বক্ররেখা(৬ষ্ঠ পর্ব) ###লাকি রশীদ

0
201

###বক্ররেখা(৬ষ্ঠ পর্ব)
###লাকি রশীদ

হাসপাতালে ঢুকে দেখি ফারুক ও মায়মুনা চেয়ার এ বসে আমাদের অপেক্ষা করছে। দুজনই সহজ সরল মানুষ। নাঈম কে বারবার জিজ্ঞেস করছে
পুরোপুরি অজ্ঞান করে ফেলবে না কি? আমার ছেলে জ্বি কি করবে বলছেন, বলতেই রনি বলছে
জানতে চাচ্ছেন ফুল এনেসথেসিয়া দেয়া হবে না কি না। খিদে লেগেছে মনে হয়, আমি দেখি ব্রেড
আর ১ হালি কলা নিয়ে বসে আছে। আমি নাঈম কে বলি, আশেপাশে কোনো রেষ্টুরেন্ট নেই? তোর চাচা চাচীকে ভালো করে নাস্তা করিয়ে আন তো। এবার মায়মুনা লজ্জায় শেষ, এখানে কি আমরা খেতে এসেছি না কি? বিপদের সময় এসব কি আবার? নাঈম এতো বলার পরও সে উঠে দাঁড়ায় নি। শেষে ও ফারুক কে নিয়ে গেছে। আসার সময় পরোটা,ভাজি এসব নিয়ে এসেছে। কেবিনে বসে ও সেটা খেল। রনি চলে গিয়েছিল ডাক্তারের খবর জানার জন্য। নাঈম ও ফারুক রেষ্টুরেন্টে
আর আমরা দুই জা মিলে কিছুক্ষণ ফুপুর ফাশুর করলাম।

কিছুটা দেরি করে এলেও অত্যন্ত যত্মশীল হয়ে ডাক্তার ছেলেটা তার দায়িত্ব শেষ করলো। হাসপাতালে ছিলাম প্রায় ৫ ঘন্টা। নাঈম এমন অবস্থা করছে যেন আমি একটা ছোট বাচ্চা। মেয়ে দুটি কথা শোনেনি, অফিস থেকে চলে এসেছিল। রাতে বাসায় এসেছি। রনি ও রাত্রি অনেক জোর করেছে আমাকে যার যার বাসায় নিয়ে যাবার জন্য। আমি কারো সাথে না গিয়ে বলেছি, আমি আমার বিছানায় না শুলে ঘুম ভালো হয় না। নাঈম বলছে, আমি তো সেটাই বলছি। মা তার নিজের বাড়িতেই থাকবে। রাত্রি চেঁচাচ্ছে,হ্যা থাকবে তো খুব বলছো। ওখানে আজকে রাতে কে দেখবে মা কে? নাঈম বললো, কেন আমি রাতে মায়ের সাথে থাকবো। রায়ান কে না হয় মেহের এর কাছে পাঠিয়ে দিবো। রাত্রি তীক্ষ্ম কন্ঠে বলে উঠলো, এটা করলে ভাবি না আবার তোমার বনবাসের সাজা দিয়ে দেয় দেখো।

নাঈম এবার নিচু গলায় বললো,ও আর কিছু বললেও লাভ হবে না। আমি ওকে বলেছি আর কোনো দিন আমাকে আমার মায়ের বিরুদ্ধে কিছু বললে ওর বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো। লুনা এবার বলছে,ভালো করেছো। বৌকে অবশ্যই প্রাপ্য অধিকার দিবে কিন্তু মাকে অসম্মান করে নয়। এদিকে ফারুক আবার তার গরুর দুশ্চিন্তায় রাত্রিবাস করবেই না। চলে গেল ওরা। যাবার আগে বারবার বলছে, আপনার জন্য আমরা খুব দোয়া করবো ভাবী। চিন্তা করবেন না, দেখবেন ইনশাআল্লাহ আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।

বাসায় আসার পথে সবাইকেই বললাম, জরিনা কে আমি অনেক আগেই বলে রেখেছি।২/৩ রাত
যেন আমার কাছে থাকে। ও থাকবে কথা দিয়েছে। নাঈম এবার কাতর গলায় বললো, আমার কথা তোমার একেবারেই বিশ্বাস হয়না, তাই না মা? বলছি এই কদিন তোমার খুব ভালো দেখাশোনা করবো……… আর তুমি জরিনার কথা বলে যাচ্ছ।
আমি হেসে বলি,আরে বাবা ওয়াশরুমে যেতে অন্তত ওকে আমার লাগবে। তুমি বলছো আমার দেখাশোনা করবে,২/৩ দিন কি তুমি একেবারে ই দোকানে যাবে না,নাকি? গমগমে স্বরে বললো,সে
রকম ই ভাবতে পারো। গলায় তার কান্না আটকে আছে মনে হলো। তাই আমি আর উচ্চবাচ্য করি নি। মাকে আদরযত্ন করতে চাচ্ছে যখন করতে দেই। মন থেকে বলছে না উপর উপর বলছে সেটা না হয় দুদিন গেলেই বুঝতে পারবো।

যত্ন শুধু না, বাড়াবাড়ি রকমের যত্ন করলো নাঈম।
জরিনার শুধু ওয়াশরুমে আনা নেয়া এবং কাপড় পাল্টে দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ করতে হয়নি
রায়ান কে অনেক বলে কয়ে তার মায়ের কাছে দেয়া হয়েছে। পরদিন সকালে এসে বলছে, দাদী মা আমাকে মেরেছে। বললাম কেন মেরেছে? সে এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো, রাতে আমি পা টিপে টিপে তোমার কাছে আসতে চাচ্ছিলাম।মা দেখে ফেলেছে। আমি বলি, মায়ের কাছে খুশি খুশি থাকতে হয় দাদুভাই। তাহলে আল্লাহ তোমায়
অনেক সওয়াব দিবেন। এবার সে দুই হাত বেড় দিয়ে দেখাচ্ছে, কতোটা সওয়াব। কম না বেশি?
বললাম অনেক বেশি। বিজ্ঞের মতো এবার বলে,
ও বুঝেছি। সেজন্যই বাবা তোমার সাথে থাকতে চায়? বাবাকে যাতে আল্লাহ অনেক সওয়াব দেন।
আমি নিস্পাপ সহজ সরল শিশুটির মুখের পানে তাকিয়ে ভাবি, তুই ছোটই থাক্ ভাই। তোর বড়
হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই আর দুনিয়ার বিন্দু পরিমাণ কূটনীতি শেখারও দরকার নেই।

২ দিন পর স্বাভাবিক কর্মকান্ড চলতেই নাঈমকে জোরে দোকানে পাঠিয়ে দেই। কর্মচারীরা এতো দিন ধরে কি করছে তা আল্লাহ মালুম। আমি বাসায় আসার পর থেকে মেহের নিজে থেকে এসে কথাও বলেনি। উল্টো মনের ঝাল মেটাতে প্রায় প্রতিদিন ই ওর ছেলেকে প্রচন্ড বকছে না হয় কান মুলে দিচ্ছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি,ও মনে হয় আমার কাছে থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আশা করে আছে। মনে মনে হাসছি, এত্তো বোকা হতে আমি আর রাজি নই। তোমার ছেলেকে মারো,বকা দাও
………… আমার কি তাতে? যা খুশি করো না বাপু।
দুদিন পর স্বামীর সাথে সাথে ছেলেও যে দুচোখে দেখতে পারবে না তখন মজা বুঝবে।

সেদিন হাঁটতে বের হয়ে এসব নিয়ে বকুলের সাথে কথা বলছি। ও বলছে,আরে আপা এসব মানুষ হচ্ছে গিরগিটির মতো। ক্ষণে ক্ষণে তার রং রুপ
পাল্টায়। পাত্তা দিও না মোটেই। শাশুরির টাকা দিয়ে হীরের দুল কিনে আবার উল্টো উনি রাগ
দেখাচ্ছেন !!! আমি হলে তো ওকে কষে চড় একটা মারতাম। বেহায়া নির্লজ্জ ইডিয়ট একটা মেয়ে কোথাকার। মফস্বলের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে হীরের দুল মারাচ্ছেন। বকুলের আবার একটা দোষ হলো,রেগে গেলে বকার তুবড়ি ছোটায়। কি বলে হুশ থাকে না। মফস্বলের
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলে কি হীরের দুল এর শখ থাকতে নেই?

ওকে এবার আমি হেসে সেটা বলতেই বললো,
শখ থাকা তখন ই ভালো হতো যদি শাশুরির টাকা
না মারার জন্য স্বামীকে উস্কাতো। তুমি কি মনে করো,ওর কুটবুদ্ধি ছাড়া নাঈম একা একা এসব করেছে? কার দৌড় কতটুকু আমি ভালো করেই জানি আপা। এইচএসসি পাস মেয়ে, নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে ইমিটেশন এর দুল কেনা সম্ভব নয়………. আর হীরের দুল এর এত শখ !!! এতোই শখ তো মেয়ে তোর স্বামীর টাকা দিয়ে কিনে নে না। স্বামীর টাকা জমাবে আর এখানে সেখানে পার্টির নামে উড়াচ্ছে। আমি বলি, এদের কথা বাদ দে । আমার কেমন যেন শ্বাসকষ্ট হয়।
ও আর কি বুঝে যেন কথা বাড়ায় না।

বাসায় ফিরতেই রান্নার খালা এসে মুড়ি, ছোলা ভূনা ও ঢা দিয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে বলছে,কাল
রাত হয়ে গেছে বলে বড় ভাইজান আপনাকে আর বলতে পারেনি উনি আপনার জন্য কচি দেখে শসা এনেছেন। এখন কেটে দেই দুটো? মানা
করে বলি, এখন সকালে ঠান্ডার মধ্যে শসা খেতে যাবো কেন? অন্যসময় দিও। সে এবার মাথা নেড়ে তার কাজে চলে গেছে। চা খেয়ে উঠে পড়ি, নিজে এভাবে বসে বসে কাজ করাই বলে, রান্নার কাজ এগিয়ে দেই বলে একজন সমাজ সেবা করছেন আর একজন মানব সেবা করছেন। তাও যদি তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারতাম। কোনো লাভ নেই, আমার মা ঠিকই বলতেন নিজের পশম ই আপন না রে মা। তাহলে বল অন্যকেউ আপন হবে কি করে? সংসার সংসার করে যতো কিছু করলাম এর এক তৃতীয়াংশ যদি আল্লাহর খুশির জন্য করতাম তবে হয়তো বা আল্লাহকেই পেয়ে যেতাম।

রুমে ঢুকে ডিমলাইটের নীলচে আলোয় দেখি,
রায়ান আবার লাথি মেরে গা থেকে লেপ সরিয়ে দিয়েছে। ওকে ঠিক করে দিয়ে লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ি। ঠান্ডা কনকনে শীতের সকালে হাঁটায়
ততোধিক ঠান্ডা হয়ে যাওয়া শরীর উঞ্চতা পেয়ে
আরামে কখন চোখ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেছি নিজেও বলতে পারি না। উঠে দেখি দশটা বেজে গেছে। ঠিক তক্ষুনি ফোন বেজে উঠতেই
ধরে দেখি রাত্রি ফোন করেছে। আমি ভয় পাই, এই সময় তো ওর অফিসে থাকার কথা। বললাম কি হয়েছে রে? হেসে বললো অফিসে আসার পর শুনছি অফিসের একটা কাজে সিলেট যেতে হবে
৪/৫ দিনের জন্য। ওখানে অফিসের একটা ব্রাঞ্চ খুললে লাভ হবে কিনা………. সেটা দেখার জন্যই
মূলত যাওয়া। গাড়ি দিবে সাথে। মনে আছে, তুমি তো একবার যেতে চেয়েছিলে ওখানে? তাই জিজ্ঞেস করছি। ২/৩ দিন একটু ব্যস্ত থাকবো।বাকি দুইদিন তোমায় নিয়ে ঘুরবো ইনশাআল্লাহ। বকুল খালা তো বেড়াতে ভালবাসে। উনাকে সাথে নিয়ে নাও। তাহলে হোটেলে দুজনে থাকলে। বিকেলের মধ্যেই আমার কাজ শেষ হবে। ৩ জন
জম্পেশ আড্ডা দেবো,শহরে বেড়াতে ও খেতে যাবো। ৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে দিয়েছে। কাজ শেষ করে চেষ্টা করবো অন্য কোথাও যাওয়ার।

বললাম হ্যা যাবো। দেখি বকুল না গেলেও আমি ইনশাআল্লাহ যাচ্ছি। এখন উঠে কাপড় গুছাচ্ছি। খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো, সত্যিই তুমি যাবে মা? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি হেসে বলি, কখন আসবি? বললো ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আসছি। তুমি ঔষধ দেখে দেখে নাও। বকুল কে ফোন দিয়ে বলতেই এক পায়ে খাড়া সে। বেড়াতে এতো ভালবাসে ও। শরীর ফিট থাকার কারণে ঘুরতে সমস্যাও হয় না। আমি কুয়োর ব্যাঙ বরং বেরোতে চাই না। যতো দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে, কখন টুপ করে চলে যাবো মেয়েগুলোর সাথে একটু সময় কাটাই। বকুলকে বললাম তুই দেরি করিস না। ও কিন্তু একঘন্টার মধ্যে চলে আসবে। সব ঠিকঠাক করে খুশি মনে আমি পায়ে পায়ে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দেই নাস্তা করবো বলে।

ঢুকবার আগে শুনছি মেহের গজগজ করছে,যত
যন্ত্রণা যেন আমার। একটু খেয়াল করলে কি হয়?
সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বোম ভোলানাথ হয়ে বসে আছেন। ২ ফ্যামিলির এতো জন মানুষ, আমাকে
সব দেখতে হবে কেন? মুরুব্বিরা ঘরে থাকলে এসব একটু করেই, এটা কোনো বড় ব্যপার না। কে মনে হয় বুদ্ধি দিয়েছে সংসারে খেয়াল করো না, বুদ্ধি দেয়ার মানুষের অভাব নেই এ বাড়িতে।সবাই বুদ্ধি দিতে উস্তাদ। উনার বোন, আমার স্বামীর বোন সবাই এই দলে আছে। রান্নার খালা ও জরিনা কাজ করে করে তার কথা শুনছে।

আমি রান্নাঘরে ঢুকে খালার দিকে তাকিয়ে বলি,
আমার নাস্তাটা দাও তো। সে তাড়াতাড়ি করে রুটি
তাওয়ায় সেঁকতে দিয়েছে। সিঙ্কে দাঁড়িয়ে মেহের মাছ গুণে দিচ্ছে। জরিনা একগাদা পেঁয়াজ, রসুন নিয়ে কাটতে বসেছে। আমি অবাক হয়ে বলি, তুই আবার মশলা কাটছিস কেন? সে বলল, আমাকে
ভাবী বলেছে। খালা করতে গেলে ভাবীর বের হতে
দেরি হবে। ততক্ষণে খালা টেবিলে রুটি দিয়ে বললো,বড় ভাইজান রুটির সাথে কাঁচা পেঁপে ভাজি দিতে বলেছে। আমি বলি,হ্যা রেখে দাও আমি যাচ্ছি।

এবার মেহেরের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললাম, তোমাকে কি আমি বলেছি ২ ফ্যামিলির এতো জন মানুষের সবকিছু দেখতে? তুমি দেখছো
কারণ তোমার স্বার্থ আছে। মাসের মোট খরচের অর্ধেক না দিয়ে এক তৃতীয়াংশ দিলেই তোমাদের হয়ে যায়। বাকি দুই তৃতীয়াংশ ঐ ফ্যামিলি দেয়।
খরচের বেঁচে যাওয়া এই টাকা দিয়ে যেন তুমি যা খুশি তা করতে পারো সেজন্য। এতো সমস্যা যখন ওদের বলো না কেন? নাকি ভেবেছিলে বুড়ো শাশুরির ঘাড়ে সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আগের মতো সারা দিন উড়নচন্ডী হয়ে ঘুরবে আর বেঁচে যাওয়া টাকা গুলো দিয়ে আয়েশ করে দিন কাটাবে? আমি রে মা একা মানুষ, যেখানে রাত সেখানে কাত……….. হয়ে পড়ে থাকবো।

এবার সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে চিৎকার দিচ্ছে,
আপনি কি করে এ টাকার কথা আমাকে কাজের
মানুষ এর সামনে বললেন মা? আমি তীর্যক হাসি
হেসে বলি,ঠিক যেমন ভাবে তুমি কাজের মানুষের এর সামনে আমাকে বোম ভোলানাথ বলতে পারো
কোনো ভদ্রলোকের মেয়ে শাশুরিকে এভাবে যে বলতে পারে……… তা সত্যিই আমার জানা ছিল না। আর মুরুব্বি হয়েছি বলে ৪২ বছর সংসারের
হাল ধরার পরও আর কোনো সার্ভিস দিতে আমি রাজি নই। আর আমি বুরবক না মেহের যে কেউ বুদ্ধি দিয়ে দিয়ে আমাকে চালাবে। এক্ষেত্রে কিন্তু আমার বোন বা তোমার স্বামীর বোনদের কোনো ভূমিকা নেই। বিশ্বাস করা না করা তোমার ইচ্ছে।

রুটির প্রথম টুকরো মুখে দিয়ে রান্নার খালাকে বলি, তুমি খুব মজার পেঁপে ভাজি করেছো। আর আমার ছেলেটাও ফ্রেশ নিয়ে আসছে মনে হয়। তাই খেতে এতো ভালো লাগছে। আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে যেন বাদশা বানিয়ে দেন। এবার সে খুশি হয়ে বললো, একটু অপেক্ষা করেন। আপনারে দুইটা শসা কাইট্যা দেই। নাইলে ভাইজান গাইল পাড়বো। চোখে মুখে তৃপ্তি নিয়ে চেয়ে দেখি মেহেরকে এইমাত্র কে যেন একগ্লাস করলার রস খাইয়ে দিয়েছে। মুখ কালো করে সে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি এবার জরিনাকে বলি, তুই আজকে অন্তত রান্না বান্নার কাজে লাগিস না। হাতটা ভালো করে ধুয়ে তাড়াতাড়ি আমার ব্যাগটা গুছিয়ে দে। ৪/৫ টা ভালো শাড়ি সাথে ম্যাচিং সায়া ও ব্লাউজ, স্যান্ডেল, ঔষধ এর বক্স,তাইয়্যাম্মুম এর মাটি,১টা গরম চাদর ও স্যুয়েটার সবকিছু বিছানায় রাখ্। আমি এসে দেখবো তারপর ব্যাগে ঢুকাবি। জরিনা এবার অবাক হয়ে বলছে, সে কি গো !!! তুমি আবার কোথায় যাবে? আমি হেসে বলি, কেন সারাদিন কাজেকর্মে পড়ে থাকি বলে আমার কেউ নেই ভাবিস না কি?

তীর ভালো মতো ই বিঁধেছে, মেহের কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুখে থাকা রুটির টুকরো পেটে চালান দিয়ে ধীরে সুস্থে বলি, আমি রাত্রির সাথে সিলেট যাচ্ছি রে। ও এলো বলে, তাড়াতাড়ি উঠ না মা। ব্যাগটা ঠিক করে দে। আমি হাত ধুয়ে আসছি। বিমূঢ়,বিরক্ত মেহের এর সামনে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। গোছানো ব্যাগে সবকিছু ঢুকালো কিনা দেখতে হবে তো। বের হয়ে দেখি ছোট জামাই ওদের ড্রাইভারকে দিয়ে রাত্রির কাপড়ের ব্যাগ পাঠিয়েছে। সম্ভবত সময় বাঁচানোর জন্য এই ব্যবস্থা হয়েছে।

বকুল এসে পড়েছে, আমিও রেডি হয়ে গেছি। মেহের দেখি এসে দাঁড়িয়েছে, আমি তাকাতেই বললো রায়ান এসে আপনাকে না দেখলে ভীষণ কান্নাকাটি করবে। ও স্কুল থেকে ফিরে এলেই না হয় যাবেন। আমি বুঝি, তার এসব চাল সবই আমাকে আটকানোর জন্য। কিন্তু আমি আর সেই ফাঁদে পা ফেলতে রাজি নই। তাছাড়া এতো দিন ধরে আমার সাথে কথা না বলা মেহের স্বার্থ ছাড়া কি অনুরোধ করতে এসেছে। মৃদু স্বরে বললাম,
তাহলে ঢাকা থেকে বের হতেই অনেক দেরি হয়ে যাবে। কাছের পথ নাকি? আমি রায়ানের সাথে ফোনে কথা বলে নেবো না হয়। তুমি বরং এই কদিন ছেলেকে সময় দাও। দুরে সরে গেলে তখন
পস্তাবে। কোনো কথা না বলে মুখ কালো করে চলে গেলো ও।

পানির বোতলে পানি ভরে দিল জরিনা। বকুল একটু পর পর গিয়ে ওর সাথে করে নিয়ে আসা রান্না করা ভুনা খিচুড়ি ও ডিম ভাজি ঠান্ডা হলো কিনা দেখে আসছে। ডাইনিং টেবিলে বক্সগুলো রেখে ফ্যান ছেড়ে দিয়েছে। ফোন বাজতেই দেখি,নাঈম ফোন করেছে। বুঝলাম মেহের তাকে ফোনে জানিয়েছে। বলছে সত্যি ই যেতে চাও মা? আমার ভয় লাগে ঠান্ডা যদি লেগে যায় তোমার? আমি হেসে বলি, লাগবে না রে বাবা। সাবধানে থাকবো। এবার ঠিক আছে বলে ১০ মিনিট পর দেখি ব্যাগে রাজ্যের শুকনো খাবার নিয়ে এসেছে। এসে বকুল কে বললো খালা এখানে তোমাদের জন্য বিস্কুট,ড্রাইকেক, কফি, চানাচুর,বাদাম ভাজা, নারকেলের চিড়া,মুড়ি,টি ব্যাগ,ফ্রুটবন,
নোনতা বিস্কুট সবকিছু আছে। তোমরা খেও। শুধু কষ্ট করে খেয়াল রেখো,মা যেন মিষ্টি ও ফ্রাইড খাবার না খায়।

ঘুরে আসো, তোমাদের এক টা ব্রেক হবে। দেখি মা কি ঔষধ নিয়েছো। দেখলো তারপর হাজার টাকার দুটি নোট আমাকে ও দুটি নোট বকুলকে দিয়ে বললো,তোমরা প্রয়োজনমতো খরচ করো। বকুল না না করতেই ও মৃদু স্বরে বলে, আহ্ হা
এরকম করো কেন খালামনি? আমার খুশির জন্য আমি কি দিতে পারি না তোমাদের? যাও ভালোয়
ভালোয় সময়টা ইনজয় করে ফিরে এসো। নাঈম এসে ঢুকার সাথে সাথে মেহের এসেছে দেখতে। এবার এতো নাস্তা ও ৪ হাজার টাকা দিতে দেখে মুখ কঠিন ও কালো করে বের হয়ে গেল। নাঈম ততক্ষণে জড়িয়ে ধরে বলছে, আল্লাহর হাওলা মা। আমি তোমার জন্য দোয়া করবো তুমিও দোয়া করো আমার জন্য। এখন আমি দোকানে চলে যাচ্ছি। আমি আদর দিয়ে বলি,আয় সোনা বাবা।

এর ৫ মিনিট পর রাত্রি চলে এসেছে। ওর ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করে চটপট শাড়ি পাল্টে নিয়ে বললো, চলো আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা হয়ে যাই মা। আমি জরিনা ও রান্নার খালাকে ২০০/ টাকা দিয়ে মেহেরকে আসি বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম

###(চলবে)
###৭ম পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here