বিধবা বিবাহ’ পর্ব-১৪

0
1184

#বিধবা_বিবাহ (চতুর্দশ পর্ব)
“তবে যাই বলুন না কেন, আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। দেওয়ালে গাঁথা ক্যামেরার লেন্স খুঁজে খুঁজে ফটো তুলে আনা, বাপরে বাপ! ওই ছোট্ট জিনিসটা কিন্তু আমাদের সার্চ পার্টির কারোর নজরে পড়েনি।”
উল্টোদিকে বসে থাকা চেনা মানুষটার এমন অচেনা বাচনভঙ্গিতে খানিক বিরক্ত হয়ে উঠছিল ঐশী। অতনুর বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে মিশে আছে নিজের ভাবি স্ত্রীকে অচেনা, অপরিচিত বোধের অভিব্যক্তি। ঐশীকে যেন সে চেনেই না, আলাপ নেই কোনোকালেই। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি যেন কফিশপ, মৌললির বাড়ির স্মৃতি ভুলে থাকা নিতান্তই এক কেজো মানসিকতার পুলিশ অফিসার। যার সম্মন্ধ কেবলমাত্র অপরাধ, অপরাধীর সাথেই সংযুক্ত। আবেগ, ভালোবাসা সেখানে মূল্যহীন।
নিজেকে এই পরিবেশের সাথে কেমন খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলনা ঐশী। সাথে অতনুর পেশার সম্মন্ধে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল না থাকার সুবাদে চরম শিহরিতও হচ্ছিলো মনেমনে। পাশাপাশি এত বড় খবরটা গোপন করার কারণে মনমধ্যে অভিমানের পরতও জমছিল স্তরে স্তরে। উপরন্তু নিখুঁত কামানো গালে অতনুকে আজ যথেষ্ঠ মার্জিত, ব্যক্তিত্ববান লাগলেও ঐশীর কাছে মানুষটাকে দুর্বোধ্য লাগছিল কোন এক অজানা কারণে।

“আর কোনো কিছু জানতে পারা গিয়েছে?” চোখটা মেঝেতে নিবদ্ধ রেখে বলে উঠলো ঐশী। অতনুকে কিছুতেই আপনি সম্মোধন করার ইচ্ছে জাগলোনা ওর। তুমি সম্মোধনে ঐশী সাবলীল হলেও অতনুর কেজো অভিব্যক্তি বুঝিয়ে দিচ্ছে তুমি করে বলাটা বড্ড বোকামি হয়ে যাবে এই মুহুর্তে, উপরন্তু উল্টোদিকে লেডি পুলিশ অফিসার বসে থাকার কারণেও তুমি বলা চলবেনা।

“অনেক কিছুই জানা গিয়েছে। সেই কারণেই আপনাকে ডাকা হয়েছে ম্যাডাম।” টেবিলে পড়ে থাকা পেপারওয়াটটা নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে বলে উঠলেন লেডি অফিসার। “আমাদের ফোর্স অরিন্দমের বাড়িতে টোয়েন্টি ফোর সেভেন নজরদারি রেখে চলেছে। আপনি ওর বাড়িতে গিয়েছেন, সেই খবরটা আগেই পেয়ে গিয়েছিলাম। আর বলাই বাহুল্য লোকটা সেইদিনের পর বাড়ি ফেরেনি আর। পরিবারের কারোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি। ফোন, টেক্সট, মেইল কিচ্ছুনা। কারণ ভট্টাচার্য বাড়ির সবকটা নাম্বারকে আমরা ফলোআপ করছি। এমনকি অরিন্দম নিজের সবকটা সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ডিএকটিভেট করে দিয়েছে।”
“আর?” খানিক ক্লান্তিভরে ঐশী বলে উঠলো এবারে।”মানুষটা কি হওয়ায় মিলিয়ে গেল?”
“হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে কিনা জানিনা। বাট অরিন্দমের ব্যাংক একাউন্টও ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে।” অফিসার বলে উঠলেন ঐশীকে উদ্দেশ্য করে।”গতকালকেই আমরা ডিটেইলস পেয়েছিলাম হাতে। কিন্তু তাজ্জবের কথা, ওনার ব্যাংক একাউন্টে মাত্র কয়েক হাজার টাকা পড়ে আছে। প্রায় বছরখানেক ধরে একটু একটু করে টাকাগুলো উইথড্র করে নেওয়া হয়েছিল। এবং অবশ্যই ক্যাশে।”
“অরিন্দমের কি একটাই ব্যাংক একাউন্ট ছিল?” ফের প্রশ্ন ছুড়ে দিল ঐশী,”আপনারা তো ওর প্যান ডিটেলস চেক করলেই বুঝে যাবেন…তাছাড়া সার্চ ওয়ারেন্ট যখন পেয়েছেন, এটাও নিশ্চই পাবেন।” অধৈর্যের ভঙ্গিতে অসংলগ্ন মানুষের মত বলে উঠলো ঐশী। হতাশা যেন ক্রমশ ঘিরে ধরছে ওকে। কোন দিকে কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছেনা যে…
“দেখুন ম্যাডাম, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আর আমরা কিন্তু আদালত থেকে সার্চ ওয়ারেন্ট পাইনি। আপনার শাশুড়িমা, আই মিন মিসেস অনন্ত ভট্টাচার্য পুলিশ ফোর্সকে দেখে এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে, আমাদের কাজে কোনোরকম বাধাদান করার সাহস পায়নি।” পেপারওয়েটটা টেবিলের এককোণে সরিয়ে রেখে বলে উঠলেন অফিসার,” ছাড়া সার্চ ওয়ারেন্ট কি করে পাবো বলুন? একে তো কোন এভিডেন্স নেই অরিন্দমের বিরুদ্ধে। আপনার দেওয়া ভিডিওটি উনিই পাঠিয়েছেন কিনা তাও এখনো প্রমাণিত নয়। উপরন্তু, সমাজের ভদ্রশ্রেণীতে থাকা পারিবারিক ব্যবসায়ী মানুষ অরিন্দম। কোনো ক্রিমিনাল হিস্ট্রি নেই লোকটার। কিন্তু,আরেকটি জিনিস আমাদের হাতে এসেছে।” বলে চুপ করে গেলেন অফিসার।

“কিন্তু কি! কি এসেছে?” মুহূর্তখানেকের জন্য অফিসারের বক্তব্য থেমে যাওয়া মাত্র অসীম আগ্রহ ভরে বলে উঠলো ঐশী। যেন বিন্দুমাত্র তর সইছে না ওর।
“আপনার স্বামীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টটা আজ ভোররাত্রেই লগইন হয়েছে। ডিভাইসের লোকেশন পড়শী রাজ্যের বেগুসরাই অঞ্চলে। আর একটা আননোন নাম্বার থেকে আপনার স্বামীর একাউন্টে লাখখানেক টাকা ট্রান্সফার হয়েছে দুইদিন আগে।” একমনে পেপারওয়েটটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে উঠলেন অফিসার।
“অবিনাশ! কিন্তু ও যে…” প্রবল উত্তেজনায় ঐশী ততক্ষনে চেয়ারটা ঠেলে দাঁড়িয়ে পড়েছে মেঝের উপরে। “অবিনাশের গাড়িটা যে খাদে পড়ে গিয়েছিলো ম্যাডাম। আমার চোখের সামনে ড্রাইভার, অবিনাশ তলিয়ে গিয়েছিলো খাদে! ওদের মরণ চিৎকার যে এখনও কানে বাজে আমার!”
“প্লিজ, আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন..” উল্টে পড়ে যাওয়া চেয়ারটা সোজা করে দিয়ে অতনু বলে উঠলো এবারে। “অবিনাশ যদি বেঁচে গিয়ে থাকে তবে আমাদের ফোর্স নিশ্চয়ই খুঁজে বার করবে তাকে।”
অতনুর কণ্ঠস্বরে কিছু একটা ছিল, যা ঐশীকে মুহূর্তখানেকের জন্য হলেও প্রশমিত করে দিল। একরাশ হতাশাকে সঙ্গী করে ঐশী ফের বসে পড়লো চেয়ারে। তারপর লেডি অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,”আর কোনো
রকম তথ্য পাওয়া গিয়েছে?”
“ধন্যবাদ ম্যাডাম, কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু বলতে আমরা রাজি নই। বুঝতেই পারছেন কিছু ফর্মালিটির মধ্যে আমাদেরকে কাজ করতে হয়। তবে ফের দরকার পড়লে আপনাকে নিশ্চয়ই ডাকা হবে। নমস্কার।” ইঙ্গিতপূর্ণ ভঙ্গিতে অফিসার করতল দুটো সামনে বুকের সামনে জড়ো করতেই ঐশী উঠে দাঁড়ালো এবার। প্রতিনমস্কার জানিয়ে ঐশী দরজার দিকে পা বাড়াতেই অতনু বলে উঠলো এবারে, “ধন্যবাদ ম্যাডাম, এভিডেন্সটা দেওয়ার জন্যে। আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।” নমস্কারের ভঙ্গিতে অতনু বলে উঠলো এবার। কিন্তু নিজের দুটো হাত জড়ো করে প্রতিনমস্কারটা ঐশী ফিরিয়ে দিতে পারলনা কিছুতেই। বড্ডো সঙ্কোচ হচ্ছিলো আজ, খানিকটা অপরাধবোধেও ভুগছিল মনে মনে। অতনুর তরফ থেকে আসা ফোনকল কেটে দেওয়ার স্মৃতি, এড়িয়ে যাওয়ার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম স্মৃতিগুলো, দেখা করতে চাইলে কাজের বাহানায় কাটিয়ে দেওয়া… আরও কতশত।
নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ওর বুক চিরে। “আসছি অফিসার..” বলে অতনুর দিকে একবার অপাঙ্গে দৃষ্টি মেলে ঐশী পা বাড়ালো থানার বাইরে।

টুং! পথচলার দুমুহূর্ত পরে নোটিফিকেশনের সুতীক্ষ্ণ শব্দে ঐশী দাঁড়িয়ে পড়লো রাস্তার পাশে। ডিজিটাল স্ক্রিনে ততক্ষনে ফুটে উঠেছে অতনুর নাম। “সন্ধ্যে সাতটায় বারিস্তা কফিশপে। আশা করি এইবার এড়িয়ে যাবেনা তুমি।” মেসেজটা ঐশী হতভম্ব হয়ে গেল একেবারে। চকিতে মাথাটা ঘুরিয়েই ঐশী চোখ রাখলো ফেলে আসা থানার দিকে। অতনুর লম্বা চওড়া অবয়বটা তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।
মুঠোফোনের এনালগ ক্লকে সময়টা জানান দিচ্ছে ছটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট।

——-

“আচ্ছা ঐশী, বলতো এভিডেন্স কালেক্ট করে দিলে আমরা তাকে কত পয়সা দি? আর তথ্যপ্রমাণ কাটাছেঁড়া করতেই বা কত দি?”
সুদৃশ্য কফিশপের একটা কর্ণারে মুখোমুখি বসে আছে ওরা দুজনে। চেরি রেডরঙা কুর্তি পরিহিত মেয়েটির মুখে ফুটে উঠেছে চিন্তার গাঢ় বিন্দু। নিখুঁতভাবে শেপ করা ভ্রুদুটোতেও লেগে আছে অস্বস্তির অভিব্যক্তি। কিন্তু এমন সময় উল্টোদিক থেকে ভেসে আসা প্রগাঢ় পুরুষালী কৌতুক কণ্ঠস্বরে মুখ তুলে চাইল ও। সামনের চেয়ারে বসে থাকা অতনু চোখেমুখে পূর্বের সেই প্রফেশনালিজমের চিহ্ন নেই। বরং অপার সারল্যে জ্বলজ্বল করছে ওর চোখদুটি। যেন, ঐশীর তরফ থেকে করা সমস্ত রূঢ় ব্যবহার, অবহেলাকে ভুলে গিয়েছে এক লহমায়।
“তোমরা কবে গিয়েছিলে ঐবাড়ি সার্চ করতে?” খানিকটা গম্ভীর হয়ে জবাব দিল ঐশী। ওর মনে তখনো ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটা। পরিচয় হওয়ার কিছুদিন পরেই অতনু জানিয়েছিল শখের স্ক্রিপ্ট রাইটার ও, সাথে সিভিল সার্ভিসের জন্যে প্রিপারেশন নিচ্ছে।” তাছাড়া সেদিন কফিশপে জানিয়েছিল প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। ঘুণাক্ষরেও বলেনি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে আছে!” নিজমনেই অতনুর বলে ওঠা কথাগুলো হাতরে বেড়াচ্ছিল ঐশী।
“কি হলো? মনের ভাবনা ভাবা শেষ হলো তোমার?” অর্ডারটা দিয়ে ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো অতনু। নিজের মনে ব্যস্ত থাকার জন্য ঐশী যে অতনুর উত্তরটাও শুনতে পায়নি, তা বলাই বাহুল্য।
“আপনি, ইয়ে মানে তুমি এখানকার পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কবে জয়েন করলে?” আমতা আমতা করে মনের মধ্যে ঘুরতে থাকা প্রশ্নটা অবশেষে করেই ফেলল ঐশী।
“করেছি এই মাসখানেক হলো। কেন বলোতো ?”পাল্টা প্রশ্ন করে উঠল অতনু,”তোমাকে জানাইনি, তাই খারাপ লাগছে নাকি?”
“নানা, সেটা কই বললাম আমি, লাগার কোন কারণ নেই তো! জাস্ট এমনই জিজ্ঞেস করছি।” মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব, ভালো খারাপ লাগার অনুভূতি সম্পূর্ণরূপে চেপে বলে উঠলো ঐশী।
“আর কতভাবে নিজের মনের কথাগুলো মনেই চেপে রাখবেন ম্যাডাম?” হালকা হেসে বলে উঠল অতনু। “মানছি আপনি আমাকে আমাকে বিশ্বাস করতে ভয় পান। কিন্তু খানিক জোর গলাতেই বলছি আমার কাছে ঝেড়ে কাশলে ক্ষতি নেই, কোনো শাখা প্রশাখা নেই আমার।”
“হুমম, অবাক লাগাটা স্বাভাবিক বৈকি। তুমি তোমার ব্যাপারে সবকিছুই জানিয়েছ আমাকে, কিন্তু এত বড় খবরটা গোপন করে রেখেছিলে… এমনকি মৌলালিতে যাওয়ার সময়ও কিচ্ছুটি খুলে বলোনি আমাকে।” অতনুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ঐশী,”তুমি আমার কেসের ইনচার্জ পদে আছো জানলে, এতটা ছোটাছুটি করতে হতোনা আমাকে… কেন লুকালে আমার কাছে?”

“তুমি অবিনাশ, অরিন্দমের কুকীর্তির এতো বড় খবরটা নিজের মা, পিসির কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারো। আমার কাছে লুকিয়ে রাখতে পারো.. কিন্তু আমি আমার পেশাটা লুকিয়ে রাখলেই দোষ? সত্যিমিথ্যের জাল বুনলেই দোষ!”ঐশীর চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো অতনু।”মানছি তোমার জীবনে অনেক ওঠাপড়া হয়েছে, অনেক আঘাত পেয়েছো। কিন্তু সেই কারণে অন্যকে বিশ্বাস করতে ভুলে যাবে! এমনকি নিজের পরিবার, বেস্ট ফ্রেন্ডকেও? তুমি যে নিজের পিসিকেও ভরসা করে সবটুকু বলতে পারোনি ঐশী…তোমার ক্লিপ, অবিনাশের স্বরূপ, কিচ্ছু না!”
অতনুর শব্দজালে ঐশী ততক্ষনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। কোলের উপর ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হাতটাও চলে এসেছে কপালের কাছে। “আমি বলিনি, কারণ মা জানতে পারলে কেলেংকারী হয়ে যাবে অতনু। আর আত্মীয়-স্বজন জানতে পারলে তো কথাই নেই! বিধবা হওয়ার পর থেকেই যা রূপ দেখিয়েছে তাতে…”
“সত্যি কথা কোনদিন চাপা থাকে ঐশী?” ওর কথার মাঝেই বলে উঠলো অতনু। তোমার কেসটা যত সাকসেসের দিকে এগোবে তত মিডিয়ার প্রচার পাবে। এথিক্যাল ইস্যুতে ভিক্টিমের ফটো না ছাপালেও পরিবার পরিজন তো নিশ্চই জানতে পেরে যাবে। মানছি তুমি ভিকটিম, কিন্তু এভাবে মুখ লুকিয়ে আর কতদিন?”
“বিয়েটা আমি আমার পছন্দ করেছিলাম অতনু, মায়ের মতের বিরুদ্ধে।” মনের ভাবটা উগরে দিয়ে বলে উঠলো ঐশী,”মা এতশত জানতে পারলে কি করে বসবে আমার জানা নেই!”

“তুমি কি সবটা জানার পর অবিনাশের কাছে গিয়েছিলে, নাকি নিজের অজান্তেই অবিনাশের মুখোশটা দেখে ভালোবেসেছিলে, কোনটা?” বোঝানোর ভঙ্গিতে ফের বলে উঠলো অতনু,”খামোখা নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করো। তোমার মার ইগো ক্ল্যাশের ওষুধ জানা নেই আমার। কিন্তু এইটুকু বলতে পারি অবিনাশকে পছন্দ, অপছন্দের বেসিসে তোমার ফল্ট নেই। দিস বাস্টার্ড জাস্ট ওয়ান্ট টু ইউজ ইউর ট্রাস্ট।”
কথাগুলো শুনেও চুপ করে রইলো ঐশী। কতশত কথা জমে আছে বছরের পর বছর, নিজের মনে পড়ে থাকতে থাকতে আস্তাকুঁড় হতে বসেছে ক্রমাগত। কিন্তু কাউকেই বলার ইচ্ছে জাগেনা আর।

“মাছের কাঁটা গলায় বিধলে কি মাছ খাওয়াই ছেড়ে দাও? নাকি আরো সাবধানে কাঁটা বাছতে শুরু করো, কোনটা? ঐশীর নিচু হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো অতনু।
“মানে?” অতনুর কথার বিন্দুবিসর্গ বুঝতে না পেরে বলে উঠলো ঐশী। ওর মাথাটা এলোমেলো ভাবনাচিন্তায় তালগোল পেকে গিয়েছে ততক্ষনে।
“একজনকে অন্ধবিশ্বাস করে ঠকে গেলে সব্বার উপর বিশ্বাস উঠে যাওয়া উচিত? নাকি বারে বারে পরখ করে নিয়ে খাঁটি মানুষকে যাচাই করেই বিশ্বাস করা উচিত, কোনটা?” উডেন টেবিলে নিজের হাত দুটো রেখে সপ্রতিভ ভঙ্গিতে বলে উঠলো অতনু,”অন্ধবিশ্বাস, আর অবিশ্বাস…দুটোই কিন্তু মানুষভেদে সমান ক্ষতিকারক!”
অতনুর সহজ সরল, স্পষ্ট বক্তব্য শুনে ঐশী ধীরে ধীরে মুখ তুলে চাইলো উল্টোদিকে বসে থাকা মানুষটার দিকে। হতাশার কুয়াশা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে নতুন দিশার মুঠো মুঠো বিন্দু।
“আমি আগামীকাল বেগুসরাই যাবো। হাতে কোনো স্ট্রং এভিডেন্স না থাকলেও আমার সিক্সথ সেন্স বলছে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে সেখানে।” ঐশিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো অতনু,”বাট হ্যাঁ, ভুলেও ভেবোনা তোমার কেস হওয়ার কারণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা আমার ডিউটি। এখানে আমি, তুমি, সে, তারা নেই!”
এমন সময় মুঠোফোনটা সশব্দে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতেই তড়িঘড়ি ব্যাগের চেনটা খুলে ফেললো ঐশী। নিশ্চই মা ফোন করেছে, এতো রাত হয়ে গিয়েছে। চিন্তা করছে বোধহয়!”
কিন্তু ডিজিটাল স্ক্রিনে আননোন নম্বরটা দেখে ভ্রূ দুটো কুঁচকে গেলো ওর। এই অসময়ে আবার কে!
দ্রুতহাতে রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই ওর হৃৎপিণ্ডটা লাফ দিয়ে উঠলো যেন,
“হ্যালো আমি অরিন্দম বলছি, তুই নাকি বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিলিস!”

~তুই কোথায়?

~ নিজের বাড়িতে, আবার কোথায়! আর তুই কি শুরু করেছিস? পাগলের মত বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিলিস কেন?”

ক্রমশ
আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/177181510728947/

© সম্প্রীতি রায়
আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here