ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৩১

0
420

#___ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ৩১
💛
-“ছাড়ো ইভান কেউ এসে পড়লে সমস্যা হয়ে যাবে। নিচে যেতে হবে ছাড়ো।”
-“ইভান তোমাকে ধরেছে ছাড়ার জন্য নয়। সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখার জন্য।”
ইভান আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের সাথে একেবারে মিশিয়ে নেয় বর্ণালীকে। এতোটাই কাছে যে ইভানের দু’পায়ের ফাঁকে বর্ণালীর দু’পায়ের স্থান হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর বর্ণালী ইভানকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বসে। ইভান বর্ণালীকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
-“তুমি তোমার প্রমিজ ব্রেক করেছো ইভান।”
-“হ্যাঁ করেছি আর বারবার করবো।”
-“তুমি আমায় মিথ্যে কীভাবে বললে? এই তোমার ভালোবাসা?”
ইভান হাঁটু ভাঁজ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। বর্ণালী ব্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান নিজের কান ধরে বলে,
-“সরিইইইইইই প্লিইইইইইইজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও না গো।”
ইভানের চেহারাটা কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে এই মুহুর্তে। অনেক বেশি কিউট লাগছে। সে এভাবে কখনোই দেখেনি ইভানকে। ছেলেটা আসলেই অনেক কিউট। রাগ করে থাকাই যায় না। কিন্তু তবুও থাকতে হবে। এতো বড় কথা কিভাবে লুকাতে পারলো এরা ভাই বোন।
-“এতো সহজে ক্ষমা করছিনা। উঠে নিচে আসো আমি গেলাম।”
কথাটা বলেই বর্ণালী রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ইভান অসহায় হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। কেন এমন করতে গেলাম ওর সাথে!!! আগেই যদি সত্যিটা বলে দিতাম তাহলে আজ এতো কিছু হতো না। ইভান নিজের মনেই নিজেকে বকে যাচ্ছে। রাগে হাত দিয়ে ফ্লোরে ঘুসি মারে।
👇
বর্ণালী আংটির দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। ওরা এনেছে স্বর্ণের আংটি কিন্তু ঈশার তরফ থেকে সজিবের জন্য প্লাটিনামের উপর ডায়মন্ড বসানো আংটি। ওর কাছে কেমন যেনো লাগছে বিষয়টা। ভাইয়ের দিকে একবার তাকালো সজিবও অনেক অস্বস্তিবোধ করছে। শারমিন বেগম সজিবের দিকে আংটিটা এগিয়ে দিলেন। সজিব কাঁপা কাঁপা হাতে আংটিটা নিয়ে ঈশার হাতে পড়িয়ে দিলো। ঈশার যেনো খুশির শেষ নেই। আজ সজিব তাকে নিজের বলে মোহর লাগিয়ে দিলো। ঈশা আংটিটা হাতে নিয়ে সজিবের দিকে এগিয়ে দিতেই সজিব বলে,
-“বেয়াদবি মাফ করবেন আংকেল। আসলে আমি এই আংটিটা নিতে পারবো না।”
সজিবের কথায় সবাই থমকে যায়। ঈশার বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে যায়। সজিব কি করতে চাইছে! ও কি এনগেজমেন্ট ক্যান্সেল করে দিবে! না না এটা কখনোই করবে না সজিব। সজিবের কথা শুনে ফারহান আহমেদ বলেন,
-“কেন বাবা? কি হয়েছে?”
-“আমি এতো দামী আংটি নিতে পারবো না আংকেল। এটা আমার যোগ্যতার বাইরে।”
-“কে বললো এটা তোমার যোগ্যতার বাইরে? আমরা তোমার যোগ্যতা দেখেই এটা এনেছি।”
ইভান এতোক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিলো এবার সে বলতে শুরু করে,
-“ভাইয়া ছোট মুখে বড় কথা মাফ করবেন। কিন্তু যোগ্যতা কখনোই টাকা পয়সা দিয়ে বিচার করা হয় না। একজন মানুষের যোগ্যতা তার লেখাপড়া দিয়েও বিচার করা যায় না। আসল যোগ্যতা তার পরিবারের শিক্ষা থেকেই হয়। কে কতটা যোগ্য তার ব্যাবহারে প্রকাশ পায়। তার মন মানষিকতায় প্রকাশ পায়। এমন অনেক মানুষ আছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো নিয়েছে ঠিকই কিন্তু কার সাথে কিভাবে ব্যাবহার করতে হয় সেটাও জানেনা। ছোট-বড়কে স্নেহ বা সম্মান করতে জানেনা। নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী- সন্তান আর আত্মীয় স্বজনের সম্মান, অধিকার কিছুই দিতে জানেনা। আর আপনি সেদিক থেকে অবশ্যই এই ছোট একটা আংটির কেন আমার বুমনিরও যোগ্য। তাই তো বুমনি আপনাকে তার নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে।”
ইভানের কথা শুনে সবাই যতটা অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে বর্ণালী। এই ছেলে এই বয়সে কিভাবে এতো বড় কথা বলতে পারে!!! সজিব আর কোন কিছু না বলেই নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। ঈশার চোখের কোনে জল জমে গেছে। তার হাত কাঁপছে। সজিবকে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নিজের করে নেবে। কাঁপা কাঁপা হাতে ঈশা সজিবের আঙুলে রিং পড়িয়ে দেয়। সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠে। রানু মিষ্টি নিয়ে আসে সবাই মিষ্টি মুখ করতে ব্যাস্ত। ইভান চামচের মাঝে মিষ্টির এক টুকরো নিয়ে বর্ণালীর দিকে এগিয়ে দেয়। বর্ণালী ইভানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইভান একটা চোখ মেরে ওর দিকে তাকায়। বর্ণালী একটা ঢোক গিলে আশেপাশে তাকিয়ে মৃদু হেসে আলতো করে মিষ্টি টুকু মুখে নিয়ে নেয়। এখানে কিছু বলতেও পারবেনা তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়। তারপর রুমুকেও মিষ্টি খাওয়ায়।
ইভান ক্যামেরা এনে সবার ছবি তুলতে ব্যাস্ত। কিন্তু সবার কম বর্ণালীর ছবি বেশি তুলছে। আর বর্ণালী তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কেমন অস্বস্তি লাগছে ওর। রুমুর মন বসছে না এখানে। কেন যেন ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও বর্ণালী ও বাকি সবার সাথে গল্প করছে। রানুর সাথে ওদের গল্প বেশ জমেছে। মেয়েটা ভারী মিষ্টি করে কথা বলে।
ঈশা আর সজিব পাশাপাশি বসে আছে ঠিকই কিন্তু কোন কথা বলতে পারছেনা। ঈশার যে খুব ইচ্ছে হচ্ছে সজিবের মুখে ভালোবাসি কথাটা শোনার। তখনই যেনো সাহারা বেগম ওর জন্য আর্শীবাদ হয়ে আসেন।
-“ঈশা যা সজিবকে তোর রুম দেখিয়ে আন।”
মায়ের এমন কথায় ঈশার ইচ্ছে করছে তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিয়ে দিতে। কিন্তু এখন সে এরকম কিছুই করতে পারবে না। তাই আলতো করে মাথা নেড়ে মাকে বললো,
-“হ্যাঁ মা।”
ঈশা সজিবের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সজিবও উঠে ঈশার পিছু পিছু এগিয়ে যায়।
ঈশার রুমে এসে সজিব বিছানায় বসে পড়ে। ঈশা দরজা আলতো করে লাগিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়।
-“দরজা বন্ধ করলে কেন? কেউ এভাবে দেখলে খারাপ ভাববে ঈশা।”
-“এখন আমাদের টিকেট আছে সাহেব।”
-“কিসের টিকেট?”
-“এভাবে বন্ধ দরজার ভেতর থাকার।”
ঈশা মাথা থেকে শাড়ির আঁচল ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
-“বললে না তো আমাকে কেমন লাগছে? নাকি এটা বলতেও শুভ মুহুর্ত লাগবে?”
-“ভালো লাগছে।”
ঈশা একটু রেগে গেলো। এতো সুন্দর করে সাজলো ২ঘন্টা লাগিয়ে তারপরও সজিব ওকে শুধুই ভালো লাগছে বলছে!
ঈশা সজিবের একদম কাছে এসে ঠিক ওর মুখের উপর কিছুটা ঝুঁকে বলে,
-“ভালো করে দেখে বলো তো কেমন লাগছে?”
ঈশার নিশ্বাস এসে সজিবের মুখে পড়ছে। সজিব কিছুটা পেছন দিকে সরে গিয়ে বলে,
-“খ….খুব ভালো।”
ঈশা আরেকটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
-“এবার বলো কেমন লাগছে?”
সজিব ঈশার এমন ব্যাবহারে অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। খালি গলায় ঢোক গিলে বলে,
-“অ…..অনেক সু….সুন্দর লাগছে।”
-“এভাবে তোতলানো হচ্ছে কেন?”
-“ক…..কই? নাতো।”
ঈশা সজিবের থেকে সরে গিয়ে হেসে দেয়। সজিব হা হয়ে ওর হাসি দেখছে। ওর হাসিটা একদম মনের ভেতর গিয়ে লাগে।
-“ভালোবাসি।”
হুট করেই সজিবের মুখে এমন কথা শুনে ঈশার হাসি থেমে যায়। শরীরে এক অজানা শিহরণ বয়ে যায়। চোখটা কেমন শান্ত হয়ে আসে। সজিব বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ঈশার একদম কাছে এসে ওর দু’হাত ধরে নিজের বুকের উপর রাখে।
💛
#______চলবে………

Part 30
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=127554662248226&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here