বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-১২

0
2534

#বেখায়ালি_ভালবাসা
#পাট_১২
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ
.
সৈকত পেছন থেকে গিয়ে মেঘের কাঁধে হাত রাখলো।
মেঘ পিছন ফিরে সৈকত কে দেখে বললোঃ
—আরে আপনি এসে গেছেন মিস্টার সৈকত চৌধুরী। ওয়েলকাম, ওয়েলকাম।
এখানে এসেছেন নিশ্চয় আবার আমাকে চড় মারতে আর নয়তো অপমান করতে।
নিন এই নিন বলে মুখটা এগিয়ে দিল।
মেঘের মুখে বেশামাল কথা আর মুখের গন্ধ শুকে সৈকত বুঝলো মেঘ নিশ্চয় —–
কি হলো নিন মারুন বলে সৈকতের কাছে টলমল পায়ে আর একটু এগিয়ে আসলো মেঘ।
সৈকত দেখলো মেঘের হাতে তার সকালে টেবিলের উপর রাখা সেই হুইস্কির বোতল। মেঘ বোতল থেকে অনেক টাই তরল এরই মধ্যে খেয়ে ফেলেছে ।
মেঘ সামনা সামনি আসতেই সৈকত দেখলো মেঘের দুগালে তার হাতের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে।
রাগের মাথায় সৈকত তখন শরীরের সব শক্তি দিয়েই চড় দুটো মেরেছিল।
—কি হলো মারুন।
—সরি।
—আরে মিঃচৌধুরী আপনি কেন সরি বলছেন। সরি তো আমার আপনাকে বলা উচিত। আমি শুধু শুধু আপনার ঘাড়ে বোঝার মত চেপে বসে আছি। আপনি আমাকে এত দুর দুর করছেন আর আমি ততো বেহায়ার মত আপনার পিছু নিচ্ছি।
—শান্ত হও মেঘ। চলো রুমে চলো।
—আমি যাবো না। আপনি চলে যান।
—এখানে থাকলে তোমার ঠান্ডা লেগে শরীর খারাপ হবে।
বলে সৈকত মেঘের দিকে এগিয়ে এসে ওর একহাত ধরলো।
সৈকতের হাতের স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথে মেঘ এক ঝটকা মেরে হাতটা সরিয়ে নিল।
—এক দম আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না। দেখছেন না এতোটা অপমান করছেন,এতো ইগনোর করছেন তারপরও আমি আপনার আশে পাশে বেহায়ার মত ঘুর ঘুর করছি। আর এখন যদি আপনি আমাকে স্পর্শ করেন তাহলে হয়তো আমি আর নিজেকে ধরেই রাখতে পারবো না।
—কেন পাগলামি করছো মেঘ?
—পাগলামি !!?
হা হা হা।
হা সত্যি বলেছেন ,পাগলামি ।
এর থেকে আর কোন ভাল নাম দেওয়া যায় না এটার।
আমি আপনাকে আমার সব টা দিয়ে ভালবাসি আর সেটা প্রকাশ করা যদি পাগলামি হয় তাহলে তাই।
আমার ভিতর বাইরে সব খানে শুধু আপনার বসবাস ।
আর এটা যদি আপনাকে জানানো পাগলামি হয় তাহলে তাই।
আপনার একটু ভালবাসা পাবার জন্য আমার এ মনটা সারাক্ষন ব্যাকুল হয়ে থাকে।
মনের ব্যাকুলতা প্রকাশ করা যদি পাগলামি হয় তাহলে তাই।
মানুষের ঠান্ডা লাগলে হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য শরীর খারাপ হয় ।
আর মন!!?
আপনি আমার শরীরের কথা ভাবছেন!!অথচ এ কয়দিনে একটা বারের জন্য ভাবলেন না যে আপনার দেওয়া কষ্টগুলো আমার বুকের ভিতরে কিভাবে সমান তালে এফোড় ওফোড় করে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মন টাকে শাত্বনা
দিচ্ছি আর ভাল থাকার অভিনয় করে যাচ্ছি।
সৈকত বুঝতে পারছে হুইস্কি পেটে পড়ায় মেঘের মুখ দিয়ে এখন তার মনের মধ্যে এতদিনের জমানো সব কথা বেরিয়ে আসছে।
সৈকত আর বাধা দেয় না। সব চুপচাপ শুনতে থাকে।
মেঘ এগিয়ে এসে সৈকতের শার্টের কলার টা টেনে ধরে বলেঃ
—আমি কি এতটাই খারাপ দেখতে যে আপনি আমার দিকে এক বারের জন্যেও ফিরে তাকান না??
নাকি অন্যে কোন মেয়ের সাথে এ্যাফেয়ার আছে??
—আমার ওসব বাজে আসক্তি নেই।
আমি সত্যিটা জানতে চাই মিঃচৌধুরী।
যদি সেরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমি চলে যাবো আপনার জীবন থেকে।
—এসব তুমি কি বলছো মেঘ?
—হা হা হা ভয় নেই।
সত্যি বলছি আমি আপনার বাবাকে কিছু বলবো না। ইভেন আমার পরে পৃথিবীর তৃতীয় কোন ব্যক্তিও এ কথা জানবে না ।
আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন।
মেঘ মুখ দিয়ে কথা গুলো বলছে ঠিকই। কিন্তু কথা গুলো বলতে ওর বুকের মধ্যে যে কষ্ট হচ্ছে সেটা যদি সৈকত একটু ও বুঝতে পারতো, তাহলে এতক্ষনে বুকে জড়িয়ে ঠিক শান্ত করার চেষ্টা করতো।
সৈকত কোন কথা না বলে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘের চোখ বেয়ে অঝরে পানি ঝরে পড়ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
মেঘ যখন দেখল সৈকত এত কিছুর পরও কথা বলছে না। তখন সৈকতের শার্টের কলার টা ছেড়ে দিয়ে নিচে হাটুগেড়ে বসে পড়লো।
হাতের বোতলের দিকে তাকিয়ে কি ভেবে আবার বোতল টা মুখের কাছে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল।
সৈকত তাড়াতাড়ি করে মেঘের হাত থেকে বোতল টা কেড়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেললো।
—কেন ফেললেন আপনি ওটা?আমি খাবো । আমি, আমি সব খাবো।
—না, তুমি খাবে না ওসব। তোমার ওসব খাওয়ার অভ্যাস নেই। একসাথে এতোটা খেলে সামলাতে পারবে না।
—এই ছাড়ুন তো এসব কথা। কে আপনি!??আমাকে নিষেধ করার কোন অধিকার আপনার নেই। যান, চলে যান এখান থেকে। আমাকে একা থাকতে দিন।
—আমি কে সেটা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে!!?আর তোমাকে নিষেধ করার অধিকার আমার আছে। সেই অধিকার তুমি আমাকে দিয়েছ। আর সেই অধিকার থেকেই আমি তোমাকে নিষেধ করছি।
—কি বললেন আপনি?অধিকার!!?
আধিকার কাকে বলে আপনি তা জানেন??আপনি কি সত্যিই বোঝেন অধিকার কাকে বলে!!?যদি বুঝতেন তাহলে আজ আমি আপনার একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য এমন ভিখারির মত পড়ে থাকতাম না। যদি বুঝতেন অধিকার কাকে বলে তাহলে আপনার বুকের সবটা জুড়ে শূুধু আমি থাকতাম। ঠিক আপনি যেমনটা আমার সবটা জুড়ে আছেন।
আপনি তো শুধু খাতা কলমের অধিকারের কথা বলছেন।
আর বলছি অন্যে অধিকারের কথা।
মানুষকে ভালবেসে তার উপর অধিকার
ফলাতে হয় । কখনও কারোর উপর জোর করে ,কাগজ কলম, বা সমাজের দোহায় দিয়ে অধিকার ফলানো যায় না।
সৈকত ও মেঘের সামনে বসে । সৈকত ওর দু হাত দিয়ে মেঘের মুখটা উঁচু করে বলেঃ
—মেঘ আমার দিকে তাকাও। আমার চোখের দিকে তাকাও।
মেঘ সৈকতের হাতটা সরিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলেঃ
—আপনি কখনো শক্ত জমাট বরফের টুকরো কে ফ্রিজ থেকে বের করে রেখেছেন???
—হ্যা কেন!!?
—আমার মনের অবস্থা ঠিক এখন ঐ শক্ত বরফটার মত। ভিতরে ভিতরে নিজেকে যতোটা শক্ত করছি আপনার ঐ চোখের দিকে তাকালে আমি বাইরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা বরফের টুকরোর মতো গলে যাবো।
নিজেকে হাজার চেষ্টা করেও শক্ত রাখতে পারবো না।
তাই আপনার যা বলার আপনি বলুন । আজ আমি সব শুনতে প্রস্তুত আছি।
—আচ্ছা এখন এসব থাক । আমি কথা গুলো তোমাকে অন্যে দিন বলবো।
—না আপনি আজই বলবেন আর তা এক্ষনি।
—আজ তুমি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তাই কথা গুলো আজ বলবো না।
চলো রুমে চলো বলে সৈকত উঠে দাড়ায়।
—আমি যাবো না । আপনি যান।
—রাত অনেক হয়েছে। আর এখানে একা থাকা ঠিক হবে না চলো আমার সাথে বলে জোর করে মেঘের ডান হাত ধরে টেনে তোলে সৈকত।
হুইস্কি পেটে যাওয়ার পর থেকে মেঘের পেটের ভিতর কেমন যেন অন্যে রকম বিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বমি বমি আসছে কিন্তু বমি হচ্ছে না। মেঘের কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।
সৈকত সেটা বুঝতে পেরে মেঘ কে দাড় করিয়ে পেছন থেকে কোমর ধরে মাথা টা নিচু করে দুই তিনবার ঝাঁকুনি দিতেই মেঘ একটা কাশি দিয়েই হড়হড় করে সব পানি উগরে দিল।
মেঘের মনে হচ্ছে তার মাথাটা কেমন যেন শূন্য হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীটা দুলছে। শরীরে আর শক্তি নেই।
সৈকত মেঘ কে শক্ত করে ধরে বললোঃ
—এখন কেমন লাগছে?
—ভাল। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন যে আমার —-
—কারণ আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ।
মেঘ আগের থেকে স্বস্তি পাচ্ছে ঠিক কিন্তু হুইস্কির রেস পুরোটাই রয়ে গেছে।
হুইষ্কি পেটে পড়লে অনেক সময় লাগে তার রেস কাটতে।
হঠাৎ মেঘ বললোঃ
—আর ভালবাসার বিষয়ে??
———————-
মেঘ টলমল পায়ে একটু দূরে গিয়ে চিৎকার করে বললোঃ
—আমি আপনাকে ভালবাসি । আমার সব অনু-পরমানু দিয়ে আপনাকে ভালবাসি।
সৈকত কাছে গিয়ে নিজের কোর্ট টা খুলে মেঘের গায়ে উপর দিয়ে মেঘকে কোলে তুলে নেই।
মেঘ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। কেমন যেন ঘোরের ভিতের থেকে নিজের দুহাত দিয়ে সৈকতের গলা জড়িয়ে ধরে সৈকতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এতক্ষন হুইস্কি খেয়েও যে নেশার মধ্যে মেঘ ডোবে নি, সৈকতের চোখের দিকে তাকিয়ে যেন আরো বেশী নেশায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।
সৈকত ও তাকিয়ে আছে মেঘের চোখের দিকে।
মেঘ কে কোলে করে নিয়ে সৈকত রুমের দিকে পা বাড়াল।
মেঘ কোন এক সম্মোহিনীতে ডুবে আছে। মুখ দিয়ে তার একটা কথাও বের হচ্ছে না।
প্রিয় মানুষের স্পর্শে কেমন যেন মাতাল হয়ে যাচ্ছে।
সৈকত রুমে ঢুকে মেঘ কে ফ্লোরে দাড় করিয়ে দরজা লক করে দিয়ে মেঘের লাগেজ থেকে অন্যে একটা শাড়ি বের করে মেঘের দিকে এগিয়ে দেয়।
—কি করবো আমি এটা?
—চেন্জ করো। বমি লেগে আছে।
—আমি শাড়ী পরতে পারি না। অন্যে কোন ড্রেস দিন।
—না তুমি এখন শাড়ি পরবে বলে নিজে এগিয়ে এসে পরা শাড়িটা খুলে একটু একটু করে অন্যে শাড়িটা পরিয়ে দেয়।
সৈকতের স্পর্শে মেঘের শরীরে বিদ্যুতের তরঙ্গ বইতে শুরু করলো।
শাড়িটা পরানো শেষ করে সৈকত মেঘের কাছে এসে আলতো করে বাম হাত দিয়ে মেঘের খোপাটা খুলে দেয় ।
মেঘের সমস্ত শরীর কেন যানি কেপে ওঠে।
সৈকত আস্তে আস্তুে মেঘের কোমরে হাত দিয়ে মেঘ কে আরো নিজের কাছে টেনে আনে।
মেঘ অনুভব করছে ওর হার্টবিট বেড়ে গেছে ।
মনে হচ্ছে এক্ষনি বোধহয় ও ঙ্গান হারাবে।
ঙ্গান হারাবার আগেই মেঘ বুঝতে পারলো সৈকতের গরম নিশ্বাস তাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। আর নিজের ঠোঁট অন্যের দখলে চলে গেছে———–
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here