#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–5
পুর্নিমা রাত৷ জোৎস্নার আলোয় ফকফকা হয়ে উঠেছে চারপাশ। নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ এই রজনীর জোছনাস্নাত অপার আশ্চর্য দেখায় ব্যস্ত ছিল মিরা। গাড়ি মাত্র চলতে শুরু করেছে। মিনিট পাঁচের মধ্যেই তারা পৌঁছে যাবে বাসায়। কাজেই এতো সুন্দর রাতের দৃশ্যটা লুফে নেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে অপলক নয়নে কাঁচের জানালা ভেদ করে দৃষ্টি নিবন্ধ করে রেখেছে সে। ওদিকে অন্য কেউ যে তার দিকে দ্বিগুণ মুগ্ধতার মোহজালে আটকা পড়ে বোয়াল মাছের মতো হাঁসফাঁস করতে করতে অস্বস্তিতে ভুগছে সেদিকে বিন্দুমাত্র লক্ষ নেই মিরার। সামান্য তন্দ্রা ভাব এসে গেছে শরীরে। সারাদিনের ক্লান্তি এবং প্রোগ্রামের শেষ প্রহরের বাড়তি খাটুনি যেন মিরাকে ঝেঁকে ধরেছে। সে একটা ছোট্টখাটো হাই তুলে জানালার কাঁচ খুলে দিল। মুহুর্তের মধ্যে ফাগুনি হাওয়া এসে তার হৃদয় জুড়িয়ে দিল।
সোনালী আপু তার পাশ থেকে বলে উঠে, “এসি চালু তো, তুই আবার জানালা খুলতে গেলি ক্যান?”
ইমান ড্রাইভিং সীটে বসে ছিল। গাড়ি ড্রাইভ করছে সে। আপুর প্রশ্ন শুনতেই, সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে, এসি অফ করে দিচ্ছি৷
সে এসি অফ করে। এসি অফ করতেই তার গরম লাগতে শুরু করে দিল। তবুও এসি ছাড়লো না। গাড়ি চালাতে চালাতে নজর রাখলো লুকিং গ্লাসে প্রতিফলিত হওয়া রমণীর মুখশ্রীর পানে। দমকা হাওয়ায় রমণীর চুল যখন সামনের দিকে এসে হুমড়ি খাচ্ছিল তখন ওই চুলের গোছার প্রতি ভারী ঈর্ষা হচ্ছিল তার।
গাড়ি বাসার সামনে এসে থামতেই মিরা সোনালী আপুকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামল। অন্য গাড়িতে বাড়ির বাকি সদস্যরা এসেছে। সোনালী আপুর বড় বোন সায়েমা আপুর গাড়িতে এবার ইরা আর ফুলির মা বসেছিল। তাদের গাড়ি এখনো পৌছায় নি। ইমান গাড়ি পার্ক করে আসতে আসতেই দেখল মিরা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে৷ ইমানের কেন যেন মন চাইল, মিরাকে ডাক দিয়ে বলতে যে, “আজকে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছিল। মাঝে-মাঝে এই শাড়িটা পড়ে, চোখে কাজল দিয়ে আমার সামনে দাঁড়াবে তো! তোমাকে চোখ জুড়িয়ে দেখব। ওইদিন করে তোমার সব ননসেন্স কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনব৷”
কিন্তু তার বলা হলো না। সে আবার মনের ভাব প্রকাশে বরাবরই অপটু। বাংলা সেকেন্ড পেপারে ফাঁকিবাজি মারত জন্যই এই দশা কীনা।
বাসায় ঢুকে ইমান নিজের রুমে চলে গেল। অবশ্য এটা গেস্টরুম। সে গেস্টরুমে থাকছে। মিরাদের যৌথ পরিবার। মিরার বাবা আর তার বড় ভাই একসঙ্গে থাকেন মাকে নিয়ে৷ ইমানের নানীর চার ছেলে-মেয়ে। দুই মেয়ে, দুই ছেলে। ইমান তার বড় মেয়ের একমাত্র ছেলে। এবং এই রহমান বাড়ির একমাত্র ছেলে তাও রহমান বাড়ির মেয়ের ছেলে সে। পুরাপুরি এই বাড়ির কর্ণধার নয় সে। তার দুই মামার কোন ছেলে নেই৷ এমনকি তার ছোট খালারও একটাই মেয়ে। মামাদের নিজের ব্যবসা আছে পুরান ঢাকায়। খুব ধনী তা না। কিন্তু সচ্ছল ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ। এলাকায় সবাই এক নামে চেনে তাদের। পুরান ঢাকায় অবশ্য প্রতিবেশীরা সবাই সবাইকে চেনে।
সে বাথরুমে গিয়ে গোসল সারলো। গোসল না করা অব্দি সে শান্তি পাবে না। গোসল সেড়ে কেবল গেঞ্জি গায়ে দিয়েছে সে, তখনই নানী তার রুমে আসল।
ইমান ভারী অবাক হয়ে বলে, “নানী তুমি এখনো ঘুমাও নি যে?”
তার নানী আমেনা খাতুন এসে বলে, সবাই শুয়ে পড়ছে দেখলাম। আজমল (ইমানের বড় মামা) বললো তুই নাকী হলুদের অনুষ্ঠানে কিছু খাস নাই৷ কেন রে ব্যাটা?
ইমান অলস ভঙ্গিতে বলে, নানী এতো রীচ ফুড আজ-কাল বডিতে সাপোর্ট করছে না। আসলে বাইরে তো আর এতো তেল-ঘি মশলা দিয়ে আমরা খাই না। হুট করে এতো রীচ ফুড খেয়ে আমার ডায়েটের বারোটা বাজছে। এইজন্য এভোয়েড করেছি৷
— তাইলে না খেয়ে শুবি? দুধ খাবি এক গ্লাস?
— দুধ আমি রাতে খাই না। তবে সাদা ভাত আর ডিম ভাজী করে দিতে পারো৷
নানী কিছু বলবে তার আগেই ইমান বলে উঠে, সবাই তো শুয়ে পড়েছে আর তুমিও অসুস্থ। থাক আমার একবেলা না খেলে কিছুই হবে না৷
আমেনা খাতুন কিছু একটা ভেবে বলে, মিরাকে একটু আগেই হাতের টেপাটেপিটা নিয়ে ঘুরতে দেখেছি ওকে ডেকে আনি।
ইমান হালকা হাসলো। নানী ফোনকে হাতের টেপাটেপি বলেন। সে অবশ্য এমনই কিছু শোনার জন্য অপেক্ষায় কাতরাচ্ছিল।অতঃপর নানীর মধুর বুলি তাকে আনন্দ দিল প্রচুর।
নানী সোজা তার রুমের বাইরে চলে যেতেই সে সটাং করে পাজোড়া টান টান করে মেলে ধরে ফোন চালাতে শুরু করে। সর্বোপ্রথম সে ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে মিরার সদ্য তোলা ছবিটা দেখে নিল। এরপর আপন মনেই বলে উঠে, তোমার মতো একটা বাচ্চা মেয়ের পেছনে কেন যে শুধু শুধু লাগতে গেলাম আমি। এই লাগতে যাওয়াই কী তবে কাল হলো?এখন তো আর ছাড়তে পারছি না?
মিরা মাত্র কাথামুড়ি দিয়ে আরাম করে শুয়েছে, ব্যাস ওমনি দরজায় খটখটে শব্দে তার কান ঝালাপালা হয়ে গেল। দাদীর কন্ঠ শুনে সে দ্রুত দরজা খুলে দিতেই, আমেনা খাতুন বলেন, মিরা তুই তো ঘুমাসনি তাইলে একটা হাঁড়িতে ভাত চড়িয়ে দে তো। আর ডিম ভাজিস। এদিকে ফুলির মাও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
মিরা বিষ্মিত হয়ে গেল। প্রোগ্রাম থেকে তারা সবাই ডিনার সেরে এসেছে। শুধু তাই নয়, প্রোগ্রামে বেঁচে যাওয়া খাবার দিয়েই তো কালকের ব্রেকফাস্ট হয়ে যাবে। তাহলে এই মধ্যরাতে দাদী ভাত চাচ্ছেন কেন?
মিরা প্রশ্ন করে, তুমি এখন এতোরাতে ভাত খাবে দাদী?
আমেনা খাতুন বলেন, ইমানটা রাতে কিচ্ছু খায়নি। না খেয়ে আছে। ও ভাত খেতে চাচ্ছে এখন। তুই গিয়ে ভাত বসা চুলায়। পারবি তো? নাকি আমি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে রান্নাঘরে যাব?
মিরা দাদির ইমোশনাল ব্লাকমেইলে বিরক্ত হলো। বিরক্তির ছাপ মুখে প্রকাশ না করে বলে, দাদী তুমি ঘুমাও। আমি রান্না বসাচ্ছি৷
সে সত্যি সত্যি রান্নাঘরে গিয়ে রাত দেড়টার দিকে, ভাত বসালো আর মনে মনে ইমানকে একগাদা গালি দিল। ব্যাটা তুই আসলিই আমেরিকা থেকে বিয়ে খাইতে। অথচ অনুষ্ঠানে গিয়ে কীনা উপোস থেকে কুল সাজা হচ্ছে। ফাযিল ছেলে কোথাকার। ইচ্ছা করে তাকে জ্বালানোর ফন্দি এগুলো। হুহ।
মাত্র ভাতের চাল চুলোয় দিয়েছে সে, ওই মুহুর্তে ইমান রান্নাঘরে প্রবেশ করে। তার উপস্থিতি যেন মিরাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল। সে কুকড়ে যায়। তার গায়ে আপাতত ওড়না নেই। মা নিষেধ করেছে, রান্নাঘরে ওড়না পড়তে। অনেকসময় বেখেয়ালি ভাবে কাজ করার সময় ওড়নায় চুলার আগুন লেগে যেতে পারে জন্য ওড়না পরিধান করে সে রান্নাঘরে কাজ করে না।
সে চুলের গাছিগুলো কানের পাশে সরিয়ে বলে, আরো সময় লাগবে।
ইমান তাকে একবার অবলোকন করে নিয়ে বলে, ডিমভাজিতে পেঁয়াজ-মরিচ আর পারলে ধনিয়াপাতা কুঁচি কুঁচি করে দিও। বেশি মচমচে করবে না। ভাতের সঙ্গে মচমচে ভাবটা মানায় না। ভাত একটু বেশি সিদ্ধ করিও কেমন?
— আচ্ছা।
— আর এক কাপ কড়া করে কফি বানিয়ে দাও তো। আজকে সারারাত অনলাইন এ কাজ করতে হবে। কফিতে এক চামচ সুগার দিবে।
মিরা দাঁতে দাঁত পিষে আস্তে করে বলে, এতো ডিমান্ড কেন আপনার?
ইমান নম্র গলায় বলে, কিছু বললে?
মিরা সামনের দিকে ঝুকে তৎক্ষনাৎ মরিচ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইমান তাকালো তার পানে। প্লাজো আর ঢোলা টি-শার্ট পড়ায় মেয়েটাকে এতো কিউট লাগছে কেন? তার মন চাচ্ছে মিরার টসটসে গালটা টেনে দিতে বেশ জোড়ে করেই। নিজের এমন ইচ্ছার কথা মনে হতেই সে ক্রমশ শরম পেল।
ডিম ভাজি আর ধোঁয়া উঠা গরম ভাত পাতে পরিবেশন করেই একটা হাই তুলে মিরা। সে চুলে খোপা বেঁধে কফির জন্য পানি চড়িয়ে দিল। এরপর থালা-বাসটা দুটি মেজে মনে মনে ভাবল, সংসার করা এতো কঠিন কেন? খালি কাজ আর কাজ!
সে রান্নাঘর থেকে ইমানকে দেখল, বেচারা বেশ আয়েশ করে তৃপ্তি করে ভাত খাচ্ছি। একটা মানুষ ভাত আর ডিমভাজিও এতো তৃপ্তি সহকারে কেমনে খায়? মিরার তো ভাত খেতেই মন চায় না। মা বকা দিবে জন্য সে ভাত খায়। নাহলে পিজ্জা খেয়েই দিন পার করত।
পুনরায় ইমানকে দেখে নিল। সে খাওয়ায় ব্যস্ত। মিরা দ্রুত কফিতে চিনির পরিবর্তে ইচ্ছা করেই লবণ দিল তাও তিন চামচ। এটা তাকে দিয়ে কাজ করানোর শাস্তি। সে চাইলেই ভাতে লবণ দিতে পারত কিন্তু দেয় নি কারণ সে ভালো শক্রু। বেচারা ডিনার করেনি। এখন ভাতে লবণ দিলে, না খেয়ে থাকতে হত। যেটা মিরা চায় না। কেউ না খেয়ে থাকুক এটা মিরার কোমল মন মোটেও কামনা করে না।এইজন্য কফিতে লবণ মিশিয়ে দিয়েছে। রাতে কেন কাজ করবে? রাত তো কাজ করার জন্য নয়। রাত হলো ঘুমানোর জন্য।
ইমান খাওয়া শেষ করে কেবল হাত ধুতে যাবে ঠিক সেই সময় মিরা রান্নাঘর থেকেই বলে উঠে, কফি আপনার রুমে দিয়ে এসেছি৷
— আচ্ছা।
মিরা গুটিগুটি পায়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিয়ে ইরার পাশে শুয়ে পড়ল। ইরা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। সেও মিনিট দশেকের মধ্যে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়৷
________________________
ইমান ল্যাবটপ কোলের মধ্যে নিয়ে কাজে মনোনিবেশ করে কফিতে চুমুক দিতেই দ্রুত মুখ থেকে কফি ফেলে দিল। কফির ছিটেফোঁটা গিয়ে বেডশীটে পড়ল। সে চোখ বড় বড় করে এক মিনিট ধরে শ্বাস নিয়ে কফিটার দিকে তাকালো। এবং পুনরায় কফিতে ছোট্ট চুমুক দিয়ে মৃদ্যু হেসে নিজ মনে বলে উঠে, আমার সঙ্গে গেইম খেলা হচ্ছে কী?
এরপর জানালার দিকে তাকায় সে।গভীর রাত তখন। ভূতগ্রস্তের মতো গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সে বলে উঠে, “আমি তোমাকে লবণের মতো ভালোবাসতে চাই, প্রিয় শেহজাদী।”
সকালবেলা মিরা দেরি করে উঠল। প্রায় দশটায়। ততোক্ষণে বাসার সবার নাস্তা করা শেষ। মেয়েরা ছাদে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। ছাদে সবার হাতে মেহেদী পরানোর জন্য একজন হেনা আর্টিস্ট আসবে। আগে সোনালী আপুর হাতে মেহেদী পরানো হবে এরপর অন্যান্যরা হাতে মেহেদী লাগাবে। সে ঘুম থেকে উঠেই শাওয়ার নিয়ে একটা সুন্দর কাজ করা সালোয়ার কামিজ পরে। চুল ছেড়ে দিল। হালকা সেজে বের হয়ে খেতে বসল।
মা তার জন্য নাস্তা টেবিলে সাজিয়েই রেখেছে। নাস্তা শেষ করে উঠবে, ওইসময় ইমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে তার৷ মিরা কিছুটা চমকে উঠে নিজের কাজে মনোযোগ দিল। গ্লাসে পানি ঢালতে থাকে সে। ইমান তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, “কফিটা দারুণ ছিল। বিকেলে আবার করে দিও তো। দুইজন একসাথে খাব।”
মিরা অবাক হয়ে তার দিকে তাকালে, সে চোখ মেরে বলে, “ইট ক্যান বি এ কফি ডেট।”
কথাটা শোনামাত্র মিরার হাত থেকে পানি ছলকে পড়ে গেল। সে হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। বাঙ্গালী মেয়েদের কাছে ডেট জিনিস টা ভয়ংকর!
সে দ্রুত ছাদে উঠে সোনালী আপুর কাছে গিয়ে বসল। নিজেকে অবিন্যস্ত, ছছন্নছাড়া লাগছে। ইমান কী তার সঙ্গে ডেট করতে চায়? ওহ মাই গড! ভয়ংকর ব্যাপার! আপু তখন হাতে মেহেদী লাগাচ্ছে।
মিরা প্রশ্ন করে, আপু তুমি কোনদিন ডেটে গেছো?
— কত গেলাম তোদের দুলাভাইয়ের সঙ্গে।
— আমি কোনদিন যাই নি ডেটে৷
— থাক তোর যাওয়ার দরকার নাই। তুই হ্যাসবেন্ডের সঙ্গে ডিরেক হানিমুনে যাস।
বলেই আপু হাসতে লাগল। মিরা গাল ফুলিয়ে বলে, তুমিও মজা নেওয়া শুরু করলে?
সোনালী আপু হাসতে হাসতে বলে, আমি ছাড়াও অন্যকেউ মজা নেয় নাকী?
মিরা উত্তর দিল না। তার হাত বাড়িয়ে দিল আর্টিস্ট মেয়েটার দিকে। মেহেদী পরানোর উদ্দেশ্যে। তিনি হাতে মেহেদী লাগানো শুরু করতেই ইমান ছাদে উঠে আসলো দুটো কোকাকোলার বোতল হাতে৷
সোনালী আপুর পাশে বসেই কোক খুলে গ্লাসে ঢেলে নিয়ে কথা বলা আরম্ভ করল। আপু আর ও আস্তে করে কথা বলছে। মিরা কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছে৷ অবশেষে কিছুটা শুনতে পেল৷
ইমান বলছে, রাতের সব ব্যবস্থা করেছি। প্রান্ত ভাইয়ার ফ্রেন্ডের ছাদেই ব্যাচেলর পার্টি হবে।
— আমাদের কে একটু স্পেস বের করে দিস তো। আজকেই শেষ লুকিয়ে প্রেম করব৷ আই ওয়ান্ট টু ফিল দ্যা মুমেন্ট ফর দ্যা লাস্ট টাইম।
ইমান হাসল।সে বলে উঠে, আপু প্রেম কোনদিন শেষ হয় না।
এদিকে সব শুনে মিরার চোখে জল চলে আসল। ওরা দুইজন মিলে পার্টি করার প্ল্যান করছে। অথচ সেই প্ল্যানে সে নেই। ব্যাচেলার পার্টির কথা কিছুই সে জানে না৷
ইমান কোকের গ্লাস হাতে নিয়ে ছাদের ওইদিকে গেলে, মিরা মেহেদী পরা বাদ দিয়ে তার পিছু নিল।
রেলিংয়ের হাতলে হাত রেখে ইমান দাঁড়িয়ে আছে৷ মিরা তার পিছনে গিয়ে বলে, শুনেন আমিও ব্যাচেলর পার্টি তে থাকতে চাই।
ইমান ঘাড় ঘুরালো। এরপর বলে, বাচ্চারা এলাও না।
— বাচ্চা কে?
— তুমি।
— আমি মোটেও বাচ্চা না৷ আমাকে না নিলে আমি কিন্তু বড় আব্বুকে বলে দিব৷ তখন আপনাদেরও পার্টি ক্যান্সেল হবে কিন্তু বলে দিলাম৷
ইমান মুখটা তেতো করে বলে, আপু লুকিয়ে প্রেম করতে যাবে। আমি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিব৷ তোমার ওখানে কাজ কী?
মিরা অনেক ভেবে বলে, আমিও লুকিয়ে প্রেম করব৷
ইমান ভ্রু নাচিয়ে বলে, লুকিয়ে প্রেম কীভাবে করে জানো?
চোখে-মুখে তার দুষ্ট হাসি৷ মিরা একটা ঢোক গিলে বলে, জানব না কেন?
ইমান তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে এসে, মিরার মুখের দিকে নিজের মুখ এনে ঠোঁট গোল করে মিরার মুখে ফুঁক দেয়। সেই ফুঁয়ের বাতাসে সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো মৃদু নড়ে। মিরা যেন কাঁপছে৷ ইমান তার আরো নিকটে, কিছুটা তার অধরজোড়ার দিকে আগাতে চাইলে, মিরা তার থেকে দূরে সরে এসে রক্তবর্ণ চোখে তার দিকে তাকায়।
— “কী করতে চাইছিলেন আপনি?”
— তোমাকে লুকিয়ে প্রেম করার নমুনা দিচ্ছিলাম।
— এইসব মোটেও লুকিয়ে প্রেম করার নমুনা নয়৷
ইমান মৃদ্যু কাতর সুরে বলে, তাহলে আমাকে লুকিয়ে প্রেম কীভাবে করতে হয় জানাও, মিরা৷ আমি জানতে চাই।
মিরা হালকা কম্পন অনুভব করে নিজের হৃদযন্ত্রে৷ সে যান্ত্রিক ভাবে বলে, প্রেম মানে পবিত্রতা। প্রেমে আবদ্ধ থাকলে, প্রেমিক রংধনুতেও নিজের প্রেমিকাকে দেখবে, বৃষ্টির ফোঁটায় নিজের প্রেমিকাকে অনুভব করবে। মন খারাপ করা বাতাসে নিজের প্রেমিকার গোপন কষ্ট অনুভব করবে। ছুঁয়ে দিতে পারলেই প্রেম হয় না। প্রেমিক হতে গেলে আগে আপনজন হতে হবে।
ইমান চকিতে উঠে তাকায় তার দিকে। মেয়েটা তো চমৎকার বলেছে!
চলবে৷
[ ফেইরিটেল অর্থ রুপকথা৷ ]