#বিধবা_বিবাহ(ষোড়শ পর্ব)
“বলি কোথায় গিয়েছিলিস তুই? কত রাত হয়েছে দেখেছিস?” কফিশপ থেকে শ্রান্ত ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে সবেমাত্র বাড়ির আঙিনায় পা রেখেছিল ঐশী, এমন সময় মায়ের কণ্ঠস্বরটা ভেসে আসতেই মাথাটা চট গরম হয়ে গেল ওর। জুতসই জবাবটা জিভের আগায় চলে এলেও বলার সুযোগ পেলনা ঐশী। কারণ সবিতাদেবী বলে উঠেছেন ততক্ষনে,”আজকাল ঘুরতে বেরিয়ে ফোনটাকেও বন্ধ রাখছিস? কোথায় যাচ্ছিস যে সমস্ত কানেকশন বন্ধ করে দিতে হয়?”
মায়ের কথা বলার ধরণটা ঠিক ভালো লাগলো না ঐশীর। অরিন্দমের নোংরা কথাগুলো তখনও মনমধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল বোহেমিয়ানের মত। উপরন্তু দিনভর ঘোরাঘুরিতে মেজাজটাও ঠিক সমে ছিল না ওর।
“ঘুরতে যাইনি আমি,থানায় গিয়েছিলাম!থানায়!”নিজেকে আর সামলাতে পারলনা ঐশী। উত্তেজিত ভঙ্গিতে মাকে উদ্দেশ্য করে একপ্রকার চিল্লিয়ে উঠলো সে। ঘনঘন শ্বাস পড়ার সাথে সাথে ওর নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠেছে। ঘেমো মুখে লালচে ছোপ পড়েছে উত্তেজনার দাপটে। কণ্ঠস্বরের ভঙ্গিমাতে স্পষ্ট প্রকাশিত হচ্ছে রাগ বিতৃষ্ণার অভিব্যক্তি। “আর দরকারেই ফোনটাকে বন্ধ রেখেছিলাম আমি। কখনও দেখেছো মোবাইল সুইচ অফ্ রাখতে? আর কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে অতনুর সাথে বেরোইনি আমি। বারবার উল্টোপাল্টা সন্দেহ করাটা প্লিজ বন্ধ করো মা!” ঐশীর মানসপটে তখন ভেসে উঠেছে বছর চার পাঁচেক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর পটচিত্র। কলেজ শেষে তখনকার ঐশী অবিনাশের হাত ধরে গোটা কলকাতা চষে বেড়াতো তখন। নিজের কাঙ্খিত পুরুষের রূপমোহে আবিষ্ট হয়ে বাড়ি ফেরার তাড়াটাও সেইভাবে স্পর্শ করতোনা ঐশীকে। ভুলে যেত মায়ের উৎকণ্ঠা, বাড়তে থাকা অপেক্ষার প্রহর। সাথে মুছে যেত খাবারের থালা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকা সবিতাদেবীর টুকরো জলছবি।
“সন্দেহ নয় রে মনি। চিন্তা হচ্ছিল আমার।” মায়ের কথা শুনে ঐশী ফিরে এলো বাস্তবের মাটিতে। “আর কি হয়েছে? থানায় কেন গিয়েছিলিস? বল মা আমায়!”
মায়ের এমন ব্যতিক্রমী রূপ দেখে রীতিমতো তাজ্জব হয়ে গেল ঐশী। মনমধ্যে কষে রাখা হিসেবটা ঠিক মিলছিল না যেন। দেরি করে আসার কারণে মায়ের মেজাজ দেখা তো নিশ্চিত ছিল… উপরন্তু ফোনটা বন্ধ থাকার কারণে বাড়িতে যে ছোটখাট লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যেতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আজ, এমন আকস্মিক উলোটপুরাণে হয়ে গেল খানিকটা থতমত খেয়ে গেল ও।
“কি হলো বল মা, থানায় গিয়েছিলি কেন আর অতনু’ই বা কেন ছিল তোর সাথে?” মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলেন সবিতা দেবী। মায়ের আচরণে এবার প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেলো ঐশী। ওনার চোখের ভাষাটাও রীতিমতো দুর্বোধ্য লাগছিল এবার। মাতৃত্বের স্বাভাবিক আচরণ দেখে খানিকটা অস্বস্তিবোধও জেগে উঠছিলো মনে মনে। সবটুকু খুলে বলার ইচ্ছে জাগলেও পুরনো স্মৃতিগুলো ফের কুলুপ এঁটে দিলো ওর মুখে।
“সেরকম কিছু নয়, পরে বলবো।” স্বভাবদোষে ফের আরেকবার নিজের কথাগুলো নিজেই গিলে নিল ঐশী। মায়ের এমন তাজ্জব রূপ দেখেও বিশ্বাস করার শক্তিটা যে পুনর্জাগরিত হচ্ছেনা ওর, তা বলাই বাহুল্য। অভ্যাস এত সহজে পরিবর্তন করা যায়না বৈকি।
“আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমোতে চাই, তোমরা খেয়ে নিও সময়মতো।” বলে মায়ের হাতটা ছাড়িয়ে ঐশী ধীর পায়ে এগিয়ে গেল নিজের ঘরের দিকে। পুবের মাঝারি ঘরটায় বসে বসে তখন একমনে সোয়েটার বুনছেন বাসন্তীলতাদেবী।
“মনি এলি?”ঐশীর পদশব্দ শুনেই হাতে রাখা উলকাঁটাটা খাটের এককোনে রেখে দিলেন তিনি। তারপর পায়ে পায়ে এগিয়ে এলেন ভাইঝির দিকে।”বৌদি বকাঝকা করেছে তোকে?”
“নাহ, কোথায় গিয়েছিলাম জিজ্ঞেস করছিল।” কাঠের র্যাকে কাঁধের সাইডব্যাগটা রাখতে রাখতে বলে উঠল ঐশী।”মাকে নিশ্চয়ই তুমিই জানিয়েছ আমি অতনুর সাথে ছিলাম?”
“তাছাড়া আর উপায় কি… অতনুই জানিয়েছিল তোরা কফিশপে যাবি। কিন্তু এত দেরী হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। অনেক বার ফোন করছিল বৌদি, কিন্তু কিছুতেই কানেক্ট করা যাচ্ছিলনা তোর নম্বরে, অগত্যা…” ভাইঝির পরনের পরিষ্কার জামাগুলো এগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলেন বাসন্তীলতাদেবী।
“দিনকাল যা খারাপ! আর অরিন্দম শুনলাম ফিরে এসেছে…”
“সবই যখন জানো আমাকে প্রশ্ন করার দরকার কি!এটাও নিশ্চয় জানতে অতনু পুলিশ অফিসার?” খানিকটা তীর্যক ভঙ্গিতে ঐশী বলে উঠলো এবারে। ওর মনমধ্যে তখন জেগে উঠেছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া অতনুর লুকোচুরি। বাসন্তীলতাদেবীও যে এই খেলার মধ্যে সামিল তা বলাই বাহুল্য। খানিকটা যেন রাগই জন্মে গেলো পিসির এমন আচরণে, নিজের অজান্তেই..
ভাইঝির প্রশ্নের উত্তরটা সরাসরি না দিয়ে চুপচাপ ঘরের কাজ সারতে লাগলেন বাসন্তীলতাদেবী। ঐশীর বাচনভঙ্গিতে খুব ভালোমতোই বুঝতে পারলেন মেয়ে রেগে আছে তার উপরে। কিন্তু ফের রাগিয়ে দেওয়ার লোভটা সামলাতে পারলেন না তিনি। দুমূহূর্ত চুপ করে বলে উঠলেন,”অতনুকে বলে দিয়েছিস তো বিয়ে করতে রাজি নয় তুই? আমি অতসব দায়িত্ব নিতে পারবোনা বলে দিলাম। প্রথমে কিন্তু তুমিই বিয়ে করবো বলে লাফাচ্ছিলে, এখন গেরোয় পড়েছ দেখে…”
“তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তো!” বিয়ে ভাঙার প্রসঙ্গটা সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়ে বলে উঠলো ঐশী। পিসির কথা শুনে বুকের বাম পাশে খানিক নাড়া দিয়ে উঠলেও কথার ফাঁদে পা দিলোনা কিছুতেই।
কিন্তু ভাইঝির জবাবে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধই করলেন না বাসন্তীলতাদেবী। আপনমনে ফের নিজের কাজ সারতে লাগলেন নিশ্চুপে।
“কি হলো, জবাব দাও, এমন করছো কানে কিছু শুনতে পাওনা তুমি…”খানিকটা রেগে গিয়ে ঐশী বলে উঠলো এবারে,”অতনু তোমার বান্ধবীর ছেলে, তুমি নিশ্চয় জানতে অতনু পেশায় একজন পুলিশ?”
“হু, জানতুম বৈকি, আমার সইয়ের ছেলে বলে কথা!” নিরবতা ভেঙে বাসন্তীলতাদেবী বলে উঠলেন এবারে। ঐশী যে এত সহজে ছাড়ার পাত্রী নন, সেটা তিনি বুঝে গিয়েছেন ততক্ষণে।
“তবে আমার কাছে কেন লুকিয়ে গিয়েছিলে পিসি?”খানিক অবাক হয়ে ঐশী বলে উঠলো এবার,”আমার কাছে লোকানোর কি ছিলো? তাছাড়া তুমি যে আমাকে সব কথাই শেয়ার করো।”
“হ্যাঁ করি তো! কিন্তু উপরতলা থেকে কড়া নিষেধ এলে কীকরে অমান্য করি?” সিদ্ধভাতে লঙ্কা ডলে বলে উঠলেন বাসন্তীলতাদেবী। সাদামাটা খাবারে খানিক ঝাল ঝাল স্বাদ না থাকলে গিলতে পারেননা তিনি। তাই লঙ্কা তার নিত্যসঙ্গী।
“মানে?” খাটে ফেলে রাখা ম্যাগাজিনটা একধারে সরিয়ে বলে উঠল ঐশী। দইকাতলার রেসিপিটা জ্বলজ্বল করছে পত্রিকার তেলচকচকে কাগজে।
“অতনু’ই বারণ করেছিল তোকে বলতে। তাই কথাগুলো পেটে গুড়গুড় করলেও বলতে পারিনি তোকে!” পিসির কথাগুলো শোনার পর ফের কোনো কথা ফুটলো না ঐশীর মুখে। ওর মনে অন্য চিন্তা ঘুরছে ততক্ষনে, চঞ্চল চোখটা বারে বারে চলে যাচ্ছে ম্যাগাজিনের চকচকে পেজে।
“আর ছেলেটাকে কিন্তু বলে দিস সাততাড়াতাড়ি। ডিসিশন যখন নিয়েই ফেলেছিস তুই…” বলে খালি হয়ে যাওয়া এঁটো থালাটা নিয়ে তিনি উঠে গেলেন কলপাড়ে।
“চেহারাটা ছোটোখাটো হলে হবে কি!এই মহিলার গাঁটে গাঁটে বুদ্ধি…” পিসির গমনপথের দিকে তাকিয়ে আপনমনেই বলে উঠলো ঐশী।
এমন সময় মুঠোফোনটা সশব্দে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে বসতেই ঐশী চোখ রাখলো ডিজিটাল স্ক্রিনে। সেভ করে রাখা অতনুর নাম্বারটা ভেসে উঠেছে সেখানে।
“বাড়ি পৌছে গিয়েছ তুমি?” কলটা রিসিভ করা মাত্র ওপ্রান্ত বলে উঠলো এবার,”আর মা কি কিছু বলেছে? আইমিন তখন ওইভাবে ফোন করলেন..”
“নাহ কিছুই বলেনি। চিন্তা করছিল বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছিল বলে, তাছাড়া ফোনটাও সুইচ অফ ছিল আমার।” ঐশী বলে উঠলো এবারে।
“যাক,ভালোই হলো। আমি তো প্রায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম হঠাৎ কি হলো। আর শোনো আগামীকাল সকাল ছটায় বেরোচ্ছি। ইচ্ছে আছে সিভিল ড্রেসেই খোঁজখবর চালাবো। সেইমতো
তিনদিনের সিকলিভ নিলাম ডিপার্টমেন্ট থেকে।”
“কাল সকালেই? তবে অরিন্দমকে জেরা কে করবে?” অতনুর প্ল্যানটা শুনে বলে উঠলো ঐশী।
“আমি ছাড়াও ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য অফিসাররা আছে তো! ওরাই সামলে নিতে পারবে।”একটা লম্বা হাই তুলে অতনু বলে উঠলো,”আচ্ছা,এবার রাখি কেমন? অনেক রাত হয়েছে। কাল ভোরে উঠতে হবে আমাকে…”
“এত তাড়াতাড়ি রেখে দেবে!”খানিকটা বিরক্ত ভঙ্গিতে আপনমনে বলে উঠলেও অতনুর কাছে প্রকাশ করলোনা ও। মনের কথাটা মনেই গিলে চুপ করে গেল বরাবরের মতো। অন্যপ্রান্তে থাকা মানুষটাকে কি করে বোঝাবে আরো অনেক অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে ওর… দুমুহূর্ত চুপ থেকে ভাবনাগুলো চট করে সাজিয়ে নিলো ঐশী, তারপর মনমধ্যে ঘুরতে থাকা প্রশ্নটা জ্যা মুক্ত তীরের মত বেরিয়ে এলো ওর মুখ থেকে,”কে কে যাচ্ছে তোমার সাথে? আই মিন তুমি নিশ্চয়ই একা যাচ্ছো না?” অবচেতন মনটা বিনাকারণেই জানান দিচ্ছে সংগীতাও যেতে পারে অতনুর সাথে। তাই সরাসরি জিজ্ঞেস না করে ত্যাড়াব্যাকা রাস্তাটাই অবলম্বন করলো ঐশী।
“আমি একাই যাচ্ছি। পার্সোনাল ট্রিপ তো! কেন বলতো?” খানিক অবাক হয়ে অতনু বলে উঠলো এবারে,”কোন অসুবিধা হলে বলতে পারো।”
অতনুর কথা শুনে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ঐশী। কতকিছুই যে ভেবে ফেলে এই অবুঝ মনটা…সংগীতা যাবে না শুনে খানিক স্বস্তি অনুভব করল মনে মনে, ভেবেছিলো অতনু ওকে নিয়ে যাবে নিজের সাথে।
“নানা, কোনো অসুবিধে নেই।” মনের ভাবটা সম্পূর্ণ গোপন করে বলে উঠলো ঐশী।”অরিন্দম ফিরে এসেছে, তাই চিন্তা হচ্ছে।”
“কিসের চিন্তা?”
“লোকটা এত বড় ক্ষতি করে দিল আমার। ফের যদি কোন নোংরা চক্রান্ত এঁটে বসে?” উৎকণ্ঠা ভরে ঐশী বলে উঠলো এবার।
“ও তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা ঐশী। তাছাড়া আমার সহজাত বুদ্ধি জানান দিচ্ছে তোমার ক্ষতি করা ওর উদ্দেশ্যই নয়!” ভরপুর আত্মবিশ্বাসের ভঙ্গিতে অতনু বলে উঠলো এবার।
“মানে?”কথাটার বিন্দুবিসর্গ বুঝতে না পেরে বলে উঠল ঐশী,”অরিন্দম তো ক্ষতিই চাইছে আমার। দিনরাত্রি ডিস্টার্ব করে, আমার বাথিং টাইমের প্রাইভেট ক্লিপ পাঠিয়ে…”
“কিন্তু ক্লিপটা কি আদৌ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েছে?এইসব ক্লিপের দাম মার্কেটে প্রায় কোটি ছাড়াবে।” ঐশীর বক্তব্যের মাঝপথেই বলে উঠলো অতনু,”আর লক্ষ্য করে দেখবে ছবিটা নেহাতই অস্পষ্ট, ব্লার করে দেওয়া আছে কোনো কোনো জায়গায়।সেখানে তোমার মুখ তো দূর! শরীরটাও বোঝা যাচ্ছেনা ঠিকঠাকভাবে। ক্ষতি করার হলে আসল ক্লিপটা বাজারে ছেড়ে তোমার নাম বদনাম করতে আদৌ কি তেমন কষ্ট হতো ওর? বেনামে একাউন্ট খোলা আজকাল কোন ব্যাপারই না!”
“আসল ক্লিপ বলতে?” অতনু বক্তব্যটা ঠিক যেন বুঝতে পারল না ঐশী।
“ক্যামেরাগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে আমাদের ফরেন্সিক টিম। অত্যন্ত উন্নত মানের ক্যামেরা সেগুলো। থার্টি টু মেগাপিক্সেলের। এমন ক্যামেরায় অমন ঝাপসা ছবি উঠে?” ঐশীকে উদ্দেশ্য করে পাল্টা প্রশ্ন করে উঠল অতনু।”এই ঘটনাতেই পরিষ্কার আসল ক্লিপটাকে কাটাছেঁড়া করেই তোমার কাছেই পাঠিয়েছে অরিন্দম…
হিউম্যান সাইকোলজিটা বোঝো! ক্ষতি করার হলে অন্য যেকোনো অশ্লীল ছবিতে তোমার মুখের ফটো মর্ফ করে দিতে পারতো। বা বেশি খাটনি না করে আসল ক্লিপটাই ছড়িয়ে দিত, দুটো অপশনের একটাও করেনি অরিন্দম।”
অতনুর কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেল ঐশী। সত্যিই তো, ওর বক্তব্য কোন ভুল নেই…ক্ষতি করার হলে এতদিনে ক্লিপটা নিশ্চয়ই ছড়িয়ে যেত মার্কেটে।
“আমার মনে হয় লোকটা স্রেফ তোমাকে হ্যারাস করতে চাইছে। অথবা বিয়ে!” মুহূর্তখানেক চুপ থাকার পর অতনু বলে উঠলো,” চ্যাট হিস্ট্রির প্রতিটা অক্ষর জানান দিচ্ছে তোমার প্রতি জেগে থাকা ওর দুর্বলতা। সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে তোমার কোন ক্ষতি করবেনা অরিন্দম। সুতরাং ভয় পেয়ে দোর এঁটে ঘরে বসে থাকার দরকার নেই। আর শেষমেষ এটাই বলতে চাই কোনো কারনে থানায় ডাকা হলে হাজিরা দিও, সঙ্গীতাকে বুঝিয়ে দিয়েছি সবকিছু, আশা করি ও সামলে নিতে পারবে ঠিকঠাক।”
“উফফ, সংগীতা আর সংগীতা! নামটা শুনতে শুনতে কান পচে গেল আমার।” বিতৃষ্ণাভরে আপনমনেই বলে উঠল ঐশী। এই নামটা অতনুর মুখে শুনতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছিল এবার।
“আর কিছু বলার আছে? রাত অনেক হয়েছে, কাল ভোরে উঠতে হবে তোমাকে।” অতনুর সাথে কথা বলার ইচ্ছেটা যে হঠাৎ করেই মরে গেল, তা বলাই বাহুল্য।
“ওয়ান মোর, অরিন্দম সপ্তাহদুয়েক আগেই বেগুসারাই এ গিয়েছিলো। ওর মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে জানতে পেরেছি আমরা। যদিও বরাবরের মতো বাড়িতে জানিয়ে গিয়েছিল বিজনেস পার্টনারের বাড়িতে যাচ্ছে।” হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো অতনু।”আশা করি বুঝতেই পারছ, এইবার মোবাইল বাড়িতে ফেলে রেখে গেলেও ওর গন্তব্য বেগুসারাইতেই ছিলো!”
“অবিনাশের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল?” ঘুরতে থাকা প্রশ্নটা করেই ফেলল ঐশী। কোনো অজানা কারণেই ওর মনে হচ্ছিল, অবিনাশের গাড়ি খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনাটা নেহাতই মিথ্যে। প্রথমত খাদে পড়ে যাওয়ার পর বডিটা পাওয়া যায়নি, দ্বিতীয়ত দিনকয়েক আগে অবিনাশের একাউন্ট থেকে লগইন করা হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে।
“সেটা যাওয়ার পরেই জানতে পারবো। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। রাখলাম, গুড নাইট।” কলটা ডিসকানেক্ট হওয়া মাত্র মুঠোফোনটা চার্জে বসিয়ে দিলো ঐশী।
“মনি,এখনো ঘুমাসনি?” কাচাধোয়া ম্যাক্সিটা নিয়ে সবেমাত্র বাথরুমের দিকে এগোচ্ছিল ঐশী। এমন সময় খানিকটা আনমনে থাকার দরুন সবিতা চক্রবর্তীর নিচু গলাটা শুনে প্রায় চমকে উঠলো ও।
“হ্যাঁ বলো মা, এই ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।” আমতা আমতা করে জবাব দিল ও, এত রাত্রে মায়ের অযাচিতভাবে আসার কারণটা বুঝে উঠতে পারলনা ঐশী। কারণ রাত্রির স্বল্পাহার সেরে সবিতাদেবী এইসময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জপধ্যান করতে।
“লাবনী বাড়ি ফিরে আসেনি, তোর দাদা আনতে গিয়েছিল ওকে শ্বশুরবাড়িতে। অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে কৃশানুকে। নিজের স্বামীকে ডিভোর্স দেবে বলছে…”
আগামী পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=181631566950608&id=114703953643370
আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/178610640586034/
ক্রমশ
© সম্প্রীতি রায়
আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই।