ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৩৫

0
401

#___ফাগুন__প্রেম___
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ৩৫
💛
জায়গাটা অনেক সুন্দর সাথে শীতল বাতাসে বর্ণালীর প্রাণটা প্রায় জুড়িয়ে গেছে। ইচ্ছে করছেনা এখান থেকে যেতে। চোখে ঘুম নেমে আসছে ওর। ইভান কিছুটা সরে আসে ওর দিকে। দুজনে একেবারে গা ঘেঁষে বসে আছে। আলতোভাবে চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী। নিজের অজান্তেই ইভানের কাঁধে ও মাথা রাখে। খুব ঘুম পাচ্ছে মনে হচ্ছে কত জনম ঘুমায় না। ঘুম ঘুম চোখেই আরেকটুখানি সরে যায় ইভানের দিকে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এমন ঘুম আসারই কথা। আর এমন দিনে তো অলসতাটা একটু বেশিই জেঁকে বসে। বর্ণালী ইভানের একটা হাত জড়িয়ে ধরে। একটা মিষ্টি গন্ধ এসে লাগছে ইভানের নাকে। এই গন্ধটা বর্ণালীর চুল থেকে ভেসে আসছে। এমন একটা গন্ধ মাতোয়ারা করতে যতেষ্ট। নিজেকে সামলে রাখা দায় পড়ে। বর্ণালীর মুখটা ঠিক ইভানের গলার পাশে এসে ঠেকেছে। অন্যরকম একটা গন্ধ বর্ণালীকে যেনো অচেনা জগতে নিয়ে যাচ্ছে। নেশা ধরে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ইভানের গলায় নিজের নাক স্পর্শ করায়। ইভানের ভেতরটা কেঁপে উঠে। চোখ বন্ধ করে নেয়। তার এভাবে কাছে আসাটা সবকিছুকে কেমন জানি উলট পালট করে দিচ্ছে। হৃদস্পন্দনের শব্দ পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। বর্ণালী ধীরে ধীরে নিজের নাক দিয়ে ইভানের গলায় স্লাইড করে গন্ধ নিয়ে যাচ্ছে৷ তার উষ্ণ নিশ্বাস যখনি গলায় এসে লাগছে ইভানের বুকের ভেতর যেনো আলোড়ন তৈরি করে দিচ্ছে। এই গন্ধটা ওকে খুব করে কাছে টানছে। এই মুহুর্তে কি হচ্ছে তার কোন হুশ নেই। দুজনেই যেনো কোন একটা ঘোরের মাঝে চলে গেছে। ইভান আলতো করে বর্ণালীর চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরে। বর্ণালীর এখনো ব্রু কুচকে চোখ বন্ধ করে আছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে গেছে ওর। ইভানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বর্ণালীর শুকনো কাঁপা ঠোঁটের উপর। আলতো করে বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে ঠোঁটের উপর স্লাইড করতে লাগে ইভান। বর্ণালী কেঁপে উঠে ইভানের হাত খামচে ধরে। ইভানের বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা বেড়ে চলেছে। এদিকে বর্ণালীর কোন হুশই নেই। ইভানের নিশ্বাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে ওর মুখ। দুজনার মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁকা নেই। দুই জোড়া ঠোঁট হুট করেই এক হয়ে যায়। বর্ণালী এক হাতে ঘাসের উপর খামচে ধরে মুটোয় নেয়। আরেকহাত ইভানের হাতের কনুইয়ের উপর শক্ত করে ধরে আছে। ইভানের হাত ওর কানের পেছনে স্লাইড করছে। আরেকহাতে জড়িয়ে ধরে আছে ওর কোমড়। কতক্ষণ যে ঠোঁটের সাথে ঠোঁটের কথা হলো সে সময়ের কোন হিসেব নেই। চুপ করে ইভানের ঠোঁটের সাথে মিশে আছে বর্ণালীর ঠোঁট। কোন নড়াচড়া নেই। ইভান আলতো করে সরে আসে ওর থেকে। খুব শান্তভাবে বর্ণালী নিজের মাথাটা এলিয়ে দেয় তার বুকে। হাতটা ঘাস থেকে আলগা হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর বর্ণালী ধীরে ধীরে চোখ খুলে।
এক ঝাটকায় ইভানের কাছ থেকে সরে যায়৷ একটু আগে কি হয়েছে তা বুঝতে বাকি রইলোনা ওর। চোখ বেয়ে নিঃশব্দে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। ওর সমস্ত শরীর থরথর কাঁপছে। চোখ থেকে জল পড়া বন্ধ হওয়ার নামই নেই।
চোখ মুছে বসা থেকে উঠে একটা দৌড় লাগায় বর্ণালী। ইভান বুঝতে পারছেনা না কি থেকে কি হয়ে গেলো। ও তো এমন কিছু করতে চায় নি। বর্ণালীর পিছু দৌড়ে গিয়ে পথ আগলে ধরে।
-“আই এম সরি বর্ণালী। আসলে…..আসলে আমি ইচ্ছে করে এমন কিছু করিনি।”
বর্ণালী এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ইভান যতই থামানোর চেষ্টা করছে ওর কান্নার আওয়াজ ততোই বেড়ে চলেছে। কিভাবে কি বলে থামাবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। এই মুহুর্তে ওর কি করা উচিৎ তাও সে জানেনা। বর্ণালীকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইভান। সে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছে কিন্তু ইভানের থেকে ছাড়ানো সহজ না। একসময় হাল ছেড়ে বর্ণালীও ইভানকে জড়িয়ে ধরে।
-“কেন হলো এমন ইভান কেন?”
-“হুস শান্ত হও। তেমন কিছুই হয়নি বর্ণালী। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমাকে ভালোবাসো।”
বর্ণালী কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলছে। ইভান ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
-“এটা যদি আমার অপরাধ হয় তাহলে তুমি আমাকে যাই শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নিতে রাজি। তবুও তুমি এভাবে কেঁদো না প্লিজ। আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারছি না।”
বর্ণালী নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলে,
-“আমি বাড়ি যাবো ইভান।”
-“কিন্তু।”
-“আমি বাড়ি যাবো৷”
-“হু চলো।”
চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। গাড়ি তার আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দুজন মানুষ যারা কিছুক্ষণ আগেও খুব কাছে ছিলো যাদের মাঝে একটু আগেও বিন্দু পরিমাণ ফাঁকা জায়গা ছিলো না এখন এই দুজন মানুষ কতটা দূরে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেও যাদের ঠোঁটে ঠোঁটে হাজারো কথা হচ্ছিলো এখন তারাই কতটা নীরব হয়ে আছে।
.
পুরোটা রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছে বর্ণালী। ইভানের আজ নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে কোন কিছুই করেনি। যাই হয়েছে সব নিজের অজান্তে। তখন তো সে নিজের মাঝে ছিলোনা। গাড়ি থামিয়ে দিলো ইভান।
-“চলে এসেছি।”
-“হু! হ্যাঁ।”
গাড়ির দরজা খুলে দিতেই বর্ণালী নেমে যায়। এখনো ওর শরীর কাঁপছে। ইভান গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওর খানিকটা কাছে এসে দু’গালের মাঝে হাত রেখে বললো,
-“তুমি আমারই বউ হবে বর্ণালী। কথাটা মাথায় রেখো।”
এমন কথা শুনেই বর্ণালীর ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে। বুকটা ধুকপুক করতে শুরু করে। একটা শীতল অনুভূতি বয়ে যায় মনের ভেতর। কেঁপে উঠে আরো একবার। চোখ পিটপিট করে হা হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে। ইভান আলতো করে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী। ইভান কাছে আসলে কেন এমন হয় ওর! কেন নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা! আর এক মুহুর্তের জন্যও এখানে না দাঁড়িয়ে একটা দৌড় দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়। ইভান ওর চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
.
একটা নির্ঘুম রাত কাটালো তিনজন মানুষ। একদিকে বর্ণালী আর ইভান অন্য দিকে নিজের মাঝে বিভোর রুমু। সে নিজেও জানেনা কেন তার রাতে ঘুম হলো না। কিন্তু ইভান আর বর্ণালীর ঘুম না হওয়ার পেছনে কারণ আছে।
বর্ণালী রুমুর বাসার নীচে এসে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে আজ একসাথেই যাবে। রুমুর কথা ছিলো আজকের দিন বর্ণালীকে হেল্প করার। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমু কালো একটা ড্রেস পড়ে নীচে নেমে আসে। বর্ণালীর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে। হালকা বেগুনি রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। বেশ ভালো লাগছে ওকে দেখতে কিন্তু চেহারায় বিন্দুমাত্র সাজ-সজ্জা নেই।
-“কিরে কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? উপরে আসলি না যে? ভাবী তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো।”
-“চল রুমু সময় নেই।”
-“কি হয়েছে তোর? আমার থেকে কি লুকাচ্ছিস?”
-“ক….কই কিছুই না তো।”
-“মিথ্যা তো তুই একদমই বলবিনা।”
-“পরে বলি প্লিজ। এখন চল স্কুলে যেতে লেইট হয়ে যাবে নাহলে।”
-“আচ্ছা সে না হয় পরে বলবি। কিন্তু এখন হাসতেও কি তোর টাকা লাগবে?”
বর্ণালী নিঃশব্দে হেসে দেয়। দুজনে একটা রিকশা করে কলেজে চলে যায়। কলেজে আসতেই ইভানের সামনে পড়তে হয় তাদের৷ রুমু ইভানের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই বর্ণালী ওর একটা হাত ধরে নেয়। ইশারায় মাথা নেড়ে রুমুকে না করে বর্ণালী। রুমু খেয়াল করলো মালিহা বর্ণালীর দিকে অস্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে যেনো কেমন অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে।
💛
গত পর্ব : https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=128178995519126&id=103632171307142
#______চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here