ফিরে আসা পর্ব-১৮

0
463

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব-১৮

ফাতেমা- আপনি কি উঠবেন নাকি আমি আপনার বাবাকে ডাকবো??

মাহিন রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে বেলকনির সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো পিছন দিক থেকে দরজাটা বন্ধ করে।

মাহিন- এই বদমাইশ মেয়েটা তো জ্বালিয়ে মারলো আমাকে। দাড়াও মজা দেখাবো তোমাকে।

ফাতেমা কষ্টে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

ফাতেমা – আপনি আমাকে যতই কষ্ট দেন না কেন আমি তো আপনাকে ঠিক করেই ছাড়বো।
আজ নামায পড়েন নি তো কি হয়েছে । আমি তো আর এ বাড়ি থেকে ভেগে যাচ্ছি না ।আমি আমার চেষ্টা জারি রাখবো ইনশাল্লাহ।

এই বলে ফাতেমা ফজরের নামাযটা পড়ে নিলো।এবার ফাতেমা কোরআর শরীফ খোজছে পড়ার জন্য।
ফাতেমা মাহিনের সারা ঘর খুজে ফেললো কিন্তু কোথাও কোরআন শরীফ পেলো না।

ফাতেমা – হে আল্লাহ ,একজন মুসলমানের ঘরে কোরআন নেই এটা কেমন কথা। আল্লাহ তুমি উনাদের সকলকে হেদায়েত দান করো মাবুদ।

ফাতেমা কোরআন এর জন্য মেহেঘ বেগমকে ডাকতে গেল আর নামাযের জন্য দাওয়াত দিতে গেলো।ফাতেমা সিড়ি বেয়ে নিচে তার শ্বাশুরির ঘরে গেল।ফাতেমা দরজায় গিয়ে মেহেঘ বেগমকে ডাকছে

ফাতেমা – মা. …ও মা….।মা…।ফজরের সময় হয়েছে মা দরজাটা খুলুন। মা….একটু দরকারও ছিলো।

মেহেঘ বেগম ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন ৫টা বাজে।

মেহেঘ- এতো সকালে কে ডাকে?তিনি উঠে দরজা খুলে দেখেন দরজার সামনে ফাতেমা দাড়িয়ে আছে।
কি হলো ফাতেমা তুমি এতো সকালে এখানে কি করছো?আর আমাকে ডাকছো কেন?কোন সমস্যা হয়েছে কি???

ফাতেমা- না মা „আমাকে মাফ করবেন। না মানে ফজরের সময় হয়েছে তো তাই আপনাদের নামাযের জন্য ডাকতে এলাম।ফজরের সময়টি তো খুব গুরুত্বপূর্ন একটি সময়।এ সময় কোন মুসলমান ঘুমিয়ে থাকে না ।মুমিন ব্যক্তিরা এ সময় ঘুমকে হারাম করে আল্লাহর কাছে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। এ সময় ঘুমিয়ে থাকে মুনাফিকরা ।যাদের উপর মহান রব্বুল আলামিনের রাগ থাকে যাদের উপর মহান সত্তার রহমত থাকে না তারা ফজরের সময় উঠতে পারে না। তাই বলছি আমরা তো মুসলমান ।এ সময়টি আমাদের ইবাদতের সময়।তাই আপনাদেরকে নামাযের জন্য ডাকতে এলাম।

এতো ভোরে ঘুম ভাঙিয়ে ফাতেমা এসব কথা বলায় মেহেঘ বেগম কিছুটা রেগে গেলেন।

মেহেঘ- মা তুমি নতুন এসেছো।তাই তোমার এসব বিষয়ে চিন্তা না করাটাই আমি ভালো মনে করি।

ফাতেমা বুঝতে পেরেছে যে মেহেঘ বেগম কিছুটা রেগে গেছেন।

ফাতেমা – কিন্তু মা আমি তো আপনাকে নামাযের জন্য ডাকতে এসেছিলাম।

মেহেঘ – শুন ,আমার নামায আমি কখন পড়বো সেটা আমি ঠিক করবো ।তোমাকে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না ।আজ দুপুরে তোমার বৌভাত ।যাও এতো সকালে সজাগ না থেকে একটু ঘুমিয়ে নাও ।কিছুক্ষন পর আবার উঠতে হবে।

ফাতেমা মেহেঘ বেগমের রাগ দেখে কোরআন চাইতেই ভুলে গেল।

মেহেঘ বেগম ফাতেমার সামনেই দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

মেহেঘ- সকাল সকাল আরামের ঘুমটা ভাঙিয়ে এসেছে জ্ঞান দিতে।হু….

ফাতেমা মহিমাকে ডাকতে গেলো।মহিমার রুমের দরজা খুলাই ছিলো। তাই ফাতেমা প্রথমে বাইরে থেকে মহিমাকে ডাক দিলো। কিন্তু মহিমা সাড়া না দেওয়ায় ঘরের ভেতরে ঢুকলো।

ফাতেমা – মহিমা বোন আমার উঠো সকাল হয়েছে ফজরের সময় হয়েছে।বোন আমার উঠো।

মহিমা – { ঘুম ঘুম নিয়ে} আরে ভাবি এতো সকালে কেন ডাকছো???একটু ঘুমাতে দাও না ।
ফাতেমা – বোন আমার।ঘুমালে চলবে ওদিকে তো ফজরের সময় চলে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি উঠো।

মহিমা – প্লিজ ভাবি একটু ঘুমাতে দাও। আমি কথা দিচ্ছি কাল থেকে পড়বো। কিন্তু প্লিজ আজ একটু ঘুমাতে দাও।

মহিমা মেহেঘ বেগমের মতো এতো খারাপ ব্যবহার করে নি ফাতেমার সাথে। মহিমা মর্ডান হলেও মনের দিক থেকে খুব ভালো।

ফাতেমা – আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে যাচ্ছি কিন্তু কালকে থেকে কিন্তু নামায পড়তে হবে।

মহিমা – আচ্ছা ঠিক আছে সোনা ভাবি আমার।

ফাতেমা নিজের ঘরে চলে এলো। ফাতেমার মনটা কেমন জানি ছটপট করছে। কারন আজ সে কোরআন পড়তে পারে নি। ফাতেমা প্রতিদিন ফজরের নামায শেষে কোরআন পড়তো। আজ না পড়তে পেরে তার খুব খারাপ লাগছে।

ফাতেমা – আজ সারা রাত ঘুম হয়নি । একটু ঘুমিয়ে নিই।

ওদিকে মাহিন বেলকনিতেই সোফায় ঘুমাচ্ছে।
ফাতেমা ঘরের সোফায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে।

সকাল ৯টা বাজে।

নুরি দরজার সামনে এসে ডাকছে

ভাবি ও ভাবি সকাল হইয়া গেছে উডেন। খালাম্মা আফনারে আর ভাইজানরে নিচে ডাকতাছে। ও ভাবি …….

ফাতেমা নুরির ডাক শুনে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলো।

নুরি- ভাবি আফনেরে আর ভাইজানরে খালাম্মা নিচে নাস্তা করার লাইগা ডাকতাছে ।তাড়াতাড়ি আসেন। আমি গেলাম ।আবার জানি আসতে না অয়।

ফাতেমা- আচ্ছা বোন তুমি যাও। আমি আসছি।

নুরি- কি কইলেন???

ফাতেমা – আমি আসছি বলেছি।

নুরি – না না এর আগে কি কইলেন?আফনি আমারে বোন তুমি কইয়া ডাকলেন????

ফাতেমা – হে বোন।কেন কি হয়েছে???

নুরি – না মানে আমি এই বাড়িতে আওয়ার পর থাইকা আমারে তুই কইরা ছাড়া কেউ ডাহে নাই তো।আর আফনি আমারে বোন বইলা ডাকলেন।আফনি এতো বড় বাড়ির বউ হইয়াও আমার মতো কাজের মাইয়ারে এতো সম্মান দিয়া কতা কইলেন ।আমার তো খুশির ঠেলায় কান্দন আইতাছে।দেহেন আমি তো কাইন্দাই দিছি।

ফাতেমা – আরে আমার মিষ্টি বোনটি তুমি কাঁদছো কেন?তুমি তো আমার ছোট বোনের মতো। আর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন যে“ আমরা যেন আমাদের গৃহকর্মি বা শ্রমিকদের প্রতি সদয় হই । [সুরা নিসা :৩৬]আর যারা গৃহকর্মি বা শ্রমিক তাদের সাথে তোমরা ভালো ব্যবহার করো। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে। তোমরা যা পড়বে তাদেরকেও তা পড়তে দিবে। কারন তোমরা সবাই ভাই ভাই”””
এবার বোঝেছো বোন আমার।

নুরি – হ বুজছি ভাবি। আইচ্ছা আমি যাই আফনে তাড়াতাড়ি আসেন।

ফাতেমা – আচ্ছা যাও। আমি আসছি।

ফাতেমা মাহিনকে ডাকতে গেলো।
ফাতেমা বেলকনির দরজাতে শব্দ করে মাহিনকে ডাকছে।

ফাতেমা – এই যে শুনছেন?এই যে মিস্টার রাগি বাবু শুনছেন? হিহিহি।
কি হলো শুনছেন???

মাহিন হুড়মুড়িয়ে দরজা খুললো ।

মাহিন- এই মেয়ে তোমার কি বুদ্ধি নেই হুম??একবার বললে কি মাথায় ঢুকে না হুম?আমি যে তেমাকে কালকে রাতে ডিস্টার্ব করতে না করেছি সেটা কি মাথায় ঢুকে নি??তোমার জ্বালায় তো নিজের রুমেও আমি শুতে পারি নি কাল। সারা রাত মশার কামড় খেয়েছি। আমার রুমটাকে দখল করে রেখেছো।তারপরেও শান্তি হয় নি?এতো সকাল সকাল কেন জ্বালাচ্ছো?

ফাতেমা – বাপ রে বাপ ।একদমে কতগুলো কথা বললেন আপনি।আপনার মুখ ব্যাথা করে না মিস্টার রাগি মশাই?আর আমি আপনার ঘর দখল করি নি ।আমি তো সোফায় ছিলাম ।আপনার ঘর আপনারি আছে বুঝলেন রাগি মশাই।

মাহিন- What?what did you say? ???রাগি মশাই??আমাকে এ নামে ডাকার সাহস হলো কি করে ?

ফাতেমা – এতে সাহসের কি আছে ?আমি আমার জামাইকে যা ইচ্ছা তাই ডাকবো। এতে আবার সাহস লাগে নাকি?

মাহিন- জামাই???কার জামাই ??কোন জামাই???কিসের জামাই???আমি তো তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না।

রেগে গিয়ে মাহিন কথা গুলো বললো।

ফাতেমা – আপনি মানেন আর না মানেন তাতে আমার কি??আমি তো মানি। আমি আমার জামাইকে যা ইচ্ছা তাই ডাকবো। ইশশশ……কি কিউট নামটা রাগি মশাই। কি গুলুমুলু নাম টা।

মাহিন- তুমি কিন্তু তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো। Don‘t cross your limit..

ফাতেমা- I am in my limit.
আচ্ছা এতো কথার কোন দরকার নেই।মা আমাদেরকে ডাকছে ।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসুন।

মাহিন- আমি যেতে পারবো।আমি এখন ঘুমবো।

ফাতেমা – ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। পরে যখন বাবা এসে ডাকবে তখন বুঝবেন ঠেলা ।হিহিহিহি

ফাতেমা রেডি হয়ে নিচে গেল। আর এদিকে মিমি মাহিনকে ফোন দিয়েছে।

মাহিন- হ্যালো মিমি।

মিমি- হ্যালো মাহিন কেমন আছো?

মাহিন- ঐ গ্যাইয়া ক্ষেতটার জ্বালায় আর থাকতে পারছি না। কালকে থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।

মিমি- কি বলো এসব?তোমার না ওকে জ্বালানোর কথা?উল্টা ও তোমাকে জ্বালাচ্ছে???How funny!!!

মাহিন- এখন তুমিও মজা করছো। ?তোমার কথাতেই তো রাজি হয়েছি বিয়েতে।না হলে ঐ মেয়েকে আমি বিয়ে করতাম?বিয়ের দিন ঐ মেয়েকে রেখে তোমায় নিয়ে পালিয়ে যেতাম।

মিমি মনে মনে বলছে“ আহারে আমার চান্দু ,সম্পত্তি না পেলে কে তোমাকে বিয়ে করবে???

মিমি- আরে উত্তেজিত হয়ো না । তুমি তোমার মতো অত্যাচার চালিয়ে যাও। যত ইচ্ছা তত অপমান করবে।তারপর দেখবে ঐ মেয়ে দুদিন পরেই পালাবে।

মাহিন- হুম ঠিকি বলেছো মিমি। কিন্তু তোমাকে ছাড়াতো আমার একদম ভালো লাগে নাহ।

মিমি- আরে বোকা কয়েকটা দিন ধ্যর্য ধরো ।তারপর ঐ মেয়ে চলে গেলে তো আমিই তোমাকে বিয়ে করবো।
আচ্ছা এখন রাখছি পরে কথা হবে।

মাহিন – আচ্ছা ঠিক আছে। bye.

ফাতেমা নিচে নেমে সবাই কে সালাম দিলো।

আরমান- আয়. মা আমার পাশে বস।
ফাতেমা ডাইনিং রুমে গিয়ে তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি আর ননদের সাথে গিয়ে বসলো।

নুরি তাদেরকে নাস্তা দিচ্ছে।

মেহেঘ- ফাতেমা ,মাহিন কোথায়। ও এখনো আসেনি কেন?

ফাতেমা- না মানে উনি…

মহিমা – আরে মা তোমার ছেলে কি এই সকালে উঠার পাত্র নাকি। দেখো হয়তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।হিহাহিহি

আরমান- এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি না। ফাতেমা তুই কিছু মনে করিস না।ও একটু এরকমি।তুই ওকে তোর মতো বানিয়ে নিস রে মা।

ফাতেমা – তুমি কোন চিন্তা করো না বাবা।ইনশাল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

মেহেঘ- আজ তোমার আর মাহিনের বৌভাত কমিউনিটি সেন্টা রে তুমি সময় মতো তৈরি থেকো।

আরমান- দাড়াও আমি মাহিনকে ডাকছি।না হলে ও খাবার টেবিলে আসবে না।বেয়াড়া ছেলে একটা।মাহিন……এই মাহিন……

বাবার চিৎকার শুনে মাহিন…………

চলবে ইনশাল্লাহ…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here