ফেরারি প্রেম পর্ব -২৭

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_২৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আস্তাগফিরুল্লাহ্! নাউযুবিল্লাহ্! এসব আপনি কী বলেন ভাই? আমাদের বংশের মধ্যে তো কোনো ‘গে’ নাই!”

“এই কী বললি তুই? আমাকে ইনডিরেক্টলি গে বললি?”

রূপলের ঝাঁজালো প্রশ্ন এবং গলার স্বরে সজল তার নিজের মধ্যে ফিরে এলো! ঠেলার চোটে সে নিজের বড়ো ভাইকে ‘গে’ বলে ফেলল? সামনে থাকলে আজ নির্ঘাত তার গর্দান যেত! পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক করবে হবে বুঝতে পারলনা সজল। এই অবস্থায় পল্টি নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও খুঁজে পেলনা সে। নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে ডর ভয় বিসর্জন দিয়ে সে হুমকি স্বরূপ গলায় ঝাড়ি মেরে বলল,

“ভাই একবার শুধু নামটা বলেন? কে আপনার মত একজন সুপুরুষ, বলবান, ইয়াং, হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং একটা ছেলেকে মেয়েদের সাথে তুলনা করেছে? জাস্ট নামটা একবার বলুন। বাকীটা আপনার ছোটো ভাই বুঝে নিবে।”

“আগে তো আমি তোর ক্লাস নিব! এরপর সুস্থ থাকলেই না তুই অন্যের ক্লাস নিবি। পরীক্ষা শেষ করে ভালোয় ভালোয় জাস্ট বাড়ি ফিরে আয়। তোর চৌদ্দটা বাজাব আমি! খুব চালাক হয়ে গেছিস তাইনা? বড়ো ভাইকে টপকে?”

সজলকে থ্রেট দেওয়া শেষে রাগী হুংকার দিয়ে কলটি কেটে দিলো রূপল। কান থেকে ফোনটি সরিয়ে সজল ভয়ের চোটে নখ কামড়াতে লাগল। পড়ার ভূত তার মাথা থেকে নেমে গেল। সারা রুম জুড়ে কেবল পায়চারী করতে লাগল। কীভাবে রূপলকে পাম দিয়ে ঠাণ্ডা করা যায় সেই ভাবনা ভাবতে লাগল!

কলটি কেটেই রূপল আয়নার সামনে দাড়ালো। নিঁখুতভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। মুখশ্রীতে ফুটে ওঠা হিংস্রতা প্রমাণ করে দিলো পূর্বের রূপল এবং এখনকার রূপলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য ঘটেছিল তার মনে! এক ছলনাময়ীর প্রেমে পরে মন বেচারাকে সে এতটাই প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছিল যে, তার পুরুষত্ব এটিটিউড, ইগু সব বিসর্জন দিতে হয়েছিল! গত আড়াইটা বছর সুহাসিনী তাকে নাকে দাঁড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে। ভালোবাসার বিনিময়ে দিয়েছে শুধু ধোঁকা এবং ধোঁকা। তার বিশ্বাস ভেঙে তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে সুহাসিনী। তবুও তো সুহাসিনীকে ভুলা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা! প্রতিটা পদে পদে সুহাসিনীর কথা মনে পড়ে তার! কী এমন কালো জাদু করে গেল মেয়েটা তাকে?

রাগে ফোঁস ফোঁস করে রূপল তার ডেস্কের ড্রয়ারটি খুলল। ড্রয়ারটি নিয়ে সে মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল। ড্রয়ার ভর্তি বিভিন্ন ডিজাইনের সানগ্লাস, ওয়াচ, পারফিউম, দুটো ব্র্যান্ডের শার্ট এবং দুটো পাঞ্জাবি! সুহাসিনীর দেওয়া গিফট গুলো বেশ যত্নসহকারেই সাজিয়ে রেখেছিল সে। তবে এখন তার আর এসবের প্রয়োজন নেই! সুহাসিনীর রেখে যাওয়া এই স্মৃতিগুলোই তাকে বড্ড পোড়াচ্ছে! স্মৃতিধ্বংস করতে চায় সে। তবেই হয়ত সুহাসিনীর মায়া হতে আংশিক মুক্তি পাবে সে! বেলকনিতে সমস্ত জিনিসপত্র রেখে সে আগুনে পোঁড়াতে গিয়েও থেমে গেল! লাইটার হাতে নিয়ে সে বিবেকবান গলায় বিড়বিড়য়ে বলল,

“এতগুলো ব্যবহারযোগ্য জিনিসকে এভাবে পুঁড়িয়ে দেওয়া কী ঠিক হবে? এরচেয়ে কী ভালো নয় এগুলো দান করে দেওয়া? অভাবগ্রস্ত মানুষেরা অন্তত এসব পড়ে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করবে!”

বলেই রূপল সবগুলো জিনিসপত্র প্যাকেট করে নিলো। লম্বা এক শাওয়ার নিয়ে সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। অর্ধ ভেজা শরীরে সে পুনরায় আয়নার সামনে দাড়ালো। বিগত সাত মাসে এই প্রথমবার সে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে এতটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবলোকন করছে! চুল, দাড়ি তার অসম্ভব রকম বড়ো হয়ে আছে। অন্তত শাওয়ার নেওয়ার আগে সেলুনে যাওয়া উচিৎ ছিল তার! বিষয়টা মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিল তার।

ইতোমধ্যেই সবিতার কল এলো তার নাম্বারে। ভ্রু কুঁচকে রূপল কলটি তুলল। ঐপাশ থেকে সবিতা বেশ কাতর স্বরে বলল,

“কী রূপল? তুমি আসবে না?”

চুল থেকে গড়িয়ে পড়া পানিগুলো ঝেরে রূপল ধীর গলায় বলল,

“আসছি।”

“আর কখন আসবে বলো? দুপুর একটা তো বেজে গেল।”

“এইতো রওনা হচ্ছি।”

“একটু তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ। বাড়িতে একজন পুরুষ মানুষ না থাকলে হয়? যোহরের নামাজ পড়েই হুজুররা চলে আসবেন।”

“রান্নাবান্না সব কমপ্লিট?”

“হ্যাঁ। মাত্র কমপ্লিট হলো।”

“ওকে আমি আসছি।”

কলটি কেটে রূপল তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে গেল। হুট না বলে কয়ে সবিতাকে নিরাশ করা ঠিক হবেনা বলে তার মনে হলো! অফ হোয়াইট রঙের একটি শার্ট এবং তার সাথে একটি কালো জিন্স পড়ে হাতে সুহাসিনীর সেই গিফটসের প্যাকেট গুলো নিয়ে রূপল বের হয়ে গেল। যাওয়ার পথে নাজনীন বেগম হঠাৎ তার সামনে পরলেন। রূপলকে দেখে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। পেরেশানি গলায় বললেন,

“তোর বোনকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছেনা!”

অবাক হলো রূপল। ভ্রুদ্বয় কুঁচকালো। প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বলল,

“কেন? কী হয়েছে?”

রূপলের বেশভূষা দেখে নাজনীন বেগম থমকালেন। ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন,

“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

“সবিতাদের বাড়িতে। তোমরা তো যাবেনা বললে!”

নাক সিটকে নাজনীন বেগম বললেন,

“না! এই দাওয়াত আমি রাখিনি!”

প্রসঙ্গ পাল্টে রূপল বলল,

“পিয়াসাকে নিয়ে যেন কী বলছিলে?”

“ওখান থেকে আগে ফিরে আয়। এরপর বলছি।”

রূপলের সামনে থেকে সরে দাড়ালেন নাজনীন বেগম। রূপলও বিষয়টাকে নিয়ে আর তেমন জল ঘোলা করলোনা। সবিতার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রূপল সবিতাদের বাড়িতে এসে পৌঁছে গেল। বাইকটা বাড়ির এক পাশে পার্ক করে সে সবিতাদের অর্ধভেজা সদর দরজা পেরিয়ে ড্রইং রুমে প্রবেশ করল। অমনি কারো মাথার সাথে তার মাথার সংঘর্ষ ঘটল! চমকে ওঠে রূপল কপাল ঘঁষে অগ্রে দৃষ্টি ফেলতেই দেখল নীহারিকা তার সামনে দাড়িয়ে! কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে নীহারিকা ব্যথায় নাকমুখ কুঁচকে বলল,

“এই আপনি কী দেখেশুনে চলতে পারেন না? হুটহাট কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেন?”

মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল রূপলের! কোথায় সে নীহারিকাকে ঝাড়ি মারবে উল্টো নীহারিকা এসে তাকে ঝাড়ি মারল? রগচটা হয়ে রূপল বলল,

“ও হ্যালো। আমি হুটহাট এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। বরং আপনিই এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন! আপনার এখানে কী হ্যাঁ?”

ব্যথা ভুলে গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে নীহারিকা বলল,

“আমার এখানে কী মানে? আমি এখানকার গেস্ট! ইনভাইট করে আনা হয়েছে আমাকে। বিশ্বাস না হলে সবিতা আপুকে জিজ্ঞেস করুন।”

চুল উড়িয়ে বেশ ভাবসাব নিয়ে নীহারিকা রূপলের সামনে থেকে প্রস্থান নিলো! সেই উড়ন্ত চুল এসে রূপলের নাকেমুখে লাগল। অমনি রূপলের মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেল! দাঁতে দাঁত চেপে রূপল পেছন থেকে নীহারিকাকে ডেকে বলল,

“এই খবরদার। পরের বার থেকে আপনার চুল যেন আমার মুখে এসে না পরে! এসব আমার পছন্দ নয়৷ চুল ঠিক কেটে রেখে দিব!”

পিছু ফিরে তাকালো নীহারিকা৷ অট্ট হাসল সে। আদেখ্যাতা মেশানো স্বরে বলল,

“আহারে সোনা গো আমার! শখ দেখছি কম না আপনার। আমার চুল আমি যখন ইচ্ছা তখন উড়াব! কার চোখেমুখে গিয়ে আমার চুল পরল এসব আমার দেখার বিষয় নয়। প্রয়োজনে আপনি সর্তক থাকবেন, কোনো মেয়ের চুল যেন আপনার চোখেমুখে না পরে। আমি কেন সর্তক হব? আইছে আমার সাথে মেজাজ দেখাতে!”

রূপলকে রাগিয়ে দিয়ে নীহারিকা রান্নাঘরে ঢুকে গেল। খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সে। রূপলকে অহেতুক রাগাতে ইদানিং তার ভালোই লাগছে! পুরুষ মানুষ রাগলে তাদের রাগাতে আরও ভালো লাগে। আসার পর থেকেই নীহারিকা নানানভাবে সবিতাকে সাহায্য করছে। সালাদ কাটা থেকে শুরু করে খাবার সাজানো সব নীহারিকা একাই সামলাচ্ছে। একা হাতে সব রান্নাবান্না করে সবিতা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই এখন সে রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। খেয়েদেয়ে হৃদি ঘুমুচ্ছে। খাওয়ার পরই হৃদিকে ঘুমাতে হয়। তখন অটোমেটিকলি তার ঘুম চলে আসে।

রাগে ফুলে ফেঁপে ওঠে রূপল ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসতেই হুজুরদের আগমন ঘটল। হুজুরদের গলার শব্দ পেয়ে সবিতা শোয়া থেকে ওঠে এলো। সোজা রান্নাঘরে চলে গেল। নীহারিকা এবং সবিতা মাথায় বড়ো এক ঘোমটা টানল। খাবারগুলো এখনও ডাইনিং টেবিলে সাজানো হয়নি। তবে বড়ো বড়ো বোলে, পেয়ালায় সাজানো হয়ে গেছে। হুজুরদের সামনে তো তারা এখন যেতে পারবেনা। তাই নীহারিকা এক প্রকার ছুটে এসে রপলকে বলল,

“এখানে বসে কী করছেন হ্যাঁ? আমাদের হেল্প করুন। খাবারগুলো এখনও ডাইনিং টেবিলে সাজানো হয়নি। হুজুরদের সামনে তো আমরা আসতে পারবনা। খাবারগুলো আপনি সাজিয়ে দিন। আসুন।”

ফটাফট রূপল বসা থেকে ওঠে দাড়ালো। ধমকের স্বরে নীহারিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আমাকে রাগিয়ে দিয়ে এখন খুব কাজ দেখানো হচ্ছে না?”

এই মুহূর্তে হুজুররাও ড্রইংরুমে চলে এলেন। তাই নীহারিকা আর কথা বাড়াল না। একছুটে সে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। চারজন হুজুরদের মধ্যে হঠাৎ একজন হুজুর শান্ত গলায় রূপলকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“আহ্ বাবা। বউয়ের সাথে এভাবে খারাপ ব্যবহার করতে নেই! তাদের সাথে ঠাণ্ডা মাথায় নম্রভাবে ব্যবহার করতে হয়। জানো না তুমি?”

হতবাক হয়ে রূপল হুজুরের দিকে তাকালো! মাথায় বাজ পড়ার মত অনুভূতি হলো তার। কীসব উদ্ভব কথা বলছে হুজুর! জোরপূর্বক হেসে সে নমনীয় গলায় হুজুরকে বলল,

“না মানে হুজুর। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী নই!”

রূপলের কথাকে আমলে নিলেন না হুজুর। তিনি বরং উল্টো রূপলের কাঁধে হাত রেখে রূপলকে বুঝিয়ে বললেন,

“বুঝলে তো বাবা। এখনকার যুগের ছেলেমেয়েদের দেখি পান থেকে চুন খসলেই একে অপরকে অস্বীকার করে বসে! এসব আবার কেমন কথা বলো বাবা? আচ্ছা, আমরা আগে মিলাদটা পড়ে নিই। এরপর এই বিষয়ে কথা বলছি। অনেক ফতুয়া আছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে। সব তোমাকে বুঝিয়ে বলব!”

রূপলকে হতভম্ব বানিয়ে হুজুর মিলাদ পড়ানো শুরু করলেন। এইদিকে একদম-ই মন নেই রূপলের। তার মাথায় শুধু ঘুরছে হুজুরের বলা ঐসব মনগড়া কথা। রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তার! ঐ ঝগড়ুটে মেয়েটা নাকী হবে তার বউ? ইম্পসিবল! এসব আস্তাগফিরুল্লাহ্ চিন্তাভাবনা যেন তার দুঃস্বপ্নেও না আসে!

মোনাজাতে সুহাসিনী এবং সাফোয়ানের রুহের মাগফেরাত চেয়ে মিলাদ শেষ করলেন হুজুর। তাদের জন্য দোয়া চেয়ে অঝরে কেঁদে ভাসালো সবিতা! রূপল মন থেকে সুহাসিনীর জন্য দোয়া করলেও তার জন্য কষ্ট বা কান্না কোনোটাই পেলনা তার! শুধু মোনাজাতে চাইল আল্লাহ্ যেন তাকে অতীত থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করে! সুহাসিনীর মায়া কাটিয়ে খুব দ্রুত যেন সে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।

____________________________________

হাতে মোটা রট নিয়ে চেয়ারের পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে রূপল! গোটা শরীর তার রাগে রি রি করছে। তার সামনেই বড়ো খাম্বার সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে ফারহানকে! এই সেই ফারহান আজ সকালেই যে ফারহানকে নীহারিকা বুদ্ধি খাটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল! দিশার সাথে রুম ডেট করতে যাওয়া ছেলেটিই ফারহান। দিশা এবং সানি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল আজ সকালে হওয়া সব ষড়যন্ত্রের পেছনে পরোক্ষভাবে নীহারিকাই জড়িত ছিল! নীহারিকার কাজে সানি বেশ খুশি হলেও দিশা রাগে টগবগ করছিল। পুলিশের কাছ থেকে মোটা অঙের টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর দিশার মাথা নষ্ট হয়েছিল। কীভাবে সে নীহারিকার থেকে শোধ নিবে তার জন্য হাসফাস করছিল। কোনো প্রকার উপায় বুদ্ধি না পেয়ে ফারহানকে উস্কালো সে নীহারিকার বিরুদ্ধে! তাই এই ভর সন্ধ্যায় পুলিশ হাজত থেকে ছাড়া পেয়েই ফারহান তার দলবল নিয়ে ছুটে এসেছিল নীহারিকার বাড়িতে নীহারিকাকে হুমকি দিতে! তার ক্ষতি করতে। কিন্তু তা আর সম্ভব হলোনা। নীহারিকার ক্ষতি করতে এসে ফারহান নিজেই তার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলল!

ফারহান তার দলবল নিয়ে যখন নীহারিকাদের বাড়িতে এলো তখনই রূপল নীহারিকাকে তার বাড়িতে ড্রপ করার জন্য এসেছিল! প্রথমে রূপল বাড়ির ভেতরকার ব্যাপার স্যাপার কিছুই বুঝতে পারলনা। নীহারিকাকে বাড়ির গেইটের সামনে ড্রপ করে সে সোজা চলে গিয়েছিল। বাড়ির ভেতরে নীহারিকা ঢুকেই দেখতে পেল তার বাড়ির ড্রইংরুমে ফারহানসহ তিনটি ছেলে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে! তার মা মারজিনা বেগম তাদের সামনেই দাড়িয়ে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে! তারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল মারজিনা বেগমকে। এই দৃশ্য দেখেই ফট করে নীহারিকার মাথা গরম হয়ে গেল। তবে এর আগে সে ছোট্টো একটি কাজ করল। রূপলের নাম্বারে ছোটো করে একটি মেসেজ দিয়ে সে ছুটে এসে সে তার মায়ের পাশে দাড়ালো! ফারহান এবং তার দলের ছেলেফেলেদের উদ্দেশ্য করে সে চ্যাচিয়ে বলল,

“কী হচ্ছেটা কী এখানে? আপনারা আমার বাড়িতে কী করছেন?”

অমনি ফারহান নীহারিকার দিকে তাকিয়ে অট্ট হাসল! নীহারিকার দিকে সে কিছুক্ষণ বিশ্রী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। আচমকা নীহারিকাকে সে কটাক্ষ করে বলল,

“কালো মেয়ের তেজ দেখো! রূপ দেখে নয় বরং তেজ দেখেই ছেলেরা তোকে ছেঁকে দেখবে!”

“কু’ত্তা’র বাচ্চা! এত বড়ো সাহস তোর? কী বললি তুই?”

বলেই নীহারিকা টি-টেবিলের উপর রাখা ফুলদানিটি হাতে নিলো! সেকেণ্ডের মধ্যেই সে মেজাজ হারিয়ে ফুলদানিটি ফারহানকে কপালে নিক্ষেপ করল! অমনি ফারহানের কপাল কেটে গড়গড়িয়ে র’ক্ত ঝরতে লাগল। নীহারিকার দুঃসাহস দেখে মারজিনা বেগম হতভম্ব হয়ে গেলেন। নীহারিকার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলেন তিনি! তটস্থ গলায় বললেন,

“এটা তুই কী করলি?”

গালে হাত দিয়ে নীহারিকা আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকালো। বিশ্বাসই হলোনা তার মা তার গালে চ’ড় মারল! ঐদিকে ব্যথায় কুকিয়ে ওঠে ফারহান তার ছেলেফেলেদের বলল,

“মেয়েটাকে ধর।”

গুণ্ডা গুলো ছুটে এসে নীহারিকাকে ধরার আগেই রূপল উপস্থিত হয়ে গেল! রূপলকে দেখামাত্রই সাথের ছেলেরা লেজ গুটিয়ে পালালো! রূপলের সাথে মা’রা’মারি করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তাদের। তাই খাল থেকে কুমির আনার মত পাপ কাজ করতে চাইলনা তারা।

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here