বিন্নি ধানের খই পর্ব-২৬

0
2830

#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_২৬
#মিদহাদ_আহমদ

বাবা মারা যাওয়ার চার দিনের মাথায় আমার মা ও ছোট ভাই দুইটাকে নিয়ে আসিফ ও আমি শহরের বাসায় চলে এলাম। অবশ্য এই প্রস্তাবনা আসিফ ই প্রথম দিয়েছিলো। সে বলেছে, এভাবে একা একা ছোট ছোট ভাই দুইটাকে নিয়ে মায়ের বাড়ি থাকা চলবে না। বাবা চলে যাওয়ার পর সে যেনো পুরোপুরি আমাদের পরিবারের অবিভাবকের জায়গাটা নিয়ে নিলো। আশেপাশের ঘরের চাচিরা আমাকে বলেছিলো, শ্বশুর বাড়িতে এভাবে মাকে নিয়ে গিয়ে ঘর সংসার করতে গেলে আমাকেই কথা শুনতে হবে। এ ভুল যেনো আমি না করি৷ আমার সদ্য হওয়া সংসারে নতুন কোন ঝামেলা নিয়ে গেলে আমার নিজের নাকি সমস্যা হবে। এই সেই নিয়ে তারা কত কথা শুনালো আমাকে! আমি কোন উত্তর না দিয়ে তাদের কথা শুনেছি শুধু। আমার এই শোনা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। জবাব দেয়ার কিছু নেই। আজ যদি আমার সাথে থাকা মানুষটা এই প্রস্তাবনা না রাখতো, তাহলেও আমার কিছু করার ছিলো না। আসলেই না। গ্রামের তারা তো জানে না যে আমি একা একাই আছি ঘর ভাড়া নিয়ে। এখানে আমার শ্বশুরের সংসার নাই৷ অনেকটা আমার মৌনসম্মতি ছিলো মাকে শহরে নিয়ে আসার বেলায়। আমার ছোট ভাই দুইটার মাথার উপরের ছায়া হয়ে উঠতে না পারলেও, সব সময় চোখের সামনে তো থাকবে! বাবার তো আর ছেলে হয়ে উঠা আমার হলো না। স্বপ্ন বুনার সময়ে হাতে চুড়ি পরে নিলাম। হায়রে জীবন আমার! আমার সদ্য বিধবা হওয়া মা তার ছোট ছোট ছেলে দুইটাকে নিয়ে যেনো একেবারে মরুভূমি দেখছিলেন। কোন পথ আর তার খোলা রইলো না। মাও এক প্রকার নিরব সম্মতিতে আমার সাথে চলে এলেন। বুঝতে পারলাম, মায়েদের কাছে যেকোন মূল্যেই তার সন্তানের ভালো থাকাটা প্রধান ধর্ম হয়ে উঠে৷ তারা বিছার করে না এর আগেপিছে কি হবে। গ্রামের লোকেরা ঠিকই আমার অগোচরে মায়ের কানে কানে বলেছে, অসম্মানের ভাত কি মায়ের পেট দিয়ে যাবে আমার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে? মা সব জেনেও নীরবে শুধু নীরব সম্মতি দিয়েছিলো।

আমাদের এক রুম আর এক ডাইনিং রুমের বাসায় আমার মা ও ছোট ছোট ভাই দুইটার জায়গা হলো ডাইনিং রুমে। আসিফ বাসায় এসেই বাইরে গিয়ে জাজিম বালিশ নিয়ে এলো। সেদিন রাতে ঘুমানোর আগে আসিফ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

‘তোমার পড়াশোনার অনেক শখ ছিলো তাইনা নুপুর?’

‘হ্যাঁ। জানো আসিফ, আমাকে নিয়ে আমার বাবা অনেক স্বপ্ন দেখতেন। আমাকে দুই চোখ দিয়ে আমার বাবা অনেক বড় কোথাও কল্পনা করতেন। গ্রামের মানুষদের বলে বেড়াতেন, তার মেয়ে একদিন তার মুখ উজ্জ্বল করবে৷ কিন্তু দেখো, আজ আমার বাবা আমাকে একা রেখে, একা সংগ্রামের রাস্তায় ঢেলে চলে গেলেন। এতো দূরে, এতো দূরে যেখানে গেলে আর কেউ কারো কাছে ফিরে আসে না।’

আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। আসিফ আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘সব পূর্ণ হবে। সব। কারো স্বপ্ন অপূরণ থাকবে না। কারোর ই না।’

পরেরদিন আসিফ বাজার থেকে ফিরে এসেই আমাকে সেই সুসংবাদ জানালো। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে আমার ছোট ভাই দরজা খুলে দিলে প্রথমেই আমার ছোট ভাইকে কোলে তুলে ঘরে ঢুকলো সে। আমার মায়ের হাতে মিষ্টির বক্স ধরিয়ে দিয়ে আমাকে ঘরে তড়িঘড়ি করে একটা মিষ্টি আমার মুখে পুড়ে দিলো। আমার সদ্য বিধবা হওয়া মা আসিফের এই খুশি দেখে আসিফকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘কী হয়েছে বাবা?’

আসিফ আমার মাকে পায়ে ধরে সালাম করে বললো,

‘মা আমি চাকরি পেয়েছি।’

নুপুর জানো, আমি সিভি দিয়ে রেখেছিলাম আমার ফ্রেন্ডের কাছে। হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর একটা পোস্ট তাদের হোটেলে খালি ছিলো। ম্যানেজারের পোস্টটা সরাসরি আমি পেয়ে গেলাম। অবশ্য এর জন্য আমার কোয়ালিফিকেশনের প্রয়োজন হয়েছে৷ আজ সকালেই ছিলো ইন্টারভিউ। কাওকে না জানিয়েই আমি ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছি। ভেবেছি হবে না হয়তো। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে এমন সংবাদ আমি পেয়ে যাবো, ভাবতেই পারিনি। স্টার্টিং বেতন ষোল হাজার টাকা। আমার ভাবতেই কেমন জানি খুশি খুশি লাগছে।’

আসিফের এই খুশি দেখে আমি বিমোহিত হয়ে গেলাম। যেই আসিফের এক সময়ের হুইস্কির বোতলের দাম ছিলো ষোল হাজারেরও বেশি, সেই আসিফ আজ কিনা ষোল হাজার টাকা বেতনের চাকরি পেয়ে খুশি মানাচ্ছে? মানুষটা আসলেই নিজেকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে, নিজেকে মানাতে চাচ্ছে এই বৈরি সময়ে এসেও। হয়তো এই মানানোর পেছনে কাজ করছে প্রকৃতির ভালোবাসা, উপরওয়ালার চাওয়া।

আমার ছোট ভাই আসিফকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘আমাদের ওই ফ্রাইড রাইস খাওয়াতে নিয়ে যাবা এবার? নাটকে দেখেছি বিচ্চুকে তার দুলাভাই ফ্রাইড রাইস খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছে ওই এসি ওয়ালা বড় হোটেলে। এক পাশে স্লিপার আর অনেক অনেক বল নেট দিয়ে ঘিরে রাখা। বাচ্চারা সবাই সেখানে খেলছে। বল দিয়ে যেনো গোছল করছে। নিয়ে যাবা আমাকে?’

আসিফ ছয় ফুট লম্বা। এবার মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে আমার ছোট ভাইর মাথায় হাত দিয়ে বললো,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ। কেন নয়? আমার ছোট শালাবাবুর আবদার আমাকে মেটাতেই হবে।’

‘সেখানে কি আমাদের খেলতে দিবে? ওই এতো এতো বল, বেলুন, স্লিপার এসব থাকবে? কেউ আমাদের বকা দিবে না তো? আর ফ্রাইড রাইস নাটকের বিলুর প্লেটের মতো সাজিয়ে দিবে তো?’

আসিফ এবার এক গাল হাসলো আমার ছোট ভাইকে দেখে। আসিফ হাসলে তার গালে টোল পড়ে। আসিফ আমার ছোট ভাইর মাথা ঝাকিয়ে বললো,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। সব হবে৷ সব আছে সেখানে৷ আর সাজিয়ে বিলুদের মতো কেন, এরচেয়ে সুন্দর, এরচেয়ে ভালো, এরচেয়ে বেশি করে খাওয়াবে। প্লেয়িং জোন আছে। আমরা দুজন একসাথে খেলবো। একসাথে খাবো। শুধু তুমি আর আমি না, আমরা সবাই আজ রাতে বাইরে খেতে যাবো। কেমন?’

আমার ছোট ভাই হাততালি দিয়ে উঠলো। বললো,

‘ইয়ে কী মজা! কী মজা! কী মজা। আমরা খেতে যাবো৷ আমরা একসাথে খেতে যাবো।’

মা আমার ছোট ভাইকে আসিফের থেকে ছাড়িয়ে আসিফকে বললেন,

‘যাও বাবা ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি বিন্নি ধানের চাউল রান্না করেছি। সাথে মাছ ভাজা আছে। খেতে দারুণ লাগবে তোমার।’

‘ওয়াও! ইয়াম্মি। আচ্ছা আমি আসছি।’

আসিফ রুমে চলে গেলো। মা আমাকে বললেন,

‘এমন মেয়ে জামাই যেনো সব মায়েরা পায় রে মা। দেখ, জামাই কত ভালো মনের মানুষ। আমাদের একটা বারের জন্যও পর ভাবছে না৷ তোর ছোট ছোট ভাই দুইটাকে সে তার নিজের আদরে ভরিয়ে রাখায় চেষ্টায় আছে।’

আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম।

আসিফ ফ্রেশ হয়ে আসতেই মাটিতে কাগজ বিছিয়ে আমরা সবাই একসাথে খেতে বসলাম। খেতে খেতে আসিফ আমাকে বললো,

‘আগামীকাল তোমার কলেজে যাবো নুপুর৷ এইচ এস সি পরীক্ষা সামনে। রেজিস্ট্রেশন করা চলছে এখন। আর সবকিছু বাদ দিয়ে আপাতত পরীক্ষায় মন দাও। পড়াশোনায় মন দাও। কাল সকালেই আমরা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। বুঝেছো?’

আমি একেবারে থ বনে গেলাম আসিফের কথায়। মা বললেন,

‘বাবা এখন আর এসবের কী দরকার বলো? একটা মেয়ে বিয়ের পর তার সব ধর্ম, কর্ম, মন একেবারে স্বামীর সংসারেই দিবে। এমনটাই হয়ে আসছে। বিয়ের পর কি আর এসব নতুন করে করা সাজে? লোকে কী বলবে বলো? দুজনে এখন ঘর সাজিয়েছো, দুইদিন পর দুজনে সংসার সাজাবে, আল্লাহ দিলে তোমার একটা চাকরিও হয়ে গিয়েছে। জীবন এখন নতুন করে সাজানোর সময়৷ সবকিছু এখন অনুকূলে হবে। আর এই মায়ের দোয়া তো আছেই সব সময়। নুপুরকে আর দরকার আছে পড়ানোর? যা দরকার দিন চালানোর তার সবকিছুই তো আছে তাইনা? এসব করে তো সময় লস হবে, এনার্জি লস হবে। তারচেয়ে যেমন আছে, তেমন থাকুক না।’

‘না মা। যেমন আছে তেমন থাকা যায় না। আপনি হয়তো এক জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন নিজের স্বপ্নগুলো চাপা দিয়ে। আপনি নিজেও হয়তো জানেন না আপনার ভেতরে কী কাজ করছে, কী বেঁচে আছে, কী স্বপ্ন ছিলো। হয়তো এভাবেই আপনার স্বপ্নগুলো কোন এক কালে আপনার থেকে দূরে চলে গিয়েছিলো। ঠিক যেমন আমার স্বপ্নগুলো আমার থেকে যোজন যোজন দূরে চলে গিয়েছে। আজ যখন আমার হাতে আমার খুব কাছের কারোর স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষমতা আছে, তখন দেখিই না একবার চেষ্টা করে? চেষ্টা করতে কি কোন দোষ আছে? কোন অসুবিধা আছে? নিশ্চয়ই নাই। তাহলে কেন আমরা চেষ্টা থেকে দূরে থাকবো?’

খেয়াল করলাম মা একদম চুপ করে আছেন। কোন কথাই আর বলছেন না যেন। আসিফ পেট ভরে খেয়ে রুমে চলে এলো। আমিও রান্নাঘর পরিস্কার করে রুমে এলাম। আসিফ আমাকে দরজা লাগাতে বললো। একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেট ধরাতে ধরাতে গান শুরু করলো। গেয়ে উঠলো,

আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো
আমার পরান যাহা চায়

তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে
আর কিছু নাহি চায় গো
আমার পরান যাহা চায়

আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনি, দীর্ঘ বরস-মাস
যদি আর কারে ভালবাসো
যদি আর ফিরে নাহি আসো
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও
আমি যত দুঃখ পাই গো
আমার পরান যাহা চায়

গান গেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আসিফ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

‘আবার পড়া শুরু করবে তো?’

আসিফের জিজ্ঞাসার মাঝে আমি এক নিষ্পাপ জিজ্ঞাসা পাচ্ছিলাম। একটা ছোট বাচ্চা যেমন তার মায়ের কাছে খেলনা কিনে দেয়ার আবদার করে, আসিফ ঠিক তেমন করেই আমার কাছে আবদার করছে যেনো! তার কথাটা আমার কানে ভাসছে৷ ‘আবার পড়া শুরু করবা তো?’

কী নিরেট এক বাক্যের ভেতরে যেনো উপর থেকেই এক দৈববানী এসে ঢুকেছে। হয়ে উঠেছে প্রাণ সঞ্চারি। ভূমিকা পালন করছে জীবনের সাথে গানের। আমি মুগ্ধ নয়ন চেপে, কর্ণযোগল দিয়ে শুধু শ্রবণ করছি যেনো!

আসিফ আবার জিজ্ঞেস করলো,

‘কী? পড়বা তো?’

আমি লজ্জাবতী গাছের পাতার মতো লজ্জায় লাল হয়ে বললাম,

‘কেন নয়?’

সন্ধ্যার পর বাইরে থেকে এসে আসিফ বললো রেডি হয়ে নিতে৷ রাতের ডিনারে বাইরে যাবো। আমি ভেবেছিলাম আসিফের হয়তো মনে নেই৷ কিন্তু না৷ তার ঠিকই মনে আছে। আসিফ মাকে ডেকে বললো,

‘মা আপনিও রেডি হয়ে নেন। আমাদের সাথে যাবেন।’

মা আসিফকে কিছু বললেন না। আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন,

‘আমি কীভাবে? জামাইর সাথে আমি কেমন দেখায় না? লোকে কী বলবে?’

আমি মাকে অভয় দিয়ে বললাম,

‘এইটা তোমার মেয়ের সংসার। লোকে কী বলবে এতে তোমার কী যায় আসে বলো? এখানে তুমি আমাদের সাথে আছো। আমাদের সাথে থাকবা৷ আমরা সব সময় যেমন থাকি ঠিক তেমন৷ তোমার এতো অপ্রস্তুত হওয়ার দরকার নেই।’

আমার কথা শুনে মা আর অমত করলেন না।

এদিকে তানিয়া তার মাকে কল করে অনর্গল বলে যেতে লাগলো,

‘দেখলা তো তোমার ছেলে কী করলো? খুব তো নিজের বেয়াই বেয়াইনের খাতির করতে গিয়ে শিরনি বিতরণ করে এলে। আর তারা কী করলো বিনিময়ে? তোমার ছেলেকে কখনো দেখেছো তোমার দায় দায়িত্ব নিতে? দেখেছো একবেলা এসে মুখে খাবার তুলে দিতে? এখন সেই রাক্ষসীর সাথে থেকে থেকে ওর মায়ের দায়িত্বও নিচ্ছে! আর এসব তুমি দেখছো বসে বসে?’

মেয়ের কথা শুনে নুপুরের শাশুড়ি কল কেটে দিলেন৷ মনে মনে ভাবতে লাগলেন, সত্যিই তো! যে আসিফ কখনো নিজের দায়িত্ববোধ শিখেনি সেই আসিফ এখন তার শাশুড়ি আর শাশুড়ির ছোট ছোট বাচ্চা দুইটাকে নিয়ে সংসার করছে? কখনো যার মধ্যে মায়ের প্রতি দায়িত্ববোধ আসেনি সে এখন দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠেছে?

কাকতালীয়ভাবে আসিফ, নুপুর, নুপুরের মা ও ছোট ছোট দুই ভাই মিলে যে রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গেলো, সেই একই রেস্টুরেন্টে তানিয়া ও তানিয়ার স্বামী ডিনার করতে যায়। তানিয়া দেখে ফেলে আসিফকে। সে সাথে সাথেই কল করে তার মাকে। তানিয়ার মা কল রিসিভ করলে তানিয়া বলে উঠে,

‘ভিডিও কল দাও। দেখাবো তোমাকে।’

‘কী দেখাবি?’

‘আরে ভিডিও কল দাও বলছি। দরকার আছে তো।’

তানিয়ার মা ভিডিও কল দিলেন। তানিয়া ভিডিও কলে ভালো করে দেখালো, আসিফ তার স্ত্রী ও শাশুড়ি নিয়ে বাইরে ডিনার করছে। সাথে ছোট ছোট দুই শালাও আছেন। ভিডিও কল কেটে দিলেন আসিফের মা। তানিয়ার স্বামী তানিয়াকে বললো,

‘তোমার মাথায় এত বুদ্ধি খেলে কীভাবে বলো?’

‘তুমি দেখো না। এভাবে এভাবেই আমি বিষ ঢেলে একেবারে শেষ করে দিবো আসিফের পার্ট।’

অন্যদিকে একা আলিশান ঘরে আসিফের মায়ের চোখ বেয়ে জল গড়ালো। যে ছেলে নিজে কখনো মায়ের উপর তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি, সেই ছেলে আজ শাশুড়ি নিয়ে বাইরে ডিনার করছে? এদিকে তার মা কীভাবে অনাদরে, একা একা দিন কাটাচ্ছে সেদিকে তার কোন খবর নেই? পৃথিবী যেনো তার সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম দিন আজ দেখাতে চলেছে। এ যেনো এক গভীরতম ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করে দেয়া।

রাতে ঘুমানোর সময় আমি মনে মনে ভাবলাম, যে মানুষটা আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য এতকিছু চিন্তা করতে পারে, সেই মানুষটার স্বপ্ন, সেই মানুষটার জমানো আবেগ ভালোবাসায় গড়ে তোলা পৃথিবীকে আবার জাগ্রত করে তুলতে হবে। যেকোন ভাবেই হোক, আসিফকে তার স্বপ্নের জায়গায় দাঁড় করাতেই হবে। যার এত সুন্দর গলা, তার এই গলার জোরেই তো সুনাম হবে, কিন্তু এই গলাকে মানুষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠা পৃথিবীতে যে এখনও ঝরে যাওয়া তারাদের জায়গা হতে পারে, সেইটা আবার জানিয়ে দিতে হবে। যে করেই হোক, যেভাবেই হোক। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আর স্বপ্ন কখনো মানুষের অপূর্ণ থাকতে পারে না।

[ গতদিন বিশাল একটা পর্ব শেষে লাইক কমেন্টের কথা না বলায় লাইক, কমেন্ট এবং রিচ সবকিছুই কম ছিলো। আজ এতো বড় পর্ব লেখার পরও যদি ৪ হাজার+ লাইক আর ১ হাজার+ কমেন্ট না আসে, তাহলে সত্যি সত্যিই খারাপ লাগবে। রিচ প্রচুর হচ্ছে, হবে৷ আপনারা যারা এই দীর্ঘ সময় নিয়ে গল্প পড়লেন, এখন একটা লাইক/কমেন্ট করে যেতে ভুলবেন না। এই লাইক কমেন্টেই মূলত গ্রুপের রিচ হয়৷ এজন্যই চাওয়া। আপনারা অবশ্যই লাইক কমেন্ট করে যাবেন৷ তাহলে নিয়মিত এমন বড় বড় পর্ব পাবেন।]

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here