বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ২০

0
3232

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ২০
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে পরিবেশ।শীতের আমেজ কমে বসন্ত হানা দিয়েছে।দিনের বেলা চিটচিটে গরম হলেও রাতে শীতল ঠান্ডা।
প্রায় এক সপ্তাহ কলেজে আসা হয় না আম্বের এর।সামান্তাকে কল করে জানিয়েছে আজ সে আসবে।কলেজের গেইটেই অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে সামান্তা।আম্বের কে দেখেই দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।সামান্তার প্রাণতৃষ্ণা মিটে।উচ্ছ্বসিত গলায় সামান্তা বললো—

“থ্যাংক গড তুই এসেছিস।আমি তো ভেবেছি তোর আর আমার কখনো দেখাই হবে না।”

আম্বের সামান্তা কে ছাড়িয়ে নিরুদ্বেগ গলায় বললো—

“কেন হবেনা!আমি কী বলেছি তোর সাথে আমার আর দেখা হবে না!

“তা না।আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

“আচ্ছা আর ভয় পেতে হবে না।আমি ফিরে এসেছি।”

সামান্তা আম্বের কে মাহাদ এর কথা জিঙ্গেস করলে সে বলে সেইটা তার ভুল ধারণা ছিলো।মাহাদ তার বাবাকে খুন করেনি।কিন্তু আম্বের তার আর মাহাদ এর গভীর সম্পর্কের কথা এড়িয়ে যায়।সামান্তা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়া দিয়ে বললো—

“আচ্ছা চল।শেষ ভালো যার সব ভালো তার।অভি তোর জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।”

“হুম।”
,
,
লাইব্রেরি তে বিক্ষিপ্তচিত্তে বসে আছে অভি।গত কয়েকদিন সে আম্বের কে দেখে নি যেখানে সে একদিন আম্বের কে না দেখে থাকতে পারে না।বইয়ের দিকে মুখ গুঁজে বসে থাকলেও বই পড়া তার হচ্ছে না।আম্বের এর ডাকে চোখ তুলে তাকায় অভি।নিস্তব্ধ,নিশ্চল অভি আম্বের কে দেখে তার ইমোশন ধরে রাখতে পারেনি।ঝট করে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।আম্বের অপ্রস্তুত হয়।ইতস্তত হয়ে বললো—

“অভি, এই অভি!

অভি নিজের মধ্যে নেই।সে কী করছে সে নিজেও জানে না।একদম স্থির হয়ে আছে।যেনো তার প্রানআত্না ফিরে এসেছে।সামান্তা অভি কে বলেছে যে আম্বের কোনো কারণে তার গ্রামের বাড়ি গিয়েছে।আর গ্রামে নেটওয়ার্ক প্রবলেম।তাই মোবাইলে যোগাযোগ করা তেমন ফলপ্রসূ নয়।
আম্বের বিরক্ত হয়ে একরকম ধাক্কা মেরে সরায় অভি কে।শক্ত গলায় বললো—

“অভি!
কী করছো তুমি?

অভি ছিটকে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।আমতা আমতা করে বললো—

“সসসরিইই।”

“ইটস ওকে।এতোটা ইমোশনাল ফুল হলে চলে!আমি মরে যাই নি।গ্রামেই গিয়েছিলাম।তুমি তো মনে হয় ভূত দেখলে।”

অভি নম্র গলায় বললো—

“আই এম রিয়েলি সরি।”

আম্বের ঝলমলে গলায় বললো—

“আরে সরি টরি বলতে হবে না।এখন ক্লাসে গেলাম।ক্লাস শেষে কথা হবে।বাই।”

আম্বের আর সামান্তা চলে যাওয়ার পর অভি আবার বসে।তার অধর জুড়ে খেলে যায় প্রসন্ন হাসি।
,
,
ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে ওরা।নানাবিধ কথার সাথে চলতে থাকে পড়ালেখার কথাও।আম্বের এখন আর কী হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে চায় না।কী হবে তা নিয়ে ভাবতে চায়।সে তার ফুল এটেনশন তার স্ট্যাডিতে দিতে চায়।

ওদের থেকে দূরেই দাঁড়িয়ে আছে ইলহাম আর জাসিন।এক ভয়ংকর নেশা ইলহাম এর চোখে।সে কিছু একটা করবে বলে ঠিক করেছে।তার পুরো প্ল্যান করা শেষ।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

অভি আনম্র গলায় আম্বের কে বললো—

“একটা রিকোয়েস্ট করতে পারি?

আম্বের চাউমিন মুখে দিয়ে মুখের বদলে মাথা হেলায়।

অভি নরম গলায় বললো–

“তোমার কি সময় হবে একদিন আমার সাথে যাওয়ার?

আম্বের ভ্রু কুঞ্চি করে চোখ ক্ষীন করে প্রশ্ন করলো—

“কোথায় যাবো?

“বাবা একটা হসপিটাল দিয়েছে জানোই তো।তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আর কিছুদিন পর।তুমি যাবে আমাদের সাথে?

আম্বের চুপ করে রইলো।মাহাদ এর পারমিশন ছাড়া সে কোথায় যেতে পারবে না।
মৌনতা ভেঙে ম্লান গলায় বললো—

“এখন তো শিউর বলতে পারছি না।তবে তোমাকে জানাবো।”

“আচ্ছা।ধন্যবাদ।”

“ফ্রেন্ডসদের মধ্যে নো থ্যাংকস নো সরি।”

অভি মনে মনে আওড়ায় ফ্রেন্ডস!সে তো আম্বের কে ফ্রেন্ড ভাবে না।এর চেয়েও বেশি কিছু ভাবে।কিন্তু আম্বের!
আম্বের হুট করে দাঁড়িয়ে বললো–

“আচ্ছা আমি আসি তাহলে।দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

“ওকে।সাবধানে যেও।”

আম্বের যেতেই সামান্তা মুখ খুললো–

“আই থিংক তোর আম্বের কে তোর ফিলিংস এর কথা বলা উচিত।”

অভি গম্ভীর হয়ে কিছু ভাবলো।তারপর মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো—

“ও তো আমাকে নিয়ে এখনো কিছু ভাবে না।যদি আমার কারণে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়।ওকে আমি হারাতে চাই নারে।”

সামান্তা কপট রাগি গলায় বললো—-

“তুই গিয়ে ভ্যারেন্ডা ভাজ ।গাধা !তুই না বললে ও বুঝবে কী করে!

অভি কিছু বললো না।সে চেয়ে রইলো মাঠের দিকে।সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ।কিছু ঘাসফুলও আছে।তাও বিভিন্ন রঙেন।
,
,
গেটের সামনেই আম্বের এর দেখা হয় ইলহাম এর সাথে।আম্বের কে দেখেই বললো–

“ভাবি সাহেবা কে অনেকদিন পরে দেখলাম!

আম্বের এর মেজাজ খারাপ হয় ভাবি ডাকটা শুনলে।তবুও নিজের রাগকে প্রশমিত করে সহজ গলায় আম্বের প্রশ্ন করলো—

“আপনি আমাকে ভাবি কেন বলেন!আমি কী আপনার ভাইয়ের বউ?শুনেছি আপনার কোনো ভাই নেই।”

ইলহাম ব্যস্ত হেসে বললো—

“ভাবি তো আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন!
তবে এইটাও নিশ্চয়ই জানেন অভি আমার কাজিন!

“তাহলে আপনিও নিশ্চয়ই জানেন অভি আমার ফ্রেন্ড।এরচেয়ে বেশি কিছু না।এরপর এই ধরনের কোনো বাজে কথা বললে আমি প্রিন্সিপ্যাল এর কাছে আপনার নামে নালিশ করবো।আর আরেকটা কথা”ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কভার”।আমাকে সাধারণ ভাবার ভুল করবেন না।সরে দাঁড়ান।”

আম্বের এর কথায় কপাল কুঞ্চি করে ইলহাম।মেয়েটার কথায় দম আছে।কিন্তু ও যদি অভিকে পছন্দ না করে তাহলে কার জোরে এইসব বললো???
,
,
,
আজ সারাদিন মাহাদ বাসায় ছিলো।একটা খবর আসার কথা।কিন্তু এখনো আসেনি।রাতের খাওয়া শেষ করে আম্বের ঘরে চলে গেছে।করিডোরের বারান্দায় তটস্থ হয়ে পায়চারী করছে মাহাদ।আর থাকতে না পেরে নিজের মোবাইল নিয়ে কল করে—

“কিরে সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি কল করছিস না কেন?

ওপাশ থেকে কেউ বললো—

“ভাই সময় দে আমায়।পুরো গ্রাম চিরুনী তল্লাশি চালিয়েছি।কোথাও খুঁজে পাইনি।গ্রামের অনেকেই বললো কোথায় গেছে কেউ জানে না।আবার অনেকে অনেক গ্রামের কথা বললো।”

“এখন কী করবি তাহলে?

“তুই চিন্তা করিস না। পুরা বাংলাদেশ চষে ফেলবো আমি।তাও ওদের কে আমি খুঁজে বের করবোই।তুই ভাবির দিকে খেয়াল রাখিস।”

“আমার হাতে সময় কম ইয়ার।মিস আম্বের কে আমি এভাবে রাখতে পারবো না।আমি চাই না আমার ভালোবাসার উপর কেউ আঙ্গুল তুলুক।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।”

ওপাশের ব্যক্তি হা হা করে হেসে বললো—

“তুই ভাবি কে বিয়ে কর আর তোর শ্রদ্ধেয় শশুর এসে ভাবি কে মেরে দিক।”

“শালা থাম।এই জন্যই তোকে বলেছি ওই মানুষটাকে খুঁজে বের কর যে আমার প্রজাপতির ছায়া হয়ে দাঁড়াবে।তার চিন্তায় নাহলে আমি সত্যিই মরে যাবো।”

“ওকে ওকে ডিয়ার নায়কবাবু।আর কিছুদিন সময় দে আমায়।আমি দেখছি।”

কল কেটে আরো কিছুক্ষন সেখানেই পায়চারী করে মাহাদ।ঘরে এসে দেখে আম্বের বসে আছে।কিছু একটা লিখছে কাগজে কালার পেন দিয়ে।
মাহাদ নরম গলায় বললো—

“এখনো বসে আছেন যে!অনেক রাত হয়েছে।”

“হু।”

আম্বের আর কিছু বললো না।আম্বের এর কাছে গিয়ে দাঁড়ায় মাহাদ।হাতের কাগজটা নিয়ে দেখে সেখানে বড় বড় করে লিখা,আম্বের আবইয়াজ’।

মাহাদ কাগজ টা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ে।নম্র গলায় বললো–

“এইসব কী করছেন??

“কেন!জানেন না বিয়ের পর মেয়েদের সারনেইম স্বামীর নামে হয়।”

“আমি এখনো আপনাকে বিয়ে করিনি।”

“বলেছেন তো করবেন।”

মাহাদ আম্বের এর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো–

“যদি না করি!

আম্বের কাতর চোখে তাকিয়ে অসহায় গলায় বললো–

“এমন কেন বলছেন?

“জানি না।”

আম্বের নিজের বালিশে শুয়ে পড়ে।লাইট অফ করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললো—-

“বিয়ের পর আমরা তিনটা বাবু নিবো।দুটো ছেলে আরেকটা মেয়ে।”

মাহাদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললো—

“এইসব কী বলছেন আপনি!

“জানেন আমি সেদিন স্বপ্নে দেখেছি।আমাদের তিনটা বাবু হয়েছে।”

মাহাদ গম্ভীর গলায় বললো–

“অনেক রাত হয়েছে মিস সুগন্ধি।ঘুমান সকালে কলেজ আছে।”

আম্বের পাশ ফিরে মাহাদ এর আরেকটু কাছে গিয়ে বললো—

“আপনাকে একটা কথা জিঙ্গেস করি?

মাহাদ অস্ফুটভাবে বললো—

“হু।”

আম্বের ভাবুক গলায় বললো—

“বাবা কী সত্যিই আমাকে আপনার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে?

মাহাদ সোজা বললো—

“নাহ।”

“তাহলে আপনি মিথ্যে বললেন কেন?

“আপনাকে কাছে রাখার জন্য।”

“আর ওই সিগনেচার!

“আমার প্রত্যেক সার্ভেন্ট কে চেক দেওয়ার সময় প্রমান স্বরুপ তাদের সিগনেচার নেওয়া হয়।আমি একজন সিগনেচার এক্সপার্ট দিয়ে আপনার বাবার সিগনেচার কপি করিয়েছি।”

আম্বের এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মাহাদ এর কথায় কেমন বিষন্নতা প্রকাশ পাচ্ছে।আম্বের আবার সিলিং এর দিকে তাকায়।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
মাহাদ কী আসলেই দোষী?🙂🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here