর্ণালী চোখ মুছে ফোন ভাইব্রেশন মুড অন করে বালিশের নিচে রেখে দেয়। ইভান এখনো তাকিয়ে আছে বর্ণালীর দিকে। বর্ণালীকে ড্রেস খুলতে দেখেই ইভান পিছনে মোড়ে যায়। খুব লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো। ইচ্ছে করছে বর্ণালীকে এভাবে চেয়ে দেখতে কিন্তু বিবেক বাঁধা দিচ্ছে। এভাবে ওকে দেখলে যে পাপ হবে।
আমি ওকে তখন কি জবাব দিবো!
আমি যে তোমাকে একেবারে হালাল উপায়ে দেখতে চাই, হালাল ভাবে তোমাকে কাছ থেকে ভালোবাসতে চাই খুব বেশি ভালোবাসতে চাই।
এখনো যে তোর দেখার অধিকার হয় নি। না ইভান তুই বর্ণালীর দিকে তাকাবিনা। চোখ কুচকে বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করছে ইভান।
`
ঈশা ফোনটা হাতে নিয়ে বসে বসে ভাবছে সজিবকে কল দিবে কিনা। সজিব যখন ওর কাছে মোবাইল রেখে নামাজ পড়তে গিয়েছিলো তখনি ও নাম্বারটা নিয়ে নেয়। ভাবতে ভাবতেই কল দিয়ে বসে সজিবের নাম্বারে। কয়েকবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো।
-“আসসালামুয়ালাইকুম। কে বলছেন?”
ঈশা নিশ্চুপভাবে ওর কথা শুনছে। মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছেনা।
-“হ্যালো কে বলছেন? কথা বলেন।”
ঈশা তখনো নিশ্চুপ।
-“কল দিয়ে কথা না বললে কেন দেন? রাখেন ফোন।”
বলেই কলটা কেটে দিতে লাগলো তখনি ঈশা বলে উঠে,
-“এ….এই যে কল কাটবেন না।”
-“আপনি?”
-“চিনলেন কিভাবে? আর আবার কেন আপনি বলছেন?”
-“ওহ সরি তুমি। এইতো এমনিতেই চিনে নিলাম।”
-“কি করছেন?”
-“বাসায় যাচ্ছি বাজার নিয়ে।”
-“এতো রাতে বাজার?”
-“হ্যাঁ আজকে টিউশনির বেতন পেয়েছি।আর শেষ রাতের বাজারে দাম কম হয় জিনিসের তাই শেষ এতো রাতে বাজার। অবশ্য বেশি রাতও হয়নি মাত্র ১২টা বাজছে।”
ঈশার মনটা খচ করে উঠলো। সজিবের কথায় অনেক কষ্ট। এমন অনুভূতি হচ্ছে যেনো ওর মনের মাঝে কষ্টের সাগর জমা হয়ে আছে। সজিবের কথায় ওর ঘোর কাটে।
-“তা এতো রাত্রে তুমি কেন কল দিলে?”
-“কেন কল দিতে পারিনা?”
-“না তা নয়। তবুও মেয়ে মানুষের এতো রাতে কোন ছেলেকে কল দেয়া ঠিক না।”
-“তাই নাকি? কিন্তু আমি তো দিবো আর প্রতিদিন দিবো।”
-“কেন দিবে?”
-“ওই যে বললাম না ভালোবাসি।”
-“আমাদের মত মানুষের সাথে এসব যায় না ঈশা।”
ঈশা বুঝতে পারছে সজিব কি বুঝাতে চাইছে। ঈশারই কিছু একটা করতে হবে।
-“আচ্ছা রাখছি। বাসায় চলে এসেছি।”
-“অপেক্ষায় থাকবো। আল্লাহ হাফেজ।”
-“আল্লাহ হাফেজ।”
দু’দিকেই দুজনে গভীর নিশ্বাস নিলো। ঈশা বুঝে গেছে ওর কি করতে হবে। কাল সকালেই বাবার সাথে কথা বলতে হবে ওর।
সজিবের ফোনে কখন থেকেই সেই আননউন নাম্বার থেকে কল আসছে। ঈশার সাথে কথা বলার সময়ও বারবার কল আসছিলো। প্রতিদিনই ওর ফোনে এই এক নাম্বার থেকে ঠিক রাত ১২টার পর একটা আর সকাল ৬টার দিকে একটা কল আসে। কিন্তু রিসিভ করলে কথা বলেনা। ফোন কাটার পর শুধু একটা মেসেজ আসে “Good Night” আর “Good Morning”. আজ আর রিসিভই করবে না। ফোন সাইলেন্ট করে বাড়িতে ঢুকে গেলো।
`
প্রায় মিনিট দশেক পর ইভান ধীরে ধীরে পেছনে মোড়ে রুমের দিকে তাকালো। হ্যাঁ ওইতো বর্ণালীকে দেখছে। সাদা টি-শার্ট আর টাউজারে ওকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। চোখে চশমা পড়েছে। এই চশমা মনে হয় ও শুধুমাত্র পড়ার সময়ই চোখে লাগায়। অনেকটা স্কুলের কিশোরী মেয়ে দেখা যাচ্ছে। যে কিনা সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে। অথচ এই মেয়েই কিনা বারবার আমাকে তা ছোট বলে আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করছে!
আসছেন আমার বড় আপা! ওপ্স সরি সরি বাসন্তী আমার বাসন্তী। কোন বড় ছোট মানিনা আর মানবো না। ওর লম্বা চুলগুলো পিঠের দিকে প্রায় টি-শার্টটা পেড়িয়ে গেছে। বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় কি একটা বই নিয়ে পড়ছে। আর এক পাশে মোবাইল রেখেছে। একবার বইয়ের দিকে তাকাচ্ছে তো দু’বার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে। ইভান ভাবলো একটু মজা নেয়া যাক। ওকে আজ এমন ভয় দেখাবো না জীবনেও আমার নাম ভুলবে না। ভাবতেই একটা মেসেজ লিখে বর্ণালীকে সেন্ড করলো।
-“এভাবে মোবাইলে তাকিয়ে না থেকে পড়ায় মন দাও। আর আগে কল দেখেও রিসিভ করলে না। এখন আবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছো আমি আবার কল দিচ্ছি কিনা তা দেখার জন্য না?”
বর্ণালী মেসেজটা পড়ে আধশোয়া হতে বসে যায়। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে। সাথে সাথে আরেকটা মেসেজ দেয়।
-“এভাবে ভয় পাচ্ছ কেন? ধীরে বসলেও পারতে। জানতাম তুমি আমার মেসেজের অপেক্ষাই করছিলে।”
বর্ণালী এবার বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ও শিওর ইভান এখানেই এসেছে। আর ওকেই দেখছে। ভয়ে রুমের ভেতর পায়চারি করছে ও। ইভান এবার দরজায় নক করলো। বর্ণালী এবার আর কনফিউজড হলো না৷ সোজা বেলকনির দরজার দিকে তাকালো। হুম কিছু একটার ছায়া ও দেখতে পাচ্ছে। আবারো মোবাইলটা ভু ভু করে কেঁপে উঠলো। মেসেজ এসেছে আরেকটা।
-“দরজা খুলো তাড়াতাড়ি। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো?”
বর্ণালী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সামনে তাকিয়ে দেখে ইভান নেই। আশেপাশে তাকিয়েও নেই। হঠাৎ দরজার পেছন থেকে কেউ এসে ভুউ বলে ভয় পাইয়ে দেয়। বর্ণালী ভয়ে কেঁপে ওঠে। চোখ বন্ধ করে মুখ হাত দিয়ে ঢেকে নেয়। পড়েই যাচ্ছিলো ইভান ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ফেলে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো ইভান ওকে ধরে মিটিমিটি হাসছে। হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো ও। ইভানকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে গেলো। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইভান। এ যেনো হাজার বছরের নেশা। হাজার বছর দেখলেও দেখার সাধ মিটবে না। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে তো তাকিয়েই আছে। এমন তাকানো দেখে ওর কেমন যেনো লাগছে।
-“আচ্ছা তোমাকে কি একমাত্র আমিই ওড়না ছাড়া দেখেছি না অন্য কেউ দেখেছে?”
এবার বর্ণালী চোখ তুলে তাকায় ইভানের দিকে৷ চোখ ছোট ছোট করে কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে এক রকম দৌড়ে রুমে গিয়ে ড্রেসের সাথের ওড়নাটা গায় জড়িয়ে নেয়। যা গরম পড়েছে ভেবেছিলাম এসব পড়লে একটু গরম কম লাগবে তাই তো পড়া। আর এসব পড়েই কিনা আমাকে ইভানের সামনে পড়তে হলো?
ইভান রুমে ঢুকে বেলকনির দরজা বন্ধ করে নিলো। বর্ণালী ভয় পেয়ে গেছে। এই ছেলে কি করতে চাচ্ছে? ইভান ওর দিকে আগাচ্ছে আর ও ভয়ে থরথর কাঁপছে।
-“দে…..দেখো আ….আর এক পা এগোলে আমি চিৎকার করবো বললাম।”
-“আচ্ছা চিৎকার করবে নাকি? বাহ! ভালোই তো করো প্লিজ। তাহলে আমারই ভালো হবে। এভাবে তোমাকে আমার সাথে দেখে সবাই মিলে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।”
এসব বলে বলে ইভান বর্ণালীর দিকে আগাচ্ছে। মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চেপে যায় ইভানের। ডান হাতে শার্টের একটা একটা বোতাম খুলছে আর বর্ণালীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্ণালীর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
-“প্লিজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি এমন আমি কখনোই ভাবিনি।”
-“দেখো বিনা ড্রেসে তো তোমাকে দেখেই নিয়েছি এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না৷ তার চেয়ে বরং বাসর রাতটা সেরেই ফেলি।”
-“বি….বিনা ড্রেসে দেখে ফেলেছো মানে?”
-“ওই যে একটু আগে যখন তুমি ড্রেস চেঞ্জ করছিলে তখন দেখলাম তো।”
বর্ণালী কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। চোখে জল টইটুম্বুর করছে। কিন্তু ইভান ভেতরে ভেতরে হেসেই মরে যাচ্ছে।
-“কি ব….বলছো এসব?”
-“হ্যাঁ ঠিকই তো বলছি। এখন কি করবে বলো? তোমার সব কিছুই তো দেখে ফেললাম।”
উপর থেকে নিচে চোখ বুলিয়ে কথাটা বললো ইভান। এবার বর্ণালী কেঁদেই দিলো।
-“দেখো কেঁদে লাভ নেই। এখন তোমার সবকিছু যখন দেখেই ফেলেছি তাহলে তো সব আমারই তাই না? চলো বিয়ে করে নেই। আচ্ছা আগে বাসররাতটা করে নেই তারপর বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।”
ইভান বর্ণালীর খুব কাছে চলে এসেছে। বর্ণালী এক পাশে যেতে চাইলেই ইভান ওর হাত ধরে এনে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় ফেলে দেয়। বর্ণালীর চোখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারছে ইভান। এবার আর পারলো না একটু জোরেই কেঁদেই দিলো মেয়েটা। চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট উলটে কেঁদে দিলো। দু’হাতে মুখ ঢেকে কান্না করে যাচ্ছে ইভান ওর পাশে শুয়ে এই মায়াভরা মুখটা দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু মুখ দু’হাতে ঢেকে রাখায় দেখতে পারছেনা৷ ইভান আলতো করে বর্ণালীর দু’হাত ধরে মুখ থেকে সরিয়ে নেয়। চোখ বন্ধ করেই বারবার বলছে,
-“প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। ছেড়ে দাও আমায়। তুমি তো চাইলেই অনেক মেয়ে পাবে। আমাকে এভাবে শেষ করে দিও না।”
কথাটা শুনেই ইভান ফিক করে হেসে দিলো। বর্ণালী এবার চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো ইভান ওর পাশে শুয়ে আছে। উঠে বসলো ও। ইভানের হাসির আওয়াজ বড় হতেই মুখ চেপে ধরলো ইভানের৷ তখনি মায়ের নক পড়লো দরজায়।
-“বর্ণালী এই বর্ণালী কার সাথে কথা বলিস? কে হাসে তোর রুমে?”
ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা। ইভান চোখ মেরে ব্রু নাচিয়ে ইশারা করলো কিছু একটা ওকে। সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করলো না বর্ণালী। মাকে এখন কি জবাব দেবে সেই চিন্তাই করছে ও। তখনি আবারো শারমিন বেগমের আওয়াজ ভেসে আসে দরজার ওইপাশ থেকে,
-“কিরে কিছু বলছিস না কেন? কি হয়েছে?”
-“আ….মা আমি মোবাইলে ছবি দেখছিলাম। তাই হয়তো আওয়াজ পেয়েছো।”
-“ওহ আচ্ছা। দুপুরেও খেলি না রাত্রেও খেলি না। কি হয়েছে রে তোর? অল্প একটু খেয়ে নে না।”
ইভান বর্ণালীর হাতের তালুতে আলতো করে একের পরে এক কামড় দিয়ে যাচ্ছে। সব সহ্য করতে হচ্ছে এখন মায়ের জন্য। কথা বলারও শক্তি পাচ্ছেনা এই মুহুর্তে। ইভানের এমন স্পর্শগুলো কেমন যেনো লাগছে ওর। কাঁপা গলায় মাকে জবাব দিলো,
-“ম….মা প্লিজ আ….আমি খাবো না যাও তুমি খেয়ে ঘু……ঘুমিয়ে পড়ো।”
-“দরজাটা খুলনা এভাবে কথা বলছিস কেন?”
ইভান আলতো করে বর্ণালীর টি-শার্টের নিচে কোমড়ে হাত রাখতেই বর্ণালীর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। হার্টবিট যেনো দ্রুত দৌড়াচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মায়ের আবারো আওয়াজ ভেসে আসতেই নিজেকে কিছুটা সামলে বললো,
-“ম….মা আমি শু…..শুয়ে পড়েছি এ…..এখন ইচ্ছেহ করছেনা উঠে দরজা খুলতে।”
-“তোদের কিছুই আমি বুঝিনা বাবা। দেখ সব রাখা আছে ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিস। আর ঘুমিয়ে পড় তাড়াতাড়ি আবার উঠতে হবে তোকে সকালে। এমনিতেই ৩টা প্রাইভেট পড়াস কত করে বললাম এই কোচিংটা নিস না তাও তো শুনলিনা।”
বর্ণালীর এখন খারাপ লাগছে। মা কেন এসব কথা বলছে এখন৷ এদিকে ইভানের মুখ সেই কখন থেকে চেপে ধরে বসে আছে ও। তার উপর ইভানের এমন এমন স্পর্শে ও ঠিক থাকতে পারছেনা। এমন কেন হচ্ছে ওর সাথে। কোনদিন তো আর কারো স্পর্শে ওর এমন অবস্থা হয়নি। ইভান এবার ওর কোমড়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ধীরে ধীরে স্লাইড করতে লাগলো। বর্ণালীর চোখ দুটো কুচকে বন্ধ করে নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে মাকে উত্তর দিলো,
-“মাহ যা…..যাও ঘুমিয়ে পড়ো। তু….তুত….তুমি টেনশন নিও না তো। আ….আমার ভালোর জন্যই আমি কো…..কোচিংটায় জ….জয়েন করেছি।”
-“আচ্ছা ঘুমা গেলাম আমি।”
মা যেতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ইভানের মুখ থেকে হাত সরিয়ে উঠতে চাইলেই ইভান ওর হাত ধরে শুইয়ে দিলো ওর উপর। বর্ণালীর সব চুল এসে পড়লো ওর মুখে। ইভান আলতো করে ওর চুলগুলো হাতের মাঝে নিয়ে নাকের কাছে নিলো। গন্ধ নিতে লাগলো চুল থেকে। বর্ণালী চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিলো।
-“ক….কি করছো কি?”
-“ভালোবাসছি।”
কথাটা শুনতেই বর্ণালীর হার্টবিট আরো বেশি বেড়ে গেলো। ওর বুকের ধুকপুকানিটা ইভানও শুনতে পাচ্ছে। ইভান তার হাত দিয়ে বর্ণালীর গালে আলতো করে ধরে বললো,
-“তোমার হার্টবিটগুলো কার কথা বলছে জানো? শুধুই আমার কথা। শুধুই বলছে সে আমাকে ভালোবাসে। তুমি কি তোমার হৃদয়ের কথাগুলো বুঝতে পারছো না?”
এসব কথা বর্ণালীকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন একটা তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। যা একমাত্র বর্ণালীই অনুভব করতে পারছে। ইভান ওর একটা আঙুল বর্ণালীর থুতনিতে স্লাইড করতেই বর্ণালী খেয়াল করলো ওর হাতে বেন্ডেজ করেনি এখনো। রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে।
-“ইহ…..ইভান পি…..প্লিজ ছাড়ো।”
ইভানের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে ওর গালে স্লাইড করছে। ওর এমন স্পর্শে শিউরে ওঠে বর্ণালী। উঠার জন্য ছটফট করতে লাগে। ইভান ঠোঁট বাকা করে হেসে ছেড়ে দেয়। বর্ণালী উঠে বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আর চুল ঠিক করছে। বুক খুব দ্রুত উঠানামা করছে ওর। ইভান উঠে বসতেই ও গিয়ে একগ্লাস পানি খেয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে তার পাশে বসলো।
-“হা….হাতটা দেখি।”
-“কেন কষ্ট দিয়ে এখন আবার তার ঔষধ লাগাতে চাও?”
-“প্লিজ ইভান।”
ইভান আর কোন কথা বললো না হাতটা বাড়িয়ে দিলো। বর্ণালী খুব ধীরে ধীরে হাত পরিষ্কার করে মেডিসিন লাগিয়ে বেন্ডেজ করে দিলো।
ওর মনে যে আমার জন্য কিছু একটা আছে তা ভালো করেই আঁচ করতে পারছি। কিন্তু মুখে কিভাবে কথাটা বের করবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা।
ইভানের চেহারাটা কেমন শুকিয়ে গেছে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খায় নি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো বর্ণালীর আজ ওর জন্য একটা মানুষ কতটা কষ্ট পাচ্ছে। যেখানে আমিই সারাদিন খেতে পারিনি সেখানে ও কিভাবে খাবে? ও তো আমার চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছে।
-“তুমি এখানে চুপচাপ বসবে। আমি আসছি।”
-“কোথায় যাচ্ছ?”
-“প্লিজ একটু বসো আসছি আমি। বাইরে বের হবে না প্লিজ।”
-“আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো।”
বর্ণালীকে রান্নাঘরে দেখে ওর মা কিছুটা চমকে যান।
-“কিরে এখানে কি করিস? ঘুমাস নি?”
-“আ….আসলে মা ক্ষুধা লেগেছে।”
-“আচ্ছা বস আমি খাবার দিচ্ছি।”
-“না মা আমি নিয়ে নিচ্ছি। তুমি কি করছিলে কর।”
বর্ণালী একটা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
-“খাবার নিয়ে কই যাস?”
-“ইয়ে….মা রুমে খেয়ে নিবো।”
-“আচ্ছা যা।”
বর্ণালী রুমে এসেই খাবার প্লেটটা সাইড টেবিলের উপর রেখে দরজা লক করে দিলো।
-“এটা কি?”
-“তোমার জন্য খাবার এনেছি প্লিজ খেয়ে নাও।”
ইভান অনেকটা অবাক হয়৷ এই পাগলী কিভাবে বুঝলো যে ও খায় নি? একটু জ্বালানো যাক ওকে।
-“আমি খাবো না।”
-“আসলে তোমাদের মতো এতো ভালো বড়লোকি খাবার না। আমরা যা খাই এগুলোই খেয়ে দেখতে পারো খারাপ লাগবেনা।”
ইভান কিছুটা রেগে গেলো এমন কথা শুনে।
বিছানা ছেড়ে বর্ণালীর একদম কাছে এসে,
-“একদম চুপ। কে বলেছে আমি বড়লোক? আর কে বলেছে আমি সবসময় ভালো খাবার খাই হুম?”
-“না মানে।”
ইভান আর কিছু না বলে খাবার প্লেট হাতে নিলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু ব্যাঘাত ঘটালো সেখানেই। ওর যে হাত কাটা কিভাবে খাবে! আমার দিকে কেমন অসহায়ভাবে তাকালো।
-“থাক আমার ক্ষিদে নেই।”
খেতে পারবে না বলে মিথ্যে বলছে ইভান। সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী। ওর হাত তো আমার জন্যই কেটেছে। আমি এগিয়ে গিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিলাম। খাবার ওর মুখের সামনে ধরে হা করতে বললাম। ও আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে যেনো আমি এই কাজ করবো তা সে স্বপ্নেও ভাবে নি।
বাহ! এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বউয়ের হাতেই অনেক স্বামী খেতে পায় না আর যে মেয়েটা এখনো আমার প্রেমিকা হয় নি আমার কিনা তার হাতেই খাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে গেলো।
-“কি হলো হা করো।”
ইভান এবার চুপচাপ বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে যাচ্ছে আর বর্ণালীকে। বর্ণালীও ইভানকে দেখছে কিন্তু যখনি ওর দিকে তাকাচ্ছে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে।
এই ছেলেটা এভাবে দেখে কেন আমায়?
বিরতিহীনভাবে তাকিয়েই আছে। কেমন বাচ্চা ছেলেদের মতো করে খাচ্ছে ও। ইয়া বড় হা করে আর অল্প একটু ভাত যায় মুখে। হুট করেই ইভান আমার হাত ধরে ফেললো।
-“কি হলো?”
-“এটুকু তুমি খাবে।”
-“নাহ আমি খেয়েছি। তুমি খাও।”
-“হুম তা তো একটু আগেই শুনলাম শাশুড়ী মায়ের মুখে।”
বর্ণালী অবাক চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“শাশুড়ী মা মানে?”
-“আরে বাবা তুমি আমার বউ হলে তো তোমার মা আমার শাশুড়ী তাই না?”
এই কথাটা ইভান বর্ণালীর একদম কাছে মুখ এনে আস্তে করে বললো। বউ কথাটা শুনে বর্ণালীর পুরো ভেতরটা নড়ে উঠলো। আসলেই কি ইভানের সাথে ওর বিয়ে হবে নাকি? ইভান যেভাবে বলছে তাতে তো মনে হচ্ছে ও একদম শিওর।
-“বর্ণালী শেষ করো খেয়ে।”
ও আর কথা না বাড়িয়ে বাকি খাবারগুলো খেতে লেগে গেলো। ইভান পাশে বসেই ওর খাওয়া দেখছে৷ খাবারগুলোও কত সুন্দর করে খায় এই মেয়েটা। পাঁচ আঙুলের মাথায় অল্প অল্প করে ভাত ধরে দুই ঠোঁটের ভেতর নিয়ে তারপর মুখে ঢুকায়। ঠোঁট দুটো কি সুন্দর একটা আরেকটার সাথে চেপে ধরে তখন। এই মেয়েটা কখন জানি আমায় পাগল করে ছাড়ে। অবশ্য পাগল হওয়ার কি আর বাকি আছে!
#______চলবে ……………
.
গত পর্ব – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=121536659516693&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here