বিধবা বিবাহ’ পর্ব-১৫

0
973

#বিধবা_বিবাহ (পঞ্চদশ পর্ব )
“দিনরাত্তির কাজকর্ম ফেলে ঘরের মধ্যে বউয়ের শায়ার তলায় ঢুকে বসে থাকবো নাকি! নাকি তোর মত এসি রুমে বসে বসে টেবিলের নিচ থেকে পয়সা উসুল করবো, কোনটা?”
অপ্রত্যাশিত ভাবে অরিন্দমের তরফ থেকে ফোনকল আসায় উত্তেজনার আবেশে চেয়ার ঠেলে মেঝেতে দাঁড়িয়ে পড়েছিল ঐশী। কিন্তু এমন সময় অরিন্দমের কুৎসিত বাচনভঙ্গিতে প্রায় চিল্লিয়ে উঠলো ও,”মুখের ভাষা ঠিক কর। ভুলে যাসনা এটা কোনো কলেজের ক্যান্টিন না… সুতরাং..”
“আমার না হয় মুখের ভাষা নোংরা! কিন্তু তোর কাজকর্ম, মানসিকতা যেন ধোয়া তুলসীপাতা?” বিন্দুমাত্র দমে না গিয়ে ঐশীর কথার মাঝখানেই বলে উঠলো অরিন্দম।”বিজনেস ট্রিপে গেলেও কি পুলিশের অনুমতি নিয়ে যেতে হবে নাকি! আবার মার্কেটে ছড়াচ্ছিস আমি নাকি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম? একজন ভদ্রলোকের বাড়িতে পুলিশ পাঠাতে লজ্জা করলনা তোর?”
“ভদ্রলোক!” চরম বিস্ময়ে বাক্যস্ফূর্তি হলোনা ঐশীর। অরিন্দমের অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে এরূপ দুর্ব্যবহারে খেই হারিয়ে ফেলল মাঝপথেই।
“শোন, এখনও ভালোভাবে ব্যবহার করছি, এর ফায়দা নিতে মাথায় চড়ে বসিসনা যেন। তবুও একটা কথাই বলবো…”ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা উত্তপ্ত সিসার মত বাক্যবাণগুলো ধেয়ে আসলেও বন্ধ হয়ে গেলো মাঝপথেই। কারণ ঐশীর মানসিক উত্তপ্ততার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে দেখে মুঠোফোনটা হ্যাচকা টানে কেড়ে নিয়ে কলটা ডিসকানেক্ট করে দিয়েছে অতনু।
“এটা কি করলে তুমি!” প্রচন্ড রেগে ঐশী প্রায় চিল্লিয়ে উঠলো এবারে। কফিশপের এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকগুলো এবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকাচ্ছে ওদের দিকে। সেদিক থেকে চকিতে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে অতনু বলে উঠল ফিসফিসিয়ে,”তোমাকে তাতানোর চেষ্টা করছে বুঝতে পারছো না! কেন বোকার মত ফাঁদে পা দিচ্ছ? শান্ত থাকো প্লিজ। এতো সহজেই ধৈর্য হারালে চলেনা ঐশী!” বলে ঐশীর কাঁধে হালকা চাপ দিয়ে বসার ইঙ্গিত করে অতনুও বসে পড়ল চেয়ারে। এদিকে নাছোড়বান্দার মতো মুঠোফোনটা আবার বেজে উঠেছে ততক্ষনে। সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তড়িঘড়ি ব্যাগের চেনটা খুলে ফেলল অতনু। ক্ষিপ্রহাতে একটা ইয়ারফোন বের করে ছুঁড়ে দিলো ঐশির দিকে। ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি হেডফোনের জ্যাকটা নির্দিষ্ট জায়গায় গুঁজে একটা ইয়ারবাড নিজের দিকে টেনে নিল ঐশী। অতনু ততক্ষনে পকেট ডায়েরীটা বের করে পেনের ঢাকনাটা খুলে ফেলেছে। আরেকটা ইয়ারবাড নিজের কানে লাগিয়ে সতর্ক ভঙ্গিতে বসে আছে অরিন্দমের বক্তব্য শোনার আশায়।
“সরি, কলটা ডিসকানেক্ট হয়ে গিয়েছিল। নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে এখানে। এবার বল!” চোয়ালটা শক্ত করে অতনুর নির্দেশ পাওয়া মাত্র ঐশী বলে উঠলো এবারে। রাইটিং প্যাডে একমনে খসখস করে লিখে চলেছে অতনু।
“তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি বলতে পারবি?” অরিন্দমের ঝাঁঝালো কন্ঠস্বরটা এবার আছড়ে পড়লো অতনুর কর্ণপটহে। ছোট্ট প্যাডে লেখা শেষ করে কাগজটা ততক্ষণে অতনু এগিয়ে দিয়েছে ঐশীর দিকে।
“কলটা রেকর্ড করো..” ছোট্ট ছোট্ট হস্তাক্ষরে লেখা বার্তাটা পড়ে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে রেকর্ড বাটনে হালকা চাপ দিলো ঐশী।
“তোর কীর্তি নিজের মুখে বলে সময় নষ্ট করতে চাইনা আমি। তুই বল বাড়ি ফিরলি কবে? আর এতদিন গা ঢাকা দিয়েছিলিস কেন? পুলিশের ভয়ে?” হালকা তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে অতনুর নির্দেশ অনুসারে বলে উঠলো ঐশী। উল্টোদিক থেকে অতনু একমনে লিখে চলেছে ততক্ষনে।
“গা ঢাকা দেব কেন! বিজনেস ট্রিপে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু তোর এরকম স্টেপ নেওয়ার মোটিভ কি?” ওপ্রান্তে অরিন্দম বলে উঠলো এবারে।
“কোথায় গিয়েছিলিস বিজনেস ট্রিপে?” অতনুর নির্দেশমতো ফের বলে উঠল ঐশী। সাবলীল ভঙ্গিতে অরিন্দমের মিথ্যাটা শুনে ওর কপালে গাঢ় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
“ভালোই তো জেরা করতে শিখেছিস! দিনরাত পুলিশদের সাথে ঘষাঘষি করলে এটাই স্বাভাবিক, তাই না?” ফের ইঙ্গিতপূর্ণ কুৎসিত মন্তব্য ছুঁড়ে দিলো অরিন্দম। সেকথা শুনে দপ করে জ্বলে উঠতে গিয়েও চুপ করে গেল ঐশী। অতনুর সাবধানবাণীটা মনে করে চুপচাপ নিজের অপমানটা গিলে নিলো সে।
“আমাকে কেন ফোন করেছিস? নিশ্চয়ই কোন দরকারে?” সামনে লিখে দেওয়া কাগজটা পড়ে বলে উঠলো ঐশী।
“কোন হোটেলে যাবি? আই মিন তুই বলেছিলিস ফুল নাইট ডিলাক্স রুম ভাড়া করতে। যদিও তোর কথামত সোয়াপিং পার্টনার খুঁজে পাইনি। বাট আই উইল ট্রাই!” কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে বলে উঠলো অরিন্দম। কথাগুলো শুনে অতনু লেখা থামিয়ে বসে রইল কয়েকমুহুর্তের জন্য। মুঠোফোনের ওপ্রান্তে থাকা নোংরা মানুষটার নোংরা চক্রান্ত একজন পুলিশ অফিসার হওয়ার সুবাদে বুঝে ফেলেছে ততক্ষণে। মণ মণ শাক দিয়ে সুচতুর ভঙ্গিতে মাছের দুর্গন্ধ আটকানোর চেষ্টার কসুর রাখছেনা অরিন্দম। তাই ছলে বলে কৌশলে ঐশীকেই প্রত্যক্ষভাবে পারভারটেড স্লাট বলার চেষ্টা করে চলেছে সে।
“আমি তোকে হোটেলে ডেকেছিলাম? নাকি তুই আমাকে!” বিস্ময়ে রাগে ঐশীর ঠোঁটদুটো থরথর করে কেঁপে উঠেছে ততক্ষণে।”তুই কিন্তু এবার লিমিট ক্রস করছিস অরিন্দম! আমার কাছে চ্যাট হিস্ট্রি আছে ভুলে যাসনা।” রাগে কাঁপতে কাঁপতে কোনমতে জবাব দিয়ে উঠলো ঐশী।
“কিসের চ্যাট? কোথাকার চ্যাট? তোর সাথে কোনদিন চ্যাট করলাম আমি!”ওপ্রান্তে বিস্ময়কে সঙ্গী করে বলে উঠলো অরিন্দম।
“মানে?” প্রত্যুত্তরে ঐশী কিছু বলতে যেতেই মুঠোফোনটা ফের নিজের হাতে নিয়ে নিল অতনু। তারপর অরিন্দমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ডিসকানেক্ট করে সুইচ অফ করে দিলো সে।
“প্লিজ শান্ত হও ঐশী। আমি জানি এই লোকটাই তোমাকে নোংরা ক্লিপস পাঠিয়েছে, আমি নিজের চোখে দেখেছি এর মেসেজ, ভিডিও সবকিছু। তখনো কিন্তু একাউন্টটা ডিলিট হয়নি। রিমেম্বার ইট!” উল্টো দিকে মুখ নিচু করে বসে থাকা সুদর্শনা তরুণীর ফর্সা হাতের উপরে নিজের ভারী হাতটা চাপা দিয়ে বলে উঠলো অতনু। “আমাদের ফোর্স এইমাত্র খবর দিয়েছে অরিন্দম মিনিটপাঁচেক আগেই বাড়ি ফিরেছে।” নিজের চ্যাটবক্সটা ঐশীর চোখের সামনে ধরে অরিন্দম বলে উঠলো এবারে,”আর বাড়ি ফিরেই মে বি নিজের ফ্যামিলির কাছে শুনেছে পুলিশ এসেছিল। গা ঢাকা দেওয়ার সময় অরিন্দম কিন্তু ঘুণাক্ষরেও নিজের ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেনি।”
“কিন্তু অরিন্দম আমাকে দোষারোপ করছে কেন?”
অব্যক্ত কষ্টে যন্ত্রণায় ঐশীর চোখে জল চলে এসেছে ততক্ষণে।”আমি তো ওকে হোটেলে ডাকিনি! কেন ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে বদনামের চেষ্টা করা হচ্ছে?”
“কারণ ও তোমার ওয়েকে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করছে। সাথে আমাদের ডিপার্টমেন্টকেও ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।” ঐশিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল অতনু,”আই থিঙ্ক আমাদের ডিপার্টমেন্টের কাছেও তোমাকে খারাপ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে… ঠিক এইভাবেই!”
“কিন্তু কোন মোটিভে?” প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে উঠলো ঐশী।
“আমাদের কাছে কোন স্ট্রং এভিডেন্স নেই। এমনকি সেই ভিডিও অরিন্দমই পাঠিয়েছিল কিনা, তার কোনো প্রমাণ নেই, এভিডেন্স না থাকায় পরস্পরের উপর কাদা ছোড়াছুড়ি করাটা কি খুব টাফ?” ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো অতনু,”এই কারণেই তোমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, যদিও কোন লাভ নেই। কারণ অরিন্দমের কথার বেসিসে কোন ভিত্তি নেই, প্রমাণ নেই। কিন্তু লোকটা দুর্ধর্ষ হিউম্যান সাইকোলজি বোঝে এবং এপ্লাই করতে জানে, আর এটাও জানে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তোমাকে ধরাশায়ী করে দেওয়া সম্ভব।”
“তাহলে উপায়?” আশাহতের মতো ঐশী বলে উঠলো এবার।
“ওর বাড়িতে সঙ্গীতা গিয়েছে, আই মিন যার সাথে একটু আগেই থানায় কথা হচ্ছিলো তোমার। অরিন্দমের যাতায়াতের টিকিট, গেস্ট হাউস বা যে হোটেলে গিয়ে থেকেছে, তার ডিটেইল চেক করলেই ধরা পড়ে যাবে। ডোন্ট ওরি। পালাবে কোথায়!” আত্মবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলে উঠলো অতনু।
এমন সময় ওর বুকপকেটে রাখা অতনুর দামি হ্যান্ডসেটটা বেজে উঠলো সশব্দে। দ্রুত হাতে যন্ত্রটা অতনু নিজের হাতে নিতেই ঐশী ঝুঁকে পড়ল একেবারে সেই দিকে। সঙ্গীতা নামটা ডিজিটাল অক্ষরে ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে। ওর হাসি হাসি মুখটাও শোভা পাচ্ছে সেখানে।
“হ্যাঁ বলো। কোথায় গিয়েছিলো ও। কি কি ইনফো জোগাড় করতে পারলে?” স্বাভাবিক বন্ধুত্বসুলভ ভঙ্গিতে কথা বলতে থাকা অতনুর মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই কেমন ছন্দপতন ঘটলো ঐশীর মানসপটে। থানায় অতনুর সাথে হেসে হেসে কথা বলতে থাকা লেডি অফিসারের মুখটা ভেসে উঠলো ওর স্মৃতিকোটরে। মনে পড়ে গেলো কথা বলতে বলতে সঙ্গীতা নামের অফিসারের কড়ে আঙ্গুলে অতনুর আঙ্গুল ছুঁইয়ে যাওয়ার টুকরো স্মৃতি।
“কি হলো! কোথায় হারিয়ে গেলে আবার?” মুঠোফোনটা ফের পকেটে রেখে অতনু ঐশীর হাতে নিজের আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলে উঠলো এবারে।
“হ্যাঁ বলো, কি জানতে পারলে?” অতনুর স্পর্শে ঘোরভেঙে ঐশী ফিরে এলো বাস্তবের মাটিতে।
“সঙ্গীতার কাছে সব ইনফরমেশন প্রোভাইড করেছে লোকটা। পাবলিক হোটেল নয়, অরিন্দম ওর বন্ধুর প্রাইভেট কর্ণারে উঠেছিল। ওর ব্যবসার পার্টনারের বাড়িতে। সঙ্গীতা ওর বন্ধুর বাড়িতেও ফোন করে জানতে পেরেছে লোকটা সেখানেই উঠেছিল। বেশি দূরে নয়, শহর থেকে কাছেই।”একনিশ্বাসে বলে গেলো অতনু,”তবে আমার মনে হচ্ছে লোকটা স্রেফ মিথ্যে কথা বলছে। পুলিশের চোখে ধুলো দিচ্ছে।”
“কিভাবে?” ঐশী বলে উঠলো এবারে।
“বিজনেস পারপাসে গেলে কেউ নিজের মোবাইল নিতে ভুলে যায়? নাকি বাড়ির সাথে কানেক্শন বন্ধ করে? যত বড়ো বিজনেসম্যানই হোক না কেন, নিজের পরিবারকে ভুলে যাবে?” ঐশিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো অতনু,” আমার মনে হতে ইচ্ছাকৃত ভাবে মোবাইলটা বাড়িতে ফেলে গিয়েছে। যাতে আমরা লোকেশনটা ট্রেস না করতে পারি। একমাত্র ওই জিনিসটার সাহায্যেই যে নিখুঁত ভাবে লোকেশন ট্রেস করা যেত! তাই না? তাই আমার মনে হচ্ছে ওর বন্ধুর বাড়ি একবার গিয়ে কনফার্ম করে নেওয়া উচিত।” চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো অতনু,”মুখের কথায় বিশ্বাস করে লাভ নেই। লোকটা গভীর জলের মাছ!”
সেই কথা শুনে চুপ করে রইলো ঐশী। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর। কিচ্ছু না। বড্ডো ক্লান্ত লাগছে ওর।
“আরেকটা কথা, অরিন্দম পুলিশের কাছেও তোমার এগেইনস্টে ভুলভাল ইনফো দিয়েছে। যেটা বলে তোমাকে তাতানোর চেষ্টা করছিল আরকি।” নিজের ঘনঠাসা চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলে উঠলো অতনু।
“তুমি কবে যাবে ওর বন্ধুর বাড়িতে?” মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বলে উঠলো ঐশী। চিন্তাভাবনার আজগুবি বুনোটটা পাক খেয়ে উঠছে ক্রমাগত। লোকটার স্বরূপ ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে ওর চোখের সামনে। সাথে উন্মোচিত হচ্ছে সুনিপুণ বুদ্ধিমত্তা, সপ্রতিভতা।
বিজনেস ট্রিপের অজুহাতে অরিন্দম যে নিজের অন্তর্ধান রহস্য পূরণের চেষ্টা করছে, তা বলাই বাহুল্য।
“আগামীকাল সকালে অরিন্দম থানায় আসবে। ওকে জেরা করে বেরিয়ে পড়বো। তারপর সিধা বেগুসরাই।” উড়ন্ত আকাশযানের ভঙ্গি উঁচিয়ে বলে উঠলো অতনু। “জানিনা পড়শী রাজ্যের পুলিশ কতটুকু হেল্প করবে, বাট পিছু হটলে চলবেনা।”
“অরিন্দম থানায় আসবে? রাজি হয়ে গেল এত সহজেই?” প্রচণ্ড অবাক হয়ে বলে উঠলো ঐশী।
“সুচতুর ভঙ্গিতে লোকটা বোঝাতে চাইছে ও পালায়নি। স্রেফ ভদ্রমানুষের মতো নিজের কাজ সামলাতে গিয়েছিলো। এখন পুলিশের কাজে বেগরবাই করলে সন্দেহটা ওর উপরেই আসবে যে!” ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো অতনু,”তাই এখন যেনতেনপ্রকরণে নিজেকে সাচ্চা সাধু দেখাতেই হবে, কিন্তু এত বড়ো নাটকটা করার কি দরকার ছিল… লুকোচুরি না খেলে দিব্যি থানাতে আসতে পারতো প্রথমেই!” চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো অতনু।
ওর বক্তব্যের মাঝপথেই মুঠোফোনটা বেজে উঠলো এবারে। স্বভাবদোষে ফের অতনুর মুঠোফোনে চোখ চলে গেলো ঐশীর। ডিজিটাল অক্ষরে মায়ের আনসেভড নম্বরটা ভেসে উঠতেই বুকটা কেঁপে উঠলো ওর। মনে পড়ে গেলো অতনু বেশ কিছুক্ষণ আগেই ঐশীর ফোনটা সুইচ অফ করে দিয়েছে। উপরন্তু রাতও অনেক হয়েছে।
“কিন্তু মা কীকরে বুঝলো আমি অতনুর সাথে!” বিস্ময়টা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই অতনু ঐশীর দিকে মুঠোফোনটা এগিয়ে দিয়েছে ততক্ষনে।
“হ্যাঁ মা, বলো।” কলটা রিসিভ করে বলে উঠলো ঐশী। ওর মা সবিতাদেবী যে এতরাত অবধি বাইরে ঘোরাঘুরি পছন্দ করেনা, তা বলাই বাহুল্য।
“রোজ রোজ বুঝি এইজন্যই দেরি করে বাড়ি ফেরা হয় তাইনা? আজ আবার অফিসের দোহাই দিসনা মনি। আমি ভালোমতোই জানি তুই আজ অফিসে যাসনি!”

ক্রমশ
আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/177905060656592/

© সম্প্রীতি রায়
আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here