বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ১৮

0
5311

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১৮
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

মৃদু ছন্দে মিউজিক চলছে।আজ সামান আর নন্দিতার বৌ ভাত।কিন্তু লোকজনের সমাগম কম।দূরের আত্মীয় স্বজনরা তেমন কেউ আসে নি।
ইনশিরাহ,মারশিয়াদ,আশফিক ওরাও কেউ আসে নি।আশফিক এর মা বাবা এসেছে।নির্ধা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু শেষ সময়ে নিরণ এর শরীর টা খারাপ করে তাই আর আসা হয়নি।জাকজমকপূর্ন হওয়ার কথা থাকলেও একদম অনাড়ম্বর সবকিছু।কতিপয় মানুষের আনাগোনা হয়েছে।সানোয়ার আহমেদ এমনটা মোটেও আশা করেন নি।

অনেকক্ষন যাবৎ প্রহর কে খুজে চলছে আজরাহান।একা পাওয়াই যায় না।আজরাহান কে যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার নিদারুণ প্রয়াস তার।দুর থেকেই আজরাহান তার স্নিগ্ধ নেত্রযুগল আবদ্ধ করে রেখেছে প্রহর এর গতিবিধির উপর।বার কয়েক নুরাইসা সামনে পড়লেও আজরাহান কোনো রকম প্রতিক্রিয়া করলো না।না,তার দিকে দেখার প্রয়োজন বোধ করলো।

প্রহর কুহেলিকার সাথে চুইংগাম এর মতো লেগে আছে।সে যেখানেই যায় তার পিছু পিছু সেখানেই যায়।একমাত্র কুহেলিকাই আছে যাকে আজরাহান ভয় করে না কি অস্বাভাবিক শ্রদ্ধা করে তা প্রহর জানে না।খাবার সংক্রান্ত ব্যপার নিয়ে একটু ঝামেলা হওয়ায় নিজের স্বামীকে খুজছেন তিনি।সানোয়ার আহমেদ রসিক মানুষ।কথা বলতে তিনি ভীষন পছন্দ করেন।আর তা যদি হয় ন্যাংটা কালের বন্ধুদের সাথে তাহলে তো কথাই নেই।
হলে ঢোকার গেইটের দুপাশে গোলাপ দিয়ে সাজানো।গোলাপের মাঝখানে মাঝখানে আবার বেলী দেওয়া।নন্দিতার একটা ঝোঁক আছে বেলি ফুলের প্রতি।সানোয়ার আহমেদ,নাবীন খান আর তাদের বাল্যকালের বন্ধু ইসমাত দাড়িয়ে উচ্ছ্বসিত ভাবে খোশগল্পে মত্ত।ইসমাত এর ছেলে কানাডা থাকে।সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।একমাত্র ছেলে তার।বিয়ে করাবেন বলে মেয়ে খুজে যাচ্ছেন।এখানে এসে সানায়া কে তার বেশ পছন্দ হয়।তিন বন্ধু সেইসব নিয়ে কথা বলছেন।

কুহেলিকা প্রহর কে বলল সানোয়ার আহমেদ কে ডেকে আনতে।প্রহর কিছুক্ষন কাঠবেড়ালীর মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আজরাহান আছে কি না!
কিন্তু কোথাও দেখলো না।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো প্রহর।সানোয়ার আহমেদ কে ডাকার জন্য করিডোর এর মোড় ঘুরতেই আচমকা কেউ প্রহর এর হাতে টেনে ওকে খালি জায়গায় নিয়ে যায়।প্রহর কিছু বুঝে উঠার আগেই আজরাহান ওর অধর ডুবিয়ে দেয় প্রহর এর গলায়।আজরাহান এর তপ্ত নিঃশ্বাস বিগলিত করছে প্রহর এর শীতল হৃদয়কে।আজরাহান ওর ডান হাত প্রহর এর বাম হাতে ছোয়াতে ছোয়াতে ওর ঘাড়ের কাছে নিয়ে আসে।প্রহর এর অসহ্য লাগছে।চোখ মুখে বিরক্তি আর কন্ঠে রাগ মিশিয়ে বলল–

“এমন করছেন কেনো আপনি!!ছাড়েন,ছাড়েন আমাকে।”

আজরাহান কোনো শব্দ করলো না।মাথা টা হালকা বাকিয়ে প্রহর এর গলার বাম দিকেও তার আর্দ্র অধরের স্পর্শ আঁকতে থাকে।
প্রহর এর দম বন্ধ হয়ে আসছে।তার এইটুকু বয়সে সে অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করেছে অনেক কাছ থেকে।প্রানচঞ্চলা হলেও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সব ধরনের অনুভুতি তার মধ্যে বিদ্যমান।হয়তো পরিস্থিতি তাকে আজ এখানে নিয়ে দাড় করিয়েছে।
আজরাহান এর ইশারা ইঙ্গিত প্রথম দিকে না বুঝতে পারলেও ধীরে ধীরে তার ছোট্ট মস্তিষ্কে আজরাহান তার জায়গা করে নেও।
একজন নারীর দেহের উপর তার বিনা অনুমতিতে তার স্বামীরও অধিকার থাকে না।কিন্তু আজরাহান কে প্রহর বিশ্বাস করে না কি ভালোবাসে সে জবাব প্রহর এখনো পায় নি।কিন্তু আজরাহান এর ভালোবাসা বোঝার ক্ষমতা তার আছে।তার ভালোবাসার স্পর্শও।কিন্তু এখন সবকিছু বিরক্তিকর লাগছে।কন্ঠে রোষ ভরে প্রহর বলল–

“ছাড়েন বলছি আমাকে।”

আজরাহান এর বুকে ধাক্কা দিতেই সে একটু দুরে সরে যায়।আজরাহান নেশার্ত চোখে ক্ষনকাল তাকিয়ে থাকে প্রহর এর দিকে।হালকা পায়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ায়।দুজনের মাঝখানে এক ফুটের মতো দূরত্ব হবে।ফুসে উঠে প্রহর।ক্ষীন কন্ঠে বলল–

“এখানে কেনো আনলেন আমাকে!!
এমন করছেন কেনো আপনি??

“শিষষষ।”

আজরাহানা ওর ডানহাতের তর্জনী রাখে প্রহর এর ঠোঁটে।চোখের পল্লব পুরোটা ছড়িয়ে আজরাহান এর দিকে নিশ্চল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রহর।
ওরা যে জায়গায় আছে তা ততোটা আলোকিত নয়।কারন দিনের আলো অন্ধকার মায়ায় তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে।কিন্তু একে অপরকে স্পষ্ট দেখার জন্য এতটুকু যথেষ্ট।
আজরাহান ওর দুই হাত রাখে প্রহর এর দুই পাশে।নাক ঠেকিয়ে দেয় প্রহর এর নাকের সাথে।একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে মিষ্টি কন্ঠে আজরাহান বলল–

“এতোবার ইশারা করলাম আসলি না কেনো!!এইটা তোর শাস্তি।”

প্রহর চোখে হাসে।কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।ভাবে,
শাস্তি!!এ কেমন শাস্তি!!শাস্তিও বুঝি এতো প্রেমোময় হয়!!শাস্তিতেও এতো শান্তি পাওয়া যায়!!শাস্তিতে বুঝি মধুরতা থাকে!!
কই নাতো!!সে তো আগেও অনেক শাস্তি পেয়েছে।তখন তো শুধু কষ্ট হয়েছে।রাত জেগে কেঁদেছে সে।জ্বলেছে তার শরীর ঠিক ততটা যন্ত্রনায় তার মন পুড়েছে।দেহের কষ্ট তাকে যতটা জর্জরিত করেছে তারচেয়ে মনের কষ্ট তাকে ভেঙে চুরে তছনছ করে দিয়েছে।
সে মানুষগুলোও তার আপন ছিলো।তাহলে কী করে পারলো এতো কষ্ট দিতে যা তার হৃদয়কে এখনো কাঁপিয়ে তোলে।বানের জলের মতো কেনো তাকে ভাসিয়ে দিয়েছিলো ওই দূর অজানা সমুদ্রে।যদি সেদিন ওই অজানা মানুষটা ওকে সেই মরনফাঁদ থেকে না বাচাতো তাহলে তো আজ ওকে বুভুক্ষু হায়েনাদের রোজ লালসার স্বীকার হতে হতো!!আদৌ কী এতোকিছুর পর সে বেচে থাকতো!!

কিন্তু সামনে দাড়ানো এই সুদর্শন পুরুষটি কেনো তাকে এমন শাস্তি দেয় যার জন্য সে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে!!!কেনো তার দেওয়া শাস্তি ওর ঝড় তোলা হৃদয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে আসে!!!
তার হাসিতে কেনো বারবার সে হারিয়ে যায় এক অজানা অপার্থিব জগতে!!আর তার ছোয়া!!!
মুখে যতই বলুক কিন্তু তার ছোয়া তাকে সবসময় আপনজনের আশ্বাস দেয়।ভালোবাসায় পূর্ন করে তার কষ্টে জমা গুমোট হৃদয়ে।অনুরণিত করে শরীর।ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার প্রতিটা আহবানে চারকদম এগিয়ে নিলে নিজেকে দুকদম আবার পিছিয়ে নেয় প্রহর।তার মনের অজানা ভয় ঝেকে ধরে তাকে আষ্টেপৃষ্টে।

প্রহর এর সম্বিত ফিরে আজরাহান এর ফিচলে আওয়াজ এ।বলল–

“কী ভাবছিস তুই??

প্রহর অতি স্বাভাবিক কন্ঠে বলল–

“কিছু না।যেতে দিন আমাকে।”

আজরাহান স্বাভাবিক হয়ে দাড়ায়।অধর জুড়ে তার এক উজ্জ্বল হাসি।অধর সংকীর্ন করে প্রচলিত কন্ঠে বলল–

“তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।”

আজরাহান ওর পকেটে হাত দিয়ে একটা জুয়েলারি বক্স বের করে।তা খুলে একজোড়া বালা বের করে।বেশ ভারী বালা দুটো।ছোট ছোট ডিজাইন করা।তার মাঝে হোয়াইট স্টোন বসানো।হালকা আবছা আলোয় চিকচিক করছে স্টোন গুলো।প্রহর স্থবির হয়ে তার বাধ্য নয়নজোড়া আবদ্ধ করে রেখেছে আজরাহান এর দিকে।এক হাস্যোজ্জ্বল মুখঃছবি তার প্রেমিকপুরুষের।আজরাহান ওর হাত দিয়ে প্রহর এর হাত নিয়ে তাতে বালা পড়াতে গেলে প্রহর অন্য হাত দিয়ে তাকে বাধা দেয়।আজরাহান প্রজ্জ্বলিত চোখে তাকায় প্রহর এর দিতে।কিঞ্চিৎ বিষন্ন ভাব তার চোখে মুখে।আর অদ্ভুত অপারগতা।আজরাহান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল–

“কী হয়েছে প্রহর??

প্রহর ওর হাত নামিয়ে আর্দ্র কন্ঠে বলল–

“এইটা আমি নিতে পারবো না।”

আজরাহান কৌতুহলপ্রদ কন্ঠে বলল–

“কেনো??

প্রহর নির্বিকার কন্ঠে বলল—

“এইটা আপনি আপনার কষ্টের টাকা দিয়ে আপনার ভালোবাসার মানুষের জন্য কিনেছেন।”

আজরাহান ফিকে কন্ঠে বলল–

“তো??

প্রহর বিরস কন্ঠে বলল–

“আমি আপনার ভালোবাসার মানুষ নই রাহান ভাইয়া।”

আজরাহান বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে ক্রোধাদিত কন্ঠে প্রহর কে দেয়ালের সাথে চেপ ধরে বলল—

“তাহলে কে তুই আমার!!বল কে তুই আমার!!!

প্রহর জড়ানো কন্ঠে বলল—

“আমি আপনার কেউ না কেউ না।”

কেঁদে উঠে প্রহর এর অন্তর আত্না।কিন্তু তার ছায়া প্রকাশ করে না প্রহর তার অভিব্যক্তি তে।সে আর সহ্য করতে পারবে না।না পারবে এই মানুষটাকে ঠকাতে।
আজরাহান এর শরীর ক্রোধানলে জ্বলে উঠছে।চোখের কোটর ধীরে ধীরে তার ব্যাপকতা বৃদ্ধি করছে।জমে উঠেছে জল।ফোঁস ফোঁস আওয়াজে প্রহর কে কাপিয়ে তুলছে আজরাহান এর লাগামহীন ক্রোধ। স্বশব্দে নিজের গলায় কঠোরতা মেখে আজরাহান বলল–

“আমি আমার নিজেকে তোর কাছে সোপর্দ করেছি তার মানে এই নয় তোর যা খুশি তুই আমার সাথে তা করবি।”

আজরাহান প্রশ্নবিদ্ধ ও নরম সুরে আবার বলল–

“এতো সেলফিশ কী করে হলি তুই!!আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই তোর কাছে!!!
আমি তো পাগল।আর তোর ভালোবাসাই আমার পাগলামোর মহৌষধ।দে না আমার পাগলামো ভালো করে।একবার আমাকে তোর হওয়ার সুযোগ দে।আমি তোর সব কষ্ট তোর জীবন থেকে মুছে দিবো।আই সয়ের।”

প্রহর শক্ত কন্ঠে বলল—

“প্লিজ যেতে দিন আমাকে।যেতে দিন।”

আজরাহান আরো ক্ষেপে উঠে।দু হাতে আরো জোরে চেপে ধরে প্রহর কে।ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল—

“আমি জানি না তোর অতীতে কী হয়েছে।শুধু জানি আমিই তোর বর্তমান আর আমিই তোর ভবিষ্যৎ।তোকে যদি সামনে এগোতেই হয় তাহলে আমাকে সাথে নিয়েই এগোতে হবে।আর না হলে আমি তোকে এখানেই থমকে দিবো।না তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পারবি না আমি তোকে আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে দিবো।”

আজরাহান স্বাভাবিক হয়ে দাড়ায়।প্রহর এর হাত ধরে তাতে বালা জোড়া দিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল–

“যদি ইচ্ছে হয় পড়েনিস।নাহলে যেখানে খুশি ফেলে দিস।”

আজরাহান থপথপ পায়ে সেই স্থান ত্যাগ করে।প্রহর দেয়ালের সাথে সেটে দাড়িয়ে আছে।নাহ,সে কাঁদছে না।ঠায় শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হাতের বালা জোড়া তুলে ধরে চোখের সামনে।তার ফাঁক দিয়ে দেয়ালের ও প্রান্ত দেখা যাচ্ছে।দাগহীন শুভ্র দেয়াল।একদম ঝকঝকে।কিন্তু তার জীবন তো দাগহীন নয়।সে কলুষিত জীবনে কী করে সে তার রাহান ভাইয়া কে স্থান দিবে!!!!

হুড়মুড়িয়ে হল থেকে বের হয় আজরাহান।নাবীন খান চেয়েছিলো একবার ডাকবেন।কিন্তু তার আগেই আজরাহান চোখের দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যায়।নাবীন খান কথা বলার মাঝখানেই চোখে হাসলেন।ভাবলেন,,নন্দিতার বিয়ের ঝামেলা টা শেষ হলেই তিনি আজরাহান আর নুরাইসার বিয়ের প্রস্তাব তুলবেন।আজরাহান লাইক আ ডায়মন্ড।তারচেয়ে ভালো জামাতা পাওয়া দুষ্কর।তিনি কোনোভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।
,
,
,
অনুষ্ঠান শেষে বাড়ির ফেরার পালা।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।হল এর জানালা দিয়ে বাইরে আসা আলোয় আর গেইটের সামনের লাইটিং এ সবকিছু এখনো ঝলমলে।কুহেলিকা সবাইকে দেখতে পেলেও প্রহর কে দেখলেন না।পাশে দাড়ানো সানোয়ার আহমেদ এর দিকে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে বললেন–

“প্রহর কোথায়??

সানোয়ার আহমেদ ঠান্ডা গলায় বললেন–

“ও এখানে নেই।”

কুহেলিকা ঈষৎ ঠাটিয়ে বললেন–

“সেটাতো আমিও দেখতে পাচ্ছি।তাই তো জিঙ্গেস করলাম।আর আজরাহান কেও দেখতে পাচ্ছি না।ছেলেটাকে একটা কাজেও পাওয়া যায় না।”

সানোয়ার আহমেদ খানিক চুপ করে থেকে হাসলেন আর বললেন–

“প্রহর কে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।ও আজরাহান এর সাথেই আছে।”

কুহেলিকা চটে উঠলেন।বিস্ময় আর রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললেন–

“এইসব আপনি কী বলছেন??কোথায় গিয়েছে ওরা??

সানোয়ার আহমেদ শান্ত ও স্বাভাবিক ভাবে বললেন–

“কোথায় গিয়েছে তা বলতে পারবো না।তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলেছে।”

কুহেলিকা আরেকটু গলা চড়িয়ে বললেন–

“ফিরে আসবে মানে!!আপনি ওদের যেতে দিলেন কেনো??ওই আজাইরা রাহান টার কী কোনো কাজ নেই??

সানোয়ার আহমেদ এইবার বেশ গম্ভীর ও নরম সুরে বললেন–

“কুহেলিকা,,তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আজরাহান এর নাম তোমার প্রয়াত শ্রদ্ধেয় শশুড়বাবার।তুমি এইভাবে তাকে বলতে পারো না।”

কুহেলিকা ইতস্তত বোধ করলেন।নিজেকে অপরাধী মনে হলো তার।ওই মানুষটার জন্যই আজ তিনি এতো সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছেন।এক অনাথ মেয়ে কে শুধু তিনি আশ্রয় দেন নি দিয়েছে গোটা এক পৃথিবী সুখ।যার সম্পর্কে তিনি স্বপ্নেও কখনো ভাবেন নি।
হয়তো এই কারনেই আজরাহান এর প্রতি তিনি বেশি রাগ দেখাতে পারেন না।ছেলেটা একটু স্বাধীনচেতা ঠিক তার দাদার মতো কিন্তু যথেষ্ট বিবেকবান।কোনো ধরনের বাজে ঝামেলা সে কখনো করেনি।নিজের কথা ভাবতেই তার প্রহর এর কথা মনে হলো।প্রহর এর জীবনটাও তার মতো।হয়তো এই কারনেই মেয়েটার প্রতি তার আলাদা একটা মায়া কাজ করে।

নিজের ভাবনার ইতি টেনে স্বাভাবিক ভাবে কুহেলিকা বললেন—

“আপনার এভাবে ওকে যেত দেওয়া উচিত হয় নি।”

সানোয়ার আহমেদ হতাশ কন্ঠে বললেন–

“তুমি কী তোমার ছেলে কে বিশ্বাস করো না??

“এখানে বিশ্বাস অবিশ্বাস এর কথা নয়।প্রহর মেয়ে মানুষ।লোকে কী বলবে!!

সানোয়ার আহমেদ ঈষৎ হাসলেন আর বললেন–

“তুমি কবে থেকে লোকের কথা ভাবতে লাগলে!!!লোকের কাজই তো বলা।উপরওয়ালা বলার জন্যই তো মুখ দিয়েছেন।আর আমাদের দিয়েছেন বিবেক।তাই কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তার বিবেচনা আমাদেরই করতে হবে।”

কুহেলিকা কপট অনুরাগে বললেন–

“আজ মুখে খই ফুটেছে আপনার!!ছেলের পক্ষ নিয়ে আর কথা বলতে হবে না।ওকে কল করে বলেন যেনো তাড়াতাড়ি ফিরে আসে।”

“সে কি আর বলিনি!!
বলেছি দশটার মধ্যেই যেনো ফিরে আসে।”

কুহেলিকা বিস্ফোরিত চোখে বললেন—

“কী??

সানোয়ার আহমেদ অধর বাকিয়ে দুষ্টামির ছলে বললেন—

“বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছে বোধ হয়।আচ্ছা,আমি এখনই ওকে বলছি যেনো বারোটার মধ্যেই ফিরে আসে।”

কুহেলিকা চোখ মুখ বাকালেন।ভ্রু জোড়া কুঞ্চন করে রাগী কন্ঠে বললেন–

“আপনার কী মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে!!

সানোয়ার আহমেদ বাকা হাসলেন।চোখের চশমাটা একটু নেড়েচেড়ে ঠিক করে নাকের উপর রাখলেন।কুহেলিকার কাছে এসে মৃদু স্বরে বললেন–

“তোমাকে রাগলে কিন্তু এখনো সে ষোলো বছরের কিশোরী মনে হয়।আট বছর পর বাড়ি গিয়ে সেই প্রথম বার তোমাকে যখন আসলাম ভাইয়ার বিয়েতে আধ হাত ঘোমটায় দেখলাম মনে হলো সদ্য কলি থেকে ফোটা পদ্ম।তোমার কপালের ওই লাল টিপ সেদিন আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো।ঠোঁটের নিচের ওই লাল তিল উফ!!

কুহেলিকা লজ্জায় মাথা সরালেন।কপট রাগ দেখিয়ে বললেন–

“এইসব কী শুরু করলেন আপনি!!বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে আপনার!!

“আরে শরীর বুড়ো হয়েছে মন তো আর বুড়ো হয়নি।”

“আপনি চুপ করবেন!!

“মা বাবা কিন্তু ভুল বলে নি।রাগলে কিন্তু তোমাকে বেশ মিষ্টি লাগে।এই জন্যই তো তুমি যতই রাগ দেখাও আজরাহান ভাইয়া তোমাকে একটুও ভয় পায় না।”

“হয়েছে হয়েছে বাবা আর বোনের আর চ্যালামি করতে হবে না।তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসো।দেরি হচ্ছে আমাদের।”

কুহেলিকার হাসি ভরা রাগে ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো বাবা মেয়ে।
,
,
,
ঢক ঢক করে পানি গিলে যাচ্ছে আজরাহান।সামনে দাড়ানো প্রহর কাতর চোখে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর দিকে। পানি খাওয়ার সময় আজরাহান এর এডাম’স এপেল যখন উঠানামা করছিলো প্রহর এর তৃঞ্চা যেনো দ্বিগুন হারে বাড়তে লাগলো। আজরাহান এর এডাম’স এপেল যতবার উঠানামা করছে প্রতিবারই যেনো শ্বাস রুদ্ধকর মনে হচ্ছে সবকিছু প্রহর এর কাছে।শুকনো ঢোক গিলছে প্রহর।নিগূঢ় দৃষ্টি দিয়ে আজরাহান কে দেখে যাচ্ছে প্রহর।ফর্সা মুখমণ্ডলের মাঝে ওই জাম রঙের দুই ঠোঁটের স্মিত হাসিই যেনো যেকোন নারীর প্রাণহরণ করে নিবে।ভ্রু জোড়া কুঞ্চে চোখের কোন ক্ষীন করে একবার কারো দিকে তাকালে মনে হবে এই চোখেই যেনো সারাজীবনের জন্য বন্দি হয়ে যায়।আজরাহান মুখ থেকে বোতল সরাতেই আচমকা প্রহর বলল–

“খাবো আমি।”

আজরাহান ওষ্ঠজোড়া হালকা স্মিত করে প্রহর এর দিকে ঝুকে বলল–

“পানি না কি আমাকে!!

প্রহর চোখ পিট পিট করে বার কয়েক তাকালো।ফিকে গলায় বলল–

“আমি কী রাক্ষস!!

আজরাহান এর হাত থেকে খপ করে বোতলটা নিয়ে তাতে চুমুক লাগায়।আজরাহান আওয়াজ করে হাসলো।শান্ত কন্ঠে বলল–

“যেভাবে তাকিয়ে ছিলি মনে হচ্ছিলো আমাকেই খেয়ে নিবি!!
অবশ্য এতে তোর কী দোষ।আমি দেখতেই এতো ড্যাশিং।”

কথা শেষ করে আরেক দফা হাসলো আজরাহান।প্রহর আবারো প্রস্তরমূর্তির ন্যায় নির্বিকার দৃষ্টিতে আজরাহান এর দিকে তাকিয়ে আছে।লাইট পিংক কালারের শার্টের সাদে ব্ল্যাক প্যান্ট।শার্টের কলারে ঝুলানো ব্ল্যাক এর মাঝে হালকা চেকের টাই।পকেটে দু হাত গুজে সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রহর এর দিকে।এই লোকটার এই চাহনিতেই বার বার হারিয়ে যায় প্রহর।তার হৃদপিন্ডের কাপন যেনো বাড়তে থাকে।শিরা উপশিরায় বয়ে যায় এক শীতলতা।ক্ষনে ক্ষনে যেনো ওই চোখের চাহনিতেই নিজেকে বিসর্জন দিতে ইচ্ছে করে।
প্রহর এর সজ্ঞান আসে আজরাহান নরম সুরে।

“আর খাবি??

“উহু।”

“তাহলে চল।”

আজরাহান প্রহর কে নিয়ে বেরিয়েছে শপিং এর জন্য।ছোট্ট একটা শপিংমল এর সামনে থামতেই ফুচকা চোখে পড়ে।মেয়েদের ফুচকার প্রতি কী নেশা তা শুধু উপরওয়ালাই জানে।এক এক করে ফুচকা গিলছিলো প্রহর।আজরাহান দাড়িয়ে একরাশ ভালোবাসার নয়ন দিয়ে গভীর ভাবে তার ডিঙি নৌকা কে দেখে যাচ্ছে।রাস্তার পাশেই ফুচকা ওয়ালা।শপিং মল হওয়ায় বেশ ভীড়ভাট্টাও।রিক্সার ক্রিং ক্রিং আওয়াজ সাথে বাস,প্রাইভেট কার এর শো শো আওয়াজ।মানুষের কোলাহল।হকারদের গলা ফাটানো চিৎকার সব মিলিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজমান।

শপিংমল এর ভিতরে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাটছে প্রহর।রাতের সময়টাতেও লোকে লোকারন্য থাকে শপিংমল গুলো।একটু অগোছালো হয়ে হাটতেই একটা লোকের সাথে ধাক্কা লাগে প্রহর এর।ক্রুদ্ধ হয় প্রহর।রাগাম্বিত স্বরে লোকটাকে বেশ কিছু কথা বলে
।লোকটি বিনা মেঘে বজ্রপাতে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।আজরাহান কোনেমতে প্রহর কে থামায়।হাতের ডানপাশে এনে সেইফ জোন এ রাখে প্রহর কে।আজরাহান ঠোঁটে চিপে হাসে।প্রহর ক্ষীন কন্ঠে বলল–

“হাসছেন কেনো আপনি??

আজরাহান হাসি থামিয়ে চোখে হেসে বলল–

“এতো রেগে যাস কেনো তুই!!
লোকটা ইচ্ছে করে কিছু করে নি।”

প্রহর ব্যঙ্গাত্মক হেসে বলল—

“ইশশশ রেগো যাস কেনো তুই!!!
মেয়ে মানুষ দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে করে।আমি মনে হয় বুঝি না!!

“কী বুঝিস তুই।”

“এইসব লোক ইচ্ছে করেই এইসব করে।প্রথমে মেয়েদের গায়ে হাত দিবে পড়ে বলবে সরি।”

“সবাই ইচ্ছে করে করে না।অনেক সময় ভুলবশত হয়ে যায়।”

“মেয়েদেরকে ছোয়ার ক্ষেত্রেই ভুল!!
তাই প্রথমে শিক্ষা দেওয়া উচিত যেনো দ্বিতীয় বার ভুল না করে।”

“একটুখানি ছোয়াতেই এতো রাগ!!আমি ও তো তোকে ছুই।”

“আপনি ছোবেন বলে কী সবাই ছোবে না কি অামাকে!!

নিজের কথায় নিজেই জীভ কাটে প্রহর।আজরাহান পাল্টা প্রশ্ন করে না।সামনে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্মিত হাসে।
,
,
শপিং শেষে মলের বাইরে প্রহর কে দাড় কড়িয়ে ভিতরে পুনরায় যায় আজরাহান।ভুলবশত একটা ব্যাগ ফেলে রেখে এসেছে।প্রহর দুই হাতে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।শপিংমলের সামনে বেশ আলো।একদম দিনের মতো পরিষ্কার।প্রহর হঠাৎ অনুভব করে ওর পাশেই গা ঘেষে একটা ছেলে কিছুক্ষন পরপর ওকে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে।বজ্রকঠোর হয়ে প্রহর কঠিন কন্ঠে বলল–

“এমন করছেন কেনো আপনি??চোখে দেখতে পান না??

ছেলেটি হকচকিয়ে যায়।প্রহর এর কথার উচ্চ আওয়াজ এ এদিক ওদিক তাকায়।প্রহর আবারও প্রদৃপ্ত কন্ঠে বলল—

“এদিক ওদিক কী দেখছেন!!আমার দিকে তাকান।মেয়ে মানুষ দেখলেই হাত নিষপিশ করে!!
আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছেন!!বাসায় কী কেউ খেতে দেয় না!!আর চুল কাটার কী টাকা নেই না কী!!

প্রহর হালকা ঝুকে নাক ছিটকে বলল–

“ছিহ,,
গোসল করেন না না কি!!ইয়াক।জঙ্গল থেকে এসেছেন!!আগে তো নিজেকে মানুষ বানান তারপর মেয়েদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করবেন।যান এখান থেকে।ছিহহহ!!

প্রহর এর অনর্গল দীপ্ত কথায় আশেপাশের মানুষজন বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে।প্রহর থেমে কিছুক্ষন বুক ভরে শ্বাস নেয়।সামনে দাড়ানো ফর্সা মতো ছেলেটি কানের উপর থেকে মোবাইলটা সরিয়ে ভ্যাবাচাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে প্রহর এর দিকে।ছেলেটির দিকে নজর পড়তেই ফুসে উঠে প্রহর।অগ্নিঝরা কন্ঠে বলল–

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো!!
জীবনে মেয়ে মানুষ দেখেন নি??

ছেলেটি শুকনো ঢোক গিলে নেয়।হা করা ঠোঁট দুটো চুপসে যায়।আমতা আমতা করে টেনে টেনে বলল—

“দেওওখেছি তবেএএ আপপনাআর মতোওও দেখেএখি নি।”

“কেনো !!
আমার মাথায় কী শিং আছে!!!

“নাহ,,মানে,,

“সরি ভাইয়া আপনি কিছু মনে করবেন না।”

ছেলেটাকে অনুনয় করেই প্রহর এর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে আজরাহান।
সোডিয়াম লাইটের আবছা আলোয় পায়ে পা মিলিয়ে হাটছে আজরাহান আর প্রহর।একটু চিপা গলি হওয়ায় আশেপাশে দু একজন মানুষই হেটে যাচ্ছে।দু একটা কুকুর লেজ নেড়ে গুটি গুটি করে হাটছে।একটু পর পর ডেকে উঠছে।আজরাহান স্মিত কন্ঠে বলল–

“তোকে বিয়ে করলে তো আমাকে বেশ ভুগতে হবে।যেখানে সেখানে মারামারি লাগিয়ে দিবি দেখছি।”

প্রহর দীপ্ত কন্ঠে বলল–

“কে বলেছে আপনাকে আমায় বিয়ে করতে!!
করবো না আমি আপনাকে বিয়ে।আপনার যাকে খুশি তাকে বিয়ে করেন।”

আজরাহান থমকে যায়।ঘুরে তাকায় প্রহর এর দিকে।ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল–

“বিয়ে আমি যাকেই করি না কেনো ফুলসজ্জা আমি তোর সাথেই করবো।আর আমার রাহান,রিনীর মাম্মাইও হবি তুই।”

প্রহর স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় আজরাহান এর দিকে।অধরে স্মিত হাসি রেখা টেনে উদাসীন ভাবে দেখে।মিষ্টি সুরে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে বলল–

“আপনার মেয়ে বাবু ভালো লাগে রাহান ভাইয়া??

আজরাহান শান্ত ও স্বাভাবিক কন্ঠে বলল–

“ভালো লাগবে না কেনো!!মেয়েরা তো জান্নাত।রাসূলে কারীম(সা)ইরশাদ করেছেন,”যদি কোন ব্যক্তির ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করে আর সে যদি সেই কন্যা সন্তান কে কষ্ট না দেয় এবং ওই ঘরে জন্ম নেওয়া পুত্র সন্তানের উপরে প্রাধান্য দেয়,তাহলে ওই কন্যার কারনে ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
–(মুসনাদে আহমাদ ১/২২৩)

রাসূলে কারীম আরোও বলেন,””যে ব্যক্তি তার দুটি কন্যা সন্তানকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করলো সে কিয়ামতের দিন এরূপ অবস্থায় উঠবেন যে ওই ব্যক্তি আর রাসূলে কারীম(সা) এরকম মিলিত অবস্থায় থাকবেন এই বলে তিনি স্মীয় আঙ্গুল মিলিত করে দেখান।
—(মুসলিম শরীফ)

রাসুলে পাক আরোও ইরশাদ করেন,,””কন্যা সন্তান হলো উত্তম সন্তান।কেননা তার হচ্ছে অধিক গুনের অধিকারিনী,বিনম্র ও মিষ্টভাষী।এছাড়াও তারা মমতাকারীনী,স্নেহময়ী,বিনয়ী ও বরকতকারীনী।”
—(ফিরদাউস ৪/২৫৫)

আর যে ব্যক্তির ঘরে প্রথম কন্যা সন্তান জন্ম নেয় সে বরকতময় ও সৌভাগ্যশীল হয়।”

আজরাহান এক লম্বা দম ছেড়ে আবার বলল–

“আমি তো সব সময় চেয়েছি আমার যেনো প্রথম মেয়ে বাবু হয়।ওকে আমি আমার কলিজা বানিয়ে রাখবো।কিন্তু,,,,,

প্রহর আহত নয়নে বিরস কন্ঠে বলল—

“কিন্তু কী??

“ওই যে তোকে কথা দিয়েছি তোকে জমজ বাবুর মা বানাবো।তাই মেয়ের সাথে আমার একটা ছেলেও হবে।”

“আপনি কী করে জানেন জমজ বাবু হবে??

আজরাহান পদযুগল স্থির করে।প্রহর এর দিকে ঘুরে দাড়িয়ে হালকা নিচু হয়ে ঝুকে ওর কপালে উষ্ণ চুম্বন করে।শীতল কন্ঠে বলল—

“বিয়ের পর তোকে আমি এতো ভালোবাসবো যে উপরওয়ালা বাধ্য হয়ে আমাদের জমজ বাবু দিবে।বুঝলি ডিঙি নৌকা।”

আজরাহান পা বাড়ায় সামনে।প্রহর পাথরমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে থাকে।অদ্ভুত ভাবে ভাবতে থাকে আজরাহান এর বলা কথাগুলো।সুপ্রসন্ন হাসি তার অধর জুড়ে।বুকের কোথাও শীতল অনুভুতি।হয়তো সুখ পাখি ধরা দিবে তার জীবনে।আজরাহান কয়েককদম এগিয়ে গিয়ে পাশে প্রহর কে না পেয়ে পিছন ফিরে তাকায়।গলা উচিয়ে বলল–

“কিরে দাড়িয়ে আছিস কেনো!!আয়।বললি না খিদে পেয়েছে তোর।রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।”

প্রহর লম্বা লম্বা পা পেলে খানিক দৌড়ে এসে আজরাহান এর হাত জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে হাটতে শুরু করে।পায়ে পা মিলিয়ে হাতে হাত রেখে।আবছা আলোয় মিলিয়ে যাচ্ছে দুজন মানবমানবী।তাদের যে একসাথে সামনে অনেক পথ চলা বাকি!!

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here