বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-৩০

0
2399

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Magic part – 30
___________________________________

অনিক আর নীল রেডি হয়ে বসে আছে।
কেউ একজন ফোন দিলেই তারা বের হবে।
নীল বার বার টাইম দেখছে ,,, নীল কে দেখে খানিকটা চিন্তিত মনে হচ্ছে।
পরিস্থিতি কি হবে কে জানে ,,,,,,, নীলের মাথাতে হাজারো চিন্তা।
অনিক নীল কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
অনিক নীলের এই অতিরিক্ত চিন্তা টা নিতে পারছে না।
নীল বরাবর ই খুব বেশি শক্ত মনের ,,,, বড় বড় কনফারেন্স মিটিং কিংবা ডিল এ যেখানে অনিকের হাত পা অব্দি কাঁপা শুরু করে সেখানে নীল সব থেকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
যা দেখে অনিক বরাবর ই অবাক হয়ে এসেছে।
কিন্তু পরি কে নিয়ে নীলের অতিরিক্ত চিন্তা টা সবাই কে আকৃষ্ট করে তুলছে।
নীল যেভাবে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করে দিচ্ছে এতে নীলের ওপর কেউ আক্রমণ করতে চাইলে সহজেই করতে পারবে।
তাই নীলের শান্ত দৃষ্টি কে ছাপিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় টেনশনে পড়ে যাওয়া নীল কে অনিক ঠিকঠাক হজম করতে পারছে না।
অনিকের ইচ্ছে হলো নীল কে খান পাঁচেক চর বসিয়ে দিতে।
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো নাহ নাহ ভালোবাসার এক বিরাট অনুভূতি রয়েছে।
না চাইতে ও নীল পরির বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে ফেলছে। এতে নীলের দোষ নেই ,,,,,,,
অবশ্য আজ থেকে মাস দু এক আগে হলে অনিক নীল কে চর লাগানোর বিষয়টা তেই থেমে থাকতো।
কিন্তু আজকাল তার মনে ও যে অন্যরকম অনুভূতি জেকে বসেছে।
অনিক এসব ভাবতে ভাবতেই নীলের ফোন টা বেজে উঠলো।
নীল তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিপ করে কথা বলে নিলো।
হাতের ওয়াচ টা থেকে সময় দেখে নিয়ে অনিক কে বলল
– অনিক ফাস্ট টাইম নেই।

অনিক সোফা থেকে উঠে
দাড়ালো।
তারপর নীলের বাহু ঝাঁকিয়ে বলল
– নীল নিজেকে শান্ত রাখ।
না হলে কিন্তু পরে পস্তাতে হবে।

নীল দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল
– ইয়াহ আম ওকে।

তারপর ই নীল আর অনিক বাসার সবাই কে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।

পরি নীলের যাওয়ার দিকে দীর্ঘ সময় নিয়ে চেয়ে রইলো।
নীল চক্ষু দৃষ্টি র আড়াল না হওয়া অব্দি পরি এক ধ্যানে চেয়ে রইলো।
কয়েক দিনের ব্যাবধানে নীল কে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছে পরি।
যদি উল্টো পাল্টা কিছু হয় তাহলে পরি কি করে থাকবে ?
নীলের থেকে নিজেকে আড়াল করার শক্তি পরির নেই।
নীল চলে যেতেই পরি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে রুমে চলে এলো।বড্ড কষ্ট হচ্ছে ,,,, কেন জানি একটু বেশি ই ভয় করছে।
বার বার নীলের কথা মনে পড়ছে আর নীল কে হাড়িয়ে ফেলার এক তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে।

_______________________

নীল আর অনিক গাড়িতে বসে আছে।
আজ নীল বা অনিক কেউ ই ড্রাইভ করছে না।
কারন ড্রাইভ করার পর শরীর খানিকটা ক্লান্ত হয়ে যায় । আর তাছাড়া আজকের মিশনে শরীর ক্লান্ত হওয়া মানেই এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়া যে করেই হোক শান্ত আর সুলতানা বেগমের সমস্ত চালাকির প্রুফ নিতেই হবে।
অনিক লেপটপ বের করে কাজ করতে লাগলো।
নীল একের পর একেক জনের সাথে ফোনে কথা বলছে।
নীল আর অনিক বিশাল বড় একটা হোটেল এর কাছে পৌছালো।
এই হোটেল সাধারনত ভদ্রলোক দের জন্য তৈরি কিন্তু এখানে ভদ্র লোকের থেকে অভদ্র লোকের চলাচল বেশি।
অনিক আর নীল চেঞ্জিং রুম এ গিয়ে নিজেদের পোশাক আষাক সহ লুক টাই চেন্সজ করে নিলো।
মোটামুটি ভাবে যারা নীল আর অনিক কে চিনে তারা ওদের দুজনের ছদ্মবেশ ধরতে পারবে না।

নীল আর অনিক হোটেল এ ঢুকে পড়লো।
কাউন্টারে গিয়ে কথা বলে একটা রুম বুক করে নিলো।
আজ রাতে শান্ত এই হোটেলে মেয়ে নিয়ে ঢুকবে।
যার ভিডিও নিতে পারলেই জোড়ালো একটা প্রুভ পাওয়া যাবে।
নীল দুটো সার্ভেন্ট কে টাকা দিয়ে হাত করে নিলো।
সার্ভেন্ট গুলো নীল আর অনিক কে শান্তের বুকিং করা রুমে পাঠিয়ে দিলো।
অনিক আর নীল দ্রুত গতিতে সিক্রেট ক্যামেরা আর ভয়েস রেকর্ডার লাগিয়ে দিলো।
নীল আর অনিক বের হয়ে আসতেই শান্ত কে দেখতে পেল নীল।
অনিক পালাতে গেলেই নীল ধরে ফেলে।
অনিক ভ্রু কুচকাতেই নীল বলল
– আরে ও আমাদের চিনবে না ।
বরং এভাবে ভয় পেলেই ধরা খাবো।
নীলের কথা বুঝতে পেরে অনিক মৃদু হেসে বলল
– আব্বে তোর গ্রেট মাথার বুদ্ধি চলে এসেছে।

অনিকের কথাতে নীল না হেসে পারলো না।
অনিক বলল
– কিছু খাওয়া প্রয়োজন ,,, ঐ গুলো তো সব ঠিক ঠাক লাগিয়ে দিয়েছি বাকি টা দেখা যাক কি হয়।
আগে চল ডিনার করে ফেলি ,,, টাইম কম।
নীল আর অনিক ডিনার করতে চলে আসলো।

তড়িঘড়ি করে ডিনার শেষ করেই দুজন রুমে চলে আসলো।
রুমে আসতে ভিডিও ফুটেজ অন করতেই দেখলো শান্ত একটা মেয়েকে নিয়ে রুমে ঢুকলো।ব্যাস এই টুকু রেখে বাকি সব ডিলিট করে দিলো। আর টাইম সহ বের হওয়ার ফুটেজ টুকু ও রাখলো।
নীল আর অনিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কারন শান্ত কিছু ধরতে পারে নি।
রাত একটার দিকে শান্ত হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লো। নীল আর অনিক শান্তের পিছু নিলো ,,,, নীল জানে এখন শান্ত কোথায় যাচ্ছে।
নীল বাঁকা হাসলো ,,,, কারন সেখানে ও সব ব্যবস্থা করে রেখেছে ।
শান্ত ঢাকাতে নিজেদের ফ্লাট এ চলে আসলো।
নীল আর অনিক বাসার নিচেই থাকলো।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই একটা চল্লিশ বছর বয়সী ব্যাক্তি দৌড়ে আসলো।

নীলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
নীল লোকটাকে একটা টাকার বান্ডিল দিতেই লোকটা একটা পেন্ডড্রাইভ বের করে দিলো।
নীল ফুটেজ চেইক করে দেখে নিলো সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কি নাহহ।
নীলের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো ।
এইবার কাজ হলো
নেক্সট গেইম কান্টিনিও করা।
রাত তিনটে বেজে গেছে ,,,,, কালকে সকাল সাতটাতে নীলদের ফ্লাইট আছে।
তাই নীল আর অনিক একটা ফ্রেন্ড এর বাসাতে চলে গেল।
দুই ঘন্টা না ঘুমালে কালকের ধকল নিতে পারবে না।
ফ্রেন্ড এর বাসায় এসে একবার কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো ।
মনে হচ্ছে নীলদের জন্য ই অপেক্ষা করছিলো।
নীল আর অনিক সবুজ এর সাথে গলা মিলিয়ে নিলো ।
সবুজ নীলেল খুব ভাল বন্ধু ,,,, ভারসিটি লাইফ থেকে কয়েকটা বছর বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিলো ওদের।
সবুজ একটা কম্পানির সুপার ভাইজার হিসেবে কাজ করতো।
বর্তমানে আইন এজেন্সির বড় একজন কর্মকর্তা।
আট মাস ধরে চাকরিতে জয়েন হয়েছে সাথে নিজের ছোট খাটো একটা বিজনেস ও আছে।
নীল আর অনিক বেডে গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে ওদের জড়িয়ে নিলো।
_______________________

ছয়টা বাজতেই বেড বরাবর বিশাল মাপের ঘড়ি টা ঢং ঢং করে বাজতে শুরু করলো।
ঘড়ির আওয়াজে নীল , অনিক আর সবুজ উঠে বসলো।
6″30 টে এয়ারপোর্ট এ যেতে হবে।
তাই তিনজনে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো।
নাস্তা করার মতো টাইম নেই ফ্লাইট এই নাস্তা করে নিবে।
এয়ারপোর্টে আসতেই দুজন কালো ড্রেস পড়া লোক এগিয়ে আসলো।

নীল ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
– সব কিছু ঠিক ঠাক তো ?

লোকটি সম্মতি জানালো,,,, নীল ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে এয়ারপোর্ট এ ঢুকে পড়লো।
নীলদের হাতে সময় কম তাই সমস্ত কিছু কালো ড্রেসের লোক দুটো ই করে দিলো।
নীল সহ সবাই ফ্লাইটে উঠে নাস্তা করে নিলো।
বিশ মিনিটের মাথায় চট্টগ্রাম পৌছে গেল।
চট্টগ্রামের এক রিসোর্ট এ সবাই উঠলো।
আজ কে রাতে শান্ত বিশাল এক ড্রাগ ডিলারদের সাথে মিটিং করবে।
আজ যেভাবেই হোক ওদের পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে হবে।
কড়া সিকিউরিটি দেওয়া পাব টাতে ,,,,,
নানান ভাবে কাজে লেগে পড়লো ওড়া।
একটু হেরফের হলে জীবনের জন্য আশংকা হয়ে পড়বে।
লেপটপ ফোন কল ,,,, নিয়ে সারাদিন কেটে গেল।
বিকেলের দিকে নীল জানতে পারলো ডিল টা কক্সবাজার এ হবে।
নীলের মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা।
নিশ্চয়ই কোনো ভাবে ওরা জানতে পেরেছে আজকে ওদের ডিল টা কেউ ফলো করছে।
নীল মাথা চেপে ধরে বসে আছে।
কিছুক্ষন পর তড়িঘড়ি করে নীল সহ সবাই বের হয়ে গেল কক্সবাজার।সন্ধ্যার দিকে পৌছে গেল।
কিন্তু এখানকার সিকিউরিটি গার্ড দের তো কেনা হয় নি।
এই নিয়ে আরেক জামেলা ,,,, বুদ্ধি করে ওরা সবাই সার্ভেন্ট সেজে নিলো।
মেইন ডোর দিয়ে ঢোকার সময় দুটো গার্ড বাধা দিলো।
মহা মুশকিলে পড়ে গেলো ওরা ,,,,,, সবুজ চটজলদি উত্তর দিলো
– আরে আমরা ডিলার দের সার্ভেন্ট।

কিন্তু গার্ড দুটো বিশ্বাস করলো না।
সবুজ হাসতে হাসতে পকেট থেকে নকল কার্ড বের করে দেখালো ,,,, গার্ড দুটো ভেতরে ঢোকার পারমিশন দিতেই ওরা তিন জন ভেতরে ঢুকে গেল।

কিন্তু মাজে সমস্যা হলো সবুজ যখন ফোনে কথা বলছিলো তখন তিনটে গার্ড শুনে ফেলল।
গার্ড দুটো বন্ধুক ঠেকাতেই সবুজ হাত উপরে করে দিলো।
একজন গার্ড কাউকে ফোন দিতে লাগলো।
ফোন ধরার আগেই পেছন থেকে নীল এসে আফিম শুকিয়ে দিলো।
মুহুর্তের মধ্যে তিনজন জ্ঞান হারালো।
অনিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল
– আরে ভাই সাবধান ,,,,, এখানে একটা নয় বেশ কয়েকটা ডিলার আসবে।
তাই এতো সিকিউরিটি,,, একবার ভুল হলে সব শেষ।

তিনজন মিলে গার্ড তিনটে কে স্টোর রুমে বেঁধে রেখে দিলো।
গার্ড তিনটের কার্ড নিয়ে নিলো ,,,, যদি কোনো সমস্যা হয় তো এটা দিয়ে বাঁচার চান্স আছে।

একজন হোস্ট এনাউন্স করলো একটু পর ই ডিল হবে।
পাবে গান বাজনা চলতে থাকলো ,,,,,,

একটু পর ই বেশ কয়েকজন ডিলার আসলো।

নীল ,, অনিক আর সবুজ তিন জন মিলে আগে থেকেই ছোট ছোট ক্যামেরা আর ভয়েস রেকর্ডার বিভিন্ন জায়গায় সেট করে দিলো।
ডিল শুরু হয়ে গেছে ,,,
সবুজ আড়ালে গিয়ে ফোর্স দের ইনফর্ম করে দিলো।
মুহুর্তের মাঝেই রেড লাইট এলাম বাজিয়ে দিলো।
সবাই দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করে দিলো।
প্রান্ত ছুটে বাইরে চলে যাচ্ছিলো।
নীল দৌড়ে ধরে ফেলল কিন্তু প্রান্তের হাতে ধারালো নাইফ ছিলো ।
প্রান্ত নাইফ দিয়ে নীলের হাতে আঘাত করে দিলো।
যার কারনে নীল প্রান্ত কে ছেড়ে দিলো ।
প্রান্ত দৌড়ে পালিয়ে গেল কিন্তু বেশি দূর পালাতে পারলো না।
সবুজ গিয়ে প্রান্তের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দিলো।
নীলের হাতে ভালোই আঘাত লেগেছে অনিক নীল কে নিয়ে বের হয়ে আসলো।
সবাই কে পুলিশ ধরতে পেরেছিলো।
সবুজ সহ সবাই কে বিদায় জানিয়ে নীল কে নিয়ে
হসপিটাল গিয়ে ওয়াস করিয়ে আনলো।
তারপর ফ্লাইট ধরে সোজা নীলদের বাসাতে।

আর ভোর বেলা নীল কে দেখেই পরির অবস্থা খারাপ।
_______________________

দুদিন পর ,,,,,,,
বিকাল পাঁচটা বাজে ,,,, নীল রেডি হচ্ছে।
পরি দরজার কাছে হেলান দিয়ে নীল কে দেখছে।
এই অসময়ে লোক টা যাচ্ছে কোথায় ?
তা ও আবার অসুস্থ শরীর নিয়ে।
নীল আয়নাতে পরি কে দেখে মুচকি হাসলো।
চুল গুলো সেট করে পেছন ঘুরে তাকালো।
কিন্তু পরির কোনো ধ্যান নেই পরি নিজের ভাবনাতে মগ্ন।
নীল পরির কাছে গিয়ে বাম হাত দিয়ে তুরি বাজিয়ে বলল
– ম্যাডাম এভাবে দাড়িয়ে কি ভাবছেন ।

পরি খানিকটা চমকে বলল
– আপনার হাতের ব্যাথা তো এখনো আছে।
এই শরীর নিয়ে এতো সেজে গুঁজে কোথায় যাচ্ছেন ?

নীল ব্লেজারের হাতা ঠিক করতে করতে বলল
– শশুর বাড়ি ।

নীলের কথাতে পরির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
পরি ঢোক গিলে বলল
– মানে ?

নীল পরির দুই বাহুতে হাত রেখে বলল
– মানে কিছুই না পরি।
এই দুটো দিন আপনি আমার যে কেয়ার করেছেন তার ফলে আমি পুরো ফিট।
এখন ম্যাডাম আপনি একটু রেস্ট নিন।
আমার আসতে রাত হবে ,,,, এসে যেন না শুনি তুমি রেস্ট নেও নি।

পরি গোমড়া মুখ করে বলল
– আরে তাহ নয় নিবো।
কিন্তু আপনি এখন যাচ্ছেন কোথায়?

নীল বেড থেকে ওয়ালেট টা পকেটে পুরে বলল
– সারপ্রাইজ ম্যাডাম।

পরি সন্দিহান চোখে বলল
– আপনার মতলব টা কি বলুন তো ?

নীল ভ্রু কুঁচকে বলল
– কি ভাবছো তোমার সতীন আনতে যাচ্ছি?

পরির চোখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠলো।
নীল পরি কে শান্ত করার জন্য বলল
– আরে বউ এভাবে রেগে গেলে তো আমি এখনি অক্কা যাবো।

পরি অভিমানি কন্ঠে বলল
– আপনার সাথে কোনো কথা বলব না।

পরি কে অভিমান করতে দেখে নীলের খুব খারাপ লাগলো ।
আজ ই হয়তো নীল পরির শেষ দিন হতে পারে।
পরি কে কষ্ট দিতে চায় না নীল।
নীল নিজের আবেগ যথাসম্ভব লুকিয়ে পরির দিকে এগিয়ে গেল।
পরির দু গালে হাত রেখে বলল
– এই পিচ্ছি এভাবে মন খারাপ করে না।
তুমি তো আমার পৃথিবীর একমাত্র অক্সিজেন।
তুমি কষ্ট পেলে যে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

পরির অভিমান গুলো গলে গিয়ে চোখের কোনে পানি সৃষ্টি করলো।
নীল একটু ধমকের স্বরে বলল
– এই একদম নাহহহ।
চোখের কোনে পানি দেখতে চাই না।
ঠোঁটের কোনে হাসি দেখতে চাই।

নীলের কথাতে মূহুর্তে ই পরির ঠোটের কোনে প্রশস্ত এক হাসি চলে আসলো।
নীল আলতো হাতে পরি কে জড়িয়ে ধরলো।

দরজার কাছে এসে থমকে গেছে দুটো মানুষ।
দুজোড়া চোখ একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।
হঠাৎ করেই দুজন ই বলে উঠলো এই আমরা কিছু দেখি নি।
অনিক আর হাফসার কন্ঠে নীল আর পরি একজন আরেকজন কে ছেড়ে দিলো।
পরি বেশ লজ্জা পেয়েছে তাই পেছন ঘুরে রইলো।
নীল বিরক্তিকর স্বরে বলল
– তোরা আসার আর সময় পাস না ?

হাফসা ভেঙ্চি কেটে বলল
– আমরা কি করে জানবো তোমরা রোম্যান্স এ ব্যস্ত।

নীল কে কিছু বলতে না দিয়েই অনিক বলল
– সেটাই তো ।
আর তাছাড়া দরজা খুলে রেখে রোম্যান্স করলে তো যে কেউ এসে পড়বে।

নীল চোখ ছোট ছোট করে বলল
– এই যে মিস্টার অনিক আর মিস হাফসা।
আপনারা যখন প্রেম করেন আমরা কি তখন দেখতে যাই ?
তো তদের ও উচিত না,,, এভাবে আসা।

নীলের কথাতে পরি ঘুরে তাকালো।

অনিক আর হাফসা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

নীল ডেভিল হাসি দিয়ে বলল
– কি ভাবেন আমি কিছু জানি না ?

অনিক মেকি হাসি দিলো ,,, আর হাফসা বোকা হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
কয়েক সেকেন্ড পর ই হাফসা বলল
– হ্যাঁ আম্মু এখনি আসছি ,,,,,

আর অনিক টাইম দেখে বলল
– আমি তো ভুলেই গেছি আমার মিটিং আছে।

ওদের উদ্ভট কান্ডে নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেল।
দুজন ই অপ্রস্তুত ছিলো তাই ব্যস্ততা দেখিয়ে পালিয়ে গেল।

নীলের হাসি দেখে পরি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।
কি সুন্দর এ হাসি ,,,,,,,

_______________________

সন্ধ্যা ছয় টা বাজে। শীত কাল হওয়াতে সূর্য বেশ কিছুক্ষণ আগেই অস্ত গিয়েছে।
হাফসা ছাঁদের এক পাশে দাড়িয়ে আছে আর অনিক ছাঁদের কোনে রাখা টেবিলের উপর হাত গুঁজে বসে আছে।
সে তার উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা করছে আর হাফসা কি উত্তর দিবে তা ভাবছে।
নীলের রুম থেকে হাফসা ছুটে সোজা ছাঁদে চলে আসে।
তার মাথা কাজ করছে নাহ।
নীল কি বলল ,,,,,,,

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হাফসা।
পরন্তু বিকেল রোদ নেই একদম ই ,,, থেকে থেকে বাতাস বইছে।
কিছুক্ষণ হাফসা দাড়িয়ে থাকলো ,,,,, তারপর পেছন ঘুরতেই দেখতে পেল অনিক দাড়িয়ে আছে।
অনিক কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাফসা অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
হাফসা খানিকটা তুতলিয়ে বলল
– আপনি,,

অনিক মৃদু হেসে বলল
– ভাবলাম একটু ছাঁদে আসি ।
কিন্তু এসে দেখলাম তুমি দাড়িয়ে আছো ,,,,, কিছু একটা ভাবছো তাই আর ডিস্টার্ব করি নি।

হাফসা ছোট করে উত্তর দিলো
– ওহহহ।

হাফসা একটু পাশে তাকাতেই দেখল দেয়ালের সাথে লাগিয়ে রাখা গিটার।
হাফসা মুখ কুচকে বলল
– গিটার,,,,,

অনিক মৃদু হেসে বলল
– হুমমম আমি ই এনেছি।
তুমি দাড়িয়ে আছো দেখে ভাবলাম গিটার টা নিয়ে আসি,, তোমার ভাবনা শেষ হলে না হয় একটা গান শুনিয়ে দিবো।
তুমি তো সেদিন প্রুফ চেয়েছিলে,,,,

হাফসা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
হাফসা এই প্রথম এতোটা লজ্জা পাচ্ছে।

অনিক মুচকি হিসে গিটার নিয়ে আসলো।
গিটার এ টুং টাঙ্ক আওয়াজ করে তারপর সুর তুলল

Oh woooah, oh
Woooooah , oh
Wooooah , oh

You know you love
me, I know you care ,
Just shout whenever
And I’ll be there

You are my love,
You are my heart
And we will never
ever ever be apart

Are we an item?
Girl quit playing,
We’re just friends,
What are you saying

Said there’s another,
Look right in my eyes,
My fast love broke my
heart for the fast time
And I was like

Baby , baby , baby oooh
Like baby , baby, baby noo
Like baby , baby, baby ooh
Thought you’d always be mine , mine

Baby , baby , baby oooh
Like baby , baby, baby noo
Like baby , baby, baby ooh
Thought you’d always be mine , mine

Oh, for you I would have
Done whatever
and I just can’t believe we aint together
and I wanna play it cool but I ‘m losing you

I ‘ll buy you anything, I ‘ll buy you any ring,
And I ‘m in pieces baby fix me and you shake me till’

গান গাওয়া শেষ হতেই অনিক এক বক্স চকলেট এগিয়ে দিয়ে হাফসা কে বলল
– উত্তর টা দিয়ে দিয়ো।
আমি অপেক্ষা করছি ,,, ডোন্ট ওরি টেইক ইউর টাইম।

অনিকের দিকে তাকাতে পারছে না হাফসা।
পড়ন্ত বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে গেলে ও হাফসা উত্তর দিতে পারছে না।
দেখতে দেখতে এশার আযান ও পড়ে গেল।
হাফসা ঘোমটা টেনে দাড়িয়ে রইলো।
আযান শেষ হতেই হাফসা অনিকের কাছে গিয়ে দাড়ালো।
হাফসা মাথা নিচু করে বলল
– আই অলসো লাভ ইউ।

এই কয়েক শব্দ উচ্চারণ করে হাফসা আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না।
চকলেট বক্স হাতে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেল।
হাফসার বলা কথাটা বুঝতে অনিকের কিছুক্ষণ সময় লাগলো।
যখন পুরোপুরি ভাবে মাথায় ঢুকে গেল তখন অনিকের ঠোঁটের কোনের হাসি প্রশস্ত হয়ে গেল।
অনিক মৃদু স্বরে বলতে লাগলো।
ইয়াহহ ইউ আর মাইন,,,,
আই লাভ ইউ হাফসা,,,

_______________________

নীল বসে আছে পরিদের বাসার ড্রয়িং রুমে।
সামনে নাস্তা সাজানো,,, ভদ্রতার খাতিরে এক মগ কফি হাতে নিয়ে বসে আছে নীল।
সামনে বসে আছে পরির নানা নানু আর মিসেস রাহেলা ও আফজাল হোসেন।
নীলের পাশ ঘেঁষে বসে আছে নিশা আর আমান।
সেইদিন ই নীল কে আমান আর নিশার বেশ পছন্দ হয়েছে।
তিক্ততা হলে ও সত্য নীল কে এই বাসার সবাই ই পছন্দ করেছে।
কিন্তু একটা মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে ঐ ভাবে তুলে নেওয়া টা নিশ্চয়ই খুব ভদ্রতা নাহ ।
তাই একটু হলে ও বড় রা ক্ষিপ্ত।যদি ও পরির সাথে অন্যায় ই করছিলেন ওনারা।

নীল কফি কাপে চুমুক দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো
– প্রথমেই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আমি জানি আমি যেটা করেছি সেটা অন্যায়।
কিন্তু আপনারা যেটা করছিলেন সেটা ও খুব বেশি ভালো ছিলো না।

আফজাল হোসেন ঠিকঠাক হয়ে বসে বললেন
– সে তো বুঝলাম কিন্তু তুমি যেটা করেছে সেটা দ্বিগুণ অন্যায়।
আমরা পরির ভালোর জন্য প্রান্তের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলাম।
তাছাড়া আমার আম্মার ইচ্ছে ছিলো আমার মেয়ে হলে যেন প্রান্তের সাথে বিয়ে দেই ।
মৃত মানুষের শেষ ইচ্ছে পূরন না করলে নাকি তার আত্মা শান্তি পায় না।
আমি কোনো ভাবেই আমার আম্মা কে কষ্ট দিতে চাই নি।
তাছাড়া আমার সংসারে ও অকল্যাণ হবে তাই পরির সাথে খানিকটা অন্যায় করে ও ওর ভালো করছিলাম।তাছাড়া প্রান্ত দেখতে শুনতে ও ভালো।
পরি ওর সাথে খুব ভালো থাকতো ।

নীল দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলল
– আমি আমার কাজের জন্য লজ্জিত।
কিন্তু,,,,,,

মিসেস রাহেলা নীল কে থামিয়ে দিয়ে বললেন
– এতো কিছু বুঝি না আমি ,, কিন্তু তুমি কে আর আমার মেয়ে কোথায় ?

নীল হাটু তে দু হাত গুঁজে মৃদু হেসে বলল
– আমি নীল ,,, আমার পুরো নাম রাফসান আহমেদ নীল।
আমি হাফসার বড় আর একমাত্র ভাই।

হাফসা নাম টা শুনতেই সবাই জড়সড় হয়ে বসলো।
মিসেস রাহেলা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন
– হাফসা বলতে ,,,, পরির বান্ধবী হাফসা?

নীল প্রশস্ত একটা হাসি দিয়ে বলল
– হ্যাঁ।

আফজাল হোসেন চোখ মুখ কুঁচকে বললেন

– মিনাল এর মামাতো শ্যালক তুমি?

নীল মাথা ঝাঁকালো।
আফজাল হোসেন চোখ মুখ কুঁচকে বললেন
– তোমার সাথে যদি পরির সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে পরি আমাদের বলে নি কেন ?

আফজাল হোসেনের কথাতে নীলের মুখে কালো মেঘের আঁধার নেমে এলো।
নীল মাথা নিচু করে বসে রইলো।

নীলের উত্তর না পেয়ে কিছুক্ষণ পর ই মিসেস রাহেলা রক্তিম কন্ঠে বললেন
– কি হলো বলছো না কেন?

নীল মাথা উঁচু করে মলিন হাসলো।
তারপর হাতের মুষ্টি শক্ত করে বলল
– আমার জন্য,,, আমি দোষী ছিলাম।
তার জন্য পরি কে এততটা,,,,

নীল আর বলতে পারছিলো না।
নীলের গলা ধরে আসছিলো,,,,,
নীল শুকনো ঢোক গিলে বলল
– এক গ্লাস পানি হবে পিল্জ,,,

নিশা উঠে গিয়ে পানি এনে দিলো।
নীল এক চুমুকে ঢক ঢক করে পানি গিলে নিলো।
সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে ,,, শুধুমাত্র নীলের কথা শোনার জন্য।
এই মূহুর্তে সবাই কে নীলের কাছে পৃথিবীর শেষ্ঠ মনোযোগী শ্রোতা মনে হচ্ছে।

নীল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল

আজ থেকে সাত বছর আগে পরিকে দেখেছিলাম আমার বন্ধুর বোনের বিয়েতে।
তখন পরি 6 এ পড়ে।
বাচ্চা একটা মেয়ে দেখতে গুলুমুলু দেখেই ইচ্ছে হচ্ছিলো একটু আদর করে দিতে তাই কিছু মূহুর্ত পরির দিকে চেয়ে ছিলাম।
কিন্তু বাসায় গিয়ে ও সেই মুখ টা বার বার মনে পড়ছিলো।
আমার আঠারো বছরের জীবনে কারো জন্য ঐরকম অনুভূতি হয় নি।
কিন্তু আমি সেই সময় সেটা কে পাত্তা দেই নি।
তারপর চলে যায় একটি বছর ,,, স্কুলে গিয়েছিলাম তখনি আবার পরির দেখা পাই।
এক মূহুর্তের জন্য চোখ আটকে গিয়েছিলো।
নিজেকে সামলে বাসায় চলে আসলে ও পরি কে ভুলতে পারি নি আমি।
সারা রাত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে মেনে নেই আমি পিচ্ছি মেয়েটাকে ভালোবাসি।
পরদিন ই ছুটে আসি স্কুলের কাছে এক মুহূর্ত পরি কে দেখার জন্য ।
এ ভাবেই আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে পরি কে দেখে চলে যেতাম।
বেশ ভালোই ছিলাম,,, যদি ও মনের অনুভূতি গুলো দিন দিন বাড়ছিলো আর পরি কে পাওয়ার নেশা টা ও বাড়ছিলো।
কেটে যায় আর ও একটি বছর তারপর পরি হঠাৎ একদিন আমায় ম্যাসেজ দেয়।
প্রথম দিকে বুঝতে না পারলে ও পরবর্তী তে বুঝে যাই এটা পরি।
কিন্তু আমি সেটা পরি কে বুঝতে দেই নি,,,,
পরি প্রথম থেকে আমায় ঘৃনা করতো কিন্তু আমাকে জানতে গিয়ে ওর পিচ্ছি মনটা আমাতে আবদ্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু পরি নিজের অনুভূতি কখনোই আমাকে বলে নি শুধুমাত্র নিজের পরিবারের কথা ভেবে ।
আর আমি বলি নি ,,,, পরি বাচ্চা মেয়ে বলে।
কিন্তু বুঝি নি আমার জন্য ই পরির জীবনে এতো বড় ক্ষতি হবে সেটা হলো জি এস সি রেজাল্ট।
শুধুমাত্র আমাকে নিয়ে ভাবতে গিয়েই ওর রেজাল্ট টা বাজে হয়ে যায়।
আমি নিজের ইচ্ছে কে বুকে চাঁপা দিয়ে পরি কে ইগনোর করতে থাকি।
পরির প্রতি টা পোস্ট,, বুঝিয়ে দিতো আমাকে কতোটা মিস করতো ওও।
কতোটা কষ্ট পেতো ওও কিন্তু ওর স্বপ্ন কে আমি ভাঙতে চাই নি।
বার বার ইগনোর করা সত্তে ও মেয়েটা এক ই ভাবে পড়ে থাকতো।
যখন নিজেই সহ্য করতে পারতাম না তখন পরি কে রিপলে দিতাম।
আমি নিজেই কতোটা কষ্ট পেতাম সেখানে পরি তো বাচ্চা মেয়ে ছিলো।
তবু ও নিজের ভালোবাসা কে তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছি।
আমি মানতাম কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে হয়।
তাই আমি আমার যুবক বয়সের অনুভূতির কিছুটা সেক্রিফাইজ করেছি।
লাস্ট কয়েক বছর পরির সাথে একদম ই যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।
চলে যাই লন্ডনে,,,
কিন্তু বুঝে উঠতে পারি নি আমার একটু ভুলের জন্যে পরি কে এতো বেশি কষ্ট পেতে হবে।
সেই দিন পরি কে ঐ ভাবে বিয়ে করা ছাড়া আমার উপায় ছিলো না।
আমি পরি কে বদনাম হতে দিতে পারি না।
আর আমি জানতাম পরি আমাকে কতোটা ভালোবাসে তাই অনুমতির প্রয়োজন মনে করি নি।
সেই সকল কিছুর জন্য আমি লজ্জিত।
আমার সামান্য ভুল পরি কে জীবনের ভয়ঙ্কর এক পরিনতির সম্মুখীন করেছিলো।
আমি ওকে ভালোবাসি,,,,,

বড় দের সামনে বিষয় টা বলা লজ্জা জনক হলে ও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি
আমি পরির সাথে এক ঘরে থাকি না।আমাদের মাঝে ঐ রকম সম্পর্ক গড়ে উঠে নি।
পরিবার কে ছাড়া পরি সুখি নয়।
সব কিছু পেয়ে ও পরি অসম্পূর্ণ।
আপনাদের সবাই কে প্রয়োজন ,,,,,,,

নীলের প্রতি টা কথা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।।তাদের কারো মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে না এরা কতোটা মর্মাহত এতে।
নীল মনে মনে সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি হতে লাগলো।

আফজাল হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
– সব ই ঠিক আছে ,,, কিন্তু তুমি উচিত করো নি ঐ ভাবে বিয়ে করে।
আমাদের সম্মান এর কথা ভাবা উচিত ছিলো।

নীল মলিন হেসে বলল
– আমি লজ্জিত।
কিন্তু ঐ মূহুর্তে আমার কাছে কোনো অপশন ছিলো না।
আমি আপনাদের সাথে মিসবিহেব করেছি তার জন্য আমি শাস্তি নিতে ও প্রস্তুত।
তখন যদি পরি কে ছেড়ে দিতাম তাহলে আজ আপনারা দ্বিগুণ আগুনে দগ্ধ হতেন।

নীলের কথার মানে কেউ বুঝতে পারলো না।
মিসেস রাহেলা মৃদু কন্ঠে বলল
– মানে?

নীল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমান কে উদ্দেশ্যে করে বলল
– আমান লেপটপ নিয়ে আসো।

আমান মাথা ঝাকিয়ে লেপটপ আনতে চলে গেল।
সবাই নীলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।
আফজাল হোসেন সময় টাকে কাজে লাগিয়ে নীল কে দেখে নিলো।
5’10 ইঞ্চি লম্বা,, উজ্জল শ্যামলা গায়ের রং,,, ভ্রু যুগল বেশ সুন্দর।
চেহারাতে আলাদা স্নিগ্ধতা দেখা যাচ্ছে,,,, নিঃসন্দহে উজ্জল ফর্সা কোনো ছেলে কে ও সৌন্দর্যে হাড়াতে সক্ষম হবে।
নীলের মায়াবি চোখ গুলোর দিকে তাকাতেই আফজাল হোসেনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।

আমান লেপটপ আনতেই মুচকি হেসে নীল লেপটব নিয়ে বসলো ।
লেপটপে পেন্ডড্রাইভ ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ সেট করলো।
কিছু মূহুর্তে মাঝেই ভেসে আসলো প্রান্তের ড্রাগ ডিলিং , তারপর হোটেলে মেয়ে নিয়ে যাওয়া।
কেউ ই যেন এই বিষয় গুলো মাথায় নিতে পারছে না।
আফজাল হোসেন সহ সবাই স্থির হয়ে আছেন।

নীল মৃদু হেসে বলল
– প্লিজ কেউ ভেঙে পড়বেন না।
আরো ও অনেক কিছু আছে,,,

সবাই আবার লেপটপে মনোযোগ দিলো।

প্রান্ত বাবা একটু বোঝার চেষ্টা কর ,,,
এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায় নি।
দীর্ঘদিন ধরে সাজানো প্ল্যান আমার ঐ নীল এতো সহজে ভেঙে দিতে পারবে না।
সুলতানা বেগম প্রান্তের পিছু পিছু ঘুরে ঘুরে বলছে এসব।

প্রান্ত রাগি কন্ঠে বলল
– কি প্ল্যান করেছো তুমি।
নানুর নামে মিথ্যে বলে ও তো কিছুই হলো না।
বিয়ে তো ঐ নীল ই করে নিলো।

সুলতানা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন
– দেখ মা কোনো কালেই তদের বিয়ের কথা বলে যায় নি।
কিন্তু আমি তা আফজাল কে ভুলিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি।

এতো বড় একটা মিথ্যে বলতে পেরেছি আর এখন কেন পারবো না।

প্রান্ত বিরক্তি নিয়ে বলল
– এতো সব বুঝি না আমার প্রপার্টি চাই।
সাথে পরি কে ও,,,, এখন লাগবে।
ওর অবস্থা বেহাল করে দিবো।
মামার সমস্ত কিছু আমার চাই।

সুলতানা বেগম বেডে বসে বললেন
– সেই টাই হবে।
বিশ বছর ধরে ওদের সংসারে নানা ভাবে ভেজাল করে রেখেছি শুধুমাত্র প্রপার্টির জন্য।
এতো সব করেছি তা ও সংসার ভাঙ্গে নি তাই তো বুদ্ধি করে পরি কে টোপে ফেলেছি।
এতো সব করেছি কি এমনি এমনি নাকি।
চিন্তা করিস না সব ঠিক করে দিবো ,,,,,,,

শুধুমাত্র একটু সময় লাগবে।
যেভাবেই হোক আফজাল কে বশে আনতেই হবে।

ভিডিও ফুটেজ দেখে সবার অবস্থা নাজেহাল।
এত বড় ষড়যন্ত্র চলছে,,,,,

আফজাল হোসেন থোম মেরে বসে আছেন।
তার মাথা কাজ করছে না।
তার নিজের বড় বোন ,,,,,
ছিইইই এতো টা ,,,,,

আফজাল হোসেনের শরীর রাগে কাঁপছে।
ওনি হন্তদন্ত হয়ে বেড়োতে গেলেন।
তার আগেই নীল বাঁধা দিয়ে বলল
– প্লিজ শান্ত হন।
ওনাদের যোগ্য শাস্তি অবশ্যই দেওয়া হবে ,,,
আর প্রান্ত কে পুলিশ অলরেডি এরেস্ট করেছে।
এখন বাকি ফুপি শাশুড়ির শাস্তি।

আফজাল হোসেন সোফা তে বসে পড়লেন।
তার মাথা প্রচুর যন্ত্রণা করছে।

নীল কিছুক্ষণ বসে থাকলো।
পরিবেশ ভারী,,, এই মূহুর্তে অন্য কিছু বলা নিতান্তই অযোগ্য।
নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো ,,,, রাত 10’17 বাজে।
নীল উঠে দাঁড়ালো তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল
– আজ আমি আসি।

মিসেস রাহেলা চোখ মুছে বললেন
– সে কি কথা ,,, ডিনার করে যাও।

নীল মলিন হেসে বলল
– আজ সময় নেই আন্টি অন্য একদিন।

মিসেস রাহেলা আর জোড় করলেন না।
সবার মনের অবস্থা গুরুতর।
সবাই কে বিদায় জানালো নীল।
নিশা আর আমান কে ইশারা করলো নীলের কাছে আসতে।
নীল গাড়ি থেকে দুটো চকলেট বক্স বের করে ওদের হাতে দিলো।
তারপর কয়েকটা শপিং ব্যাগ হাতে দিয়ে বলল
– আপু কে দেখতে যাবে না ?
আমি কি তোমাদের ভাই হিসেবে খুব অযোগ্য?

নিশা আর আমান মুচকি হেসে বলল
– আপুর ইচ্ছের কাছে সব কিছু ঠিক ঠাক।

নীল মুচকি হেসে বলল
– বাহহ বুদ্ধি আছে দেখছি।আচ্ছা আমি আসি আর খুব তাড়াতাড়ি তোমার আপু কে নিয়ে আসবো।

নিশা আর আমান মুচকি হাসলো।
নীল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
– জানি না তোমাদের আপুর সাথে আমার পথ চলা হবে কি না।
তবে তোমাদের আপুর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সব কিছু করতে পারি।
কিন্তু ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে পারি না।

এই টুকু বলেই নীল মলিন হাসলো।
নিশা আর আমান বলল
– চিন্তা করবেন না ভাইয়া।
সব ঠিক হয়ে যাবে ,,,,

নীল হালকা হেসে ভাবলো।
নিশা আর আমান ও পরির মতো সান্ত্বনা দিতে পারে।
ছোট সময়ে কতো রকম সান্ত্বনার বানী শুনিয়েছে পরি।

পুরোনো কথা ভাবতেই নীলের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
নীল গাড়ি নিয়ে পরিদের বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

_______________________

পরি একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে একবার মেইন ডোরে।
নীলের আসার নাম ই নেই।
করিডোরে দাড়িয়ে পায়চারি করছে পরি।
মনের ভেতর শান্তি নেই,,, নীল একা বের হয়েছে এখনো ফেরার নাম নেই।
রাত বারোটা বেজে গেছে ,,,,
পরি ডিনার করতে গিয়ে ও পারে নি।
মুখ দিয়ে খাবার যাচ্ছিলোই না।
রাত একটা ছুঁই ছুঁই,,,, পরি ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলো তাই হাজারো ক্লান্তির মাঝে ও চোখ জোড়া অষাঢ় হয়ে আসছে।
পরি নীলের রুমের দিকে পা বাড়ালো ,,,,
দু সেট এর সোফাতে গালে হাত দিয়ে বসে রইলো।

ভাই এবার যেতে দেয়,,, কালকে আবার আড্ডা হবে।
রাত দুটো বেজে গেছে,,, ফোনের ব্যাটারি লো,,,সবাই চিন্তা করবে।

নীলের কথাতে সাদাফ মুখ কুঁচকে বলল
– ব্যাটা পুরো চার বছর পর দেখা আর এখনি চলে যেতে চাচ্ছিস।
আরে ভাই বউ তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।
আরেকটু আড্ডা দিয়ে যাহহ।

নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
– ভাই টাইম নেই আজ।
কাল জমিয়ে আড্ডা হবে ,,

দশ টাকা বেশি ট্রিট দিবো তরে তা ও যেতে দেহহ।

সাদাফ হাসতে হাসতে বলল
– তোর ফাজলামি আর গেলো না।
আচ্ছা যাহহহহ

সাদাফ কে বিদায় জানিয়ে নীল চলে আসলো।
এই রাম ছাগলের সাথে আজ ই দেখা হতে হলো।
নীল গাড়ি চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত তিন টা বেজে গেল।
নীল ক্লান্ত ,,, ডিনার করা ও হয় নি।
ইচ্ছে ও নেই,,,,,,,,,,,

ব্লেজার খুলে বা হাত দিয়ে ঝুলিয়ে বাসার সামনে আসলো।
ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে নীল বাসায় ঢুকে পড়লো।
বাড়ি পুরো অন্ধকার,,, থেকে থেকে ডিম লাইট জ্বালানো।
কারো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে দেখে লাইট আর জ্বালালো না।
ডিম লাইট এর মৃদু আলো দিয়ে ই সিঁড়ি বেয়ে নীল উপরে উঠে গেল।
করিডোর দিয়ে হেঁটে চলেছে ,,,, পরির রুমের সামনে এসে ভাবলো একবার পরি কে দেখে যাবে।
পরে আবার ভাবলো না থাকুক ঘুমুচ্ছে।
নীল ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমের দিকে গেল।
রুমের লাইট জ্বলতে দেখে নীলের ভ্রু আপনা আপনি ই কুঁচকে গেলো।
নীল নিজেকে সামলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
রুমে ঢুকেই স্তব্ধ হয়ে গেল,,,,
নিজের চোখ কচলে আবার তাকালো।
নাহহ নীল তো ভুল দেখছে না।

⛔ বৃষ্টির কারনে স্কুল যেতে পারি নি। পাঁচ ঘন্টা সময় নিয়ে বিশাল পার্ট লিখে ফেলেছি।
আশা করি সবার ভালো লাগবে ।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ । আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন)

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💙 হ্যাপি রিডিং 💙

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here