বাঁধিব হৃদয়ে তোমায় পর্ব-৯

0
1106

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_০৯
#সুমাইয়া মনি

হাতে ফোনের বাক্সটি নিয়ে আবির স্থির হয়ে বসে আছে। একটু আগে বিভা ফোনটি আবিরকে ফেরৎ দিয়ে গেছে, যেটা কাল রাতে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে এসেছিল। তার রাগ হচ্ছে না, বরং মন বিষণ্ণতায় ভুগছে। বিভাকে হারানোর ভয় যেন ক্রমশে গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে। আচ্ছা সব মেয়েরাই কি এমন হয়? নাকি কিছু মেয়েরাই ভালোবাসা নামক বস্তুটির ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না তার ভালোবাসা। সব কিছু তার কাছে নাটক, বানোয়াট মনে হচ্ছে। কি করে যে বোঝাবে তাকে? ভেবেই আবির দীর্ঘশ্বাস টেনে নেয়। ভেবেছিল হয়তো বিভা ফোনটা নিবে। না নেওয়ার ফলে মনঃক্ষুণ্ন করে বাইকে চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটে।
বিভা আড়াল থেকে আবিরের যাওয়ার দৃশ্য দেখছে। ওর ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল মোহনা। চোখমুখ কুঁচকে বলল,
‘খুশি হলি তো?’
‘খুশি হবার কি আছে শুনি।’ মোহনার দিকে ফিরে প্রশ্ন করল বিভা।
‘এই যে আবির ভাইয়া চলে গেল।’
‘এতে খুশির তো কিছু দেখছি না।’
‘ভাইয়া কাল বৃষ্টিতে ভিজে তোকে ফোন দিয়ে আসল। আর তুই সেটা ফেরত দিলি। এতে সে কতটা কষ্ট পেয়েছে জানিস?’
‘নাহ!’ সাফসাফ বলে উঠে।
‘তুই আসলেই একটা লবন ছাড়া মেয়ে। ভালোবেসে যদি একটা ধোঁকা খেতি, তাহলে বুঝতি ভালোবাসার মর্ম, ঠিক আমার মতো।’
‘এই জন্যই তো ফাউল চিজ থেকে নিজেকে দূরে রাখছি।’
বিভা মেকি রাগ নিয়ে বলল,
‘বাসায় গিয়ে ভাতের সঙ্গে বেশি করে একটু লবন খাবি। এতে যদি বুদ্ধি একটু বৃদ্ধি পায়।’
‘লবনের সঙ্গে বুদ্ধির কি সংযোগ?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বিভা।
‘জানি না।’ বলে মোহনা প্রস্থান করল।
বিভা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
.
.
সোফায় আধশোয়া অবস্থায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আবির। স্লো ভলিউমে গান ছেড়ে পাশে ফোন রাখা। আইরিন বেগম ছেলেকে পর্যবেক্ষণ করছে। আনলিমিটেড দুষ্টু ছেলেটি প্রেমে পড়ে এতটা চেঞ্জ হয়ে যাবে কখনো ভাবেনি। মাথার পাশে বসে চুলে হাত বুলাতেই আবির মাথা তুলে তাকায়। আম্মুকে দেখে চোখ জোড়া বন্ধ করে বলল,
‘একটু বিলি কেটে দেও আম্মু।’
ছেলের আবদার ফেলতে পারেননা তিনি। মাথায় হাত চালিয়ে বলে,
‘বিভাকে সত্যি কী ভালোবাসিস?’
‘হুম, আম্মু। আমি ওঁকে বিয়ে করতে চাই।’ সরাসরি বলে দেয় আবির।
‘এত বড়ো হয়ে গেছিস যে মায়ের কাছে বিয়ের কথা বলতেও মুখে আঁটকায় না।’
‘একদিন তো বিয়ে করতেই হবে। আগেভাগে বললে কি এমন সমস্যা আম্মু।’
‘তোর ভাইয়া-ই তো এখনো বিয়ে করল না।’
‘ভাইয়াকে বিয়ে দেও। তারপর আমি বিয়ে করব।’
‘আফিন যে বিয়ে করতে চাইছে না। অনেক মেয়েই দেখানো হয়েছে। সব রিজেক্ট করল।’
‘এ বছরে ভাইয়াকে বিয়ে দিতেই হবে। আর বিয়ের দায়িত্ব আমি নিবো।’
‘দায়িত্ব নেওয়ার পিছনেও তোর কারণ আছে জানি।’
‘বুঝতে পেরেছো। আচ্ছা আম্মু বিভাকে তোমার কেমন লাগে? সত্যি করে বলবে।’
‘ভালো। সহজসরল মেয়ে। এ যুগের মেয়েদের মতো স্টাইলিশ নয়। তাই বেশিই ভালো লাগে।’
‘সত্যি আম্মু আমারও এই জন্য ওঁকে এত ভালো লাগে। মানে সব মেয়েদের চেয়ে আলাদা বলা যায়। তবে সহজসরল নয়। জিদ্দি একটা মেয়ে।’
আইরিন বেগম চুপ থেকে ফের বললেন,
‘আমি ভাবছি তোর বাবার কথা।’
‘তাকে আমেরিকায় থাকতে দেও। আমাদের সময় দেওয়ার সুযোগ তার নেই।’ কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে বলল।
‘এভাবে বলিস কেন? তিনি যা করছে, তোদের দু’জনের জন্যই তো করছে।’
‘আর কত? যা করেছে কম নয়।’
ছেলের রাগ দেখে আইরিন বেগম মৃদু হাসে। বাবার প্রতি তার ছোট থেকেই অভিমান, অভিযোগ জমে আছে। আফিন হবার পর আলি আহমেদ ওঁকে সময় দিতে পারলেও, আবির হবার পর তার ব্যস্ত সময় শুরু হয়। ব্যবসার কাজে বেশিভাগ সময়ই তাকে আমেরিকায় থাকতে হয়। তিনি নাক টেনে দিয়ে বলল,
‘আগামী মাসেই সে আসছে। যতো অভিযোগ তাকেই বলিস।’
‘লাগবে না।’ বলেই আবির কাত হয়ে শুয়। আইরিন বেগম ছেলের মাথায় এখনো হাত বুলাচ্ছে।
______
সত্যিটা আজ ববি জানবেই। কেন হঠাৎ করে মেয়েরা এভাবে অসুস্থ হচ্ছে। এর পিছনের কারণ কী হতে পারে? ফ্যাক্টরিতে কোনো সমস্যা রয়েছে নাকি এমনেতেই এমনটা হচ্ছে। ববি কালকের মেয়েটিকে দেখতে আসে। জানতে পারে তার হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তাই অপারেশন করতে হবে। পাশে আরো একটি মেয়ে ভর্তি ছিল। সেই মেয়েটির নাকি জরায়ুতে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। অপারেশন তাকেও করতে হবে।
ববি বুঝতে পারে না কোন স্থান থেকে শুরু করবে। জরায়ুতে, হার্টে যদি সমস্যা হয় তাহলে মেয়েরা হঠাৎ করে জ্ঞান কেন হারাবে। বুকে ব্যথা, নয়তো পেটে ব্যথার মাধ্যমে ধরা পড়ার কথা। এখানে সেন্সলেস হবার পিছনের মূল কারণ সে দেখতে পাচ্ছে না। আর লক্ষ্য করে দেখলো, অপারেশন হচ্ছে অসুস্থ হবার ঠিক একদিন পর রাতে। এই জন্য সন্দেহর বীজ যেন আরো বেড়ে তীব্র হতে থাকে মনে। দু’জন মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে না তারা এতটা অসুস্থ। স্বাভাবিক ভাবে খাচ্ছে, কথা বলছে, হাঁটছে। ববির ভাবনার ছেদ ঘটে নার্সের ডাকে। তিনি ববিকে কেবিন থেকে বের হতে বলে। ববি নার্সটির কথা অনুযায়ী কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। পাশেই ডাক্তারের চেম্বার ছিল। আপাতত সেখানে ডাক্তার ছিল না। ববি আশেপাশে লক্ষ্য করে ভেতরে প্রবেশ করে। সে ইংরেজি পড়তে জানে না। সামনে হলুদ রঙের ফাইল দেখতে পেয়ে তার মধ্যে থেকে তিনটি কাগজ চুরি করে ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে৷ তারপর স্বাভাবিক হয়ে করিডর থেকে হেঁটে বাহিরে বেরিয়ে আসে। পাশের একটি ফার্মেসীতে সে প্রবেশ করে। সেখানে একজন অর্ধবয়স্ক লোক বসেছিল। দোকানে তেমন একজন কাস্টোমার ছিল না।
ববি স্বস্থি পেয়ে ব্যাগ থেকে তিনটি কাগজ বের করে লোকটির সামনে দেয়। বলে,
‘কাকা এই কাগজে যা লিখা আছে সেগুলো আমাকে একটু বলবেন। আসলে আমি তো পড়তে জানি না।’
লোকটি কাগজ তিনটি হাতে নিয়ে নজর বুলায়। পরমুহূর্তেই ববির দিকে চশমার ওপর থেকে তাকায়। ববি উৎসুক দৃষ্টিতে লোকটির আদলে চেয়ে রয়েছে উত্তরের আশায়। লোকটি নজর ঘুরিয়ে বলল,
‘এখানে কিছু মেডিসিনের নাম লিখা আছে। যেমন, জ্বর, ঠান্ডা, পায়ে- মাথা ব্যাথার পেইন কিলার আরো অনেক কিছু। তোমার কি এসব ঔষধ লাগবে?’
‘নাহ! আমি শুধু আপনাকে দেখাতে এসেছি কাগজ গুলো। পরে বোনকে দিয়ে ঔষধ গুলো নিবো।’
‘ওহ!’
‘আচ্ছা আমি আসি।’
লোকটি কিছু বলে না। বিভা কাগজ নিয়ে হাঁটতে লাগলো।
মনে তার প্রশ্ন এখনো উঁকি দিচ্ছে। আপাতত কাগজ গুলো ব্যাগে ভরে রাখে। মাথায় এক রাশ প্রশ্ন নিয়ে বাড়ির পড়ে হাঁটছে। অনেকটা পথ পাড়ি দিতেই হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার এসে সামনে থামে। ববি কিছুটা ভয় পায়। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে আফিন। ববির দিকে মৃদু হেসে এগিয়ে এসে বলল,
‘আজ আমি ইচ্ছে করেই সামনে চলে এসেছি।’
‘কেন?’
‘না আসলে হয়তো আমি আপনার ভীত ফেইস দেখতে পারতাম না।’ ভ্রু উচু করে বলল।
ববি মুচকি হাসে। আফিন নিজেও হেসে আবার বলে,
‘চলুন আমার সঙ্গে।’
‘আজ আমি আপনার সঙ্গে যাচ্ছি না।’
‘আপনাকে না নিয়ে আমিও যাচ্ছি না হুম।’
‘কেন?’
‘একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।’
‘এখানে বলুন?’
‘আপনার কি আমাকে দেখে পাগল বলে মনে হচ্ছে?’
‘মোটেও না।’
‘রাস্তার মাঝে কেউ কথা বলে না। গাড়িতে উঠুন।’
‘না….’
‘প্লিজ।’ অনুরোধ করে বলল আফিন।
ববি দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়৷ আশেপাশের লোকজন তাদের দেখছে। ববি সেটা লক্ষ্য করে গাড়ির কাছে এগিয়ে আছে। আফিন খুশি হয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দু’জনে উঠে বসে।
গাড়ি চলতে আরম্ভ করে। গাড়ির মধ্যে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না। ববি একবার জিজ্ঞেস করে ছিল ‘কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা’। আফিন বিনিময় মিষ্টি করে হাসি প্রদান করে।
ববির বাড়ির সামনের গলিতে এসে গাড়ি থামে। কারণ ববি এখানেই গাড়ি থামাতে বলেছে। এতক্ষণ ওয়েট করে ছিল আফিনের ইম্পর্ট্যান্ট কথা শোনার জন্য। আফিন যখন বলেনি তাই সময় বিলম্ব না করে দরজা খুলে বেরোতে নিলে আফিন ডান হাত ধরে আটকায়। ববি বিস্মিত চোখে ঘুরে তাকায়।
আফিন ববির চোখের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলল,
‘আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। হবেন কী আমার অর্ধাঙ্গিনী?’
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। ব্যস্ত আছি। তাই পর্ব ছোট হচ্ছে। দুঃখিত!

Sumaiya Moni

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here