বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-৩২

0
2111

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 32
__________________________

দুপুর একটা ,,,, নীল রেডি হচ্ছে আর পরি নীল কে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
কিছুক্ষণ আগেই নীল পরি কে এসে বলল রেডি হয়ে নিতে।
বার বার জিজ্ঞাসা করার পর ও নীল বলে নি কোথায় যাবে।
পরি নীলের উপর বিরক্ত,,, হুটহাট এটা বলে সেটা বলে কিন্তু পরিষ্কার করে কিছুই বলে না।
নীল আয়নাতে পরির প্রতিচ্ছবি দেখছে ,,, আর মুচকি মুচকি হাসছে।
কি অপূর্ব লাগছে পরি কে ,,, নাকের ডগায় রাগ স্পষ্ট।
কাউকে রাগলে ও যে এতো সুন্দর লাগে নীলের তা জানা ছিলো না।
অবশ্য আজকাল নীল পরির সমস্ত টাতেই অতিরিক্ত পরিমানে মুগ্ধ হচ্ছে।
একেই হয়তো বলে ভালোবাসা।
আর ভালোবাসার মানুষ টাকে ভালো লাগা একজন প্রেমিকের রন্ধে রন্ধে মিশে আছে।
নীল ও তো একজন স্নিগ্ধ প্রেমিক পুরুষ।
তাহলে তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন হবে ?

নীল চোখে সানগ্লাস টা দিয়ে চুল গুলো সেট করে নিলো।
পরি এখনো এক ই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
নীল পরির সামনে এসে হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই পরি চমকে উঠলো।
পরি চোখ মুখ কুঁচকে বলল
– কি হচ্ছে কি ?
যখন তখন যা ইচ্ছে করে যাচ্ছেন।
যার সমস্ত টাই আমার নাকের ডগার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

পরির এমন অদ্ভুত বাক্য উচ্চারণে নীল খিলখিল করে হেসে উঠলো।
পরি বিরক্তি নিয়ে তাকালে ও নীলের হাসির কাছে বিরক্তি নামক কঠিন শব্দ টা ব্যর্থ হয়ে গেল।
মূহুর্তের মাঝেই এক চিলতে হাসি এসে পরির উপর ভর করলো।

নীল হাসি থামাতেই দেখলো পরির ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে নীলের দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।

নীলের চোখ গুলো পরির চোখের দিকে আটকে গেল।
নীল চোখ থেকে সানগ্লাস টা নামিয়ে নিলো।

পরির চোখ গুলো যে এতো টা মায়াবি কখনো সেই ভাবে খেয়াল করে দেখা হয় নি নীলের।
চোখ দুটোয় পানি টুইটুম্বর,,,, ঘন কালো পাপড়ি কি স্নিগ্ধ এ চোখ।
নীল মুগ্ধ হয়ে পরির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নীলের কাছে মনে হচ্ছে পরির চোখের দিকে তাকিয়ে এক যুগ সময় অনায়াসেই পার করে দিতে পারবে।
নীলের অদ্ভুত চাউনি তে পরির অস্বস্তি লাগছিলো।
পরি বার বার চোখের পলক ফেলতে লাগলো।
দোপাট্টার কোনা মোচরাতে মোচরাতে পরি বলল
– যাবেন না ?

পরির কন্ঠে নীলের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো।
নীলের চোখ মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো।
পরক্ষণেই বিরক্তি চলে গিয়ে ঠোটের কোনে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠলো।
নীলের মনে হচ্ছে পৃথিবীর শেষ্ঠ প্রেমিক পুরুষ সে।
এক জনম পরি কে ভালোবেসে ও আদৌ কি ভরবে নীলের মন ?
নীলের মনের এই অদ্ভুত প্রশ্ন নীল কে তাড়া করতে লাগলো।
ইসসসস এ কেমন অনুভূতি,,, নীল তো পাগল ই হয়ে যাচ্ছে।

পরি হালকা কাশতেই নীল কল্পনার জগত থেকে বেড়োলো।
নীল নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
নীল পকেটে ওয়ালেট আর গাড়ির চাবি পুরে বলল
– হুমম চলো।

নীল আর পরি বাসার সবাই কে বিদায় জানিয়ে চলে আসলো।
__________________

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।
বেশ রমরমা পরিবেশ বিরাজ করছে।
হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে ,,,, পরির চোখ জোড়া কেমন ঘুম ঘুম করছে।
বার বার ঝিমুনি আসছে ,,,,
কয়েকবার ঝিমুতে ঝিমুতে পড়ে যাচ্ছিলো পরি।
নীল হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে আর প্রতিউত্তরে পরি দিয়েছে মিষ্টি হাসি।
সিটে হেলান দিয়েই বড় একটা হাই তুললো পরি।
নীল পরির দিকে এক পলক তাকিয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে বলল
– পরি ঘুম পেলে একটু ঘুমিয়ে নাও। না ঘুমুলো শরীর ক্লান্ত লাগবে।
আমি পৌছে গিয়ে ডেকে দিবো।
পরির বেশ ঘুম পাওয়াতে পরি আর তেমন কিছু বলল না।
শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
তারপর সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শিরশিরে বাতাস অনুভব করতে লাগলো।
আর মূহুর্তের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো।
নীল মুচকি হেসে গাড়ি চালাতে থাকলো।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

মিসেস রাহেলা উদ্বিগ্ন কন্ঠে নিশা কে ডেকে চলেছেন কিন্তু নিশার আশার নাম ই নেই।
মিসেস রাহেলার উদ্বিগ্ন কন্ঠ শুনতে পেয়ে আমান কিচেনে এগিয়ে আসলো।

মিসেস রাহেলা খুন্তি হাতে মাছ ভাজতে ভাজতে বললেন
– আমান নিশা কোথায় ?

আমান অবাক হয়ে বলল
– আমি কি করে জানবো।
দেখো ছাঁদে গিয়ে বসে আছে বোধহয় ।

মিসেস রাহেলা বিরক্ত হয়ে বললেন
– কি ঝামেলা।
একে তো কাজের মেয়েটা দু দিন ধরে আসছে না।
তার উপর এতো কাজ আমি একা হাতে সামলাই কি করে।
এতো রকমের রান্না করতে হবে ,,,,,আর সাহায্য করার জন্য কেউ ই নেই।

আমান মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলল
– আচ্ছা আমায় বলো আমি সাহায্য করছি।

মিসেস রাহেলা গ্যাস অফ করে কড়াই নামিয়ে বললেন
– তুই কি মেয়েলি কাজ পারবি নাকি।
পড়ে হাত পুরিয়ে আরেক ঝামেলা বাড়াবি।

আমান ভ্রু কুঁচকে বলল
– আমি সব ই পারি।
শুধু তোমরা ই বোঝো না।

মিসেস রাহেলা বিরক্তিকর স্বরে বললেন
– তার জন্যে ই তো গত বছর যখন বলেছিলাম মাংসটা একটু দেখ আমি দু মিনিটে আসছি।
তখন তো মাংসের সাথে সাথে নিজের হাত ও পুরিয়ে ছিলি ।

আমান মেকি হাসি দিয়ে বলল
– ঐ টা এক্সিডেন্ট।

মিসেস রাহেলা টিকিয়া বানাতে বানাতে বললেন
– হ্যাঁ হয়েছে হয়েছে।
এতো ঢং দেখাতে হবে না।
পারলে সালাত টা কেটে দে।

আমান মাথা ঝাকিয়ে সালাত কাটতে চলে গেলো।

এক গাঁদা ফুল হাতে বাড়ি ফিরেছে নিশা আর আফজাল হোসেন।
বাসার কলিং বেল বাজতেই আমান এসে দরজা খুলে দিলো।
আমান হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশা বলল
– গাঁধা যদি পারিস তো ফুল গুলো ভেতরে নিয়ে যাহ।
গরুর মতো হা হয়ে আছিস কেন ?

আমান চোখ রাঙিয়ে বলল
– একদম আমাকে গাঁধা বলবি না।
আমি তোর বড় ,,,, বড় ভাই বলে ডাকবি।

নিশা ভেঙ্চি কেটে বলল
– বয়েই গেছে আমার ভাই ডাকতে ।
পাঁচ মিনিটের বড়,, তাকে আবার সম্মান দেখিয়ে ভাই বলে ডাকতে হবে।

আমান কিছু বলবে তার আগেই আফজাল হোসেন বললেন
– তোরা থামবি একটু।
ফুল সহ জিনিস পত্র গুলো ভেতরে নিতে সাহায্য কর।

আমান আর কিছু বলল না।
সবাই মিলে এক সাথে সমস্ত জিনিষ পত্র ভেতরে নিয়ে গেল।
__________________

বনানীর বিশাল এক এপারটমেন্ট এর সামনে গাড়ি দার করিয়েছি নীল।
14 তলার বিশাল বাড়ি টা পরিদের।
দশ তলার ফাস্ট ফ্ল্যাট আর সেকেন্ড ফ্ল্যাট নিয়ে পরিদের বাসা।
নীল গাড়ি থেকে বের হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিলো।
আজ হয়তো অন্য কিছু ও হতে পারতো।
কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সব ভালো হয়েছে।
তিনি চেয়েছেন বিধায় ই পরি আর নীলের সম্পর্ক টা গাঢ় হয়েছে।
নীল মুচকি হেসে ঘুমন্ত পরির মুখ টা দেখে নিলো।
আজ পরি কে পুরো চমকে দিবে নীল।
পরি কে পরিপূর্ণতা দিবে,,,, পরির পরিবার ছাড়া পরি সুখি নয় যে।
নীল ঘুমন্ত পরির কপালে উষ্ণ ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
মেয়েটাকে কলিজায় বেঁধে রাখতে পারলে বোধহয় নীলের শান্তি হতো।
কেন যে এতো মায়া ,,,,

নীল পকেট থেকে সরু রুমাল বের করে ঘুমন্ত পরির চোখ বেঁধে দিলো।
তারপর মিষ্টি কন্ঠে পরি কে ডাকতে লাগলো।
পরির ঘুম নীলের ডাকে হালকা হলো। চোখ মেলে তাকাতেই সব কিছু অন্ধকার দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে গেল পরি।
নীল আস্বস্ত করে বলল
– ভয় পেও না পরি।
আমি আছি তোমার পাশে।
একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য চোখ বেঁধে দিয়েছি।
নীলের কথাতে পরি স্বস্তি পেল।
পরি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ছোট করে বলল
– আচ্ছা।

নীল মুচকি হেসে পরির হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলো।
পরি ধীর কন্ঠে বলল
– কোথায় আছি আমরা ?

নীল পরির হাত ধরে আগাতে আগাতে বলল
– বলা যাবে না।
এটা সারপ্রাইজ ,,,,,

পরি ও আর বারতি প্রশ্ন করলো না।
পরি জানে নীল যেহেতু বলেছে এটা সারপ্রাইজ,,, তো এটা নীল কোনো ভাবেই বলবে না।
নীল পরি কে নিয়ে লিফ্টে উঠে বোতাম টিপে দশ তলা সেট করে দিলো।
মূহুর্তের মাঝে দশ তলায় এসে লিফ্ট থামলো।
পরির হাত ধরে পরিকে অতি সাবধানে নীল লিফ্ট থেকে বের করে নিলো।
পরিদের ফ্ল্যাটের কাছে আসতেই সাদা পিস এর মিষ্টি গন্ধ পরির নাকে এসে লাগলো।
পরির শরীর কেঁপে উঠলো,,,,
পরির নিজের বাসার কথা মনে পড়ে গেল।
পরি নিজেদের ফ্ল্যাট এর দরজার কাছে অনেক রকমের ফুলের গাছ লাগিয়ে রেখেছে।
সেখানে ও সাদা রঙের পিস ফুল ফুটে।
পরির মনে ভর করলো বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ।
নীল বুঝতে পেরে বলল
– পরি সবসময় মন খারাপ করতে হয় না।

ভালো কিছুর জন্যে অপেক্ষা করতে হয়।
পরি কিছু না বলে মাথা ঝাঁকালো ।

নীল মৃদু হেসে কলিং বেল বাজালো।
কিছুক্ষণের মাঝেই দরজা খুলে গেল ।
আর নীল পরির চোখের বাঁধন ও খুলে দিলো।
পরির চোখ খানিকটা ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।
একে তো বেশ অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো।
তার উপর ঘুম ভাঙ্গার পূর্বেই নীল চোখ বেঁধে দিয়েছে।
পরিবারের সবাই কে চোখের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পরির বিশ্বাস হলো না।
পরি চোখ কচলে আবার তাকালো।
কিন্তু নাহহ সত্যি ই সবাই তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
দীর্ঘ দশ টি দিন সবাই কে ছেড়ে ছিলো পরি।
পরি টলমল চোখ নিয়ে নীলের দিকে তাকাতেই নীল চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে বোঝালো।
সব ঠিক দেখছো পরি,,,,

পরি বুঝতে পেরে নীলের দিকে নীরব কৃতজ্ঞতা জানালো।
মিসেস রাহেলা অনড়গল কেঁদে যাচ্ছেন।
আফজাল হোসেনের চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে।
কোনো এক অদৃশ্য দেয়াল পানি কে আটকে রেখেছে।
নিশা আর আমানের চোখে মুখে স্নিগ্ধ হাসি।
বোন কে দেখতে পেয়ে যেন সমস্ত সুখ ওদের চোখে মুখে উপচে পড়েছে।
মা মেয়ের ভালোবাসা এক অন্য রকম ভালোবাসা হয়।
কারো সাথে তুলনা করা যায় না এটা।

মিসেস রাহেলা হাত বাড়াতেই পরি মা কে আঁকড়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগলো।

পরিবারের স্নিগ্ধ এই সুন্দর মূহুর্তের সাক্ষী হয়ে থাকলো নীল।
নীলের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা মনে অদ্ভুত এক তৃপ্তি।
চোখে মুখে অসম্ভব খুশিরা ঝলমল করছে।
সে পেরেছে তার ভালোবাসা কে পরিপূর্ণতা দিতে।
নীল পৃথিবীর সব থেকে সুখী প্রেমিক পুরুষের তালিকায় নিজের নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে।
সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছে নীল আর মুগ্ধ হয়ে দেখছে এক ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের পূর্ন মিলন সুখ।

⛔ আমার বেশ অনেক গুলো রির্ডাস বার বার রিকোয়েস্ট করেছেন যেন দুটো পার্ট করে দিই।
সম্ভব হলে আমি নিশ্চয়ই দুটো পার্ট করে দেই।
কিন্তু রোজ সম্ভব হয়ে উঠে না যে। আমি নিয়মিত গল্প লিখে পোস্ট দেই।
যতো টুকু লিখা হয় পুরোটাই পোস্ট দিয়ে দিই।
এই না যে আমার কাছে গল্প জমানো আছে আর আমি তা পোস্ট দেই নাহ ,, আমাকে রোজ লিখতে হয়।
আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন ।
সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইলো।
মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আশা করি সবাই ভালো আছেন।
সবার সুস্থতা কামনা করছি। এভাবেই আমার পাশে থাকুন আমি আমার বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করবো ইনশআল্লাহ ।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💙 হ্যাপি রিডিং 💙

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here