#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–37
নীল রঙের মতো রঙিন বিকেল৷ আকাশে ধূসর মেঘের আধিপত্য আজ যেন চড়া। প্রকৃতি ঘিরে বিশুদ্ধ বাতাস সঙ্গে আর্দ্রতার ছোয়া। নির্বিশেষে আজকের আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক রুপ স্মৃতির মানসপটে আটকে রাখার ন্যায় অধিকতর সুন্দর। আলো ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। সন্ধ্যা নামতে আর বেশি দেরি নেই। হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় মিরার গোছালো চুল এলোমেলো হয়ে গেল। চুলের গাছি মুখে এসে আছাড় খেল। সে বিন্দুমাত্র বিরক্ত হলো না। তার দৃষ্টি সামনের রোডের দিকে। পরিষ্কার ফকফকা পিচঢালা রাস্তার ধারে বেশ যত্ন নিয়ে ছেটে অচেনা গাছ উঁকি মারছে। পাশেই ইয়া বড় একটা রেড ম্যাপেল ট্রি। ম্যাপল গাছটার শেপও খুব গোছালো যেন এটার জন্ম থেকেই কেউ খুব আদর-যত্ন নিয়ে এসেছে৷ অথচ এটা বেওয়ারিশ রাস্তার ধারের গাছ। কারো বাড়ির বাউন্ডারির মধ্যে পড়ে না। তবুও এই এরিয়ার সৌন্দর্য যেন রেড ম্যাপেল ট্রিটার জন্য শতগুণ বেড়ে গেছে৷ খুব অদ্ভুত লেগেছে গাছটাকে। লালে ভরা সম্পূর্ণ গাছটা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে আগুন লেগেছে। বেশি আর্কষনীয় হচ্ছে, গাছের চারপাশে সাদা সিমেন্ট দিয়ে বাধাই করা। গাছের নিচে সবুজ রংয়ের একটা বেঞ্চ৷ বেঞ্চটা লাল পাতায় ভরে গেছে। সবুজ-লাল দেখেই তার বাংলাদেশের পতাকার কথা মনে হলো৷ বাতাসে উড়ে উড়ে রাস্তায়ও ম্যাপেল ট্রির পাতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে। এমন কী প্রচন্ড বাতাস প্রবাহিত হলে, এ বারান্দা অব্দি পাতা উড়ে আসে। চকচক করা পাতা গুলোর দিকে তাকিয়ে সে আনমনে গভীর ভাবনায় ডুব দিল৷ আজ মায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হলো। মিরার কেন যেন মনটা ছটফট করছে৷ মায়ের ভয়েজ শুনে মনে হলো সে অসুস্থ। ইরার সঙ্গে কথা হয়নি। বাসায় ছিল না ও৷ কিন্তু মা খুব খারাপ একটা সংবাদ দিয়েছে। ইরা নাকী ইয়ার লস দিবে৷ এবছর এসএসসি এক্সামে সে বসছে না। পরেরবার দিবে৷ হুট করে সে এমন কেন সিদ্ধান্ত নিল কে জানে? মাও তাকে জোর করছে না। সে বোধহয় আপাতত মানসিকভাবে এতো স্ট্যাবেল নেই যে ইরাকে কিছু বলবে বা বুঝাবে। নাহলে মা পড়াশোনার ব্যাপারে যে স্ট্রিক! মিরা মায়ের শাসনেই এসএসসিতে এপ্লাস পেয়েছিল। নাহলে তার মতো গাধী স্টুডেন্ট কোনকালেই এপ্লাস পেত না। ইরা অবশ্য মেধাবী। তাদের ক্লাসে এক থেকে দশের মধ্যে থাকে সবসময়। কথা হলো, মা বারবার তাকে একটা জব করার কথা বলছে। তার ভাষ্যমতে, বিদেশে জব খুব এভেইলেবেল।জব সেক্টর বৃহৎ। স্টুডেন্টরা আনায়াসে কাজ করে স্ট্যাডির পাশাপাশি। একটু খুঁজলেই বা চেষ্টা করলেই কাজ পাওয়া যায়৷ মিরা ভেবে পাচ্ছে না, মা আচমকা জব নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা কেন করছে? মামা কী কোন সমস্যা করছেন? কী জানি?তবে তারা নানাবাড়ি ফিরে যাওয়ায় মামা-মামী কিঞ্চিৎ বিরক্তই হয়েছিল। মামী তো বলে দিয়েছেই, এই বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর শ্বাশুড়ি কখনো নিজের ঘর ছাড়ে? এসব পাগলামী ছাড়া কিছু না৷ কিন্তু মা যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে আর ফিরবে না৷ নিউইয়র্ক আসার যাত্রা তার জন্য মোটেও সুখকর নয়। বরং হাজারো বেদনা বুকে চেপে সফর করেছে সে। আচ্ছা দূরে সরে এলে কী যন্ত্রণা কমে? মিরার মনে হলো যন্ত্রণা কমে না, বরঙ দূরত্ব যন্ত্রণার স্থিতিস্থাপকতা আরো বাড়িয়ে দেয় আপন হারে, আপন মাত্রায়। যন্ত্রণা পিছু ছাড়ে না, সুখ হারিয়ে যায়৷ অদ্ভুত জীবনের সব নিয়মাবলি! এতোকিছুর পরও মা ফোন কাটার আগে আবেগী গলায় বললেন, ” হাসি-খুশি থাকবি রে মা। তোরা হাসলে আমার কষ্ট নাই হয়ে যায়৷”
মায়ের কথা সে রাখবে। কষ্টের মধ্যে কেঁদে কেঁদে দিন পাড় করা জীবন না। বরং বুক ভার করা কষ্টেও মুচকি হেসে দিন অতিবাহিত করার নাম জীবন।
কিছু ছুড়ে ফেলার শব্দে মিরার ভাবনার সুতো কেটে যায়। সে ঘার ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো। কাচের থাই গ্লাস দিয়ে দেখা গেল, ওপাশে অর্থাৎ রুমের ভেতরে ইমান মুখ থমথমে করে একটা বেগুনি রঙের শার্ট মেঝেতে ফেলে দিল। ফ্লোরে আরো ছয়টা শার্ট পরে আছে। মিরা তার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলো। এই যে ইমান! ওর কী নিশ্চিত জীবন, সিকিউরড লাইফ। তাও সে কী ভীষণ বিরক্ত। কথায় আছে তো, সুখে থাকতে ভূতে কি*লা*য়, সুখের মর্যাদা মানুষ সুখে থাকতে দেয় না৷
দুপুরে সে মিরার হাতে দু’প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে আরাম করে নাক ডেকে পাঁচটা পর্যন্ত ঘুমালো। এখন সাড়ে ছয়টা বাজে। জনাবের গোছ-গাছ শেষ নেই৷ লাগেজ গুছাচ্ছে দেড় ঘন্টা ধরে। নিজের আলমারি থেকে প্রতিটা শার্ট বের করে ওয়াশরুমের আয়নায় গায়ের সঙ্গে মেলে ধরে দেখছে। যেটা ভালো লাগছে না সেটার স্থান সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোরে হচ্ছে। যেটা পছন্দ হচ্ছে, উনি সেই সার্ট ট্রায়াল দিয়ে দেখছে। এরপর সেকেন্ড রাউন্ডে কিছু শার্ট রিজেক্ট খেল৷
মিরা বারান্দা থেকে বের হয়ে এসে বলে, “আপনি কী এবার মিষ্টার ওলান্ডের জন্য নাম লিখিয়েছেন?”
ইমান ভ্রু কুচকে তাকালো৷ মিরা হেসে বলে, ” এতো সাজ-সরঞ্জাম করে লাভ নেই৷ আপনার দিকে কেউ তাকিয়েও দেখবে না।”
–” আর যদি কেউ তাকায়?”
–” আমার বিশ্বাস আপনার মতো বুড়ো মানুষের দিকে কেউ তাকাবে না। এদেশের মেয়েরা তো নয়ই।”
ইমানের মুখ কালো হয়ে আসল৷ সে মোটেও বুড়ো না। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার একমাসের মধ্যে জব পেয়েছে।নাহলে তার বয়সী ফ্রেন্ডরা এখনো বেকার আছে। ব্যাচেলর লাইফ ইঞ্জয় করছে। ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে না৷ বিয়ে কেউ করেইনি। এ থেকে বোঝা যায়, বয়স তার বেশি না৷ হ্যাঁ মিরার চেয়ে সে সামান্য বয়সে বড়। কিন্তু এটা তো তার দোষ না। বরং মিরার দোষ। ওকে কে দেরিতে জন্মাতে বলেছে? আগে জন্মগ্রহণ করলেই পারত। খামোখা তাকে বয়স্ক বলছে। নিজে দেরি জন্ম নিয়ে তাকে বুড়ো বলে। আচ্ছা বেয়াদব মেয়ে তো!
সে বলে উঠে, ” খবরদার আমাকে বুড়ো বলবে না৷”
— তাহলে কী খোকাবাবু বলবো?”
–” আশ্চর্য!”
–” সাতটা বাজতে চলল৷ আপনার কী যাওয়ার ইচ্ছা নাই?”
–” আমাকে তাড়ানোর এতো ব্যস্ততা কেন?”
–” আপনাকে সহ্য হয় না৷ অসহ্য।”
ইমান বিজয়ের হাসি হাসল। এরপর বলে, ” তিনদিন আরামে থাকবে৷”
এরপর দুটো শার্ট মিরার সামনে ধরে বলে, “কোনটা পরব?”
–” যেকোন একটা পরলেই হলো।”
–” না না। চুজ এনি ওয়ান।”
মিরা শার্ট দুটোর দিকে তাকালো। একটা কফি রঙের আর আরেকটা কচুপাতা রঙের। সে কচুপাতা রঙের শার্টটা পরতে বললো৷ ইমান সঙ্গে সঙ্গে কচুপাতা রঙেরটা বিছানায় রাখল এরপর কফি রঙের শার্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দেয়৷
মিরা অবাক হয়ে বলে, ” আরে আমি গ্রীন কালারেরটা চুজ করে দিয়েছি। কফি কালারেরটা কেন পরতে যাচ্ছেন?”
ইমান নিজের চুল ঠিক করে বলে, “এজন্যই এটা পরছি৷”
মিরা ভেংচি কাটলো। কতো হাড় বেয়াদব। তার পছন্দে পরবে না তাইলে আস্ক কেন করল?
খানিক বাদে ইমান কফি রঙের শার্ট পরে বের হলো। হাতা ফোল্ড করতে করতে সে জিজ্ঞেস করে, ” হাউ এম আই লুকিং? বল? বল? কটা ললনা পটবে? দুজন নাকী চারজন?”
মিরা আরেকবার ভেংচি কেটে বলে, ” আপনাকে কেমন লাগছে বলব?”
ইমান তখন পারফিউম মাখছিল। সে হেসে বলে, ” হলিউড হিরোর মতো?”
— পেঁচার মতো লাগছে। তিন রাত জাগা পেঁচার মতো।”
ইমান চোখ-মুখ কুচকে বলে, ” ইউ আর জেলাস।”
তখনই ইমানের ফোন বেজে উঠল। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখল জুইয়ের কল। সে রিসিভ করে। তাকে ফোন রিসিভ করতে দেখে মিরা সরে যায়।
ইমান ফোন রিসিভ করে বলে, ” আমি দশ মিনিটের মধ্যে বের হচ্ছি। আচ্ছা জুই আমাকে কী পেঁচার তো দেখতে লাগে?”
— কী বললে? পেচ? আই এম নট গেটিং ইউ।”
ইমান আমতাআমতা করে বলে, ” নাথিং। ”
উফ! এই মেয়েটার কথা সে সিরিয়াসলি কেন নেয়?
সে লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার সময় রুমে চোখ বুলালো। আশ্চর্য মিরা কোথাও নেই। বারান্দা চেক দিল। সেখানেও নেই। সেকেন্ডের মধ্যে কই গেল? নিচে গেছে মনে হয়? মিসের চৌধুরীর সঙ্গে তার আবার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু এখনই যেতে হবে? সে জানত না ইমান একটু পর বের হবে৷ গুডবাই পর্যন্ত বলে। সে কী এখন তার সঙ্গে কথা না বলেই যাবে? গুডবাই না বলেই যাবে? মুহূর্তে ইমান চকিতে উঠে। মিরার কাছ থেকে সি অফ করলে তার লাভ কী? মনটা এমন অবাধ্য হচ্ছে কেন? সে নিজের মনকে একটা গা*লি দিল৷ সে লাগেজ হাতে নিয়ে নিচে নামলো। নাহ হলরুমেও মিরা নেই। আনমনে তার মেজাজ চটে গেল। নিশ্চয়ই মিসেস চৌধুরীর রুমে আছে সে। অগত্যা ওনার রুমের সামনে গিয়ে ইমান দরজা নক করে৷ উনি দরজা খুলে হয়তোবা সামান্য চমকে উঠে।
ইমান বেশ সাবধানে সম্পূর্ণ রুম পরখ করে নেয়ব।সে আরেকবার হতাশ হলো। রুম তো পুরা খালি।
হাসনাহেনা বলে, “কিছু বলবে? তুমি কোথায় যাও?”
ইমান হাল ছেড়ে দেওয়া গলায় বলে, ” তিনদিনের জন্য টেক্সাস যাচ্ছি। এটা জানাতে এসেছি।”
হাসনাহেনা আকাশ থেকে পরল। ইমান কোনদিন তাকে বলেও যায়না কোথায় যাচ্ছে। শহরের বাইরে গেলেও বলে না৷ তাদের পরবর্তীতে অফিসে খোঁজ লাগিয়ে জানতে হয় সে কোথায় আছে৷ সেই ছেলে পায়ে হেঁটে তার রুমে এসে বলছে টেক্সাস যাচ্ছি। ভূতে ধরল নাকী?
ইমান দ্রুত কেটে পরে৷ কিন্তু হাসনাহেনা রুমের বাইরে এসে ইমানের পিছু নেয়৷ সাদ বাসায় নেই। তার রুম খোলা। লাইট নিভানো। বাকী রইল কিচেন। হাসনাহেনা সামনে থাকায় ইমানকে অভিনয় করতে হলো। সে কিচেনে গিয়ে এমন ভান ধরে যেন পানি খাচ্ছে৷ কিন্তু আফসোস মিরা কিচেনেও নেই৷ একটা মানুষ মুহুর্তের মধ্যে হাওয়া হয় কেমনে? হাউ?
হাসনাহেনাকে দেখিয়ে সে এক গ্লাস পানি খেল। এরপর মেকি হেসে বলে, ” যা গরম পরেছে।”
এখন স্টোররুম বাকি। স্টোররুমে গেলে মিসেস চৌধুরী সিউর তাকে পাগল বলবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। কোন দরকার নেই মিরার সঙ্গে কথা বলার। ওর কাছ থেকে সি অফ না নিলে সে মরে যাবে না৷
ইমান লাগেজ হাতে বেরিয়ে পরে৷
________________
জুইয়ের কল আসায় মিরা নিচে নেমে আসে৷ কিন্তু নিচেও ভালো লাগছিল না তার। তাই বাসার বাইরে বের হয়ে বারান্দা থেকে দেখা ম্যাপেল ট্রির কাছে এসে বেঞ্চে এসে বসেছে। তখন থেকেই সে বসে আছে। এতো সুন্দর লাগছে গাছটাকে মাথার উপর থেকে দেখতে। বেঞ্চে বসে সে একধ্যানে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা পিছন থেকে বেশ জোরে কেউ তার নাম ধরে ডাকে। সে পিছনে ঘুরে দেখে ইমান বাসা থেকে বেরিয়েছে৷ লাগেজ হাতে। কফি রঙের শার্টে মারাত্মক সুদর্শন লাগছে তাকে৷ আজ সত্যি সত্যি দু-চারজন ললনা তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে পারে৷
মিরা হাতের ইশারায় তাকে বলে, কী হয়েছে?
এতে সামান্য বিব্রত দেখালো তাকে। এতো জোরে কেন ডাকল সে?
মিরা উঠে দাঁড়ায়৷ ইমান তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, ” তুমি এখানে? আর আমি সারা বাড়ি হন্ন হয়ে খুঁজছি তোমায়।
মিরা ভারি অবাক হয়ে গেল এবং মিহি কণ্ঠে বলে, “আমাকে খুঁজছেন কেন? ইউ হ্যাভ নো বিজনেস উইথ মি।”
ইমান মনে মনে বলে আমাকে বিজনেস দেখাবা না৷ আমি লাভ-ক্ষতির ধার ধরি না৷ মুখ বলে, ” যাওয়ার আগে দেখা করে যেতে চাইছিলাম। তুমি সাবধানে থেকো৷ কোন দরকার হলে কল দিও।”
মিরা সামান্য হাসল৷ ততোক্ষণে নিউইয়র্কের বুক থেকে সূর্য বিদায় নিয়েছে৷ ল্যাম্পপোস্ট মাত্র জ্বলে উঠে। ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোয় আশপাশ জ্বলজ্বল করতে লাগলো। ল্যাম্পপোস্ট ঘিরে কিছু ছোট পোকা উড়াউড়ি করতে লাগলো। ম্যাপেল ট্রির ডালে দুটো পাখি এসে বসেছে। মনে হিয় আজ রাত্রীযাবত এ গাছের ডালে করবে৷ ওরা দুষ্টুমি করে ডানা ঝাপ্টাচ্ছে৷ দূর থেকে মেঘের গুড়ুম-গুড়ুম শব্দ কানে আসছে৷ আকাশের এক পাশে বিদ্যুৎ তেড়ছাভাবে বয়ে গেল৷ দমজা বাতাস আবারো বইতে লাগল। ম্যাপেল ট্রিও নিজের পাতা বিলিয়ে দিচ্ছে৷ ঝরে ঝরে পরছে অসংখ্য লালচে বর্ণের পাতা। আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ নীরবতার জন্য পরিবেশটা ভারিক্কি লাগছে৷
ইমান বলে উঠে, ” যাই তাহলে। মেইনরোডে অফিসের মাইক্রো এসে থেমেছে।”
–” যান।”
ইমানের মন বিষিয়ে উঠে৷ তার কেন মনে হয়েছে,মিরা বলেবে আপনি যাবেন না৷ আপনি না থাকলে এবাসায় আমি একা কেন থাকব? কী জন্য থাকব? হয় আপনি থাকবেন নাহলে আমাকেও সঙ্গে নিবেন। ইমান নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা কান্ড করেছে। মিরার দু’সেট জামা লাগেনে নিয়েছে৷ কাজটা বড্ড বোকামী।
ইমান আবারো বলে, “মনে হয় বৃষ্টি হবে৷”
মিরা কিছু বলল না৷ ম্যাপেল ট্রির নিচে দাঁড়িয়ে ছিল তারা। তিরতির করে গাছের পাতা নড়ছে৷ আচানক একটা পাতা মিরার মাথায় এসে পরল। চুলে আটকা পরে। ইমান সঙ্গে সঙ্গে চুল থেকে পাতা সরিয়ে দেয়। এরপর পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ড বের করে বলে, ” এটা কাছে রেখো।”
জোর করে মিরার হাতে কার্ড ধরিয়ে দেওয়ার সময় সে ইচ্ছা করে ওর হাত স্পর্শ করে৷ মিরা সঙ্গে সঙ্গে তার চোখের দিকে তাকালো। ইমান হাসি দিল৷
মিরার সর্বাঙ্গে শীতল শিহরণ বয়ে যায়৷ লজ্জাবতী গাছকে ছুঁয়ে দিল যেমন সে মিইয়ে যায়৷ সেও এই অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে নতজানু হয়৷ বুকটা কাপছে তার। বুকের ভেতর খাচা বদ্ধ হৃদপাখিটা খাচা ভেঙে উড়াল দিতে চাইছে৷ সে পিটপিট করে চেয়ে রইল৷
ইমান এলোমেলো পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল৷
মিরা পিছু ডেকে বলে, ” ফিরবেন কবে?”
ইমান পিছনে না ফিরে হাক পেড়ে উচু আওয়াজে আকাশ-পাতাল কাপিয়ে স্পষ্ট বাংলায় বলে, ” তুমি যদি বল এখনই ফিরব৷ তুমি যদি থেকে যেতে বল, আর ঘরছাড়া হবো না৷”
মিরা ভ্রু কুচকে বলে, ” পাগল কোথাকার।”
চলবে৷