#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#পর্ব:১১
#যারিন_তাসনিম
চন্দ্রিমা কাউকে না জানিয়েই হঠাৎ চলে আসলো রাহার বাসায়। বাসায় রাহা নেই, কিন্তু রাব্বি আছে। রাব্বি চন্দ্রিমাকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আপু, তুমি আসবা, জানাও নাই কেনো?”
চন্দ্রিমা রাব্বিকে ছেড়ে হেসে বলল,
“ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই। তোর কড়া বোন কোথায়?”
নাক, মুখ কুচকে রাব্বি বলল,
“ও এখনো আসে নাই হসপিটাল থেকে।”
চন্দ্রিমা রাব্বির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল,
“কী হয়েছে তোর?”
“সয়তানটা সিদ্ধী আপুর সাথে সারি ঘাট গিয়েছিলো। কতবার বলেছিলাম আমাকে নিয়ে যেতে। নিয়ে যায় নাই। মানুষের মন এত কঠিন কীভাবে হয়?”
চন্দ্রিমা রাব্বির নাক টেনে বলল,
“তোর বোনের মন মোটেও কঠিন না। যা করে, তোর ভালোর জন্যই করে। আমি বরং সিদ্ধীকেও ফোন করে আসতে বলি।”
চন্দ্রিমা সিদ্ধীকে ফোন করে। কিছুক্ষণ বাজতেই ফোন রিসিভ হয়। সিদ্ধী ফোন ধরেই বলে,
“আপু কেমন আছো?”
চন্দ্রিমা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলে,
“সেসব কথা পরে হবে। তুই রাহার বাসায় চলে আয়। জামা কাপড় নিয়ে আয়। আমি এখানে আছি। আমরা থাকবো এখানে।”
সিদ্ধী খুশিতে লাফ দেয়। সিদ্ধীর মা দূর থেকে তা দেখে বলেন,
“দু’দিন বাদে বিয়ে। এখন অন্তত এসব লাফালাফি বাদ দে, মা।”
সিদ্ধীর মায়ের কথা শুনে চন্দ্রিমা সশব্দে হেসে উঠে। সিদ্ধী বলে,
“আপু রাখি রাখি। আমি এখনি আসছি।”
ফোন কেটে যায়। চন্দ্রিমা জানে, মেয়েটা চঞ্চল। রাহার সূত্রে সিদ্ধীর সাথে পরিচয়। চন্দ্রিমা রাহার বোন। কিন্তু সিদ্ধীর ব্যবহারে মনে হয়, চন্দ্রিমা সিদ্ধীরও বোন। বেশ মিশুক। চঞ্চল মেয়েটার ক’দিন বাদে বিয়ে, তা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। সিদ্ধীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুব ভাগ্যবান, নাহলে বর্তমান যুগে এমন মেয়ে কয়জনই বা পায়।
চন্দ্রিমা রাহার রুমে গিয়ে বসে। রাব্বি পিছু পিছু আসে। চন্দ্রিমাকে পানি দেয়। পানি খাওয়ার পর গ্লাস হাতে নিয়ে রাব্বি বলে,
“ইয়ে মানে, আপু, আমি না আপুর এক্স বি এফের পিক পেয়েছি।”
চন্দ্রিমার চোখ মুহূর্তে বড় হয়ে যায়। এত ছোট চোখকে বড় করার যেন আপ্রাণ চেষ্টা। বলে,
“মানে?”
রাব্বি চন্দ্রিমার পাশে বসে হাত বাড়িয়ে বলে,
“প্রমিস করো, কাউকে বলবা না।”
চন্দ্রিমা ঢোক গিলে হাতে হাত রেখে কথা দেয়। রাব্বি সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে, সে কীভাবে ছবি পেয়েছে।
চন্দ্রিমা হতবাক হয়। বলে,
“এত চালাক হয়ে গেলি? এগুলো ঠিক না।”
রাব্বি মুখ গোমড়া করে বলে,
“আমি ভেবেছিলাম, তুমি খুশি হবা। আমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করবা যে, আমি পিক নিতে পেরেছি। আর তুমি কিনা এসব বলছো।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চন্দ্রিমা বলে,
“এসব করে কোনো লাভ নেই। রাহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
রাব্বির মুখ হা হয়ে যায়। চন্দ্রিমা মুখ বন্ধ করে দেয়।
হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজে রাব্বি আঁতকে উঠে। এরপর দরজা খুলতে গেলে চন্দ্রিমা রাব্বিকে আটকায়। নিজে গিয়ে দরজা খুলে। রাহা চন্দ্রিমাকে দেখে অবাক হয়। চন্দ্রিমা নিজ থেকে রাহাকে জড়িয়ে ধরে। রাহাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার বোনকে। এরপর রাহা চন্দ্রিমার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়। রাব্বি রাহাকে দেখতেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রাব্বির তার বোনের উপর থেকে রাগ অনেক আগেই চলে গিয়েছে। কিন্তু রাগটা দেখানোর মাঝে অন্যরকম শান্তি আছে।
রাহা দরজা বন্ধ করে চন্দ্রিমাকে আবার জড়িয়ে ধরে। ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। আজ তার চোখ কোনো বাধা মানবে না। চোখ দুটো যেন নিজেকে কথা দিয়েছে, আজ তারা থামবে না। আটকে রাখা সব পানি আজ চন্দ্রিমার জামা ভিজিয়ে ছাড়বে। চন্দ্রিমাও আটকালো না।
বেশ কিছুক্ষণ কেঁদে রাহার মন শান্ত হয়। মন শান্ত হলেও ক্লান্ত হয়ে গেছে চোখ দুটো। রাহা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ, মুখ ধুয়ে আসে। এসে দেখে, সিদ্ধীও এসেছে। সিদ্ধী রাহাকে দেখতেই বলে,
“কিরে, আজও কেঁদেছিস?”
রাহা কিছু বলল না। সিদ্ধী আর চন্দ্রিমা পাশাপাশি বসেছে। রাহা তাদের দুজনের সামনে গিয়ে বসে। নিস্তব্ধতা ভাঙতে সিদ্ধী নিজের মত করে সব ঘটনা বলতে শুরু করে। নিয়াজকে পেয়ে গেছে। নিয়াজ সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিত চন্দ্রিমাকে খুলে বলে। চন্দ্রিমার অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়। রাহার দিকে তাকিয়ে বলে,
“এতকিছু হয়ে গেলো। আমাকে বললিও না।”
সিদ্ধী রাহাকে সামান্য ধাক্কা মেরে বলে,
“ও ফোনে কোনোকিছুই বলতে চায় না। সবকিছু সামনাসামনি বলতে চায়।”
চন্দ্রিমার মনে ভয় জাপটে ধরে। বলে,
“রাহার যে বিয়ে ঠিক করছে মামা-মামি?”
কথাটা শুনতেই সিদ্ধীর হাসি মুখে আঁধার নেমে আসে। বলে,
“কবে?”
“তুই জানোস না?”
সিদ্ধী বালিশ নিয়ে রাহার দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে,
“এই বেয়াদব মেয়ে কাউকে কিছু বলে না।”
চন্দ্রিমা চিন্তিত স্বরে বলে,
“আমাদের বিয়ে ভাঙতে হবে। আর ওদের ব্যাপারটাও ঠিক করতে হবে।”
“কোনো লাভ নেই।”
কথাটা বলেই রাহা পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। সিদ্ধীকে চন্দ্রিমা প্রশ্ন করে,
“তাহলে তোরা খুলনা যাচ্ছিস?”
সিদ্ধীর আঁধার মুখ আবার আলোকিত হয়ে উঠে। বলে,
“হুম। দু’দিন বাদেই যাচ্ছি। এত্তগুলা শাড়ি কিনলাম। রাহা বাবুর জন্যও কিনেছি। ওকে শাড়ি পরিয়ে নিয়াজ ভাইয়াকে পটাতে হবে।”
রাহা পিছন ফিরে সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“যে পটার, এমনেই পটবে। পটানোর জন্য শাড়ি পরতে হয় না।”
কথাটা বলে আবার পাশ ফিরলো। সিদ্ধী তাচ্ছিল্য স্বরে বলল,
“হেহ! মাঝে মাঝে শাড়ি পরে পটাতে হয়। বেশি বুঝিস না।”
রাহার কণ্ঠস্বর আর পাওয়া গেলো না। আড়ালে থাকা মুচকি হাসিটা কেউ দেখেনি।
চন্দ্রিমা, সিদ্ধীও ঘুমিয়ে পড়লো। পরেরদিন চন্দ্রিমা, রাহা ভোরে উঠে নামাজ পড়লো। সিদ্ধী কোনোরকমে নামাজ পড়েই আবার ঘুম দিয়েছে। কালকে রাত থেকে একবারো রাহার মায়ের সাথে চন্দ্রিমার দেখা হয় নি। তাই দেখা করতে রুম থেকে বের হলো। বেরিয়েই দেখলো, রাহার মা নাস্তা করতে বসেছেন। চুলগুলো একদম পরিপাটি। খোপা করা। হালকা বেগুনি রঙের কামিজ পরা। খেয়েই বোধহয় অফিসে চলে যাবেন। চন্দ্রিমা সামনে গিয়ে সালাম দিল। চন্দ্রিমাকে দেখে শিউলি আমিন বললেন,
“আমার সাথে কালকে রাতে দেখা করলি না কেনো?”
চন্দ্রিমা স্বাভাবিকভাবে বলল,
“ফুপি, তুমি নিশ্চয়ই টায়ার্ড ছিলে। তাই আর দেখা করতে তোমার রুমে যাই নি।”
রেশমি দৌড়ে এসে আরো একটা গরম রুটি শিউলি আমিনের প্লেটে রেখে বলল,
“আপাকে আমি কালকে কইসিলাম, তুমি যে আইসো। আপায় জিগাইসিলো, তুমি কই। আমি কইসি, রাহার ঘরেই আসো।”
শিউলি আমিন রেশমির আনা আরেকটা রুটির অর্ধেক খেয়েই বেরিয়ে গেলেন। চন্দ্রিমা ঘরে গিয়ে আবার ঘুমালো। উঠে দেখলো, এগারোটা বেজে গেছে। সিদ্ধী এখনো উঠে নি। রাহাকে না দেখেই বুঝলো, হসপিটাল চলে গেছে। সিদ্ধীকে জাগালো।
চোখ কচলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, এগারোটা পাঁচ বাজছে। লাফ দিয়ে উঠে গেলো। বাসায় থাকলে সিদ্ধীকে এতক্ষণ ঘুমোতে দিত না তার মা। ফোন চেক করতেই দেখলো, তাশরিকের দুটো মিসড কল।
চলবে,