বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ১০

0
4944

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১০
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে আসে প্রহর।চোখের জল মুছে নিয়েছে।নিচে আসতেই দেখে কুহেলিকা এক হাতে তজবি নিয়ে দাড়িয়ে।

বাদ মাগরিব এই সময়টা কুহেলিকা আল্লাহর ধ্যানে কাটান।আল্লাহর একাত্মতা লাভ করার চেষ্টা করেন।আর তার উত্তম মাধ্যম হলো নামাজ।মাগরিব নামাজ আদায় করে এশার এর আগ পর্যন্ত নফল নামাজ আদায় করেন।বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন কারনে না পড়তে পারা নামাজের কাযা আদায় করেন।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হলো নামাজ।পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর উপর ফরয।নামায হলো আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার অন্যতম মিরাজ।নামাযের মাধ্যমে যে শুধু আত্নার পরিশুদ্ধতা হয় তা নয় বরং শারীরিক ব্যায়ামও হয় যা আমাদের সুস্থ জীবনযাপনের সহায়ক।

প্রহর এর মলিন চেহারা দেখে কুহেলিকা ঠান্ডা কন্ঠে বললেন—

“মন খারাপ??

“উহু।”

“নামাজ পড়েছিস??

“নাহ।পড়বো।”

“তাড়াতাড়ি পড়ে নে।নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায়ে সওয়াব বেশি।”

“হুম।”

“সত্যি করে বলতো কী হয়েছে??

প্রহর দীপ্ত কন্ঠে বলল–

“দেখোনা,আজ ইনশিরাহ আপুর বার্থডে আর তোমার ওই পাগল ছেলে জোর করে আমাকে নিয়ে যেতে চায়।”

কুহেলিকা তজবি তে চুমু খেয়ে মৃদু কন্ঠে বললেন–

“ইচ্ছে না হলে যাওয়ার দরকার নেই।ওকে আমি বলে দিচ্ছি।”

“না,না।বলতে হবে না।আমি যাবো।”

“আচ্ছা।যা এখন নামাজ টা পড়ে নে আগে।”

“আচ্ছা।”

কুহেলিকা রান্না ঘরে যান।চুলার উপর থেকে গরম পানির পাতিল নামিয়ে তা হট ওয়াটার ব্যাগে ভরে নেন।আজকাল পায়ের ব্যাথা টা একটু বেড়েছে।গরম সেঁক দিলে আরামবোধ হয়।
,
,
,
ইনশিরাহ এর বার্থডে কেক কাটা শেষ।যেহেতু সবাই এখানে ম্যাচিউর তাই হই হুল্লোড় তেমন কেউ ই পছন্দ করে না।
আশফিক,আজরাহান পাশাপাশি বসে আছে।নির্ধা আর শিহরন তাদের প্রত্যহ জীবনের কাহিনী বলছে।আর মারশিয়াদ তার মোবাইলে ব্যস্ত।বার্থডে গার্লও চুপচাপ বসে আছে।নিরণ কে নিয়ে ভিতরের ঘরের ব্যালকনি তে দাড়িয়ে আছে প্রহর।কেমন যেন একটা মায়া কাজ করে ওর নিরণ এর জন্য।আর নিরণ তার ভালোবাসার কমতি রাখে না।প্রহর কে দেখলেই উচ্ছলিত হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ওর কোলে।একের পর চুমু একে যাচ্ছে প্রহর নিরণ এর গালে,ঠোঁটে,কপালে।
সবার কথা বলার মাঝ থেকে উঠে ব্যলকনিতে যায় আজরাহান।ধীর পায়ে গিয়ে প্রহর এর পাশে ওর দিকে মুখ করে ব্যালকনির বাউন্ডারি দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ায়।আজরাহান কে দেখে প্রহর কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।অর্ধ চাঁদের রুপালি আলোয় এক রহস্যময়ী লাগছে প্রহর কে।বাতাসের ক্ষীনতায় ওর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখে আছড়ে পরছে।প্রহর নিরণ এর গাল দুটোতে হালকা চাপ দিয়ে বলল–

“দেখো,দেখো নিরণ।
ওই যে চাঁদ মামা।প্রহর ছড়া কাটে”””আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা।”

চাঁদের দিক থেকে হাত নিয়ে নিরণ এর কপালে ছুয়াতে ফিক করে হেসে দেয় নিরণ।প্রহর ওর নাক দিয়ে ঘষা দেয় নিরণ এর ফুলকো গালে।আবার কয়েকটা চুমু খেয়ে নেয়।আজরাহান ধ্যানমগ্ন হয়ে প্রহর এর বাচ্চামো দেখছে।হালকা হেসে বলল–

“বাবু ভালো লাগে তোর??

প্রহর শান্ত কন্ঠে বলল–

“হুম।”

“তাহলে বিয়ে করে নে আমাকে।”

প্রহর স্থির,নিশ্চল।কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না সে।আজরাহান আবার দৃঢ় কন্ঠে বলল—

“কথা দিচ্ছি,টুইন বেবির মা বানাবো তোকে।”

আজরাহান এর কথায় প্রহর কোনো বিরূপ অভিব্যক্তি দেখালো না।শান্ত ভঙিতে একবার তাকালো আজরাহান এর দিকে।ভিতর ঘরে পা বাড়ায় প্রহর।দরজার কাছে আসতেই আজরাহান বলল—

“এক রাত কাটিয়ে দেখ আমার সাথে।”

প্রহর তার চলার গতি থামায় নি।আজরাহান এর কথা তার কর্নগহ্বরে নাড়া দিলেও সে সাড়া দেয় নি।আজরাহান তার বুকের উপর ভাজ করা হাত নামিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে এক লম্বা শ্বাস নিলো।আর বলল—“আর কতো নিচে নামাবি তুই আমাকে!!
তবে তোকে নিজের করে পাওয়ার জন্য যত নিচেই নামতে হবে আমি নামবো।তোকে যে আমার হতেই হবে ডিঙি নৌকা।
আজ,আগামী আর যতদিন আমার অস্তিত্ব আছে এ ধরায়।”

নিরণ কে নিয়ে নির্ধার পাশে বসতেই ও বাবু কে নিয়ে নেয়।প্রহর কে বলল—

“কী হয়েছে প্রহর??
তোমার মুখটা এমন শুকনো কেনো??

প্রহর বিরস কন্ঠে বলল—

“কিছু না।এমনি।”

নির্ধা প্রহরকে টেবিলের উপর থেকে বিরিয়ানির প্লেট দেয়।এখন পর্যন্ত কিছুই খায়নি সে।

খাবার খাওয়া শেষ হলে সব থালা বাটি নিয়ে কিচেনে রাখে ইনশিরাহ।ট্যাপ ছেড়ে সেগুলো ওয়াশ করছে।পাশেই মারশিয়াদ দাড়ানো।বলল—

“গিফ্ট পছন্দ হয়েছে তোমার??

“হ্যাঁ।
তুমি কী করে বুঝলে এইসব আমার পছন্দ!!তোমার তো এইসবে ইন্টারেস্ট নেই।”

“একজন হেল্প করেছে।”

ইনশিরাহ মাথা উঠিয়ে আগ্রহদীপ্ত কন্ঠে বলল—

“কে সে??

“মিষ্টি।”

হালকা হেসে উঠে ইনশিরাহ।আর বলল—

“তোমার এই স্বভাব আর গেলো না।নিশ্চয়ই তুমি এই নাম দিয়েছো!!
তার নাম কী??

মারশিয়াদ কিছুক্ষন মাথা হেলিয়ে মনে করার চেষ্টা করছে এমন অভিব্যক্তি করলো।আর বলল–

“মনে নেই।”

“মনে থাকলেও বলবে না।”

মারশিয়াদ ঠোঁট বাকিয়ে হাসে আর বলল–

“ভালো বুঝতে শিখেছো তুমি আমাকে।”

“আমার নামটাও তো আজ পর্যন্ত পুরোটা ডাকলে না।”

“এতোবড় নাম আমার পক্ষে ডাকা সম্ভব নয়।ইউ নো দ্যাট।”

“যাক।অবশেষে কাউকে তোমার পছন্দ হলো!!!

“পছন্দ না।
সে একদম তার মতো কথা বলে।ফর দিস, আই ফিল সামথিং ফর হার।”

“তুমি এখনো তাকে ভুলতে পারো নি??

“তেমন কিছু নয়।আই ফরগেট হার।
বাট আই ডোন্ট ফরগেট হার মেমোরি নেভার,এভার।”

“ভাগ্য বড় নির্মম।”

“যথার্থ।
তাকে উপর ওয়ালা আমার ভাগ্যে লেখেনি।কিন্তু ভাগ্য তাকে আমার কাছে টেনে নিয়ে এসেছে।”

“তুমি একবার ট্রাই করে দেখতে পারতে??

“উহু।
তাহলে আমার আর তোমার বাবার মধ্যে কী পার্থক্য থাকতো??

“একদম ওই লোকটার নাম আমার সামনে নিবে না।আই জাস্ট হেট হিম।ইউ নো দ্যাট।”

“মি অলসো।”

“তোমাকে দেখলেই আমার ওই লোকটাকে মনে পড়ে যাকে আমি এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি।”

“আই উইশ যদি আমি দাদার জায়গায় থাকতাম।তাহলে তোমার মায়ের সাথে এমন হতো না।”

ইনশিরাহ বাকা চোখে তাকিয়ে বলল–

“চেঞ্জ দ্যা টপিক।”

“ওকে।এজ ইউর উইশ।
আশফিক কে নিয়ে কী ভাবলে!!ছেলেটা কিন্তু যথেষ্ট ভালো।”

“এইসব নিয়ে ভাবার সময় নেই আমার।”

“তুমি আমার থেকে কমপক্ষে পাঁচ বছরের ছোট।তার পরও তোমার দীপ্ততা আমার থেকে শতগুন।”

“আজ এখানে থেকে যেতে পারো।”

“তাহলে তোমার বন্ধুদের কী বলবে।আমাদের মাঝে কীসের সম্পর্ক???

ইনশিরাহ ভ্রু কুচকিয়ে দাঁত মুখ খিচে।এই নিয়ে কথা বাড়ানোর কোনো ইচ্ছে তার নেই।

ওদের এইসব কথা আড়াল থেকেই শুনেছে আশফিক আর আজরাহান।আশফিক বিমর্ষ চেহারা নিয়ে কাউচে বসে।আজরাহান ক্রোশ ভরা কন্ঠে বলল—

” আমি আগেই বলেছিলাম মারশিয়াদ এর মাথায় কিছু একটা চলছে।দেখলি তো এইবার!!

আশফিক রাশভারী কন্ঠে বলল–

“ও মোটেই তোর মতো না।আর ইনশিরাহ কে আমি ভালো করেই চিনি।”

“দেখ তুই কী চিনিস আমি জানি না।জানিস তো””ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।”

আশফিক তার কন্ঠে হালকা রোষ এনে বলল—

“আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।তুই তোর ডিঙি নৌকা কে নিয়ে ভাব।
দেখ গিয়ে কোন সায়রে সাতার কাটছে।”

আজরাহান অক্ষি প্রজ্জ্বলিত করে শক্ত কন্ঠে বলল–

“প্রহর কে এইসবের মাঝে একদম আনবি।আর ওর একমাত্র জলসিন্ধু আমি।আমি ছাড়া আর কারো ভালোবাসার সায়রে ভাসার অধিকার ওর নেই।”

“এখানে একা দাড়িয়ে আছেন যে??

মারশিয়াদ এর কন্ঠ শুনে ম্লান হাসে প্রহর।আর উদাসী কন্ঠে বলল—

“ভালো লাগছে না।তাই।”

মারশিয়াদ ওর ব্লেজার এর পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স দেয়।প্রহর খুলে দেখে হোয়াইট কালারের একটা ব্রোস।প্রহর ছোট্ট করে হেসে বলল–

“আমার জন্য??

“নাহ।আমার রেড চিলির জন্য।”

“স্টোনের??

“ডায়মন্ড এর।”

মারশিয়াদ ওকে আরেকটা লম্বা মতো পাতলা গড়নের রেপিং মোড়ানো কিছু একটা দেয়।প্রহর উৎসুক কন্ঠে বলল—

“এইটা কী??

“পেন।আপনার সানায়া আপু কে দিবেন।”

“আচ্ছা।
একটা কথা বলবো জান ভাইয়া??

“বলেন।”

“আপনি বিয়ে করছেন না কেনো??

মারশিয়াদ গা দুলিয়ে হেসে বলল–

“আমার কী এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে না কী!!দেখেন না আমার দুধের দাঁতও ও এখনো পড়ে নি।”

মারশিয়াদ ওর দুই পাটি দাঁত একসাথে খিচে অধর প্রসারিত করে প্রহর কে দেখায়।ওকে এভাবে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে প্রহর।কিন্তু পরক্ষনেই আবার সংকীর্ন অধরে মলিন হয় তার চেহারা।”

“হাসি বন্ধ করলেন কেনো রেড চিলি!!
হাসেন।হাসলে আপনাকে ভালো লাগে।”

প্রহর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল–

“তাহলে রাহান ভাইয়া কেনো সবসময় বিয়ে বিয়ে করে??

“কারণ সে আপনাকে ভালোবাসে।”

প্রহর সন্দিহান স্বরে বলল—

“ভালোবাসলেই কী বিয়ে করতে হয়!!!

“ভালোবাসার বৈধ চুক্তি বিয়ে।আপনার রাহান ভাইয়া তার ভালোবাসার বৈধতা চায়।এতে দোষের কিছু নেই।”

ছলছল করে উঠে প্রহর এর দু চোখ।ভেজা কন্ঠে বলল–

“করবো না আমি তাকে বিয়ে।কখনো না কখনো না।”

প্রহর চলে যেতেই মারশিয়াদ হালকা হেসে বলল–

“বিয়ে তো আপনাকে করতেই হবে রেড চিলি।আপনার রাহান ভাইয়া তো আপনাকে এতো সহজে ছেড়ে দিবে না।যেকোন কিছুর মূল্যেই সে আপনাকে নিজের করে নিবে।আপনাকে যে তার হতেই হবে।”
মারশিয়াদ এর বুক চিরে বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস।

,
,
,

মধ্য দুপুর।সকালের খাবার সেড়ে কিছুক্ষন আবার ঘুমিয়েছে আজরাহান।আজ কলেজ অফ।তাই ঘুমায় সে নিশ্চিন্তে।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে কুহেলিকা আর সানায়া বেশ সাজগোজ করেই দাড়িয়ে আছে।আজরাহান শয়তানি হাসি দিয়ে বলল–

” এই অবেলায় ভঙ সেজে কোথায় যাচ্ছো??

কুহেলিকা সপ্রতিভ হয়ে বললেন—

“মাইন্ড ইউর টাঙ্গ।এইসব কী ধরনের কথা আজরাহান??

আজরাহান ঢোক গিলে বলল—

“সরি মাই কুইন।
তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে আজ সার্কাস চলবে!!
তা শো টা শুরু হবে কখন??

কুহেলিকা ছেলের কাছে এসে কান টেনে ধরলেন।হালকা শব্দ করে আজরাহান বলল—

“কুইন,,
লাগছে।ছাড়ো।”

“আরেকটা বাজে কথা যেনো আমি না শুনি।”

“ওকে,ওকে।
তা তোমরা যাচ্ছো কোথায়???

“শপিংমল এ।
শুধু আমরা না।নুরাইসা আর নন্দিতাও আসছে।”

“ও তাহলে আজ মহিলা পল্টন বিয়ের শপিং এ যাবে!!

“শুধু আমরা নই।তুমিও সাথে যাচ্ছো।”

আজরাহান বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল—

“আমি কেনো যাবো তোমাদের মেয়েদের মধ্যে??

“এতোগুলো মেয়ে কী একা যাবে না কী!!!

“তো!!
যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পড়শীর ঘুম নাই।পারবো না আমি যেতে।ভাইয়ার বিয়ে ভাইয়া কে নিয়ে যাও।”

কুহেলিকা শক্ত ও স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন–

“সামান এর জরুরী কাজ আছে তাই সে অফিসে গেছে আর তোমার বাবা নিশ্চয়ই আমাদের সাথে যাওয়ার অবস্থায় নেই।”

সানোয়ার আহমেদ নিজের রুমে শুয়ে আছেন।শরীর টা আজকাল ম্যাঝম্যাঝ করে।কিছু ভালো লাগে না তার।

“তাই বলে আমাকে বলির পাঠা বানাবে!!

“কেমন আছেন আনটি??

নুরাইসার কন্ঠে সপ্রতিভ হয় সবাই।আজরাহান কে দেখেই ভেঙচি কাটে নুরাইসা।আজরাহান বাকা হাসে।আজ মারমেইড কে ছাড়া যাবে না।

নন্দিতা মাথায় কাপড় টেনে সালাম করে কুহেলিকা কে।সানন্দে কুহেলিকা নন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে আঁখি ভরা চোখে তাকিয়ে বলল–

“আমার ঘরের চাঁদ তুই।তোর স্থান আমার পায়ে না বুকে।”

নন্দিতা কে জড়িয়ে ধরে কুহেলিকা।আজরাহান বলল–

“কী মেলোড্রামা শুরু করলে??
আমার সময় নেই।কাজ আছে।”

সবাই যাওয়ার জন্য বাইরে এসে দাড়ায়।নন্দিতারা গাড়ী নিয়ে এসেছে।ড্রাইভার সহ গাড়িতে পাঁচজন বসতে পারবে।তাই আজরাহান বলল–

“তোমরা গাড়ীতে যাও।আমি প্রহর কে নিয়ে রিক্সা তে আসছি।”

প্রহর চোখ ছোট ছোট করে বিরক্তি নিয়ে বলল–

“যাবো না আমি আপনার সাথে।আপনি সানায়া আপুকে নিয়ে যান।”

“ওই হাতি বসলে আমি বসবো কোথায়??

সানায়া ভ্রু ক্রুটি করে।ফোস ফোস করতে করতে বলল–

“আমি হাতি!!!
দেখলে মা ভাইয়া কী বলল!!

আজরাহান সানায়ার কানে কিছু বলতেই ও শান্ত হয়।সানায়া কে নিবে না আর নুরাইসা কে আজরাহান এর সাথে দেওয়া সেইটা দৃষ্টিকটু হবে।তাই বাধ্য হয়ে প্রহর কেই ওর সাথে যেতে হয়।
,
,
আজরাহান বেশ নড়াচড়া করছে।প্রহর একদম চেপে বসে আছে।তারপরও আজরাহান বারবার ওর গায়ের সাথেই লেপ্টে পড়ে।রিক্সার হুড উঠাতে গেলেই প্রহর ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলল–

” হুড কেনে উঠাচ্ছেন আপনি??

“দেখিস না রোদ উঠেছে।গরম লাগছে আমার।”

“আপনার গরম কোথায় লাগছে আমি ভালো করেই জানি।”

আজরাহান ওর কানের কাছে গিয়ে বলল–

“তাহলে দে ঠান্ডা করে।”

“চুপ করে বসেন আপনি।”

রিক্সাওয়ালা মামা হেসে হেসে বললেন—

“মামার মনে হয় নতুন বিয়া হইছে!!

“জ্বি মামা।এই তো এক সপ্তাহ হলো।”

“আপনি মিথ্যে কথা কেনো বলছেন??

“মিথ্যে কখন বললাম!

প্রহর দ্বিরূক্তি করে না।নির্বাক হয়ে বসে থাকে সে।রিক্সা তার আপন গতিতে চলছে।আজরাহান ঐশ্বরিক সৌন্দর্য অবলোকন করে তার পাশে বসে থাকা তার প্রেয়সীর চোখের গাঢ়তায়,অবাধ্য চুলের অগোছালো ভাব,নাকে জমা বিন্দু বিন্দু ঘামে।এক মিষ্টি গন্ধ কড়া নাড়ে তার নসিকাগ্রন্থী তে। প্রহর আড়চোখে দেখে আজরাহান গ্রোগাসে ঘিলছে ওকে।এই জন্যই ও এই লোকটার সাথে আসতে চায় নি।আজরাহান ওর আরেকটু কাছে চেপে হিসহিসিয়ে বলল–

“তোকে না বাড়ন করেছি লিপস্টিক দিতে না।”

“দেই নি তো।”

“মিথ্যে কেনো বলছিস??

“কই মিথ্যে বললাম!!

“তাহলে দে আমি চেক করে দেখি।”

“আপনি আসলেই একটা খবিশ।”

“নতুন কিছু বল।সবসবময় একই উপাধি ভালো লাগে না।”

প্রহর প্রতিত্ত্যুর করে না।এর সাথে কথা না বলাই ভালো।
আজরাহান কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও নরম গলায় বলল–

“দে না একটা চুমু খাই।আই সয়ের একটাই।
আর আমি সকালে ব্রাশ করে এসেছি।রোজ দুইবার করি।আর মাউথফ্রেশনার ও ব্যবহার করি।”

” উফফফফফফ!!
আপনি চুপ করবেন।নাহলে এখন ধাক্কা মেরে আপনাকে রিক্সা থেকে ফেলে দেবো।”

“দে ফেলে।”

“আপনি আসলেই একটা খবিশ,একটা শয়তান,ইতর,উঝবুক,উড়নচন্ডি।”

আজরাহান হা হা করে হেসে উঠে।আর বলল–

“এইবার কিছু নতুনত্ব ছিলো।দ্যাটস গুড।

রিক্সা ওয়ালা আবার হেসে ওদের দিকে ঘাড় বাকিয়ে বলল–

“মামা মনে হয় মামি রে খুব ভালবাসেন??

“সে আর বলতে!!
টাকা থাকলে আজই একটা তাজমহল বানিয়ে দিতাম।”

আজরাহান থেকে চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাতেই চিৎকার করে উঠে প্রহর–

“রাহান ভাইয়া!!!!!

ঝনঝন শব্দ হতে থাকে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here