ফিরে আসা পর্ব-১৬

0
471

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- umma Hurayra Jahan

পর্ব- ১৬

ফাতেমা সাথে ঐ দোয়ার কাগজটা নিয়ে নিলো।
রফিক সাহেব অশ্রু ভরা চোখে
রফিক- আরমান ভাই আমার আমি আমার কলিজাটাকে তোদের হাতে দিয়ে দিচ্ছি ।তোরা ওকে একটু দেখে রাখিস।
আরমান- আরে বেটা ও কি শুধু তোর মেয়ে এখন থেকে তো ও আমারো মেয়ে।তুই কোন চিন্তা করিস না ।আমরা ওর কোন অবহেলা হতে দিবো না।
খাদিজা বেগম মেহেঘ বেগমের হাতে ধরে কেদে কেদে বলছে
খাদিজা- ভাবি আমার মেয়েটা না অনেক সরল সোজা এখনো অনেক ছোট ।ও যদি কোন ভুল করে ওকে আপনি নিজের মেয়ের মতো করে মাফ করে সব শিখিয়ে দিবেন। আমাদের বড্ড আদরের মেয়ে ও আপনাদের হাতে তুলেে দিচ্ছি ।
মেহেঘ – আপনি কোন চিন্তা করবেন না আমিও ওকে আপনার মতই ভালোবাসবো। আচ্ছা ভাবি আমাদের কে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
খাদিজা বেগম ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।
ফাতেমাও কাদছে।
ফাতেমা – মা তুমি কি আমাকে এই কান্না চোখে বিদায় দিবে?আমি কি তোমার হাসি মুখ দেখে যাবো না??
আর হে আমি চলে যাচ্ছি বলে নামাযে অবহেলা করো না । বাবাকেও নামায পড়ার জন্য তাগদা দিও। আমি তো এখন আর রোজ রোজ বলবো না তোমাদেরকে নামাযের কথা ।বাবাকেও এখন আর কেউ নামাযের কথা বলে জ্বালাবে না। তোমরা নিজ দায়িত্বে আল্লাহর ইবাদত করো। কারন এ দুনিয়ার কিছুই আমাদের সাথে যাবে না । যা যাবে তা হলো নেক আমল ।
ফাতেমা- বাবা ও বাবা
রফিক সাহেব এ কোনায় দাড়িয়ে চোখের পানি মুছছেন।
রফিক- হে মা বল।
ফাতেমা- আজ তো আমি এ বাড়ি ছেড়ে তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি চিরদিনের জন্য অন্যের হয়ে ।আমি তো আর তোমাকে প্রতিদিন জ্বালাবো না । তুমি আমাকে একটা কথা দিবে???
রফিক – কি কথা মা?আজ তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো।
ফাতেমা- বাবা দয়া করে আর তুমি নামায বাদ দিও না । আগে যে গুনাও করেছো সেজন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। আর ফিরে এসো তোমার রবের রাস্তায় যেখানে আছে মানসিক শান্তি আর সম্মান।যা তোমাকে পরকালে সুউচ্চ মাকান দান করবে।
রফিক – আমি কথা দিচ্ছি রে মা আমি চেষ্টা করবো।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ।
আর ভাইয়া তুই কাদছিস কেন । তোর চোখে পানি দেখে কি আমি যেতে পারি।
ফাতেমা নিজেও সবার সাথে কাদতে কাদতেই কথাগুলো বলছে।
ভাইয়া তুই কোনদিন জামাতের সাথে নামায পড়তে ভুলিস না । যেখানেই থাকিস না কেন মসজিদে গিয়েই নামাযটা পড়িস।
হাসান- আমিই শুধু কাদছি তাই না??
তুইও তো কাদছিস।বোন আমার কাদিস না। আমি দোয়া করি তুই সুখে শান্তিতে সংসার কর।
মাহিন দূরে দাড়িয়ে সবকিছু দেখছে।আর মনে মনে বলছে এসব আদিক্ষেতা। এসব তার একদম সহ্য হয় না।
মাহিন- এই মহিমা ,ওদের তাড়াতাড়ি আসতে বল। আমার এসব ভালো লাগছে না।আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাই।
মহিমা- ইশ দাড়া না। তোর খালি ভালোই লাগে না।
আরমান- এই মাহিন দূরে দাড়িয়ে আছিস কেন ?যা তোর শ্বশুর শ্বাশুরির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আয়।
মাহিন – এয়ে…. না. .মানে যাচ্ছি বাবা।
মাহিন রফিক সাহেব কে গিয়ে বললো “আঙ্কেল চলি দোয়া করবেন।
রফিক – বাবা তুমি আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো। ও অনেক ভালো একটা মেয়ে।
মাহিন শুধু মাথা নাড়ালো।
ফাতেমা সবার কাছে দোয়া চেয়ে এবার গাড়িতে উঠলো।
গাড়িতে ফাতেমার সাথে মাহিন না উঠে মহিমা উঠলো।মাহিন ড্রাইভারের সাথে সামনে বসেছে। এই বিষয়টা ফাতেমার কেমন জানি অদ্ভুত লাগলো। ফাতেমা কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না মাহিন ওর সাথে না বসে সামনের সিটে কেন বসলো। মাহিন যে ফাতেমার সাথে বসে নি সেটা ফাতেমা ,মহিমা আর মাহিন ছাড়া কেউ জানে না । আরমান সাহেবও খেয়াল করে নি।
ফাতেমার গাড়িতে ওঠে কেমন জানি একটু অস্বস্তি লাগছে । কারন ফাতেমা প্রাইভেট কারে চড়তে পারে না। ওর গা গোলায় । তাই।
কিছু দূর যেতেই মাগরিবের আযান দিয়ে দিলো।ফাতেমা গাড়িতেই নামায পড়ে নিলো।
ফাতেমার নামায পড়া দেখে মহিমা খুব অবাক হলো।
মহিমা – ভাবি তুমি গাড়িতে বসে নামায পড়লে কেন?তুমি তো বাসায় গিয়ে নামাযটা পড়তে পারতে।
ফাতেমা একটু মুচকি হেসে
ফাতেমা- না বোন ।বাসায় পৌছতে পৌছতে আমার নামাযটা কাযা হয়ে যেত। তাই নামাযটা গাড়িতেই পড়ে ফেললাম।
মহিমা- কিন্তু তুমি যে বসে বসে নামায পড়েছো তুমার নামায কি হয়েছে মানে নামায কি হবে এভাবে।??
ফাতেমা- বোন আমার নামায হলো এমন এক ফরজ ইবাদত যা একজন মুসলিমের উপর ততক্ষন পর্যন্ত পড়ার নির্দেশ রয়েছে যতক্ষন পর্যন্ত সে স্বজ্ঞানে রয়েছে। নামায দাড়িয়ে পড়তে হবে এমন কোন কথা না । নামায বসে, শুয়ে এমনকি ইশারাতেই পড়া যায়। কেউ যদি এমন পরিস্থিতিতে থাকে যে সে দাড়িয়ে নামায পড়তে পারবে না তাহলে সে যেন বসে নামায পড়ে । আবার কেউ যদি বসেও না পড়তে পাড়ে তাহলে সে যেন শুয়ে ইশারায় নামায পড়ে।
মহিমা – সত্যি??????
————————————————–

ফাতেমা- হুম সত্যি। নামায এমন এক ইবাদত যা না পড়ার কোন অযুহাত নেই। নামাযে আল্লাহ কাউকে কোন অযুহাত দেওয়ার সুযোগ দেন নি।
তাই আমার দাড়িয়ে পড়ার সুযোগ ছিলো না তাই আমি বসেই নামায পড়ে নিয়েছি। এবার বুঝতে পেরেছো??
মহিমা – হুম বুঝতে পেড়েছি।
মহিমা আর ফাতেমা একি বয়সি প্রায়। ফাতেমা ফাস্ট ইয়ারে পড়ে আর মহিমা পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে।
মাহিন ফাতেমার কথা শুনে মনে মনে বলছে “ এই যে শুরু হয়ে গেছে আমার মুন্সি সাহেবার জ্ঞান দেওয়া । দাড়াও একবার বাসায় যাই তোমাকে জ্ঞান দেয়াচ্ছি।
মাহিন- মহিমা তুই কি একটু চুপ করবি ।আমার মাথা ব্যাথা করছে।
মাহিন ধমকের সুরে কথাটা বললো।
ফাতেমা চমকে উঠলো।ফাতেমা মনে মনে বলছে হে আল্লাহ এ কেমন ব্যবহার । ফাতেমা মাহিনকে যতই দেখছে অবাক হচ্ছে ।
মহিমা- কিছু মনে করো না ভাইয়া একটু রাগি এমনি।
ফাতেমা আল্লাহকে ডাকছে শুধু
রাত ৯ টায় সবাই ঢাকা পৌছালো।
ফাতেমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো।
কিন্তু মাহিন তো বাসায় ফিরেই বাইরে চলে গেছে।
মেহেঘ বেগম ফাতেমাকে প্রথমে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন ।
কারন তিনি মহিমা আর নুরি কে বলেছে মাহিনের ঘরটা যেন ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেয়।
মেহেঘ- তুমি আপাদত আমার ঘরে বসো। তারপর মাহিনের ঘর সাজানো শেষ হলে তোমাকে ওর ঘরে মহিমা নিয়ে যাবে।
ফাতেমা- মা একটা কথা বলবো।
মেহেঘ- হুম বলো।
ফাতেমা – মা এশার আজান তো অনেক্ষন আগে দিয়ে দিয়েছে ।আমি নামাযটা পড়ে ফেলতে চাইছিলাম ।আমি কি একটা জায়নামায পেতে পারি? না মানে আমার কাছেও জায়নামায আছে কিন্তু ব্যাগে ।কিন্তু ব্যাগ ।এখন ব্যাগ খুললে অনেক সময় লাগবে আর সব এলো মেলো হয়ে যাবে তো তাই।
মেহেঘ- জায়নামায???না মানে ….দাড়াও খুজে দিচ্ছি।আমি নুরি কে ডাক দিচ্ছি।
নুরি ….এই নুরি…..।
নুরি – জি খালাম্মা আইতাছি।
খালাম্মা আমারে ডাকছেন?
হঠাৎ করে নুরির চোখ পড়লো ফাতেমার দিকে।নুরি জোরে বললো ও আল্লাহ খালাম্মা এনি কি আমাগো ভাবি নাকি আসমানের পরী।
নুরি এর আগে কাজের ব্যস্ততার জন্য ফাতেমাকে দেখেনি।
মেহেঘ বেগম হাসছেন ফাতেমাও মুচকি হাসছে……
মেহেঘ- না না আসমানের পরী না এটাই তোর ভাবি।
নুরি – ও আল্লাহ গো এতো সুন্দর মাইয়া আমি আগে দেখি নাই।
মেহেঘ- হয়েছে হয়েছে পরে দেখবি এখন জায়নামাযটা খুজে দে।কোথায় যেন রেখেছি খুজে পাচ্ছি না।
নুরিে- খুজে পাইবেন কি কইরা।আপনারা তো নামায পরেন না।
নুরির একথা শুনে ফাতেমা বেগম কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। কারন নুরি কথাটা ফাতেমার সামনে বলেছে।
মেহেঘ – তুই চুপ থাক । যেটা বলেছি সেটা কর।
নুরি – আইচ্চা।
নুরি ফাতেমাকে জায়নামাজ খুজে দিলো।
আইচ্ছা ভাবি আমি এহন যাই আপনার আর মাহিন ভাইয়ের লাগি বাসর ঘর সাজাইতাছি। হিহিহিহিহি
ফাতেমা কথ।টা শুনে লজ্জা পেল।
মেহেঘ – তুমি আপাতত ওযূ করে আমার ঘরেই নামাযটা পরে নাও ।
ফাতেমা – আচ্ছা ঠিক আছে মা ।
আচ্ছা আপনি নামায পড়বেন না মা?
মেহেঘ- ইয়ে না মানে..আমি পরে পড়ে নিবো। তুমি এখন পড়ে নাও।
ফাতেমা বুঝতে পেড়েছে যে তিনি নামায পড়বেন না । কিন্তু কিছু বললো না । কারন সে এখন নতুন বউ ।আজ যদি কিছু বলে তাহলে হয়তো ভাববে নতুন বউ হয়ে জ্ঞান দিতে আসছে।
ফাতেমা এশার নামাযটা পড়ে নিলো। এবার ফাতেমার খুব ক্ষুদা লেগেছে। কিন্তু লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছে না।
ফাতেমা- ইশ কি ক্ষুদা লেগেছে রে বাবা। থাক কাউকে কিছু বলবো না । ওরা দিলে তারপর খাবো।
এদিকে মাহিনের কোন খবর নেই ।
আরমান- কি গো তোমার ছেলে কোথায়????বাসায় ফেরার পর থেকেই তো ওকে দেখছি না।
মেহেঘ – তুমি চিন্তা করো না । হয়তো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেছে। চলে আসবে।
আরমান- তাই বলে নতুন বউকে বাসায় রেখে ও বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবে???ওর কি কোন বু্দ্ধি নেই নাকি?
আচ্ছা তুমি ফাতেমাকে খাবার দিয়েছো????
****************************

মেহেঘ – না এখনো দেই নি।
আরমান- হে আল্লাহ …।তুমি এখনো মেয়েটাকে খাবার দাও নি। এতো রাত হয়ে গেল কিন্তু এখনো খাবার দাও নি। মেয়েটার হয়তো ক্ষিদে পেয়েছে কিন্তু লজ্জায় হয়তো কিছু বলতে পারছে না। তুমি খাবার বেড়ে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি।
মেহেঘ – সবে মাত্র তো এলো„এখনি এতো দরদ।কোন দিন তো নিজের মেয়ের জন্য মনে হয় না নিজের হাতে খাবার নিয়ে গেছো।
আরমান- দরদ থাকবে না??আমার একমাত্র ছেলের বউ আমি নিজে পছন্দ করে ওকে এনেছি। আর কতো ভালো মেয়ে ও।আমাদের তো দায়িত্ব ওর ভালো মন্দ খেয়াল রাখা।
তুমি যাও খাবার টা নিয়ে এসো।
আরমান সাহেব ফাতেমার জন্য খাবার নিয়ে আসলেন।
আরমান- কিরে মা আসবো?
ফাতেমা – আরে বাবা আসুন আসুন।
আরমান- এতো দেরি হয়ে গেল এখনো কিছু খাস নি তো তাই খাবার নিয়ে এলাম। আর আমাকে আপনি করে ডাকতে হবে না ।আমাকে নিজের বাবার মতো তুমি করেই ডাকবি মা । কারন তুই আমার কাছে আমার মহিমার মতোই।
ফাতেমা – না মানে আসলে প্রথম প্রথম তো । ঠিক আছে তুমি করেই ডাকবো।
ফাতেমা অনেক খুশি হলো আরমান সাহেবকে নিজের বাবার মতো তুমি করে ডাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য। কারন ফাতেমার খুব ইচ্ছা ছিলো যে ফাতেমার বিয়ের পর ফাতেমা তার নিজের শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে তুমি করে বলবে। আল্লাহ তার এই মনের ইচ্ছাটাও পুরন করে দিলো।
আরমান- নে এবার খেয়ে নে। তোর হয়তো অনেক ক্ষিদে পেয়েছে।
ফাতেমা – বাবা উনি কোথায়।??
আরমান – কে? মাহিন?
ফাতেমা- জ্বি।
আরমান- ও তো একটু বাইরে গেছে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে তুই চিন্তা করিস না এসে পড়বে।
ফাতেমা খাওয়া শেষ করে ওর শ্বশুড় শ্বাশুড়ির ঘরেই বসে আছে।
মহিমা আর নুরি মেহেঘ বেগমের ঘরে আসলো ফাতেমাকে মাহিনের ঘরে নিয়ে যেতে।
মহিমা – ভাবি চলো তোমার ঘর রেডি।
নুরি – হ ভাবি। ঘরডা এক্কেবারে আপনার মতো সুন্দর কইরা সাজাইছি। আপনার খুব ভালা লাগবো।
ফাতেমাকে মহিমা আর নুরি মাহিনের ঘরে নিয়ে গেল।ফাতেমাকে ঘরে বসিয়ে মহিমা আর নুরি চলে গেল।
রাত ১২ টা বেজে গেলো এখনো মাহিনের কোন খবর নেই । মাহিনের এসব অদ্ভুত কান্ড দেখে ফাতেমা কিছুই বুঝতে পারছে না । এতো রাত হয়ে গেল কিন্তু কোন পাত্তা নেই মাহিনের। ফাতেমা অপেক্ষা করে বসেই রয়েছে। রাত প্রায় ১টা বাজে ।ফাতেমা খাটের এক কোনায় বসে মাথায় হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।হঠাৎ করে দরজা খুলার আওয়াজ শুনে চমকে ওঠলো……………
চলবে ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here