#বালিকা_বউ
#পার্টঃ১২
লেখিকা ঃ মারিয়া
রাজকেও আমাদের ভালো লেগেছে। কি বলিস আদি।
হু,,হুমম।
সন্ধায় ছেলের বাড়ি থেকে ফোন এলো আমাদের মতামত জানার জন্য। রোশনির থেকে জেনে নিলাম ইশুর কোনো আপত্তি নেই। কথাটা শুনে ওনারাও বেশ খুশি হলেন। এরপর বিয়ের দিন ক্ষন ফিক্সড হলো।
কাল বোনের গায়ে হলুদ। মনের কোনে খুব কষ্ট লাগছে। যতই হোক একসাথে কত খুনশুটি মজা আনন্দ করেছি বলার বাইরে।
হঠাৎ পিছন থেকে ডাকলো –
দাদা।
আমিও ঘুরে দেখলাম ইশু হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে দাড়ানো। আরে ইশু আয় এদিকে বলে ওকে সোফায় বসালাম। আমার হাতে প্যাকেটটা দিয়ে বলল তোর জন্য ছোট একটা উপহার। একদিন খুলে দেখিস কিন্তু। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে শুধু মাথা নাড়লাম।
তারপর বলল দাদা তোকে কিছু কথা বলি। বৌদি অনেক ভালো জানিস। তুই যখন লন্ডনে পড়তে গেলি শুধুমাত্র তোর যোগ্য হবে বলে দিন রাত এক করে পড়াশোনা করতো। তার প্রমাণ তো তুই পেয়েছিসই।
এছাড়া সাইকেল চালানো, বাইক চালানো, কার ড্রাইভিং,ড্রয়িং নাচ গান এসব ও শিখেছে। যাতে ওর পরিচয় দিতে তোর লজ্জা বোধ না হয়। এছাড়াও কম্পিউটার চালানো গ্রাফিক্স কোর্স করেছে। খেলাধুলা কুইজ আবৃত্তি সবকিছুতেই স্কুলে ছিল ফার্স্ট।
আমি ওর কথাগুলো যতই শুনছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম। এত কিছু পারে ও,, বাইরে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না।
ও আবারও বলল এখন তোর ডিসিশন।যেটা ভালো বুঝবি সেটাই করবি। কিন্তু একবার হারিয়ে ফেললে কিন্তু আর পাবি না। সেটা মাথায় রাখিস বলে চোখ মুছতে মুছতে বাইরে চলে গেলো।
আজ ওর গায়ে হলুদ। সেই ভোর থেকে সবকিছুর আয়োজন করছি। একমাত্র বোন কোনো কিছুতেই ত্রুটি বা খুত রাখিনি। একে একে আমাদের সব রিলেটিভ গেস্ট ও আসতে শুরু করে দিয়েছে। বাড়িটা লোকেরন্যে ভরে আছে। গ্রাম থেকে আমার কিছু দিদুন ঠাম্মিও এসেছেন। উনাদের ইচ্ছে হয়েছে নাত বউকে দেখবে। রোশনির সাথে আমাকেও নিয়ে গেলো। দুজনকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে বলল কি সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে। তারপর চাসনির থুতনি উঁচু করে বলল কি গো নাতবউ। এবার একটা নাতির ঘরে পোতার মুখ দেখাও।
রোশনি বিড়বিড় করে বলল আজ পর্যন্ত ছুঁয়েও দেখল না আবার বাচ্চা। দিদুনের কানে সমস্যা তাই হয়তো শুনতে পায়নি। কিন্তু আমি ঠিকই শুনেছি। এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
কিরে তুই কিছু কর।
আমি পিছনে মাথা চুলকিয়ে বললাম সে যখন সময় আসবে তখন হবে। এখন চলো ইশু কতক্ষণ আর বসে থাকবে বলে কোনোরকমে পালিয়ে ছাদে গেলাম। ওখানেই হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। মায়ের পর আমাকে হলুদ লাগাতে বলল কেন জানিনা আর চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। ওকে জড়িয়ে নিশব্দে কেঁদে দিলাম।
এরপর একে একে সবাই দিলো। এখন মিউজিকের সাথে সবাই ডান্স করছে খুব হৈ-হুল্লোড় হচ্ছে। আমি নিচে চলে আসলাম। হঠাৎ দেখি রোশনি হেঁটে আসছে। আমিও দেয়ালের পাশে লুকিয়ে পড়লাম। ও কাছে আসতেই হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে মুখ চেপে ধরলাম। বেচারি ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
আমি মজা করে বললাম
কিই আমাকে দেখে শ্বাসকষ্ট শুরু হলো নাকি বলে মুখ ছেড়ে দিলাম।
আপনি,,, আপনি এখানে কি করছেন।
বারে বউয়ের পাশ দিয়ে ঘুরঘুর করাই তো স্বামী দের মেইন ডিউটি।
স্বামী না ছাই বলে মুখ ঘুরালো।
এই শোনো না,,
কি বলুন আমার অনেক কাজ আছে।
বলছি তখন দিদুন যেটা বলল চলো সেটার কাজ শুরু করে দেই। এখন সবাই উপরে ব্যাস্ত আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করবে না।
কনুইয়ের গুঁতো মেরে বলল আহ শখ কত। ওই যে মা,,
সাথে সাথে পিছনে ফিরে বললাম,, কোথায়।
ও খিলখিলিয়ে হেসে আমাকে সরিয়ে দিয়ে সোজা দৌড়।
আমাকে বোকা বানানো তাই না। সময় আমারও আসবে।
তারপর রাতে সবাই ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লো। আমার সাথে ছোটু মানে অর্ঘ্য আমার মাসির ছেলে ঘুমালো। আবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে দাদাদের সাথে কাজে লেগে পড়েছি। এখন আরও দায়িত্ব বরযাত্রী দের আপ্যায়ন করা। সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হলো। বিদায়ের সময় মা ভীষণ কান্নাকাটি করছিলো। রোশনি মাসিরা মিলেও মা আর ইশুকে আলাদা করতে পারছিলো না। তারপর আমার বুকে মিশে কান্না করে দিল আর বলল দাদা নিজের খেয়াল রাখিস। আর বৌদি কে এতদিন আমরা দেখে রেখেছি এবার তোর পালা। ওকে কষ্ট দিস না।
কথা দিলাম ওকে আর কষ্ট দেবো না। তারপর রাজের হাতে ওর হাত রেখে বললাম আমার বোনটাকে দেখে রেখো।
অবশ্যই দাদা।
এরপর গাড়িতে উঠল। আর গাড়িও স্টার্ট দিয়ে ওদের গন্তব্যে চলতে লাগলো।
এভাবে কাটলো আরও দুইদিন। আজ কলেজে যাচ্ছি আর সাথে চাসনিও আছে। মা বলে দিয়েছে ওকে কলেজে সাথে নিয়ে যাবো আবার নিয়ে আসবো। রোশনি একটু না করলেও মায়ের ধমকে পরে চুপ।
গাড়িতে উঠে বসল। আমি বললাম কেমন লাগছে আমার পাশে বসে।
রোশনি বাতাস করার মত করে বলল খুব গরম লাগছে।।
কিহ। আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।
আমাদের একসাথে নামতে দেখে অনেকের চোখ কপালের উপরে উঠে গেছে। অনেকে ফিসফিস করছে বিশেষ করে অর্নাস মেয়েরা। আমি রোশনি ক্লাসরুম অবধি এগিয়ে দিয়ে আসলাম। পিছন থেকে ডেকে বলল শুনুন।
হুমম কিছু বলবে।
বুকে রাখা সানগ্লাস টা খুলে চোখে পড়িয়ে দিল। তারপর হাত দিয়ে চুলগুলো আরেকটু নিচে নামালো। আবার বুকের দিকে তাকিয়ে তিনটা খোলা বোতাম নিজের হাতে মেরে দিয়ে বলল সোজা অফিস রুমে যাবেন। এদিক ওদিক তাকালে আপনার খবর আছে।
কি করবে??
দাঁতে দাঁত চেপে বলল সেটা বাড়ি গেলেই দেখতে পারবেন। এখন যান।
আমিও বের হলাম তারপর ওদের ক্রস করে পিছনে তাকিয়ে দেখি রোশনি তাকিয়ে আছে। খুব ভালো লাগলো ব্যাপারটা তারপর হালকা হেসে রুমে গেলাম।
ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে অনু চেপে ধরলো রোশনিকে। এক গাড়ি থেকে নামলি তোকে কি রাস্তা থেকে লিফট দিয়েছে।
নাহ একদম বাড়ি থেকেই এনেছে।
বলিস কি কিন্তু কিভাবে?? কি হয় তোর।
আমার হাজবেন্ড।
কথাটা শুনে কি বলে অনু এত জোরে বলল ক্লাসের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে পড়লো। রোশনি ওর মুখ চেপে বলল এত রিয়াক্টের কি হয়েছে।
এবার কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল তুই সত্যি ওনার বউ।
হ্যা ম্যারেজ সার্টিফিকেট আছে দেখাবো।
সেদিন আর রোশনির ক্লাস করানো আমার রুটিনে ছিল না। তাই বাকি ক্লাসগুলো নিলাম। মাঝে মাঝে ওর ক্লাসের সামনে দিয়ে হেঁটে গেছি একবার দেখার জন্য। কিন্তু সে ভাগ্য আর হয়ে ওঠেনি। ব্রেক টাইমে উপর থেকে দেখলাম রোশনি আর অনু মিলে পরমানন্দে ফুচকা খাচ্ছে। ঝালে ওর নাকমুখ লাল হয়ে গেছে। আমি সোজা উপর থেকে দৌড়ে আসলাম ওদের কাছে। রোশনি বলছে পানি পানি মুখ দিয়ে ঠিক করে কথাও বের হচ্ছে না।
ওকে একটা বেন্চে বসালাম। ওর মুখ ধরে বললাম রোশনি কষ্ট হচ্ছে তোমার। ফুচকার দোকানীর কাছেও জল নেই। দৌড়ে দোকান থেকে জল কিনে ওকে খাইয়ে দিলাম। রোশনি জল খাওয়ার পরেও জিভ বের করে শ্বাস নিচ্ছে মানে ঝাল এখনও কমেনি।
আমি দোকানীর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। রাগে আমার চোখ লাল হয়ে আছে। এটা দেখে দোকানীর প্যান্ট ভিজে যাবার মত অবস্থা। তারপর বললাম এরপর থেকে পরিমাণ জেনে ঝাল দিবেন আর নাহলে দোকান চালানোর মত অবস্থায় থাকবেন না।
উনিও ভীষণ ভয় পেয়ে গেছেন তাই আর কোনো কথা বলেনি। তারপর আইসক্রিম এনে ওকে খাওয়ালাম।
ঝাল কি কমেছে।
রোশনি হা বোধক মাথা নাড়ল। সাথে সাথে জোরে একটা থাপ্পর দিলাম। ও গালে হাত দিয়ে অসহায়ের মত আমার দিকে তাকালো।
ফুচকা দেখলেই পেঙ্গুইনের মত লাফালাফি করো। ঝাল কতটুকু দেবে সেটা বলতে মনে থাকে না।
রোশনি মাথা নিচু করে ফেললো।
তোমার যে ঝালে সমস্যা হয় সেটাও কি ভুলে গেছো। ওর কোনো উত্তর না পেয়ে হাত ধরে বললাম চলো গাড়িতে ওঠো। ও ওখানে দাড়িয়েই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
আমি বললাম কি হলো।
আমি যাবো না আপনার সাথে।
চর আরেকটা খাওয়ার কি ইচ্ছে হচ্ছে।
এবার আমার পিছন পিছন হাঁটা দিলো।
তারপর ওকে নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে সোজা বাসায় আসলাম।
চলবে,,,,,