বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্ব :১৭

0
641

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
পর্ব ১৭
#যারিন_তাসনিম

দু’দিন বাদেই ছাদে বার-বি-কিউ করা হবে। প্ল্যানটা নিয়াজ করলো। তাশরিককে জানাতেই সে নিয়াজের পিঠ চাপড়ে বলল,
“গ্রেট আইডিয়া, ব্রো! আমার বউকে শাড়ি পরতে বলবো।”
নিয়াজ হেসে জবাব দিল,
“আমার জনকেও বলিস।”
কথাটা বলেই নিয়াজ অন্যদিকে ফিরে রইলো। তাশরিক ঘুরে এসে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওয়েট, ব্রো! তুই কি বললি? আই কান’ট বিলিভ। তোর ইগোর পাহাড় ভেঙেছে তাহলে?”
নিয়াজ পকেটে হাত দিয়ে বলল,
“প্লিজ বলিস।”
তাশরিক সুযোগ পেয়ে ভাব নিয়ে বলল,
“আমি আমার বউকে ছাড়া কাউকে বলতে পারবো না। যার যারটা, তার তার দায়িত্বে।”
নিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাশরিক আবার বলল,
“তুই বল না, ব্রো! দেখিস, তুই বললে রাহা ঠিকই পরবে।”
নিয়াজ উত্তর দিলো না। তাশরিক সিগারেট ধরালো। সিগারেটের ধোঁয়া ঘুরে ঘুরে উপরে উঠে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। নিয়াজ ধোঁয়াগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে বলল,
“ভাবি জানে, সিগারেট খাস যে?”
সিগারেটে ফুঁক দিয়ে তাশরিক বলল,
“না রে। জানাতে ভয় লাগছে। পরে যদি বিয়ে না করে?”
নিয়াজ বিরক্ত হয়ে বলল,
“একদিন না একদিন তো জানবেই, তাই না? তার থেকে ভালো, সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দে।”
সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে তাশরিক বলল,
“নেশা হয়ে গেছে। ভালোবাসার নেশা থেকে যেমন বেরিয়ে আসা যায় না, ঠিক তেমনি সিগারেটের নেশা থেকে বেরিয়ে আসা যায় না।”
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিয়াজ বলল,
“ভুল বললি। পৃথিবীতে শুধু একটা নেশাই আছে, যার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। আর সেই নেশা হচ্ছে, ভালোবাসা। ভালোবাসা বাদে আর কোনো নেশা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।”
তাশরিক আর জবাব দিলো না।
পরেরদিন রাতে সিদ্ধীকে আর রাহাকে তাশরিকের দাদি ডাকে। সিদ্ধী রানী বেগমকে খুব পছন্দ করেন। বয়স হলেও মানুষটা একদম বাচ্চার মতো। খুব মিশুকও। রুমে ঢুকতেই সিদ্ধী দেখলো, অহনা রানী বেগমের বাম পাশে বসে আছে। সিদ্ধী গিয়ে রানী বেগমের ডান পাশে টুল টেনে বসলো। রাহা দাঁড়িয়ে রইলো। রানী বেগম পান চিবোতে চিবোতে বললেন,
“তুমি খাড়ায় আসো কেন?”
রাহা নরম কণ্ঠে বলল,
“এমনি দাদি, সমস্যা নেই।”
রানী বেগম ভ্রু কুচকে বললেন,
“এদিকে আইসা বসো।”
রাহা আর কিছু না বলে অহনার পাশে গিয়ে বসলো। রানী বেগম সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুমি রান্নাবান্না তো পারো মনে হয়, তাই না?”
সিদ্ধী রাহার দিকে তাকিয়ে উত্তর শিখানোর জন্য ইশারা করলো। রাহা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে সত্যিটা বলতে বললো। সিদ্ধীও দু’দিকে মাথা নাড়ালো। রানী বেগম অবাক হয়ে বললেন,
“ওমা! তুমি রান্নাবান্না জানো না। হায় কপাল, আমার নাতনিটার তো কপাল পুড়লো।”
সিদ্ধী লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো। রানী বেগম কিছুক্ষণ সিদ্ধীর দিকে চেয়ে রইলেন। মুখের হাবভাব লক্ষ্য করলেন। সিদ্ধী বারবার ঢোক গিলছে। হাত দিয়ে কপাল মুছছে। যদিও কপালে কোনো ঘাম নেই। রানী বেগম শব্দ করে হেসে উঠলেন। বললেন,
“বোকা মেয়ে। কি ভয়ডা পাইসে দেহো। রান্নাবান্না জানোন লাগবো, এমন কথা আসে নাকি? পরে শিইখা লইবা তোমার শাশুড়ীর থে(থেকে)।”
সিদ্ধী শাশুড়ীর কথা শুনতেই আরও ভয় পেলো। রানী বেগম রাহার দিকে তাকালেন। রাহা সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে শান্ত হতে বলছে। রানী বেগম মুচকি হেসে বললেন,
“খুব ভালা একটা বান্ধুবী পাইসো। যে জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে সাইয্য(সাহায্য) করে।”
রাহা রানী বেগমের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসলো। কথাটা শুনেই সিদ্ধী জোরে হেসে বলল,
“হ্যাঁ,দাদি। এটা ঠিক বলেছো। ও আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে সাহায্য করে। আমার বিপদে, আমার দুঃখে, আমার ভয়ে;প্রতিটা মুহূর্তে আমার সাথে থাকে। দ্যাটস হোয়াই, সি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড।”
রাহা এবার সত্যিই হাসলো। অহনা বলল,
“বাহ! তোমার হাসিটা তো খুব সুন্দর।”
সিদ্ধী হেসে বলল,
“হ্যাঁ, এই হাসির উপরই একজন দিওয়ানা হয়ে আছে।”
অহনা হতবাক হলো। বলল,
“তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?”
রাহা সিদ্ধীর দিকে কড়া চোখে তাকালো। সিদ্ধী বলল,
“আরে না। এমনেই অনেকে ক্রাশ খায় না, ওরকমই একজন আছে যে, শুধু ক্রাশ খেয়ে বসে আছে, ওকে ভালোবাসে।”
রানী বেগম রাহার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,
“তুমি কবে বিয়া করবা?”
রাহা চোখ তুলে তাকালো। এর জবাব তার কাছে নেই। তাশরিক আর নিয়াজ সেই মুহূর্তেই ঘরে প্রবেশ করলো। নিয়াজ ঘরে ঢুকেই রাহাকে একপলক দেখলো৷ তাশরিক রানী বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোমরা এখানে আড্ডার আসর জমিয়েছো, আমাদের একবার ডাকলেও না।”
রানী বেগম তাশরিককে দেখে বলল,
“মাইয়াগো মধ্যে তোমরা কি করবা? বউরে দেখবার মন চায়, সেটা সরাসরি কইলেই তো পারো।”
সিদ্ধী লজ্জায় হাসলো।
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের নোটিফিকেশন আসলো। চন্দ্রিমার মেসেজ! রাহা মেসেজটা ওপেন করতেই চমকে উঠলো। নিয়াজ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
রাহার যেনো শ্বাস আটকে এলো। দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সিদ্ধী রানী বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দাদি, আমি একটু আসছি।”
রাহার পিছে গেলো। রুমে যেতেই দেখলো, রাহা মোবাইল হাতে নিয়ে থমকে বসে আছে। সিদ্ধী রাহার পাশে বসে বলল,
“কী হয়েছে তোর?”
রাহা চুপ করে রইলো। সিদ্ধী আবার বলল,
“বল না, কী হয়েছে?”
রাহা সিদ্ধীকে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে একটা ছেলের ছবি বের করে দেখালো। সিদ্ধী বলল,
“কে ছেলেটা?”
স্থিরভাবে রাহা বলল,
“চন্দ্রিমা আপু ছেলেটার ছবি পাঠিয়েছে। এই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আর তোর বিয়ের পরপরই আমার বিয়ের ডেট ঠিক করা হবে।”
সিদ্ধী থমকে গেলো। রাহার চোখে জল দেখে সিদ্ধী ভরসা দিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আরে ধুর, বোকা। আমি আন্টির সাথে কথা বলবো।”
রাহা হাত সরিয়ে বলল,
“লাভ নেই রে। আম্মু এতদিন মেনে নিলেও আর মেনে নিবে না। আমি আর আটকিয়ে কী করবো, বল? এবার আমারও বিয়ে করা উচিত। নিয়াজের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু এখন অপেক্ষা করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না আমি। আব্বু, আম্মু এতদিন আমার কথা শুনে বিয়ে আটকিয়ে রেখেছিলো। তাই এবার আমি তাদের পছন্দেই বিয়ে করবো।”

নিয়াজ দরজার বাহিরে কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো।

চলবে,

আজকে কিছু ব্যস্ততার জন্য পোস্ট করতে দেরি হয়েছে। আর একটু ছোটও হয়েছে, তার জন্য দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here