বিন্নি ধানের খই পর্ব-৩২

0
2047

#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_৩২
#মিদহাদ_আহমদ

আমার টের পেয়েই আসিফ আমার দিকে ফিরে হাত ইশারায় আমাকে ঠেলে বাথরুমের বাইরে বের করে দিলো। তড়িঘড়ি করে দরজা লাগিয়ে নিলো। এত দ্রুত এসব হয়ে গেলো যে আমি কোনকিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না সহজে। আমি বাথরুমের বাইরে থেকে দরজায় হাত দিয়ে থাবা দিতে লাগলাম জোরে জোরে। আসিফ কোন কথা বললো না। পানি ছাড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম ভেতরে। কিছুক্ষণ পর পানির আওয়াজও বন্ধ হয়ে গেলো৷ ননাস আমার রুমে এস জিজ্ঞেস করলেন,

‘কী হয়েছে? দরজার এতো জোরে জোরে থাবা দিচ্ছো কেন? তাও এতো রাতে? সবাই যে ঘুমাচ্ছে এদিকে কোন খেয়াল নেই? বদরুল অফিস থেকে এসে ঘুমিয়েছে। ওর মাথা ব্যথা করছে। এদিমে দিলে তার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে। আসিফ কই?’

‘না আপা আসিফ আছে ভেতরেই।’

‘যত্তসব কান্ড। এখনও বাচ্চা রয়ে গেলা নাকি?’

কথাটা বলে ননাস চলে গেলেন রুম থেকে।

আসিফ বাথরুম থেকে বের হতেই আমি তাকে ধরে বসলাম। সে তোয়ালে দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে আমার দিকে চেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলো। তারপর চুল মুছে আয়নার দিকে চেয়ে মাথার চুল একপাশে এনে রেখে বললো,

‘কী হয়েছে সুইটহার্ট? এমন কুম্বকর্ণের মতো মুখ করে বসে আছো যে? আমাকে দেখতে আজ একেবার নায়কের মতো লাগছে না? বাংলা সিনেমার বাপ্পারাত! ভারতের সুপারস্টার সাকিব খান! নাকি ওয়ান এন্ড অনলি অনিল কাপুর? হেই?

‘ওসব কী দেখলাম আমি?’

‘আচ্ছা শুনো না নুপুর…’

‘কোন শুনাশুনি নাই। আমি ওসব কী দেখেছি?’

‘কিছু না।’

কথাটা শর্টকাট করে বলেই আসিফ একটা ট্রাউজার পরে খালি গায়ে বিছানায় ওপাশ হয়ে ফিরে ঘুমিয়ে গেলো। আমি তাকে বার কয়েক ডাকলেও তার কোন সাড়াশব্দ আমি পেলাম না। এক অস্থিরতার মাঝে আমার রাত যেনো পার হতে লাগলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠলাম শাশুড়ির ডাকে। রাতে অনেক কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই৷ শাশুড়ি ডেকে তুলে বললেন,

‘আসিফ কই? রুমের দরজা খুলা দেখলাম। আসিফও নাই দেখি। আর তোমার চোখ ফোলা ফোলা লাগছে কেন নুপুর?’

শাশুড়ির এতসব প্রশ্ন একসাথে শুনে আমিও ভিমড়ি খেয়ে গেলাম। পেছনে ফিরে দেখলাম আসিফ নাই। কাঁথা এক পাশে ফেলে রাখা আছে। শাশুড়ি আবার জিজ্ঞেস করলেন,

‘আসিফ কোথায়?’

‘জানি না মা। আমাকে তো বলে যায়নি। আমি ঘুমে ছিলাম।’

‘অহ আচ্ছা। তুমি উঠে তাড়াতাড়ি ঘর গুছিয়ে নাও বউমা। তামান্নার হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে এখন।’

‘কেন?’

‘ওই তারা গহনা নাকি আজকেই অর্ডার দিয়ে আসবে তামান্নার। আগে কিছুই জানায়নি। তামান্নার সাথে তুমিও যাবা।’

‘অহ আচ্ছা।’

আমি উঠে গেলাম বিছানা থেকে। ঘরদোর পরিস্কার করতে লাগলাম। এদিকে রান্নাঘরে যাওয়ার সময়ে শুনতে পেলাম আমার ননাস আর শাশুড়ির কথা কাটাকাটি হচ্ছে কী নিয়ে যেনো! ননাস শাশুড়িকে বলছে, আমি কেন যাবো তামান্নার সাথে। সে যাবে তামান্নাকে নিয়ে। ননাসকে শাশুড়ি বলছেন, তামান্নার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এতে হিতে বিপরীত ভাবতে পারে। আর এভাবে কনের বড় বোনের এসবে যাওয়া মানায় না। আমি আর এদিকে কান দিলাম না। রান্নাঘরে তাদের জন্য নাস্তা রেডি করতে করতে আসিফের নাম্বারে কল দিলাম। দুইটা রিং হতেই আসিফ কল ধরলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,

‘কোথায় আছো?’

‘কাজে আছি। কোন দরকার?’

‘কী কাজে?’

‘দরকার কিছু?’

আসিফ তারপর খক খক করে কয়েকবার কাশি দিলো। আমি বুঝতে পারলাম মোবাইলের মাইক্রোফোন হাত দিয়ে চেপে ধরে ওপাশে সে কাশি দিচ্ছে। আমি বললাম,

‘কাশি দিচ্ছো কেন?’

আসিফের জবাবের আগেই ওপাশ থেকে কে যেনো আসিফকে বললো,

‘রেডি করা শেষ উস্তাদ। এখন মাল খাইয়া বইসা আছে এমনডা করন লাগবো। মাল ছাড়া কোন কথা হবে না।’

আসিফ আমাকে বললো

‘কোন কাজ না থাকলে আমি রাখি এখন নুপুর?’

এইটা বলতে বলতে সে আবার কাশি দিলো বার কয়েক। আমি কল কেটে দিলাম। অঝোর ধারায় চোখ থেকে বর্ষণ বইতে শুরু করলো যেনো। তামান্না পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ভাবি ভাবি ভাবি, দেখবা আজ আমি মন ভরে গয়না কিনবো। আমার যা যা লাগবে সব কিনে নিয়ে আসবো।’

‘দেখি কত কিনতে দেয় ওরা। যা বলবে এর বাইরে তো আর কিনা যাবে না।’

ননাস দরজার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো। এদিকে আমি আমার চোখ মুছে নিলাম। মোবাইল রেখে দিলাম এক পাশে। শাশুড়ি এসে দেখতে লাগলেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। কিছুক্ষণের মাথায় তামান্নার হবু দুই ননাস আমাদের বাসায় এসে হাজির হলেন৷ তাদের দুই হাত ভর্তি মিষ্টির কার্টুন। দুজন বাসা ঢুকতে ঢুকতে বলতে লাগলেন,

‘আরে এসি অন করা নাই আপনাদের? বাইরে আজ কী যে গরম পড়েছে!’

শাশুড়ি মা আমাকে ইশারায় এসি অন করতে বললেন৷ আমি এসি অন করলাম। তামান্নার হবু ননাসেরা কোল্ড ড্রিংকস হাতে নিতে নিতে তামান্নার দিকে চেয়ে তামান্নার বড় ননাস বললো,

‘একী তামান্না! গায়ের রঙ আর হাতের রঙ দুই হয়ে গেলো যে! নাকি মায়ের ঘরে শেষমেশ সব কাজ করে দিয়ে যাচ্ছো?’

আমরা সবাই চেপে গেলাম। কোন উত্তর দিলাম না। নাস্তা শেষে তামান্নার হবু ননাস শাশুড়ি মাকে বললো,

‘খালা, আমাদের এখান থেকে স্বর্ণ পাঁচ ভরি দেয়া হবে। বিয়েতে খরচাপাতি যা বেশি হচ্ছে বুঝলেন! মা বলে দিয়েছে আপনাকে যেনো আগে বলে দেই।’

কথাটা বলতে বলতে তামান্নার ননাস ব্যাগ খুলে একটা বক্স বের করে শাশুড়ির হাতে দিয়ে বললো,

‘এইটায় কান-গলার সেট আছে। তিন ভরির। স্বর্ণ আমার বিয়ের সময়ের। আমি ইউজ করি না। ভাবলাম দিয়ে দেই নিজের ভাইয়ের বউকে। আঠারো ক্যারেটের। চাইলে ওজন করিয়ে নিতে পারেন।’

শাশুড়ি মা মুখে হাসি এনে বক্স টা হাতে নিতে নিতে বললেন,

‘আরে না না। এসব আর দেখার কি আছে।’

‘আচ্ছা তামান্না চলে আসো। আমরা জুয়েলার্সে যাই। কেউ যাবে এখান থেকে?’

‘হ্যাঁ। নুপুর যাবে মা তোমাদের সাথে।’

‘আচ্ছা। চলে আসো’

মা গাড়ির ড্রাইভারকে কল দিয়ে গাড়ি বের করতে বললেন। তামান্নার ছোট ননাস বললো,

‘আন্টি আমাদের সাথে গাড়ি আছে। আপনাদের আর লাগবে না গাড়ি বের করা।’

তামান্না আর আমি তাদের দুজনের সাথে বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম। তামান্নার বড় ননাস বললো,

‘একী? এভাবেই চলে যাবা তোমরা?’

আমি কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে উঠলাম। এভাবে চলে যাবো মানে! তামান্নার হবু ননাস শাশুড়ির দিকে চেয়ে বললো,

‘খালা আমাদের ঘরের বউ এখন সে। সে এভাবে বাইরে যাবে? তার কি বোরকা টুরকা নাই? বেপর্দা হয়ে সে বাইরে চলে যাচ্ছে?’

শাশুড়ি মা তামান্নাকে নিয়ে ভেতরে এলেন৷ অথচ তামান্নার হবু ননাস দুজনের একজনের গায়েও বোরকা জড়ানো নাই। দুজনেই মাথায় হিজাব পরে আছে শুধু! তামান্নাকে শাশুড়ি ভেতরে নিয়ে চললেন। আমাকে ডেকে বললেন,

‘তোমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলে না ওই নীল রঙের খিমার, ওইটা কোথায় রেখেছো?’

‘মা এগুলা তো আপনার আলমারিতে সব।’

শাশুড়ি মা খিমার বের করলেন। তামান্না বললো,

‘ওসব সস্তা খিমার পরে আমি বের হবো?’

‘চুপ। কোন কথা বলবি না আর। যেভাবে তারা যা বলে তাই করিস।’

তামান্না আমাকে বললো এবার,

‘ভাবি দেখেছো মাত্র পাঁচ ভরি স্বর্ণ দিচ্ছে তারা।’

আমি তামান্নার কথার কোন উত্তর দিলাম না। ননাস বললো, ‘পাঁচ ভরি অনেক দিচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছিস তো বিশ ভরি। সবাই কি আর তোর দুলাভাইয়ের মতো যে বিয়েতে হার সীতাহারে একদম গা ভরিয়ে দিবে।’

বড় বোনের কথা শুনে ছোট বোন একেবারে চুপসে গেলো যেনো। যাবার সময় শাশুড়ি মা আমাকে বলে দিলেন, তামান্না যেনো এমন কোনকিছু তাদের সামনে না করে বসে যাতে হিতে বিপরীত হয়ে যায়।

জুয়েলার্সে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপত্তি। জুয়েলার্সে সে এই জড়োয়া, এই সীতা গায়ে দিচ্ছে। এই কানের দুল, সেই মালা এসব দেখত লাগলো এক পাশ থেকে। তারপর তামান্না একটা হালকা দেখে সীতাহার চয়েজ করলে তামান্নার হবু ননাস বলে,

‘এইটা কি এমনি এমনি গলায় দিয়েছো?’

‘না আপা। এইটায় আমাকে সুন্দর লাগবে না? আমার বান্দবি মুনমুনের বিয়েতে এই একই ধাচের হার সে পরেছে। আমার তখন কী যে ভালো লেগেছিলো! আমি এইটা নেই?’

তামান্নার দুই ননাস একে অন্যের দিকে চেয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো। আমার দিকে চেয়ে বললো,

‘অহ তুমি তো ভাবি। ভাবি তার ননদকে উপহার দিচ্ছে বুঝি? এই সীতাহার নেয়া যাবে না তামান্না।’

তামান্নার ননাসের এই কথা বলার মূল প্রতিপাদ্য হলো তিন ভরির একটা জড়োয়া সে দিয়ে এসেছে বাসায়। সাথে কানের দুলও ছিলো। এখন শুধু একজোড়া চুড়ি কিনতে পারবে সে। আমি বুঝতে পারলাম তামান্নার ভেতর কেমন করছে যেনো! তামান্নাকে হাত ইশারায় চেপে কানে কানে বললাম,

‘যা বলছে তাই কিনে নাও। আমি আমার গহনা থেকে তোমাকে দিয়ে দিবো। এখানে এখন কোন কথা বলো না।’

এক জোড়া চুড়ি আর একটা আংটি কিনে আমরা আবার গাড়িতে চড়ে বসলাম। জিন্দাবাজার থেকে গাড়িতে উঠার সময়ে খেয়াল করলাম, একটা গাড়ি থেকে মধ্যবয়সী সুন্দরি এক মেয়ে নেমে প্রথমে ছেলেটার হাত ধরলো, তারপর ওই ছেলেটাকে তার পাশের সিটে বসিয়ে কারে উঠে গেলো সে নিজেও। আমি বার কয়েক তাকালাম সেদিকে। কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই কারটা আমার সামনে দিয়ে টান মেরে চলে গেলো।

[লাইক কমেন্ট করে যাবেন। ৩ হাজার লাইক আর ৫০০ কমেন্ট চাই। আমাদের এই পরিবারকে বড় করতে আপনাদের পাশে থাকা প্রয়োজন৷ আপনারা আপনাদের পরিচিতদের দিয়েন। গ্রুপের অনেকেই আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছেন/দিচ্ছেন৷ প্রতিনিয়ত রিকুয়েস্ট আসায় অনেক রিকুয়েস্ট নিচে চলে যাচ্ছে, অনেকটা সামনে আসছে না৷ যারা যারা রিকুয়েস্ট ইতোমধ্যে পাঠিয়েছেন, আপনার আজকের পর্বে কেয়ার রিয়েক্ট দিয়েন৷ আমি দেখে দেখে আপনাদের যুক্ত করে নিবো।🌸]

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here