বক্ররেখা(৫ম পর্ব) ###লাকি রশীদ

0
97

###বক্ররেখা(৫ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

ঠিক সময়ে সব রান্না শেষ হবে কি না ভাবছি। জরিনা তার বোনকেও ফোন করে আনিয়েছে। মেহের একবার এসে গম্ভীর মুখে চা বানিয়ে রুমে খাবে বলে নিয়ে চলে গেছে। আমি হেসে ভাবি, তুমি ছাড়া কি আমার রান্না সব আটকে থাকবে? এরকম সময়ে চোখ বুজে আমি আল্লাহর কাছে মনে মনে দোয়া করি, আল্লাহ তুমি ছাড়া আর কারো মুখাপেক্ষী ও নির্ভরশীল আমাকে করো না। আমার মা বলতেন, চাওয়ার মতো চাইলে খোদা ক্যামনে শোনে না? অতীতের অনেক বারের মতো এবারও সেটা পরীক্ষিত সত্য বলে প্রমাণিত হলো। হঠাৎ দেখি লুনা এসেছে। আমার বড় মেয়েটার মধ্যে বিবেকবোধ এতো বেশি যে, লাঞ্চের পর অফিসে বলে সোজা এখানে চলে এসেছে। হেসে বললো,দাও মা তুমি ওদের কে দিয়ে সব কাটিয়ে ধুইয়ে রেডি করে দাও। আমি চটপট তরকারি বসিয়ে দেবো। দয়া করে শেষ হবে কি না, চিন্তা করে করে আর ব্লাডপ্রেসার বাড়িও না।

অনেক দিন পর মনের ইচ্ছে খুশি প্রায় ১০টা পদ রান্না হলো। ঠিক যেন ওদের বাবা বেঁচে থাকার দিনগুলো ফিরে এসেছে। মেয়েদের শশুর বাড়ির দুই পরিবারের প্রায় ১২ জন,বকুলের পরিবারের ৪ জন,রুম্পা এবং শিশির, আমার পরিবার, কাজের মানুষ সবকিছু মিলিয়ে কমপক্ষে ৩০ জন এর খাওয়ার ধাক্কা। অবশ্য আমার কেন যেন মনে হয় আজ মেহের থাকলেও শায়লা ও তার স্বামী কোনোভাবেই উপস্থিত থাকবে না। কিছুক্ষণ আগে বকুল ফোন করে বলেছে, কি একটা জরুরী কাজে ওদের গ্ৰামের বাড়িতে যেতে হবে। তাই, ওরা আসতে পারছে না। মায়মুনাকে বলেছিলাম,
ও বলেছে খেতে আসছি না। কারণ গ্ৰামে ভীষণ গরু চুরি বেড়েছে। রাতে থাকলে নিয়ে যাবে। তবে অপারেশন এর দিন আসবো ইনশাআল্লাহ।

আছরের নামাজ আদায় করে মেয়েটার জন্য অনেক দোয়া করলাম। আমার কথা ভেবে যেমন ছুটে এসেছে ও, ঠিক তেমনি ওর সব ইচ্ছেগুলো
পূর্ণ করে দাও মাবুদ। আমার বাচ্চাগুলোর বিবেক
ও মনুষ্যত্ব কেড়ে নিও না। শুধু টাকার পেছনে না দৌড়ার তৌফিক দান করো। হঠাৎ দেখি রায়ান এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। বললাম ঘুম ভাঙল দাদুভাই? মুখ গোমড়া করে বললো আমি স্বপ্নে দেখি আমাকে ছেড়ে তুমি অনেক দূরে কোথাও চলে যাচ্ছো। মনে মনে হাসছি, বললাম তুমি তো এখন বড় হয়ে গেছো। দাদী না থাকলেও চলবে। সে এবার চিৎকার দিয়ে উঠলো, না না একটুও চলবে না আমার। আমি ওকে শান্ত করার জন্য বলি বড়ফুপু এসেছে। চলো আমরা এখন রান্নাঘরে যাই। বড়ফুপুর নামে বাচ্চারা পাগল, সে যতোবার আসে বাচ্চাদের জন্য একটা করে খেলনা নিয়ে আসে। রান্নাঘরে যেতে যেতে দেখি রায়ান স্বপ্নের কথা মনে করেই হয়তো আমার হাত পেঁচিয়ে ধরে ধরে হাঁটছে। ঠিক যেমন নাঈম ছোট বেলায় হাটতো। কিছু স্মৃতি বুকটাকে মাঝে মাঝে এফোড় ওফোড় করে দেয়। কিচ্ছু করার নাই।

আগুনের তাপ লেগে মেয়েটার মুখ লাল হয়ে আছে। সে এসে যে আমাকে কতোটুকু স্বস্তিতে ফেলেছে তা বলার মতো নয়। তারও বেশ কিছু সময় পর রাত্রি এলো। বললাম একা এলি যে? বললো আমি তো অফিস থেকে সোজা এখানে এসেছি মা। ওরা সবাই রাতে আসবে। তুমি একা মানুষ, এতো সব ঝামেলা করতে গেলে কেন? বাজারও মনে হয় তুমি করেছো। কোনো মানে হয়? বললাম সব বাজার নাঈম করে দিয়েছে। সে
হেসে বললো, হঠাৎ এতো দয়া বর্ষনের কারণটা কি শুনি? গত কালকের ঘটনা শুনে জড়িয়ে ধরে বলছে,স্বরুপে ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ জননী।
এই না হলে তুমি আমার মা। আপু তো দেখি রান্না করছে, আমি কি করবো বলো? বললাম রান্না শেষ হলে পারলে একটু পায়েস কর। মেয়েটা সেই দুপুর থেকে তাপ খাচ্ছে।

মনমেজাজ ভালো থাকলে আমার ছোট মেয়ে রাণী হয়ে যায়। বললো ঠিক আছে দেখি আপুকে একটু সাহায্য করতে পারি কিনা। একটু পর শুনছি হা হা করে জোরে হেসে উঠেছে। যেদিকে যায় সেই জায়গাই সে মুহুর্তের মধ্যেই গরম করে ফেলে। জরিনা একটা একটা করে আইটেম টেবিলে এনে রাখছে। রাত্রি পায়েস বসাবে এখন দেখা যায় নারকেল ই কুরানো নেই। একদম ভুলে গেছি। বাসার সামনের দিকে একদম মেহেরের বেডরুমের কাছে ২টা নারকেল গাছ আছে। রাত্রি দেখি জোরে জোরে দারোয়ান কে ডেকে নারকেল পেড়ে দিতে বলছে। দুপুরের খাবারও মেহের রুমে নিয়ে খেয়েছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি ওকে শোনানোর জন্য ই রাত্রির এই চেঁচামেচি।

সাতটার দিকে বাড়ি যেন অতিথি আসায় গমগম করছে। লাল টকটকে শাড়িতে রুম্পাকে একটা লালপরী লাগছে। লুনা একফাকে গিয়ে মেহেরকে কি সব বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে। রাত্রি বলছে কি গো ভাবী ঘুমে ছিলে না কি? ও বলছে ঘুমে থাকবো কেন, এটা কি ঘুমের সময়? লুনা সামাল দিচ্ছে, উনার ভীষণ মাথা ব্যথা করছে। রাত্রি এবার বলল, পৃথিবীতে মনে হয় একপিস ই এরকম বাড়ি আছে যেখানে দাওয়াতের দিনও কে গেষ্ট আর কে হোষ্ট বুঝা মুস্কিল। লুনা রেগে বলল তুই তোর কাজ কর না বাপু। এতো কথা বলিস কেন? রাত্রি সতেজে বলে সব কাজ ই তো তুমি আর আমি মিলে করে দিলাম। এখন আমার শশুর শাশুরি আসছে, আমি এখন তাদের সাথে গিয়ে গল্প করবো। এরা যেন ভাবতে না পারেন বৌমা দেখি আমাদের সমাদর করছে না। তুমিও চলো তো মা। আমি বেশ দেখছি এর মধ্যে মেহের আমার দিকে অবাক হয়ে বেশ কয়েক বার তাকিয়েছে। মনে হয় সে ভাবছে এই বুড়িটা আমূল পাল্টে গেল কিভাবে? আমি এসব একদম তোয়াক্কা না করে, ধীরে সুস্থে উঠে রাত্রিকে নিয়ে লিভিংরুমের দিকে রওনা দেই।

আমি কাউকে দাওয়াত দিলে একসাথে খাওয়া দাওয়াগুলো টেবিলে দিয়ে মেহমানদের ডেকে নিতাম। বেশ কয়েক বছর ধরে দেখি প্রথমে ফ্রাইড চিকেন ও ফ্রেঞ্চফ্রাই দেয়া হয়। এগুলো নাকি ষ্টার্টার। রায়ান বলেছিল ছোট ছোট সমুসা ও
পাপড়ও দেয়ার জন্য। কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য আর সম্ভব হয়নি। এরপরে আসল পর্ব এসেছে। লুনার শশুর নেই, শাশুরি ও দেবরের পরিবার এবং বাচ্চাগুলো নিয়ে রনি এসেছে। রাত্রির শশুর শাশুরি নিয়ে ভরভরন্ত সংসার। ভালো লাগে যখন দেখি নাঈম ঠিক সময় মতন চলে এসেছে। ও আর রাত্রি মিলে সার্ভ করছে। আমার ধারণা সঠিক ছিল,শায়লা সেই বিকেলেই গাড়ি পাঠিয়ে বাচ্চা দুটোকে নিয়ে গেছে। আজ না কি ওর বাবার বাসায় দাওয়াত। স্বামী স্ত্রী ওখানেই খেয়ে ফিরবে। কেন জানি অন্য দিনের মতো অশান্তি না লেগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি আমি।

রাত্রি অবশ্য একটু আগে আমার সাথে ঘ্যানঘ্যান করেছে,আরে মা হিংসায় মনে হয় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। ননদগুলো শশুরবাড়ির এতোজন লোক কে নিয়ে খেতে এসেছে। আবার দুঃখের কথা হলো,প্রায় দুই বছর পর শাশুরি বেচারি না হয়ে
অনেক কঠিন রুপে সংসারে পদার্পণ করেছেন। আমি হেসে বলি, ওর হিংসা লাগবে কেন? আমি কি ওর বাবার কাছে থেকে টাকা এনে খাওয়াচ্ছি না কি? এদের কথা বাদ দে তো তুই। এসব ভাবলে
আমার জিহ্বা টা তিতকুটে মেরে যায়।

রনি হঠাৎ এসে হাজির হয়ে বলে,রুম্পার কাছে শোনলাম, আপনি না কি চোখ দেখাতে গিয়ে ছিলেন মা? আমাকে বললেন না তো, আপনি কি রাগ করেছেন আমার উপর? আমি হেসে বলি,
তোমার উপর রাগ? এই ২বছর ধরে তুমি আমাকে
যা করেছো, আমার ছেলেগুলোও তা করেনি। ইচ্ছে করেই সেদিন বলিনি, পার্টনার নিয়ে এতো ঝামেলা শুনেছি তাই। সব কি ভালোয় ভালোয় মিটেছে বাবা? বেশি ভেজালে যেও না, দিনকাল ভালো নয়। সে চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো, আপনি কি মনে মনে কোনো চিন্তা ভাবনা করছেন না কি? আমি চমকে উঠে বলি, কেন বলো তো? সে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে, কেন যেন মনে হলো। সেই সময় লুনা এসে বললো,মা আমরা এখন উঠবো। অনেক রাত হয়ে গেছে। ও একথা বলে সামনে এগোতেই আমি হাঁটা দিবো দেখি রনি হাত ধরে বলছে, সবকিছু কি ঠিক আছে মা? আমি হেসে আশ্বস্ত করি,সব ঠিক
আছে। কোনো সমস্যা নেই রে পুত। এবার রনি বলছে কাল সকালে আমি এসে আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলি, ঠিক আছে। আমি তোমার সাথে যাবো

লুনার শাশুরিকে বললাম,বেয়ান আপনি কষ্ট করে এসেছেন খুব খুশি হলাম। এমন ছেলে পেটে ধরেছেন আপনি আসলেই অনেক ভাগ্যবতী। গর্বিত মায়ের মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠে। চেয়ে দেখি নাঈম মাথা নিচু করে আর মেহের শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের বিদায় দিয়ে রুমে ঢুকবো দেখি ছেলে পায়ে পায়ে আমার সাথে এসে ঢুকেছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি, কি রে? কিছু বলবি? সে কাঁচুমাচু মুখে বললো, তোমার পানির বোতলে পানি আছে কিনা দেখতে এলাম। আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বোতল নিয়ে চলে গেল। পানির ফিল্টার রান্নাঘরে থাকে।
ওখান থেকে এসে ঔষধবক্স নিয়ে আমার বেড সাইড টেবিলে রাখলো। তারপর জড়িয়ে ধরে আদ্র গলায় বললো, আল্লাহর হাওলা মা। সকালে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

সকালে হাঁটা থেকে ফিরে হয়রান হয়ে বসেছি। কি যে হয়েছে আমার, ইদানিং এতো ক্লান্তি এসে ভর করে। মনে হয় কোনো এক উঁচু পর্বতমালা চষে আসলাম যেন। চোখ বুজে ছিলাম,আম্মা ডাক শুনে চমকে দেখি রান্নার খালা চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে আমাকে সে বেশ সমঝে সমঝে
চলে। তার মালকিনদের সোজা দেখে সেও ঠিক জায়গায় এসেছে। এক বাটিতে দেখি ছোলা ভূনা নিয়ে এসেছে। মাঝারি প্লাষ্টিকের বাটির অর্ধেক মুড়ি দিয়ে পুর্ণ করে এনেছে। আমি বলি, সূর্য আজ কোনদিকে উঠলো রে? চা,মুড়ি,ছোলা……… কিছূই বাকী নেই দেখি। এবার সে নিচু গলায় বললো,বড় ভাইজান কাইলকা রাইতে আইয়া কইছে আফনার খাওয়ার দিকে নজর দিতে। দিন দিন আফনে বুলে(নাকি) হুকাই যাইতাছইন। ঠিক মতো খিয়াল(খেয়াল) করলে আমারে ৫০০/টাকা বাড়াই দিবো কইছে।

আমি ওর কথা শুনছি আর দেখছি বুকের ভেতর উথালপাথাল ঝড় বইছে। চুলায় একটা পাত্রে পানি বসালে কিছুক্ষণ পর যেমন টগবগ করে ফুটতে থাকে আমার বূকের ভেতরেও যেন অচেনা অজানা এক আবেগ ফুটতে লাগল। মুড়ি আমি এমনিতে খেতে পারি না কিন্ত এখন ছোলা দিয়ে বেশ আয়েশ করে খাচ্ছি। মুচকি হেসে ভাবলাম,
তার মানে দাঁড়ালো মনই হচ্ছে শরীরের আসল চালিকাশক্তি। মন ভালো তো সব ভালো,মন খুশি তো সব খুশি। আমরা নিজেও হয়ত জানি না,
সামান্য একটা কথা বলে বা কাজ করে পরিবারের সদস্যদের কতোটূকু আনন্দ দেয়া যায়। বসে বসে মন ভরে দোয়া করলাম, আল্লাহ আমার ছেলের বুকের জমিনে আমার জন্য যতটুকু ভালবাসা রেখেছো………. আমি বেঁচে থাকাকালীন সময়ে কোনো দিনও তা বিন্দু পরিমাণও কমিয়ে দিও না মাবুদ। মা ছেলের সম্পর্কটা সুখের ও সুন্দর করে দাও।

দারোয়ান বাজার নিয়ে এসেছে। আজকে আমার চোখের ছানি অপারেশন। তাই কি এলো না এলো আর দেখতে চাই না। অনেক তো করলাম, এবার একটু ক্ষান্ত দেই। সাধারণত আমি বলে দেই কি কি রান্না হবে না হবে। আজকে রান্নার খালা এসে জিজ্ঞেস করতেই বললাম, আমি জানি না। ভাবী দেরকে বলে দেখো কি করাবে। জরিনা ফোড়ন কাটছে, আজকে খালার খবর আছে। ভাবীর মেজাজ এখন গরম থাকবে আর সারাদিন খালা শুধু বকা খাবে। আমি ভাবি,যা খুশি হোক। তুমি নাজমা বেগম না থাকলে কি আর পৃথিবী চলবে না? নিজেকে এতো প্রয়োজনীয় ভাবারও কোনো কারণ নেই।

রুমে গিয়ে দেখি রায়ান স্কুল ড্রেস পরে রেডি। আমাকে দেখে বলল, আমিও তোমার সাথে হাসপাতালে যেতে চাই দাদী। বললাম ওখানে তো বাচ্চাদের যাওয়া ঠিক নয় ভাইয়া। আমি তো বিকেলেই চলে আসব ইনশাআল্লাহ। সে এবার গোমড়া মুখে বলছে,বড় ও ছোট ফুপু কে বলতে শুনেছি ওরাও তোমার সাথে যাবে। বড়দের কি মজা তাইনা? যেখানে ইচ্ছে সেখানেই যেতে পারে। আমি আদর করে বলি, তুমি বড় হয়ে ডাক্তার হলে আমি তোমায় ছাড়া কোনও অপারেশন করাবো না। এবার নাতির মুখে হাসি ফুটে উঠল। বললাম,ফুপুরাও যাবে না। তুমি ভুল শুনেছো। ওদের অফিস আছে তো। আজকে তো আর বন্ধের দিন নয়।

কালকে আমি যখন শোবো তখন সজলরা এসেছে। হর্ণের শব্দ শুনে বুঝেছি, আমার সাথে দেখা হয়নি। আজকে এরা কি স্কুলে যাবে না, না কি? ভাবতে ভাবতে নাঈম এসে হাজির, বলছে মা আমি এদেরকে নামিয়ে দিয়ে আসছি। তুমি আস্তে আস্তে রেডি হয়ে যাও। আমিও তোমার সাথে হাসপাতালে যাচ্ছি‌। চোখ তুলে বলি, শুধু শুধু কষ্ট করবে কেন? আমার কথা যেন‌ শুনতেই পায়নি এমন ভাব করে লজ্জিত মুখে ছেলে নিয়ে বের হয়ে গেল সে।

গিজার চালু করে ভালো করে গোসল সেরে নিতে ই রনি উপস্থিত। বললো আপনার মেয়েরা লাঞ্চের পর অফিসে বলে হাসপাতাল এ আসবে মা। রেগে বলি, ওদের বারণ করে দাও। আমি কি হার্টের অপারেশন করাতে যাচ্ছি না কি? সামান্য চোখের ছানি কাটাবো বলে যাচ্ছি। অফিসের কাজ রেখে এসব হুলস্থুল করার মানে কি? সে এবার বলছে,
ঠিক আছে আমি ওদের মানা করে দিবো। মাথা খুব ঠান্ডা রাখবেন এখন। উত্তেজিত হওয়া উচিত নয় মোটেই। নাঈম এসে ওকে জোর করে নাস্তা করাতে নিয়ে গেল। আমি উঠে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করি,সব ধরনের জটিলতা থেকে আমায় মাফ করো। হেঁটে,
চলে, ফিরে যেন দুনিয়া থেকে যেতে পারি। চোখ দুটি ভালো রেখো আমার।

যাওয়ার সময় সবাইকে বলার পর আমি খেয়াল করলাম এই শহরের নামকরা দুই ডাক্তার আমার ছেলে ও ছেলের বৌ অনেক আগে না কি কাজে চলে গেছে। নাঈম সামাল দিচ্ছে, সজলের একটা ইম্পোর্টেন্ট মিটিং আছে মা। সেজন্য ওরা দেখা করতে পারে নাই। আমি হেসে বলি, সেটাই তো। মা হচ্ছেন অদরকারি মানুষ এখন। উনাকে বলে যাবার জন্য কি এসব দরকারি মিটিং বসে থাকবে না কি? গাড়িতে উঠে ভাবলাম,ওরা দেখা করলেই
বা কি আর না করলেই বা কি !!! এসবে এখনও এতো খারাপ লাগার মানে কি? সৃষ্টিকর্তা এক ছেলের চোখ থেকে অন্তত স্বার্থপরতার চশমা তো খুলে দিয়েছেন,সেটার শুকরিয়া না হয় আদায় করি। রনি গাড়ি চালাচ্ছে,পেছনের সিটে বসে নাঈম আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, একদম ভয় পেও না মা। আমরা সবাই তো বাইরেই থাকবো। আমি হাত চাপড়ে বলি,নির্ভয়েই যাচ্ছি বাবা। এতো কম সাহস নাকি তোর মায়ের। রাস্তার অসংখ্য জ্যাম ঠেলে গাড়ি তখন গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যস্ত।

(চলবে)
###৬ষ্ঠ পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here