বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-৩০

0
2324

#বেখেয়ালি_ভালোবাসা,
#পর্ব_৩০
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ
সৈকত তাড়াতাড়ি করে ল্যাপটপ পেনড্রাইভ আর মেঘের দেওয়া ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ।
গাড়ি ড্রাইভ করে আর ভাবে আগে একবার থানায় যাওয়ার দরকার রাতে তো সুইটির কুকর্ম না জেনে রাকিবকে বলে ছিলাম উকিল দিয়ে জামিনে বের করে নিয়ে আসতে । কিন্তু এখন সব জেনেশুনে এটা আমি হতে দিতে পারি না।
সৈকত ফোনটা গাড়িতে চার্জে বসিয়ে বার বার মেঘের নম্বরে ট্রাই করছে কিন্তু যতবার কল করছে ততোবারই বলছে সুইচ অফ।
মেঘের উপর মনে মনে খুব রাগ হতে শুরু করে সৈকতের । এই ভেবে যে আগে যখন এ বাড়িতে ছিল সব সময় মেঘ তার
সাইরেনটা সঙ্গে নিয়ে বেড়াত কখন কে কল করছে সব দেখত আর আজ আমি যখন কল করছি এখন নিশ্চয় কোথাও পড়ে আছে । এখন আর সাইরেন নামক যন্ত্রটা বোধহয় আর সঙ্গে রাখে না।
দেখতে দেখতে থানার সামনে এসে গাড়ি থামায় সৈকত।
গাড়ি থেকে নামার আগে একটু ভেবে নেয় যদি পুলিশ তাকে আবার উল্টো জেরা করে যে কি সম্পর্ক আমার এরাকম একটা মেয়ের সাথে তাহলে কি বলবো??
কিছু একটা ভেবে গাড়ি থেকে নেমে সোজা থানার মধ্যে ঢুকে সৈকত।
সৈকত কে দেখেই সবাই স্যালুট দেয়। তারপর পুলিশ কর্মকর্তা তাড়াতাড়ি করে জানতে চাই কি ব্যাপার স্যার আপনি এখানে?
এত কষ্ট করে এখানে আসার কি দরকার ছিল একটা ফোন করতেন আমি আপনার কাছে যেতাম।
সৈকত মুচকি হেসে বলে থাক সেসবের কোন দরকার নেই ।
আসলে আমি একটা কাজে এসেছি
—বলুন স্যার কি করতে পারি আপনার জন্য?
—আমার ম্যানেজার বলছিল আপনারা নাকি আমার অফিসের একটা মেয়েকে এরেস্ট করেছেন তার ব্যপারে ।
—জ্বি স্যার ,সুইটি আসলে তার নামে অনেক গুলো ব্লাকমেইল চিটিংয়ের কেস আছে। এতদিন আমাদের হাতে কোন প্রমান ছিল না তাই তার বিরূদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা নিতে পারি নি । কিন্তু গতকাল কেউ একজন প্রমান গুলো জোগাড় করে আমাদের ফোন করে তাই আমরা এই মেয়েটাকে প্রমানের ভিত্তিতে এরেস্ট করতে পেরেছি।
—আমি কি একটু দেখা করতে পারি?
—হ্যা স্যার অবশ্যই । চলুন আমার সঙ্গে।
—আপনাকে যেতে হবে না ,আমি তার সঙ্গে কিছুক্ষণ একা কথা বলতে চাই।
—ওকে স্যার ,তাহলে আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।
—ঠিক আছে।
পুলিশ অফিসার ও অন্যেরা কিছু সময়ের জন্য বাইরে যায় ।
সৈকত ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সুইটির দিকে ।
—কেমন আছো সুইটি?
—সৈকত তুমি!আমি জানতাম তুমি আসবে । আমাকে এখান থেকে বের করো সৈকত । এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
—কেন করলে এসব??
—আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করো ,সত্যিই আমি কিছু করিনি। আমাকে ফাসানো হচ্ছে। তুমি তো জানোই সব।
—আর কত মিথ্যা বলবে আমাকে??আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। আর তুমি আমার সেই বিশ্বাস টাকে পুজি করেই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে??
—সৈকত তুমিও আমাকে ভুল বুঝতেছ।
—চুপ আর কথা বলোনা তুমি। আমি তোমাকে বন্ধু মনে করে তোমার পাশে দাড়িয়েছিলাম আর তুমি!!!ছিঃ
আমার ভাবতেও ঘৃণা করছে যে তোমার মতো একটা মেয়েকে আমি বন্ধু রুপে গ্রহণ করেছিলাম। এতো লোভ তোমার এত টাকার নেশা!!? তুমি এতটা নীচে নামতে পারো শুধুমাত্র টাকার জন্য তা ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
সুইটি কি বলবে আর কিছু বুঝতে পারছে না। সৈকত কি তাহলে সবটাই জেনে গেছে !!!লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে সুইটি । চোখ দিয়ে পানি ঝরে । নিজের কৃত কর্মের জন্য আজ তার এ অবস্থা।
শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে ।
সৈকত একটু থেমে বলেঃ
—আর কত টাকা চাই তোমার??
বলো আজ যা চাইবে তাই দিব। তবে এখান থেকে তুমি আর কখনও বের হতে পারবেনা। এই নাও ব্লান্ক চেক তোমার ইচ্ছা মত সংখ্যা বসিয়ে নিও। তবে মনে রেখ তোমার এই লোভের জগতে তুমি শুধু একা। আর কেউ নেই তোমার পাশে । এই এখানে তোমাকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস একা কাটাতে হবে । তোমার চারিদিকে এখন শুধুই অন্ধকার । তুমি একবারের জন্য তোমার বাবা মার কথা ভাবলে না যে তারা যখন সত্যিটা জানতে পারবে তখন তাদের মনের অবস্থা কেমন হবে ??
সৈকত আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসে ।
বাইরে এসে দেখে সৈকতের নিজস্ব আইনজীবী আর রাকিব দাড়িয়ে আছে ।
সৈকতকে দেখেই রাকিব একটা কাগজ হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে ।
—স্যার এই যে সুইটি কি জামিনে বের করার জন্য কাগজ গুলো রেডি করা হয়েছে। এখন শুধু জমা দিলে হবে ।
সৈকত কোন কথা বলছে না। রাগে থমথম করছে । সৈকত কাগজ গুলো নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় ।
রাকিব কাগজ গুলো দেওয়ার সাথেই সৈকত কাগজ গুলো নিয়ে এক মুহূর্ত দেরি না করে সব টেনে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে ।
রাকিব সৈকতের এমন আচারনে অবাক হয়ে যায় ।
যেই বলে স্যার এটা কি করছেন ??
সৈকত হাত উচু করে থামতে বলে ।
রাকিব বুঝে যায় সৈকত কি বলতে চাইছে ।
রাকিব আর কথা না বলে সরি বলে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে বেয়িয়ে পড়ে ।
সৈকতের অবস্থা আর কেউ কোন কথা বলতে সাহস পাইনা।
সৈকত থানা থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে উদ্দেশ্য মেঘ।
মেঘের বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই মেঘের আম্মু এগিয়ে আসে ।
সৈকত কে এভাবে হঠাৎ না বলে আসতে দেখে মেঘের আম্মু খুব অবাক হয়ে যায় ।
—সৈকত বাবা তুমি!!!কেমন আছো ?
—জ্বী আমি ভাল আছি । আপনারা কেমন আছেন?
—ভাল আছি। চলো ভিতরে চলো ।
সৈকত তার শ্বাশুড়ীকে অনুসরণ করে ভিতরে প্রবেশ করে ।
মেঘের আম্মু সৈকত কে বসতে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে নাস্তার ব্যবস্থা করতে যায়। জামাই যে তার হুট করে এভাবে চলে আসবে ভাবতেও পারেনি।
সৈকত বসে আছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বিয়ের দিন হুপ করে এসে মেঘকে বিয়ে করে নিয়ে চলে গিয়েছিল। তারপর তো সৈকত এর আগে আসে নি । তাই সব কিছু ভাল করে চিনতে পারছে না। সৈকত এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘ কে খুজতে থাকে। কিন্তু বাড়ি এতটাই শান্ত পরিবেশ হয়ে আছে যে মনে হচ্ছে না তৃতীয় আর কেউ বাসায় আছে।
হঠাৎ মেঘের আম্মু ট্রে ভর্তি নাস্তা এনে সৈকতের সামনে দিয়ে বললো নাও বাবা কিছু মুখে দাও।
সৈকত মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না । আমি বাসা থেকে খেয়েই বেরিয়েছি তারপরও আপনি যখন বলছেন বলে হালকা কিছু নিল।
—তোমার আব্বু এখন কেমন আছে?
—জ্বী আলহামদুল্লিলাহ ভাল আছে।
—আর বাকি সবাই?
—সবাই ভালো আছে। কাউকে বাসায় দেখছি না ,আব্বু (শ্বশুর)তো অফিসে তাই না?
—হ্যা তোমার শ্বশুর অফিসে । আর —-
বলতে না বলতেই ফোনটা বেজে ওঠে
তুমি বসো আমি কথা বলে আসি।
সৈকত ঘাড় নেড়ে হ্যা বলে।
সৈকতের আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। কখন থেকে বসে আছে অথচ তারই দেখা পাচ্ছে না। এত কষ্ট করে এতদূর থেকে এসে কি হলো !!?অভিমানীর মুখটাই এখনো পর্যন্ত দেখা গেল না।
সৈকতের অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে মেঘকে দেখার জন্য । মনটা আকু বুকু করছে কখন চোখে দেখবে তার প্রিয় মুখটা।
সৈকত উঠে দাঁড়ায় ধীর পায়ে বাড়ির ভিতরের এদিক ওদিক তাকাতে থাকে ।
মনে মনে ভাবছে মেঘ মনে হয় তার রুমেই আছে । কিন্তু এ বাড়িতে মেঘের রুম কোনটা সেটাই তো সে জানেনা।
কেউ নেই যে তার কাছে জিঙ্গাসা করবে।
সৈকত মনে সাহস নিয়ে মেঘের রুমটা খুজতে থাকে একটা রুম থেকে হালকা শব্দে গানের কন্ঠ ভেসে আসছে ।
সৈকত সেই রুমের দিকে এগিয়ে যায় আস্তে আস্তে।
বাতাসে দরজার পর্দা দুলছে সৈকত তাকিয়ে দেখে দেওয়ালে মেঘের ছবি ঝুলছে । ছবিটা দেখে সৈকত মনে মনে নিশ্চিত হয় এটাই মেঘের রুম।
সৈকত রুমে ঢুকে দেখে রুমটা খালি । সাইন্ড বক্সে গান বাজছে ।
হঠাৎ মেঘের আম্মু এসে বলে তুমি এখানে আর আমি তোমাকে—
দেখেছ মেঘের কান্ড !বলে সাইন্ড বক্সটা অফ করে দেয় ।
সৈকত লজ্জা ভেঙ্গে জিঙ্গাসা করেঃ
—মেঘ কোথায় ওকে তো কোথাও দেখছি না।
—ওহ!কথাই কথাই তোমাকে তো বলতে ভুলেই গেলাম রাজু আর মেঘ তো আজ কক্সবাজার গেল ওর কলেজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে। মেঘ প্রথমে যেতে চাইনি একা তারপর আমি রাজুকে বলে ওর সঙ্গে পাঠিয়েছি।
—কিহ!!?ওহ শীট। কখন??
—এইতো ওরাও বের হলো তুমিও আসলে । এই যে কেবল রাজু ফোন করেছিল মেঘের ফোনটা নিতে নাকি মনে নেই।
—রাজু নামটা শুনে সৈকতের সকালের সেই ভিডিও টার কথা মনে পড়ে । এই রাজু সেই রাজু নইতো!!ধূর এখন ওসব ভাবার সময় নেই । এতক্ষন মেঘদের গাড়ি হয়তো বেশী দূরে যায় নি । আমাকে ও এখনি যেতে হবে।
সৈকত কে চুপ থাকতে দেখে মেঘের আম্মু
মনে করে মেঘের যাওয়ার কথা শুনে সৈকত মনে হয় রাগ করেছে ।
—তুমি রাগ করো না বাবা। মেঘ আর তোমার মধ্যে কিছ হয়েছে কিনা আমি জানিনা। আর জানতেও চাই না । তবে এটুকু বলবো মেয়েটা আমার এখানে আসার পর থেকে কেমন জানি হয়ে গেছে । সারাক্ষন মন খারাপ করে থাকে । হাসে না ,খুব কম কথা বলে । সারাক্ষন নিজের রুমে বসে থাকে কি যেন ভাবে ।
তাই গতকাল ওর বন্ধুরা এসে যখন মেঘকে ওদের সঙ্গে যেতে বললো আমি আর তোমার শ্বশুর মেঘকে জোর করে রাজী করিয়েছি। তুমি মেয়েটাকে ভুল বুঝনা।
—না এতে ভুল বোঝার কি আছে । আপনি এক কাজ করুন আপনি মেঘের মোবাইলটা আমার কাছে দিন । আমি নিয়ে যাচ্ছি। আর রাজু ভাইয়ার ফোন নম্বর টা দিন । আমি যোগাযোগ করে নিব।
মেঘের আম্মু সৈকতের কথা শুনে খুব খুশী হয় ।
—তুমি যাবে বাবা ??
—হ্যা যাবো ।
—তুমি দাড়াও আমি এখনি মেঘের মোবাইল আনছি।
—আচ্ছা।
সৈকত মোবাইল নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বের হতেই ডান পাশের রুমে চোখ পড়ে
একটা ছবি তে মনে হল সুইটির মত কাউকে দেখতে ————-
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here