বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ৯

0
5060

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ৯
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

বাসের অপেক্ষায় তটস্থ হয়ে দাড়িয়ে আছে সানায়া।সকালের সময়টা প্রচন্ড ভীর ভাট্টা থাকে।কোলাহল পূর্ন বাজারের পাশেই দাড়িয়ে আছে সানায়া।নভেম্বর মাসের শুরু।সকালের সময়টা হালকা হালকা স্নিগ্ধ শীতল থাকলেও বেলা বাড়তেই সূর্যের প্রখরতা শুরু।সাথে ভ্যাবসা গরমের।সামনে একটা বাস আসতেই তাতেই চড়ে বসে সানায়া।হায় আল্লাহ!!
একটা সিটও খালি নাই।মন খারাপ হয় সানায়ার।আজরাহান কে বলার পরও আসে নি সে।কিছুক্ষন নির্বাক দৃষ্টিতে পুরো বাস এ চোখ বুলায় সানায়া।নাহ।একটা ফাঁকা সিটও তার চক্ষু গোচর হলো না।নিরুপায় হয়ে বাসের এক কোনে দাড়ালো।বাস আবার চলতে শুরু করলো।কিছুদূর যেতেই বাসের দরজার পাশের ফ্রন্ট সিট এর ডানদিকের সিট টা খালি হতেই টুপ করে বসে পড়ে সানায়া।স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো বুকের ভিতর থেকে।গাড়ীর ডিজেল এর গন্ধ বিভৎষকর।গরমে তার জামার পেছনের অংশ লেপ্টে গিয়েছে।লম্বা চুলে বেনি করা তা পিছনে দিয়েই আরাম করে বসে।জানালা দিয়ে আসা হুরহুরে বাতাসে এখন বেশ লাগছে।সানায়া চোখ বুঝে নেয়।হঠাৎ সে অনুভব করে তার পাশে বসা লোকটার হাত সানায়ার হাত স্পর্শ করছে।হালকা চেপে নিজেকে স্বতন্ত্র করে সানায়া।কিন্তু লোকটার স্পর্শ সে আবারো অনুভব করে।
সানায়া মুদিত নয়নযুগলের পাল্লা খুলে পাশে তাকায়।অর্ধবয়স্ক এক লোক।চোখে ভারী মোটা ফ্রেমের চশমা।মাথার অর্ধেক অংশ জুড়ে চুল নেই বললেই চলে।আর পিছনে যেটুকু আছে না থাকার মতোই।নাকের নিচ বরাবর মোটা গোফ অবশ্য এতে লোকটা কে ভয়ংকর নয় বরং মায়াবী লাগে।সম্পূর্ন মুখমন্ডল জুড়ে নির্মলতার ছোয়া।সানায়া ভাবলো,হয়তো অনিচ্ছাকৃত ঘটনা পুরোটা।সে আবারও মাথা হেলান দিয়ে বসে।

কিছুদূর যেতেই বাসে ব্রেক হয়।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার লোকটা সামনে দিকে না ঝুকে সানায়ার দিকে ঝুকে গেলো।সানায়া বিরক্তি নিয়ে নাক,মুখ খিচে।পরক্ষনেই লোকটি মৃদু হেসে বললেন–

“সরি,সরি।”

সানায়া দমে গেলেন।সেখানেই বাসে উঠলো একটা ছেলে।জায়গা না পেয়ে সানায়ার পাশে সিটের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালেন।চলন্ত বাসে সানায় বারকয়েক আবারো লোকটির অযাচিত স্পর্শ অনুভব করলো।এইবার ওর মনে হলো এইগুলো কোনো মতেই দূর্ঘটনা নয়।সানায়া তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সচল করলো।নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে তার সমস্ত মনোযোগ লোকটার পরের পদক্ষেপের দিকে স্থির করলো।

ক্ষনকাল বাদে সানায়া তার বাম উরুতে হাতের স্পর্শ পেতেই দম করে উঠে কোনো সংকোচ ছাড়াই লোকটার গালে বসিয়ে দিলো এক চড়।ওর হাতের ধাক্কায় ছিটকে পড়লো লোকটির চশমা।হতভম্ব হয়ে লোকটি এদিক ওদিক তাকিয়ে কয়েকহালি ঢোক গিলে নিলো।
চলন্ত বাসে স্থির থাকা যুৎসম নয়।সানায়ার ক্ষেত্রেও তাই হলো।বাসের গতির সাথে তার পদযুগল তাল মেলাতে পারে নি।হেলে পড়ে তার সিটের পাশে দাড়ানো ছেলেটির উপর।বুক কেপে উঠে সানায়ার।যদি পড়ে যেতো!!!!
ছেলেটি এক হাতে সানায়া পিঠে হাত দিয়ে ওর ভর পুরোটা নিজের বুকের উপর নিয়ে নিলেন।আর আরেক হাতে নিজের সেফটির জন্য সিটের উপরিভাগ খামচি মেরে ধরে রাখলেন কারণ এখন একজন নয় দুইজনের ভর সামলাতে হবে তাকে।
সানায় তার বদ্ধ অক্ষিযুগল মেলে ছেলেটির দিকে তাকালো।ফর্সা নয় দুধের মধ্যে এক বিন্দু হলুদ মেশালে যেমনটা হয় রঙ ঠিক তেমনটা ছেলেটার বিশাল বক্ষদেহের সুঠাম দেহের।সুঠাম দেহ এইজন্যই কারণ সানায়ার আস্ত নারী দেহের সম্পূর্ন ভর এখন ছেলেটার উপর।চিকন নাক দিয়ে বেরিয়ে আসা নিঃশ্বাসের হালকা মিষ্টি গন্ধ ছুয়ে যাচ্ছে সানায়া কে।সানায়া হা করে তাকিয়ে আছে।চোখের পাল্লা আপনা আপনি পড়ছে আর উঠছে।
চড় এর নিখুঁত আওয়াজ এ বাস ড্রাইভার ততক্ষনে বাস থামিয়েছে।সানায়া সোজা হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আরেকটা চড় বসায় লোকটির ডানগালে।উত্তেজিত সানায়া গলা চড়িয়ে বলল–

” এই,মেয়ে মানুষ দেখলেই লোল পড়ে!!
চোখ ঘলিয়ে যায়।একদম চোখ গেলে দিবো।ভাবিস কী মেয়েদের !!পুতুল??
শালা,বুড়ো।এক পা কবরে এখনো শখ যায় না।”

সানায়া এইবার অদ্ভুত কান্ড করে।লোকটির ওই ক গাছি চুল মুষ্টিবদ্ধ করে আরেকটা চড় বসিয়ে দেয়।হতবিহ্বল বাসের সবাই সানায়ার কান্ড দেখে হকচকিয়ে উঠে।লোকটা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই ছেলেটি সানায়া থেকে লোকটিকে ছিনিয়ে নিয়ে বলল—

” এক মাঘে শীত যায় না।
নারীরা আজ নিজের লড়াই নিজে করে।পুরুষদের সাহায্য সে তো নাম মাত্র।কিন্তু আফসোস,আপনার মেয়ের সাথে যদি কেউ এমন করে হয়তো সে তখন প্রতিবাদ নাও করতে পারে!!
ভাবেন তখন তার কী অবস্থা হবে।”

বাসে থাকা অন্য লোকজন তেড়ে আসে লোকটিকে মারতে।কিন্তু তাদের কে শান্ত হতে বলল ছেলেটি।লোকটিকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো।সানায়ার অশান্ত মন শান্ত হয়ে সিটে বসলো।ছেলেটি এখনো ওর পাশেই দাড়িয়ে আছে।এতকিছু হওয়ার পর সানায়ার আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।নচেৎ ছেলেটি কে সে তার পাশে বসার জন্য বলতো।

নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে বাস থেকে নামে সানায়া।এমনিতেই অনেক দেরি হয়েছে।হনহন করে পা চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে।কিন্তু কাল বিলম্বে তার মনে হলো কেউ তার পিছু নিচ্ছে।সানায়া দমকে যায়।পিছন ফিরতেই দেখে সে লম্বা,চওড়া দুধে হলুদ মেশা ছেলেটি।সানায়া ইতস্তত বোধ করে।এই রাস্তাটা বেশিরভাগ সময় জনশূন্য থাকে।আজকেও ব্যতিক্রম নয়।সানায়ার বুকটা দুরু দুরু করতে থাকে।যদি এখন ছেলেটা ওর সাথে খারাপ কিছু করে বসে!!!
সানায়া উদ্বিগ্ন হয়ে পা বাড়ায়।পিছন থেকে ভারী পুরুষালী কন্ঠে থমকে দাড়ায় সানায়া।

“এই যে শুনেন!!!

ছেলেটি দ্রুত পায়ে ওর সামনে এসে স্মিত রেখা টানে তার অধরে।আর বলল–

“সরি,আপনাকে বিরক্ত করার জন্য।”

সানায় ভ্রু কুঞ্চি করে বলল–

“কী চাই আপনার??

“আপনাকে।”

“মানে??

“সরি।আই এম জাস্ট কিডিং।
আসলে আপনি একটু আগে বাসে যা করলেন তাতে আমি মুগ্ধ হয়েছি।আসল কী বলেন তো মেয়েদের নিজেদের প্রতিবাদ নিজেদের করা উচিত।না কি অন্যের উপর ভরসা!!
আপনাকে মালালা ইউসুফজাই এর সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না।”

সানায়া দ্বিধান্বিত অনুভব করলো।সে কী খুশি হবে নাকি অবাক হবে!!

“আর কিছু বলবেন??

“আপনি কী রেগে আছেন??

“এক্সকিউজ মি!!
আপনি কী তেমন কিছু করেছেন??

ছেলেটি মৃদু হেসে বলল–

“আমার তা মনে হয় না।”

সানায়া হালকা দম ছেড়ে বলল-

” একটু ঝেড়ে কাশেন।আমার সময় নেই।”

ছেলেটি তার বুক পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে সানায়ার হাতে দেয়।সানায়া বলল—

” এইটা কী??

“এইটা একটা এনজিও এর ঠিকানা।আমি এখানেই কাজ করি।”

“তো??

“আসলে এনজিও টি দুস্থ,অসহায়,রেপড ভিক্টিম,এসিড ভিক্টিম ছাড়াও সমাজে অবহেলিত নারীদের পূনর্বাসন এর ব্যবস্থা করে।যৌতুকের স্বীকার মেয়েদের পাশে এসে দাড়ায়।”

সানায়া প্রশ্নচিহ্ন করে বলল–

“আমি কী করতে পারি???

“আসলে কী বলেন তো,যেসব মেয়েরা এইসব ঘটনার স্বীকার হয় তাদের শরীর হয়তো বেচে থাকে কিন্তু আত্না মরে যায়।বেঁচে থাকার ইচ্ছা শক্তি হারিয়ে ফেলে।কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হলো তাদের মধ্যে সে জীবন সঞ্জারনের অমৃতসুধা আপনি আনতে পারবেন।আপনার সেই ক্ষমতা আছে।
তাই যদি আপনি একবার ঘুরে আসতেন আমাদের সংস্থা টা তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
অবশ্য জোর নেই।এইটা একদম আপনার ইচ্ছের উপর নির্ভর।”

সানায়া এমনিতেও কঠিন মস্তিষ্কের মানুষ।কুহেলিকা তার মেয়েকে যথেষ্টি অনুধাবন শক্তিসহই গড়ে তুলেছে।মানুষকে চেনার কিঞ্চিৎ ক্ষমতা তার আছে।ছেলেটার কথাবার্তা আর ব্যবহার এ ভালোই মনে হলো।শান্ত কন্ঠে সানায়া বলল–

“ওকে আমি ভেবে দেখবো।”

ছেলটির উচ্ছসিত কন্ঠে বলল–

“থ্যাংকিউ,থ্যাংকিউ সো মাচ।”

“ইটস ওকে।”

সানায়া ঘুরে পা বাড়ায়।ছেলেটি আবার ওর সামনে এসে মৃদু স্বরে বলল—

“যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করতে পারি??

“হুম।”

“আপনার নাম টা যদি বলতেন!!

“সানায়া।”

“থ্যাংকস।
আমি তারাফ।তারাফ ইফতিয়ার।”

“আসি।”

“হুম।”

সানায়া যাওয়ার পানে কিছুক্ষন অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে তারাফ।আজ প্রথম কোনো মেয়েকে নিয়ে তার ভাবতে ইচ্ছে করছে।
শ্যামকুমারী!!
শ্যামকুমারী সত্যিই তার মন কেড়ে নিয়েছে।
সানায়া !!!
ঠিক যেনো তার হৃদয়ের আয়না।
,
,
,
শপিংমলে জুয়েলারির দোকান থেকে বের হতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে নুরাইসা।ফ্লোরে বসেই ককিয়ে উঠে।আর্তনাদ করে বলল—

“ইশশ!!
গেলো রে আমার কোমর।ভেঙেই গেলো বোধহয়।এখন আমাকে কে বিয়ে করবে!!!

ধাক্কা খাওয়া ছেলে টি হাটুগেড়ে ওর সামনেই বসে।স্মিত কন্ঠে বলল–

“বিয়ের জন্য বড্ড চিন্তা আপনার!!
সরি ফর দিস।আসলে আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ধাক্কা দেয় নি।”

নুরাইসা তড়িৎ বেগে বলল–

“এই আপনাদের মতো ছেলেদের দোষ।প্রথমে দোষ করবেন পরে সরি বলবেন।ভাববেন সব ল্যাটা চুকে গেলো।”

মারশিয়াদ গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে নুরাইসা কে।উহু,তার চেহারা নয়।কথার প্রেমে পড়েছে মারশিয়াদ।ঠিক কয়েকবছর আগেও এমনি কারো কথার প্রেমে পড়েছিলো সে।
মারশিয়াদ অধর প্রসারিত করে বলল–

“আপনার কথায় তো মিষ্টতা আছে।মিষ্টি খান না কি বেশি??

নুরাইসা ভ্রু কুটি করে বলল–

“ফ্লাট করছেন??

“এইরকম মনে হওয়ার কারণ??

“আপনাদের ছেলেদের স্বভাবই এইরকম।”

“ফুলের কাছে ভ্রমর তো আসবেই।আর আগুনের কাছে মোম এলে তো তাকে গলতেই হবে।”

নুরাইসা বিরস চাহনি আবদ্ধ করে মারশিয়াদ এর চোখে।কী গভীর চোখ!!!
বাদামী মনি যেনো জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এ কেমন চোখের মায়া!!!
মারশিয়াদ হালকা হেসে আবার বলল–

“দেখা হয়েছে মিষ্টি???
তাহলে উঠে দাড়ান।”

নুরাইসা চোখের কোন ক্ষীন করে ভাবে তার কথায় এই লোক মিষ্টতা পেলো কিভাবে!!!
শান্ত ভাবে উঠে দাড়ায় নুরাইসা।চওড়া কন্ঠে বলল–

“আমার নাম মিষ্টি নয়,নুরাইসা।”

“কিন্তু আপনার কথায় তো অনেক মিষ্টি।”

নুরাইসা গাল ফুলিয়ে হালকা অধর বাকায়।মারশিয়াদ শীতল কন্ঠে বলল–

“একটা হেল্প করতে পারবেন??

“আমি আপনাকে কেনো হেল্প করবো।কে হোন আপনি আমার??

“তা তো জানা নেই।তবে হেল্প টা করলে হয়তো কিছু হতে পারি!!!

নুরাইসা খানিক ভাবে।ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার ফর্সা পেশিবহুল গাঢ় চাহনির কোনো পুরুষ তাকে এতো তাড়াতাড়ি বিমোহিত করবে সে ভাবতে পারে নি।এমনিতেও ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে সে পছন্দ করে।আর আজরাহান কে সে বরাবর ই এড়িয়ে চলতে চায়।
কিন্তু সামনে দাড়ানো লোকটার মধ্যে কিছু তো একটা আছে যা তাকে অপার্থিব ভাবে মোহিত করছে।

“বলেন কী করতে হবে??

“আসলে আমি একজন কে গিফ্ট করবো।কিন্তু বুঝতে পারছি না কী পছন্দ হবে তার।”

নুরাইসার চেহারা মূহুর্তেই মলিন হয়ে গেলো।তার মানে প্রিয় কেউ আছে তার!!

“আমি কী করে হেল্প করতে পারি এই বিষয়ে??

“সেও একজন মেয়ে।আই থিংক মেয়েরা মেয়েদের পছন্দ ভালো বুঝতে পারে।”

প্রিয় ব্যক্তিটি একজন মেয়ে শুনে নুরাইসা নিশ্চিত হয়ে গেলো যে নিশ্চয়ই মারশিয়াদ এর গার্লফ্রেন্ড আছে।আর তার জন্যই গিফ্ট কিনতে এসেছে।নুরাইসার ধ্যান ভাঙে মারশিয়াদ এর মিষ্টি আওয়াজ এ।

“কী হলো মিষ্টি!!
কোথায় হারিয়ে গেলেন??

“কোথাও না।চলেন।আপনি আমাকে তার পছন্দ সম্পর্কে কিছু বলেন তাহলে আমি ধারণা করতে পারবো।”

প্রায় একঘন্টা পুরো শপিংমল চষে বেড়ায় ওরা।অনেক কিছুই কেনা হয়।গাড়ীর কাছে আসতেই মারশিয়াদ বলল–

“চলেন আপনাকে পৌছে দেই।”

“নাহ।তার প্রয়োজন নেই।আমি এই এলাকাতেই থাকি।সামনেই আমার বাসা।আমি চলে যেতে পারবো।
আপনার নাম টা বললেন না।”

“মারশিয়াদ আরজান।ছোট করে জান বলে ডাকতে পারেন।ওকে।আসি তাহলে।ধন্যবাদ।আই উইশ আমাদের আবার দেখা হবে।”

নুরাইসা এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।আর মনে মনে বলল,নাহ।আর কখনো আপনার সাথে আমার দেখা না হোক।সম্ভবত সেটাই ভালো হবে।
নুরাইসা চোখ ছোট ছোট করে বিনয়ের সুরে বলল–

“একটা কথা বলবো??

“উহু।দশটা বলেন।”

নুরাইসা ছোট্ট করে হাসে।আর বলল–

“গিফ্টগুলো কী আপনার গার্লফ্রেন্ড এর জন্য??

মারশিয়াদ হালকা অধর কোন প্রশস্ত করে বলল–

“কেনো!!
মেয়ে হলেই কী তাকে গার্লফ্রেন্ড হতে হয়!!
সে আমার একজন প্রিয় মানুষ।যাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ।”

নুরাইসা কী ভেবে নিরব থাকে।মারশিয়াদ চলে যাওয়ার জন্য গাড়ীতে বসে।শান্ত কন্ঠে নুরাইসা কে বলল–

“আসি মিষ্টি।
আবার দেখা হবে।”

নুরাইসা নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে থাকে।এ যাওয়া যেনো শেষ না হয়।
,
,
,
ছাদের রেলিং এর সাথে ঘেষে দাড়িয়ে বাড়ির পাশের মাঠে কিশোর বয়সী ছেলেদের খেলা দেখছে প্রহর।বিকেল গড়িয়েছে।একটু আগেই আসরের আযান হয়েছে।নামাজ পড়বে সে।আর কিছুক্ষন দেখেই চলে যাবে।
ঘাড়ে উষ্ণ বায়ু অনুভব হতেই ফিরে তাকায় প্রহর।দেখে একদম ওর সামনেই দাড়িয়ে আজরাহান।

সকালের ঘটনার পর আর আজরাহান এর ঘরমুখো হয়নি প্রহর।স্কুলে যাওয়ার পথেও কোনো কথা হয়নি ওদের।আজরাহান ফিরে এসে শাওয়ার নিয়ে লাঞ্চ সেরে ঘুম দেয়।কারণ রাতে তার ঘুম হয় নি।প্রহর এর বিকাল কাটে এভাবেই।আজরাহান ওকে বাইরে যেতে দেয় না।দুপুরে খাওয়ার পর কোনোদিন হোমওয়ার্ক করে নাহলে কোনোদিন হালকা ঘুমিয়ে কাটায়।আর বৈকালে শেষ টা কাটায় মাঠের ছেলেদের দুরন্ত পায়ের ফুটবল খেলা দেখে।

আজরাহান একদম প্রহর এর কাছে দাড়ানো।সূর্যের মৃদু রশ্মির উৎপীড়নে ঘেমে আছে প্রহর।নাকের ডগায় আর গলায় জমেছে ঘাম।আজরাহান এর নাকে এক মিষ্টি গন্ধ এসে নাড়া দেয়।ঘামার্ত প্রহর এর গলায় এক নেশাভরা চোখে তাকিয়ে থাকে আজরাহান।গাঢ় কফি কালারের শার্ট এ আজরাহান এর ফর্সা রঙ যেনো দ্যুতি ছড়াচ্ছে।আজরাহান ওর এক হাত রাখে প্রহর এর কোমড়ে।হালকা নুইয়ে ওর মুখ নিয়ে যায় প্রহর এর গলার কাছে।বারকয়েক নাক ঘষা দেয় ওর গলায়।প্রহর এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাঁপন উঠে।অধরের উষ্ণ ছোয়া লাগায় প্রহর এর বিউটি বোন এর ঠিক নিচ বরাবর।অনুরণন শুরু হয় প্রহর এর সারা অঙ্গে।কম্পনরত কন্ঠে বলল–

“কী পাগলামো করছেন রাহান ভাইয়া??

নির্বাক,নিশ্চল আজরাহান কোনো প্রতিক্রিয়া করে না প্রহর এর কথায়।আজরাহান এর গাঢ় নিঃশ্বাস পড়ছে প্রহর এর গলায়।আজরাহান আবারো বার কয়েক ছুয়ে দেয় প্রহর কে।
প্রহর এর ধমনীতে প্রবাহিত রক্তধারা যেনো তীব্র বেগে চলছে।থেমে থেমে শ্বাস আটকে যাচ্ছে তার।অনুরণিত শরীরে প্রহর এর কারচিপ গলা থেকে হালকা নিচে নেমে আসে।বেপোরোয়া আজরাহান সেখানেই তার অধরের গাঢ় স্পর্শ একে দেয়।প্রহর এর শরীর হীম হয়ে আসে।যেনো সে কোনো প্রস্তরমূর্তি।নাহ।আর পারেনা সে।আজরাহান কে ধাক্কা মেরে সরায়।আর তীক্ষ্ম কন্ঠে বলল–

“কী পাগলামি শুরু করেছেন আপনি??এমন কেনো করছেন??

আজরাহান দের বাড়ি দোতলা।উত্তরে বিশালাকার ভবন।আর দক্ষিনে ফাঁকা মাঠ।পশ্চিম দিকে টিনসেড এর বাসা।পূবমুখী বাড়ি তাদের।পাশের ছাদ বা ফ্ল্যাট গুলোর বারান্দা থেকে সহজেই ওদের এইসব দেখা যায়।কিন্তু আজরাহান এর তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

নিরুত্তেজ,নির্লিপ্ত আজরাহান ধীর পায়ে আবার আসে প্রহর এর একদম কাছে।রেলিং এর দুই পাশে হাত দিয়ে ওকে মাঝে আবদ্ধ করে।দুজনের ঘন নিঃশ্বাস একে অপরকে ছুয়ে যাচ্ছে।প্রহর অপ্রতিভ দৃষ্টি রাখে আজরাহান এর চোখে।আজরাহান নিজেকে আরো কাছে নিয়ে আসে প্রহর যেনো হালকা নড়াচড়াতেই ছুয়ে যাবে একে অন্যের অধরযুগল।আজরাহান শান্ত স্বরে বলল—

“আজ শিরনির জন্মদিন।তোকে দশ মিনিট দিলাম।যা তৈরি হয়ে নে।”

প্রহর দীপ্ত কন্ঠে বলল–

“যাবো না আমি।”

“তুই যাবি কী না তা তো আমি তোকে জিঙ্গেস করি নি।তোকে রেডি হতে বলেছি।”

“আপনি বললেই কী আমাকে যেতে হবে!!!

“তুই বললে যদি আমি মরতে পারি তাহলে আমি বললে কী তুই আমার সাথে যেতে পারবি না!!!

“আপনি সরে দাড়ান।নাহলে কিন্তু আমি ছোট মা কে ডাকবো।”

“আমি তোকে কখনো মাকে ডাকতে বাড়ন করেছি।ডাক তুই।”

প্রহর আর্দ্র কন্ঠে বলল–

“কেনো এমন পাগলামো করেন আপনি???

“আমার ভালোবাসা তোর কাছে পাগলামো মনে হয়!!
তাহলে ধরে নে আমি পাগল।দে আমার পাগলামো ভালো করে।”

“রাহান ভাইয়া!!!

“আর কীভাবে বোঝাবো তোকে আমি ভালোবাসি!!
তোকে ছাড়া যে আমি শূন্য ডিঙি নৌকা।একদম শূন্য আমি।
কিসের খামতি আমার মধ্যে বল??কেনো মেনে নিতে পারিস না তুই আমাকে??

“সরে দাড়ান আপনি।ভালো লাগছে না আমার।”

আজরাহান বিদ্রুপপূর্ণভাবে হাসে আর বলল—

“আমি কাছে আসলে তোর ভালো লাগে না।আর তোর কাছ থেকে দূরে গিয়ে যে আমি ভালো থাকতে পারি না।আমার হৃদয় যে পুড়ে প্রেমানলে।”

অক্ষিপল্লব ভিজে উঠে প্রহর এর।গলায় আর্দ্রতা নিয়ে বলল—

“চুপ করেন প্লিজ।চুপ করেন।”

“কেনো!!!
এতো কীসের কষ্ট তোর??
তোর দেওয়া বিরহের কষ্টে তো আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।আমার শিরা উপশিরায় তোর ভালোবাসার যে বিষ ঢেলেছিস তা তো আমাকে কুড়ে কুড়ে শেষ করে দিচ্ছে।দে আমাকে সে বিষের প্রতিষেধক।ফিরিয়ে দে আমার ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা।”

আজরাহান এর প্রতিটি কথা ছুরিকাঘাত করছে প্রহর এর হৃদপিন্ডে।ক্ষত বিক্ষত তার হৃদয়ের রক্তধারা সে কাউকে দেখাতে পারবে না।কাউকে না।ছলছল আঁখি তার নীড় ছেড়েছে।প্রহর এর গলা থেকে অস্পষ্ট ক্রন্দন বেড়িয়ে আসছে।আজরাহান বুক ফুলিয়ে এক নিঃশ্বাস ছাড়ে।আর বলল—

“কিসের এতো সংশয় তোর আমাকে বিয়ে করতে??
একবার তুই আমার হয়ে যা ডিঙি নৌকা।একবার মেনে নে।আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”

প্রহর শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আজরাহান এর চোখে।লালচে আভা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।জল ভরে যাচ্ছে অক্ষিকোটরে।আজরাহান ওর অধর চেপে ধরে প্রহর এর ললাটে। ভারী নিঃশ্বাস কাপিয়ে দেই প্রহর চোখের পল্লব জোড়া। আজরাহান আবারো প্রহর এর চোখে নিবদ্ধ করে নিজেকে।বলল–

” মা কে গিয়ে বলনা এই বিয়েতে তুই রাজী।একবার বল প্রহর।আই প্রমিজ ইউ এই জীবনে আর কিচ্ছু চাইবো না তোর কাছে আমি।একবার আমাকে নিজের করে নে।”

ডুকরে উঠে প্রহর এর ভেতরকার নারীসত্ত্বা।সেও তার রাহান ভাইয়া কে ভালোবাসে।অনেক ভালোবাসে।কোনো কিছুর বিনিময়ে সে তাকে হারাতে চায় না।তার ভালোবাসা নিয়ে সে সারাজীবন নিঃসঙ্গ কাটিয়ে দিতে পারবে কিন্তু তার ঘৃণা নিয়ে সে এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবে না।আজরাহান এর হাত সরিয়ে ত্রস্ত পায়ে নিচে চলে যায় প্রহর।

আজরাহান বরমমূর্তি মতো দাড়িয়ে আছে।জীবনের সমীকরণ মিলায় সে।
গত ছয় মাসে আজরাহান অনেকবার কাছে গিয়েছে প্রহর এর।কখনো বাধা দেয় নি সে।অনেক কষ্টে চরম মুহূর্তেও নিজেকে সে ফিরিয়ে এনেছে।কিন্তু সবসময় কী তা আদৌও সম্ভব!!!
ভালোবাসার মানুষটাকে এতো কাছে পেয়েও কী করে থাকবে সে দূরে!!!
তার ডিঙি নৌকাও তাকে ভালোবাসে।তার প্রমান সে তার স্পর্শের বিপরীতে প্রহর এর মৌনতা থেকেই বুঝতে পারে।কিন্তু বিয়ের কথা বলতেই প্রহর কেনো তটস্থ,ভয়াতুর হয়ে যায় সে বোঝে না।ভালোবাসার শূন্য থালা নিয়ে বারবার প্রহর তাকে নিজ দ্বার থেকে ফিরিয়ে দেয়।
নাহ।সে হাল ছাড়বে না।ভালোবাসার এই মৌন যুদ্ধে সে পরাস্ত সৈনিক এর খাতায় নাম লিখাবে না।তাকে জিততেই হবে।
প্রহর কে শুধু এই জনম নয় আগামী সাত জনম শুধু তারই হতে হবে।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
আর কারো এন্ট্রি নেওয়া বাকী আছে😒😒

ক.গোবেচারা তারাফ কে এখানে কেমন লাগলো??
খ.মারশিয়াদ পূর্বে কার কথার প্রেমে পড়েছিলো??
গ.বেচারা আজাইরা রাহান😢😢)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here