ফেইরিটেল পর্ব-২

0
3314

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–2

নিজের রুমে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে মিরা। সে ইমানের কর্ম-কাণ্ডে হতবাক। ছেলেটা তার সালোয়ার কামিজ এভাবে পানিতে চুবিয়ে দিবে এটা সে কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি৷ তার মাথায় ঢুকছে না সে এখন কী করবে? কোন জামা পরে যাবে সে আপুর হলুদে? এমন সময় ইরা চা হাতে নিয়ে ফেরত আসলে, ইমান চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুমের বাইরে চলে যায়। এদিকে হলুদের প্রোগ্রামে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। ইরা রেডি থাকলেও মিরা আর রেডি হলোনা। সে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মূর্তির মতোন। বড় আব্বুর ফোন আসায় ইরা তাকে তাড়া দিচ্ছে।তাদের জন্য গাড়ি পাঠানো হয়েছে। সেই গাড়ি করে তারা যাবে। ড্রাইভার দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। অথচ মিরার কোন হেলদোল নেই। সে এক পাও নড়ে না। রেডিও হয়না। ইরা ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে, আপু চল বের হবো আমরা? রেডি হও। লেইট করলে বড় আব্বু বকবে।

মিরা একবার রাগী চোখে ইরার দিকে তাকিয়ে প্রায় চিৎকার দিয়ে বলে, আমি যাব না। তুই যা।বের হ এক্ষুনি।

— আরে রেগে যাচ্ছো কেন? আর যাবে না কেন? আপুর হলুদ বলে কথা।

— হ্যাঁ যাব না মানে যাব না। তুই যা।

ইরা যেন আকাশ থেকে পড়ল। এই হলুদ প্রোগ্রাম নিয়ে তাদের উত্তেজনা সেই চারমাস ধরে।আজকাল কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হওয়ার দরুণ বিয়েতে একদম ই মজা হয়না। সেন্টারে গিয়ে ফটোশুট, খাওয়া-দাওয়া এই করেই বিয়ে পার।তাই যা মজা করার হলুদের দিনই করবে বলেই কত-শত প্লান তাদের। অথচ মিরা আপু নাকি শেষ মুহুর্তে যাবে না।

ইরা ঢোক গিলে বলে, আপু তুমি কী অসুস্থ?

মিরা পুনরায় রাগ দেখিয়ে বলে, কথা কানে যায় না তোর? বের হ আমার রুম থেকে।

ইরা শেষের কথায় সামান্য অপমানবোধ করে। এই রুমটা তাদের দুইজনেরই৷ অথচ আপুর রাগ উঠলেই এই রুমকে নিজের বলে দাবী করবে৷ সে মন খারাপ করে বেরিয়ে গেল।

ইরাকে বকে দিয়ে মিরা নিজেও সামান্য কষ্ট পেল। অন্য কারো রাগ ইরার উপর ঝাড়া ঠিক হলো না। বেচারা কষ্ট পেয়েছে ভারী! মিরার ও রাগ এবং দুঃখ হচ্ছে। সোনালী আপুকে এটা-সেটা বলে পরবর্তীতে বুঝানো যাবে৷ কিন্তু এই মুহূর্তে সে হলুদের প্রোগ্রামে যেতে চায় না৷ ইমানের মুখোমুখি হওয়ার আর ইচ্ছা হচ্ছে না তার। কিন্তু পরমুহুর্তে সবাই তাকে ছাড়া আনন্দ করছে এটা ভাবতেই তার চোখে পানি জমে যাচ্ছে। সে নাক টেনে বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসলো। প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে বাসা নীরব হয়ে গেল। মানে ইমান ইরাকে তাদের সাহায্যকর্মী ফুলির মাকে নিয়ে চলে গেছে। গেলে যাক ছেলেটা। আজীবনের জন্য চলে গেলেই মিরা খুশি।

_____________

পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে ইমান ড্রাইভার চাচার সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠেছে। তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে পদ্মার ইলিশ নিয়ে৷ কথার মাঝে যখন ইরাকে একা মেইন গেইট দিয়ে বেরুতে দেখল তখনই তার ভ্রু আপনা-আপনি কুচকে যায়ব।সে ইরাকে প্রশ্ন করল, তোমার বড় বোন কই? আর কত সাজবে?

ইরা হতাশা ভরা কণ্ঠে বলে, ভাইয়া আপু না যেতে চাইছে না। প্রচুর রেগে আছে। আমাকে এমনি এমনি বকা দিল। ও যাবে না। আমাদের চলে যেতে বলেছে।

ইমান ড্রাইভিং সীটের পাশের সীটটার দরজা খুলে বসে সীটবেল্ট লাগিয়ে বলে, উঠে পড়ো।দেরি হচ্ছে৷

ইরা তার কথামতো ফুলির মাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ি ইমানের আদেশ মতো চলতে শুরু করল।ফুলির মা হা-হুতাশ করে বলতে লাগলো, বড়মনি আইলো না ক্যান? বড়মনির না কী শখ ছিল হলুদে স্টেজে গিয়ে নাচবে। ইন্ডিয়া থেকে জামা কিনে আনাইলো। বড়মনির যে থাইকা থাইকা কী হয়! আগুনের ফুলকার মতো রাইগা উঠে। মনে হয় জীনে আচড় মারে।

গাড়ি মেইন রাস্তায় উঠতেই ইমান ড্রাইভারকে ইশারায় গাড়ি থামাতে বলল৷

_____________

মিরার মাত্র চোখে ঘুম লেগেছিল ওমনি ডাকাত পড়ার মতো বেল বাজার শব্দে তার ঘুম ছুটে যায়। সে ধড়ফড় করে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ছয়টা বাজে। এই সময়ে তো সবার হলুদের প্রোগ্রামে থাকার কথা। এখন তাহলে কে আসবে? আপন ভাবনায় মজে থাকতে থাকতে দ্বিতীয়বারের মতো বেল বেজে উঠলে, মিরা বিরক্ত হয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে সামান্য ভড়কালো৷ দরজার ওপাশে ইমান দাঁড়িয়ে আছে৷ তাকে এই অবেলায় দেখে মিরা যেন অবাকই হলো৷ হলুদের প্রোগ্রাম ফেলে এখানে কী করছে সে?

ইমান তাকে পাশ কাটিয়ে বাসায় ঢুকে পড়ে সোজা মিরাদের রুমে গেল। মিরাও তার পিছু এসে নিজের রুমে এসে থামল। ততোক্ষণে ইমান বেশ মনোযোগ দিয়ে মিরার আলমারি খুলে তার জামা-কাপড়ের সমাহার দেখায় ব্যস্ত৷ মিরা হেঁটে হেঁটে ইমানের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল, আপনি আমার জামা-কাপড় ধরছেন কেন?

ইমান উত্তর না দিয়ে আলমারির তলানি থেকে একখানা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি বের করে এনে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, যাও রেডি হও৷

মিরা এতোক্ষণে তার কর্ম-কাণ্ডের পিছনের কারণ উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো। সে মনে মনে খানিকটা পুলকিত হয় যে এট লিস্ট কেউ তো এসেছে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

কিন্তু মুখে বলল, আমি যাব না। আপনি আমার জামা নষ্ট করেছেন বিধায় আমার যাওয়ার ইচ্ছা মরে গেছে। এটাই তো চাইছিলেন?

ইমান হালকা হেসে বলে, আমাকে দোষ দাও কেন? নিজে চাইছিলে না যে আমি হলুদে যাই
যার কারণে আমার স্যুট কেটে নষ্ট করেছো।

মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলে, মিথ্যুক। আমার এমন কোন ইচ্ছা ছিল না। আপনার উপর ভীষণ মেজাজ খারাপ আমার৷ আপনি অসভ্য একটা লোক।

ইমান ফিচেল হেসে বলে, কী অসভ্য করলাম আবার?

— এখন তো আপনি সাধু।

— সময় নষ্ট করো না, যাও শাড়ি পরে আসো। নাকি শাড়ি পড়তে জানো না?

মিরা বলল, আমি পারি।

— গুড। বাঙ্গালী নারীর ভূষণ হলো শাড়ি
সবসময়ই শাড়ি পরবে। বুঝেছো? এবার পাঁচ মিনিটের মধ্যে শাড়ি পরে আসবে। কেমন? সময় কিন্তু মাত্র পাঁচ মিনিট।

___________

মিরা যখন শাড়ি পরে বের হলো তখন অলমোস্ট সাতটা বাজে। ইমান অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছে। তাকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালো এবং বিরক্তভরা কণ্ঠে বলে, এতোক্ষণে যেতে মন চাইল?

মিরা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, আমি তো যেতে চাইনি, আপনিই জোর করছেন।

— আশ্চর্য!

বলেই সে মিরার হাত ধরে বাসার বাইরে টেনে এনে মেইন গেইট লক করতে করতে বলে, রিকশা করে যেতে হবে৷ গাড়ি দুটোই কমিউনিটি সেন্টারে।

সিড়ি বেয়ে নেমে ইমান এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা রিকশা ডাক দিয়ে এনে উঠে বসলো। মিরাকেও ইশারায় বসতে বললে, সে খানিকটা বিব্রতবোধ করে। পাশাপাশি এতো কাছাকাছি তার সঙ্গে বসতে মিরার বড্ড বাঁধছে। মিনিট দুই পার হয়ে গেলেও মিরা রিকশায় না উঠলে, ইমান নিজে নেমে এসে বলে, তুমি যাও এই রিকশা করে। আমি আসছি।

কথাটা শেষ করেই সে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দিল। এবং মিরার দিকে একবিন্দু না তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। এবারে মিরা রিকশায় উঠে বসে কারন আসলেই সে ইমানের সঙ্গে এক রিকশায় যেতে ইচ্ছুক ছিল না। রিকশায় বসামাত্র রিকশা যেই না চলতে শুরু করবে ওমনি ইমান গম্ভীর গলায় ডেকে উঠে, “মিরা”

আচমকা নিজের নাম শুনে তার মুখ থেকে শুনে বেশ অবাক হয় মিরা। অদ্ভুত একটা অনুভূতি জাগ্রত হলো। এতো সুন্দর করে তার নাম ধরে কেউ কোনদিন বোধহয় ডাকেনি৷

ইমান এগিয়ে এসে রিকশার চাকা মধ্যে দিয়ে তার শাড়ির আচল বের করে এনে হাতে গুজে দিয়ে বলে, আঁচল সামলাতে শিখ।

মিরা অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে বলে, থ্যাংক ইউ। আপনি চাইলে এই রিকশায় আসতে পারেন।

— আমি অপমান ভুলি না।

— আশ্চর্য! অপমান কই করলাম?

ইমান কথার জবাব না দিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলে, আগান।

রিকশা চলছে। মিরা পিছন ঘুরে একবার ভাইরাসটাকে দেখে নিল। আজকে কেন যেন এইদিকে কোন রিকশা নেই। অন্তত এই মূহুর্তে কোন খালি রিকশা দেখা যাচ্ছে না। সে রিকশাওয়ালাকে থামাতে বলে, মামা আমি নামব৷
রিকশা থামান৷

রিকশাওয়ালা রিকশা থামায় বলে, আপা আপনি কী ভাইয়ের লগে ঝগড়া করছেন? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এতো রাগ ভালো না।

মিরা হচকচিয়ে উঠে।কথাটা কর্ণকুহরে যাওয়া মাত্র সে লজ্জা পায় খানিকটা। রিকশাওয়ালা মামা তাদের স্বামী–স্ত্রী কেন ভাবছে?

সে নেমে পড়ে ইমানের দিকে হাঁটা দিল। ইমান তাকে লক্ষ করেনি। সে ব্যস্ত রিকশা খোঁজায়।

মিরা নম্র সুরে বলে, রিকশা মনে হয় পাব না। চলুন হেঁটে যাই। কমিউনিটি সেন্টার তো একদম কাছেই।

ইমান তার কণ্ঠ শুনে সামনে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে, তুমি ফিরে এলে কেন?

— আপনি বিদেশ থেকে এসেছেন যদি একা একা রাস্তা হারিয়ে ফেলেন? এজন্য আপনার রাস্তা গাইড হিসেবে ফিরে আসলাম।

ইমান তার কথা শুনে হেসে দিয়ে বলে, আসলে তুমি আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের কাছে এটেনশান চাও।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here