বিধবা_বিবাহ পর্ব-২১

0
880

#বিধবা_বিবাহ ( দ্বাবিংশ পর্ব)
উড়তে পুড়তে অতনু যখন বেগুসারাই থানার লোকাল ইনচার্জের কাছে গেল তখন দিনের আলো একটু একটু করে মরতে শুরু করেছে। পশ্চিমে ডুবতে থাকা সূর্যের ম্রিয়মানতা দেখে ওর মনে পড়ে গেল সেই সাতসকালে পাঁচ ছটা পরোটা খাওয়ার পর আর কিচ্ছুটি মুখে দেওয়া হয়নি। দিনভর দৌড়াদৌড়ি আর মায়ের শরীর খারাপের দুশ্চিন্তা খানিকটা কাহিল করে দিলেও অরিন্দমের কানেক্টিভ লিংক খুঁজে পাওয়ার পর অবসাদের করাল থাবাটা সহজে গ্রাস করতে পারছেনা অতনুর দৃঢ়চেতা মনটাকে। বেগুসারাই এসে প্রথম দিনেই এতটা সাফল্য পাবে সেটা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। কিন্তু অবচেতনে জেগে থাকা মনটা জানান দিচ্ছে অনেককিছু লুকিয়ে আছে অখ্যাত আপাতনিরীহ এই শহরে। তাই ইচ্ছে না থাকলেও খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিকে…
“নমস্কার..” থানায় ঢুকতেই উইনিফর্মড পুলিশ অফিসারটি উল্টোদিকে এগিয়ে রাখা চেয়ারটির দিকে ইঙ্গিত ছুঁড়ে দিতেই ধপ করে বসে পড়ে অতনু। ওর শ্যামবর্ণ তেলতেলে মুখে উঁকি দিচ্ছে গোটা দিনের না কামানো দাঁড়ি।
খোঁচা খোঁচা গালে হাতটা বুলিয়ে অতনু বলে উঠলো,”আজ, আমাদের স্টেট থেকে একজন জুনিয়র অফিসার আসছেন। আমার অ্যাবসেন্সে কাজটা ওই সামলাবে। ততক্ষনে আমাকে আরো কিছু…”

“এই দেখুন, মনু যাদবের বাড়ি থেকে টোটাল চল্লিশটা সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। সাথে কুড়িটা ব্র্যান্ডেড মোবাইল, অগুন্তি ক্যামেরা, মেমোরি কার্ড।” একের পর এক ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির ফটো দেখাতে দেখাতে বলে উঠলেন অফিসার।
“কুড়িটা মোবাইল!” অফিসারের কথা শুনে নিজের অজান্তেই প্রায় চিল্লিয়ে উঠলো অতনু,”সামান্য এক ঠিকাকর্মী কুড়িটা মোবাইল পারচেস করলো কি করে!”
“আজ্ঞে পারচেস করেনি।” স্পষ্ট ঝরঝরে বাংলা ভাষায় বলে উঠলেন অফিসার।
“তবে?” কৌতূহল দমন করতে না পেরে ফের বলে উঠলো অতনু। ওর মনের মধ্যে ততক্ষনে সব তালগোল পেকে গিয়েছে। নিজের চাকুরীজীবনে এই প্রথম এত জটিল একটা কেস হ্যান্ডেল করছে সে। তাও আবার শূন্য থেকে… একের পর এক ঘটনাপ্রবাহের দরুন অরিন্দমের তীক্ষ্ম বুদ্ধির তারিফ না করে পারলো না ও। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী, সামর্থবান হলে যে প্রতিযোগিতার মজা বেড়ে যায়, তা বলাই বাহুল্য…

“বেশিরভাগই চুরি করে আনা হান্ডসেট। স্থানীয় মানুষদের পকেটকেটে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা…” হালকা গলাখাকারী দিয়ে বলে উঠলেন অফিসার,”তারপর সিম ব্লক করা বা থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করানোর আগেই মোটা টাকার মারফতে ফোনের মালিকের হ্যান্ডসেট থেকে সোশ্যাল সাইটে ভিডিও আপলোড, প্রতিটা মোবাইলে একাধিক জিমেইল একাউন্ট, পাঁচ ছটা সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট। প্রতিটা একাউন্ট থেকে নতুন নতুন ভিডিও আপলোড করা হচ্ছিলো।
ফলশ্রতিতে চুরি যাওয়া মোবাইলের মালিকের ঘাড়ে সব দোষ এসে পড়ে এদের জন্য..”
ভিডিও বলতে যে কি প্রকার ভিডিও বলা হয়েছে, সেটা ভালোমতোই বুঝলো অতনু। তারপর খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলো সে। বোধহয় নিজের মনের মধ্যে গ্যাংটার একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিল আপ্রাণভাবে। কি দুর্ধর্ষ বুদ্ধি! ভিডিও আপলোড করলেও মূল চক্র রয়ে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে, কিন্তু একজন নিরীহ মানুষের সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে উঁচু নিচু সব মহলে। সমাজের সামনে আত্মসম্মান হারানোর ভয়ের পাশাপাশি পুলিশি টানাপোড়নে জীবন হয়ে উঠবে দুর্বিষহ।
“গ্রামগঞ্জের অল্পশিক্ষিত মানুষ তো! থানায় এসে রিপোর্ট লেখাতে লেখাতে সময় নিয়ে নেয় অনেক। তার মধ্যেই এই গ্যাংয়ের লোকজন লোকাল সাপ্লায়ারকে ভিডিও সাপ্লাই করে ঘুরে বেড়ায় নিশ্চিন্তে। তারপর হাতবদল হয়ে ভিডিও চলে যায় দেশ দেশান্তরে। এই দেখুন কিছু ভিডিও এর স্যাম্পেল।” বলে সুনির্দিষ্ট একটা মেমোরি কার্ড অফিসার এগিয়ে দিলেন অতনুর দিকে।”সব কটা মেমোরি কার্ড ঠাসা এজ রেস্ট্রিক্টেড ক্লিপে..এটাই এদের ব্যবসা।”
অফিসারের কাছ থেকে চিপটা নিয়ে খানিক নড়াচড়া করলো অতনু। হাজার হাজার মানুষের সর্বনাশের সাক্ষীস্বরূপ ছোট্ট জিনিসটা হাতের তেলোয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে করতে আচমকাই গাটা কেমন গুলিয়ে উঠলো ওর। মনে পড়ে গেলো ঐশীর ফোনে আসা স্নানের অস্পষ্ট দৃশ্য। এই চক্রান্তে কতশত মানুষের জীবনের গোপনতম অধ্যায়টি উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে নিজের অজান্তেই।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেমোরি কার্ডটা অফিসারের দিকে এগিয়ে দিল অতনু, তারপর বলে উঠলো,”এতটা কমসময়ে এত বড়ো জটিল তদন্তের অগ্রগতি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। ভাগ্যিস…”
“এই তদন্ত বিগত তিনবছর ধরে চলছে, তিনবছর মোটেই কম সময় নয়।” অতনুর কথার মাঝপথেই বলে উঠলেন অফিসার। তারপর চিপটা যথাস্থানে রাখতে রাখতে লক্ষ্য করলেন অতনুর কুঞ্চিত পুরুষালী ভ্রূযুগলের দিকে। “আমি আসার আগে যিনি এই কেসের দায়িত্বে ছিলেন তাকে বদলি করিয়ে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আশাকরি বুঝতেই পারছেন মহিলা আত্মহত্যা না করলে অন্যান্যবারের মতো এইবারও ফাইল বন্ধ হয়ে যেত আর…”
“তারমানে সরকার কেসটাকে ধামাচাপা দিতে চাইছে তাই তো?” কঠোর বাস্তবটা নিজের অজান্তেই স্বভাবগুণে মুখ ফস্কে বেরিয়ে এলো অতনুর। আধুনিক সমাজের গোপনতম কলঙ্ক অধ্যায় সর্বসমক্ষে উগরে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ না হলেও নিজেকে সামলাতে পারলো না ও।
অতনুর বক্তব্য পুরোপুরি সমর্থন করলেও নিজেকে ভাঙলেন না অফিসার। হ্যাঁ, না বাচক মিশ্রিত ভঙ্গিতে এদিক সেদিক মাথাটা নাড়িয়ে নিজের পিঠ বাঁচাতে বলে উঠলেন তিনি,”শুধু একে অপরের গায়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে লাভ কি বলুন, সরকার যতই চেষ্টা করুক এই ব্যবসা থামানো অতটাও সহজ নয়। দেশের যুবসমাজের কান্ডারী কিশোর কিশোরীরাও যদি এই চক্রে যুক্ত থাকে তবে…”
“যুবসমাজ!’ অফিসারের বক্তব্যের মাঝপথেই বলে উঠলো অতনু,”কিন্তু মনু যাদব তো প্রায় মধ্যবয়স্কই বলা চলে।”
“যাদের দেহশিল্প ব্যবহার করে ভিডিওগুলো বানানো হয় তারা অল্পবয়সীই। কাঁচা টাকার লোভে আসা স্কুল, কলেজ পড়ুয়া নিজেকে বিলিয়ে দেয় এই চক্রে। দিনের পর দিন এই ব্যবসার চাহিদা বেড়ে চলেছে তাই পয়সার লোভ দেখিয়ে এই জেনারেশনকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।” টেবিলে পড়ে থাকা পেপারওয়েটটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে উঠলেন অফিসার,”কোনো রোগভোগের ভয় নেই, মুখ লুকিয়ে শুট চলার কারণে বাড়িতে ধরা পড়ারও ভয় নেই। শুধু লাভই লাভ…”
অফিসারের কথা শুনে যেন খেই হারিয়ে ফেললো অতনু। সামান্য কয়টা পয়সার লোভে এই শ্রেনী যুবসমাজকেও ব্যবহার করতে পিছু হটছে না! এতটা নিচ মানসিকতা! পয়সার লোভ দেখিয়ে যুবসমাজকে অন্ধকারে টেনে আনা, প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজের পরিবারকে পণ্য করে তোলা..এই পরিধি আর কতদূর!
“এতগুলো সিমকার্ড, একাউন্ট ব্যবহার করে পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য কম চেষ্টা করেনি মনু যাদব লোকটা। কিন্তু আমিও যেমন তেমন বান্দা নই। যেসব নাম্বারে কমপক্ষে দশবারের বেশি ফোন করা হয়েছে তাদের একটা লিস্ট বার করেছি। যদিও সবকটা নাম্বার কাদের কাদের, তা আইডেন্টিফাই করতে পারিনি এখনো। তবে খুব শিগগির লিস্ট পেয়ে যাবো। আর চ্যাটবক্স থেকে ডিলেট করে দেওয়া সমস্ত মেসেজও রিকভার করে ফেলেছি।” বলে কয়েকটা প্রিন্টেড কয়েকটা কাগজ এগিয়ে দিল অতনুর দিকে। চ্যাটবক্স অথরিটির মাধ্যমে মুছে ফেলা বার্তা যে পুনরুদ্ধার করা যায়, তা বলাই বাহুল্য।
কাগজটা নিজের হাতে আসামাত্র প্রায় হামলে পড়লো অতনু। একের পর এক নম্বর দেখার পালা চলছে তখন পূর্ণগতিতে। তীক্ষ্মদৃষ্টিতে একের পর এক নম্বরে চোখ বুলোতে বুলোতে অতনুর চোখ আটকে গেলো সেইদিকে। “অফিসার একটা পেন্সিল দিন তো!” বলে এগিয়ে দেওয়া কাঠ পেন্সিলটা হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে সুনির্দিষ্ট সেই নম্বরে আন্ডারলাইন করে দিলো সে। তারপরে আরো আরেকটি নম্বরে…

“নাইন এইট সেভেন থ্রি ফাইভ ফোর..এই নম্বরটা মনু যাদবের নামে রেজিষ্টার করা।” সুনির্দিষ্ট প্রথম নম্বর আইডেন্টিফাই করে বলে উঠলো অতনু।”যদিও নম্বরটা অরিন্দম ভট্টাচার্য নামে একজন ব্যবহার করতো, যে কিনা আমার ফিয়ান্সে মিস ঐশী চক্রবর্তীকে এই নম্বর দিয়ে নিয়মিত ফোন করে বিরক্ত করতো। ইনফ্যাক্ট ওর কিছু স্নানরত অশ্লীল দৃশ্যও ক্যাপচার করে পাঠিয়েছিল।”
“সেকি! তারপর?” প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে উঠলেন অফিসার।
“একাউন্টটা ডিলেট করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই নম্বরটা দিয়েই মনুর প্রয়াত স্ত্রীকে ফোন করা হতো, সুতরাং কলটা যে খোদ অরিন্দম ভট্টাচার্যই করতো সেটা বুঝতে পারছেন আশা করি। আর কিছুদিন আগেই মনু যাদবের সিমের টাওয়ার লোকেশনের কয়েক মিটারের মধ্যে এই নাম্বারটিও ছিল।”

“নাইন এইট সেভেন থ্রি ফাইভ ফোর…” প্রথম নাম্বারটা বিড়বিড় করতে করতে বলে উঠলেন অফিসার,”মানে মনু যাদবের দ্বিতীয় নম্বর অরিন্দম ব্যবহার করতো পুলিশকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য…
কিন্তু আপনারা ওকে গ্রেফতার করেননি কেন?”

“কারণ নম্বরটা আলটিমেটলি মনু যাদব এর নামে রেজিস্টার করা। তাই অরিন্দমই ফোনটা করেছে কিনা প্রমাণ ছিলনা। কিন্তু কথায় বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি। তাই শুরুতে কানেকটিভ লিংক খুঁজে না পেলেও কাজটা আপনিই সহজ করে দিলেন..” বলে আন্ডারলাইন করা দ্বিতীয় নাম্বারে আঙ্গুল রাখল অতনু,”সেভেন ফাইভ ফোর সিক্স… এই দ্বিতীয় নাম্বারটা অরিন্দমের নামে রেজিষ্টার করা। যার সাথে মনু যাদব এই মাসে প্রায় সাতশো মিনিট কথা বলেছে।” বলে কাগজটা এগিয়ে দিল ওর দিকে। তারপর সুনির্দিষ্ট আরেকটি নম্বরের দিকে নির্দেশ করে বলে উঠলো,”এই তৃতীয় নম্বরটা মিস ঐশী চক্রবর্তির, আমার ফিয়ানসের। যাকে অরিন্দম প্রাইভেট ক্লিপ পাঠিয়ে বিরক্ত করতো। যদিও এই কাজে মূল পান্ডা ছিলো ঐশীর নিজের স্বামীর অবিনাশ, ওই লোকটাই নিজেদের স্নানঘরে ডেকরেশনের অছিলায় ক্যামেরা বসিয়েছিল।” বলে এভিডেন্স এর ফটোগুলো অফিসারের দিকে এগিয়ে দিলো অতনু। ওর মনে তখন গোটা চক্রের জালটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, পড়শী রাজ্যের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই নীলচক্রের সাথে জড়িত দুইজন আর কেউ নয়। ভ্রাতৃত্ব নামক পবিত্র সম্পর্কে যুক্ত থাকা অরিন্দম, অবিনাশ দুইজনেই…মনু যাদবের সঙ্গে ভট্টাচার্য বাড়ির ছোটছেলের যোগাযোগের সূক্ষ্ম বাঁধনটিই প্রমাণ দিচ্ছে যে অরিন্দম খোদ এই চক্রের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আর স্নানঘরে দামি ক্যামেরা লাগানোর কারণে অবিনাশও এই কর্মকাণ্ডে লিপ্ত।
“কিন্তু অরিন্দম ঐশীর কাছে কেবলমাত্র দাদার নামেই কুৎসা রটালো কেন…ও যে নিজেও এই দোষের সমান ভাগীদার।” বস্তুত সাইকোলজিক্যাল
অ্যাসপেক্টে অরিন্দমের চরিত্রের এই দিকটি কিছুতেই উন্মোচিত হচ্ছিলনা অতনুর সম্মুখে। পরিবারের এক সদস্য যে অন্য আরেকজন সদস্যের নামে এরূপ কুৎসা ছড়াতে পারে সেটা যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলনা ওর। এতদিন ধরে অরিন্দমকে স্রেফ বিকৃতমস্তিষ্কের পুরুষ মনে হলেও লোকটা যে আদতে এই চক্রের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, সেটা ভাবতে যেন খানিক কষ্টই হচ্ছিলো তার…
এমন সময় টেবিলের মধ্যেখানে রাখা টেলিফোনটা কর্কশ শব্দে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতেই কথোপকথনে সাময়িক ছেদ পড়ল। অতনুকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে কানে রিসিভার ঠেকালেন অফিসার।
সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে চোখ বোলাতে শুরু করলো অতনু। কন্টাক্ট লিষ্টে ঐশীর নামটা থাকার সুবাদে ফ্রেন্ড সাজেশনে ঐশী চক্রবর্তী নামটা দেখাচ্ছে। খানিক অন্যমনস্ক ভাবেই ওর ডিসপ্লে পিকচারগুলো দেখতে শুরু করলো অতনু। মনকাড়া ক্যাপশনে সাজানো ছবিগুলো দেখতে দেখতে বুঝে গেলো মেয়েটির ভাষাজ্ঞানের দক্ষতা অসাধারণ।
এমন সময় রিসিভার রাখার জোরালো শব্দে মনে জেগে ওঠা ক্ষণিক মুগ্ধতা কেটে গেলো ওর। উল্টোদিকে বসে থাকা অফিসারের চোখমুখ অপমানে লাল হয়ে গিয়েছে ততক্ষনে।
“এই শঙ্কর!” সামনের চেয়ারে বসে থাকা শান্তশিষ্ট পুলিশ অফিসারের মুখে এমন বাজখাঁই আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো অতনু। হঠাৎ কি হলো ভাবতে থাকলেও কূলকিনারা পেলোনা সে।
“চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মনু যাদব আমার টেবিলের সামনে চাই! তোদের যত লোক আছে সব কাজে লাগিয়ে দে..এইমাত্র বড়বাবু ফোন করেছিলেন আমাকে। যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করলেন। আমরা নাকি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছি, পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছি!” রাগে ক্রোধে বেগুনি হয়ে যাওয়া মুখ থেকে ফের চিৎকার বেরিয়ে এলো।
“আচ্ছা অফিসার আমি আসছি।” অফিসারের মেজাজ দেখে নমস্কারের ভঙ্গিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অতনু,”আর নম্বরগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারলে সঙ্গীতাকে জানিয়ে দেবেন প্লিজ। আগামীকাল আমার অবর্তমানে কেসটা ওই ইনভেস্টিগেশন করবে।”

থানা থেকে একরাশ খুশির ঝলক নিয়ে অতনু যখন বেরিয়ে এলো তখন সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। চারপাশে থাকা সুসজ্জিত দোকানঘর সেজে উঠেছে হরেকরকম আলোকে। কিশোর, কিশোরীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে সান্ধ্য উদযাপনে। ওদের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ওর। কে জানে এদের মধ্যেই হয়তো অজানা কেউ স্রেফ পয়সার লোভে এই চক্রের সাথে যুক্ত। সামান্য কিছু অর্থের লোভে নিজের সম্ভ্রম বিকিয়ে দিচ্ছে পর্দার অন্তরালে…

সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পাশে একটা হোটেলে ঢুকে চটপট খাবার অর্ডার করলো অতনু। তারপর খাবার সার্ভ হওয়ার পর চিকেন লেগ পিসে কামড় বসিয়ে সংগীতাকে মেসেজ করলো সে।
“অরিন্দমকে নিশ্চিন্তে গ্রেফতার করতে পারো। এভিডেন্স একটু পরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

———-

দুপুরের ভাতঘুম শেষে ঐশী যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে নামার পর প্রথমেই চোখ গেলো পাশে চার্জে বসানো মুঠোফোনের দিকে। নাহ্, অতনুর তরফ থেকে কোনো বার্তা আসেনি…
খানিক বিষন্ন হয়ে যাওয়া মনটা নিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য এগোতেই চোখে পড়লো বাসন্তীলতাদেবী পাটভাঙা শাড়ি পড়ছেন।
“কই যাবে পিসি?” খানিক অবাক হয়ে বলে উঠল ঐশী। বাসন্তিলতাদেবী যে সচরাচর কোথাও বার হননা তা বলাই বাহুল্য..
“আমার সইয়ের বাড়ি, শুনলাম অতনুর মায়ের শরীরটা খারাপ…” শাড়িতে সেফটিপিন লাগাতে লাগাতে বলে উঠলেন তিনি।
“আমিও যাবো…” এক অদ্ভুত আবদার মিশ্রিত কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো ঐশী। মনে পড়ে গেলো বছরদুয়েক আগে অবিনাশের বাড়ি যাওয়ার স্মৃতিগুলো।জীবনে প্রথম প্রেমিকের বাড়ি যাওয়ার কারণে যে এক অদ্ভুত ভালোলাগা, উৎকণ্ঠায় মনটা আবিষ্ট হয়ে ছিল তা বলাই বাহুল্য।
“তবে রেডি হয়ে নে..” পিসির অনুমতি পাওয়া মাত্র পছন্দের কুর্তিটা নিজের দিকে টেনে নিল ঐশী। তারপর লাফাতে লাফাতে ঢুকে গেলো স্নানঘরে।

ক্রমশ
আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/184463516667413/
©সম্প্রীতি রায়
আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here