#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
পর্ব:১৮
#যারিন_তাসনিম
নিয়াজকে চুপ থাকতে দেখে তাশরিক বারবার জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে। রানী বেগমের ঘর থেকে বের হওয়ার পর সকাল থেকেই রাহা, সিদ্ধী, নিয়াজকে মনমরা দেখাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে, সবার মন খারাপের সুতো একটাই। এই সুতো তিনজনই ধরে আছে। নিয়াজ কিছু না বলায় রাতে তাশরিক সিদ্ধীকে ফোন করলো৷ সিদ্ধী ফোন রিসিভ করতে না করতেই তাশরিক বলল,
“শুনো, বাড়ির পেছনে একটা বাগান আছে। এখানে আসো, আমি অপেক্ষা করছি।”
নিচু স্বরে সিদ্ধী জবাব দিল,
“রাত ১২ টার সময় বাড়ির পেছনের বাগানে গেলে রাহাকে কী বলবো?”
“ওকে বলবে, আমি ডেকেছি।”
ভ্রুকুটি করে সিদ্ধী বলল,
“কিন্তু কেনো ডাকছো এই রাতের বেলা?”
সিদ্ধীর এত প্রশ্ন মাঝে মাঝে তাশরিককে বিরক্ত করে ফেলে। এরপরও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে তাশরিক বলল,
“কথা আছে।”
ভয়াতুর কণ্ঠে সিদ্ধী বলল,
“এই তোমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই তো?”
টুট! টুট! টুট!
তাশরিক ফোন কেটে দিলো। মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে। সিদ্ধী বুঝতে পারলো, তাশরিক রাগ করে ফোনটা কেটে দিয়েছে। সিদ্ধী রাহার দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাহা ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। সিদ্ধী বলল,
“রাহা বাবু, আমি একটু নিচে যাচ্ছি।”
আনমনা হয়ে রাহা বলল,
“ঠিক আছে।”
সিদ্ধী ওড়না ঠিকভাবে পরে চুল হাতখোপা করে গায়ে শাল জড়ালো। ঘরের ভিতরই যেনো শীত সবাইকে আঁকড়ে ধরেছে। আর এই অসময়ে বাহিরে গেলে তো শীত পুরোপুরিই কাবু করে ফেলবে। এসব ভেবে সিদ্ধী আরেকটা শালও নিলো তাশরিকের জন্য। আস্তে আস্তে নিচে নামতেই রসুয়ার গলার স্বর পাওয়া গেলো।
“ভাবি, আপনে কই যাইতাসেন এই অসময়ে?”
সিদ্ধী ঘাবড়ে গেলো। রসুয়ার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“পেছনের বাগানে।”
রসুয়া সিদ্ধীর কাছে এসে বলল,
“কিল্লাইগা? ভাইজানে ডাকসে?”
সিদ্ধী রীতিমতো অবাক হলো। মেয়েটা কীভাবে বুঝতে পারলো, তাকে তাশরিক ডেকেছে। ভাবনার মধ্যেই রসুয়া আবার বলল,
“ভাবতাসেন যে, আমি কেমনে জানলাম? আমি তো আর আমনের মতো বোকা না, বিয়ের আগে এরুম বউরে দেখার লাইগা সবাই-ই ছটফট করে। চলেন, আমি আমনেরে আগাই (এগিয়ে) দিয়া আসি।”
কথাটা বলেই রসুয়া বাড়ির পেছনের দরজা খুলল। আর বলল,
“ওইহানে দাঁড়ায় না থাইকা আসেন। আমি আর যাইতে পারুম না। গেলে নিজেই চিনবেন।”
সিদ্ধী দৌঁড়ে আসলো। বলল,
“আচ্ছা, ধন্যবাদ তোমাকে।”
“থাউক, আর ধন্যবাদ দেওন লাগবো না। ঘরে ঢুকার সময় দরজা লাগায় আইসেন।”
সিদ্ধী হ্যাঁ-বোধক উত্তরে মাথা নাড়ালো। রসুয়া চলে গেলো। দরজা দিয়ে বের হতেই ডানে বামে তাকিয়ে ডানেই বাগান দেখতে পেলো। আবছা ছায়া দেখা যাচ্ছে। সিদ্ধী সেই অনুসারে এগিয়ে গেলো। তাশরিক অপর পাশ ফিরে ছিলো। বলল,
“জানতাম, তোমার মতো ঘাড়ত্যাড়াকে আনার জন্য ফোন কেটে দেওয়াটাই বেস্ট হবে।”
সিদ্ধী তাশরিকের কথায় একটু অপমানবোধ করলো। বলল,
“আমি ঘাড়ত্যাড়া নই। এত রাতে একটা মেয়েকে ডাকা অসভ্যতামি।”
তাশরিক রেগে সিদ্ধীর দিকে ফিরে সিদ্ধীর দুই বাহু চেপে ধরলো। সিদ্ধী চোখ বন্ধ করে ফেলল। তাশরিক বলল,
“আরেকবার বলো, কি বলেছো?”
ভয় পেলেও সাহস নিয়ে সিদ্ধী বলল,
“যেটা শুনেছো, সেটাই বলেছি। দেখো, আমি কিন্তু বিশ্বাস করে এখানে এসেছি। তাই উল্টা পাল্টা কিছু করবে না।”
তাশরিক ছেড়ে দিয়ে বলল,
“এটাকে বিশ্বাস বলে না, সিদ্ধী। তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে এত প্রশ্ন করতে না। এত ভয় পেতে না।”
সিদ্ধী তাশরিকের সামনে এসে কান ধরে বলল,
“সরি।”
সিদ্ধীর বাচ্চা চেহারাটা দেখে তাশরিক হেসে ফেলল। সিদ্ধী ভেংচি কেটে বলল,
“জানতাম, শাল পরবে না। তাই শাল নিয়ে এসেছি, নাও পরো।”
কথাটা বলে শাল এগিয়ে দিলো। তাশরিক বলল,
“আমার শীত লাগছে না। আমি কিছু জরুরী কথা বলার জন্য তোমাকে ডেকেছি।”
সিদ্ধী তাশরিকের কাছে এসে পা উঁচু করে শাল জড়িয়ে দিলো। এরপর বলল,
“হ্যাঁ, বলো এবার।”
তাশরিক আবার হেসে সিদ্ধীর গাল টেনে দিলো। বলল,
“তোমাদের সবার মন খারাপ কেনো?”
সিদ্ধী একটু অবাক হয়ে বলল,
“সবার বলতে?”
“রাহা, তোমার আর নিয়াজের।”
সিদ্ধীর আবার মন খারাপ হয়ে গেলো। বলল,
“নিয়াজ ভাইয়ারটা জানি না। কিন্তু রাহা বাবুর বিয়ে ঠিক করেছে, তাই রাহা আর আমার মন খারাপ।”
তাশরিক এক ভ্রু উঠিয়ে বলল,
“মন খারাপের কী আছে? নিজে ঠিকই বিয়ে করছো, নিজের বান্ধুবী করলেই দোষ?”
নাক ফুলিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে সিদ্ধী বলল,
“একদম না জেনে উল্টা পাল্টা বলবে না।”
তাশরিক চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“তাহলে জানাও।”
সিদ্ধী রাহার শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত ঘটা সব ঘটনা গড়গড় করে বলে দিলো। তাশরিক একপাশে গিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো। সিদ্ধী তাশরিকের কাছে গিয়ে বলল,
“অই সয়তান, হাসছো কেনো?”
তাশরিক সিদ্ধীর দিকে ফিরে বলল,
“আমি একটা বোকা বাচ্চাকে বিয়ে করছি। এই মেয়ে যে বিয়ের উপযুক্ত না, সেটা বেশ বুঝতে পারছি। তবুও বিয়ে করবো।”
সিদ্ধী ঠোঁট উল্টে বলল,
“একদম আমাকে বোকা বলবে না।”
তাশরিক হেসে বলল,
“বোকাকে বোকাই বলবো। তোমাকে একটু চেতালেই পেট থেকে সব কথা গড়গড় করে সব বেরিয়ে যায়। আর শুনো, সব ঘটনাই আমি জানি। কিন্তু গতকাল রাতের ঘটনাটা জানতাম না। হতে পারে, নিয়াজ কোনোভাবে জেনে গিয়েছে, রাহার বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই ওরও মন খারাপ।”
সপ্তমাশ্চর্য দেখার মতো অবাক হয়ে সিদ্ধী বলল,
“তুমি সব জানতে? আমাকে একবারও বললেও না।”
তাশরিক ভ্রু কুচকে বলল,
“তুমি আমাকে বলেছিলে?”
সিদ্ধী অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“যাই হোক, অতীত অতীতই। এসব বাদ দিয়ে আমাদের প্ল্যান করা উচিত। আমি প্ল্যান করেছি, রাহা বাবুকে শাড়ি পরিয়ে ভাইয়াকে পটাবো।”
“শাড়ি” শব্দটা শুনেই তাশরিকের বার-বি-কিউ প্ল্যানের কথা মনে পড়লো। নিয়াজের সাথে যা যা কথোপকথন হয়েছে, তাশরিক সবটা সিদ্ধীকে খুলে বলল। সিদ্ধী হাততালি দিয়ে বলল,
“ওয়াও, ভাইয়া কত ভালোবাসে।”
পকেটে হাত রেখে তাশরিক বলল,
“আমি বাসি না নাকি?”
সিদ্ধী মুচকি হেসে বলল,
“জানি নাহ।”
তাশরিক সিদ্ধীর লজ্জামাখা চেহারা দেখে মৃদু হাসলো। বলল,
“বাই দা ওয়ে, তোমার এসব হাঁটুর নিচে থাকা বুদ্ধি দিয়ে প্ল্যান করলে নিয়াজের সাথে রাহার বিয়ে তো দূরের কথা, ওদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝিও যাবে না। নিয়াজকে আলাদা করে পটানোর কি আছে। ও তো এমনেতেই পটে আছে। পারলে ভালো বুদ্ধি বলো। জানি, পারবে না। আমাকেই বের করা লাগবে।”
সিদ্ধী আবার নাক ফুলিয়ে বলল,
“তোমার যা ইচ্ছে করো। আমার প্ল্যান অনুযায়ী আমি কাজ করবো।”
বলেই চলে যেতে নিলো সিদ্ধী। তাশরিকের ডাকে পিছু ফিরলো। তাশরিকের হাতে ডেইরি মিল্ক বাবলি দেখে দৌঁড়ে তাশরিকের কাছে আসলো। তাশরিক হাত উঁচু করলো। মুখে কষ্টের ছাপ এনে সিদ্ধী বলল,
“দাও না প্লিজ।”
তাশরিক অন্যহাত দিয়ে কলার ঠিক করে বলল,
“আমার প্ল্যান অনুযায়ী কে কাজ করবে, সেটা ভাবছি।”
সিদ্ধী ডেইরি মিল্কটা নেওয়ার জন্য লাফাতে লাফাতে বলল,
“আমি করবো, আমি। আমি করবো, আমি ছাড়া আর কে করবে।”
“প্রমিস?”
সিদ্ধী জবাবে বলল,
“প্রমিস, প্রমিস, প্রমিস। দাও না প্লিজ।”
তাশরিক হাত নামালো। সিদ্ধী হাত থেকে চকলেটটা খপ করে নিয়ে দৌঁড়ে চলে গেল।
চলবে,