#বউ (০৮)
.
আদ্র কিছুটা হেসে তারপর বলে আমার বউ কোথায় সেটা বলো?
মেহু অবাক হয়ে বলে–“তো আমি কি?”
–“যদি ভুল না করে থাকি,তুমি মেহু কি?”
মেহু এবার লজ্জায় পড়ে গেলো।তারপর বলে উঠলো–“আপু চলে আয়।”
তাহু রুম থেকে বের হয়।মেহু তখন গাল ফুলিয়ে বলে–“পরীক্ষায় পাশ।”
আদ্র হাসে।তারপর বলে,
–“আচ্ছা দুই বোনে এই প্লেন করছিলে।আমার বউকে আমি চিনব না এটা ভাবলে কি করে?”
মেহু কৌতুহল হয়ে বলে–“কিভাবে চিনলেন?”
আদ্র তখন আঙ্গুল দিয়ে তাহুর ভ্রু স্পর্শ করে।
–“খেয়াল করো আমার বউয়ের ভ্রু কেমন?আর ওখানে একটা ছোট তিল রয়েছে।যা তোমার নেই।তাছাড়া তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছো আর তাহুর চোখ ফ্লোরে থাকে।খটকা আমার এখানেই লেগেছে,প্রথমে আমি ভুল তো করতে যাচ্ছিলাম,কিন্তু কাছে গিয়েই চিনতে পারি।”
তাহু এবার চোখ তুলে আদ্রর দিকে তাকায়।আদ্রর মুখে হাসি লেগেই আছে।তারপর আবারো বলে,
–“আচ্ছা আমি ত পরীক্ষায় পাশ করলাম,এবার সে খুশিতে আমি কি পাবো?
মেহু তখন ভেংচি কেটে বলে–“কচু পাবেন একটা।”
–“কচু দিলে ত হবেনা।আচ্ছা আমি গিফট টা তাহুর কাছ থেকেই নিবো যেহেতু সে আমার বউ।”
তাহুর কাছে এই একটা শব্দ এতই মধুর লাগে।বউ কি মিষ্টি শব্দ তাইনা।তাহু হ্যা না কিছুই বলেনা।
তারপর মেহু আদ্র তাহুর বাবা মা মিলে গল্প করে।দুপুরের খাবার খায়।বিকেলের দিকে মেহুরা সবাই চলে যায়।তাহুর মন খারাও হয়ে যায়।কিন্তু আদ্রর জন্য মন খারাপ করার জো নেই।আদ্র এতই হাসিখুশি ছেলে,তার উপর হাসির এত কথা বলে, না হেসে উপায় নেই তাহুর।
তাহু যখন মন খারাপ করে বসে থাকে আদ্র তখন বলে–“একটা গল্প শুনবে?”
তাহু তখন মুখ তোলে তাকায় কিন্তু হ্যা না কিছুই বলেনা।তারপর ও তাহুর জন্য আদ্র বলে–“আমাদের স্কুলে একটা মোটা টিচার ছিলেন।একবার তিনি একটা চেয়ারে বসেছিলেন,কিন্তু উঠার পর চেয়ার টা সহ নিয়ে উঠে গিয়েছিলেন,তারপর……..
তারপর আর বলতে দেরি হয়নি,তাহু হু হু করে হেসে উঠে।আদ্র তখন গাল স্পর্শ করে বলে–“এই মুখে হাসি ই মানায়।কান্না নয় বউ”।
___________
রুমের সব জিনিসপত্র তাহু গোজগাজ করছে।আর আদ্র বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাহুকে দেখছে।তারপর ধুম করে উঠে বসে গেলো।তারপর উঠে তাহুর হাত ধরে বিছানায় বসালো।
তাহু হেসে বলে–“কিছু বলবেন?”
–“হুউ সেই গিফটের কথাটা মনে পড়ছে।”
–“বলুন না কি চাই?”
–“সত্যি দিবে তো?”
–“আমার কাছে থাকলে অবশ্যই দিবো।”
–“আমার একটা ছোট্ট তাহু চাই।একদম তোমার মতো।আমার তো মা নেই সে আমাকে মায়ের মত শাসন করবে।এনে দিবে?”
আদ্র মায়ের কথা বললেই কেঁদে ফেলে।বিয়ের পর থেকে যতবার বলেছে কেঁদেছে।তাহু এই কান্না সহ্য করতে পারেনা।আদ্রর জল মুছে বলে–“আল্লাহ চাইলে অবশ্যই এনে দিবো।”
আদ্র তখন হেসে ফেলে।
–“ভালবাসি বউ।”
_________
এভাবেই চলছে জিবন।
একদিন সকালে আদ্র এসে তাহুকে জানায় যে তার কয়েকজন বন্ধু আসবে।দুপুরের ভাত এখানে ই খাবে।
তাহু তখন শান্তস্বরে বলে–“আমি আপনার ফ্রেন্ডদের আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখব না।কিন্তু তাদের সাথে আমি অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে পারবো না।”
আদ্র তখন দুষ্টুমি করে বলে–“ওদের একেকটা গার্লফ্রেন্ড যে সুন্দর করে করে কথা বলে,আর মজা করার কথা নাই বা বললাম।”
তাহু তখন আদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে–“আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড নই,আমি বউ।আর এসব কিছু আমার পছন্দ নয়।এর জন্য যদি আপনার ফ্রেন্ডরা আমাকে আনস্মার্ট বলে কিন্তু কিছুই করার নেই।”
আদ্র মুচকি হাসে।এই প্রথম তাহু চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছে।এই ব্যপার টা আদ্রর বেশ ভাল লেগেছে।
.
.
পরেরদিন আদ্রর বন্ধুরা আসবে।তাহু একাহাতে সব রান্নাবান্না আর নাস্তার আয়োজন করে।
আদ্রর বন্ধুরা আসলে তাদের সামনে গিয়ে তাহু সালাম দেয়।কেমন আছে,ভাল আছে বলেই সেখান থেকে চলে যায়।বাকি গল্প সল্প আর নাস্তা সব আদ্র ই নিয়ে আসে।
আদ্রর তিন বন্ধু আসে।সেখান থেকে একজন বলে–“যায় বলিস ভাবি কে আমার বেশ ভাল লেগেছে।কেমন যেন শান্ত শান্ত।”
আদ্র বলে–“এটা বিয়ের পর থেকে জনগণদের থেকে শুনছি নতুন কিছু বল।”
তখন আরেক বন্ধু বলে–“আমি ও এরকম একটা মেয়ে বিয়ে করতে চাই।তোর শালিকা থাকলে বল?”
আদ্র তখন হেসে বলে–“আমার শালিকা থাকলেও তোদের সাথে বিয়ে দিবো না।তাছাড়া আমার শালিকা শান্ত ও নয়।”
–“কেন বিয়ে দিবি না?”
–“কারণ তোদের গার্লফ্রেন্ড আছে না?বিয়ে ছাড়া বউ তো আছেই।”
তখন বন্ধুটি মন খারাপ করে বলে–“ওর সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে রে।”
আদ্র অবাক হয়।এই না কত ভালবাসা বাসাবাসি ছিল ব্রেকাপ কেন?
–“মেয়েটা ছেলেদের সাথে একদম ঢলে পরে পরে কথা বলে।বয়ফ্রেন্ড হিসেবে আমার এসব দেখতে মন চায় না।তাই বলেছিলাম এরকম অভ্যাস টা পাল্টাতে কিন্তু সে উলটা আমার মাইন্ড ভাল না এই সেই বলে ব্রেকাপ করে দিয়েছে।”
আদ্র আর কিছুই বলল না।বন্ধুরা চলে যায়।
.
আদ্র তাহুর সংসার জিবনে ভালবাসায় ভরপুর।এরি মাঝে তাহু জানতে পারে যে,আদ্রর সেই চাওয়া গিফট টা আসতে যাচ্ছে।
আদ্র খুব খুশি হয়।তার সেই ছোট্ট মা টা আসবে পৃথিবীতে এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কিছুই নেই যে।
তাহুর বাবা মা ও মেহু খুব খুশি হয়।আদ্র তাহুকে একটা কাজ ও করতে দেয়না।আদ্র বলে সারাক্ষণ যেন বিছানায় বসে থাকে।এটা কোনো কথা?
তাহু মনে মনে বলে,
“তাহুর কি হাত পা নেই।আছে তো,সে নিজের কাজ সব নিজেই করবে।আদ্রর এ উদ্ভট পাগলামি তাহু মানবে না।”
তাহু ঘরের সব কাজ করে।তাহুর আম্মু মাঝেমাঝে কিভাবে সাবধানে থাকতে হবে সেসব শেখায়।আর আদ্রর চাচি তো আছেই সবসময় পাশে থাকার জন্য।
আদ্র বেছে বেছে মেয়ে বাচ্চাদের পোশাক ই নিয়ে আসে।তাহু তখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে–“যদি আপনার আব্বু আসে তখন এ পোশাকের কি হবে?”
–“আব্বু আসলে আব্বুকে ও এসব পড়িয়ে দিবো।’
তাহু খিলখিল করে হাসে।এ কেমন পাগল?
–“হেসো না তুমি! শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে আমি আমার বউ বাচ্চাদের কতটুকু যত্ন নিই,এই নিজ হাতে সেবা করবো এদের।”
তাহু মুচকি হাসে।
–“বউকে এত ভালবাসেন কেন?”
–“ভালবাসার আবার কারণ থাকে নাকি।ভালবাসার মানে ভালবাসা ই জানে।”
তাহুর এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।আদ্রর মতো স্বামী পেয়ে সে সত্যি ই সৌভাগ্যবতী।
মেহু কল করে প্রতিদিন আপডেট জেনে নেয়।সবচেয়ে ভীষণ এক্সাইটেড সে ই।তার আপুর বাচ্চা হবে আহা কি আনন্দ।
_______________
দেখতে দেখতে তাহুর ডেলিভারির ডেট চলে আসে।তাহুকে আগে থেকেই হসপিটালে ভর্তি করায় আদ্র।বউয়ের ব্যপারে সে কোনো রিস্ক নিতে চায় না।
হসপিটালের বিছানায় তাহু হেলান দিয়ে বসে থাকে।আদ্র বাসা থেকেই নাস্তা নিয়ে আসে।আদ্রর চাচি ই বানিয়েছে।সে এসে তাহুকে খাইয়ে দেয়।তাহুর মা ও এসেছিলেন।তবে আদ্রকে দেখে উনি বের হয়ে যান।
তাহুর খুব ভয় লাগছে।আদ্র খাবার খাইয়ে উঠতে নিলে তাহু আদ্রর হাত শক্ত করে ধরে।আদ্র মুচকি হাসে–“কি হলো?”
–“আমার খুব ভয় করছে,আমি যদি…!”
আদ্র তাহুর ঠোটে আঙ্গুল রাখে।তারপর নিজের হাত দিয়ে আরো শক্ত করে তাহুর হাত ধরে বলে–“এই হাতগুলো যতদিন থাকবে ততদিন এই বউকে আগলে রাখবে।এই হাত কখনো বউকে ছাড়বে না,কোথাও যেতে দিবেনা।”
তাহু তারপর ও কাদে।তাহুর মা এসে ভরসা দেয়।
তাহুর পেইন শুরু হলে আদ্রকে বাইরে যেতে বলে।তাহু আদ্রর যাওয়ার পানে একনজর তাকিয়ে থাকে।
আদ্রর চোখে ও জল।সেই মায়াবি চোখ দুটো দেখলে তার এমনিতেই কান্না আসে।তার উপর সেই চোখে যদি কান্না দেখে তো বুকটা ফেটে যায়।
.
অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর আদ্র দেখতে পায় নার্সের হাতে একটা বাচ্চা।
–“মি: আহমেদ!”
আদ্র বাচ্চা দেখে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে–“সবকিছু ঠিক আছে মি: আহমেদ।আপনার ওয়াইফ মেয়ে সুস্থ আছে।”
আদ্র আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।
তাহুর মা হাসিমুখে বাচ্চাটাকে নিতে বলে।জিবনে প্রথম বাচ্চা কোলে নেওয়ার অনুভূতি বলে বুঝানো যায় না।এটা যে নেয় সেই একমাত্র উপলব্ধি করতে পারে।
.
আদ্র কাদতে কাদতে মেয়ের কপালে চুমু দেয়।এটা যে খুশির কান্না।
আর তাহুর মাকে বলে–“আম্মু দেখেন আল্লাহ আমার ছোট আম্মুকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।জিবনে আর কিছুই চাওয়ার রইলো না আল্লাহর কাছে।”
.
তারপর বাচ্চা কোলে নিয়েই আদ্র তাহুর কেবিনে যায়।ঘুমন্ত তাহুকে দেখে কত ই না নিষ্পাপ লাগছে।আসলে ই তো সে নিষ্পাপ।আদ্র তাহুর কানে কানে গিয়ে বলে–“ভালবাসি বউ”
___________
মেহুকে খবর দেয়া হয়।মেহুকে আর পায় কে?ভার্সিটির সব পড়া রেখে সে ক্লাস থেকেই চলে আসে হসপিটালে।
.
তাহু তখন জেগে উঠে।আদ্র তাহুকে বাচ্চাটা কোলে দেয়।মেয়েকে দেখে তাহু ও কেঁদে উঠে।আজ থেকে সে মা।মা ডাক টা পৃথিবীর সব ডাকের চেয়ে মধুর। তাইতোএত কষ্ট সহ্য করে হলেও এই মা ডাকের জন্য কত লড়াই।আর মা ডাকটা শুনেই সব কষ্ট ভুলে যাওয়া যায়।
মেহু এসে দৌড়ে তাহুকে জড়িয়ে ধরে।
তাহুর মা বলে–“আস্তে আস্তে মেহু।”
মেহুর খুশি দেখে কে?
তারপর বাচ্চটাকে সে কোলে নেয়।
হাসিমুখে বলে–“এই দেখো পুচকি,তুমি আদ্র তাহু কারোর মতো হবে না তুমি হবে তোমার খালামনির মতো।সারাদিন কিভাবে বক বক করতে হয় আমি ট্রেনিং দিবো ঠিক আছে?
মেহুর কথায় তাহু বলে–“আমার মেয়ে আমার মতো ই হবে।”
–“বললেই হলো আমার মতো হবে।”
তখন তাহুর মা বলে–“ঠিক আছে দুজনের মতো ই হবে।এবার শান্তি।তোরা বড় হলি কই?সামান্য বিষয়ে এখনো খুনসুটি করিস।”
.
তাহু মুচকি হাসে।
তারপর আদ্র তাহুকে আস্তে আস্তে ধরে গাড়িতে তোলে।মেহু বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে রেখেছে।আর দেখছে এত ছোট হাত পা কেমনে হয়?সে শুধু হাত গুলো ধরতেছে।বাচ্চাটা ঘুমিয়ে রয়েছে।ঘুম অবস্থায় মেহুর এক আঙ্গুল ধরে রেখেছে।আর মেহু হাসে,খালামনি প্রিয় হবে এটা ভেবে।
তাহুর যেহেতু নরমাল ডেলিভারি হয়েছে সেহেতু তাহুকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।
_______________
আদ্র তাহুর পাশে পাশে ই থাকে।যতক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে ততক্ষন দূরে থাকে।নইলে কাছে কাছে এটা সেটা সাহায্য করে।
.
আদ্রর চাচা এখন গ্রামের বাড়িতে থাকে।সেখানে আদ্র তাদেরকে বাড়ি করে দিয়েছে।বয়স হয়েছে তাই শেষ বিয়সে তিনি চান গ্রামের বাড়িতেই সময় কাটাতে।সেখানে চাচাকে রান্নাবান্না করে দেয়ার জন্য ও একজন মেয়ে ঠিক করে,গ্রামের ই মেয়ে।আদ্রর চাচি ও চলে যেত কিন্তু তাহুর জন্য এ কয়েকদিন থেকে যায়।
আদ্রর বাচ্চাকে দেখার জন্য চাচা এসেছিলো।
বাচ্চাকে দেখে তিনি খুব খুশি হন।ঠিক তাহুর মতো ই দেখতে হয়েছে।বিশেষ করে চোখ দুটো একদম তাহুর মতো।
আদ্রর চাচা দুইদিন থেকে চাচিকে সহ নিয়ে চলে যান।আদ্র কাজ করার জন্য একজন মহিলা ঠিক করেন।যেমন ঘর ঝাড়ু,বাচ্চার তাহুর কাপড় ধুয়া এসব করবে শুধু।
.
রান্নাবান্না তাহু করে,যদিও তাহু এটা স্বইচ্ছায় করছে।
বাচ্চাটা রাতে কান্না করে।তাহু ঘুমাতে পারেনা সাথে আদ্র ও জেগে থাকে।কি অন্যরকম অনুভূতি।বাবা হওয়ার আনন্দ।
তারপর মনে পড়ে তার বাবা মার কথা।তারা ও নিশ্চয় এমনভাবে ঘুমাতে পারত না।সন্তানের জন্য জেগে থাকতো।সন্তানকে কতটুকু আগলে রাখা যায় সেটায় চেষ্টা করতো কিন্তু আফসোস আদ্র বড় হয়ে আর তাদের সেবা করার সুযোগ পেলো না।আসলে যাদের বাবা মা আছে তাদের কি এ বিষয় গুলা মনে পড়ে?আর যদি মনে পড়ত তাহলে কোনো সন্তান ই বাবা মাকে কষ্ট দিত না।ছোট বেলায় যেভাবে আগলে বড় করেছে,তারা ও বড় হয়ে বাবা মা কে সেভাবে আগলে রাখত।আফসোস সেসব সন্তানদের প্রতি, তারা সেসব ভাবে না।তারা ও তাদের সন্তানদের ঠিক ই আগলে রাখে।কিন্তু বাবা মাকে নয়।
আদ্র এসব ভাবে আর তাহুর দিকে চেয়ে থাকে।তাহু বাচ্চাকে হেটে হেটে ঘুম পাড়ায়।নয়ত বসে থাকে।
তাহুর মা তাহুকে সব শিখিয়ে দিয়েছেন,বাচ্চার যাতে ঠান্ডা না লাগে।কিভাবে বাচ্চার পরিচর্যা করতে হয়।
বাচ্চা যখন কাদে তাহু ভীত চোখে চেয়ে থাকে।আদ্র হাসে,এই মেয়েটার মধ্যে কি আছে জানা নেই।সব বিষয় ই তার ভালো লাগে।কেমন যেন অদ্ভুত মায়া!তবে কি সে বউ বলে?এত সুন্দর এই সম্পর্ক গুলো।শুকরিয়া।
________
এভাবে কেটে যায় সাতদিন।মেহু দিনে একবার এসে হলেও পুচকি কে দেখে যায়।তার বিশ্ববিদ্যালয় এখন বন্ধ।তাই সে তাহুর সাথেই সময় কাটায়।
কিন্তু নাম সিলেক্ট করতে গিয়েই বিপত্তি তৈরি হয়।তাহু বলে আদ্র সিলেক্ট করবে,আদ্র বলে যেহেতু তুমি মা তুমি সিলেক্ট করবে আগে।এ নিয়ে ঝগড়া।অবশেষ মেহু এসে সমাধান করে।
মেহু বলে আমি কাগজে কয়েকটা নাম লিখব।যে যেটা নিবে সেটায় বাচ্চার নাম।
আপুর নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে কয়েকটা নাম,আর দুলাভাইয়ের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে কয়েকটা নাম লিখবো।দুইটা নাম সিলেক্ট করে সেটাই হবে বাচ্চার নাম।
শালিকার রায়ে আদ্র রাজি।
.
মেহু কাগজ নিয়ে লিখতে বসে।তাহুর প্রথম অক্ষর ত।ত দিয়ে-“তাসনিম,তাহিয়া,তানিশা,তাসমিম,তায়্যিবা,তামান্না,তাসমিমা,তাসনিয়া,তাসমিয়া।”
আর মেঘাদ্রের প্রথম অক্ষর ম।ম দিয়ে–” মায়িশা,মাহিতা,মেঘতা,মেঘা,মেঘলা,মারিয়া।”
কাগজগুলা ভাজ করে।ম অক্ষরের গুলা আদ্রকে নিতে বলে।আদ্র একটা কাগজ নেয় আর খুলে দেখে–“মেঘতা।”
মেহু এই নামটায় সিলেক্ট করে।”মেঘতা”নাম শুনে তাহু চমকে উঠে।কেন চমকে উঠে সেটা মেহু লক্ষ্য করেও করেনা এমন ব্যপার।
শেষমেশ কাকতালীয় ভাবে মেঘের পছন্দ করা নামটায় তাহুর মেয়ের নাম রয়ে গেলো।
তারপর তাহুকে কাগজ নিতে বলে,তাহু কাগজ টা নেই আর উঠে আসে তাসমিয়া।
অবশেষে নাম রাখা হয় তাসমিয়া মেঘতা।
সকলে খুব খুশি মেঘতাকে নিয়ে।মেঘতা যেন সবার মধ্যমণি।
_________
মেহু বিছানায় বসেছিল সেদিন ই অনাঙ্খাকিত কলটি আসে।মেহুর ফোনে একটা অচেনা নাম্বারের কল আসে।মেহু কল ধরতে পারেনা।
তারপর আবার তাহুর নাম্বার থেকে কল আসে।মেহু কল রিসিভ করতেই একটা অচেনা লোক বলে উঠে–“আপনি বোধহয় এই নাম্বারের ব্যাক্তির বোন?
মেহু বলে–“হ্যা,কিন্তু আমার আপু কই?”
–“আপনার আপু এক্সিডেন্ট করেছেন।ঘটনাস্থলে ই তিনি মারা যান।আর আপনার আপুর হাত ধরে আরেকজন পুরুষ ছিলেন উনার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।আপনি…….
মেহু আর কিছুই শুনতে পেলো না।এ হতে পারেনা,মিথ্যা।আপুরে……বলেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়……..
চলবে………….!
#তাহরীমা
(ভুলগুলা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)