বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-১৪

0
2305

#বেখায়ালি_ভালবাসা,
#পাট_১৪
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ
.
মেঘ বিকালে ঝিনুক কে সঙ্গে নিয়ে শপিং এ যায় ।
ঝিনুকের জন্য আর নিজের কিছু কেনাকাটা করার জন্য।
মেঘ মনে মনে ভাবে সৈকতের জন্য ও কিছু কেনার দরকার । কিন্তু কি কিনবে সেটা বুঝতে পারে না।
অনেক ভেবেচিন্তে সৈকতের জন্য একটা মোবাইল,হাতঘড়ি আর একটা ডায়েরি নেয় মেঘ।
জিনিস গুলো খুব সুন্দর করে নিজ হাতে মোড়কজাত করে ।
মনে মনে ভয় হয় এগুলো সৈকত পচ্ছন্দ করবে তো!!?
ও যেরকম মানুষ তাতে বোঝা মুশকিল কখন ভাল মুডে থাকে আর কখন মুড অফ থাকে।
জিনিস গুলো দেখে কেমন রিএ্যাক্ট করবে কে যানে!??
—এত কি ভাবছো ভাবি??
—কই কিছু নাতো।
—মিথ্যা বলছো তুমি ভাইয়ার কথা ভাবছিলে।
—হু একটু।
—তা কি ভাবছো?
—তোমার ভাইয়া এগুলো গ্রহণ করবে কিনা!!?তার পচ্ছন্দ হবে কিনা এগুলো । এইসব আরকি।
—ওহ্। আরে ভেব না তোমার কেনা জিনিস ভাইয়া কখনো রিফিউজ করবে না।
শপিং শেষ করে বের হতেই মেঘের মনে হলো সৈকত একটা মেয়েকে সঙ্গে করে শপিংমলে প্রবেশ করলো।
মেঘ দাড়িয়ে পিছন ফিরে এদিক ওদিক খোঁজে ।
—কি হলো ভাবি!!?দাঁড়িয়ে পড়লে যে!!
—মনে হল তোমার ভাইয়া কে দেখলাম।
—কি বলছো!!এখানে তুমি ভাইয়া কে কোথায় দেখলে?
—বিশ্বাস করো ঝিনুক আমি তোমার ভাইয়াকেই দেখেছি তার সাথে একজন কেউ ছিল।
—কিন্তু এখানে এসময়ে ভাইয়া !!?
—তুমি দাড়াও আমি একটু ভিতরে যাচ্ছি।
—আচ্ছা চলো আমিও দেখবো।
দু’জনে মিলে অনেকক্ষন খোঁজা খুঁজি করে সৈকত কে আর কোথাও দেখতে না পেয়ে মেঘ আর ঝিনুক বাসার উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
ঝিনুক বলে ভাবি তোমার নিশ্চয় কোথাও ভুল হয়েছে।
মেঘ ও মনে মনে ওর দেখার ভূল মনে করে চুপ করে থাকে।
রাতে সবার খাওয়া শেষ হলে মেঘ নঅ খেয়ে রুমে এসে সৈকতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু মেঘ জানেনা সৈকত আজ আদৌ বাসায় আসবে কিনা??
তারপর ও মেঘের মন বলছে আজ নিশ্চয় সৈকত বাসায় আসবে।
মেঘ বেলকনিতে দাড়িয়ে বাইরের ঠান্ডা বাতাশে শরীর এলিয়ে দাড়িয়ে আছে।
বাইরের বইয়ে যাওয়া ঠান্ডা হীম শীতল বাতাস মেঘ কে ছুঁয়ে যাচ্ছে আর মেঘ বার বার কেঁপে উঠছে। চোখ বন্ধ করে তার প্রিয় মানুষটার সেই প্রথম স্পর্শ করার অনুভূতিটা অনুভব করছে।
মেঘের মনে এক অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছে। সৈকতের কথা ভাবতেই মেঘের মন আর শরীর জুড়ে যেন অন্যরকম ভাললাগা কাজ করে।
হঠাৎ বাসার সামনে গাড়ির হর্ণের শব্দে মেঘ চোখ খুলে তাকাই। সৈকত গাড়ি থেকে নামছে ড্রাইভিং সিটে একটা মেয়ে বসে হাত নাড়িয়ে সৈকত কে বিদায় জানাচ্ছে। সৈকত ও তার দিকে তাকিয়ে হাসি খুশি মুখে হাত নাড়াচ্ছে।
এই দৃশ্য দেখে মেঘের মনের জগৎটা মুহূর্তে উলোট পালোট হয়ে গেল। তাহলে তার ধারণাই ঠিক ছিল। শপিংমলে তাহলে এই মেয়েটায় সঙ্গে সৈকত ছিল।
আমার চোখ ভুল দেখেনি।
মেঘের চোখ দিয়ে না চাইতে অঝোর ধারায় পানি ঝরতে শুরু করলো।
সৈকতের পায়ের আওয়াজ সিঁড়িতে শুনতে পেয়ে মেঘ চোখ মুছে সব না জানার ভান করে রুমে এসে স্বাভাবিক ভাবে বসে একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতে থাকে।
সৈকত রুমে ঢুকে মেঘ কে দেখে হাসিমুখে বললোঃ
—তুমি!!?কখন আসছো??
মেঘ খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো
—এমন ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমি এ বাড়ির গেস্ট !!?
—আরে না তা কেন??তবে কথাটা কিন্তু ভূল বলোনি।
—মানে!!?
—না ,কিছু না।
—বলুন ।
—খেয়েছ??
—আপনি তো নিশ্চয় খেয়ে এসেছেন!?
—না । খাই নি। খাবার দিতে বলো খুব ক্ষুধা লাগছে।
মেঘ অবশ্য মনে মনে একটু অবাক হলো। কারণ আজ সৈকত এত রাত অবধি বাইরে ছিল অথচো ড্রিংক করে নি। আবার বলছে ক্ষুধা লাগছে তারমানে বাইরে কিছু খায়নি।
মেঘ আর কোন কথা না বাড়িয়ে বলে ঠিক আছে আপনি চেন্জ করে নিন আমি খাবার গরম করে দিচ্ছি।
—তুমি না খেয়ে বসে আছো কেন?
—এমনি।
—এটা ঠিক না।
—আমার তো এটাই ঠিক মনে হয় ।
—আচ্ছা তুমি কাউকে বল গরম করে খাবার টা রুমে দিয়ে যেতে।
—আমি নিজে করলে কি কোন অসুবিধা?
—এত কাজের মানুষ থাকতে তুমি কেন করবে??
—সেটা আপনি বুঝবেন না। নিজের ভালবাসার মানুষের জন্য কিছু করতে পারাটা যে কত অনন্দের কত আত্মতৃপ্তির যে করে শুধু সেই বোঝে।
সৈকত আর কিছু বলে না।
মেঘ নীচে গিয়ে খাবার গরম করে এনে রুমে ঢোকে।
সৈকত ততক্ষনে ড্রেস চেন্জ ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।
মেঘ খাবার দিয়ে চুপ চাপ বসে আছে।
—কি হলো তুমি খাবে না?
—না,আপনি খেয়ে নিন।
—এত অভিমান ভাল না। বলে সৈকত নিজে এগিয়ে এসে মেঘের মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো।
মেঘের চোখে পানিয়টলমল করছে। সেটা খুশিতে না অন্য কারণে সেটা মেঘ নিজেও জানেনা।
সৈকত মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো কি হলো !?মুখ খোল।
মেঘ মুচকি হেসে হা করে ।
সৈকত বলে আজ আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো। মন দিয়ে কথা গুলো শুনবে। কোন প্রশ্ন করবেন না।
মেঘ বুঝতে পারে না সৈকত তাকে কি বলতে চাইছে?তবে মনে মনে খুব ভয় হয় ওর শান্ত চেহারা দেখে। কারণ কোন বড় ধরনের ঝড় উঠার আগে প্রকৃতি সাধারণত খুব শান্তশিষ্ট হয়ে যায়।
(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here