#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৩৬
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
সকালের ঝলমলে মিষ্টি রোদ জানালার কাচ গলিয়ে ঘরে এসে পড়ছে।বদ্ধ ঘরে দুম ধরা পরিবেশ।রোদের আলোয় পরিষ্কার চারপাশ।আড়মোড়া ভেঙে চোখের পাল্লা হালকা ছড়াতেই এক পশলা রোদ এসে হানা দেয় আম্বের এর চোখে।ঝপ করে বন্ধ করে নেয় আম্বের।মুদিত চোখেই পাশ ফিরে সে হাতড়িয়ে মাহাদ এর স্পর্শ খুঁজে বেড়ায়।কিন্তু পায় না।ঝট করে উঠে বসে আম্বের।চকিতে চক্ষুজোড়া খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও মাহাদ কে দেখতে পায় না।ছ্যাঁত করে উঠে তার বুক।মাহাদ সত্যিই তাকে আবার ধোঁকা দিলো!
আম্বের এর বিলাপ করা কান্নাকাটিতে সেখানে দৌঁড়ে আসে আলম,আশালতা ও তাদের মেয়েরা।আলম অনেক করে বুঝিয়ে আম্বের কে শান্ত করার চেষ্টা করে।আম্বের এর কান্না কিছুটা প্রশমিত হতেই চলে যায় আলম।আশালতা তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে আম্বের এর দিকে।নিজের মেয়েদের ইশারা করে যেতে বলে।আম্বের এখনো ফুঁপিয়ে যাচ্ছে।বার বার নাক টেনে আবার মৃদু আওয়াজ করে।আশালতা ক্ষীন গলায় বললেন—
“কাঁদছো কেন তুমি?
ছেলেটা তো তোমাকে ছেড়ে যাই নি।কাজ আছে তাই বাইরে গেছে।”
আম্বের কোনো কথা বললো না।সে এখনো কেঁদে যাচ্ছে।আশালতা সন্দিহান গলায় জিঙ্গেস করলেন—-
“তুমি কী প্রেগন্যান্ট?
আম্বের লাল লাল চোখে করুণ ভাবে তাকালো।আশালতা ভ্রু কুঁচকায়।বিদ্রুপের গলায় বললো—
“আমি আগেই ধরেছিলাম।আজকাল মেয়েরা এমনই হয়।বিয়ের আগেই ছিঃ!ছিঃ!
আম্বের ধরা গলায় বললো—-
“এইসব আপনি কী বলছেন!
আশলতা তীক্ষ্ম গলায় বললেন—
“আমি তো প্রথম দেখাই বুঝেছিলাম।অবশ্য তোমাকে বলে কী লাভ।রক্ত কথা বলে বুঝলে!
মা যেমন মেয়েও তেমন।বিয়ের আগেই কী প্রয়োজন ছিল এইসবের?
আম্বের যাও তার কান্না অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু আশালতার কাটা কাটা কথায় তা আবার বাড়তে থাকে।ঝমঝম করে কাঁদতে কাঁদতে বললো—
“এইসব কেন বলছেন!মাহাদ আমাকে ভালবাসে।সে বলেছে সে আমাকে বিয়ে করবে।”
“মেয়ে,এতো ভোলা নয় এই দুনিয়া।আর মেয়েদের সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ তার সম্মান।আর পয়সার বিনিময়ে যারা তার সম্মান বিলিয়ে দিয় তাদের কী বলে জানো?
বেশ্যা বলে।আর এই যে তোমার বাচ্চা তাকে সবাই কী বলবে জানো?
অবৈধ বলবে।”
আম্বের এর বুকের ভেতর জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়।উপচে পড়া উত্তাল ঢেউ তার এক একটা পাঁজর ভেঙে দিচ্ছে।যা গেঁথে যাচ্ছে তার হৃদপিন্ডে।প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভূত হয় তার মস্তিষ্কে।
হঠাতই আম্বের তার পেটে হাত রেখে আর্তনাদ করে উঠে পড়ে।আশালতা ঘাবড়ে দৌঁড়ে আসে আম্বের এর কাছে।চিৎকার করে উঠে আম্বের।
,
,
,
বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছে আম্বের।অক্ষিপুট নিমিঝিমি করে চেয়ে আছে সামনে বসা অনিন্দ্য সুন্দরীর দিকে।চোখে চশমা দেওয়া তার তীক্ষ্ম নাকের উপর।লম্বা পাঁপড়ি যুক্ত চোখ গুলো কাঁচের গ্লাস ভেদ করেও তার রশ্মিবিচছুরণ করছে।ফর্সা চেহারায় কমলার কোষার মতো দুই ঠোঁটে লেগে আছে স্মিত হাসি।কেনো যেনো এই হাসিতে আম্বের এর শরীর জুড়ে এক অদেখা প্রশান্তি ছেয়ে যায়।মিশ্মিয়া একজন গাইনোকোলজিস্ট।অধর জোড়া প্রসারিত করে আম্বের কে প্রশ্ন করলো—
“এখন কেমন লাগছে?
আম্বের মৃদু মাথা ঝাঁকায়।সরস গলায় মিশ্মিয়া আবার বললো—-
“নাম কী তোমার?
আম্বের তার বা’দিকে তাকাতেই নজরে পড়ে আশালতা।তাকে দেখেই আম্বের চোখের পাতা নিম্নমুখী করে।মিশ্মিয়া উজ্জ্বল হেসে বললো—
“কী হলো বলো।”
আম্বের ফিকে গলায় সলজ্জ চোখে বললো—
“আম্বের।”
মিশ্মিয়া দীপ্ত হেসে বললো—
“বাহ!
বেশ মিষ্টি নাম তো।একদম তোমার মতো।”
আম্বের চোখ তুলে তাকায়।আশ্বস্ত হয় সে।মিশ্মিয়া রসালো গলায় বললো—
“তোমার হ্যাজবেন্ডের নাম কী?
আম্বের তার সলজ্জ চোখ দুটো অবনত করে।কিছুক্ষন থেমে অনুযোগের গলায় বললো—
“আমার বিয়ে হয়নি।”
মিশ্মিয়ার অবাক হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু সে হলো না।মুচকি হাসলো মিশ্মিয়া।নরম গলায় বললো–
“তো তার নামটা কী?
আম্বের সেইভাবেই বললো—
“মাহাদ আবইয়াজ।”
কিন্তু আম্বের থামলো না।অনর্গল বললো—
“মাহাদ আমাকে ভালোবাসে।মানছি যা হয়েছে তা ঠিক নয়।ভুল করেছি আমরা।মাহাদ আমাকে বলেছে আমাদের বাবু হলেই সে আমাকে বিয়ে করবে।তাই বলে আমাদের সন্তান অবৈধ নয়।”
আম্বের ঘাড় ফিরিয়ে আশালতার দিকে তাকায়।আশালতা গটগট করে হাঁটা ধরে।
ফিচেল হাসে মিশ্মিয়া।চটপটে গলায় বললো—
“ভেরি গুড।বি স্ট্রং।এই সময় এতো ভেঙে পড়লে চলবে না।এই যে আজ তুমি এতো উত্তেজিত হয়েছো এই জন্য আজ কী হতে পারতো জানো!
মিসক্যারেজ।ভাবতে পারছো তুমি!এতো টেনসড হওয়া যাবে না।”
আম্বের কোনো কথা বললো না।কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে চুপ করে রইলো।মিশ্মিয়া আরও বেশ কিছুটা সময় আম্বের এর কাছে বসে রইলো।আম্বের অনেকটা বের হয়ে আসে ট্রমা থেকে।আশালতার এহেন কথায় আম্বের এর মস্তিষ্কে চাপ পড়ে যার ইফেক্ট পড়ে তার প্রেগন্যান্সিতে।মিশ্মিয়া ভালো করে আম্বের কে বুঝিয়ে দেয় যেনো কোনো মতেই টেনসড না হয়।এতে বেবির ক্ষতি হতে পারে।
,
,
,
মাহাদ এর জ্বলজ্বল চোখের চাহনি একদম দাঁপিয়ে দিচ্ছে আশালতার রঙিন বদন।কটমট করে এক তীক্ষ্ম স্বরে মাহাদ বললো—
“আপনার সাহস কী করে হলো আম্বের কে এইসব বলার?
আশালতা শুকনো ঢোক গিলে।তার গাঢ় দৃষ্টি ফ্লোরে আবদ্ধ।তার নিরবতায় ফুঁসলে উঠে মাহাদ।উঠে দাঁড়ায় সে।দারাজ গলায় বললো—
“কোন অধিকারে আপনি আমার সন্তানকে অবৈধ বলেছেন! আমার স্ত্রীকে বেশ্যা বলার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?
আশালতা বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে।স্ত্রী !যদি আম্বের সত্যিই মাহাদ এর স্ত্রী হয়ে থাকে তাহলে তার বলা কথাগুলো ছিলো ভীষণ বিদঘুটে,অভব্য।
মাহাদ ফোঁস করে এক দম ছাড়ে।শক্ত গলায় আবার বললো—
“আজ যদি আপনার জায়গায় অন্য কেউ হতো তাহলে আমি তার অবস্থা কী করতাম আপনি ভাবতেও পারছেন না।আম্বের আমার ওয়াইফ।শি ইজ মাই লিগ্যাল ওয়াইফ।আর আমাদের সন্তানও আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন।”
মাহাদ তার প্রজ্জ্বলিত চোখ দুটো নিবদ্ধ করে আলম এর দিকে।আলম চোখ লুকিয়ে বসে আছে।পাশেই তার মেয়ে দুটো দাঁড়িয়ে।মাহাদ গরগরে গলায় আলম কে বললো—-
“আপনারা আমার স্ত্রীর সাথে যা করেছেন তার সবকিছু আমি জানি।মি.আহমেদ সব বলছে আমাকে।একজন মা ভরসা করে আপনাদের কাছে তার সন্তানকে রেখে গেছে।আর আপনারা শুধুমাত্র কিছু টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে ফেলতে চেয়েছেন!
মি. আহমেদ তাকে নিয়ে সেদিন পালিয়ে গেছিলো বলেই আজ সে আমার সাথে।”
আলম অনুতপ্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।ভাঙা ভাঙা গলায় কিছু বলতে গিয়েও মাহাদ এর সামনে কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারলো না।
মাহাদ গর্জে উঠে বললো—
“আমার স্ত্রীকে আর একটা বাজে কথা বললে আমি আপনাদের কাউকে ছাড়বো না।”
মাহাদ সোফা থেকে একটা প্যাকেট উঠিয়ে নিয়ে তা থেকে টাকা বের করে আলম এর সামনে রাখা টেবিলে রাখে।দৃঢ় গলায় বললো—
“এইখানে পুরো দশ লাখ আছে।এইবার বলেন আম্বের এর বাবা কে?
চলবে,,,
(ছোট পার্ট😊😊।গ্রামে আসছি সময় হচ্ছে না।)