বিবর্ণ জলধর পর্ব:৩০

0
690

#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩০
_____________

নোয়ানার দু চোখে ঘুম নেই। অন্তরে এখনও ভয় কামড়ে আছে। সে সময় কি ভয়টাই না পেয়েছিল! যদি চাচি দেখে ফেলতো আষাঢ়কে তখন কী হতো? কী মনে করতো সে? না, এই আষাঢ় তাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। এত পাগল কেন ছেলেটা? নোয়ানা হাত বাড়িয়ে কপাল স্পর্শ করলো। সে সময়ের দৃশ্যটা ভেসে উঠলো চোখে। সেই সাথে আষাঢ়ের বলা কথাটাও কানে বাজলো,
‘আসলে এই কাজটার জন্যই এসেছিলাম আমি। খুব বেশি রাগ করলে কি টিউলিপ?’
নোয়ানার অক্ষি কোণ বেয়ে উষ্ণ অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। মনে মনে অভিযোগ তুললো,
‘এত পাগল কেন আপনি হিমেল? আপনার এই পাগলামি বাস্তবে মানায় না। আপনার পাগলামিকে আমি ভীষণ ভয় পাই, ভীষণ!’

“নোয়ানা আপু!”

তিন্নির ডাকে চমকে ওঠে নোয়ানা। হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে নেয়। শায়িত অবস্থায় ঘাড় ফিরিয়ে তাকায় তিন্নির দিকে। নীল আভার ড্রিম লাইটের আলোয় তিন্নির মুখ দেখতে পায় সে।

“ঘুমাসনি?”

“আমি ভাবছি। জানালার পাশে থাকা ফুলের টব কি আসলেই বাতাসে পড়ে যেতে পারে?”

তিন্নির প্রশ্নে নোয়ানা ভয় পায়। এই বিষয়টা নিয়ে এত কেন ভাবতে হচ্ছে মেয়েটার? নোয়ানা ঘাড় ফিরিয়ে এনে সোজা কাত হয়ে শোয়। জানালার পাশে থাকা ফুলের টব তার জন্য পড়েছে। চাচির ডাক শোনার পর তো সে ভয়ে জবুথবু হয়ে গিয়েছিল। কী করবে বুঝতে পারছিল না। সে টেবিল ছেড়ে বাড়ির এ প্রাঙ্গণে ছিল জানলে নানান প্রশ্ন করতো চাচি। এমনকি জায়গাটায় গিয়ে একবার চেকও করতে পারতো। চেক করলেই তো ধরা পড়ে যেত আষাঢ়। কারণ, ওই জায়গা থেকে নড়ার তো কোনো উপায় ছিল না তার। যে গেট বেয়ে উঠে বাড়িতে এসেছে, সে গেট বেয়ে আবার বের হতে গেলে চাচির সম্মুখে পড়তো। নোয়ানা উপায়ন্তর না পেয়ে আষাঢ়কে প্রশ্ন করেছিল,
“এখন কী করবো আমি? সেই তো ঝামেলায় ফেলে দিলেন আমায়।”

আষাঢ় মোটেই ঘাবড়ে যায়নি। সে একদম স্বাভাবিক। নোয়ানা আষাঢ়ের এমন স্বাভাবিকতা দেখে অবাক হয়েছিল বটে। বেশি অবাক হয়েছিল আষাঢ়ের কথায়। আষাঢ় বলেছিল,
“কী আর করবে? আমাকে নিয়ে চাচির সম্মুখে যাবে। তারপর যা বলার আমি বলবো। বলবো, আপনার দ্বিতীয় মেয়ের কপালে একটি মাত্র চুমু খেতে এসেছিলাম আমি। কাজ হয়ে গেছে, এখন আমি যাচ্ছি।”

“কী?”

আষাঢ় বিশাল এক নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বললো,
“তোমাদের রুমে বিশাল একটা গ্রীলবিহীন জানালা আছে না? ওটা দিয়ে ঢুকে পড়ো রুমে। তারপর ঘরের ভিতর থেকে চাচির ডাকের সাড়া দাও। চাচি সাড়া পেয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলে, তারপর আমি বেরিয়ে যাব তোমাদের বাড়ি থেকে। যাও।”

আষাঢ়ের বুদ্ধিটা মনে ধরেছিল নোয়ানার। বুদ্ধিটা খারাপ নয়। বরং এই কাজটা করলে তাকে বেশি প্রশ্নের সম্মুখে পড়তে হবে না। তিন্নিও এ সময়ে বেড রুমে থাকে না। লিভিং রুমে টিভি দেখে। সুতরাং ঝামেলা হবে না। চাচি যা প্রশ্ন করার তা করবে,
‘ঘরে আসলি কখন? আমি তো ভেবেছিলাম উঠোনেই আছিস।’
এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব একটা কঠিন নয়। বলবে,
‘অনেক আগেই রুমে এসেছি আমি। গরম পড়েছে তো আজকে, তাই বেশিক্ষণ গরমের মধ্যে থাকলাম না।’

আষাঢ়ের কথা মতো জানালা দিয়েই রুমে ঢুকেছিল সে। আর তখন বেখেয়ালে জানালার পাশের টবটা পড়ে যায়। টবটা ভাঙেনি। কিন্তু কিছু মাটি ছড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। মেঝে পরিষ্কার করার আগেই তিন্নি রুমে এসে দেখে ঘটনাটা। নোয়ানা তাকে মিথ্যা বুঝ দিয়েছিল, টব বাতাসে পড়ে গেছে। তিন্নি ব্যাপারটা মেনেও নিয়েছিল তখন, কিন্তু এখন আবার এটা নিয়ে ভাবছে কেন? তিন্নির ভাবনা কাটিয়ে দিতে হবে। নোয়ানা কিছু বলার প্রয়োজন অনুভব করলো। ইতস্তত করে বললো,
“বাতাসের কারণেই পড়েছে টব। বাতাস খুব শক্তিশালী। অনেক কিছু পারে বাতাস। এ নিয়ে না ভেবে ঘুমা তুই।”

_______________

আজকে আকাশ মেঘলা। সূর্যরশ্মির দেখা নেই। বাতাস শীতল। ক্ষণে ক্ষণে বাতাস এসে চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। বানোকুলারের ভিতর দিয়ে ভীতু মেয়েটা এখন আষাঢ়ের দৃষ্টিগোচরে। মেয়েটা বই পড়ছে। এত কীসের বই পড়ে কে জানে! পাঠ্যবই না কি উপন্যাসের বই? প্রশ্নের উত্তর জানার খুব একটা আগ্রহ নেই আষাঢ়ের মাঝে। তাও এই মুহূর্তে জানতে পারলে ভালো লাগতো। একবার কি কল দেবে মেয়েটাকে? কল দিলেও যে কল রিসিভ হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। মেয়েটা খুব কঠোর। যত বেশি দেখা সাক্ষাৎ, কথাবার্তা না বলে পারবে ততই যেন খুশি সে। কাল রাতে আবার তাদের বাড়ি যে উদ্দেশ্যে জ্ঞাপন করে গিয়েছিল মনে মনে, তা সাধন হয়নি। নোয়ানার চাচি ওই মুহূর্তে না এসে পড়লেই দারুণ ভাবে সে নোয়ানার আঙুলে রিং পরিয়ে দিয়ে প্রোপোজ করতে পারতো। কিন্তু হলো না সেটা। চাইলে রিং পরিয়ে দিতে পারতো, তবে সুন্দর একটা প্রোপোজ হতো না। আষাঢ়ের মনে এ নিয়ে দুঃখী দুঃখী ভাব বিরাজ করছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে সে ডায়াল করলো নোয়ানার নাম্বারে।
রুমে ফোনটি বেজে উঠলো। নোয়ানা রুমে গেল ব্যালকনি থেকে, কিন্তু কল রিসিভ হলো না। উল্টো কেটে দিলো। এটা অবাক কোনো বিষয় নয়। নোয়ানা আজ পর্যন্ত বহুবার এই কাজ করেছে। ঘটনাটা পুরোনো ধরণের হলেও, আষাঢ়ের রাগ প্রথমের মতো নিগূঢ়। সে তাৎক্ষণিক আবার কল করলো। ফোন সুইচ অফ! আষাঢ় বিশ্বাস করতে পারছে না এই মেয়েটা তার সাথে এতটা রূঢ়। কালকের ঘটনাটার জন্য কি মেয়েটা রাগ প্রকাশ করছে তার উপর? ওটা তো খারাপ কিছু ছিল না। মিষ্টি ছিল। মিষ্টি প্রেমের মিষ্টি একটি ঘটনা ছিল। মেয়েটা মিষ্টি, খারাপের তফাৎও বোঝে না। আষাঢ়ের মেজাজে বড়ো ধরণের বিস্ফোরণ ঘটলো।
দরজা খোলার শব্দ হলো পিছনে। আগন্তুক প্রবেশ করলো রুমে। আষাঢ় কারিব এসেছে ভেবেছিল। পদধ্বনির শব্দ অনুধাবন করে মনে হলো এটা কারিব নয়। সে ঘাড় ঘুরিয়ে আগন্তুককে দেখতে চাইলো, কিন্তু ঘোরার আগেই একটা হাত তার গলা পেঁচিয়ে ধরলো। শক্ত বাঁধনে গলায় জোরে চাপ প্রয়োগ করে শ্বাস আটকে দেওয়ার উপক্রম করলো। আষাঢ়ের বুঝতে অসুবিধা হলো না আগন্তুক কে। তার সাথে এমন দস্যু আচরণ আর কেই বা করতে পারে? নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে বললো,
“এটা কী করছো সিনথিয়া? ছাড়ো আমায়।”

সিনথিয়া আরও জোরে আঁকড়ে ধরে। আষাঢ়ের শ্বাস আটকে এলো। দুই হাত দিয়ে সিনথিয়ার শক্তিশালী হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে নিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো সে। গলায় যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। ডান হাত দিয়ে গলা স্পর্শ করলো সে, রক্তচক্ষুতে তাকালো সিনথির দিকে। সিনথিয়া হাসছে। নিষ্প্রাণ হাসি। আষাঢ় তেড়ে এসে সিনথির গলা টিপে ধরতে চাইছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেমে গেল। গলা টিপে ধরলেও জোরে ধরতো না। হালকা হাতেই ধরতো। যাতে বেশি ব্যথা অনুভব না হয়।

“এমন ডাকাতের মতো কেন করলে? মরতে চাও তুমি? না কি আমায় মারতে চাও?”

সিনথি এক পা কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“নিজেও মরতে চাই আর তোমাকেও মারতে চাই, ভালোবাসায়!”
বলে হেসে ফেললো।
আষাঢ়ের ক্ষুব্ধ চাহনি। শক্ত চোয়ালে বললো,
“ঠিকই ধরেছিলাম, তুমি একটা সাইকো!”

সিনথি প্রত্যুত্তর করলো না। ঠোঁটের হাসি আরও চওড়া করলো। আষাঢ়ের হাত থেকে বাইনোকুলারটা নিয়ে বললো,
“প্রিয়তমাকে দেখছিলে বুঝি?”

“হ্যাঁ, দেখছিলাম। তাতে তোমার কী? বেরিয়ে যাও এখান থেকে। একটা ছেলের রুমে এভাবে হুটহাট করে ঢুকে পড়া উচিত নয় তোমার। সভ্যতা বলে একটা কথা আছে।”

সিনথি শ্লেষপূর্ণ চোখে তাকালো,
“তুমি বলছো সভ্যতার কথা? অসভ্য ছেলে তুমি!”

“তোমার সাহস তো কম না! তুমি আমাকে অসভ্য বলছো? এত বড়ো সাহস তোমার?”

“সাহসের কথা ছাড়ো, তুমি যে একটা অসভ্য তা সবাই জানে। তোমার প্রিয়তমাও জানে। আর জানে বলেই তোমার থেকে দূরে দূরে থাকে।”

“তুমি জানো না? জেনেশুনে এখনও এখানে থাকছো কেন? ইন্ডিয়া ব্যাক করো তাড়াতাড়ি। দূরে দূরে থাকো আমার থেকে।”

সিনথি কিছু বললো না। কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে কী একটা ভাবলো। তারপর বড়ো করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল।
আষাঢ় মেয়েটাকে যখন দেখে তখনই অবাক হয়। মেয়েটার মতিগতি সে বুঝে উঠতে পারে না। মেয়েটা তার বিস্ময়ের কারণ, বিরক্তির কারণ, কারণ রাগেরও। মেয়েটা কবে ছেড়ে যাবে তাকে?

________________

তমসাচ্ছন্ন নির্জন রাত্রি। শব্দহীন পরিবেশে শ্রাবণের মস্তিষ্কে কোলাহলের শব্দ উপচে পড়ছে। হাজার চিন্তা তার মাথায়। মাথা নত করে কিছুক্ষণ চিন্তায় বিমূঢ় হয়ে রইল।
হঠাৎই মাথা তুলে মিহিকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“আম্মু এসে তোষক নিয়ে গেল আর আপনি নিতে দিলেন?”

মিহিক যেচে গিয়ে বললো,
“তাহলে কী করতাম? শাশুড়ি আম্মুকে বলতাম, আপনার ছেলে তোষক বিছিয়ে ফ্লোরে ঘুমাবে, ওটা নেবেন না?”

শ্রাবণের মুখখানি চুপসে গেল। কথা রইল না। মা হঠাৎ করে এমন করলো কেন? সন্দেহ কি যায়নি তাদের? রূপ খালাকে নিয়ে এসে কেন তার রুম থেকে এক্সট্রা তোষকটা নিয়ে গেল?
তারা যে সময় এসেছিল তোষক নিতে তখন শ্রাবণ অনুপস্থিত ছিল রুমে। রুমে আসার পর মিহিক তাকে খবরটা জানিয়েছে। সেই থেকে সে একনাগাড়ে চিন্তায় ডুবে আছে।

“তোষক কেন নিয়েছে বলেছে কিছু?”

“বলেছে প্রয়োজন আছে। লাগবে।”

শ্রাবণের অসহায় লাগছে, ক্লান্ত লাগছে। আর ভাবতে ইচ্ছা করছে না তার। মা তার এত বড়ো সর্বনাশ করলো? এখন সে ঘুমাবে কীসে? শুধু চাদর বিছিয়ে ফ্লোরে ঘুমাবে? অসম্ভব! শ্রাবণের চোখ ক্লোজেটের দিকে ছুটে গেল। টুল ছেড়ে উঠে ক্লোজেটের দিকে এগিয়ে গেল সে। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর বের হলো হাতে পুরু বিশাল একটা ব্ল্যাংকেট নিয়ে। ব্ল্যাংকেটটা বিছানার উপর রাখলো।

“কী করবেন কম্বল দিয়ে?” মিহিকের প্রশ্ন।

“আম্মু তো তোষক নিয়ে গেছে, এখন বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হবে না?”

মিহিকের হৃদয়ে বদ্ধ কষ্টটা সূচ ফুঁটিয়ে উঠলো। তিক্ত কষ্টে হৃদয় ছেয়ে গেল মুহূর্তে। অভিমান জমলো আঁখি কোণে। এই মানুষটা এখনও এমন! মিহিক অভিমানীনি দৃষ্টি জোড়া স্থির রেখে বললো,
“ভেবেছিলাম রুমকির জন্য আপনি সুন্দর হতে পারছেন না, কিন্তু আমার ধারণা ভুল। আদতে আপনি মানুষটাই ভালো না। আপনি কোনোদিন সুন্দর হতে পারবেন কি না এ বিষয়ে এখন সন্দেহ হয় আমার।”

সহসা মিহিকের এমন কথা শুনে শ্রাবণ অবাক। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। অপ্রস্তুত বলে ফেললো,
“হঠাৎ এমন করে বলছেন কেন?”

মিহিকের হেরফের হলো না। ক্লেশপূর্ণ কণ্ঠে বললো,
“আপনি মানুষটা এত খারাপ কেন বলুন তো? একটু ভালো হলে কী হয়? স্বামী নামের একটা কলঙ্ক আপনি! কেন বিয়ে করেছেন আপনি? আপনার আসলে স্বামী হওয়া সাজে না, আপনার সারা জীবন ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিক হয়েই থাকা উচিত ছিল। থাকুন আপনি ফ্লোরে।”

মিহিক রাগে শ্রাবণের বালিশটা বিছানা থেকে ছুঁড়ে মারলো শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ বালিশটা ক্যাচ করে নিলো।
মিহিক অভিমানিনি, কষ্টপূর্ণ চোখ জোড়া নিয়ে উঠে পড়লো বসা থেকে। মিহিকের কথাগুলো শ্রাবণকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। অন্তঃকরণে দুরূহ একটা কষ্ট অনুভব হলো। মিহিক তার পাশ থেকে চলে যাওয়া দিলে সে হঠাৎ মিহিকের এক হাত ধরে থামিয়ে দিলো মিহিককে।
মিহিক সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে তাকালো। দুজনের দৃষ্টি এক সাথে মিলিত হলো। শ্রাবণ লক্ষ্য করলো মিহিকের চোখ জোড়া জলে টলমল। জল টলমলে চোখ জোড়ায় তাকিয়ে থেকে বললো,
“আমি ছ‍্যাঁকা খাওয়া প্রেমিক নই।”

মিহিক ম্লান হাসলো। জলপূর্ণ চোখের হাসিটা শ্রাবণের খুব করে হৃদয়ে লাগলো। মিহিক একটু নিকটে এসে দাঁড়ালো। ম্লান হাসিটা তখনও তার ওষ্ঠ্যতে লেগে রয়েছে। হাত বাড়িয়ে শ্রাবণের বাম গাল স্পর্শ করে কেমন কাতর কণ্ঠে বললো,
“তাহলে কি আপনি আমার ভালো স্বামী?”

শ্রাবণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো জবাব দিলো,
“উহু, আমি ভালো নই। আমি খারাপ!”

মিহিকের ম্লান হাসি আরও প্রসন্ন হলো। চোখের কোল ছাপিয়ে নেমে গেল অশ্রু ধারা। শ্রাবণের গাল স্পর্শ করা হাতটা আস্তে করে নেমে এলো নিজ অবস্থানে।

শ্রাবণ আগের মতো শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“কাঁদছেন কেন?”

“আপনি কাঁদাচ্ছেন।”

“কীভাবে কাঁদাচ্ছি আমি? আমি তো কাঁদানোর মতো কিছু বলিনি আপনাকে, আর না তো মেরেছি।”

“আপনি প্রতিনিয়ত আঘাত করেন আমার হৃদয়ে। হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত করে দেন।”

শ্রাবণ তাকিয়ে রইল। তার ভিতরে সবকিছু এলোমেলো। হৃদয় মেঘলাকরণ। এটা মেঘলা আকাশের মতো। এই মেঘলা আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরবে না কি মেঘলা কেটে গিয়ে রোদ হাসবে, সে বিষয়ে সংশয়। হৃদয় হারিয়ে যাচ্ছে দূরে কোথাও। নিজ বশে থাকছে না। যেন ওই দূরবর্তী মেঘলা আকাশের সাথে মিশে যাচ্ছে। কান্নারত মায়াবী মেয়ে মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে সে বললো,
“আপনার এভাবে কাঁদা উচিত নয় মিহিক। আপনি বাচ্চা নন।”

মিহিক কান্না থামালো না। কান্না চলতে লাগলো তার বর্ষার বারি ধারার মতো। বললো,
“তাহলে কীভাবে কাঁদা উচিত আমার? শুধু বাচ্চারাই কাঁদে না, বড়োরাও কাঁদে। বড়ো হওয়ার পর আপনি কাঁদেননি কখনো?”

“আমি জানি শুধু বাচ্চারা কাঁদে না, বড়োরাও কাঁদে। আমি সে অর্থে কথাটা বলিনি। আপনার এরকম কাঁদা উচিত নয় সেটা বলেছি। আমি থাকতে আপনি এভাবে কাঁদবেন কেন?”

মিহিক বিস্ময় নিয়ে তাকালো।

শ্রাবণ অকস্মাৎ মিহিককে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
মিহিকের হৃদস্পন্দন থমকে গেল। আকস্মিক এমন ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে গেল সে। কান্না থামতে বাধ্য হলো। বিস্ময়ের বেড়াজালে বাঁধা পড়লো সে। স্তব্ধ হয়ে গেল।
শ্রাবণ মিহিকের মাথা হাত দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো। শ্রাবণের শান্ত কণ্ঠের কথাটা শুনতে পেল মিহিক,
“এভাবে কাঁদুন রাগী, জেদি ও ভালো মেয়ে!”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here