ফেইরিটেল পর্ব-১৩

0
1382

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–13

মিরা অদ্ভুত নয়নে তাকালো। আশেপাশে কোথায় ইমান নেই কিন্তু তার প্রতিচ্ছবি সে ভুলবশত দেখে ফেলেছে।কালকেও নিদ্রাভাব আসার সময় একবার স্বপ্নে সে ইমানকে দেখেছে। কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় কেন ভুল দেখলো সে? নাকি রাকিবের কথাগুলো তাকে ইমানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে? সে তার সদ্য বলা কথাটা হজম করতে পারেনি বিধায় চোখ-মুখ শক্ত হয়ে আসে৷ রাকিবের কথার সঠিক ভাবার্থ সে না বুঝলেও আংশিক বুঝে ফেলেছে। তার দৃষ্টি যখন ক্রমশ নরম থেকে শক্ত হয়ে উঠে রাকিব পরিবেশ সামাল দেওয়ার জন্য হাল্কা হেসে বলে, “জোকস এ পার্ট৷ আসলে আমার পড়াশুনার যা অবস্থা, তাতে চাকরি-বাকরি কিছু তো পাব না এইজন্য তোমার বাসায় চা-কফি বানানোর জব অগ্রীম নিতে চাইছি।

মিরা এবারে কিছুটা স্বাভাবিক হলো। সে মৃদ্যু গলায় বলে, “ও তাই বলো! আমি অন্যকিছু ভাবছিলাম। ”

রাকিব তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য বলে, “কী ভাবছিলে?”

–” বিশেষ কিছু নয়। তবে আমার ভাবনা সত্য হলে তোমার সাথে আজই শেষ দেখা হত।”

রাকিব স্নান হেসে বলে, “শেষ দেখার কথা আগেভাগে বলে ফেলা উচিত না। পৃথিবীটা গোল। হয়তো ঘুরতে ঘুরতে কোন এক সময় ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে, স্থানে হঠাৎ মোলাকাত হলেও হতে পারে৷”

মিরা তার চোখের দিকে তাকালো। রাকিবের চোখে অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে সে৷ কিন্তু ধরতে পারছে না। হয়তো চোখের ভাষা জানা নেই জন্য রাকিবের চোখের চাউনির ভাষা সে পড়তে পারছে না। তবে তার কথাগুলো ভালো লেগেছে। আচ্ছা ইমান যখন তার থেকে বহুদূর চলে যাবে তখন কী তাদের আর দেখা হবে না? পৃথিবী বৃত্তাকার জন্য যদি কোন একসময় তাদের আবার সাক্ষাৎ হয়? সে চা টেবিলে রেখে বলে, “আমি তেমন একটা চা খাই না। কিন্তু লাস্ট কিছু দিনে চা বানাতে বানাতে টি-এক্সপার্ট হয়ে গেছি৷”

— “তোমার ফ্যামিলির সবাই কী টি-লাভার?”

–“না একদম না। বড় আব্বু তো দুধচা খান না। মা খায় শুধু তাও একবেলা।”

— “তাহলে কার জন্য তুমি চা বানাতে বানাতে এক্সাপার্ট হয়ে গেলে?”

মিরা মুখ ফোসকে বলে দেয়,” ভাইরাস তো দিনে চার-পাঁচ বার চা-কফি খায়৷”

রাকিব শব্দ করে হেসে বলে, “আজকাল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াও চা পান করে। বাহ্! আমাদের সময় তো ওদের অনুবিক্ষণযন্ত্র দিয়ে দেখতেই বেগ পেতে হত৷”

মিরা সামান্য লজ্জা পেল। ভাইরাস সে ইমানকে মনে মনে ডাকে। কিছু মনের কথা কাউকে বলতে ইচ্ছে হয় না। এই কথাটাও তেমনি তার একটা মনো-সিক্রেট কথা। অথচ রাকিব শুনে ফেলল৷

সে অবশ্য চুপ রইল। রাকিব প্রসঙ্গ পালটে বলে, “ভাইরাসরা যখন তোমার হাতের চা খাওয়ার সৌভাগ্য পাচ্ছে, আমি নাদান হোমো-সাপিয়েন্স কী তোমার হাতের চা খাওয়ার সৌভাগ্য রাখতে পারি না?”

সামান্য একটা চায়ের আবদার করল রাকিব তবুও এতে যেন মিরার অস্বস্তি ও রাগ হতে লাগে। অথচ, ইমান! সে তো এতো সুন্দর করে অনুরোধ করেই না, বরং এসেই ক্যাচক্যাচ করতে থাকে চা দেও, চা দেও করে। কান ঝালাপালা করে দেয়৷ তখন অবশ্য মিরা বিরক্ত হয়৷ প্রচুর মেজাজ খারাপ হয়৷ কিন্তু রাগ হয় না। বরং মনে হয়, তাকে চা বানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব একান্ত মিরার। আর মিরাও চা বানাবে কেবল তার জন্য।

রাকিব তার ভাবনার ঘোর ভাঙ্গিয়ে দিয়ে বলে, “আজকে সকালে আমরা প্লান করেছি নদীর তীরে যাব। তুমিও জয়েন করে। ওখান থেকে ঘুরে তারপর বাসায় যেও৷”

–” বাসা থেকে নিতে চলে আসবে।”

— “না, না। কালকে চাচী বলছিল ভাবীর পরিবার বিকেলের পর আসবে৷ এখানে ডিনার করবে। আর আমরা লাঞ্চ করেই ব্যাক করব৷”

— “কে কে যাবে?”

–” আমরা কাজিনরা আর আমার একজন ফ্রেন্ড৷ তবে ভাইয়া-ভাবী যাবে না৷”

–” তাহলে আমিও না যাই৷”

রাকিব এবারে কিছুটা থেমে বলে উঠে, ” ভাইয়া যাবে না কারণ তার নতুন বিয়ে হয়েছে। আর ভাবী যাবে না কারণ সে নতুন বউ। তুমি তো আর নতুন বউ না। এটা তো আর তোমার শ্বশুড়বাড়ি না যে তুমি গেলে লোকে বাকা নজরে দেখবে। তুমি আসতেই পারো আমাদের সাথে । দেখবে ভালো লাগবে।”

মিরা খানিকক্ষণ চিন্তা করে,” ওকে” বললো। অনেকদিন ধরেই একটু নিরিবিলি কোথাও যাওয়া হয় না। এইচএসসির আগে সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকত সে। পরীক্ষা শেষ হতেই আপুর বিয়ে নিয়ে মাতামাতি। কাজেই শান্ত, প্রকৃতির ধারে অনেকদিন যাওয়া হচ্ছে না। আজ ওদের সাথে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গিয়ে ঘুরে আসলে মন্দ হয় না৷

_______________________________

নিউইয়র্কে তখন কেবল সন্ধ্যা নামলো। সূর্য হেলেদুলে বিদাই জানাচ্ছে এনওয়াইসিকে। জুই বিশাল বড় থাই দিয়ে ঘেরা জানালার দিকে তাকালো। তার অফিসের কেবিন থেকে চমৎকার দেখা যায় সানসেট। ভালোই লাগে দেখতে। সানসেট দেখতে দেখতে সে কফিতে চুমুক দিল। এরপর আপনমনে বিড়বিড়িয়ে বলে,” সূর্যমামা, আপনি নিশ্চয়ই এখন মিস্টার খানের দেশের দিকে যাচ্ছেন। তাহলে আমার তরফ থেকে একটা বার্তা সঙ্গে নিয়ে যান। কী বার্তাবাহক হবেন তো?” তারপর এক পলক সূর্যের দিকে তাকালো। সূর্যের তেজ ক্রমশ কমে যাচ্ছে৷ জুই তাকাতেই কাঁচ ভেদ করে একটা আলোককণা ঝিলিক মেরে উঠে। বিষয়টা সম্পূর্ণ কাকতালীয় তবুও জুই যেন এ ঘটনায় একদম তেইশ বছরের তরুণী থেকে কিশোরী বনে গেল। সে হাততালি দিয়ে এক গাল হেসে বলে, ” সূর্যমামা মিস্টার খানকে বলে দিয়েন, তাকে আমি খুব করে ভালোবাসি৷ সে যেন সবসময়ই আমার থাকে৷ আর জলদি আমার কাছে ফিরে আসতে বলবেন৷”

সূর্য ঢলে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটু একটু করে তার ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করে। আজকে অবশ্য সানি ডে ছিল। তবুও সূর্যের তেজ কমে যাওয়ার পর থেকে পরিবেশ কিছুটা শীতল হতে শুরু করেছে৷ সে ল্যাবটপ বন্ধ করে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিল। আজকের জন্য কাজ শেষ। আপাতত তার ছুটি। সে কেবিন থেকে বের হলো। অফিস এতোই নীরব যে তার হাইহিলের টুকটুক আওয়াজ ছাড়া আর কোন শব্দই কানে আসছে না। সে সোজা মিস্টার পিটারের রুমে ঢুকে গেল৷ মিস্টার পিটার তার বাবা হয়৷ তবে নিজের বাবা না। সে এডাপ্টেড ডটার হয় তার৷

পিটার মশাই তখন কাজে মগ্ন ছিলেন। জুইকে রুমে প্রবেশ করতে দেখেই সে হেসে দিয়ে বলে, “হাই মাই প্রিন্সেস!”

জুইও বিনিময়ে হেসে বলে, “হাই হ্যান্ডসাম!”

পিটার চশমা খুলে হাসতে হাসতে বলে, “আমি বুড়ো আর হ্যান্ডসাম কই? হ্যান্ডসাম তো তোমার বয়ফ্রেন্ড।”

জুইয়ের মুখ মুহূর্তে কালো হয়ে গেল। মলিন হলো তার হাসি। সে মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,” ও আমাকে কোনদিন প্রোপোজই করলো না৷ অফিশিয়ালি আমরা রিলেশনে নেই৷”

পিটার অবাক হয়ে বলে, “লাস্ট সামার তোমরা ডেটিং করোনি?”

জুই কিছুটা লজ্জা পাওয়া গলায় বলে,” ওটা ডেট ছিল না, পাপা। আমরা একসাথে বিজনেস মিটিং এ গিয়েছিলাম। এন্ড লাকিলি ওয়েদার খারাপ হলো। দেন তিনদিন টেক্সাস এ থেকেছি একসঙ্গে।”

–” আই সি৷”

— “বাট ওই তিনটা দিন আমার জন্য শ্রেষ্ঠ ছিল।”

পিটার হাসল। এরপর বলল, ও নাই জন্য সব কাজের প্রেশার আমার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এই বুড়ো বয়সে কীভাবে এতো ধকল নেই বলো তো?

জুই তড়িঘড়ি করে বলে, ওকে চলে আসতে বলো৷

— বললেই কী আর আসবে? কতদিন পর ছুটি নিয়েছে৷

জুই বলে উঠে, ওর জন্য কাজই সব৷ইন ফ্যাক্ট আমার চেয়েও কাজকে ও বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সো কাজের কথা শুনলে ঠিক সব ফেলে চলে আসবে। তুমি একটা মেইল দাও ওকে। আমার সিউর ও তোমার কথা ফেলবে না।

পিটার ভাবতে থাকলো। আসলেই এবারে একটা মেইল দেওয়া উচিত ওকে। সে আর লোড নিতে পারছে না৷ পিটার সাহেব সঙ্গে সঙ্গে ল্যাবটপের স্ক্রিনে মেইল অপশন বের করে একটা ফরমাল মেইল দেখা শুরু করে দিলেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটা পাঠিয়ে দিলেন। মুহুর্তের মধ্যে মেইল ডেলিভার হলো সুদুর বাংলাদেশে। পিটার বহুকষ্টে ইমানের দেশের নাম উচ্চারণ করল। তাও ভুলভাবে সে প্রোনাউন্স করে। ভাংলাদেশ। সে এই দেশটাকে চেনেই ইমানের দেশ হিসেবে। অবশ্য এগারো সালে ক্রিকেট ওয়াল্ডকাপের সময় প্রথম এই দেশের নাম শুনে সে। তবুও সে বাংলাদেশ বলে না সবসময়ই বলে ইমানের মায়ের দেশ।

__________

বেলা এগারোটা। মিরা ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার ফোন হ্যাং মেরে অফ-অন করছে। চালু হচ্ছে না। মোবাইল তার নস্ট হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু তবুও গুতাগুতি করে সে সর্বক্ষণ ফোনেই মাতোয়ারা থাকত। আজ যখন একদমই কাজ করছে না তখন তার মন খারাপ হলো। নিউ ফোন কিনতে হবে। ভার্সিটি উঠলেই সে নতুন মোবাইল নিবে৷ মোবাইলটা ব্যাগে ঢুকিয়ে সে সোনালী আপুর কাছ থেকে পারমিশন নিল বুড়িগঙ্গার তীরে যাওয়ার জন্য। আপু অবশ্য তাকে মানা করল না। অগত্যা সে রাকিবের কাজিনদের সঙ্গে রওনা দেয়৷ যাওয়ার পথে মাইক্রো গাড়ি দিয়ে সবাই একসঙ্গে যাচ্ছিল। অস্বস্তি লাগেনি তার৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন রাকিব তার পাশের সীটে এসে বসে তখন সে বিব্রতবোধ করে। এবং আরো একটা বিষয় লক্ষ্য করে তাহলোঃ রাকিব যখন তার পাশে বসলো, তখন ওর কাজিনদের মধ্যে চাপা উত্তেজনার ঢল বয়ে গেল। কে যে একটা হিন্দি রোমান্টিক গান ছেড়ে দিল। যেটা মিরার একদমই ভালো লাগলো না। এবং ক্ষণেই সে চকিতে উঠে। একে এক দুই মেলাতে চেষ্টা করে কিন্তু মেলাতে পারছে না হিসাব৷ আজ সকালেই রাকিব আর প্রান্ত ভাইয়ের এক পিচ্চি কাজিন তাকে ভাবী বলে ডেকেছিল নাস্তা খাওয়ার সময়ে। মিরা ভেবেছে ছোট মানুষ তাই সোনালী আপু আর তার মধ্যে গোলমাল করে ফেলেছে। তাই তাকে শুধরে দিয়ে বলেছিল “আমি ভাবী না তোমার।” তখন পিচ্চিটা মিচকা হাসি দিচ্ছিল। সে আমলে নেয়নি। এখন একে এক যোগ করে মনে হচ্ছে এখানে আসা উচিত হয়নি৷ সে ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে যাচ্ছে কিন্তু নরমাল থাকার চেষ্টা করছে। রাকিব একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, কোন সমস্যা আছে কীনা। সে উত্তর দেয়নি।

বুড়িগঙ্গার তীরে এসে পৌঁছে বারোটার দিকে। মাথার উপর সূর্য তখন। গরম লাগছে কিছুটা৷ কিন্তু সেই চির পরিচিত দৃশ্য দেখা গেল। তীরে সারি সারি নৌকা, বোট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাশেই ধোপারা কাপড় ধুতে ব্যস্ত এবং ড্রেন দিয়ে কালো ময়লা নদীতে নির্গত হতে দেখা যাচ্ছে দূর থেকে৷ চায়ের দোকানও দেখা যায় কিছুদূরে৷

সবাই নৌকা ভ্রমণ করতে চাইছিল জন্য রাকিব ইঞ্জিন চালিত একটা বড়সড় নৌকা ঠিক করল। সেখানে হৈচৈ করে তার কাজিনরা বসে পরে। এবং প্রতিটা সীট দখল হয়ে যায়। সে আরো একটা বৌঠা চালিত নৌকা ঠিক করে। কিন্তু কেবল তারা দু’জনই অবশিষ্ট রয়ে গেছে৷

মিরা বলে, একা একা কেন যাব আমরা? ওদের সঙ্গে যাই৷

রাকিব হেসে বলে, দুইজনে একলা কীভাবে হয়?

সে প্রশ্নের পালটা জবাবে কিছু বলে না। বরং সাহস জুটিয়ে নৌকায় বসে। যা হবে তা দেখা যাবে।

রাকিব উঠে বসতেই মাঝি নৌকা চালানো শুরু করে। আস্তে আস্তে নৌকা বেশ কিছু দূর চলে যায়। নদীর মাঝে নিরিবিলি পরিবেশ। আশেপাশে অবশ্য নৌকা চলছে। মিস্টি হাওয়া বইছে। বাতাসের জন্য আর গরম অনুভব হচ্ছে না৷ চারপাশে পানি আর পানি। দূর থেকে ঘরবাড়ি গুলোকে একটুখানি লাগছে দেখতে। চোখ যতোদূর যায় নদীও ততোদূর৷ একদম দিগন্ত যেন! খালি আকাশের নিচে ভালোই লাগছিল তার৷ পানির কলকলানির আওয়াজ আর বৈঠার শব্দে সে মুগ্ধ হচ্ছিল। বাতাসে উড়ন্ত চুলগুলোকে সে সামলাতে ব্যস্ত।

নীরবতা ভেঙে রাকিব বলে উঠে, “মিরা কিছুদিন ধরেই তোমাকেই একটা কথা জানাতে চাই। আসলে কথাগুলো না বললে মনের উপর চাপ পড়ছে৷”

সে নড়েচড়ে বসে বলে, কী কথা?

রাকিব হাল্কা করে কেশে গলা পরিষ্কার করে বলে, আসলে আমি জানি না তুমি কীভাবে বিষয়টা নিবে। বাট আমি বলতে চাই৷

— বলো৷

রাকিব একবার আকাশের দিকে তাকালো এরপর তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, আই লাভ ইউ।

মিরার বুকের ভেতর যেন ব্রজপাত ঘটে গেল। মস্তিষ্ক যেন সচল থেকে অকেজো হয়ে গেল৷ নিশ্বাস ঘন হতে লাগে। ঘাম ছুটে যায় কপাল বেয়ে৷

রাকিবের শেষ বাক্যটা তার কাছে খুব কুৎসিত আর বিষাক্ত লেগেছে। নিজের কাছে নিজেই ছোট হলো যেন। কেমন সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করে। ওড়না খামচে ধরে সে।

রাকিব বলে উঠে,” তুমি সময় নাও। আমি অপেক্ষা করব৷ আমি আসলে প্রথম থেকেই তোমাকে পছন্দ করি৷ আমি চাই না রোজ তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। ডেইলি মিট কর। শুধু চাই আমাকে ভালোবাসো।”

মিরা কঠিন চোখে তাকিয়ে রইল। মুখে কিছু বললো না। কথাগুলো জড়িয়ে আসছে জন্য নির্বাক রইল। বড় তৃষ্ণা পেল তার৷ রাকিবের কথাগুলো তার কানে বিষের কাঁটার মতো বিঁধছে৷

রাকিব চুপ হয়ে গেল৷ সেও চুপ থাকল৷ তার কেন যেন মনে হচ্ছে, রাকিবের কথাগুলো কারো অধিকার হনন করছে যার জন্য কেবলমাত্র মিরা নিজে দায়ী৷ সে নিজের চোখের দৃষ্টি নিবন্ধ করে হাতের আঙ্গুলে জ্বলজ্বল করতে থাকা সোনার রিংটার দিকে।

দুই মিনিট পর মিরা বলে উঠে, মামা নৌকা ঘুরিয়ে পারে নিয়ে যান৷

মাঝি বলে উঠে, আইচ্ছা আফা৷

রাকিব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। সে আশা করিনি মিরা মাঝ পথে এভাবে ফিরে যাওয়ার আদেশ দিবে৷ একটা অপরিচিত মানুষের সামনে ঝামেলা করতে চায় না জন্য সে চুপ রইল। তাদের ঘাটে ফিরে যেতে দেখে ইঞ্জিন চালিত নৌকাও ফিরে আসতে লাগলো। ইঞ্জিনের ভটভট আওয়াজে মিরার মাথা ধরে গেল।

নৌকা ডাঙ্গায় ফিরতেই মিরা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, আমি যাই তাহলে।

রাকিব বলে, সেকী কেন! ঘুরাঘুরি তো শেষ হয়নি৷

— তোমরা ঘুরো৷ আমি যাই৷

— তোমার আপু কী ভাববে? তোমাকে ফেলে এভাবে রেখে এসেছি। তুমি চল আমাদের সঙ্গে।

মিরা কঠিন চোখে তাকিয়ে বলে, আমি ফেলনা না যে আমাকে ফেলে রেখে আসবে। নিজের পথে নিজে আগাতে পারি। আর এটা আমারই এলাকা।

— মিরা আমি সর‍্যি……..

মিরা তার কথা কর্ণপাত না করে সামনে আগায়। জোরে জোরে হেঁটে সে মেইন রাস্তায় আসে। সে আসলে রাকিবের থেকে দূরে পালাতে চায়৷ অসহ্য লাগছে তার৷ এলোমেলো পায়ে চলছে সে৷ আশেপাশে নজর নেই তার। চোখে জলের বৃষ্টি নেমেছে যেন৷ সে কী খুব খারাপ মেয়ে? তাকে দেখে কীভাবে রাকিব প্রেমে পড়ল? তার মাথা ভোভো করছে। নিজের উপর রাগ হচ্ছে। নিশ্চয়ই সে খারাপ মেয়ে। নাহলে অন্য একটা ছেলের নজর কাড়লো সে কীভাবে?

আচমকা হর্ণের শব্দে তার খেয়াল হলো সে মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছে। এবং সজোরে একটা মোটরবাইক তার দিকে ধেয়ে আসছে। তার হাত-পা কাঁপা শুরু করে দিল৷বুদ্ধিমত্তা লোপ পেল তার। সরে যে আসবে এই সময়টাও পেল না। তার আগেই সব অন্ধকার লাগতে শুরু করে। দাঁতে দাঁত চেপে সে চোখ বন্ধ করে। কিয়ৎক্ষণ পর সে নিজের পায়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। ব্যথায় আর্তনাদ বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। ব্যথায় সে ক্রমই জ্ঞান হারাতে থাকে৷ আশেপাশের সবকিছু ঝাপসা লাগে। চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করে। আওয়াজগুলো মনে হচ্ছে দূর থেকে ভেসে আসছে৷ আচ্ছা সে কী মারা যাচ্ছে?

চলবে৷

[ পারসোনাল একটা টপিক নিয়ে একটা পোস্ট করতে চাইছি।কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হচ্ছে আমি সরল মনে আপনাদের সবাইকে আপন ভাবলেও,, আপনারা আমাকে আপন ভাবেন কীনা! আমার ব্যক্তিগত কথা শেয়ার –কারো বিরক্তির কারণ হোক এটা চাই না। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here