বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি
পর্ব :২
উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)
ভিড়ের মাঝে দাড়িয়ে সেহের উৎসুক দৃষ্টিতে মাকে খুঁজে যাচ্ছে।মাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।ট্রেন কি আগে পৌছিয়েছে? সেহের ঘড়িটায় একবার চোখ বুলায় ।না টাইম তো ঠিকই আছে। মা এখনো পৌছায়নি কেন?
সেহেরের চোখ আটকায়। দূরে এক বয়স্ক লোক কালোরঙের গাড়ীর সামনে ‘সেহের মেডাম’ সাইনবোর্ড হাতে করে দাড়িয়ে।পোশাক দেখে মনে হচ্ছে গাড়ীর ড্রাইভার সম্ভবত। সেহেরের ভ্রু কুঁচকে আসে। তবে মা কি গাড়ীতে? ব্যাগ গুলো হাতে তুলে ,সেহের দ্রুত পায়ে গাড়ীর দিকে ছুটে যায়। টেকনোলজির যুগে সাইনবোর্ড হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেহের ভীষণ চমকায়।সেই সাথে তার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে।এমন কেউ করে নাকি? এক গাল হাসি সেহের জিগ্যেস করে,”মা কি গাড়ীতে”
“না ম্যাডাম,বড় ম্যাডাম শহরের বাহিরে মিটিং এ গেছে।আমাকে বলেছে আপনাকে রিসিভ করতে! ”
নিমিষেই সেহেরের হাসি হাসি মুখ বুঝে যায়।”ওহ “ছোট করে মলিন স্বরে বলে। আজ মিটিং রাখার খুব প্রয়োজন ছিলো কি? সেহের থেকে মিটিং বড়? বুকে একরাশ অভিমান চেপে সেহের গাড়ীতে উঠে বসে।তপ্ত অভিমানে চোখ জোড়া ছলছল করছে।
গাড়ী নিজ গতিতে চলছে । ঘড়ির ছোট কাটা আটের দিকে। সেহের জানালা খুলে দেয়।রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা । ঘুমন্ত ঢাকা শহর মাত্র আড়মোড়া ভাঙছে ।ঢাকার রাজপথ আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজে শীতল বাতাসের দোলা বইছে।চোখ বন্ধ করে বাচ্চা বাচ্চা হাতটা জানালার বাহিরে দিয়ে হাওয়াকে ছোঁয়ার মিছে চেষ্টা করছে।
মা কি জিনিস সেহেরের জানা নেই। শেষ ছয় বছর আগে মায়ের সাথে দেখা হয়েছিলো।সেই ছিল মায়ের সাথে তার প্রথম সাক্ষাত।হয়তো মায়ের মনে তার জন্য মমতার অভাব তাইতো এতো অবহেলা।সেহেরের নিজেকে বেশ বেহায়া মনে হচ্ছে।যেচে যেয়ে কারো সংসারের বোঝা হচ্ছে। একবার ভাবলো গাড়ী থেকে নেমে অন্য কোথাও চলে যাবে।কিন্তু কোথায় যাবে?আদৌ কি কোন পথ আছে?ঢাকায় বড় ফুপির বাড়ী। বাবার সাথে ফুপুর জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে দন্দ থাকায় সম্পর্কের মাঝে একটা গ্যাপ এসে গেছে।ফুপুর বাড়ীতে উঠা যাবেনা।তাছাড়া কি দরকার কাউকে শুধু শুধু ঝামেলায় ফেলার! ফুপুর বিয়ের লায়েক মেয়ে আছে।সেহেরের জন্য যদি তাকে বিপদে পরতে হয়? দাদীর কথা আজ খুব মনে পরছে। গত ছয় মাস পূর্বে তিনি দুনিয়া ছেড়ে পরলোক গমন করেছেন।দাদী বেঁচে থাকলে সেহেরকে এইদিন দেখতে হতো না। দাদীকে নিয়ে ঢাকায় কোথাও উঠে যেত।মায়ের এক মেয়ে দুই যমজ ছেলে।মেয়েটা তার থেকে বছর দুএক ছোট । নাম ‘লিয়ানা’।গতবার লিয়ানার সাথে তেমন জমে উঠেনি।লিয়ানার হয়তো সেহেরকে খুব একটা পছন্দ না।তাইতো সবসময় এড়িয়ে চলতো । এবারোও কি আগের বারের মত এড়িয়ে যাবে? নাকি আপন করে নিবে? এই কয়েকটা বছরে তার মাঝে পরিবর্তন এসেছে কি ? ক্রমশ পথ কমছে সেই সাথে পাল্লা ধরে সেহেরের ভয় বাড়ছে।বুকটা ধুকধুক করছে।রেজাল্ট পাওয়ার আগ মুহূর্তে যেমন উত্তেজনা হয় এই মুহূর্তে তার বুকে ঠিক তেমন উত্তেজনা হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে বুক চিড়ে নিশ্বাস নেয়। জানালায় থুতনি ঠেকিয়ে দূর আকাশের পানে চায়। পাখিরা নীল আকাশে ডানা ঝাপটাচ্ছে।সেহের পাখিদের দিকে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।মনে গভীর ইচ্ছা জাগে ,যদি পাখিদের মত ডানা ঝাপটাতে পারতো ? তবে কতই না ভালো হতো! কারো অবহেলা সইতে হতো না।ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে অনেক দূর চলে যেত!
শহরের ইটপাথরের পথ ছেড়ে গাড়ী চাকা উপশহরে দিকে পা বাড়াচ্ছে।সেহেরের বুঝতে বাকি রইলো না তারা গন্তব্যের খুব নিকটে।গাড়ী ধবধবে সাদা প্রচীরের সামনে থামে।নেমপ্লেটে প্যাঁচানো গোটা গোটা অক্ষরে লিখা “তিলোত্তমা “।বাড়ীর এমন অদ্ভুত নাম দেখে সেহের আগে বারের মত এবারো ভ্রু কুঁচকে নেয়। এমন অদ্ভুত নাম দেওয়ার কারণ সে গতবারো খুঁজে পায়নি।কেমন জানো শক্ত উচ্চারণ ।এতো প্যাঁচানো শক্ত শব্দ তার মোটেও পছন্দ না।নাক মুখ কুঁচকিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে।দারোয়ান গেট খুলে দেয়। গাড়ি সদর দরজা মারিয়ে ভিতরের দিকে ডুকছে।বিস্তৃত এলাকা নিয়ে এই বাড়ী ।ইন্ডিয়ান রাজবাড়ী গুলো যেমন হয় অনেকটা এমন । বাড়ী না যেন কোন রাজপ্রসাদ! ছয় বছর আগে যখন এসেছিলো তখন এই উঁচু সাদা প্রাচীরটা ছিলো না।বাড়ীটাও এতো সুন্দর ছিলো না।এই কয়েক বছরে অনেক কিছু যোগ হয়েছে। সদর দরজা থেকে বাড়ী পৌছানোর জন্য ইটপাথরের প্রশস্ত কালো রাস্তা হয়েছে। দুধারে বড় বড় বিদেশি খেঁজুরের সারি সারি গাছ।তার একটু ভিতরে বিলাসবহুল বাগান দেখা যাচ্ছে।বাগানের আড়ালে ছাই রঙা পুরানো বাংলো বাড়ীটা আবছা দেখা যাচ্ছে।বাংলো বাড়ীটা এই প্রাসাদের অংশ হয়েও যেন বিচ্ছিন্ন কোন অংশ। বাড়ীটার মাথা বরাবর যেন এক গুচ্ছ কালো মেঘ আনাগোনা করছে।দেখলেই কেমন যেন ভুতুড়ে ভুতুড়ে একটা অনুভূতি আসে।ছয় বছর আগের সেই কালো রাতের কথা মনে পরতেই সেহেরের বুক কেঁপে উঠে। সেদিক থেকে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস ফেলে।মনে প্রশ্ন জাগে “মানুষটা এখনো কি সেই ঘরটায় বন্ধী? ”
বিশাল হল ঘরের মাঝ বরাবর বিলাসবহুল সেগুন কাঠের সোনালি রঙের সোফা ফেলা।সোফার মাঝামাঝি সেগুন কাঠের উপর কারুকাজ করা মোটা কাঁচের টেবিল।টেবিলে অপরপাশে মধ্যবয়সী এক মহিলা বসে।চোখে তার সোনালী ফ্রেমের দামী চশমা।লাল রঙের চুল গুলো খোপা করা । মনে হচ্ছে বয়স ডাকার জন্য সাদা চুলের উপর মেহদির রঙ ছড়িয়েছে ।গায়ে হাল্কা বাদামী রঙের সুতি শাড়ী ।চেহারায় বয়সের ছাপ পড়লেও এখনো ভীষণ সুন্দরী।দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়ীর কর্তী।মহিলাটি ভারী স্বরে জিগ্যেস করলেন,”তুমি নিশ্চয় সেহের? “সেহের মাথা তুলে কাঁচুমাচু স্বরে উত্তর দিলো ,”জি।”
বৃদ্ধার কুঞ্চিত ভ্রু সটান হলো।গভীর চোখে সেহেরর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি মিসেস মালিহা খানম। লিয়ানার দাদী ,এই বাড়ীর কর্তী! ”
“গতবার আপনার সাথে দেখা হয়নি। মায়ের কাছে শুনেছি চিকিৎসার তলবে দেশের বাহিরে গিয়েছেন। আপনাকে দেখার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিলো।আজ পূর্ন হলো। “সেহের হাসি হাসি মুখ করে বলল।মালিহা ঠোঁটের কোনে জোরপূর্বক হাসি এনে বললেন”এসেছো ,দেখে ভালো লাগলো।তোমার কথা যতটা শুনেছি তুমি তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দরী ”
সেহের লজ্জা পেয়ে সামান্য হাসলো। মালিহা আবার বলল,”এই বাড়ীতে থাকছো ভালো কথা কিন্তু কারো সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক গড়তে যেওনা । “মালিহার এমন কথায় সেহের বিস্মিত চোখে তাকায়।কথার অর্থ সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি ।প্রথম দেখায় এমন কথা বলার কারণ সেহেরের বোধগম্য হলো না।সে কিছু জিগ্যেস করতে যাবে।এমন সময় কারো ডাক ভেসে আসে।চোখ তুলে সিড়ির দিকে তাকায়।লম্বা রোগা এক তরুনী সিড়ি বেয়ে নামছে। চেহারার গড়ন লম্বাটে। গায়ের রং উজ্জ্বল না হলেও হাল্কা বাদামী।স্ট্রেট চুল গুলো সিড়ির ধাপেধাপে ঝাঁকুনিতে নাচছে।এটাই কি লিয়ানা? তার মায়ের মেয়ে।ছয় বছরে মেয়েটার চেহারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।মোটাসোটা গোলগাল মেয়েটা সাপের মত স্লিম হয়েছে।লিয়ানা সেহেরকে জড়িয়ে বলে,”কখন থেকে তোমার আসার অপেক্ষা করছি,আর তুমি এখন পৌছালে! ”
“গাড়ী পেতে দেরী হয়েছে।”
“রাস্তায় কোন সমস্যা হয়নি তো? ”
“না না,সব ঠিক ছিলো”সেহের মুচকি হেসে উত্তর দিলো।লিয়ানা সেহেরের হাত টেনে বলল,”অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো ,ফ্রেশ হবে রুমে চলো”
সেহের মাথা দুলিয়ে সম্মোতি দিলো।লিয়ানার সাথে গল্প করতে করতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো।কাজের লোক রুমের দরজা খুলে দিলো।রুমে ডুকতেই সেহেরের চোখ কপালে।পুরো ঘর লাইট পিংক আর হোয়াইট রঙে সজ্জিত।রুমের এক পাশে দেয়াল জুরে কাবার্ড। অন্যপাশের দেয়ালে থাক থাক করে শ’খানেক পুতুল সাজানো ।তার সামনেই হোয়াইট আর লাইট পিংক কম্বিনেশনের বড় এক ডিভাইন।ডিভাইনে বড় বড় স্টোন লাগানো।বিছানার সাথে বড় এক ড্রেসিংটেবিল ।ঘরের সব ফার্নিচার একইরকম ভারী কারুকাজ করা। সবকিছু একদম নতুন চকচকে ঝকঝকে ।হয়তো রুমটা ইদানীং ডেকোরেট করিয়েছে।সবকিছু সেহেরের মন মত ডেকোরেট করা।কে করেছে?? মা ! নিশ্চয় মা করেছেন।তা না হলে আর কে করবে।অন্যকারো সেহেরের পছন্দ সম্পর্কে এতোটা জানার কথা না।মায়ের প্রতি অভিমান কিছুটা কাটলো। লিয়ানা বলে,”কিছু প্রয়োজন হলে এই ফোনটায় কল করবে সাথে সাথে নিচ থেকে কাজের লোক হাজির হবে । এটা তোমার রুম ,এই বারান্দা এই ঘর সব কিছু তোমার ।। ইভেন দোতলার এই পাশটা পুরোটাই তোমার দখলে।তোমার যা ইচ্ছে করতে পারো।শুধু ঐদিকটায় ভুলেও যেও না”
“কেন? ঐদিকটায় কি? ভূতের বসবাস? “সেহের ভ্রু নাচিয়ে মজার ছলে প্রশ্ন করে।সেহেরের কথায় লিয়ানা ফিক করে হাসে।
“ভূতের না তার চেয়েও ভয়ংকর কারো বসবাস ।ঐদিকে আরহাম ভাইয়ের রুম।”
” আরহাম কে? তোমার কাজিন? ”
“হ্যা বড় চাচার ছেলে। ভীষণ রাগী পুরো এংরি ইয়াং ম্যান। দাদাজান ছাড়া বাড়ীর সবাই তাকে যমের মত ভয় পায়।তুমি আসার আগে পুরো দোতলা তার দখলেই ছিলো।তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ।”
“তোমার চাচা চাচি কিছু বলেন না? ”
“চাচা চাচী বেঁচে নেই।চাচী বিদেশিনী ছিলেন।অনেক বছর আগে এক এক্সিডেন্টে চাচা চাচীর মৃত্যু হয়।”
“ওহ সরি”সেহের মলিন স্বরে বলে।শান্ত পরিবেশ দেখে লিয়ানা মজার ছলে বলে,”তুমি বরং ভাই থেকে সাবধান থেকো ।ভাইয়ের যা রাগ! ”
“তোমরা বিয়ে করিয়ে দিচ্ছ না কেন? ঘরে বউ আসলে রাগ এমনিতেই নেমে যাবে।”
“ও বাপরে ,বিয়ে আর আরহাম ভাইয়ের! কে চাইবে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে? তাকে কিছু বলার সাধ্যি কার? চারবছর আগে দাদাজান একবার বিয়ের কথা তুলেছিলেন আরহাম ভাই জবাবে সোজাসুজি বলেছেন,তার বিয়ে নিয়ে কাউকে চিন্তা করতে হবে না। তার পছন্দের মেয়ে আছে।সে এখনো অনেক ছোট । সময় হলে আরহাম নিজেই বাড়ী আসবেন । “লিয়ানার কথায় সেহের বেশ চমকায়।কি মুখপোড়া মানুষ রে ভাই! নিজের বিয়ের কথা কেউ এই ভাবে বলে? সেহের মনে মনে ঝটপট আরহাম নামক ব্যক্তির একটা প্রতিচ্ছবি তৈরি করে ফেলে।চেহারার বিশেষত্ব লম্বা উঁচু নাক।যেখানে চব্বিশ ঘন্টা রাগ চড়ে থাকে।মনে মনে নাম ও ঠিক করে ফেলল” রাগী রাক্ষস “।
সেহের মনে মনে ঠিক করলো সে রাগী রাক্ষসটার চোখে পরবে না।সে যখন বাড়ী থাকবে সেহের রুম থেকে বের হবে না।তাই লিয়ানাকে প্রশ্ন করে,”তোমার আরহাম ভাই ঠিক কোন সময় বাড়ী থাকে? ”
“কেন সামনে পরার ভয় পাচ্ছো? মূলত ভাইয়ের বাড়ী ফেরার কোন নিদিষ্ট সময় নেই।কোন কোনদিন বাড়ী ফিরে আবার কোন কোন দিন ফিরে না।বড় রাজনীতিবিদ কি না ।সবকিছু তার হাতের মুঠোয়। ঘাড়ে হাজারো দায়িত্ব।ইলেকশন থেকে শুরু করে পার্টিঅফিস।দাদাজানের সবটা তিনিই সামলায়।তার উপর পারিবারিক ব্যবসা তো আছেই ।বুঝতেই পারছো কত ব্যস্ত মানুষ! ”
সেহের মুখ গোমড়া করে নেয়।এখন থেকে চোখ কান খোলা রেখে সাবধানে থাকতে হবে ।কোন ভাবেই সেই রাক্ষসটার সামনে পরা যাবেনা । একদমই না!
লিয়ানা উৎসাহের সাথে সেহেরের জিনিসপত্র গুছিয়ে দিচ্ছে।সেহের ভাবুক চোখে লিয়ানাকে দেখছে।লিয়ানা তা লক্ষ করে বলে,”কি ভাবছো ? ”
“ভাবছি আমার এখানে আশায় তোমার মন খারাপ হয়নি? ”
“মন খারাপ হবে কেন? ”
“এইযে তোমার আদরে ভাগ বসাতে চলে আসলাম। তোমার হিংসে হয় না? ”
“তা কেন হবে? আমরা ত একই মায়ের সন্তান।আমাদের বাবা আলাদা মা তো একই।তোমার জন্য হিংসে না মন থেকে শুধু ভালোবাসা আসে।কত মিষ্টি মেয়ে তুমি। হ্যা তবে মাঝে মাঝে একটু জেলাসি হয়।তুমি দেখতে কি সুন্দর একদম মায়ের মত ।না না ,পুতুলের মত।মায়ের চোখ ছোট ছোট হওয়ায় চেহারায় চাকমা চাকমা একটা ভাব আসে কিন্তু তোমার চোখ জোড়া বড় বড় একদম পুতুলের মত।আচ্ছা তোমরা চিটাগাং এর সব মেয়েরাই কি এমন সুন্দরী? যেমন গায়ের রঙ তেমন সুন্দর তোমাদের গড়ন।খালারা দেখনা এখনো কতটা সুন্দরী? ”
যেখানে মায়ের সাথে এতোটা বছর সম্পর্ক ছিন্ন ছিলো ।সেখানে নানীর বাড়ীর সাথে আবার কিসের সম্পর্ক?
“আমি উনাদের কাউকে এখনো দেখিনি”সেহের ম্লান স্বরে বলল।লিয়ানা কথা কাটতে বলল,”শুন আমি কিন্তু আপু টাপু বলতে পারবো না। সেহের বলেই ডাকবো ঠিক আছে? আপু কেমন জানো ওল্ডি’স ওল্ডিস মনে হয়।আর তুমিও আমাকে লিয়া বলেই ডেকো ! কেমন? ”
“ঠিক আছে “বলে সেহের এক চিলতে হাসলো।
সারাদিন বিশ্রাম করে কাটালো।লিয়া থেকে খবর মিললো মায়ের ফিরতে অনেক রাত হবে।সেই সাথে এটাও জানলো আজ বাড়ীতে তার প্রতিবেশী রাগী রাক্ষস আসছে।পাশাপাশি থাকবে প্রতিবেশী- ই তো হবে তাই না? ।সেহের সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ডিনার করে নিজের রুমে চলে এলো।ঘুমের বাহানা করে ঘর থেকে আর বের হলো না। বিকাল থেকে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।সেহের এক কানে হেডফোন গুজে রবিন্দ্র সংগীত শুনছে।বারান্দার শীতল হাওয়ায় মন শরীর ছন্দে মেতে উঠেছে।এমন সময়ই রুমের বাহিরে কারো পায়ের ঠকঠক আওয়াজ পায়।তার প্রতিবেশী এসেছে কি?
সেহের ছোট ছোট আলতো পা ফেলে দরজার দিকে যায়। দরজা ফাঁক থেকে মুখ বের করে পুরুষের ছায়া দেখতে পায়।সাথে সাথে দরজা ভিড়িয়ে লাইট বন্ধ করে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে।
গভীর রাত বৃষ্টির বেগ বেড়েছে ।ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ঘন বর্ষণের রূপ নিয়েছে।রুমের জানালা গুলো খোলা থাকায় ছিটে ছিটে বৃষ্টিকণা সেহেরের মুখের উপর পরছে। তন্দ্রারত সেহেরের ঘুমে বেগাত ঘটে।ঘুম ঘুম নিদ্রালস চোখ জোড়া খুলে জানালার দিকে পা বাড়ায়।জানালা বন্ধ করে পিছন ফিরতেই বিছানার সামনে ডিভাইনে কাউকে বসে থাকতে দেখে।অন্ধকারে চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।তবে কোন পুরুষ হবে! সেহের ভয়ে চিৎকার করতে নিলে সেই ছায়াটা তড়িৎ গতিতে এসে মুখ চেপে ধরে সেহেরকে জানালার সাথে একদম মিশিয়ে নেয়।সামনের মানুষটার ঘন ঘন উষ্ণ নিশ্বাস সেহেরের মুখের উপর পরছে।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সেহেরের আঁখি পল্লভ তিরতির করে কাঁপছে ।বাহিরের বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় সামনের মানুষটার বাদামী চোখজোড়া স্পষ্ট ফুটে উঠে।সেই অজ্ঞাত মানুষটা? সেহেরের শরীর ভয়ে থরথর কাঁপছে।শরীর ঘেমে একাকার । চোখ থেকে টপটপ পানি ঝোরছে।শরীর অবশ হয়ে আসছে।চোখে সামনের সব অন্ধকার হয়ে আসছে।মাথা পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে।সেহেরের নিস্তেজ শরীর সামনের মানুষটার বুকে হেলে পরে।
চলবে …..❣️
প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন😊😊😊।