ফিরে আসা পর্ব-২১

0
519

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকাে- Umma Hurayra Jahan

পর্ব-২১

ফাতেমা – একটা কথা বলবো????
মাহিন- না আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না।
ফাতেমা – আরে আমার রাগি মশাই শুনলে আপনারি ভালো লাগবে।
মহিন ধমক দিয়ে বললো কি হয়েছে বলো।
ফাতেমা- আপনাকে না আজ দারুন লাগছে।জানেন আপনি যখন নিচে নামছিলেন তখন না আমি মুগ্ধ হয়ে দু নয়ন ভরে আপনাকে দেখছিলাম।।ইশ… কি কিউট লাগছিলো আমার রাগি মশাইটাকে।
এই কথা শুনে মাহিন গাড়িটার জোরে ব্রেক করলো।মাহিন কাশতে লাগলো।মাহিনের বিষম লেগে গেছে।
ফাতেমা – আরে আরে এটা কি করলেন আপনি?এখনি তো এক্সিডেন্ট হয়ে যেত।আর কাশছেন কেন???
মাহিন – একটু আগে কি বললে তুমি???
ফাতেমা – কাশছেন কেন বললাম।
মাহিন-না না এর আগে।
ফাতেমা – ও ।আপনাকে আজ অনেক কিউট লাগছে বলেছি।
মাহিন- এই মেয়ে এই তোমার মাথার মনে হয় তার ছিড়া।তোমার জন্য কি পাবনা পাগলা গাড়দের সিট বুক করতে হবে নাকি।
ফাতেমা – ওমা এগুলো কি বলছেন??
মাহিন- তোমার তো দেখি লজ্জা শরমের ছিটা ফোটাও নেই।তোমার মুখে কি কথা বাঝে না?কি অসভ্য একজন পুরুষকে বলছে অনেক কিউট লাগছে। এই মেয়ে তুমি না এতো পরহেজগার ।তাহলে পুরুষদেরকে এগুলা কি বলো।বাজে নজর দাও তাই না।
মহিন কথাগুলো কঠোর স্বরে বললো।
ফাতেমা – হাহাহাহাহা
মাহিন- এই মেয়ে পাগলির মতো হাসছো কেন???
ফাতেমা – হাহাহাহা।
ফাতেমার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে।
মাহিন- এবার সত্যি তোমাকে পাগল খানায় পাঠাতে হবে।
ফাতেমা – হাহাহাহা।আমি হাসবো না তো কি করবো????আপনার এসব আজব কথা শুনে যে কেউ হাসবে।
মাহিন- আমার কথা শুনে মানুষ হাসবে কেন।????
ফাতেমা – এসব বোকা বোকা কথা শুনলে হাসবে না তো কি কাদবে????আপনি কি বললেন ,যে আমি আপনার উপর কুনজর দিয়েছি। আর আমি পরহেজগার তবুও কেন আপনার উপর নজর দেই??হাহাহা।আমি তো এতো দিন ভাবতাম আপনি শুধু রাগি।এখন তো দেখছি আপনি আস্ত একটা বোকা।
মাহিন- কি???? আমি বোকা???
ফাতেমা – বোকা নয় তো কি??আমি আমার স্বামীকে দেখেছি তাকে কিউট বলেছি অন্য পুরুষকে তো আর বলিনি।হাহাহা
আর নিজের স্বামীর দিকে চাইলে গুনাহ না বরং মোহাব্বত বাড়ে বুঝলেন রাগি মশাই।
মাহিন ফাতেমার দিকে ভ্রু কুচকে চাইলো।
ফাতেমা – হয়েছে হয়েছে এভাবে দেখতে হবে না ।পরে কিন্তু প্রেমে পরে যাবেন।হিহিহি
মাহিন- প্রেম তাও আবার তোমার মতো ক্ষেতের সাথে???অসম্ভব।আমি তো মি……
ফাতেমা – মি মানে কি??
মাহিন- তোমাকে কেন বলবো।আর হে আমার কোন বিষয়ে নাক গলাবে না বলে রাখলাম।
ফাতেমা – ইশ… আমার বয়েই গেছে নাক গলাতে।আমার এতো সুন্দর নাক।এটা গলালে তো পরে বুচা হয়ে যাবে।হিহিহিহি।
মাহিন- হে আল্লাহ এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম???
ফাতেমা – হয়েছে হয়েছে এবার গাড়ি স্টার্ট দিন।দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।পরে কিন্তু বাবা বকা দিবে।
মাহিন আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
কমিউনিটি সেন্টারে পৌছাতেই মাহিনের সঙ্গে বোরকা পড়া ফাতেমাকে দেখে সবাই কি রকম করে যেন তাকাচ্ছে। এটা দেখে খুব অদ্ভুত লাগছে ফাতেমার।
সবাই বলাবলি করতে লাগলো বউ কোথায় ???আর মাহিনের সাথে এই বৃদ্ধ মহিলা কে???
সবার এমন বলাবলি শুনে আরমান সাহেব বললেন
লেডিস এন্ড জেন্টাল মেন আপনারা একটু আমার কথা শুনুন দয়া করে।
সবাই মুহুর্তে চুপ হয়ে গেল।
আরমান- মা ফাতেমা এদিকে আয়।
ফাতেমা- জ্বি আসছি বাবা
আরমান- আপনারা সবাই শুনুন।এ হলো ফাতেমা ।আমার মাহিনের স্ত্রী। ও শুধু আমার ছেলের বউ না ও আমার মেয়ে।খুব ভাগ্য করে এমন একটা মেয়ে পেয়েছি।আপনারা সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।
মহিমা ফাতেমা আর মাহিনকে স্টেজে নিয়ে বসালো।কিছুক্ষন পরেই মাহিনের বন্ধুরা এলো তাদের কাছে।
সিহাব- কিরে মাহিন উনাকে ভাবি বলবো নাকি চাচি????হাহাহাহা
মাহিন- আরে মাঝে মাঝে তো আমিই কনফিউজ হয়ে যাই যে,এ আমার বউ না চাচি????হাহাহাহাহা
রিমন- তাহলে আপনাকে চাচিই ডাকি কি বলেন মিস?????হাহাহা
রানা – আরে তোরা কি শুরু করেছিস বলতো? আসলে তোদের কোন কমন সেন্স নেই।তোদের মজা করার অভ্যাসটা আর গেলো না। কিছু মনে করবেন না ভাবি এরা এরকমি।আপনার সাথে মজা করছে। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
মহিমা – কিরে ভাইয়া তোর বন্ধুরা ভাবিকে নিয়ে মজা করছে আর তুইও সাথে সাথে তাল মিলাচ্ছিস???তোর কি বুদ্ধিসুদ্ধি গেছে নাকি????
মহিমা- তুই চুপ থাক ।ঐ মেয়ের পক্ষ নিবি না বলে দিলাম।
মহিমা – দাড়া বাবাকে গিয়ে বলছি।
মাহিন- আরে আরে দাড়া দাড়া বাবাকে বলিস না প্লিজ ।
মহিমা – তাহলে তুই এখান থেকে যা তোর এসব বাজে বন্ধুদের নিয়ে।
মাহিন- ঠিক আছে যাচ্ছি।
এই তোরা চল সবাই তোদের খাবার ব্যবস্থা করছি।
সিহাব- তাহলে যাই চাচি থুক্কু ভাবি। আবার দেখা হবে।
মাহিন তার বন্ধুদের নিয়ে স্টেজ থেকে চলে গেল।
এদিকে মাহিনের আর তার বন্ধুদের আচরনে ফাতেমা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল।ফাতেমা কেদে নিকাব ভিজিয়ে ফেলেছে।
ফাতেমা – হে আল্লাহ একজন স্বামী কি করে পারে তার স্ত্রীকে এমন অপমান করতে???আল্লাহ ওদের সবাইকে হেদায়েত দান করো।
মহিমা- তুমি কেদো না ভাবি। প্লিজ ভাবি কেদো না। ওরা মজা করেছে তোমার সাথে। প্লিজ মন খারাপ করো না।
এই সময় ফাতেমার বাবা মা আর ভাই এসে হাজির।
ফাতেমা দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
খাদিজা- কিরে মা আমার ।আমার সোনাে মানিক তুই কাদছিস কেনো??আমাদের কথা খুব মনে পড়ছিলো বুঝি?? মানিক আমার কাদিস না।
ফাতেমা মাকে জড়িয়ে জোরে ঢেকুর তুলে তুলে কাদতে লাগলো।
হাসান – আরে পুচকি তুই ছোটদের মতো কাদছিস কেন?বোকা মেয়ে আমরা তো এসেই পড়েছি এবার কান্না থামা আমার বোন।
রফিক- আরে কাদিস না মা।দেখ আমরা তো এসেছি।দেখো কেমন ছোটদের মতো কাদছে ।লোকেরা তো খারাপ বলবে।এবার থাম।
ফাতেমা এবার কান্না থামালো।
আরমান- আরে রফিক আমার জিগার তুই এসে পড়েছিস?
রফিক আর আরমান সাহেব কোলাকুলি করলো
মেহেঘ- আরে ভাবি কেমন আছেন?
খাদিজা- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি??
মেহেঘ – জ্বি ভালো।
আসুন আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি ।
হাসান- আরে আন্টি বেশি ব্যস্ত হবেন না।আমরা আগে পুচকির সাথে ভালো করে কথা বলে নিই তারপর খাবো ইনশাল্লাহ।
ফাতেমা – জানো তোমাদের কত মিস করছিলাম??খুব মনে পড়ছিলো তোমাদের।
হাসান- জানি তো রে পুচকি ।আমরাও তো তোকে অনেক মিস করছিলাম।
রফিক – জানিস রে মা তুই মাত্র দুইদিন হলো বাড়ি থেকে এসেছিস কিন্তু মনে হচ্ছে যেন দুই যুগ ধরে তোকে দেখি না।
ফাতেমা – বাবা তুমি ঠিক মতো অসুধ খাচ্ছো তো???
রফিক- এতোক্ষন পড়ে তোকে দেখলাম আর এখন তুই অসুধের কথা তুলে দিলি????তোকে দেখলেই আমার সব অসুখ ভালো হয়ে যাবে।
সবাই ফাতেমার সাথে কথা বার্তা শেষ করে খাবার খেতে গেল। এদিকে আসরের নামাযের সময় হয়ে গেছে।
ফাতেমা – মহিমা বোন আমার এখন তো আসরের নামাযের সময় হয়ে গেছে।এখন কি করবো???আমাকে দয়া করে একটু নামাযের ব্যবস্থা করে দাও না।
মহিমা- দাড়াও দেখছি কি করা যায়।
মহিমা মেহেঘ বেগমকে ডাকতে গেল।
মহিমা – মা এ একটু দেখে যাও তো।
মেহেঘ- কি হয়েছে রে মহিমা?
মাহিমা – মা এখন তো আসরের আযান পড়েছে ।তাই ভাবি নামায পড়তে চাচ্ছে ।তুমি একটু ব্যবস্থা করে দাও তো।
মেহেঘ – দাড়া দেখছি ।
মেহেঘ বেগম কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার কে নামাযের কথা বলায় ম্যানেজার নামাযের ঘর দেখিয়ে দিলেন।
মেহেঘ- মহিমা তুই ফাতেমাকে নিয়ে নামাযের ঘরে যা।
মহিমা – ভাবি চলো।
ফাতেমার- কোথায়??
মহিমা- নামযের ব্যবস্থা আছে এখানে।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ।হে আল্লাহ তোমার কাছে কোটি কোটি শোকরিয়া। জানো মহিমা আমি তো খুব চিন্তায় পড়ে গেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম এখানে নামযের কোন ব্যবস্থা নেই।
মহিমা- চলো আমার সাথে।
ফাতেমা নামাযের ঘরে গিয়ে নামায পড়ে নিলো আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।
রেহেনা- কিরে মেহেঘ তোর বৌমার মুখটা তো এখন পর্যন্ত দেখলাম না।আমাদেরকে কি তোর বৌমা দেখাবি না নাকি????
মেহেঘ- আরে না না দেখবি অবশ্যই দেখবি। আসলে ও পর্দা করে তো তাই এখানে পুরুষ মানুষ থাকায় মুখের নিকাব খুলে নি।
কামিনি- কিরে মেহেঘ তুই আবার কবে থেকে এগুলো পর্দা টর্দা সাপোর্ট করিস???তোর মতো মর্ডান মায়ের ছেলে এমন বুড়ো মহিলাদের মতো বোরকা পড়ে আছে এটা তো কিছুতেই বুঝতে পারছি না।
মেহেঘ- আজ তো আর ফাতেমাকে দেখতে পারলি না।একদিন তোরা সবাই মিলে আমার বাসায় আসিস তাহলে সব বুঝতে পারবি।
এটা বলে মেহেঘ বেগম মুচকি হাসলেন।
বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ।ফাতেমার বাবা মা ভাই ফাতেমাকে বিদায় জানিয়ে ময়মনসিংহ চলে আসলো।
ফাতেমা আর মাহিনকে নিয়েও মেহেঘ বেগম আরমান সাহেব আর মহিমা তাদের বাসায় চলে আসলো।
বাসায় আসতেই মাগরিবের আযান পরে গেল। সবাই যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে নিলো। মাহিন ফ্রেশ হয়েই বাইরে চলে গেল।
ফাতেমা বোরকা খুলে ওযু করে নামায পড়ে নিলো আর কিছু আমল. করে নিলো।
মহিমা আসলো ফাতেমার ঘরে।
মহিমা – ভাবি কি করছো?
ফাতেমা -এই তো কিছু আমল. করছিলাম।
মহিমা – আচ্ছা ভাবি তুমি এতো কিছু জানলে কি করে ।আমার না তোমাকে দেখে খুব আগ্রহ হয় এগুলো শিখার। তুমি আমাকে শেখাবে?????
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ।বোন আমি অবশ্যই শেখাবো তোমাকে।আমি যে কত্ত খুশি হয়েছি তুমি ভাবতেও পারবে না। আমি তো চাই আমাদের এই পরিবারটা দ্বীনের পথে আসুক।আমি চাই আমরা সবাই যাতে একসাথে জান্নাতে থাকতে পারি।জানো মহিমা তুমি খুব খুব খুব ভালো। আমি আল্লাহর কাছে কোটি শোকরিয়া আদায় করলেও মনে হয় কম হয়ে যাবে যে ,আল্লাহ আমাকে এমন একটা ভালো পরিবার দিয়েছে।তোমরা সবাই কতো ভালো ।শুধু যদি একটু দ্বীনের পথে চলো তাহলে সবদিক থেকেই পুর্ন হবে।
মহিমা- চেষ্ট করবো ভাবি যাতে তোমার মতো হতে পারি।
ফাতেমা – আমি দোয়া করি তুমি আমার মতো না আমার থেকেও যেন ভালো ভাবে দ্বীনের পথে চলতে পারো।
জানো তো বোন তোমাদেরকে বুঝালে তোমরা কথ সুন্দর করে আমার সাথে কথা বলো।কিন্তু……………
চলবে ইনশাল্লাহ…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here