ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৩৭

0
411

#__ফাগুন__প্রেম__
লেখনীতে : Bornali Suhana
পর্ব: ৩৭
💛
এদিকে বর্ণালী কোন কিছু না ভেবেই ইভানকে কল দিচ্ছে। কিন্তু ইভান কল রিসিভ করছে না। রুমুও বারবার কল দিচ্ছে কোন কল রিসিভ করছে না। করবেই বা কিভাবে ওর মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরপাক করছে বর্ণালী কষ্ট পেয়েছে আমাকেও কষ্ট পেতে হবে। ফোন সাইলেন্ট করে রাখা আছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। বর্ণালীর কান্নার মাত্রাটা বেড়েই চলেছে।
-“ইভান কল রিসিভ করছে নারে। ওর কি কিছু হলো? আমার ভয় করছে রুমু। কোথায় পাবো এখন তাকে?”
-“এদিকে অনুষ্ঠানও শুরু হতে বেশি সময় না। স্টুডেন্টরা আসা শুরু করে দিয়েছে।”
বর্ণালীর কান্নার মাত্রা আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো। রুমু বসা থেকে উঠে এসে বললো,
-“ঈশাকে বা ওর কোন ফ্রেন্ড কে কল দিবি?”
-“হু!! হ্যাঁ তাহলে ওর খবর জানা যেতে পারে।”
চোখ মুছে ঈশার নাম্বারে কল দেয়। কল দেয়ার সাথে সাথেই রিসিভ করে ঈশা।
-“কেমন আছিস রে তুই?”
-“ঈশা ইভান কি বাসায়?”
-“না তো। কেন? কিছু কি হয়েছে?”
বর্ণালী অনেকটা জোরে শব্দ করে কেঁদে দিলো। রুমু তার থেকে ফোন নিয়ে ঈশাকে পরে কথা বলছে বলে রেখে দিলো। এদিকে ঈশা টেনশন করতে শুরু করে কি হলো ভেবে পাচ্ছেনা। সে নিজেও ইভানকে কল দিতে লাগে। কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা।
👇
-“রা….রাহাত হ্যাঁ রাহাত ইভানের ক্লোজ ফ্রেন্ড ওকে কল দিলে ইভানের খবর জানতে পারবো।”
কথাটা বলেই বর্ণালী রুমুর থেকে ফোন নিয়ে চোখ মুছে রাহাতকে কল দেয়৷ ১ম বার রিসিভ না করলেও দ্বিতীয়বার রিসিভ করে নেয়।
-“হ্যা….হ্যালো রাহাত কোথায় তুমি?”
-“কেন ম্যাম কি হয়েছ?”
-“ইভান কোথায়?”
-“কেন ম্যাম?”
-“প্লিজ তুমি জানলে বলো ইভান কোথায়?”
-“ও তো বক্সিং এর জন্য যাচ্ছে।”
-“মানে?”
-“আমরা এখন একটা বক্সিং ম্যাচে আছি। ইভান রিং এর ভেতর।”
-“ইভান কেন বক্সিং খেলতে যাচ্ছে?”
-“আসলে খেলতে নয় ও মার খেতে যাচ্ছে।”
বর্ণালীর বুকটা ধুক করে ধরে আসে। বুকের মাঝে কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করছে। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। হাত-পা কাঁপছে ওর। দাঁড়ানো থেকে ধপ করে চেয়ারে বসে যায়।
-“এ…..এসব কি বলছো রাহাত?”
-“ইভান অনেক ডিস্টার্ব। কি সব উদ্ভট কথা বলছিলো নিজেকে নাকি শাস্তি দিবে। তাই তো মার খেতে এখানে এলো।”
-“তুমি ওকে বাঁধা দাও রাহাত প্লিজ। ওকে থামাও বক্সিং করা থেকে।”
-“সে আমার কথা শুনবে না ম্যাম।”
-“তোমরা কোথায় আছো আমাকে এড্রেসটা মেসেজ করো তাড়াতাড়ি।”
-“জ্বি ম্যাম।”
বর্ণালী চোখ মুছে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।
-“কোথায় যাচ্ছিস?”
-“ইভানের কাছে। ওকে আটকাতে যাচ্ছি।”
-“আমিও আসি।”
রুমু আর একমুহূর্তের জন্যও না দাঁড়িয়ে বর্ণালীর পিছু যায়। রাহাত মেসেজ করে বর্ণালীর ফোনে এড্রেস সেন্ড করে দেয়। সেই এড্রেসে দুজনে পৌঁছে যায়। সিএনজি ভালো করে দাঁড়ানোর আগেই বর্ণালী নেমে দৌড় দেয়। রুমু ভাড়া মিটিয়ে বর্ণালীর পিছু যায়। কিন্তু দরজায় আসতেই গার্ড দুজকে আটকে দেয়। ভেতরে যেতে দিচ্ছেনা।
-“দেখুন আমাদের ভেতরে যাওয়া অনেক বেশি জরুরী। প্লিজ আমাদের ভেতরে যেতে দেন।”
-“ম্যাম আপনারা ভেতরে যেতে পারবেন না। আপনাদের কে কার্ড ছাড়া এন্ট্রি দেয়া যাবেনা।”
-“দেখুন ভেতরে আমাদের পরিচিত দুজন আছে আমরা শুধু তাদের কাছে যেতে চাই। প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা করেন।”
বর্ণালী গার্ডদের সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। রুমু আর অপেক্ষা না করে বর্ণালীর ফোন দিয়ে রাহাতকে কল দেয়। রাহাত ফোন পেয়েই বাইরে আসে।
-“উনারা দুজন আমাদের সাথের। সো তাদের ভেতরে আসতে দেন।”
রাহাতের কথায় গার্ড তাদের দুজনকে ভেতরে যেতে দেয়। বর্ণালী ভেতরে ঢুকেই এদিক ওদিক খুঁজতে লাগে ইভানকে। চোখ বক্সিং রিং এর ভেতরে যেতেই বুকটা কেঁপে উঠে তার। চোখ জোরা দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে। ইভান ফ্লোরে পড়ে আছে। এভাবে কেউ কাউকে মারে! পুরো শরীর -মুখ লাল গেছে। ঠোঁটের কাছে খানিকটা কেটে গেছে। ইভানকে এভাবে দেখে আত্মা কেঁপে উঠে বর্ণালীর।
-“ইভান, ইভান, ইভান উঠো প্লিজ ইভান উঠো। দেখো এভাবে রেগে থেকো না। আমি কি কখনোই তোমাকে বলেছি নিজেকে শাস্তি দিতে? উঠো ইভান প্লিজ উঠো।”
ইভান ধীরে ধীরে চোখ খুলে বর্ণালীর দিকে তাকায়। উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে আবারো ফ্লোরে পড়ে যাচ্ছে। এসব দেখে বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে ওর৷ নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা। অনেক দেরি করে ফেলেছে আসতে।
রাহাত রিং এর ভেতরে ঢুকে ইভানকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। ধীরে ধীরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। বর্ণালী একরকম দৌড়ে ইভানের কাছে আসে। দু’হাত দিয়ে ইভানের মুখে আলতো করে ধরে সে। আশেপাশে যে এতো মানুষ আছে সেদিকে ওর কোন খেয়ালই নেই।
-“ইভান তুমি ঠিক আছো? কেন ইভান? কেন এমন করতে গেলে? নিজেকে কেন কষ্ট দিলে?”
-“আমি যে অপরাধ করেছিলাম বর্ণালী। আর সেটার শাস্তি তো আমারই প্রাপ্য তাই না?”
বর্ণালী তার কথা শুনে কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। নিজেকে সামলে আরেকটু কাছে এগিয়ে আসে। গালে হাত রাখাতে ইভান ব্যাথায় আহ শব্দ করে উঠে। বর্ণালী ভয়ে হাত সরিয়ে নেয়। দুজনের চোখেই জল। কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা। ইভানের ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখে বর্ণালীর ভেতরটা কেঁদে উঠে। আলতো করে ইভানের গালে হাত রেখে নিজের মুখটা ইভানের মুখের একদম কাছে নিয়ে আসে৷ কি করতে যাচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছেনা। ইভান ওর চোখের মাঝেই হারিয়ে গেছে। রুমু আর রাহাতের সাথে সব মানুষ পাশে থেকেই চেয়ে দেখছে ওদের। বর্ণালী নিজের ঠোঁট ইভানের রক্তমাখা ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ সে ইভানের রক্ত পান করতে চায়। নিজের ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় ইভানের ব্যাথা সারাতে চায়। ইভানের রক্ত নিজের রক্তের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়। যাতে তাদের মাঝে কোন দূরত্ব না থাকে।
💛
#_____চলবে………..

Part 36
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/128625448807814/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here