ফাগুন প্রেম পর্বঃ ২২

0
479

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ২২
💛
দুজনে ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখলো সিঁড়িতে ঈশা একা একা বসে আছে আর মোবাইল টিপছে। বর্ণালীর ফোনটা বেজে উঠতেই দেখলো ইভানের ফোন। প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর আগে ও শেষ করেই ইভান ওকে কল দিবে এটা যেনো ওর নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ণালীরও যেনো না চাইতেও ইভানের অভ্যাসটা খুব করেই হয়ে যাচ্ছে।
-“রুমু তুই ঈশার কাছে গিয়ে বস আমি কলটা রিসিভ করে আসছি।”
-“ইভানের কল?”
-“হুম।”
-“আচ্ছা তুই কথা বলে নে আমারও তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
-“আচ্ছা আসছি।”
রুমু ঈশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশে গিয়েই সিঁড়িতে বসে পড়লো রুমু। রুমু ঈশাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“মোবাইলের ভেতর ঢুকে যা না। দেখ মোবাইল বেচারা তোকে ছাড়তেই চায় না।”
-“আরে রুমু কখন এলি?”
-“যখন তুই মোবাইলের সাথে প্রেম করছিলি।”
-“বাহ মনে হচ্ছে আমি একাই মোবাইলের সাথে প্রেম করি। নিজেরটা বল না।”
-“আমি তো প্রেম করি না বেবি।”
-“আচ্ছা তাহলে?”
-“আমি ফুলসজ্জা করি।”
-“এতো দূর!”
-“কত দূর?”
দুজনেই হো হো করে হেসে দিলো।
-“কিরে রোহানী আসে নি?”
-“নারে ওকে নাকি আজ কনে দেখতে আসবে।”
-“আরে ব্যাস!!! কি বকিস এসব?”
-“হ্যাঁ রে।”
-“ধ্যাৎ!!! হে আল্লাহ আমার কপালে কি তুমি এসব রাখো নাই? নাকি আমার জামাই এক্সিডেন্টে মইরা গেছে?”
আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত তুলে রুমু কথাগুলো বলছে আর ঈশা পাশ থেকে হেসেই কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
-“পরীক্ষা কেমন হলো?”
-“আরে সেইরকম ভালো।”
-“হুম তা তো রেজাল্ট আসার পরেই বুঝতে পারবো। যদি রেজাল্ট খারাপ আসে না তাহলে বুঝে নিও তোমার কপালে খারাপ আছে।”
-“এই সেদিন না বললাম একদম বড় আপুদের মতো কথা বলবা না? একদম তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো বলে দিচ্ছি।”
-“আচ্ছা? তাই নাকি ছোট ভাই? এইতো ছোট ভাই বললাম দেখি না কি করতে পারো।”
-“আজ শুধু আমি ওইখানে নেই তাই এসব বলার সাহস পাচ্ছো যদি সামনে থাকতাম না তাহলে বুঝিয়ে দিতাম বউ বানিয়ে।”
বর্ণালী ইভানকে জব্দ করতে পেরে হো হো করে হেসে দেয়। দূর থেকেই ঈশা আর রুমু এটা শুনে তারাও হাসছে।
-“ইভুর সাথে কথা বলছে নাকি?”
-“হ্যাঁ আর কে হবে। মেয়েটা তোর ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছে তবুও মানতে নারাজ।”
-“আরে আমার ভাই বলে কথা দেখিস মানিয়ে নেবে। এটা আমরা ভাই-বোন খুব ভালো করেই জানি।”
রুমু কোন কিছু না বলেই শুধু একবার ঈশার দিকে তাকায়। আসলেই কি তাই?
পারবে তো ইভান বর্ণালীকে মানিয়ে নিতে? পারলেই হলো। জানটার দুঃখটা কিছু হলেও গুছবে।
-“ইভান না এখানে এডমিশন নিলো তো পরীক্ষা রাজশাহী কেন দিচ্ছে?”
-“আরে ওর রেজিষ্ট্রেশন তো ওইখানেই হয়েছে। এখানে তো জাস্ট আপাতত ক্লাস করার জন্য বাবা এডমিশন করিয়ে দিয়েছিলো।”
-“ওহ তাই বল।”
ইভান কথা বলে বলেই বাসায় এসে ঢুকে। কলেজ থেকে বাসা খুব বেশি দূর নয়।
-“তুমি কোথায় এখন?”
-“এইতো ভার্সিটি আসলাম।”
-“সাথে কে?”
-“রুমু আর ঈশা।”
-“ওহ ওরা কি কাছেই?”
-“না দূরে বসে আছে। কেন?”
-“নাহ এমনিতেই। কি করছো এখন?”
-“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার সাথে কথা বলছি। তুমি?”
-“চেঞ্জ করছি।”
কথাটা শুনা মাত্রই বর্ণালীর হাত পা কাঁপতে শুরু করে। এসব কথাও বলতে হয় নাকি!
-“আচ্ছা ঠিকাছে পরে কথা বলি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেস্ট নাও। আর এভাবে বারবার কল না দিয়ে একটু পড়তে বসো। আর কয়টা পরীক্ষা রয়েছে?”
-“হুম আমাকে সহ্য করতে পারো না তাই না? ঠিকাছে এতো বেশি ডিস্টার্ব করবো না। আর ৪টা এক্সাম বাকি আছে। ১৫ দিন পরেই ব্যাক করছি ঢাকা। ভালো থেকো। বাই।”
-“ইইইভ….”
ইভান কোন কিছু শোনার আগেই লাইনটা কেটে দেয়। এই ছেলেটা আসলেই একটা বাচ্চা। কিছু বললেই এভাবে রাগ দেখাবে আবার পরক্ষণেই সবকিছু ভুলে কল দিবে। বর্ণালী ঈশাদের দিকে এগিয়ে যায়।
-“কি গো বাসন্তী কথা বলা শেষ হলো?”
-“ঈশা তুইও না।”
-“আমিও না কি?”
-“পাগল।”
-“ভুল বললি ওইটা পাগলী হবে।”
সবাই হো হো করে হেসে দিলো। বর্ণালী ব্যাগে রাখা আরেকটা পায়েল বের করে ঈশার দিকে এগিয়ে দিলো।
-“ওয়াও আমার জন্য?”
-“হ্যাঁ রুমুর জন্য একটা নিলাম ভাবলাম তোর জন্যও একটা নেয়া উচিৎ তাই তোর জন্যও একটা নিলাম।”
-“থ্যাংকস ইয়ার। উম্মম্মমাহ।”
রুমু মৃদু হাসি দিলো। ভালো লাগছে না ওর এসব। বান্ধবীটাকে কি হারিয়ে ফেলছে নাকি? এই ভয়টা ওর উপর প্রচন্ডভাবে চেপে বসেছে। সে নিজের বান্ধবীকে কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না। তখনি বর্ণালী বলে উঠে,
-“চল না আজকে আমাদের বাসায়।”
-“কেন তোর বাসায় কি আজকে?”
-“আরে এমনিতেই অনেক দিন হলো তোরা কেউ যাস নে আর ঈশা তুই তো মাকে বলেছিলি যখন ইচ্ছে যাবি তোর এই ইচ্ছেটাকি আর হয় না?”
-“যেতে তো চাই। একেবারেই যেতে চাই।”
-“মানে?”
-“মানে ঘোরার ডিম। আচ্ছা রুমু দেখ না ওই ছেলেটা কি কিউট না?”
-“লাগবে নাকি নাম্বার?”
-“আমার এর চেয়ে কিউট ছেলে আছে। তোর লাগলে বল এনে দিই আমি।”
বর্ণালী কিছুটা অবাক হয় ওদের কথায়।
-“ঈশা তোর লাইফে কেউ আছে বললি না তো?”
-“আরে ধুর মজা করলাম ওইরকম কেউ নেই।”
অতি সহজেই ঈশা কথাটা এড়িয়ে গেলো। এখনো তেমন কিছুই হয় নি তাই ও কিছু বলতে চায় না৷ কিছু একটা হয়ে গেলে বলে দেবে। বান্ধবীদের কাছ থেকে লুকাতেও যে ভালো লাগেনা।
-“আমার প্রয়োজন নেই বাপু এতো কিউট ছেলে।”
-“কিউট তো আমাদের ইভু। হাজারে একজন ছেলে। আমাদের বর্ণালী খুব ভাগ্য করেই এমন ছেলে পেয়েছে।”
বর্ণালী ব্রু কুচকে তাকায় ওদের দিকে।
-“এই দেখ প্রথমত ইভান আমার না। ও জাস্ট আমার ফ্রেন্ড নাথিং এলস। আর অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।”
রুমু বর্ণালীকে নিজের দিকে করে বলে,
-“বলেছিলাম না তোর সাথে কিছু কথা আছে?”
-“হুম তো বল।”
-“দেখ বর্ণালী খুব কপালজোরে ভালোবাসাটা পাওয়া সম্ভব হয়। তোর ভাগ্য তোকে সেই সুযোগ দিচ্ছে। সময় থাকতে নিজের ভাগ্যটাকে হাতের মুঠোয় আগলে রাখ। এমন কিছু ভুল করিস নে যাতে সময় গেলে পরে আফসোস করতে হয়। আর দেরি করিস না বর্ণালী। দেরি হয়ে গেলে অনেক কিছুই বদলে যায়।”
বর্ণালী নিশ্চুপ হয়ে কথাগুলো শুনছে। রুমু কেন এভাবে কথা বলছে! ও তো কখনোই এভাবে কথা বলে নি।
ঈশাও চুপ হয়ে আছে। আজ যেনো রুমুর কথার মাঝে চাপা কষ্টটা বের হয়ে আসছে। ও কি তাহলে কিছু হারিয়েছে? নাহ এমন কিছু তো বললো না কখনো।
-“তুই ঠিক আছিস?”
-“হাহাহাহা আরেহ আমার আবার কি হবে? রুমু সিরিয়াস হলে একটু ওরকম শোনায়। তাই তো সিরিয়াস হই না। দেখ অল্পতেই তোরা ভয় পেয়ে গেলি।”
-“উফফফ আসলেই রুমু তুইও না।”
-“রুমু কিন্তু একদম ঠিকই বলেছে বর্ণ। সময় থাকতে সব ঠিক করে নেয়াই ভালো।”
-“হয়েছে থাম তো তোরা তোদের ভাষণ শুনতে শুনতে কান শেষ। চল এবার নোটিশ দেখে আসি।”
-“হুম চল। তবুও বলবো ভেবে দেখিস।”
-“আচ্ছা বাবা ভেবে দেখবো।”
`
বর্ণালী সজিবের কথায় টিউশনিগুলো ছেড়ে দিয়েছে। কোচিংটাও ছাড়তে বলেছিলো কিন্তু এখন ও কোচিং ছাড়তে রাজি না। ভাইয়ের চাকুরীর এক মাস হতে আর কয়েকটা দিন বাকী। এখনো বেতন পায় নি। কিভাবে ছেড়ে দেয় কোচিংটা। কোচিং-এ পড়ালে কিছু টাকা পাওয়া যায়। ভাইয়ের বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তো ছাড়ছেই না। খেয়ে বাঁচতে হবে তো এই ক’দিন। তাছাড়া পড়ালে নিজেরও একটা চর্চা থাকে।
ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে বসে আছে। ছুটির দিনে একটু লেখালেখির সুযোগ পায় ও। তাই ডায়েরি নিয়ে বসে পড়ে। আজকেও তাই করেছে। বসে বসে কিছু একটা লেখার চেষ্টায় আছে। গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস এসব টুকটাক লেখালেখি করে। কিন্তু আজকাল ডায়েরিতে ইভানকে নিয়ে অনেক কথাই লেখা হয়েছে ওর। যাই লিখেছে সবই কেমন আবোল-তাবোল।
কলিংবেলের শব্দ ভেসে আসে শারমিন বেগমের কানে। হাতের কাজ রেখে আসতেও পারছেন না।
-“বর্ণ, এই বর্ণালী?”
-“হ্যাঁ মা।”
-“দেখ না দরজায় কে এসেছে। দরজাটা খুলে দে।”
-“আসছি মা।”
বর্ণালী ডায়েরিটা বন্ধ করে এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে কাউকে দেখতে পেলো না। যেই না দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনি ঈশা আর রুমু ভুউউউউ করে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেয়। বর্ণালী প্রায় পড়তে পড়তে দাঁড়ায়। এদিকে ঈশা আর রুমু হো হো করে হেসে যাচ্ছে।
-“আরে তোরা?”
-“কেন আসবো না নাকি?”
-“সেটা কখন বললাম? ভয় পাইয়ে দিলি তো। আসবি তো একটা কল দিলি না কেন?”
-“বারে তোর বাড়িতে আসতে হলে আগে কল করে পারমিশন নিতে হয় তা তো জানতাম না।”
শারমিন বেগম তখনি বাইরে আসেন। ঈশা আর রুমুকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে৷ উনি বর্ণালীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-“আরে যা বলার ভেতরে নিয়ে বল না। আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবি?”
রুমু বর্ণালীকে ধাক্কে ভেতরে ঢুকেই শারমিন বেগমকে জড়িয়ে ধরে।
-“উম্মম্মম্মাহ। বড় আম্মু কেমন আছো?”
-“ছাড় আমায়। আমাকে ধরবি না।”
-“আরে বেগম রাগ করেছেন কেন?”
-“চুপ বেয়াদপ মেয়ে মায়ের সাথে এভাবে কথা বলিস লজ্জা শরম করে না?”
-” না না সে আমি অনেক আগেই বেঁচে চানাচুর খেয়ে নিয়েছি হিহিহিহি।”
-“ছাড় আমার সাথে কথা বলবি না।”
-“কেন আমি করলাম?”
-“এখানে কবে এসেছিলি মনে আছে? বাড়িতে আসতে মন চায় না তোর? ভুলেই গেছিস না?”
-“আরে বড় আম্মু একেবারেই তো আসতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু তা আর কপালজোরে হলো কই!”
-“হু তুই আর তোর এই মুখ। সব ভুলিয়ে দিস। কপালের দোষ না দিয়ে চেষ্টা করলেই এসে পড়তি।”
-“আসলেই বড় আম্মু একবার চেষ্টাটাও করলাম না। বড্ড দেরি করে ফেলেছি।”
-“হ্যাঁ তা করেছিস ঠিকই।”
শারমিন বেগম কেন এখানে উপস্তিত কেউই রুমুর কথার গভীরতায় পৌঁছাতে পারে নি।
-“আরে ঈশা মা কেমন আছো? সেই যে গেলে আর আজকে এলে?”
রুমুকে রেখে শারমিন বেগম ঈশার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে কথাটা বললেন। রুমু ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে। বর্ণালীও ওর পাশেই গিয়ে বসে গল্প জোরে দেয়।
-“আসলে আন্টি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় হয়ে উঠে নি।”
-“হ্যাঁ এখানে আসার সময় তোমাদের কারো হয়ে ওঠে না।”
-“সরি আন্টি এখন থেকে সময় পেলেই আসবো ইনশাআল্লাহ।”
-“আচ্ছা তোমরা বস। আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
শারমিন বেগম রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ান। আজকে অনেকদিন পর ঘরটা কেমন উল্লাসে জমে উঠেছে। আসলেই একটা ঘরের সৌন্দর্য্যই হলো মেয়ে। যে ঘরে মেয়ে নেই সে ঘরে কোন সৌন্দর্য নেই। এইযে সজিব ঘরে থাকলেও ওর চোখ দেখা যায় না৷ ও যেনো ঠিক মেহমান হয়ে ঘরে থাকে।
সজিব হাতে একটা আইসক্রিমের বক্স নিয়ে ভেতরে ঢুকে। সজিবের চোখ ইশাকে দেখে ওখানেই ওর পা থমকে যায় আর ঈশার চোখ গিয়ে থমকে যায় সজিবের উপর। থ্রী কোয়াটার টাউজার আর টি শার্ট পড়ে আছে। টি শার্টটা পিঠের দিকে ঘেমে গায়ের সাথে লেগে আছে।
💛
#____চলবে…….

Part 21
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=125060615830964&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here