বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ৩৫

0
4388

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ৩৫
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

রাতের আঁধারেও আজরাহানদের বাড়ি জ্বল জ্বল করছে।একদিনের মধ্যে এতোবড় আয়োজন করা চাট্টিখানি কথা না।মারশিয়াদ হল বুক করেছে অনলাইনে।এখন আর সরাসরি কথা বলা সম্ভব না।আশফিক এর পরিচিত এক বন্ধু থেকেই ঠিকানা পায়।সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে।সবাইর অগোচরে মারশিয়াদ খুজে চলে সানায়া কে।যাওয়ার আগে ওর সাথে একবার কথা বলা জরুরি।

ছাদের উপর দাঁড়িয়ে অক্ষিপুট খুলে তাকিয়ে আছে সানায়া।হিমশীতল শীত পড়েছে।শরীরের লোমকূপ পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলছে।দু এক ফোটা আকাশ ফেঁড়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।শীতল বাতাসে উড়ছে সানায়ার উসকোখুসকো চুল।অনেকদিন চুলে হাত দেওয়া হয় না।আকাশে বিশাল বড় চাঁদ।একদম উজ্জ্বল, যেনো তার আলো আজ ভাসিয়ে নিবে আকাশের অন্ধকার মায়া।বাতাসের তীব্রতায় ভেসে আসছে মিষ্টি ফুলের একটা ঘ্রান।
নরম পায়ে সানায়ার পাশে এসে দাঁড়ায় মারশিয়াদ।তার ভরাট কন্ঠে স্মিত আওয়াজ এ বলল—

“রেগে আছো এখনো আমার উপর?

সানায়া তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।ফিকে গলায় বলল–

“রাগ তো তার উপর করা যায় যার উপর অভিমান করা যায়।অভিমান তো ভালোবাসার মানুষের উপর করা যায়।তুমি তো আমাকে কখনো ভালোবাসোনি জান।”

মারশিয়াদ এর বুক চিড়ে বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস।দুর্বল গলায় বলল–

“যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি।কিন্তু এতে আমার কী করার ছিলো!
তুমি আমাকে কখনো বলোনি যে..।

মারশিয়াদ কে তার কথা শেষ করতে না দিয়েই সানায়া ওর ব্লেজার চেপে কম্পনরত গলায় বলল—

“কেনো বলতে হবে তোমাকে!কেনো বুঝলে না তুমি আমার ভালোবাসা !
কেনো ফিরিয়ে দিলে তুমি আমাকে!কেনো?কেনো?কেনো?

সানায়া ঝরঝর করে কেঁদে দেয়।মারশিয়াদ ওর হাত দুটো ধরে নম্র গলায় বলল–

“সামলাও নিজেকে সানায়া।ভালোবাসি বললেই তো ভালোবাসা যায় না।
ভালোবাসা এক অদ্ভুত সুপ্ত অনুভুতি।কখন,কোথায় কার প্রতি তৈরি হয় বলা যায় না।আই উইশ তুমি আমার চেয়ে বেটার কাউকে পাবে।”

“উপহাস করছো!আমার ভালোবাসা তোমার কাছে হাসির খোরাক মনে হলো!

“সানায়া ভুল বুঝছো তুমি আমাকে।”

বিনা মেঘে বজ্রপাত এর মতো এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে সানায়া।হঠাৎ ই মারশিয়াদ কে জড়িয়ে ধরে ওর অধরযুগলে নিজেকে আবদ্ধ করে নেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মারশিয়াদ।মারশিয়াদ এর ধ্যান ভাঙে নুরাইসার কম্পনরত করুন কন্ঠে।

“জান!

সানায়া কে সরিয়ে মারশিয়াদ দেখতে পায়
অক্ষিভরা মহাসাগর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নুরাইসা।মারশিয়াদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল–

“মিষ্টি!

নুরাইসা থামলো না।বুকে তার ঝড় উঠেছে।নাম না জানা ভয়ংকর ঝড়।যেনো সবকিছুই উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।দপ দপ করে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে সিড়ি ঘরের দরজায়।মারশিয়াদ ও ওর পিছনে ছুটলো।
সানায়া ছোট্ট করে ধম ফেলে।অধর কোনে বাঁকা হাসে।ছাদের কার্নিশে গিয়ে দাঁড়ায়।এতোক্ষনে ওষ্ঠযুগল ছড়িয়ে প্রানভরে নিঃশ্বাস নেয় সানায়া।
সানায়ার অজান্তেই ওর পাশে এসে দাঁড়ায় তারাফ।হিম করা শীতল বাতাসও যেনো আজ সানায়ার হৃদয়ের উষ্ণতা কে হার মানাতে পারছে না।
সানায়ার দিকে নির্ণিমেষ তাকিয়ে স্মিত হাসে তারাফ।গায়ে তার পোলো শার্ট জড়ানো।বাতাসে চুল গুলো চোখের সামনে এসে পড়েছে।সানায়ার চোখে মুখে কেমন যেনো অদ্ভুত ভয়ংকরতার ছাপ।তারাফ মৃদু গলায় বলল–

“বদলা নিলেন?

সানায়া তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তারাফ এর দিকে।হালকা আলোয় তারাফের ওই স্মিত হাসি আর গভীর চোখ জোড়া যেনো এক মুহূর্তেই মোহিত করে ফেলেছে সানায়া কে।সানায়ার হৃদয়ে উঠা উত্তাল ঢেউ এর প্রকোপ ধীরে ধীরে শান্ত হতে লাগলো।তারাফ থেকে চোখ ফিরিয়ে সানায়া সামনের দিকে তাকায়।অতি স্বাভাবিক গলায় বলল–

“একটু কষ্ট তারও পাওয়া উচিত।”

তারাফ দুর্বোধ্য হাসলো।মৃদু গলায় বলল–

“মানুষ আসলেই বিকৃত মস্তিষ্কের প্রানি।তার মস্তিষ্ক জুড়ে রয়েছে পৃথিবী জোড়া অরাজকতা।একবার ওই মস্তিষ্কে তা ঢুকে গেলে তা থেকে বের হওয়া কষ্টসাধ্য।”

তারাফ এর কথায় অপ্রতিভ হয় সানায়া।তার বুকের হাহাকার আবার বাড়তে শুরু করে।লোকটা তাকে অপমান করলো।কিন্তু তাতে সানায়ার বিন্দুমাত্র আফসোস হচ্ছে না।ক্ষুন্ন গলায় সানায়া বলল–

“পৃথিবীর বুকে একমাত্র দোষী কী শুধু আমিই।আর যারা আমার সাথে অন্যায় করলো তাদের কোনো দোষ নেই!

“আমরা সবাই কারো না কারো কাছে দোষী।কেউ জানা আর কেউ অজানা।
কিন্তু জেনে শুনে দোষ করাটা ভারী অন্যায়।”

সানায়া জ্বলে উঠে।তারাফ এর দিকে অগ্নিচোখ দিয়ে বলল–

“কেনো আমার সাথেই এমন হলো বলতে পারেন!শুধু কী আমিই দোষী!

“আমি বলি নি আপনি দোষ করেছেন।
কিন্তু যা করেছেন তা ঠিক নয়।আপনি কাউকে পেলেন না তাই অন্যকেউ তাকে পাবে না তাতো নয়।”

সানায়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।অক্ষিপল্লব ভিজিয়ে ঝুমঝুম করে ঝরতে থাকে শ্রাবণের ধারা।ভালোবাসায় পরাস্ত সানায়া নিজের অজান্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তারাফ এর বুকে।যেনো শান্তির নীড় খুঁজে পেয়েছে সে।ক্রন্দনরত গলায় বলল–

“কেনো আমার সাথেই এমন হলো বলেন তো!আমাকেই কেনো রিক্তহস্তে ফিরতে হলো!সবাই তো সবার ভালোবাসা পেয়েছে।আজরাহান ভাইয়া তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে।জান তার মিষ্টিকে পেয়েছে।আশফিক ভাইয়াও তার প্রেয়সী কে পেয়েছে।তাহলে আমার বেলাই কেনো এমন হলো।আমিই কেনো হেরে গেলাম।আমার ভালোবাসায় তো কোনো কমতি ছিলো না।তাহলে আমিই কেনো একা রয়ে গেলাম!

তারাফ শান্ত ও স্থির হয়ে রইলো।সানায়ার কান্নার আওয়াজ যেনো ওর বুকে তীরের মতো বিঁধতে লাগলো।আলতো হাতে সানায়াকে জড়িয়ে ধরে বলল—

“আমি আপনাকে ভালোবাসি মিস সানায়া।একটা সুযোগ কী আমাকে দেওয়া যাবে?

সানায়া স্থবিরচিত্তে ওর মাথাটা তারাফের বুক থেকে একটু উঠিয়ে নম্র গলায় বলল—

“কী বললেন আপনি?

তারাফ ম্লান হেসে সরস গলায় বলল–

“আপনার ওই সুবিশাল শূন্য হৃদয়ে কী আমাকে একটু জায়গা দেওয়া যাবে?

সানায়া নিরুত্তর,নিরুত্তাপ।নির্বিকার চোখে তাকিয়ে আছে তারাফের ওই গভীর চোখে যেনো কোন চুম্বকীয় শক্তি ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।তারাফ মৃদু হাসলো।জড়তাহীন গলায় বলল—

“আমি আপনাকে হয়তো দামি শাড়ি,দামি গহনা দিতে পারবো না।কিন্তু একটা বেলী ফুলের গাজরা এনে নিজ হাতে আপনার ওই খোঁপায় গুঁজে দিতে পারবো।
দামি এসি গাড়িতে হয়তো আপনাকে ঘুরাতে পারবো না।কিন্তু রিক্সার হুড টেনে রোদ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারবো।দামি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে খাওয়ানোর পয়সা হয়তো আমার নেই।কিন্তু সপ্তাহের একদিন নিজ হাতে আপনাকে রান্না করে অবশ্যই খাওয়াবো।আপনাকে হয়তো হলিডে তে ফরেন কান্ট্রিতে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া হবে না।কিন্তু ওই আকাশের নিচে পাশাপাশি একসাথে বসে চন্দ্রবিলাস করতে পারবো।
দেবেন আমাকে একটা সুযোগ??

সানায়া নিরব,নিস্তব্ধ,শান্ত।শ্বাসরুদ্ধ করে শুনছে তারাফ এর কথা।কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে বিধ্বস্ত গলায় সানায়া বলল–

” আপনি পারবেন আমাকে ভালোবাসতে!কতোটা ভালোবাসবেন আপনি!পারবেন আপনার ভালোবাসা দিয়ে জান কে ভুলিয়ে দিতে!পারবেন তারাফ?বলেন না পারবেন আপনি আমাকে এতোটা ভালোবাসতে?পারবেন?

তারাফ নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে তার শ্যামাবতী কে জড়িয়ে ধরে।গুঢ় গলায় বলল–

“পারবো শ্যামাবতী,পারবো।একটা সুযোগ দিন আমাকে।আমি আমার সবটা উজাড় করে দিবো আপনাকে।”

সানায়ার নিঃশ্বব্দ কান্নায় ভিজে ঝবঝব করে তারাফ এর জামা।এক শীতল বাতাস বলয় সৃষ্টি করেছে ওদের চারপাশে।কিন্তু দুজন এখন দুজনের উষ্ণতায় মশগুল।
কুয়াশা চাদরে আচ্ছাদিত হচ্ছে তারা দুইজন।
,
,
,
একটা সাদা লং ড্রেস পড়ে বিছানার এক কোণে বসে আছে প্রহর।নির্লিপ্ত,নির্বিকার।আজরাহান ভিতরে ঢুকেই বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয়।সকল বাঁধা ডিঙিয়ে আজ তার রেড রোজ তার হবে।প্রহর মাথা নিচু করে বসে আছে।এমন না যে সে আগে কখনো এই ঘরে একা আসেনি।কিংবা আজরাহান এর সাথে একা সময় কাটায়নি।কিন্তু আজ সবকিছুই অন্যরকম।বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে প্রহর এর।আজরাহান বিনা ছন্দ পতনে প্রহর এর পাশে গিয়ে বসে।প্রহর নির্ণিমেষ তাকিয়ে আছে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান এর নিরব দৃষ্টি সমুখপানে।কারো মুখে কথা নেই।নিশ্চল,নিস্তব্ধ পরিবেশ।মৌনতা ভেঙে আজরাহান কে স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ালেই আজরাহান সরে বসে।ব্যস্ত গলায় বলল–

“”এই এই কী করছিস!একদম ছুবি না আমাকে।”

প্রহর ভয়াতুর চোখে তাকিয়ে আহত গলায় বলল—

“রাহান ভাইয়া!

আজরাহান শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বলল–

“শিষষষষষ,,
একদম ছুবি না আমাকে।আগে তো তোর পাওনা শোধ করি।
আমি কাবিনের টাকা তোর নামি ফিক্সড ডিপোজিট করেছি।এখন বল তুই আমার কাছে কী চাস?

আজরাহান ওর গলার স্বর একটু নিচু করে হিসহিসিয়ে বলল—

“এরপর কিন্তু পুরোদস্তু তোকে আমার হতে হবে।আমি কিন্তু কোনো কথা শুনবো না।”

প্রহর জলভরা অক্ষিযুগলের পলক ফেলে। চোখের মধ্য থেকে এক স্মিত ধারা চুইয়ে পড়ে ওর কপোল বেয়ে।তিরতির করে কাঁপছে প্রহর এর ঠোঁট।সেই কাঁপা ঠোঁট মৃদু ছড়িয়ে দৃঢ় গলায় বলল—

“আমার কিচ্ছু চাই না রাহান ভাইয়া।আপনি শুধু আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না।”

আজরাহান বিগলিত হাসে।প্রহর এর গালে নিজের নাক ঠেকিয়ে বলল–

“দুর পাগলি!তোকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য কী বিয়ে করেছি নাকী!আমি সারাজীবন তোকে আমার হৃদয়ে আগলে রাখবো।তুই আমার #বৃষ্টিস্নাত_ভোর এর সূর্য।”

আজরাহান প্রসন্ন হাসে।চোখে তার অদ্ভুত আনন্দ ছেয়ে যায়।স্বাভাবিক গলায় আবার বলল–

“যা ফ্রেশ হয়ে নে।আমাদের নতুন জীবনের শুরু উপর ওয়ালার রহমতের সাথেই তো শুরু করতে হবে নাকি!যেনো সারাজীবন আমাদের বন্ধন অটুট থাকে।”

প্রহর চোখে হাসে।মৃদু গলায় বলল—

“যাচ্ছি।”

একটা টাওয়েল নিয়ে প্রহর ওয়াশরুমে চলে যায়।বের হয়ে দেখে আজরাহান স্থির দাঁড়িয়ে আছে।দুইজন একসাথে নামায পড়ে নেয়।আজরাহান আগেই উঠে।প্রহর এখনো বসে আছে।প্রহর এর ওর বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।বিয়ে মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন।এই দিনে বাবা মা তার মেয়েকে প্রানভরে দোয়া করেন।কিন্তু প্রহর এর ভাগ্য খারাপ।তার যে কেউ নেই।জায়নামাজ রেখে উঠে দাঁড়ায় প্রহর।আজরাহান স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।আজরাহান ধীর পায়ে ওর কাছে এসে দাঁড়ায়।স্মিত হেসে বলল–

“মে আই?

প্রহর এর অধর কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।আজরাহান দৃঢ় হাতে প্রহর কে কোলে তুলে নেয়।প্রহর তার নিশ্চল চাহনি আবদ্ধ করে রেখেছে আজরাহান নেত্রযুগলে।একহাত দিয়ে আজরাহান এর গাল ছুঁয়ে আছে।আজরাহান প্রহর কে বিছানায় শুইয়ে ওর উপর নিজের পুরো ভর ছেড়ে দেয়।প্রহর এখনো নিস্পলকভাবে তাকিয়ে আছে।আজরাহান প্রহর এর চোখে,মুখে,ঠোঁটে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয়।প্রহর এখনো নির্বিকার,স্থির।কেমন যেনো শান্ত,সমাহিত।আজরাহান মৃদু গলায় বলল–

“কীরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?ভয় পাচ্ছিস?ভয় পাস না।এখন তো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।মা রাগ করবে না।”

প্রহর কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।নিষ্প্রভ চোখে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান এর তপ্ত নিঃশ্বাসের মিষ্টি গন্ধ এসে নাড়া দিচ্ছে প্রহর কে।প্রহর এর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।হিমশীতল পরিবেশ।তারপরও আজরাহান এর শরীরের উষ্ণতায় প্রহর মৃদু ঘামতে শুরু করেছে।হঠাৎ বিনাশব্দে বিদ্যুৎ চমকায়।আর তার আলো জানালার পর্দা ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করে।সেই আলোতে চকিত প্রহর দাঁত,মুখ খিচে আজরাহান কে খামচে ধরে।আজরাহান গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রহর সেই মুখে।আজরাহান এর মনে হলো যেনো ওর সামনে এক জীবন্ত পুতুল শুয়ে আছে।আজরাহান প্রহর এর কানের কাছে গিয়ে মৃদু গলায় বলল–

“প্রহরিনী,ভালো আছো?

প্রহর রুদ্ধশ্বাসে ঝট করে চোখের পাল্লা খুলে।বিস্মিত গলায় বলল–

“আআপপনিইই!!!!

“ইয়েস মাই লিটেল হার্ট,ইয়েস।”

বাইরে আবারো বিদ্যুত চমকায়।তাতে স্পষ্ট দেখা যায় বাড়ির পিছনে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা মেহগনি গাছের পাতায় ঝিরঝির করে বর্ষন হচ্ছে।আর তা মেহগনি গাছের পাতা ছুঁয়ে টুপটুপ করে মাটি ছুঁইছে।শীতল বাতাসে নড়ে উঠছে পত্র-পল্লব।কিশলয় তার সারা অঙ্গে মেখে নিচ্ছে শীতের প্রথম প্রহরের মেঘমেদুরের স্নিগ্ধ বারি।
আর এই বৃষ্টিস্নাত রাতেই আজরাহান তার প্রহরিনী কে নিজের করে নিচ্ছে।একান্ত নিজের।জীবনের অন্তিম নিঃশ্বাস ত্যাগ করার মুহূর্তও তার লিটল হার্ট শুধু তার জন্যই স্পন্দিত হবে।এক স্নিগ্ধ,শান্ত,শীতল আর মধুময় রাত।

সেদিন প্রহর কে ওই দুবোর্ধ্য জায়গা থেকে বের করার জায়গায় মারশিয়াদ এর যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু ইনশিরাহ অসুস্থ থাকায় মারশিয়াদ এর যাওয়া হয়নি।গিয়েছিলো আজরাহান।আর মারশিয়াদ এর কথাতেই প্রহর কে আজরাহানদের বাড়িতে আনা হয়।কারণ এই ধরনের মেয়েরা বেশিরভাগ সময় নিজের পরিবারের কাছ থেকে ধোঁকার স্বীকার হয়।তাই তাদের প্রয়োজন হয় নিবিড় ভালোবাসার।আর মি. আর মিসেস সানোয়ার এমন দুজন মানুষ যাদের মনে রয়েছে অপরিমেয় ভালোবাসা যা সম্বন্ধে অবগত মারশিয়াদ।আর তাই প্রহর এর ঠিকানা হয় আজরাহানদের বাড়ি যা আজ তার চির সুখের স্থান।আজরাহান,মারশিয়াদ,আশফিক,শিহরণ,ইনশিরাহ ওরা সবাই একসাথেই কাজ করে যা লোক চক্ষুর আড়ালে।নাবীন খান ওদের পথ প্রদর্শক।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here