বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ২১

0
3631

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ২১
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

মিষ্টি একটা সকাল।বসন্তের সকালটা অন্যান্য ঋতুর সকাল থেকে অনেকটা আলাদাই হয়।হালকা মৃদু শীতল বাতাসে শরীরের প্রতিটি লোম ছুঁয়ে যায় এক মৃদু আলোড়ন।দিকে দিকে ফুটে ফুল।জীর্ণ গাছের শাখা-প্রশাখা সাজে কিশলয়ে।
পত্র পল্লবে নতুন করে সাজে প্রকৃতি।

দ্রুত হস্তে তৈরি হচ্ছে মাহাদ।আজকের দিনটা তার ব্যস্ত পার হবে।সারাদিনে অনেক শিডিউল আছে।এক এক করে সব কমপ্লিট করতে হবে।
বিছানায় বসে আছে আম্বের।কিছু একটা বলবে বলে ভাবছে।কিন্তু পারছে না।ভয় হচ্ছে তার।কয়েকবার অধরজোড়া প্রশ্বস্ত করেও আবার সংকীর্ণ করে নেয়।অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে আছে মাহাদ এর দিকে।সকল দ্বিধান্বিত ভাব মুছে ফেলে নিজেকে শক্ত করে আনম্র গলায় আম্বের বললো—

“একটা কথা বলবো মাহাদ?

মাহাদ তার হাতে ওয়াচ লাগাতে লাগাতে বললো–

“বলেন।”

আম্বের একটা ছোট্ট দম ফেললো।নরম গলায় বললো–

“আমার আজ ফিরতে একটু লেট হবে।”

চকিতে মাহাদ আম্বের এর দিকে তাকায়।ভ্রু বাঁকিয়ে বললো—

“কেন?
কোথায় যাবেন আপনি?

আম্বের কয়েকটা ঢোক গিলে সরস গলায় বললো–

“আসলে আমি আমার ফ্রেন্ড এর বাসায় যাবো।ও অনেকদিন ধরে বায়না করছে।বেশিক্ষন লাগবে না।একটুখানি থেকেই চলে আসবো।”

মাহাদ তপ্ত গলায় বললো—

“তার কোনো প্রয়োজন নেই।ক্লাস শেষে সোজা বাসায় আসবেন।”

আম্বের আহ্লাদী গলায় বললো—

“প্লিজ মাহাদ,প্লিজ।একটু যেতে দিন।বেশি সময় লাগবে না।প্লিজ।”

মাহাদ কিছুক্ষন ভেবে বললো–

“ওকে।”

আম্বের উচ্ছ্বাসিত হয়ে মাহাদ কে জড়িয়ে ধরে ঝলমলে গলায় বললো—

“থ্যাংক ইউ।”

মাহাদ আম্বের কে সোজা করে দাঁড় করিয়ে তার গালে হাত দেয়।বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আম্বের এর নরম গাল ঘষতে ঘষতে বললো—

“কলেজ থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে উঠবেন।আপনার বন্ধুদেরও বলবেন আপনার সাথেই যেতে।”

আম্বের ছোট্ট করে বললো–

“হুম।”

মাহাদ আম্বের এর কপালে ছোট্ট চুমু খেলো।নম্র গলায় বললো—

“নিজের খেয়াল রাখবেন।আর কোনো সমস্যা হলেই আমাকে কল করবেন।আসি।”

মাহাদ চলে যেতেই উচ্ছ্বাসিত আম্বের এক লাফ মেরে বিছানায় বসে।মোবাইল হাতে নিয়েই কল করে সামান্তাকে।গদগদ গলায় বললো—

“ইয়েস,মাহাদ পারমিশন দিয়েছে।তোরা থাকিস আমি আসছি।”

আম্বের এর খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।আজ অনেকদিন পর সে একটু খোলা জায়গায় যাবে।এই বাড়িতে আসার পর কলেজ ছাড়া তার কোথাও যাওয়া হয়নি।অবশ্য ভয়ও করছে কারণ মাহাদ কে আধা সত্য বলেছে।কিন্তু আম্বের এর বিশ্বাস মাহাদ কিছু জানতে পারবে না।কারণ আজ তার অনেক কাজ।
কাভার্ড থেকে একটা গাঢ় নীল রঙের শাড়ি বের করে আম্বের।কাবার্ডের দুই পাশের একপাশে আম্বের এর কাপড় আর অন্যপাশে মাহাদ এর।এই বাড়িতে আম্বের এর কোনো কিছুর অভাব নেই।বরং বেশিই আছে।বৈবাহিক সম্পর্কবিহীন হওয়া সত্ত্বেও মাহাদ এর সাথে তার স্বামী স্ত্রীর মতো সম্পর্ক।মাহাদ আম্বের এর কোনো ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখে না।কিন্তু এই সবকিছুর মাঝেও আম্বের নিজেকে নিঃস্বই মনে করে।একজন মেয়ের জীবনে তার বাবা ভাইয়ের পর তার স্বামী সে পুরুষ যাকে সে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে।সে মাহাদ কে বিশ্বাস করে।কিন্তু তারপরও কোথাও খামতি আছে।এই এতো এতো জিনিস থেকে কী লাভ যখন তার অস্তিত্বের কোনো পরিচয় নেই।সে কে?
সে কী আসলেই মাহাদ এর ভালোবাসা নাকি রক্ষিতা?
আম্বের এর দু চোখ উপচে আসে অঝোর ধারা।বুক চিরে বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস।
,
,
,
গাড়ি এসে পৌছায় কলেজ গেইটে।আম্বের আর ভেতরে প্রবেশ করলো না।সূর্যের ক্ষীন তাপেও বেশ হাসফাস লাগছে তার।লাগবেই তো।শাড়ি তার সাথে হালকা মেকওভার আর গয়না।
গেইটের সামনে চীনের প্রাচীর এর মতো দাঁড়ানো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কল করে সামান্তাকে।একটু পরই সামান্তা আর অভি বেরিয়ে আসে কলেজ গেইট দিয়ে।

আম্বের কে দেখেই থমকে যায় অভির হৃদস্পন্দন।চোখজোড়া প্রশ্বস্ত হয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আম্বের এর দিকে।
আম্বের নীল শাড়ির সাথে লম্বা বেনুনি করেছে।কানে দুটো ছোট রিং আর হাত ভর্তি নীল কাচের চুড়ি।হালকা মেকওভারে আম্বের এর উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ যেনো এই কৃষ্ণচূড়ার ছায়াতলে এক নীল আলোক রশ্মি হয়ে তার দ্যুতি ছড়াচ্ছে।ওদের দুজনকে দেখেই একগাল হাসে আম্বের।অভি এখনো মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে সে কোনো নীল অপরাজিতা দেখছে।যে ফুটে আছে হাজার সবুজের ভীড়ে।

সামান্তা খয়রী রঙের শাড়ি পড়েছে আর অভি সাদা পাঞ্জাবি।আজ অভির বাবার হসপিটাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।ওরা সবাই সেখানেই যাবে।অবশ্য অভির আসল উদ্দেশ্য এই সুযোগে সে তার মা বাবার সাথে আম্বের এর পরিচয় করিয়ে দিবে।অভি কে এমন সম্মোহিনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিক অপ্রস্তুত হয় আম্বের।
ধীর গলায় ডেকে উঠলো অভিকে–

“অভি,এই অভি।”

আম্বের এর ডাকে ধরণী তে ফিরে অভি।আম্বের তাড়া দিয়ে বললো—

“তাড়াতাড়ি চলো।আমার আবার দেরি হয়ে যাবে।”

অভি তেমন কোনো কথা বললো না।যেনো সে কথা বলতেই ভুলে গেছে।
,
,
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের ভীড়ভাট্টা লেগেই আছে।আম্বের নামতেই তার চক্ষু চড়কগাছ।একটা মানুষের জটলা আর তার মধ্যে মাহাদ দাঁড়ানো।আম্বের এর প্রানআত্না কাঁপাকাঁপি শুরু করে।মাহাদ বলেছিলো তার আজ অনেক কাজ সেই কাজ যে এই কাজ তা আম্বের স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।
আম্বের এর পা অসাড় হয়ে আছে।সে আর নড়াচড়া করতে পারছেনা।সে মাহাদ কে মিথ্যে বলেছে আর এখন!

সামান্তা পাশ ফিরে এসে বললো—

“কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল।”

আম্বের ঝাঁমটা মেরে বললো—

“সর এখান থেকে।তুই আমাকে বলিস নি কেন যে মাহাদ আসছে।”

সামান্তা সামনে তাকিয়ে এক অদ্ভুত হাসি দেয়।আম্বের এর দিকে তাকিয়ে সন্দিহান গলায় বললো—

“কেন তুই জানিস না?

আম্বের এর আর যেতে ইচ্ছে করছে না।ভয়ে হিম হয়ে আসছে তার শরীর।কোনোমতে নিজের ভয় কে অবদমন করে স্বাভাবিক গলায় বললো—

“তুই যা আমি যাবো না।ভালো লাগছে না আমার।”

সামান্তা ব্যগ্র হয়ে বললো—

“আরে,আরে।”

পরক্ষনেই সেখানে দৌঁড়ে আসে অভি।নির্মল গলায় বললো—

“এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন!চলো।”

সামান্তা আম্বের এর কথা বলতেই অভি চকিত হয়।অনেক বুঝিয়ে আম্বের কে নিয়ে যায় সেখানে।ভীড়ের মধ্যে একবার মাহাদ এর চোখ পড়ে আম্বের এর দিকে।আর তাতে আম্বের জমে বরফ।

যথাসম্ভব মাহাদ এর চোখের আঁড়ালেই থাকার চেষ্টা করে আম্বের।একমাত্র অভির কারনেই মাহাদ কে দিয়ে হসপিটাল উদ্বোধন করান আশরাফ চৌধুরী।মা মরা ছেলে কে তিনি অনেক ভালোবাসেন।

আম্বের চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষন পর সামান্তা এসে তাকে একটু মানুষের আঁড়ালে নিয়ে যায়।আম্বের এর শাড়ির কুঁচি সামনে ডলে পড়তেই তা পায়ের সাথে লেগে কোমর এর কাপড় হালকা নিচে নেমে যায়।আর তাতেই ওর সেখানের তিল দৃশ্যমান হয়।আম্বের তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করে নেয়।আশ্বস্ত গলায় বললো—

“থ্যাংকস।তুই না দেখলে তো…।”

আম্বের এর কথা টেনে সামান্তা বললো—

“আরে আমি না অভি বলেছে।”

আম্বের আঁতকে উঠে বললো—

“ছিঃ
কী বিশ্রি কান্ড!ধ্যাত আমি একটু খেয়াল করিনি।”

“আরে ইলহাম তো এইজন্যই সেই কখন থেকে তোর দিকে তাকিয়ে আছে।”

আম্বের এর বিস্ময় আকাশ ছোঁয়।তার মানে আরো অনেকে দেখেছে।আম্বের কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে শুধু মাহাদ না দেখলেই হয়।
,
,
অনুষ্ঠান শেষে একরকম জোর করে মাহাদ কে অভি তাদের বাসায় নিয়ে আসে।আপ্যয়নে কোনো খামতি রাখেনি তারা।অবশ্য মাহাদ এসেছে অন্য কারণে।
অভিদের কিচেন রুমে দাঁড়িয়ে আছে আম্বের,সামান্তা আর অভির মা।আম্বের কিছুতেই সেই ঘটনা ভুলতে পারছেনা।
মৃদু গলায় অভির মা শশী বললেন–

“তোমার নামটা কিন্ত বেশ মিষ্টি।”

আম্বের কোনো কথা বললো না।শশীর কথার বিপরীতে নীরস হাসলো।কিচেনে ঢুকে সরাজ।শশীর মুখে এই কথা শুনে গ্লাসে পানি পানি ডালতে ডালতে বিদ্রুপের সুরে বললো—

“যেই নাম শুনলেই আমার গাম্বার সিং এর কথা মনে পড়ে।”

সামান্তা ব্যস্ত হাতে একটা গাট্টা মারে সরাজ এর মাথায়।শশীকে উদ্দেশ্যে করে বললো—

“আনটি এর নাম সরাজ না রেখে সরোবর রাখতে।পঁচা সরোবর।”

সামান্তার কথায় চোখ মুখ কুঁচকে চলে যায় সরাজ।শশী চা বানিয়ে একজন সার্ভেন্ট এর খোঁজ করলে সামান্তা নিয়ে যায় তা।মাহাদ আর অভি বসে কথা বলছে তাদের লিভিং রুমে।বেশ কিছু সময় পর ফিরে আসে সামান্তা।আম্বের জিঙ্গেস করতেই খিলখিলিয়ে হাসে সামান্তা।বললো—

“আরে চা নিয়ে গেলাম না।ভাববে আমি এই বাড়ির কাজের লোক।তাই আগেই বলে দিয়েছি আমি এই বাড়ির বড় বউ।”

আবার হাসতে থাকে সামান্তা।আম্বের বিসন্ন মুখে কিচেনের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়।হালকা ঝুঁকে তাকিয়ে মাহাদ কে দেখে।মাহাদ এর চোখ পড়তেই সরে দাঁড়ায়।

যাওয়ার সময় মি.রহিম মাহাদ কে দেখেও কোনো প্রয়িক্রিয়া করলো না।যেনো কেউ কাউকে চিনে না।
,
,
,
মাহাদ আর ফিরেনি বাসায়।আম্বের তার বই খাতা গুছিয়ে বিছানা ঠিক করছিলো।
নরম পায়ে ঘরে ঢোকে মাহাদ।স্থির গলায় বললো—

“আপনার কোমর এর তিলটা কিন্তু সেই।”

আম্বের ঝট করে সোজা হয়ে তড়িৎ বেগে বললো—

“এইসব কী বলছেন!

মাহাদ দুর্বোধ্য হাসলো।বিগলিত গলায় বললো—-

“তার চেয়ে আপনার বুকের তিলটা আরো বেশি সুন্দর।”

আম্বের বিরক্তিকর গলায় বললো—

“মাহাদ!

মাহাদ একটা টেবিলের উপর পা উঠিয়ে বসে।আম্বের কে টেনে নিয়ে পায়ের উপর বসায়।আম্বের অনুযোগের দৃষ্টিতে মাহাদ এর দিকে তাকিয়ে আছে।মাহাদ শান্ত গলায় বললো—

“আমাকে মিথ্যে বললেন কেন?

মাহাদ তার হাত দিয়ে আম্বের এর কোমর এর সেই অংশ চেপে ধরে যেখানকার তিল দৃশ্যমান ছিলো।সেখানে চাপ প্রয়োগ করতেই কুঁকড়ে উঠে আম্বের।ধরা গলায় বললো—

“আমার লাগছে মাহাদ।”

মাহাদ আম্বের এর চোখের দিকে তাকিয়ে গাঢ় গলায় ফের প্রশ্ন করলো—

“আমাকে মিথ্যে কেন বলছেন?শাড়ি কেন পড়েছেন আপনি?আর পড়েছেনই যখন তা সামলানোর দায়িত্বও আপনার।”

মাহাদ তার বলিষ্ঠ হাতের চাপ বাড়াতে থাকে।আম্বের এর চোখে জল ছেপে আসে।নরম গলায় বললো—

“সরি।আমি খেয়াল করিনি।আমি ব্যথা পাচ্ছি মাহাদ।”

“খেয়াল করা উচিত ছিলো আপনার।আর শাস্তি তো ব্যথা পাওয়ার জন্যই দেওয়া হয়।যেনো দ্বিতীয় বার ভুল না হয়।”

আম্বের এর চোখ দিয়ে টুপ করে দু ফোটা পানি পড়লো।কম্পনরত গলায় বললো—

“আর ভুল হবে না।সরি।”

মাহাদ আম্বের কে পা থেকে নামিয়ে বিছানায় বসায়।তার কামিজ সরিয়ে দেখে মাহাদ এর হাতের চাপে জায়গাটা একদম ফুলে লাল হয়ে আছে।একটা ম্যাসাজ ক্রীম এনে তা দিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকে মাহাদ।
আম্বের ধীর গলায় বললো—

“প্রথমে কষ্ট দিলেন এখন আবার মলম লাগাচ্ছেন!

“অপরাধ করলে তার শাস্তি পেতে হয়।আপনি আমাকে মিথ্যে বলছেন।শাড়ি পড়েছেন।যেখানে ওইভাবে আপনাকে আমি ছাড়া অন্য কারো দেখার অধিকার নেই আপনি সেখানে তাই করেছেন।ভীড়ের মধ্যে আমি আপনাকে যেতে বাড়ন করেছি।বেশি মানুষের সাথে মিশতে মানা করেছি।কোন কথাটা শুনেছেন আপনি আমার?

আম্বের নিশ্চুপ। টুপ টুপ করে তার চোখের পানি পড়ছে।মাহাদ আবার গাঢ় গলায় বললো—

“পৃথিবীর সব পুরুষ এক নয় মিস সুগন্ধি।আপনার বাবা আপনাকে যে নজরে দেখবে পাশের বাড়ির আঙ্কেল সেই নজরে আপনাকে দেখবে না।আপনার ভাই আপনাকে যেই নজরে দেখবে আপনার বন্ধু আপনাকে সেই নজরে দেখবে না।পুরুষ মানুষ হিংস্র হায়েনার মতো।নারীর শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কামুকতা খুঁজে বেড়ায়।”

আম্বের নম্র গলায় ধীরগতিতে বললো—

“আপনিও তেমন!

“আমি পুরুষের উর্ধ্বে নই।কিন্তু তা এক নারীতে সীমাবদ্ধ।
অভির সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?

আম্বের অনুযোগের সুরে বললো—

“ও আমার বন্ধু।”

মাহাদ তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে।বিতৃষ্ণা গলায় বললো—

“একজন ছেলে আর মেয়ে কখনো শুধু বন্ধু হতে পারে না।অভি আপনাকে কিছু একটা দিয়েছিলো তাই না!

আম্বের মাথা ঝাঁকায়।মাহাদ ফের বললো–

“কোথায় সেটা?

বিছানার সাইড টেবিল একটা শপিং ব্যাগ রাখা।অভি আম্বের কে দিয়েছিলো।কিন্তু চিন্তায় বেমালুম আম্বের এইটার কথা ভুলে যায়।মাহাদ খুলে দেখে সেখানে একটা লেডিস ওয়াচ।আর সাথে একটা চিরকুট।সেখানে মাহাদ এর অটোগ্রাফ।
মাহাদ গম্ভীর গলায় বললো—

“এই অটোগ্রাফ সে আমার কাছ থেকে তার প্রিয় মানুষের জন্য নিয়েছে।তাহলে বুঝতে পারছেন তো সে আপনাকে কী ভাবে!
এরচেয়ে বেশি আর কিছুই বলার নেই আমার।আপনাকে কষ্ট দিয়ে আমি কখনো ভালো থাকতে পারিনা।আপনি হয়তো পারবেন।”

আম্বের নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।সে কখনো ভাবতে পারিনি অভি তাকে নিয়ে ভাবে।মাহাদ তার ব্লেজার খুলে বিছানায় ছুঁড়ে মারে।তার শিরা উপশিরা গুলো কাঁপছে।কিন্তু সে পারছে না তার প্রজাপতি কে কিছু বলতে।ঝট করে আম্বের বললো–

“কবে বিয়ে করবেন আমাকে?
আপনার কাজ এখনো শেষ হয়নি?

মাহাদ তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আবার নিজের শার্ট খোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।আম্বের অনুনয়ের গলায় বললো—

“আমি আর পারছি না মাহাদ।তিন মাস তো হয়ে গেলো।আর কত অপেক্ষা করতে হবে আমাকে!

রাগে মাহাদ এর নাক ফুঁলতে থাকে।বেশ কিছুদিন ধরেই আম্বের বিয়ের জন্য লাগাতার তাড়া দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু মাহাদ নিরুপায়।
রেগে তেড়ে এসে আম্বের এর দুই বাহু চেপে ধরে মাহাদ।হিসহিসিয়ে বললো—

“কী সমস্যা আপনার?কী শুরু করেছেন আপনি?বিয়ে বিয়ে বলে আমার মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছেন!
আর এইসব কিছুর জন্য আপনার বাবা দায়ী।কী হতো আর দুটো দিন পরে মরলে।আমার জবাব গুলো তো আমি পেয়ে যেতাম।”

মাহাদ আম্বের কে ছেড়ে দাঁড়ায়।রাগে ওর হাত পা কাঁপছে।আম্বের করুন গলায় বললো—

“কী বলেছে বাবা আপনাকে?

মাহাদ দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বললো—

“কী বলেছে তা আপনার না জানলেও চলবে।সময় দিন আমাকে।বিয়ে যখন করবো বলেছি তখন আমি বিয়ে করবোই।”

আম্বের গলার স্বর আরো নরম করে বললো—

“তাহলে এইসব করলেন কেন আমার সাথে?যখন আপনার এতো সময়ই লাগবে।”

“মাহাদ ক্ষেপে উঠে।ক্ষীপ্র গতিতে এসে নিজের সাথে চেপে ধরে আম্বের কে।ঝাঁঝানো গলায় বললো—

“কেন করেছি বুঝেন না!ভালোবাসি আপনাকে।দিন শেষে আমিও পুরুষ।আমারও কিছু চাহিদা আছে।ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে আমারও ইচ্ছে করে।আল্লাহ দরবার এ কবুল বলে আমি আপনাকে নিজের করে নিয়েছি।শুধু ওই কাগজে কলমেই বাকি।কিন্তু ওই কাগজ কলম থেকে আপনার জীবন আমার কাছে অধিক মূল্যবান।”

আম্বের ধীরগতিতে চোখ বুজল।তাতে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।মাহাদ আলতো করে শুঁষে নেয় সে নোনতা জলের প্রস্রবণ।মাহাদ কোমল গলায় বললো—

“আমি জানি আপনার কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু আমার হাত যে বাঁধা প্রজাপ্রতি।দূর্বলের উপর সবাই তার আধিপত্য দেখায়।যেমন আপনার উপর আমি দেখাই।আমার চেয়েও তো কেউ ক্ষমতাবান আছে।তার কাছে আমি বন্ধি।এতো ভালোবাসার পরও আমি আপনাকে নিজের করে নিতে পারছি না।এতে কী আমার কষ্ট হচ্ছে না!

আম্বের চোখ খুলে উদাস দৃষ্টিতে তাকায় মাহাদ এর দিকে।অনুরক্তির গলায় বললো—

“এই সমাজ মানবে না মাহাদ।”

“আমি এই সমাজ মানি না প্রজাপতি।আমি আপনাকে এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবো।আপনার সব স্বপ্ন আমি পূরণ করবো।একটু সময় দিন আমাকে।”

“আপনি কেন সবকিছু খুলে বলছেন না আমাকে!

“আমি চাই না যে যন্ত্রণা নিয়ে আমি বেঁচে আছি তা আপনিও সহ্য করেন।আমি আজ হোক,কাল হোক আর আমার মৃত্যুর আগেই হোক আমার ভালোবাসার মর্যাদা দিবো আপনাকে।”

আম্বের ভাসা ভাসা চোখে তাকিয়ে থাকে মাহাদ এর দিকে।মাহাদ ধীর গতিতে আম্বের এর ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।তার গালে গলায় চুমু খেলো।মৃদু গলায় বললো–

“কিছুটা মেঘ হয়ে তুমি ছুঁয়ে দেখো
কিছুটা আড়াল হলে এই বুকে জমে ব্যথা শত;
রোদহীন দিনে তোমার ছায়া
এই হৃদয়ে জাগিয়ে দেয় তোমার মায়া।”

আম্বের এর চোখ যায় মাহাদ এর বুকে।শার্টের এর উপরের দিকের বাটন আনব্লক করাতে তার বুকের সেই খামচির দাগ আম্বের স্পষ্ট দেখতে পায়।
কৌতুলদীপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে আম্বের।উৎসুক গলায় বললো—

“আপনার বুকে এইটা কিসের দাগ?

মাহাদ আম্বের কে ছেড়ে দাঁড়ায়।তার কথার তোয়াক্কা না করে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।আম্বের ম্লান গলায় বললো–

“তাহলে কী আমি ভেবে নিবো….।”

মাহাদ দাম্ভিক গলায় বললো—

“আপনার আগে আমার এতো কাছে আসার সুযোগ আমি কাউকে দেইনি আর দিবোও না কখনো।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here