বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ৮

0
5255

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ৮
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

চেয়ার এর উপর বসে আছে কালো অবয়বটি।আবক্ষ পর্যন্ত ছড়ানো দাড়িতে মোলায়েম ভাবে হাতের বিচরণ চলছে।চোখে নেশা ভর করে আছে।
সামনেই হাটু গেড়ে বসে আছে ইদ্রিস।সন্ধ্যা রাতেই বাজার করে ফিরছিলো।গ্রামের রাস্তা।বড় বড় হাট বাজার ছাড়া মেঠোপথ গুলো সন্ধ্যা রাতেই নিরব হয়ে পড়ে।পথে যাতায়াতকারী লোকজন হ্যারিকেন অথবা টর্চের ব্যবহার করে।যুগের পরিবর্তনে এখন মোবাইলের টর্চ লাইটের সুবিধা গ্রহন করা হয়।

ইদ্রিসের বউ পালিয়ে যাওয়ার আজ দশদিন।গতকালই সে নতুন বউ ঘরে তুলেছে।তাই আজ হাটবার এ বেশ বাজার সদায় করেই হেলতে দুলতে বাড়ী ফিরছিলো।কিন্তু পথেই আবছা আলোয় দুজন অপরিচিত লোককে দেখে ঘাবড়ে উঠে।কিন্তু পরক্ষনেই জানতে পারে তার পথ হারিয়েছে।তাই ঠিকানা খুজছে।তাদের পথ দেখানোর জন্য নদীর পাড় ঘেষে আসতেই লোকদুটো ওর মুখে রুমাল চেপে ধরে।ক্লোরোফর্ম এর তীব্র শ্বাসে বেশি সময় নেয়নি সে নেতিয়ে পড়তে।ব্যাগভর্তি বাজার নদীর পাড়েই পড়ে রইলো অগোছালো ভাবে।

চোখ খুলতেই ভয়ার্ত চোখে দেখতে থাকে আশপাশ।নদীর ওপারেই নিয়ে আসা হয়েছে তাকে।পাশাপাশি দুটো গ্রাম।যার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই নদী।এপাড় আর ওপাড় এর মানুষের মনের মিলই দুই গ্রামের স্বচ্ছলতার অন্যতম হাতিয়ার। ইদ্রিস কিছুই বুঝতে পারছেনা।হাত দুটো তার পিছনে বাধা।সে নরম চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসা সে মানবটির দিকে।বিস্ফোরিত চোখ যার।যেন এখনই সব ভষ্ম করে দিবে।কিন্তু আপাদমস্তক একদম শান্ত,স্থির,স্নিগ্ধ।

ইদ্রিস মৌনতা অবলম্বন করে বুঝতে চাইছে সে কোথায়?কারা এরা?
খড়ের তৈরি ঘরের অনেকাংশ জুড়ে বিধ্বস্ত।তারই ফাঁক ফোকর দিয়ে পিনপিনে হাওয়া ঢুকে পড়ছে ঘরে।চাঁদের তীব্র জোৎস্নার কিরণ তার উপরিতল ভেদ করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।কর্নকুহরে অনুভুত হচ্ছে বেপোরোয়া ঢেউ এর ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনি।ইদ্রিস বুঝতে পারলো সে নদীর পাড়ের ছোট্ট খড়ের ঘরে আবদ্ধ।মাঝে মাঝে নিশিরাতে মাছ ধরতে দূর গ্রাম থেকে আসা লোকজনের নিদ্রার জন্য এই ঘর তৈরি করা।কিন্তু সে তো কখনো এখানে আসে নি।আজ এরাই বা তাকে কেনো নিয়ে আসলো।গুমোট অন্ধকার না হলেও ভয়ংকর এক পরিবেশ বিরাজমান।নিস্তব্ধতা যেখানে ঘিরে রেখেছে সেখানে শো শো করে কতিপয় মানুষের নিঃশ্বাস এর শব্দ বয়ে চলছে।ইদ্রিসের মনে হচ্ছে ওর প্রানপাখি যেনো খামচে ধরে রেখেছে ওর হৃদপিন্ড।যেনো এখনই কেউ কেড়ে নিবে।কম্পন শুরু হয় ওর দেহপিঞ্জরে।দরদর করে ঘাম ছুটছে।বহমান পবন যেনো আজ উষ্ণতায় কাপিয়ে দিচ্ছে ওর শরীর।মস্তিষ্কে শুরু হয়েছে প্রবল যন্ত্রণা।কাঠমূর্তি ইদ্রিস কম্পনরত অধরে থেমে থেমে বলল—

“কাআকারা আপপনাররা??

কোনো উত্তর পেলো না ইদ্রিস।কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলল ইদ্রিস।ভয়ে তার প্রানআত্না বের হবার উপক্রম।সে আবার বলল—

“কেএনন নিয়েএএএ এএএসসেছেন আআমাআকে???

চেয়ারে বসা লোকটি শীতল পায়ে উঠে দাড়ালো।কোনোরকম ছন্দপতন ছাড়াই ইদ্রিস এর সামনে গিয়ে এক হাটু ভেঙে তার উপর ভর দিকে ওর দিকে ঝুঁকে মোটা পুরুষালী কন্ঠে বললেন—

“পুরুষ মানুষ নেড়ি কুকুর।যেখানে সেখানে ঢু মারতে মন চায়।”

ইদ্রিস থর থর করে কাঁপছে।আর বলল–

“জিজিজ্বি!!”

“মেয়ে মানুষ দেখলেই লালা ঝরে তাই না!!
শরীরে অসুরের শক্তি ভর করে।খুবলে খেতে ইচ্ছে হয়!!

ইদ্রিস এর ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ।জিহ্বা দিয়ে চেটে বারকয়েক ভিজিয়ে নিলো।কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না।কিছু বলতে যাবে তার আগেই এক সজোড়ে চড় বসিয়ে দিলো তার গালে।ককিয়ে উঠলো ইদ্রিস।গাল চেপে বসে পড়লো।ঝিমঝিম করছে ওর মাথা।

“এক নারীতে হয় না তোর!!!
এতই যখন শরীরের জ্বালা ব্রোথেল এ গিয়ে নিজের জ্বালা মিটাতি।অসহায় মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওদের বিয়ে করে নিজের খায়েশ মিটিয়ে টিস্যু পেপার এর মতো ছুড়ে ফেলে কেনো দিস!!!!তোদের মতো কিছু কাপুরুষ নারী লোভীদের জন্য আজ মেয়েরা রাস্তায় পথ চলতে ভয় পায়।বিশ্বাস করতে ভয় পায়।তোদের মতো জানোয়ারদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”

এই কথা শুনেই ইদ্রিস ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যায়।হাউমাউ করে কেঁদে পা জড়িয়ে ধরে লোকটির।ছিটকে সরিয়ে ইদ্রিসের গলা চেপে ধরে লোকটি।দাঁত কিড়মিড় করে বললেন—

“ভাবিস না তোকে মেরে ফেলবো।তোর এমন অবস্থা করবো যাতে করে মেয়েদের কাছে যাওয়া তো দূর ওদের কথা ভাবলেই যেনো তোর শরীর শিউরে উঠে।”

ঝপ করে উঠে দাড়ায় লোকটি।ইদ্রিস আর্তনাদ করতে থাকে।লোকটির ইশারায় বাকি দুজন ইদ্রিসের মুখে একটা রুমাল বেধেঁ দেয়।ইদ্রিসের গোঙানির আওয়াজ এ বাতাস জুড়ে এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।ভয়ংকর সে নিস্তব্ধতা।

“দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো”।হুম,তারাই ইদ্রিস কে নিয়ে এসেছে।নিজের স্ত্রী কে গর্ভবতী অবস্থায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলো।সবাই কে জানায় বউ তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে।আর বিয়েও করে নিয়েছে।তার শাস্তি তো প্রাপ্য।একটা নিষ্পাপ ভ্রুনের মৃত্যু,একজন নারীর বিশ্বাস ভঙ্গ,এক মা বাবার সন্তানের নির্মম পরিনতি!!!
সারা জীবন কী নারী ই সয়ে যাবে!!
না।তাদেরও ন্যায় পাওয়ার অধিকার আছে।হোক না তা রাতের অন্ধকারে!!

হেড তার সাথের দুইজনকে কর্কশ গলায় বললেন—

“ওর দূর্বলতা কী জানিস!!
ওই যে ওর পুরুষাঙ্গ।নারীদেহ দেখলেই তা লাফিয়ে উঠে।ছিন্ন ভিন্ন করে খেয়ে নিতে ইচ্ছে করে নারী নামের সেই কোমল শান্তির পায়রা কে।
আজ ওর এমন অবস্থা করবি যেনো নারীদেহের কথা ভাবলেই ওর মনে হয় যেনো এর চেয়ে মৃত্যুই ভালো।মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে গেলে মৃত্যুও যেনো ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”

হেড এর কথা শেষ হতেই ইদ্রিস মেঝেতে গড়াগড়ি করে অনুনয় করতে থাকে।কিন্তু তার ছিটে ফোটাও হেড এর কর্ণকুহর হয় না।বেরিয়ে আসে খড়ের ঘরের বাইরের দাওয়ায়।নিজের গাড়ীর কাছে গিয়ে দাড়ায়।ভিতর থেকে চাপা আর্তনাদ ভেসে আসছে।অদ্ভুত সে আওয়াজ।
স্বল্প সময় শেষে বেরিয়ে এলেন দুইজন লোক।হাতে রক্ত ঝবঝব করছে।নদীর শীতল প্রবাহিত ধারায় ধুয়ে নিলো হাত।নদী তার গর্ভে প্রলীন করে নিলো এক কাপুরুষের কাপুরুষতার শাস্তির প্রমান।নাহ,ইদ্রিস কে মারা হয়নি।শুধু তার এমন অবস্থা করা হয়েছে যাতে করে আর কোনোদিন নারী শরীরের কামুকতা তাকে ভর করলেও তার অন্তঃসার শূন্য পৌরষসত্ত্বা তাকে ধিক্কার দিয়ে উঠে।

“নারী একা নয় আজ।বিশ্বাস ভালোবাসার প্রতীক।নারী কামনার বস্তু নয়।তাকে সম্মান দিতে শেখো।তাকে দেওয়া একগুন সম্মানের বিপরীতে সে তোমাকে দশগুন ফিরিয়ে দিবে””।

,
,
,
হুড়মুড়িয়ে মারশিয়াদ এর ঘরের সিড়ি বেয়ে নামছে আজরাহান।রাত প্রায় মধ্য।ঘড়ির কাটা ছুই ছুই করছে তিন এর কাটা।মারশিয়াদ এর গাড়ীর আওয়াজ পেয়েই নিচে নেমে আসছিলো আজরাহান।হল ঘরেই দুজন মুখোমুখি।আজরাহান শান্ত ভঙিতে বলল–

“কোথায় ছিলি???

“কাজ ছিলো।”

আজরাহান একটা কাগজ এগিয়ে দেয় মারশিয়াদ কে।মারশিয়াদ নরম চোখ রাখে আজরাহান এর দিকে।
আর বলল–

“কাজ শেষ??

“হুম।”

“ওকে।আজ এখানেই থেকে যা।”

“উহু।মা জানতে পারলে আমার খাওয়া বন্ধ করে দিবে।”

মারশিয়াদ হালকা হেসে বলল–

“তোর ডিঙি নৌকা আছে তো।সমস্যা কী!!!

“ও আছে বলেই তো আমি বেঁচে আছি।যাই এখন।ও অপেক্ষা করবে।”

“যা।সাবধানে যাস।”

“ডোন্ট ওয়ারি।আই উইল ম্যানেজ।”

“আই নো দ্যাট।”

একে অপরকে উষ্ণ আলিঙ্গন করে মারশিয়াদ এর বাড়ী থেকে বের হয় আজরাহান।গন্তব্য তার ডিঙি নৌকা যে এখনো তার অপেক্ষায় বসে আছে।
,
,
,
সকালে প্রাতঃরাশ সেরে টিভি দেখতে বসেছে সানোয়ার আহমেদ।নিউজের হেডলাইন দেখেই চকচক করছে তার চোখ।টিভির ভলিউম আরেকটু বাড়িয়ে নিজের চিত্তহরণ করা খবর সংবরন করছে সে।কাল রাতেও ব্ল্যাক শ্যাডো কোনো একটা ঘটনা ঘটিয়েছে তারই নিউজ ডিটেলস চলছে।
“দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো” যখন ই কিছু করেন তখনই ভিক্টিম এর পিঠের ঠিক মাঝ বরাবর তার সংকেত দিয়ে যান।একটি কালো রঙের অবয়ব এর প্রতিকী।তাতে করে চিন্তে বাকি থাকে না এটা তাদেরই কাজ।সানোয়ার আহমেদ উল্লসিত হলেন।সকাল সকাল চমৎকার এই খবরে।নিজেকে ফুরফুরে মনে হচ্ছে।হাঁক ছেড়ে ডাকলেন নিজের সহধর্মীনি কে।কুহেলিকা পাশে এসে বসলেন কারণ তিনি ভালো করেই জানেন ওই অজানা মানুষটাকে তার শান্তিপ্রিয় স্বামী কতোটা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসেন।বরাবরই তার কাজে তিনি অবিভুত হোন।গত পাঁচ বছর ধরে চলছে এইসব।

ঘুম কাতুরে চোখে হেলতে ঢুলতে উলুথুলু চুল নিয়ে নিচে নামে আজরাহান।তার মরিচ পোড়া ঘুম।সেই ভোর রাতে ফিরে শুয়েছে।ঘুম এখনো তার পরিপূর্নতা পায় নি।কিন্তু দেরি করলে মা জেনে যাবে সে কাল রাতেও আড্ডা দিতে গেছে।তাহলে সকালের নাস্তা আজকের জন্য তার থেকে বিদায় নিবে।নিজেকে যথেষ্ট শক্ত করে খাবার টেবিল বসে আজরাহান।চোখ জ্বালা করছে ভীষন।মাথার শিরাগুলো টগবগ করছে যেনো এখনই ছিড়ে যাবে।
আজরাহান কে খাবার এগিয়ে দেয় প্রহর।আর ওকে টিপ্পনি কেটে বলল—

“দেখেছেন ব্ল্যাক শ্যাডো কত মহান কাজ করে!!!
আর আপনি!!!
সারারাত উজবুক এর মতো আড্ডা মারেন আর দিনের বেলা কুমিরের মতো পড়ে ঘুমান।”

আজরাহান ঘরঘরে গলায় বলল—

“যার কাজ যেইটা সে সেটাই করে।”

“ও আপনার একমাত্র লক্ষ্য বুঝি শুধু বিয়ে করা!!!

“নাহ।
তোর বাচ্চার বাবা হওয়া।যা সর এখান থেকে।”

প্রহর কে হালকা সরিয়ে একটা মাখন লাগানো ব্রেড নিয়ে তাতে কামড় বসায় আজরাহান।প্রহর কিঞ্চিৎ ক্ষীন কন্ঠে বলল—–

“ইশশশ!! এসেছন আমার বাচ্চার বাবা হতে!!
আপনার সেই আশায় গুড়ে বালি।”

“সেই বালির গুড় দিয়ে নাড়ু বানিয়ে খাওয়াবো তোকে।”

প্রহর ঠোঁট কে এপাশ ওপাশ করে ভেঙচি কাটে।শশব্যস্ত হয়ে সেখানে আসে সানায়া।দ্রুতগামী কন্ঠে বলল—

“ভাইয়া,আমাকে একটু লাইব্রেরিতে দিয়ে আসবে।খুব আর্জেন্ট।”

আজরাহান ঠোঁটের কোন বাকিয়ে উপহাসের স্বরে বলল–

“আমাকে কী তোর পাঠাও এর ড্রাইভার মনে হয়!!

“একটু পৌছে দিলে কী হয়??

” এই এতো পড়ালেখা করে কী করবি রে??
সেই তো শশুড় বাড়ি গিয়ে চুলো গুতোবি।”

সানায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই কুহেলিকা গলা ছেড়ে বললেন—

“এইসব কী ধরনের কথা!!!
মেয়ে হয়েছে বলে কী তার শিক্ষার অধিকার নেই??
এইসব শিখিয়েছি তোমাকে আমি??

আজরাহান দুটো ফাঁকা ঢোক গিলে।এখানে থাকলেই বিপদ।হাতে রাখা অর্ধব্রেড নিয়ে উঠে দাড়ায়।প্রহর কে বলল—

“কফি নিয়ে দুই মিনিটের মধ্যে আমার ঘরে আয়।”

কুহেলিকা হতাশ হলেন তার ছেলের ব্যবহার এ।সেই ছোটবেলা থেকে সব কাজই তার উল্টা পাল্টা।সব মানুষ যখন খাওয়ায় ব্যস্ত তখন সে ঘুমে।সব মানুষ যখন হৈ হুল্লোড়ে মগ্ন সে ডুবকি লাগায় তার বই এ।এই ছেলের মতিগতি সে কখনো বুঝতে পারে না।সবসময় ভীত থাকে আজরাহান কে নিয়ে কুহেলিকা।
,
,
কফি নিয়ে এসে দেখে আজরাহান মুদিত নয়নে মাথা হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে।প্রহর ধীম পায়ে ওর সামনে যায়।মৃদু কন্ঠে বলল—

“আপনার কফি।”

আজরাহান কফি নিয়ে তাতে চুমুক লাগায়।প্রহর ঠোঁট উল্টিয়ে বলল–

“আপনি এতো কফি কেনো খান!!কফি খেলে ঘুম কম হয়।জানেন না???

“তোকে কে বলল??

“আমি জানি।
চা বা কফি তে ক্যাফেইন থাকে যা আমাদের বডি তে থাকা একটা এনজাইম নাম ফসফোডাইএস্টারেজ কে ইনহেবিট করে ফলে সেল এর ভিতরে inhibitory Action কমে যায় যার কারণে এক্সাইটেটরি এক্সশেন বেড়ে যায়।আর এতে শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকে তাই ঘুম আসতে চায় না।””

“ডিঙি নৌকা তো অনেক কিছুই জানিস।”

“হুম।জানিই তো।আমাকে সানায়া আপু বলেছে।”

আজরাহান গভীর ভাবে তাকায় প্রহর এর দিকে।চুল টেনে উচু করে পনিটেইল করে রেখেছে।এতে করে ওর ঘাড়,গলার ফর্সা ভাবটা আরো ভালো করে প্রদর্শিত হচ্ছে আর সাথে মারশিয়াদ দেওয়া সেই প্যান্ডেন্ট।মনে হচ্ছে এখনই টেনে ছিড়ে ফেলে।আজরাহান নিজেকে শান্ত করে বলল—

“তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।”

“কী???

আজরাহান ওর কাল রাতের শার্ট থেকে একটা ছোট জুয়েলারি বক্স এনে দেয় প্রহর এর হাতে।প্রহর উৎসুক দৃষ্টিতে বলল–

“কী আছে এতে??

“খুলে দেখ।”

প্রহর বক্সটি খুলে দেখে তাতে এক জোড়া গোল্ডের ইয়ার রিং।উচ্ছসিত প্রহর বলল–

“আমার জন্য??

“উহু।আমার বউয়ের জন্য।তুই কী আমার বউ???

“সরেন এখান থেকে।”

“দে আমি পড়িয়ে দেই।”

“হুম।”

আজরাহান ওকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে ওর কানে ইয়ার রিং পড়িয়ে দেয়।প্রহর আয়নায় দাড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে।মুহুর্তেই আজরাহান এর চোখে ঘোর লেগে যায়।নির্বাক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে প্রহর এর উন্মুক্ত পিঠে।নিজের দুই হাত প্রহর এর দুই হাত এর উপর রেখে ওর পিঠ ঠেকিয়ে নেয় নিজের বুকের সাথে।অধর ছোয়াতে ব্যস্ত হয় আজরাহান প্রহর এর ঘাড়ে,পিঠে।প্রহর যেনো বরফমূর্তি ধারন করে।এক চুল নড়ার শক্তি নেই তার মাঝে।প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড়ের শো শো বায়ু বয়ে চলছে তার মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রীতে।অনুরনন হয় তার সারা অঙ্গে।তার বুকের বাপপাশের যন্ত্রটা না চাইতেও তার গতি বাড়িয়ে চলছে।কম্পিত হতে থাকে প্রহর এর অধরযুগল।শিড়দাড়া বেয়ে নামতে থাকে এক শীতল ধারা।আজরাহান তার হাতের সাহায্যে সরিয়ে দেয় প্রহর এর পনিটেইল করা চুল।উন্মুক্ত পিঠে এক গভীর উষ্ণ চুম্বন করে আজরাহান।প্রহর তার নিঃশ্বাস আটকে নেয়।ওর সারা শরীর যেনো বিবশ হয়ে যাচ্ছে।
আজরাহান কে সে অধিকার দিয়েছে।আজরাহান এর অগোছালো স্পর্শে কখনো বাধা পড়ে নি সে।কারণ প্রহর কখনো বাধা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।আজরাহান এর গভীর স্পর্শে সে সবসময় ভালোবাসা কুড়িয়ে বেরিয়েছে।
আজরাহান প্রহর কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।প্রহর এর মুদিত নয়নে চুমু খায়।প্রহর এর নাকের ডগায় জমে গেছে মুক্তোর ন্যায় ঘাম।কপালে জমেছে বিন্দুসম ঘাম।আজরাহান এর উতপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ে প্রহর এর অধরযুগলে।আর তাতেই অধরের কম্পনক্রিয়া বাড়তে থাকে।প্রহর তার মুদিত নয়নেই সব কিছু অনুভব করে যাচ্ছে।আজরাহান ওর এক হাত রাখে প্রহর এর কোমড়ে।হালকা কেপে উঠে প্রহর এক লম্বা শ্বাস টেনে নেয় সে।আজরাহান ওর মাথাটা হালকা বাকিয়ে প্রহর এর কানের কাছে গিয়ে হিসহিসিয়ে বলল—-

“ডিঙি নৌকা,একবার বল তুই আমকে বিয়ে করবি।আমি আমার ভালোবাসার সায়রে তোকে ভাসিয়ে নিবো।কথা দিচ্ছি কখনো তোর হাত ছাড়বো না।শুধু একবার বিয়ের জন্য রাজী হয়ে যা।”

ধপ করে প্রহর ওর চোখ খুলে।ফোস ফোস করে কয়েকটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সজোরে এক ধাক্কা মারে আজরাহান কে।ক্ষীপ্র কন্ঠে বলল—

“কী শুরু করেছেন আপনি!!
বিয়ে,বিয়ে,বিয়ে।এছাড়া কী আপনার মাথায় কিছুই নেই।”

আজরাহান দুই কদম সামনে এগিয়ে বলল–

“দেখ প্রহর,,,

“একদম আমার কাছে আসবেন না।আপনি তো আশফি ভাইয়া,জান ভাইয়া থেকেও বয়সে ছোট।কই তারা তো আপনার মতো বিয়ে বিয়ে করে না।আগে নিজেকে ডক্টর দেখান।যত্তসব।”

আজরাহান তড়িৎ গতিতে প্রহর এর বাজু ধরে ওকে ঝাকিয়ে বলল—

“একদম ওদের সাথে তুলনা করবি না আমাকে।ওদের কাছে তো আর তুই নেই।গত ছয়মাস ধরে বলে যাচ্ছি তোকে।কী সমস্যা তোর আমাকে বিয়ে করলে??

“করবো না আমি আপনাকে বিয়ে।করবো না,করবো না।”

প্রহর দ্রুত পায়ে চলে যায়।আজরাহান বার কয়েক ওকে ডাকে যা প্রহর এর কর্নকুহর হয় না।আজরাহান রাগে সামনে থাকা টেবিলে এক লাথি মারে।দম দম করছে ওর বুক।হৃদয়ের উথাল পাথাল চলছে।আজরাহান নিজেকে শান্ত করে।এই দৃশ্য নতুন নয়।ওর ভালোবাসায় সবসময় হার মানে প্রহর।কিন্তু যখনই বিয়ের কথা বলে যেনো এক হিংস্র বাঘিনীর রূপ নেয় প্রহর।তখন তার একমাত্র লক্ষ্য থাকে সামনে থাকা মানুষটাকে তার কথার জালে হারিয়ে দেওয়া।কারন আজ পর্যন্ত আজরাহান জানতে পারে নি বিয়েতে প্রহর এর কী সমস্যা।

নরম পায়ে আজরাহান ওর কাবার্ড এর ড্রয়ার থেকে একটা ওয়েস্ট ব্রেস বের করে।গোল্ডের তৈরি ওয়েস্ট ব্রেস এ হোয়াইট স্টন বসানো।তার সাথে ঝুলন্ত লাভ শেপের পার্ল।আজরাহান এইটা তার জবের প্রথম মাসের সেলারি দিয়ে কিনেছিলো প্রহর কে নিজ হাতে পড়াবে বলে।কিন্তু প্রহর কিছুতেই বিয়ের জন্য রাজী হয় না।তাই এখন তার অপেক্ষা।বিয়ের পর আজরাহান নিজের হাতে এইটা ওর কোমরে পরাবে।আলতে করে এক চুমু খায় আজরাহান ওয়েস্ট ব্রেস এ।

ধীর পায়ে রান্না ঘরে যায় প্রহর। ওকে চুপচাপ দেখেই কুহেলিকা সুধালেন–

“চাঁদবদনে অমাবস্যা ভর করেছে কেনো!!!
আজাইরা রাহান আবার কিছু বলেছে তোকে??

“উহু।”

প্রহর এর নিরস কন্ঠ শুনে কুহেলিকা ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়।তার নজরে আসে প্রহর এর ইয়ার রিং।আর বলল–

“বাহ!!
কানের দুল গুলো তো বেশ মানিয়েছে তোকে!!
কে দিলো??

প্রহর নির্লিপ্তভাবে বলল–

“রাহান ভাইয়া।”

“তাহলে রেগে আছিস কেনো??

“তোমার ছেলেকে বলবে সাইক্রিয়টিস্ট দেখাতে।তার মাথায় সমস্যা আছে।”

প্রহর ওর কথা শেষ করেই হন হন করে প্রস্থান করে সেখান থেকে।কুহেলিকা আনমনে হেসে উঠলেন।আর বললেন—

“আমার ওই পাগল ছেলের পাগলামির একমাত্র ঔষধ তো তুই।তুই ছাড়া কী অন্য কেউ ওকে ভালো করতে পারবে!!!

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here