বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর) পর্ব :৬২ ( অন্তিম পর্ব )

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৬২ ( অন্তিম পর্ব )

ঘন কালো আঁধার মাড়িয়ে নতুন দিনের আলো।শীতের ঘন কালো কুয়াশা কাটিয়ে সূর্যের আলো এসে মাটি ছুঁয়েছে। সতেজতা ভরা নতুন সকাল।ফোলা ফোলা চোখ জোড়া সেহের মেলে তাকায়। চোখের সামনে সবটা ঝাপসা ।খানিক সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পরিষ্কার হলো। চারদিক শুভ্র রঙে ছড়াছড়ি । তবে কি সে মারা গেছে? বুকটা আতকে উঠল । তীব্র এক যন্ত্রণা বুকে বাড়ি খেলো। ঘাড় ফিরিয়ে ডান দিকে তাকাতে সুস্থির শ্বাস ফেলল।আরহামকে দেখে বুকের তীব্র যন্ত্রণাটা ধীরেধীরে নিভে গেল।আরহাম সেহেরের হাতে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুঝে আছে।সেহের আরহামকে ডাকতে চাইলো কিন্তু গলা দিয়ে কথা আসছে না। মুখ দিয়ে বের হবার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে । সেহের জোর খাটাতে চাইলে গলায় তীব্র যন্ত্রণা হয়। হাত নাড়াতে চেষ্টা করলে ক্যানোলায় টান লাগে।সেহের ব্যথাতুর আর্তনাদ করে কেঁপে উঠে। আর্তনাদে আরহামের ঘুম ভাঙে ।সেহেরকে চোখ খুলতে দেখে মুখে উৎফুল্লতার হাসি ফুটে উঠে।চোখ গুলো জলে ঝাপসা ।অনবরত সেহেরের চোখে মুখে উষ্ণ ছোঁয়া দিতে লাগে। সেহেরেরও এক হাল।আরহামকে দেখে কেঁদে- ই ফেলে। অশ্রুধারা চোখের কোণ বেয়ে পড়ছে। ভাবেননি আরহামকে আর কখনো দেখতে পাবে!
আরহাম সেহেরকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে। চোখের জলে সেহেরের ঘাড় ভিজছে।আরহাম শব্দহীন কেঁদে যাচ্ছে।সেহের কান্না জড়িত অস্পষ্ট স্বরে বলে ,
“মা আশু কোথায়? তারা ঠিক আছে তো?
আরহাম উত্তর দেয়না শক্ত করে সেহেরকে চেপে ধরে। সামান্য ব্যথা লাগলেও সেহের কোন শব্দ করে। চোখ মুখ খিঁচে সহ্য করে নেয়।আরহামের জড়িয়ে ধরার তীব্রতায় সেহের ঘাবড়ে যায়। আতংকিত স্বরে বলে উঠলো ,” আশু, মা ঠিক আছে তো? ”
আরহাম আরো খানিকক্ষণ চুপ থেকে হাতের বাঁধন আলতো করে। চোখ মুখ মুছে সোজাসুজি ভাবে বসে।সেহেরের চোখের জল মুছে দিয়ে । সামনের সোফার দিকে ইশারা করে।ছোট আশনূহা হাত পা গুটিয়ে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। এক রাতে- ই চোখ মুখের কি হাল। দেখে মনে হচ্ছে কান্নাকাটি করে ঘুমিয়েছে । নোনাজলে এখনো গালে ছাপ পড়ে আছে।আশনূহাকে দেখে সেহের প্রশান্তির শ্বাস ফেলল দেহে যেন প্রাণ ফিরল।উৎকণ্ঠা স্বরে জিজ্ঞেস করল,” মাহ! মা কোথায়? মা কেমন আছে? ঠিক আছে তো? ”
কন্ঠে এক রাশ ভয় আর ব্যাকুলতা । আরহাম সেহেরের গালে হাত ছুঁয়ে আশ্বস্ত স্বরে বলল,” রিলাক্স! এতোটা স্ট্রেস তোমার জন্য ঠিক নয়। আন্টি ঠিক আছে।গতকাল ডিসচার্জ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। পিঠে গুলি লেগেছে তেমন গভীরে যায় নি! ”
সেহের আরহামের জবাবে শান্ত হলো।আলতো স্বরে প্রশ্ন করল,” কত দিন হলো এখানে ভর্তি ? ”
“সাতদিন! ”
‘সাতদিন ‘ শুনে সেহের বিস্ময় আকাশ চুম্বী! এই সাতদিন এখানে অজ্ঞান অবস্থায় পরে ছিল? আরহাম ধপ করে জড়িয়ে ধরল।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস স্বরে বলল,”এই সাতদিন আমার কিভাবে কেটেছে তোমার আইডিয়া আছে? ডক্টর যখন বলেছিল শরীর থেকে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে বাঁচার চান্স কম! আমার মনে হয়েছে এখানেই বুঝি সব শেষ।শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছিল ।দুনিয়ার আলোটাই নিভে গেছিলো।এই সাতদিন নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়েছিল।নূহা যখন মাম্মামকে চাই বলে জিদ করছিল নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় ্মানুষ মনে হয়েছে। এই সাত দিন এক সেকেন্ডের জন্য নূহা তার মাম্মামের কাছ থেকে দূরে যায়নি । ঐ সোফায় বসে অসহায় চোখে তার মাম্মামের জাগার অপেক্ষা করে গেছে।নিজে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম ঐ পরিস্থিতিতে নূহাকে কি করে সামলেছি তা কেবল আমি জানি!
তুমি ছাড়া আমরা অস্তিত্বহীন ।আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে প্রয়োজন । আর কোনদিন নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিবে না। কোনদিন তোমাকে একা ছেড়ে যাচ্ছি না! ভালোবাসি । ”
সেহেরের বুকে অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে।যেখানে সুখ দুঃখ দুটো- ই সমপরিমাণ! দুঃখ হচ্ছে এই ভেবে এই কয়েকদিন আশনূহা আরহামকে কত কি সহ্য করতে হয়েছে।কতটা দুশ্চিন্তায় দিন কাটিয়েছে তারা। আর খুশি হচ্ছে কারণ আরহাম আশনূহা কতটা ভালোবাসে । আজীবনের সব অপূর্ণ ভালোবাসা গুলো যেন এক সাথে পূর্ণতা পেয়ে গেছে। সেহের মিহি হাসল।চোখে সুখের নোনাজল!
খানিকবাদে সেই রাতের ঘটনার কথা মনে করে ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে যায়। চোখে মুখে আতংক ফুটে উঠে।আশরাফ খাঁন যদি আবারো আশনূহা মায়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করে?
সেহের কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,”আ..আরহাম সে..সেই রাতে আশরাফ খাঁন …”
এতোটুকু বলতে আরহাম সেহেরের ঠোঁটে আঙুল রেখে থামিয়ে দেয়।থমথমে স্বরে বলে উঠে ,”হুসস! কিছু বলতে হবে না । আমি সব জানি।আমি আগেই টের পেয়েছিলাম কেউ তোমার আশনূহার ক্ষতি করতে চায়। তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ির সদর দরজায় সিসি ক্যামেরা সেট করি। যেখান থেকে সবটা দেখা যায়। সেদিনের সব ঘটনা আমি জানি। আশরাফ খাঁন- ই আমার বাবা মায়ের খুনি। আর তোমাকেও মারতে চায়! সে তার শাস্তি পাবে ,খুব ভয়ংকর শাস্তি! ”
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে আরহামের চোখ মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়।রক্তিম চোখ শক্ত চোয়াল! সেহের ঘাবড়ে যায়। আরহামের হাত চেপে ভীতু স্বরে বলে ,”ওয়াদা করেন আপনি কিছু করবেন না, আইন নিজের হাতে নিবেন না।কাউকে খুন করবেন না। এই খুনাখুনির শেষ চাই! ”
আরহাম খানিকক্ষণ চুপ থেকে মাথা নত করে শান্ত স্বরে বলে,”ঠিক আছে কাউকে প্রাণে মারবো না! ”
সেহের স্বস্তিকর শ্বাস ফেলল।অমনি পেছন থেকে আশনূহার গলার আওয়াজ ভেসে আসে।ঘুমঘুম চোখ মেলে দাঁড়িয়ে । মুখের ভাবভঙ্গী মেঘাচ্ছন্ন । এখনি বুঝি অশ্রুধারা বৃষ্টি হয়ে নামবে।সেহের মৃদু হেসে মুখ নাড়িয়ে “আশু” বলে ডাকতেই আশনূহা মায়ের দিকে ছুটে আসে।মায়ের বুকে পড়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,”মাম্মাম! আশু মিস ইউ সো মাচ। ”
সেহের মেয়ের মাথা চুমু দিয়ে। শুধু কাঁদতে লাগে।আরহাম মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। সেহেরের সাথে খুনসুটিতে মেতে থাকে।
কেবিনের বাহিরে তফির দাঁড়িয়ে । জ্ঞান ফেরার পর সেহেরকে দেখতে ছুটে এসেছে । আসবে নাই বা কেন প্রথম প্রেম যে!! কিন্তু কেবিনের বাহির থেকে সেহেরের হাসি উজ্জ্বল মুখ দেখে থেমে যায়। সে তার পরিবার নিয়ে খুশিতে আছে। ভিতরের যাওয়ার কি দরকার।থাক নাহ! মুচকি হেসে তাদের দেখছে । ফিসফিস স্বরে “তোর উপন্যসে আমি না হয় সহায়ক চরিত্র হয়ে- ই রইলাম ,কিন্তু আমার উপন্যাসে চিরকাল তুই মুখ্য চরিত্র। যাকে ঘিরে আমার গল্প! ”

আরহাম কেবিন থেকে বেরিয়ে তফিরকে দেখল।তফিরের পাশের চেয়ারটায় বসে।দুজন সোজাসুজি বসে। নিরস মুখশ্রী দুজনার।সেহেরের সামনে বেস্টফ্রেন্ড বললেও দুজন দুজনকে খুব একটা পছন্দ নয় তা স্পষ্ট তাদের মুখে ভেসে। একমাত্র সেহেরের জন্য- ই দু মেরুর দুজন এক সুতায় বেঁধেছে!
তফির মুচকি হেসে বলে,” সেহের জ্ঞান ফিরেছে? কেমন আছে? ”
“হুম , ভালো! ভিতরে যাবে না! ”
তফির না সূচক মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে,”উহু! লজ্জাবোধ হচ্ছে তার সামনে দাঁড়াতে । তুমি আমার কাঁধে দায়িত্ব দিয়েছিলে ,আমি পারিনি । ”
“এতে তোমার দোষ নেই ।আশরাফ খাঁনে্র প্ল্যান ছিল নিখুঁত।আঁচ করা ভীষণ মুশকিল ।ঘরে শত্রু রেখে বাহিরে তালাশ করেছি আমরা! ”
আরহাম তাচ্ছিল্য হাসল।তফির আরহামের দিকে ফিরে বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করে, “কিন্তু তুমি কি করে বুঝলে? একদম ঠিক সময় ফিরে এলে যে! ”
“মন অশান্ত ছিল। সেই সময় সেহেরকে ভীষণ রকম প্রয়োজন ছিল ,তাই ফিরে এসেছি! ”
তফির আবারো তাচ্ছিল্য হাসল। বলল,
“ভীষণ ভালোবাসো তাই না? ”
“অন্তহীন! অকল্পনীয়, তাকে ঘিরে- ই আরহাম খাঁনের অস্তিত্ব । ”
তফির চুপ হয়ে যায়।আরহাম বলে,”সব কাজ শেষ? ”
“হ্যাঁ।কোন প্রমাণ নেই ।আশরাফ খাঁনের অন্ধকার জগতের সব খবর খানিকের ভেতর সবার কাছে পৌঁছে যাবে।
বাই দ্যা ওয়ে তুমি করে জানলে এসব অবৈধ ব্যবসায়ের খবর ।উনি ভীষণ সাবধানে সবার আড়ালে সব করেছে। এমন কি তোমার ও। ”
“আমি তার হাতে গড়া । তার প্রতিটা শিরা শিরা চিন্তাধারার সাথে অবগত।সব ত থ্য বের করতে খুব একটা খাটতে হয়নি।আমি চাই না তার মৃত্যুর পর কেউ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করুক! ”
“মৃত্যু? ”
তফির ভ্রু কুঁচকে বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করে। তখনি হসপিটালের টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখায়।”খানিক পূর্বে- ই আশরাফ খাঁনের আগুনে পুঁড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার । ডক্টরদের ভাষ্যমতে প্রথমে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে তারপর ক্ষতবিক্ষত শরীর আগুনে পোড়ানো হয়েছে। খুনি কে এখনো জানা যায়নি।কোন প্রমাণের সন্ধান মিলেনি বেশ বিচক্ষণতার সাথে খুন করেছে।
পুলিশের ধারণা মতে কিছুদিন পূর্বে আশরাফ খাঁনে বাড়িতে আক্রমণকারী- ই খুনি! ”
তফির নিউজ দেখে ঘাড় ফিরিয়ে আতংকিত চোখে আরহামের দিকে তাকায়।আশরাফ খাঁনের খুনের সন্দেহের আঙুল তার দিকে- ই ।বাড়িতে আক্রমণকারী তিনি নিজে- ই ছিলেন । অনুসন্ধান করলে আঙুল তা দিকে ঘুরে আসবে ।
তফির হেসে বলে “মাস্টার প্ল্যান ”
আরহাম বেশ শান্ত।রহস্যময় হেসে কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়ায় ।

বর্তমান……..

অন্ধকার ঘরটায় হুট করে আলো জ্বলে উঠে। ডক্টর সিভিয়ার চোখে মুখে ভয় আতংক উভয়- ই। এতো বছরের ক্যারিয়ারে অনেক রোগী দেখেছেন ।অনেক কেস হেন্ডেল করেছেন তিনি । কিন্তু এমন গায়ে কাটা ধরানো ভয়ংকর কিছু কোন দিন শুনেনি ।খানিকক্ষণ বিশ্রামের পর আরহাম চোখ খুলে।আরহাম চোখ খুলতে সিভিয়া জোর পূর্বক মুচকি হেসে বলে,”আর ইউ অলরাইট মিস্টার আরহাম? ”
আরহাম সোজাসুজি বসতে বসতে বলে ,” ইয়েস ডক্টর! ”
“ফাইন ! এখানে কিছু মেডিসিন আছে। আর অবশ্যই রেগুলার কাউন্সিলিং এর জন্য আসবেন । ”
“ওকে ,ডক্টর! ”
“দেশে ফিরছেন কবে? ”
“আজ ”
“আশনূহা ,সেহের নিশ্চয়ই ভীষণ অধৈর্য ভাবে অপেক্ষা করছে! ”
আরহাম মুচকি হেসে বলে ,” তা আর বলতে।সেহেরের আসার ভীষণ ইচ্ছে ছিল কিন্তু আশনূহাকে একা রেখে আসতে মন মানেনি।তাই আসা হয়নি।
আসি ডক্টর ”
“ওকে , ভালো থাকবেন ”
“আপনিও! ”
আরহাম ইজি চেয়ার ছেড়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়।ডক্টর সিভিয়ার মনে অদ্ভুত এক সংকোচ বোধ কাজ করছে। জিজ্ঞেস করবে কি করবে না ভেবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। এক সময় সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে,” স্টপ আরহাম! ”
আরহাম থামে। কিন্তু পিছন ফিরে তাকায় নাহ। সিভিয়া বলে,”আশরাফ খানের খুন কি আপনি করেছেন? ”
আরহাম হিংস্র হাসে বলে ,” লোহা লোহাকে কাটতে পারে।কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলে। আমার প্রিয় জিনিস ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখি কি করে? ”
সিভিয়া আতকে যায়। আরহাম কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

আজ বিশ দিনপর আরহাম দেশে ফিরছে ।সেহের আশনূহা অধৈর্য ভাবে অপেক্ষা করছে।সেহেরের কাছে মনে হচ্ছে কতকালের বিচ্ছেদের পর আবার তাদের দেখা হবে। প্রতিটা সেকেন্ড বছর সমান মনে হচ্ছে। এক সাথে এতোটা বছর পাড় করেছে। আশনূহা এখন দশবছরের । কিন্তু অনুভূতিরা এখনো সেই আগের মত সতেজ। ভালোবাসার সেই কি মধুর টান।ভাবনা চিন্তার মাঝে- ই আরহামকে দেখতে পায়। টলি টেনে আসছে। সেহেরের ঠোঁটের কোণের হাসি আরো গাঢ় হয়। এতো মানুষের সামনে আরহামের দিকে ছুটে যেয়ে জড়িয়ে ধরে ।আরহামও আবশে চোখ বুজে নেয়। যেন কত কাল পর প্রিয়তমার ছোঁয়া । সেই মিষ্টি ঘ্রাণ !
আরহাম জড়িয়ে ধরে কানে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ফিসফিসে বলে,”ভালোবাসি বউ! ভীষণ মিস করেছি । ”
“আমিও ”
খানিক বাদে আশনূহা ভিড় ঠেলে বাবার কাছে চলে আসে। বাবাকে জড়িয়ে বলে,”বাবাই! তুমি কি নূহাকে ভুলে গেছো? তোমার নূহাকে মিস করোনি? সব মিস শুধু মাম্মামের জন্যই? ”
আরহাম হেসে ফেলে। বলে,” অবশ্যই! অনেক মিস করেছি আমার নূহা মাকে! ”
নূহা হেসে ফেলে।বলে,”জানো বাবা আমি মাম্মামের অনেক খেয়াল রেখেছি । কাউকে মাম্মামের কাছে আসতে দেই নি! ”
“দ্যাটস মাই গুড ডটার ”
সেহের বাবা মেয়ের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ।আরহাম আশনূহা আগে আগে হাঁটছে সেহের তাদের পাশে- ই। আরহাম আশনূহাকে নিয়ে গাড়িতে বসেছে। সেহের যেই ডুকতে যাবে এমন সময় কারো সাথে সেহেরের ধাক্কা লাগে।সেহের থেমে যায়। লোকটা সেহেরের কোমড়ছুঁয়ে। ঠোঁট কামড়ে বাজে ইশারা করে। সেহের কপাল কুঁচকে মনে মনে গালি দিয়ে গাড়িতে উঠে। মন মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে । হুট করে আরহাম বলে, উঠে” ওহো শিট ।ভিতরে ব্যাগ ফেলে এসেছে। তোমরা বসো আমি এখনি আসছি! ”
“ওকে ”
আরহাম বেরিয়ে যায়।সেহের আশনূহা গাড়িতে। আরহাম ঘড়ি ধরে বিশ মিনিট পর ফিরে আসে।গাড়িতে বসে সিটে গা এলিয়ে দেয়।ক্লান্ত স্বরে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে,” গাড়ি ছাড়ো ”
সেহের প্রশ্ন করে ,”আপনার ব্যাগ? ”
“হারিয়ে গেছে ”
সেহের ভ্রু কুঁচকে নেয়। আরহামের কাপাল বেয়ে ঘাম পরছে।মুখ লাল হয়ে আছে।সেহের আরহামের কাছে ঝুকে উড়নার কোন দিয়ে বেশ আদুরে ভাবে ঘাম মুছে দিচ্ছে। আরহাম চোখ বুজে মুচকি হাসে বলে,” এতো আদর খুব বেশি মিস করেছ বুঝি? ”
সেহের মুচকি হেসে বলে,”অনেক! ”
আরহাম মৃদু হাসে। সেহের স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্ন করে ,”লোকটা বেঁচে আছে? নাকি মারা গেছে? ”
আরহাম চোখ বুজে বেশ শান্ত গলায় উত্তর দেয়,”বাহ! বুদ্ধি হয়েছে দেখছি ।
তোমার ওয়াদা ভাঙি কি করে? ভয় নেই জানে মারিনি প্রাণে বেঁচে আছে। ”
সেহের অভিযোগের স্বরে বলে,” এতো রাগ! আর কত? এবার থামুন । আশনূহা তো আপনার কার্বন কপি এবার কি তাকেও নিজের মত বানাবেন? ”
আরহাম চোখ বুজে থাকা অবস্থায় কপাল কুঁচকে নেয় বলে,”কাকে? ”
সেহের ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে আরহামের কানের কাছে ফিসফিসে বলে,”যে আসছে! জুনিয়র আরহাম! ”
আরহাম চট করে চোখ খুলে। বিস্মিত স্বরে বলে,” আর ইউ সিরিয়াস? তুমি প্রেগন্যান্ট? আমি বাবা হচ্ছি? ”
সেহের চোখ নামিয়ে লাজুক হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।আরহাম চট করে জড়িয়ে ধরে। আশেপাশে কোন কিছু চিন্তা না করে সেহের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।অনবরত হাতে চুমু খাচ্ছে। আশনুহার আওয়াজে হুশ ফিরে। আশনূহা খুশি হয়ে হাতে তালি দিয়ে বলে ,”মাম্মাম আমি আপু হবো? আমাদের ছোট বাবু আসবে! ইয়ে..ই ”
আরহাম বুকে সেহেরকে বুকে আগলে ধরে।কানের পেছন চুল গুজে দিতে দিতে বলে ,”আমার সুখের চাবি! ভালোবাসি । ”

“আমিও অনেক বেশি ভালোবাসি ”

__________

দিশা আবারো রাজনীতিতে যোগ হয়েছে ।উচ্চপদে আছেন।দিশার স্বামী এখন কিছুটা সুস্থের পথে। মালিহা খাঁনম স্বামী মৃত্যুর পর সব অপকর্মের কথা জেনে ভেঙে পড়েছিলেন । বয়স বেড়েছে সেই সাথে দুর্বলতাও। আজকাল আশনূহা সেহেরের সাথে উনার দিন কাটছে। এদিকে লিয়া তার পরিবার নিয়ে ভীষণ সুখে আছেন। লিয়ান সব সময়ের মত আশনূহার দিকে ফ্যালফ্যাল মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আর আশনূহার সবসময়ের মত লিয়ানকে অপছন্দ । আরহামের ভালোবাসা কমেনি বরং সময়ের সাথে বেড়েছে ।এখনো সেই পাগলামো প্রেম দুজনের মাঝে। সবসময়ের মত সেহেরের মাঝেই মুগ্ধ!
সেহেরের পেট ফুলেছে । সাত মাস চলছে। এই তো আর কিছুদিন তারপর নতুন অতিথির আগমন!

পৃথিবী যেমন বৈচিত্র্যময় । তেমনি ভালোবাসাও ।মনে সাদা ক্যানভাসে হাজারো প্রেমের রঙে প্রণয় ছবি আঁকা হয়! সব ভালোবাসার গল্প যে এক হবে এমন নয় ,কারো কারো প্রেম বিষাক্ত ও হয়!

সমাপ্ত 🌺

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দুঃখীত দেরীতে দেওয়ার জন্য। প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊।
এতো সাপোর্ট আর ভালোবাসা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ,এতো গুলা ভালোবাসা ।
খুব তাড়াতাড়ি নতুন গল্প নিয়ে আসবো পেজে চোখ রাখুন ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here