বাঁধিব হৃদয়ে তোমায় পর্ব-১১

0
1003

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_১১
#সুমাইয়া মনি

‘রাগছিস কেন আবির? আগে কারণটা তো শুনবি।’ সামিম কণ্ঠ খাদে ফেলে বলল।
‘কারণ যাই হোক না কেন সেটা মেটার না। বিভা আমার সঙ্গে কথা তো দূর, নাক থেকে রাগই সরে না তার। আর তোর সঙ্গে কি সুন্দর হেসে কথা বলে কীভাবে? আমি কি ওর শত্রু?’
সামিম ফিক করে হেসে দেয়। আবির চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই হাসি থামিয়ে ‘স্যরি’ উচ্চারণ করে। আবির নজর সরিয়ে নেয়।
সামিম সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
‘রিল্যাক্স আবির। আস্তেধীরে বিভা ঠিক তোর প্রেমে পড়ে যাবে।’
আবির সামিমের দিকে সরল চাহনি তাকায়। খুব করে চায় সামিমের কথাটা যেন ফলে।
.
‘সাকিব ভালো ছেলে নয় মোহনা। ভালো হয়েছে তোদের ব্রেকআপ হয়েছে।’
নিরুত্তর থেকে মোহনা আনমনে হাঁটছে। বিভা ফের বলে,
‘যত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবি তোর জন্যই ভালো হবে। ভাঙা মন কাঁচের সমতুল্য রে মোহনা। তবে মায়া, ভালোবাসা দিয়ে, প্রলেপ দিয়ে অবশ্যই জোড়া লাগে, ক্ষত শুকায়।’
মোহনা এবার মুখ খুলে। বলে,
‘ভালোবেসে ছিলাম কতখানি বলে বুঝানো সম্ভব নয়। আমার এই ভালো, খারাপ সময় গুলো নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। এটাই আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী।’
‘এমন করে বলিস না মোহনা। এগুলো পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই না।’
তাচ্ছিল্য হাসে মোহনা। এ হাসি যে কতটা বেদনাদায়ক সেটা বিভা ঢের বুঝতে পারছে।
_____
রাতে……

রিকশার ভাড়া কোনোমতে মিটিয়ে হাঁপিয়ে ছুঁটছে বিভা আফিনদের বাড়ির দিকে। ভেতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ডাইনিং টেবিলে বসা তিন মা ছেলে বিভাকে দেখে চমকে উঠে। ঘড়িতে তখন রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। বিভা একটু দম নিয়ে এগিয়ে এসে আফিনের উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ভাইয়া, আপু বাসায় ফিরে নি এখনো।’
আফিন উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ায়,
‘কি বলছো?’
‘হ্যাঁ! ভাইয়া। সকাল এগারোটার দিকে গার্মেন্টসের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। এখনো বাসায় আসেনি। আপুর ফোনের বেটারিতে সমস্যা ছিল তাই সঙ্গে নিয়ে যায় নি। মা ইতিমধ্যে চিন্তিত হয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছে। তাই আপনার কাছে আসলাম।’
‘আগে কেন বলনি? এতক্ষণ মুখ চেয়ে কার আশায় বসে ছিলে?’ কিছুটা রাগী কন্ঠে শুধালো আফিন।
বিভা মাথা নত রেখে বলল,
‘আমরা ভেবেছিলাম আপু হয়তো সন্ধ্যার আগে চলে আসবে…’
আফিন তৎক্ষনাৎ হাত ধুয়ে ফোন হাতে বেরোয়। আইরিন বেগম বিভার কাছে এগিয়ে আসলেন। আবিরের খাওয়াও হয় না। বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় ববিকে খুঁজতে। আজ সারাদিনে ব্যস্ততার কারণে ববির সঙ্গে আফিনের কথা হয়নি। একটু আগেই বাড়ি ফিরে ববিকে মেসেজ দিয়েছিল খেয়ে কল দিবে। উত্তর আসেনি দেখে আফিন ভেবেছে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে ববি। আম্মুর ডাকে ফোন রেখে খেতে আসে।
কথাটা ভেবে আফিনের মনে অস্থিরতা ক্রমাগত বাড়ছে।

বিভা সেখানে দাঁড়ায় না। ‘মা বাসায় একা’ কথাটি আইরিন বেগমকে জানিয়ে চলে যায়৷ পথিমধ্যে এখানে যেখানে চোখ বুলিয়ে ববিকে খুঁজে। ভয়ে ক্রমশ কাতর হয়ে আসছে সে। চোখের পানি গুলো বার বার হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিচ্ছে। রাস্তায় এখনো মানুষজনের আনাগোনা রয়েছে। গাড়িও চলাচল করছে। কেউ কেউ বিভার দিকে উৎসুক নজরে তাকাচ্ছে। এতে তার ভাবান্তর নেই। এলোমেলো পা ফেলে হেঁটে চলেছে সে।

আবির গার্মেন্টসে এসে জানতে পারে ববি সকালে এখানে আসেই নি। সেখান থেকে চলে যেতে নিলে আফিন এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে কর্মচারীদের। তারা একই কথা বলে। পাহাড় সমান চিন্তা নিয়ে খুঁজতে বের হয় তার প্রিয়তমা’কে। এগলি, ওগলি, রাস্তায় খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আবির খু্ঁজচ্ছে, যেখানে যেখানে ববি বাজার করতে যেতো সেই স্থানে। কিন্তু এত রাতে বাজারঘাট বন্ধ থাকায় ব্যর্থ হয় আবির। আপাতত এই দিকটা অফ রাখে। একটার দিকে আফিন থানায় এসে মিসিং কেইস ফাইল করে। আবিরও সঙ্গে ছিল। থানার ওসি না থাকায় কনস্টেবলদের কাছে ববি ডিটেইলস খুলে বলে ছবি দিয়ে আসে। আফিনের কাছে ববির ছবি ছিল। বিয়ে ঠিক করার দিন তুলেছিল।
ববির গার্মেন্টসের কাজের কথা শুনে যেন কনস্টেবল কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়। দুই ভাই সেটা উপেক্ষা করে ববি ছবি সহ বাদবাকি সব বলে বাড়িতে ফিরে। আইরিন বেগম এখনো জেগে ছিল। ছেলের কাছে ববির ব্যাপারে জানতে চাইলে হতাশাজনক মুখ দেখে বুঝতে পারের তিনি। তারও মুখ কালো হয়ে যায়। আফিন বিষণ্ণ মনে সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় কয়েকবার হোঁচট খেতে নেয়। নিজেকে সামলানোর শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছে।
ছেলের এমন অবস্থা দেখে মনঃক্ষুণ্ন হয় তার। আবির তার ভাইকে ধরে রুমে দিয়ে আসতে নিলে আফিন বাঁধা দেয়।
তিনি একটা চলে যায় তার কক্ষে।

‘আবির তুই আজ রাতে বিভাদের বাড়িতে গিয়ে থেকে আয়। বাসায় তো তারা দু’জন।’
‘আচ্ছা আমি যাচ্ছি, তুমি ভাইয়ার দিকে খেয়াল রেখো।’
‘হুম।’
‘আর শোন, পথিমধ্যে কিছু খাবার কিনে নিয়ে যাস। মনে হয় না তারা কিছু খেয়েছে।’
‘আচ্ছা আম্মু।’
তৎক্ষনাৎ আবিরও বাইক নিয়ে ছুঁটে বিভাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বিলকিস বানু জায়নামাজে বসে আছে। আল্লাহর কাছে বার বার মিনতি, কান্নাকাটি করে ববিকে চাইছে। যেখানে আছে যেন সুস্থ ভাবে ফিরে আসে। বিভা খাটে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পরই আঁখিযুগল পানিতে ঘোলা হয়ে আসছে তার। ববির অকেজো ফোন তার হাতেই রয়েছে। দরজায় করাঘাত হয়, সঙ্গে আবিরের কণ্ঠের স্বরও ভেসে আসে। বিভা ওড়নার দ্বারা চোখ মুছে দরজা খুলে দেয়।
আবির বিভার ফুলা ফুলা চোখ দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না সে কেঁদেছে। পাশে সরে যায়। আবির ভেতরে যাওয়ার পূর্বে বলল,
‘আম্মু আমাকে পাঠিয়েছে তোমরা একা তাই।’
‘সমস্যা নেই আমরা থাকতে পারব।’ মৃদুস্বরে আওড়ায়।
‘তবুও….’ অবশিষ্ট কথা বলার পূর্বে বিলকিস বানু উত্তেজিত হয়ে আবিরের নিকট এগিয়ে এসে বলল,
‘আমার ববির খোঁজ পেয়েছো? কোথায় আছে ববি জানো? নিয়ে আসো না আমার মেয়েকে, নিয়ে আসো বাবা।’ বলে কাঁদতে লাগলেন তিনি।
তার এমন আহাজারি দেখে আবির দৃষ্টি নত করে ফেলে। বিভা ওর মা’কে থামানোর জন্য জড়িয়ে ধরে খাটে বসায়, বলছে ‘আপুকে পেয়ে যাব, তুমি শান্ত হও মা।’
কথা শোনার অবস্থায় আপাতত সে নেই। বিভা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মা’কে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আবির তখনো দরজার সামনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। বিভা ওঁকে ভেতরে আসতে বসে। আবির সরু নিশ্বাস টেনে ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। হাতের খাবার গুলো বিভার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘তোমাদের জন্য এনেছি।’
বিভা প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আবিরের উদ্দেশ্য বলল,
‘আপনি তো খাননি। খেয়ে নিন।’
‘খাব না, তুমি খাও। আর আন্টিকে খাইয়ে দেও।’
‘মা ঘুমিয়েছে। এখন আর তাকে ডাকব না। আমার খাবার ইচ্ছে নেই।’
আবির কথাটা শুনে খাটের উপর প্যাকেট রেখে টুল নিয়ে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে। পকেট থেকে ফোন বের করে আম্মুকে জানিয়ে দেয় পৌঁছানোর বিষয়টি। তারপর ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে মনোযোগ সহকারে কিছু একটা ভাবে। এক মুহূর্তে সব উলটপালট হয়ে গেল। পরিস্থিতি কোথা থেকে কোথায় এসে থামলো।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। হাতে ব্যথা! তাই গল্প লিখতে কষ্ট হচ্ছে। পর্ব ছোট বলে কেউ নিরাশ হবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here