বাঁধিব হৃদয়ে তোমায় পর্ব-১০

0
1115

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_১০
#সুমাইয়া মনি

বিস্ময় চোখমুখ কুঁচকে আসে ববির। প্রথমে তো উত্তর দিতে পারেনি, পরমুহূর্তে কিছু বলার আগে আফিন আবার বলে,
‘আপনাকে প্রথম দিন দেখার পর আমি কোনো এক মুগ্ধতার আঁটকে গেছি। হঠাৎ হঠাৎ আপনার কথা মনে পড়ে যেত। অনেকব বার এড়ানোর বৃথা চেষ্টা করেছি। হয়তো আপনি আমার প্রথম ভালেবাসার মানুষ হিসাবে আমার জীবনে এসেছেন। করবেন কি আমায় বিয়ে? আমি আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। আশা করছি উত্তরটি নাসূচক হবে না।’ পুরো কথাটি শুনে ববি কিছু বলতে পারে না। লজ্জায় নিরুত্তর রয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। এতে আফিন কিছুটা উদাস হয়।

জানালার পাশ ঘেঁষে কথা গুলো ভাবছিল ববি। আফিনের কথা গুলো তাকে আনমনা করে দেয়। ভাবতে ভাবতে অনুভূতিপ্রবণ হয়ে পড়ে সে।
‘আপু?’ দু কাঁধে হাত রেখে বিভা ডাক দেয়।
ববি হকচকিয়ে উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘বল।’
‘কি ভাবলে?’
‘এখনো ভাবিনি।’
‘হ্যাঁ বলে দেও না। মা-ও তো তাই বলছে।’
‘আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোদের কে দেখবে রে?’
‘এইজন্যই তো এতদিন বিয়ে না করার জন্য দূরে ছিলি। এখন আর তোকে দূরে সরতে দেবো না। আফিনকে তুই হ্যাঁ বলে দিবি।’ বিলকিস বানু এগিয়ে এসে বললেন।
‘মা আফিন রা অনেক বড়োলোক। আমি চাই না তাকে বিয়ে করতে। আর তাছাড়া তোমাদের কথা আমার মাথায় আছে। আমি পারব না বিয়ে করতে।’
‘আবার সেই একই কথা বলছিস। তোর বিয়ে হলে বিভা তো আছে। দু’জন মানুষের সংসারের চিন্তা তোর করতে হবে না।’
‘তবুও…’
‘আপু বেশি কথা বোলো না। তুমি ভাইয়াকে হ্যাঁ বলে দেও। আর তুমি নিজেও তো ভাইয়াকে পছন্দ করো হুম..’ মুচকি হেসে বলল বিভা।
ববি লজ্জামিশ্রিত হাসি দেয়। বিভা বলে,
‘দেখো মা দেখো, তোমার মেয়ে সত্যি আফিন ভাইয়াকে পছন্দ করে।’
‘যাহ!’
বিলকিস বানু হাসে। আফিনের বিয়ের প্রস্তাব শুনে তারা খুশি হয়েছে।
____
‘আম্মু আমি ববিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি।’
‘ববি কী বলেছে?’
‘এখনো কিছু বলেনি।’
‘বিয়ে করবে তোকে, কি বুঝিস?’
‘জানি না।’
‘রাজি না হলে আমি তাকে রাজি করাবো।’ আবির বলল।
‘দেখি ববির উত্তর কি আসে।’
‘দেখো।’
‘বাবাকে তুমি বলবে নাকি আমি বলব আম্মু?’
‘আমিই জানিয়ে দেবো নে। কিন্তু ববির গার্মেন্টসে চাকরি… ‘
‘রাজি হলে বাদ দিয়ে দেবো। ওর পরিবারের দায়িত্ব আমি নিবো।’
‘হ্যাঁ! সেই ভালো হয়।’
‘সঙ্গে আমি আছি…’ আবির হাত তুলে বলে।
আফিন মৃদু হাসে। আইরিন বেগমও হেসে ফেলে।
.
.
পরেরদিন…

আবির ক্যাম্পসের সরু রাস্তায় বসেছিল বন্ধুদের নিয়ে।
বিভা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জোরে ‘এই যে বিয়াইন’ বলে ডাক দেয়। আশেপাশে অনেকেই ওদের দিকে তাকায়। বিভা কিছুটা রেগে যায়। কাছে এগিয়ে যেতে চাইলে মোহনা আঁটকায়। হাত ধরে টেনে ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আবির হাঁক ছেড়ে হেসে বলল,
‘মোহনা ছেড়ে দেও তোমার বান্ধবীকে। দেখি না সে কি বলে।’

মোহনা ছাড়ে না। একদম ক্লাসরুমে এসে হাত ছাড়ে। বিভা রাগ নিয়ে বলল,
‘ধরে আনলি কেন, যোগ্য জবাব দিয়ে দিতাম।’
‘ভুল কি বলেছে, তোর বোনের সঙ্গে যদি আফিন ভাইয়ার বিয়ে হয় তুই তো তার বিয়াইন হবি।’
‘সেটা চিল্লিয়ে বলতে কে বলেছে তাকে।’
‘বিয়ে ঠিক হলে সবাই এমনেতেও জানবে।’
‘হোক আগে।’
‘হবে নে। এবার শান্ত হয়ে বোস।’
বিভা রাগ নিয়ে সিটে বসে। পাশে বসে মোহনা। একটু পরে ক্লাস আরম্ভ হয়। ক্লাস চলা কালিন আবির কয়েকবার জানালা কাছ দিয়ে হেঁটে গিয়েছে। বিভা এতে কোনো ভ্রূক্ষেপ করে না। তবে রাগ মনে মনে রাখে। চারটি ক্লাস শেষ হবার পর টিফিন পিরিয়ডে তারা ক্যান্টিনে যায়। এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার সময় সেখানে আবির বন্ধুদের নিয়ে উদয় হয়। বিভা তড়িঘড়ি করে খেয়ে, পানি পান করে এক প্রকার পালিয়ে আসে ক্যান্টিন থেকে। আবির বিভার কর্মকাণ্ড দেখে মৃদু বাঁকা হাসে।
.
.
রাতে আফিন, আবির ও তাদের আম্মুকে সঙ্গে নিয়ে ববিদের বাড়িতে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য আসে। ববি বাড়িতেই ছিল। তাদের সামনেই বিয়ের আলোচনা হয়।
‘ভাবি আফিনের বাবা তো বাহিরে, তাই আমাকেই বিয়ের জন্য কথা বলতে আসতে হলো। আপনার বড়ো মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। আশা করি আপনাদের কোনো আপত্তি নেই বিয়েতে?’
‘আমি কি বলব বলুন। আপনারা বড়োঘরের লোক, আর আফিন যে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য রাজি আছে, এটাই তো অনেক।’ বিনয়ী কন্ঠে বলল বিলকিস বানু।
‘এভাবে বলবেন না ভাবি। বড়ো ছোট বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। ছেলে-মেয়েদের পছন্দটাই মেটার। আমি বিয়ের তারিখ ঠিক করে যেতে চাই।’
‘এত তাড়াতাড়ি।’
‘হ্যাঁ! তবে টেনশন করবেন না। বিয়ের সব খরচ আমাদের। আর ববি তুমি কাল থেকে কাজে যাবে না। আমাদের বাড়ির বড়ো বউ হয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করবে এটা মানায় না।’
ববি কথাটা শুনে মাথা নুইয়ে রাখে। আবির বিভার দিকে তাকিয়ে সকলের অগোচরে চোখ টিপ দেয়। বিভা দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আবির হেসে ফেলে। বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত করে তারা চলে যায়। এ মাসের ছাব্বিশ তারিখে বিয়ের সময় ঠিক করা হয়। সকলে আনন্দিত ছিল এই বিয়ে নিয়ে। কিন্তু বিভা একটু চিন্তিত ছিল। আর তার চিন্তার কারণ আবির। এবার হয়তো তাকে জ্বালাতন করতে পারবে আরো টাইট ভাবে। ভেবে চোখমুখ ঘুচে আসে তার।
___
কলেজে আসার পর মোহনাকে বিয়ের কথা জানায়। মোহনা খুশি হয় এবং টেনে টেনে আবিরকে জড়িয়ে ওঁকে নিয়ে মজা করতে আরম্ভ করে। যেটা বিভা মোটেও পছন্দ করছে না। কয়েকটা কিল-ঘুষি দেয়। তাতে কাজ হয় না। মোহনা থামে না। এক পর্যায়ে মারামারি করতে থাকে। স্যার আসার পর তাদের মারামারির ইতি ঘটে।

ছুটির পর সামিম বিভাকে একা ডাকে মাঠে ডাকে। প্রথমে ভেবেছিল আবির ডাকছে। কিন্তু পরক্ষণে আবির না ডাকার কথা বলার পর বিভা মোহনাকে রেখে কলেজের মাঠের দিকটায় যায়।
বিভা বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ভাইয়া বলুন।’
‘কথাটা মোহনাকে নিয়ে বলতে চাই।’
‘বলুন।’ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় বিভা।
‘আমি জানি মোহনার ব্রেকআপ হয়েছে। আর সেটা আমার জন্যই। কারণ সাকিব ভালো ছেলে না। অনেক মেয়ের সঙ্গে প্রেম – ভালোবাসা আছে ওর। বলা যায় প্লে বয়। এই জন্য আমি আবিরকে সঙ্গে নিয়ে সাকিবকে মোহনার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছি।’
‘সাকিব ভাইয়া ভালো না সেটা আপনি কি করে জানলেন?’
সামিম কিছুক্ষণ নিরুত্তর থাকে, পরমুহূর্তে বলে,
‘প্রথম থেকে আমার নজর মোহনার ওপর ছিল। একদিন সাকিবের সঙ্গে মোহনাকে রমনাপার্কে দেখি। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি ওরা এক মাস হলো রিলেশনশীপে আছে।
আমি মোহনার ওপর থেকে মুভ অন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মারুফ জানাল সাকিব ছেলেটি ভালো না। মারুফের প্রতিবেশী ছিল। তাই ওর চেয়ে ভালো আর কেই বা জানবে। ওর কথা বিশ্বাস না করে ক’দিন নজর রাখি সাকিবের ওপর। তারপরই আমি ওর বিষয়ে জানতে পারি। এখানে আমার কোনো ভুল আছে বলো বিভা?’
‘ভুল নেই মানলাম। কিন্তু এতে মোহনা কতটা কষ্ট পেয়েছে জানেন? ওর প্রথম ভালোবাসা ছিল সাকিব ভাইয়া।’
‘জানি। আমি ওঁকে মাঝেমধ্যে বিষণ্ণ মনে বসে থাকতে দেখি।’
‘আপনি কি মোহনাকে পছন্দ করেন?’
‘ভালোবাসি। আমাদের সম্পর্ক তৈরি করার জন্য তোমার সাহায্য চাই বিভা।’ সরাসরি বলে ফেলে সামিম।
বিভা কিছুক্ষণ নিরুত্তর থেকে বলে,
‘কবর। এতে যদি মোহনা হ্যাপি থাকে, তাহলে আমি সাহায্য করতে রাজি আছি।’
সামিম সন্তোষ হয়ে বিভাকে ‘ধন্যবাদ’ জানায়।
দূর থেকে আবির সামিম ও বিভাকে এক সঙ্গে লক্ষ্য করে। বিভাকে হাসিমুখে কথা বলতে দেখে কিঞ্চিৎ রাগ এসে ভর করে মনে। আবির ছুঁটে আসে তাদের নিকট।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here